৯
তিনি ওয়েটিং রুমে বসে আছেন। তাঁর সিরিয়াল এসেছে নয়। শায়লার অ্যাসিস্ট্যান্ট করিম গলা নামিয়ে বলল, আপনার সিরিয়ালে ব্রেক করতে পারি। অন্যরা রাগ করবে এইটাই সমস্যা।
জোয়ার্দার বললেন, আমি অপেক্ষা করব।
করিম বলল, একটা কাজ করি স্যার? সব রোগী বিদায় হবার পর আপনি যান। কথা বলার সময় বেশি পাবেন।
আমি যে সিরিয়াল পেয়েছি সেই সিরিয়ালেই যাব।
আজো মিষ্টি এনেছেন?
হুঁ।
ম্যাডাম কিন্তু মিষ্টি খান না।
তার মেয়েটা খাবে।
ম্যাডাম শাদি করেন নাই। মেয়ে কোথায় পাবেন?
উনার একটা পালক মেয়ে আছে সুপ্তি নাম। সুপ্তি খাবে।
কী যে কথা বলেন। উনার পালক মেয়েটেয়ে কিছু নেই। একজন বুয়া আছে।
ও আচ্ছা।
নয় নম্বরে তার ডাক পড়ল না। অন্য রোগীরা যেতে থাকল। করিম গলা নামিয়ে বলল, আপনি এসেছেন ম্যাডামকে বলেছি। উনি বলেছেন আপনাকে সবার শেষে পাঠাতে।
আচ্ছা ঠিক আছে।
আমার কথাই ঠিক হয়েছে। তাই না স্যার?
হুঁ।
চা-কফি কিছু খাবেন?
না।
জোয়ার্দার আগ্রহ নিয়ে ওয়েটিং রুমের লোকজন দেখছেন। রোগী হিসেবে তিনি শুধু একা এসেছেন, অন্য সবার সঙ্গে দু’তিন জন করে অ্যাসিস্ট্যান্ট। ষোল সতের বছরের একটি তরুণী মেয়ে এসেছে, মনে হচ্ছে সেই রোগী। দু’হাতে মুখ ঢেকে রেখেছে। সে তাকাচ্ছে আঙুলের ফাঁক দিয়ে। মধ্যবয়স্ক যে ভদ্রলোক মেয়েটাকে নিয়ে এসেছেন তিনি কিছুক্ষণ পরপর মেয়েটার হাত নামিয়ে দিচ্ছেন, তাতে লাভ হচ্ছে না। মেয়েটা সঙ্গে সঙ্গে দু’হাতে মুখ ঢাকছে।
জোয়ার্দারের ডাক পড়েছে। তিনি ঘরে ঢুকতেই শায়লা বলল, রসমালাই আনেন নি?
জোয়ার্দার বললেন, এনেছি। আপনার অ্যাসিস্ট্যান্টের কাছে দিয়েছি।
ভেরি গুড।
আপনার ক্যামেরাটাও নিয়ে এসেছি।
ছবি তুলেছেন?
জি।
ছবি উঠেছে?
জি উঠেছে।
শায়লা বিস্মিত হয়ে বললেন, দেখি ছবি?
জোয়ার্দার ছবি দেখাচ্ছেন। শায়লা তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আশ্চর্যের ব্যাপার, সত্যি এক ভদ্রলোকের ছবি।
জোয়ার্দার বললেন, এই বরকতউল্লাহ সাহেবের ছবি। উনি টিভি দেখছেন। উনার তিনটা ছবি তুলেছি। সব ছবি ডান দিক থেকে তুলতে হয়েছে। উনার মাথার বাঁ দিকে চুল কম এই জন্য।
শায়লা নিঃশ্বাস ফেললেন কিছু বললেন না। ছবি থেকে চোখ সরালেন না।
জোয়ার্দার বললেন, এটা কুফির ছবি। আমার কাছে যে বিড়ালটা আসে। আর এটা আমার মেয়ের কোলে পুফি। আমার মেয়ের নাম অনিকা। আপনাকে তার নাম বলেছিলাম।
আমার মনে আছে। আপনি কি এইসব ছবি আর কাউকে দেখিয়েছেন?
না।
এই ছবি যে বরকতউল্লাহ সাহেবের এটা আমি বুঝব কীভাবে?
জোয়ার্দার বললেন, উনাকে চেনেন এমন যে কাউকে দেখালেই হবে। খালেক চিনবে।
খালেক কে?
আমাদের অফিসে কাজ করেন। আমার জুনিয়র কলিগ।
বরকত সাহেব কত দিন হল মারা গেছেন?
দুই সপ্তাহের বেশি হয়েছে।
শায়লা সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন, বিরাট সমস্যা হয়ে গেল। জোয়ার্দার বললেন, কী সমস্যা?
শায়লা বললেন, ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তোলা হয়েছে। দিন তারিখ সব ছবিতে আছে। দুই সপ্তাহ আগে যিনি মারা গেছেন সেই লোক আপনার বসার ঘরে বসে টিভি দেখতে পারে না।
জোয়ার্দার বললেন, সেটা বুঝতে পারছি। বুঝতে পারছি বলেই আপনার কাছে এসেছি।
শায়লা বললেন, আপনি বুঝতে পারছেন না। আপনার বুঝতে পারার কথা না। শায়লার ভুরু কুঁচকে আছে। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি গভীর সমুদ্রে পড়েছেন।
জোয়ার্দার বললেন, আপনার অ্যাসিস্ট্যান্ট করিম বলছিল আপনার সুপ্তি নামের কোনো মেয়ে নেই।
শায়লা বলল, এই প্রসঙ্গ আপাতত থাকুক আমি ছবিগুলো নিয়ে চিন্তা করছি। আপনার মেয়ের কোলে যে বিড়াল আর সোফায় শুয়ে থাকা বিড়াল তো একই বিড়াল।
দেখতে একরকম মনে হলেও এক বিড়াল না। আমার মেয়ের বিড়ালটার নাম পুফি। পুফি খুবই শান্ত। আর এই বিড়ালটার নাম কুফি। এটা ভয়ংকর বিড়াল।
ভয়ংকর কোন অর্থে?
কুফি প্রায়ই আমার শ্যালক রঞ্জুকে আক্রমণ করে। রঞ্জুকে কুফির কারণে হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে হয়েছে।
আমি আপনার শ্যালকের সঙ্গে কথা বলব। তার টেলিফোন নাম্বার দেয়া যাবে না? এই নিন কাগজ তার টেলিফোন নাম্বার ঠিকানা লিখে দিন।
জোয়ার্দার ঠিকানা লিখতে লিখতে বললেন, কুফি তুহিন-তুষারকেও অ্যাটাক করেছিল।
ওরা কারা।
ওরা দু’জন যমজ বোন। আমার বাসায় কাজ করত। এখন অবিশ্যি কাজ করে না।
শায়লা বললেন, আমি এই দুই বোনের সঙ্গেও কথা বলব।
দুই বোন রঞ্জুর বাসায় আছে। রঞ্জুর ঠিকানা লিখে দিয়েছি। আমি কি এখন চলে যাব?
শায়লা জবাব দিলেন না, তিনি একবার ছবি দেখছেন একবার জোয়ার্দারের দিকে তাকাচ্ছেন।