০৯. আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের গাড়ি

আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের গাড়িটা নেত্রকোনার দিকে যাচ্ছে। রহমান সাহেবের গ্রামের বাড়ির ঠিকানা মনে পড়েছে। বোনকে নিয়ে তিনি গ্রামে রওনা হয়েছেন। ড্রাইভার নিজেই আগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে। এত দূর যেতে পারব না। বাড়তি টাকা লাগবে। এ জাতীয় কথা একটিও বলে নি।

রহমান সাহেবের কেমন যেন শান্তি শান্তি লাগছে। যেন তিনি মস্তবড় একটা সমস্যার হাত থেকে বেচেছেন। সামনে আর কোনো সমস্যা নেই। তিনি নিচু স্বরে হঠাৎ হঠাৎ ফরিদার সঙ্গে কথাও বলছেন। তার মনে হচ্ছে ফরিদা মারা যাবার পরও তার কথা বুঝতে পারছে। এবং ফরিদা নিজেও টুকটাক দুএকটা কথা বলছে। যেমন ফরিদা বলল, ভাইজান তুমি যে চুড়িগুলি আমার জন্যে কিনেছ সেগুলি পরিয়ে দাও।

তিনি বললেন, মরা মানুষের হাতে চুড়ি পরানো ঠিক না।

ফরিদা বলল, কেউ তো আর দেখছে না। ভাইজান তুমি পরিয়ে দাও। বাম হাতে দাও, ডান হাত থ্যাঁতলে ভেঙে এমন হয়েছে চুড়ি পরাতে পারবে না।

বোনের আবদার রক্ষার জন্যেই রহমান সাহেব চুড়ি পরাচ্ছেন। তার খুবই মায়া লাগছে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

ফরিদা রাগী গলায় বলল, কাঁদবেনা তো ভাইজান। পুরুষ মানুষ কাঁদছে দেখতে আমার বিশ্রী লাগে। পুরুষ মানুষ হবে বালুর বাবার মতো শক্ত।

রহমান সাহেব চেষ্টা করছেন কান্না থামাতে। পারছেন না। তাঁর চোখের পানি ফরিদার ডান হাতের তালুতে টপ টপ করে পড়ছে।

যে কেউ দেখলেই বললে প্রথম বৃষ্টির পানি মেয়েরা মো ভঙ্গিতে হাত বাড়িয়ে ধরে, ফরিদাও ঠিক সেই ভঙ্গিতে ভাইয়ের চোখের অশ্রু হাত বাড়িয়ে ধরছে। এখনই বুঝি এই অশ্রু সে তার গালে মাখবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *