০৯. এক হাজার টাকা

ফরিদা হাসি মুখে বললেন, এই নে তোর টাকা গুণে দেখ এক হাজার আছে কি না। এখন খুশি?

তাঁর মুখে হাসি। তিনি মনের আনন্দ চেপে রাখতে পারছেন না। মুনা তার বড় মামার কাছে চাওয়া মাত্র টাকা পেয়েছে। কোনো সমস্যা হয় নি।

কি গুণে দেখলি না?

সঞ্জু বলল, কি আশ্চর্য গুণে দেখতে হবে কেন? ভাত দিয়ে দাও মা।

মাত্র আটটা বাজে। এখনি ভাত খাবি কি? তোর ট্রেন সেইতো রাত সাড়ে দশটা।

একটু আগে আগে যাওয়া দরকার। টিকিটের ঝামেলা আছে।

তোর বাবাওতো সঙ্গে যাবে।

সঞ্জু বিস্মিত হয়ে বলল, বাবা যাবে মানে? তাঁর যাওয়ার দরকার কি?

যেতে চাচ্ছে যাক না। তুই বিরক্ত হচ্ছিস কেন?

সবাই বলবে কি? ট্রেনে তুলে দিতে বাবা চলে এসেছেন। আমি কি কচি খোকা না-কি? না মা তোমার পায়ে পড়ি, যে ভাবেই হোক তুমি সামলাও। প্লীজ।

বেচারা এত আগ্রহ করে যেতে চাচ্ছে।

না-মা, না, প্লীজ। সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে। এমিতেই ওরা আমাকে খোকা বাবু ডাকে।

খোকা বাবু ডাকে?

হুঁ। কেনইবা ডাকবে না। ইউনিভার্সিটির সব কটা পরীক্ষার সময় বাবা উপস্থিত। হাতে কাটা ডাব। পরীক্ষা দিয়ে এসেই ডাব খেতে হবে। কি রকম লজ্জার ব্যাপার বলতো।

লজ্জার কি আছে? ডাবের পানিতে পেটটা ঠাণ্ডা থাকে।

উফ। মা তুমি বুঝবে না। তুমি বাবাকে সামলাও।

আচ্ছা দেখি বলে দেখি।

 

মুনা এসে বলল, ভাইয়া বাবা তোমাকে ডাকছেন।

সঞ্জু বাবার ঘরের দিকে রওনা হলো। আবারো হয়ত খানিকক্ষণ ইরাকের যুদ্ধের কথা শুনতে হবে। বাবার ঘরে ঢুকে চুপচাপ বসে থাকার কোনো মানে হয় না। বাবার সঙ্গে তার বলার কোনো কথা নেই। মাঝে মাঝে সে মনেও করতে পারে না বাবাকে আপনি করে বলে না তুমি করে বলে। কলেজে যখন পড়ে তখন একদিন বাবা তাকে ডেকে বললেন, তুই আজ আমার অফিসে একটা চিঠি নিয়ে যেতে পারবি?

সঞ্জু বলল, জ্বি স্যার পারব।

সোবাহান সাহেব গম্ভীর গলায় বললেন, স্যার বলছিস কেন?

সঞ্জু কোন জবাব দিতে পারে নি। মাথা নিচু করে দাড়িয়েছিল।

এখনো সে ঐদিনকার মত চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।

সোবাহান সাহেব বললেন, বোস।

সঞ্জু বসল।

টাকা পয়সা কি লাগবে বললি নাতো।

মা টাকা দিয়েছে।

ও আচ্ছা। ঠিক আছে আছে নে আরো দুশ টাকা রেখে দে। লাগবে না বাবা।

রেখে দে।

লাগবে না। মা এক হাজার টাকা দিয়েছে।

সোবাহান সাহেবের মন একটু খারাপ হলো। তিনি ভেবেছিলেন, বাড়তি দুশ টাকা পেয়ে ছেলে খুশি হবে। তিনি তার আনন্দিত মুখ দেখবেন।

সঞ্জু তোর বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে কেউ সিগারেট খায়?

সঞ্জু অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকাল। এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার মানে কি সে বুঝতে পারছে না। সোবাহান সাহেব বিব্রত গলায় বললেন, আমার অফিসের এক কলিগ ঐ দিন আমাকে এক প্যাকেট ডানহিল সিগারেট দিল। আমিতো সিগারেট ছেড়ে দিয়েছি। প্যাকেটটা পড়ে আছে। তোর বন্ধু বান্ধবদের জন্যে নিয়ে যাবি? অবশ্য সিগারেট খাওয়া ভালো না। বদ অভ্যাস।

সঞ্জু মিথ্যা করে বলল, কেউ সিগারেট খায় না বাবা।

ও আচ্ছা। আচ্ছা তাহলে থাক। তোর ট্রেনতো সাড়ে দশটায়?

জ্বি।

আমি তুলে দিয়ে আসব, কোনো অসুবিধা নেই। সাড়ে নটার দিকে বেরুলেই হবে।

আপনার যেতে হবে না বাবা।

সোবাহান সাহেব আর কিছু বললেন না। পত্রিকা চোখের সামনে মেলে ধরলেন। সঞ্জু বাবার ঘর থেকে বের হয়ে মনে মনে বলল, বাঁচলাম।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *