পঞ্চম অনুবাক
প্রথম সূক্ত : আত্মা
[ঋষি : ব্রহ্মা। দেবতা : আদিত্য, অধ্যাত্ম। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, জগতী]
অস্য বামস্য পলিস্য হোতুস্তস্য ভ্রাতা মধ্যমমা অস্ত্যশ্নঃ। তৃতীয়ো ভ্রাতা ঘৃতপৃষ্ঠো অস্যাত্রাপশ্যং বিপতিং সপ্তপুত্রম্ ॥১॥ সপ্ত যুঞ্জন্তি রথমেকচক্রমেকো অশ্বে বহতি সপ্তনামা। ত্রিনাভি চক্ৰমজরমনর্বং যত্রেমা বিশ্বা ভুবনাধি তস্থঃ ॥২৷৷ ইমং রথমধি যে সপ্ত তস্তুঃ সপ্তচক্রং সপ্ত বহন্ত্যশ্বাঃ। সপ্ত স্বসার অতি সং নবন্ত যত্র গবাং নিহিতা সপ্ত নামা ৷৩৷৷ কো দদর্শ প্রথমং জায়মানমন্বন্তং যদনস্থা বিভর্তি। ভূম্যা অসুরসৃগাত্মা ক্ক স্বিৎ কো বিদ্বাংসমুপ গাৎ প্ৰষ্টুমেতৎ ॥৪॥ ইহ ব্রবীতু ষ ঈমঙ্গ বেদাস্য বামস্য নিহিতং পদং বেঃ। শীষ্ণঃ ক্ষীরং দুহূতে গাবো অস্য বব্রিং বসানা উদকং পদাপুঃ ॥৫৷৷ পাকঃ পৃচ্ছামি মনসাবিজান দেবানামেনা নিহিতা পদানি। বৎসে বক্কয়েহধি সপ্ত তন্তু বি তত্নিরে কবয় ওতবা উ॥ ৬৷ অচিকিত্বংশ্চিকিতুষশ্চিদ কবীন্ পৃচ্ছামি বিদ্বনো ন বিদ্বান। বি যস্তস্তম্ভ ষডিমা রজাংস্যজস্য রূপে কিমপি স্বিদেকম্ ॥৭৷৷ মাতা পিতরমৃত আ বভাজ ধীত্যগ্রে মনসা সং হি জন্মে। সা বীভত্সর্গৰ্ভরসা নিবিদ্ধা নমস্বন্ত ইদুপবাকমীয়ুঃ ॥ ৮৷৷ যুক্তা মাতাসীদ্বুরি দক্ষিণায় অতিষ্ঠ গর্ভো বৃজনীন্তঃ। অমীমেদ বৎসসা অনু গামপশ্যদ বিশ্বরূপ্যং ত্ৰিষু যোজনেষু ॥৯॥ তিম্রো মাতৃস্ত্রীপিতৃন্ বিভ্রদেক ঊধ্বস্তস্থৌ মেমব গ্লাপয়ন্ত। মন্ত্রয়ন্তে দিবো অনুষ্য পৃষ্ঠে বিশ্ববিদো বাচমবিশ্ববিন্নাম্ ॥১০ পঞ্চারে চক্রে পরিবর্তমানে যস্মিন্নাতস্তুর্ভুবনানি বিশ্বা। তস্য নাস্তপ্যতে ভুরিভারঃ সনাদেব নচ্ছিদ্যতে সনাভিঃ ॥১১। পঞ্চপাদং পিতরং দ্বাদশাকৃতিং দিব আহুঃ পরে অর্ধে পুরীষিণ। অথেমে অন্য উপরে বিচক্ষণে সপ্তচক্রে ষডর আহুরর্পিত ॥১২। দ্বাদশারং নহি তজ্জরায় বর্বর্তি চক্রং পরি দ্যামৃতস্য। আ পুত্রা অগ্নে মিথুনাসো অত্র সপ্ত শতানি বিংশতিশ্চ তস্তুঃ ॥১৩৷৷ সনেমি চক্ৰমজরং বি বাবৃত উত্তানায়াং দশ যুক্তা বহন্তি। সূর্যস্য চক্ষু রজসৈত্যাবৃতং স্মিন্নাতস্তুর্ভুনানি বিশ্বা॥১৪৷ স্ক্রিয়ঃ সতীস্তা উ মে পুংস আহুঃ পশ্যদক্ষত্থান্নবি চেতদন্ধ। কবিঃ পুত্রঃ স ইমা চিকেত যস্তা বিজানাৎ স পিতুষ্পিতাসৎ ১৫৷৷ সাকঞ্জানাং সপ্তথমাহুরেকজং ষডিদ্যমা ঋষয়ো দেবজা ইতি। তেষামিষ্টানি বিহিতানি ধামশ স্থাত্রে রেজন্তে বিকৃতানি রূপশঃ ॥ ১৬৷৷ অবঃ পরেণ পর এনাবরেণ পদা বৎসং বিভ্ৰতী গৌরুদস্থা। সা কদ্ৰীচী কং স্বিদৰ্ধং পরাগাৎ ক স্বিৎ সূতে নহি যুথে অস্মিন্ ॥১৭৷৷ অবঃ পরেণ পিতরং যো অস্য বেদাবঃ পরেণ পর এনাবরেণ। কবীয়মানঃ ক ইহ প্র বোদ দেবং মনঃ কুততা অধি প্রজাতন্ ॥ ১৮ যে অর্বাঞ্চস্তা উ পরাচ আহুর্যে পরাঞ্চস্তাঁ উ অর্বাচ আহুঃ। ইন্দ্ৰশ্চ যা চক্ৰথুঃ সোম তানি ধুরা ন যুক্তা রজসসা বহন্তি ॥১৯ দ্বা সুপর্ণা সযুজা সখায়া সমানং বৃক্ষং পরি ষস্বজাতে। তয়োরন্যঃ পিপ্পলং স্বাদ্বত্ত্যনশ্নন্নন্যো অভি চাকশীতি। ২০৷৷ যস্মিন্ বৃক্ষে মধ্বদঃ সুপর্ণা নিবিশন্তে সুবতে চাধি বিশ্বে। তস্য যদাহুঃ পিপ্পলং স্বাদ্বগ্রে তমোনুশদ্যঃ পিতরং ন বেদ। ২১। যত্রা সুপর্ণা অমৃতস্য ভক্ষমনিমেষং বিদথাভিস্বরন্তি। এনা বিশ্বস্য ভুবনস্য গোপাঃ স মা ধীরঃ পাকমত্রা বিবেশ ॥ ২২৷৷
বঙ্গানুবাদ –এই আহ্বান করণের যোগ্য সূর্য, স্তুতির দ্বারা সকলকে পালন করে থাকেন। বায়ু এঁর মধ্যম স্থানীয় ভ্রাতা। তিনিই আকাশে জল বহন করে নিয়ে যান। এই বায়ুর তৃতীয় ভ্রাতা অগ্নি। এই প্রকার বায়ু, সূর্য ও অগ্নিরূপ জ্যোতিসমূহের মধ্যে আমি সূর্যকেই মুখ্য বলে মনে করি। …পলায়নপ্রয়াসী কিরণসমূহ অন্য জ্যোতিসমূহের তেজকে দূরীভূত করে একচক্রশালী সূর্যের রথে মিলিত হয়ে যায়। এই সূর্য সপ্ত ঋষির দ্বারা নমস্কৃত হয়ে, সপ্ত অশ্বের দ্বারা বাহিত রথে আরোহণ পূর্বক গ্রীষ্ম, বর্ষা, হেমন্ত নামক ঋতুগুলির কাল নির্ধারণ করে ভ্রমণ করে থাকেন। সেই রথে সপ্ত রশ্মিও অবস্থান করে। …আমি (অধ্যাত্ম-জিজ্ঞাসু ঋত্বিক) জানতে চাই–ভূমিকে প্রাণ দানশালী, জলকে রক্ষাকারী আত্মা কোথায় আছে? এই প্রথম উৎপন্ন প্রপঞ্চকে কে দেখেছে?…সূর্যের বিষয়ে যিনি জানেন, তিনি বলবেন কি যে, এঁর প্রতিষ্ঠা কেমন করে হয়?…সত্যলোক নামে যে স্থান আছে, সেইস্থানে কি কেউ গমনে সমর্থ?…আমি আদিত্যমণ্ডলে দৃষ্ট, শ্রুতির দ্বারা প্রতিপাদিত সেই হিরন্ময় পুরুষের স্বরূপ কে আমাকে প্রদর্শন করাবে?..সকলের মাতা (নির্মাত্ৰী) পৃথিবী সূর্যের উৎপত্তি কালেই পিতা (পালক) দ্যুলোকস্থ সূর্যের সেবা করে থাকেন এবং মন বুদ্ধির দ্বারা সম্পন্ন হয়ে যায়।…বলবতী স্ত্রীসমূহে গর্ভ স্থিত হয়, বৎস ধেনুর দিকে দর্শনমাত্রই শব্দ করে।…তিন দ্যৌ রূপ তিনটি পিতা এবং তিন পৃথিবী ৰূপ তিনটি মাতা, এর মধ্যভাগে এক সূর্য স্থিত আছেন। বিশ্বকে জ্ঞাতশীল আকাশের পৃষ্ঠে বিশ্বকে অপ্রাপ্তশালিনী বাণী আলোচিত হয়। সেই পঞ্চ অরযুক্ত একচক্র ই রথে (ঋতুরূপ কালচক্রে) সম্পূর্ণ জগৎ স্থিত আছে; তার ভারশালী অক্ষ স্বয়ং সন্তাপিত হয় না এবং সেটি পুরাতন হলেও কোন ভাবে ভঙ্গ হয় না। দ্বাদশ-মাসরূপ আকৃতি সম্পন্ন সম্বৎসর স্বয়ং চালিত হয়ে কখনও জীর্ণ হয় না এবং এই পঞ্চ ঋতুরূপ পদশালীকে স্বর্গের পরার্ধে শয়নশালী বলা হয়। হে অগ্নি! এই সম্বৎসরের সন্তানরূপ সপ্তশত বিংশতি সংখ্যক মিথুন-যুগল বিরাজমান। (৩৬০ দিবা ও ৩৬০রাত্রি)।…শ্বেতবর্ণশালিনী গাভী (আহুতি) (বৎসস্থানীয় অগ্নিকে) সম্মুখস্থ পদদ্বয়ের দ্বারা অন্নকে (অগ্নিকে) নিম্নদিকে এবং পশ্চাদবর্তী পদদ্বয়ের উপর ভর দিয়ে বৎসকে ধারণ করে সূর্যের দিকে উখিত হচ্ছে। …হে সোম! তুমি ও ইন্দ্র যা করতে আকাঙ্ক্ষা করো (অর্থাৎ যে মণ্ডপে পরিভ্রমণ করতে চাও), সেই লোক ধারণ করণে সমর্থ হয়।..সমান মায়ার দ্বারা যুক্ত এবং সমান প্রসিদ্ধিশালী দুটি সুন্দর পক্ষী (জীবাত্মা ও পরমাত্মা) একই বৃক্ষের (আদিত্যের) উপর উপবিষ্ট। পরন্তু একটি পক্ষী (জীবাত্মা) সুস্বাদু পীপলকে (দেহ হতে উদ্ভূত সুখ-দুঃখরূপ ফলকে)। ভোজন (ভোগ) করে ও অপরটি (পরমাত্মা) তা ভোজন না করে সবকিছু দর্শন করতেই থাকে। বৃক্ষের যে ভাগ সুস্বাদু বলা হয়, তাতে যে মধুপানকারী পক্ষী বসে থাকে, সে সৃষ্টির বিস্তার করে। থাকে। …ইত্যাদি।
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অস্য বামস্য ইত্যনুবাকস্য সলিলগণমধ্যে পাঠঃ। (সূত্র, কৌ, ৩/১, ৩/৭)।..সলিলগণশ্চ আপো হি ষ্ঠা ইতি সূক্তে (১/৫) দ্রষ্টব্য। অস্য বামস্যেতি সূক্তমন্ত্রা ঋগন্তৰ্ভূতে তস্মিন্নেব সূক্তে (খ. ১৬৪) দৃষ্টাঃ। তত্র তদ্ভাষ্যং সায়নীয়ং দ্রষ্টব্যং। (৯কা, ৫অ. ১সূ.)৷
টীকা— এই অনুবাকের সলিলগণে পাঠ আছে। সুতরাং প্রথম কাণ্ডের প্রথম অনুবাকের পঞ্চম সূক্তে (আপো হি ষ্ঠা ইত্যাদি) এই সম্পর্কিত বিস্তৃত আলোচনা দ্রষ্টব্য। ঋগ্বেদের ১ম মণ্ডলের ১৬৪ সূক্তে এই সম্পর্কে ব্যাখ্যা আছে। এই মন্ত্রগুলির মধ্যে আধ্যাত্মিক পক্ষে যে অর্থ পাওয়া যায়, তা অবশ্য অথর্ববেদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয়; কারণ আভিচারিক ক্রিয়ায় যথাযথ মন্ত্রই বিনিয়োগে প্রযোজ্য, তার আধ্যাত্মিকতা বা রূপকত্ব প্রযোজ্য নয়। (৯কা, ৫অ. ১সূ.)।
.
দ্বিতীয় সূক্ত : আত্মা
[ঋষি : ব্রহ্মা। দেবতা : গৌ, বিরাট, অধ্যাত্ম, মিত্রাবরুণ। ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ, শক্করী, ভুরিক]
যদ গায়ত্রে অধি গায়ত্রমাহিতং ত্ৰৈষ্ঠুভং বা ত্রৈষ্ঠুভান্নিরক্ষত। যদ্বা জগজ্জগত্যাহিতং পদং য ইৎ তদ বিদুস্তে অমৃতত্বমানশুঃ ॥১॥ গায়ত্রেণ প্রতি মিমীতে অকৰ্মৰ্কেণ সাম ত্রৈফ্টভেন বাক৷ বাকেন বাকং দ্বিপদা চতুষ্পদাক্ষরেণ মিমতে সপ্ত বাণীঃ ॥ ২॥ জগতা সিন্ধুং দিব্যস্কয়দ রথন্তরে সূর্যং পর্যপশ্যৎ। গায়ত্রস্য সমিধস্তি আহুস্ততো মা প্র রিরিচে মহিত্বা ৷ ৩৷৷ উপ হয়ে সুদুঘাং ধেনুমেং সুহস্তো গোধুগুত দোহদেনা। শ্রেষ্ঠং সবং সবিতা সাবিষমন্নাহভীদ্বো ঘর্মশুদু ধু প্র বোচৎ। ৪। হিন্বতী বসুপত্নী বসূনাং বৎসমিচ্ছন্তী মনসাভ্যাগা। দুহামশ্বিভ্যাং পয়ো অগ্ন্যেয়ং সা বর্ধতাং মহতে সৌভগায় ৷৷ ৫৷৷ গৌরমীমেদভি বৎসং মিষন্তং মূর্ধনং হিঙঙকৃণোন্মাতবা উ। সৃক্কাণং ঘর্মমভি বাবশানা মিমাতি মায়ুং পয়তে পয়োভিঃ ॥ ৬অয়ং স শিঙক্তে যেন গৌরভীবৃতা মিমাতি মায়ুং ধ্বসনাবধি শ্রিতা। সা চিত্তিভির্নি হি চকার মর্ত্যান্ বিদজদ্ভবন্তী প্রতি বব্ৰিমৌহত ॥৭॥ অনচ্ছয়ে তুরগাতু জীবমেজ ধ্রুবং মধ্য আ প্যানা। জীবো মৃতস্য চরতি স্বধাভিরমর্তো মর্ত্যেনা সযোনিঃ ৮বিধুং দদ্রাণং সলিলস্য পৃষ্ঠে যুবানং সন্তং পলিতো জগার। দেবস্য পশ্য কাব্যং মহিত্বদ্যা মমার স হ্যঃ সমান ॥ ৯৷৷ য ঈং চকার ন সো অস্য বেদ য ঈং দদর্শ হিরুগিনু তস্মাৎ। স মাতুর্যোনা পরিবীতত অন্তর্বহুপ্রজা নিখুঁতিরা বিবেশ। ১০ অপশ্যং গোপামনিপদ্যমানমা চ পরা চ পথিভিশ্চরন্তম। স সত্ৰীচীঃ স বিষুচীর্বসান আ বরীবর্তী ভুবনেন্বন্তঃ ॥১১। দৌর্নঃ পিতা জনিতা নাভিরত্র বন্ধুনো মাতা পৃথিবী মহীয়। উত্তানয়োশ্চম্বো যোনিরন্তরা পিতা দুহিতুৰ্গৰ্ভমাধাৎ ১২৷৷ পৃচ্ছামি বা পরমন্তং পৃথিব্যাঃ পৃচ্ছামি বৃষ্ণো অশ্বস্য রেতঃ। পৃচ্ছামি বিশ্বস্য ভুবনস্য নাভিং পৃচ্ছামি বাচঃ পরমং ব্যোম। ১৩ ইয়ং বেদিঃ পরো অন্তঃ পৃথিব্যা অয়ং সোমো বৃষ্ণো অশ্বস্য রেতঃ। অয়ং যজ্ঞো বিশ্বস্য ভুবনস্য নাভিব্রহ্মায়ং বাচঃ পরমং ব্যোম ॥ ১৪ ৷৷ ন বি জানামি যদিবেদমস্মি নিণ্যঃ সন্নদ্ধো মনসা চরামি। যদা মাগন প্রথমজা ঋতস্যাদিদ বাচো অণুবে ভাগমস্যাঃ ॥ ১৫৷৷ অপাঙ প্রাঙেতি অধয়া গৃভীতোহমর্তো মতে সযোনিঃ। তা শন্তা বিমূচীনা বিয়ন্তা ন্যন্যং চিকু্যর্ন নি চিকুরন্য। ১৬ সপ্তাধগর্ভা ভুবনস্য রেতো বিষ্ণোস্তিষ্ঠন্তি প্রদিশা বিধর্মণি। তে ধীতিভিৰ্মনসা তে বিপশ্চিতঃ পরিভুবঃ পরি ভবন্তি বিশ্বতঃ ॥ ১৭। ঋচো অক্ষরে পরমে ব্যোম যস্মিন্ দেবা অধি বিশ্বে নিষেদুঃ। যস্তন্ন বেদ কিমৃচা করিষ্যতি য ইৎ তদ বিদুস্তে অমী সমাসতে ৷ ১৮ ॥ ঋচঃ পদং মাত্ৰয়া কল্পয়ন্তোহধর্চেন চাপুবিশ্বমেজৎ। ত্রিপাদ ব্ৰহ্ম পুরুরূপং বি তষ্টে তেন জীবন্তি প্ৰদিশশ্চতঃ ॥ ১৯৷৷ সূর্যবসাদ ভগবতী হি ভূয়া অধা বয়ং ভগবন্তঃ স্যাম। অদ্ধি তৃণময়ে বিশ্বদানীং পিব শুদ্ধমুদমাচরন্তী। ২০৷৷ গৌরিন্মিমায় সলিলানি তক্ষত্যেকপদী দ্বিপদী সা চতুষ্পদী। অষ্টাপদী নবপদী বভূবুষী সহস্রাক্ষরা ভুবনস্য পঙক্তিস্তস্যাঃ সমুদ্ৰা অধি বি ক্ষরন্তি। ২১। কৃষ্ণং নির্যনং হয়ঃ সুপর্ণা অপো বসানা দিবমুৎপন্তি। ত আববৃত্র সদনাদৃতস্যাদিদ ঘৃতেন পৃথিবীং বৃদুঃ॥ ২২। অপাদেতি প্রথমা পদ্বতীনাং কস্তদ বাং মিত্রাবরুণা চিকেত। গর্ভো ভারং ভরত্যা চিদস্যা ঋতং পিপর্তনৃতং নি পাতি ॥ ২৩ বিরাড় বাগ বিরাট পৃথিবী বিরাডন্তরিক্ষং বিরাট প্রজাপতিঃ। বিরামৃত্যুঃ সাধ্যানামধিরাজো বভূব তস্য ভূতং ভব্যং বশে স মে ভূতং ভব্যং বশে কৃণোতু। ২৪। শকময়ং ধূমমারাদপশ্যং বিমূবতা পর এনাবরেণ। উক্ষাণং পৃশ্নিমপচন্ত বীরাস্তানি ধর্মাণি প্রথমান্যাসন্ ৷৷ ২৫H. : এয়ঃ কেশিন ঋতুথা বি চক্ষতে সংবৎসরে বপত এক এষা। বিশ্বমনন্যা অভিচষ্টে শচীভিজ্রাজিরেকস্য দদৃশে ন রূপম্ ॥ ২৬। চত্বারি বাক পরিমিতা পদানি তানি বিদুব্রাহ্মণা যে মনীষিণঃ। গুহা ত্রীণি নিহিতা নেয়ন্তি তুরীয়ং বাচো মনুষ্যা বদন্তি। ২৭ ইন্দ্রং মিত্রং বরুণমগ্নিমাহুরথো দিব্যঃ স সুপর্ণো গরুত্মা। একং সদ বিপ্ৰা বহুধা বদন্ত্যগ্নিং যমং মারিশ্যামাহুঃ ॥ ২৮
বঙ্গানুবাদ –গায়ত্রীর মধ্যে গায়ত্র এবং ত্রৈষ্টুভে ত্রিষ্টুপ নিরতক্ষিত (বা নিহিত) হয়ে থাকে এবং জগতীতে জগৎ নিহিত আছে। এটি বাস্তবিকভাবে জ্ঞাতশালী জন অমৃতত্ব ভোগ করে। গায়ত্রের দ্বারা অর্ক, অর্কের দ্বারা সাম, সাম হতে ত্রিষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ হতে বাক্ এবং বাকের দ্বারা দ্বিপদা, চৌপদা ইত্যাদি ছন্দ ও সেই ছন্দের দ্বারা সপ্ত বাণীকে (সুরকে) শব্দবান্ করে তোলা হয়।…গো-সমূহকে নিপুণ হস্তে দোহনশালী আমি সরলতার সাথে দোহনশালিনী (সুদুঘা) ধেনুকে, দোহন করে নিকটে ডাকছি। বন হতে বৎসকে কামনা করে, ধনের দ্বারা পালন করণের যোগ্য এই ধেনুই শব্দ পূর্বক ধনবাৰ্গণের প্রাপ্ত হয়ে থাকে। এই সৌভাগ্যের নিমিত্ত আমাদের গৃহে শ্রীবৃদ্ধি লব্ধ থোক এবং অশ্বিনী কুমারদ্বয়ের নিমিত্ত দোহন হোক।…আমি যমলোকের ভয়ে কম্পায়মান প্রাণীর গৃহে শয়ন করে শ্বাস গ্রহণ করছি। অমর্ত্য (অমরণধর্মী) জীব মরণধর্মী প্রাণীসমূহের সযোনি (সমজন্মা) হয়ে স্বধার সাথে আজ্য ভক্ষণ করে থাকে।…ঈশ্বরের কুশলতা দেখো যে, যে চন্দ্রমা অদ্য মৃত্যু লাভ করেছে (অর্থাৎ অস্তমিত হয়েছে), সে-ই পুনরায় আগামী কল্য শ্বাস গ্রহণ করছে (অর্থাৎ উদিত হচ্ছে)।…গর্ভ করণশালী জন, গর্ভের তত্বকে জ্ঞাত হয় না। গর্ভের ভিতরে যে গমন করে, সে-ই (অর্থাৎ সেই জ্বণই) গর্ভকে দর্শন করে। মাতার ভোজন ব্যবহারে পুষ্ট হয়ে সেই সময় মতো উৎপন্ন হয়ে থাকে। সে বহুবার উৎপত্তি-রূপশালিনী নির্ঋতির জালে পতিত হয়।..আমরা সংরক্ষক আত্মাকে জগৎ-রূপ চক্রে ঘূর্ণিত হতে দেখেছি। তাকে ইহলোক-পরলোকে সত্ত্ব-রজঃ তমাত্মক মার্গে বিচরণ করতেও দেখেছি। সে আপনার মধ্যে ব্যাপ্ত ইন্দ্রিয়সমূহের (বা ইন্দ্রিয় জগতের) মধ্যে পরিভ্রমণ করছে।…বেদী হলো পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বস্তু (অর্থাৎ পরম স্থান); সোমই বর্ষক ব্যাপকের বীর্য; যজ্ঞই সম্পূর্ণ জগতের নাভি এবং ব্রহ্মবাণীই পরম ব্রহ্ম।…আত্মা আমরণ ধর্মশীল, তা মর্ত্য মনের সাথে গর্ভ হতে প্রকট হয়ে থাকে। তার মধ্য দিয়েই আত্মা ব্রহ্মে মিলিত হয়ে তৎ-রূপ হয়ে যায় এবং হৃদয় তার নিকট পৌঁছাতে পারে না।…হে পৃথিবী! তুমি জলময় সূর্যের দ্বারা জল রূপ সমৃদ্ধির সাথে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। আমরাও তোমার জল রূপ ধনের দ্বারা সম্পন্ন হয়েছি। তুমি সেই মেঘকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে শুদ্ধ জলকে সেবন করো, সূর্যের কিরণের দ্বারা নীত জলকে পান করো।…এই বাণীরূপ ধেনুই জগৎ-সংসারের নির্মাত্ৰী। সে-ই জলের উৎপত্তিশালিনী। …পৃথিবী সকলের ভারই ধারণ করে; তবে সে সত্যবাদী জনকে পালন করে এবং মিথ্যাবাদী জনকে বিনাশ করে থাকে।…যে সূর্য, অগ্নি ও বায়ু আপন কর্মের দ্বারা সময়ে সময়ে জগতের প্রতি অনুকম্পা করে থাকেন, তাদের মধ্যে এক অগ্নি সম্বৎসরে ধরাকে ভস্ম করে থাকেন; এর দ্বারা তিনি কার্যের যোগ্য হয়ে যান এবং সূর্য আপন কর্ম সাধিত করেন; তথা বায়ুর রূপ দেখা যায় না, কেবল তার গতিই দেখা যায়।…বাণীর চারিটি পদ আছে, তা বিদ্বান্ ব্রাহ্মণ জ্ঞাত আছেন। তার মধ্যে তিনটি পদ গুপ্ত আছে এবং চতুর্থ পদ রূপ বাণীকে মনুষ্যগণ উচ্চারণ করে থাকে। তত্বজ্ঞানী বিদ্বান্ ব্যক্তি অগ্নি, মিত্র, বরুণ ইত্যাদিকে অগ্নিই বলে থাকেন এবং দ্যুলোকে যে, সুন্দর পর্ণযুক্ত বন্দনীয় সূর্য আছেন, তাঁকেও অগ্নিই বলে থাকেন। এই এক অগ্নিকে আত্মস্বরূপের দ্বারা দর্শনশালী বিদ্বান (এঁকে) মাতরিশ্বা, যম, অগ্নি ইত্যাদি নানা নামে আহ্বান করে থাকেন।
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –যদ গায়ত্রে ইতি সূক্তস্য পূর্বসূক্তেন সহ উক্তো বিনিয়োগঃ৷৷ (৯কা, ৫অ. ২সূ.)।
টীকা –এই সূক্তটির বিনিয়োগ পূর্ব সুক্তে উক্ত হয়েছে।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য এই যে, এই সূক্তে বৈদিক ব্রহ্মবিদ্যার মর্মস্পর্শী রীতির দ্বারা বিশেষভাবে চিন্তা ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। একেই আত্মবিদ্যা বলা হয়ে থাকে। এটিকে সদা গুপ্তবিদ্যা বোঝানো হয়েছে এবং অধিকারী পুরুষকেই এর উপদেশ দানের বিধান রয়েছে। এই কারণে এই বিষয়টিকে এইস্থানে স্পষ্ট ভাষায় কথনের পরিবর্তে গুঢ় ভাষা ও ব্যঙ্গ শব্দে বর্ণনা করা হয়েছে। সূক্তকার পরমাত্মা ও আত্মার স্পষ্ট নামোল্লেখ না করে সংকেতের মাধ্যমে লিখেছেন–দুই উত্তম পঙ্খশালী পক্ষী একত্রে সাথে-সাথে অবস্থান করায় পরস্পর মিত্র হয়ে থাকে এবং সেই দুই পক্ষী একই বৃক্ষের উপর মিলে-মিশে থাকে; পরে তাদের মধ্যে একটি তো, সেই বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করে, দ্বিতীয়টি কেবল দর্শন করতে থাকে, পরন্তু ভক্ষণ (ভোগ) করে না। (১সূ. ২০ মন্ত্র)। এই মন্ত্রের দ্বারা ব্ৰহ্ম ও জীবের একতা ও তাদের অন্তর, দুটি কথায় খুব উৎকৃষ্ট প্রকারে প্রকাশ করা হয়েছে। এইরকমে, শেষ মন্ত্রে স্পষ্ট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, সুপর্ণ, যম ইত্যাদি অনেক দেবতার নাম গ্রহণ করা হয়, কিন্তু বাস্তব পক্ষে তা এক পরমাত্মারই বিভিন্ন রূপ এবং সেই একতম পরমাত্মাই জগৎ-সংসারের আদি স্রোত ও একমাত্র আধার। এইভাবে, এই সমস্ত সূক্তটি আত্মবিদ্যার দৃষ্টিতে বড়ই মহত্বপূর্ণ হয়ে আছে ॥ (৯কা, ৫অ. ২সূ.)।
[ইতি নবমং কাণ্ডং সমাপ্ত]