০৯. কুড়ি বছর পরের কথা

কুড়ি বছর পরের কথা।

আমেরিকার মন্টানা স্টেট ইউনিভার্সিটি।

ইউনিভার্সিটি কফি শপে একজন বাংলাদেশী ছাত্রীকে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। তার হাতে কফির মগ। টেবিলে স্থানীয় পত্রিকা বিছানো। মেয়েটি অলস ভঙ্গিতে পত্রিকার বিজ্ঞাপনগুলি দেখছে। মেয়েটির নাম মিতু। সে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইভার অপটিকস-এ পোষ্ট ডক করছে। একা একা থাকে। বেশীর ভাগ সময়ই তাকে খুব বিষণ্ণ দেখা যায়। জীবন তার প্রতি খুব সুবিচার করেনি। আমেরিকায় পড়তে আসা তার এক ধরনের স্বেচ্ছা নির্বাসন।

মিতু বিজ্ঞাপন পড়তে পড়তে হঠাৎ চমকে উঠল। এতটা চমকাল যে হাতের কফির মগ থেকে গরম কফি ছিটকে পড়ল গায়ে। চব্বিশ-পঁচিশ বছরের একজন হাসিখুশী যুবকের ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে। বিজ্ঞাপনে লেখা–এই যুবকটি নিম্ন ঠিকানায় আছে। যুবকটি এক ধরনের এ্যামনেশিয়ায় ভুগছে। পুরোনো স্মৃতি মনে নেই। তার কোন খোঁজ-খবর বের করা যাচ্ছে না। যদি কেউ এই যুবকটি সম্পর্কে কিছু জানেন তাহলে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হচ্ছে। বিজ্ঞাপন দিয়েছে স্টেট পুলিশ।

যুবকটির ছবির দিকে মিতু অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল।

মিতু তাকে চেনে–তার নাম মিস্টার আগস্ট। এ ব্যাপারে মিতুর মনে কোন সন্দেহ নেই। মিতু পত্রিকা হাতে উঠে দাঁড়াল।

চোদ্দ নম্বর পুলিশ প্রিসিংক্ট-এ যুবকটি আছে। উনিশ ডাউন স্ট্রীট–নর্থ। এই হল ঠিকানা। কতক্ষণ লাগবে সেখানে যেতে? বড়জোর কুড়ি মিনিট। মিতুর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে।

যুবকটির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মিতু খানিকটা বিভ্রান্ত হয়ে গেল। নীল চোখ এবং সোনালী চুলের একজন আমেরিকান যুবক তার সামনে বসে আছে। যুবকটির চোখে মুখে চাপা হাসি। মিতু নিশ্চিত যে, সুদূর শৈশবে দেখা মিস্টার আগস্টের সঙ্গে এই যুবকের চেহারার অসম্ভব মিল–তবু এই আমেরিকান যুবক মিস্টার আগস্ট হতে পারে না। পুলিশের জনৈক কর্মকর্তা বললেন, মিস আপনি কি এই যুবককে চেনেন?

মিতু বলল, না।

সে ফিরেই আসছিল। হঠাৎ কি মনে করে যুবকের দিকে তাকিয়ে ইংরেজীতে বলল, এক সময় আমার নাম ছিল পাঁচ হাজার ছয় শত চুয়ান্ন। আজ আমার নাম বার হাজার তিনশ একুশ। তুমি কি আমাকে চিনতে পারছ?

যুবকটি মিতুর দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ইংরেজীতে বলল, কেমন আছ মিতু?

মিতুর চোখে পানি এসে গেল।

পুলিশ অফিসার অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন, মিস আপনি কি যুবকটিকে চিনতে পারছেন? তাকে কি আপনার পরিচিত মনে হচ্ছে?

মিতু তাকিয়ে আছে যুবকের দিকে। যুবক মাথা নীচু করে বসে আছে। পা নাচাচ্ছে। তার মুখ হাসিহাসি।

মিতু বলল, আমি চিনি না। আমি এই যুবককে চিনি না।

2 Comments
Collapse Comments
হামিদুল September 21, 2021 at 2:48 am

Onoo rokom golpo

সিমান্ত জয় June 14, 2022 at 6:16 pm

হুমায়ূন আহমেদ তাঁর এই লেখাটির মাধ্যমে কিছু গোপন বাতা মানুষের সাথে শেয়ার করেছেন।বেশ ভালো লাগল পড়ে,অসাধারণ।মন্টু মামার গাছ হওয়ার বা পা থেকে শিকড় গজানোর ব্যাপারটি অদ্ভূত লাগলেও,বাস্তবে এরকম অনুভূতির সম্মুখিন হওয়া সম্ভব।ঐদিন বৃষ্টি হচ্ছিল তাই মাটির নিচের…..

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *