অন্নপূর্ণা অন্নদা অষ্টভূজা। অভয়া অপরাজিতা অচ্যূতঅনুজা।।
অনাদতা অনন্তা অম্বা অম্বিকা অভয়া। অপরাধ ক্ষমো অগো অব গো অব্যয়া।।
শুন শুন নিবেদন সভাজন সব। যেরূপে প্রকাশ অন্নপূর্ণা মহোৎসব।।
সুজা খাঁ নবাব সুত সরেফরাজ খাঁ। দেওয়ান আলমচন্দ্র রায় রায়রাঁয়া।।
ছিল আলিবর্দ্দী খাঁ নবাব পাটনায়। আসিয়া করিল যুদ্ধ বধিলেক তায়।।
তদবধি আলিবর্দ্দী হইলা নবাব। মহাবদজঙ্গ দিলা বাদশা খেতাব।।
কটকে মুরসীদ্কুলী খাঁ নবাব ছিল। তারে গিয়া আলিবর্দ্দী খেদাইয়া দিল।।
কটকে হইল আলিবর্দ্দীর আমল। ভাইপো সৌলদজঙ্গে দিলেন দখল।।
নবাব সৌলদজঙ্গ রহিলা কটকে। মুরাদবাখর তারে ফেলিল ফাটকে।।
লুঠি নিল নারী গাড়ী দিল বেড়ী তোক। শুনি মহাবদজঙ্গ চলে পেয়ে শোক।।
উত্তরিল কটকে হইয়া ত্বরাপর। যুদ্ধে হারি পলাইল মুরাদবাখর।।
ভাইপো সৌলদজঙ্গে খালাস করিয়া। উড়িষ্যা করিল ছার লুটিয়া পুড়িয়া।।
বিস্তর লস্কর সঙ্গে অতিশয় জুম। আসিয়া ভুবনেশ্বর করিলেন ধূম।।
ভুবনে ভুবনেশ্বর মহেশের স্থান। দুর্গাসহ শিবের সর্ব্বদা অধিষ্ঠান।।
দুরাত্মা মোগল তারে দৌরাত্ম্য করিল। দেখিয়া নন্দীর মনে ক্রোধ উপজিল।।
মারিতে লইয়া হাতে প্রলয়ের শূল। করিতে যবন সব সমূলে নির্ম্মূল।।
নিষেধ করিল শিব ত্রিশূল মারিতে। বিস্তর হইবে নষ্ট একেরে বধিতে।।
অকালে প্রলয় হৈল কি কর কি কর। না ছাড় সংহারশূল সংহর সংহর।।
আছয়ে বর্গির রাজা গড় সেতারায়। আমার ভকত বড় স্বপ্ন কহ তায়।।
সেই আসি যবনেরে করিবে দমন। শুনি নন্দী তারে গিয়া করিল স্বপন।।
স্বপ্ন দেখি বর্গি রাজা হইল ক্রোধিত। পাঠাইয়া রঘুরাজ ভাস্কর পণ্ডিত।।
বর্গি মহারাষ্ট্র আর সৌরাষ্ট্র প্রভৃতি। আইল বিস্তর সৈন্য আকৃতি-বিকৃতি।।
লুটি বাঙ্গালার লোকে করিল কাঙ্গাল। গঙ্গা পার হইল বান্ধি নৌকার জাঙ্গাল।।
কাটিল বিস্তর লোক গ্রাম গ্রাম পুড়ি। লুটিয়া লইল ধন ঝিউড়ী বহুড়ী।।
পলাইয়া কোঠে গিয়া নবাব রহিল। কি কহিব বাঙ্গালার যে দশা হইল।।
লুটিয়া ভুবনেশ্বর যবন পাতকী। সেই পাপে তিন সুবা হইল নারকী।।
নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়। বিস্তর ধার্ম্মিক লোক থেকে গেল দায়।।
নদীয়া প্রভৃতি চরি সমাজের পতি। কৃষ্ণচন্দ্র মহারাজ শুদ্ধ শান্তমতি।।
প্রতাপতপনে কীর্ত্তিপদ্ম বিকাশিয়া। রাখিলেন রাজলক্ষ্মী অচল করিয়া।।
রাজা রাজচক্রবর্ত্তী ঋষি ঋষিরাজ। ইন্দ্রের সমাজ সম যাঁহার সমাজ।।
কাশীতে বান্ধিলা জ্ঞানবাপীর সোপান। উপমা কোথায় দিব না দেখি সমান।।
দেবীপুত্র বলি লোক যাঁর গুণ গায়। এই পাপে সেই রাজা ঠেকিলেন দায়।।
মহাবদজঙ্গ তারে ধরে লয়ে যায়। নজরানা বলে বার লক্ষ টাকা চায়।।
লিখি দিলা সেই রাজা দিব বার লক্ষ। সাজোয়াল হইল সুজন সর্ব্বভক্ষ।।
বর্গিতে লুটিল কত কত বা সুজন। নানা মতে রাজার প্রজার গেল ধন।।
বদ্ধ করি রাখিলেন মুরশিদাবাদে। কত শত্রু কত মতে লাগিল বিবাদে।।
দেবিপুত্র দয়াময় ধরাপতি ধীর। বিবিধ প্রকারে পূজা করিল দেবীর।।
চৌত্রিশ অক্ষরে বর্ণাইয়া কৈলা স্তব। অনুকম্পা শ্রবণে হইল অনুভব।।
অন্নপূর্ণা ভগবতী মুরতি ধরিয়া। স্বপন কহিল মাতা শিয়রে বসিয়া।।
শুন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র না করিহ ভয়। এই মূর্ত্তি পূজা কর দুঃখ হবে ক্ষয়।।
আমার মঙ্গলগীত করহ প্রকাশ। কয়ে দিলা পদ্ধতি গীতের ইতিহাস।।
চৈত্রমাসে শুক্লপক্ষে অষ্টমী নিশায়। করিহ আমার পূজা বিধি-ব্যবস্থায়।।
সভাসদ তোমার ভারতচন্দ্র রায়। মহাকবি মহাভক্ত আমার দয়ায়।।
তুমি তারে রায়গুণাকর নাম দিও। রচিতে আমার গীত সাদরে কহিও।।
আমি তারে স্বপ্ন কব তার মাতৃবেশে। অষ্টবাহ গীতের উপদেশ সবিশেষে।।
সেই আজ্ঞা মত রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়। অন্নপূর্ণা পূজা করি তরিল সে দায়।।
সেই আজ্ঞামত কবি রায়গুণাকর। অন্নদামঙ্গল কহে নবরসভর।।