ইতিমধ্যে সেনবাবুদের বাড়িতে উৎসবের কলরোল তখনও শেষ হওয়ার নাম নেই। খাওয়া-দাওয়া, গান বাজনা, লাঠিখেলা, কুস্তি, কবিগান, যাত্রা বিরামবিহীন চলল ভিক্টোরিয়ার ভারতেশ্বরী উপাধি ও দেশের শাসনভার গ্রহণের উল্লাসে।
কিন্তু সেনবাড়ির উৎসবে সেনপাড়া জগদ্দলকে এত নিষ্প্রাণ ও বিমর্ষ কোনওদিন দেখা যায়নি শুধু নয়, ঘরে ঘরে এক দারুণ উৎকণ্ঠায় ও হতাশায় দম বন্ধ হয়ে আসছে। মুখে মুখে শুধু খাজনা বৃদ্ধি, জমি হাতছাড়া, ফসল উধাওয়ের কথা। মাথা চাপড়ানো, বুক চাপড়ানো। শোনা গেল, শ্রীরামপুর থেকে যে খবরের কাগজ বেরোয় তাতে নাকি কোম্পানির খাজনা আইনের সম্পর্কে কী সব লেখা হয়েছে এবং সেই খাজনা আইনের অসারত্ব চোখে আঙুল দিয়ে চাষীপ্রজাদের দুর্দশার কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু সে মায়াবাড়ানো আইন যাদের জন্য তাদের কোনও আশা নেই, ভরসা নেই। দুরন্ত অভিশাপে ও ক্ষোভে ঘরে ঘরে নিজেদের মধ্যে বিবাদ আর কান্নাকাটি। মহাজনেরা ও জমিদারেরা হৃষ্ট সওয়ারের মতো চাষীপ্রজাদের ঘাড়ের উপরে ঋণের বোঝা নিয়ে চেপে বসল।
এমনি সময় খবর এল, নারান কাতুকে নিয়ে রিষড়ের চটকলে কাজ করতে গিয়েছে। শ্যাম এতদিন বাদে নারানকে সত্যিই অভিশাপ দিল। লখাই ভাবল, কলেই যদি খাটতে যাবি হতভাগা, তবে সেদিন আমার হাতে প্রাণ দিতে তোর এত প্রাণের মায়া কেন হয়েছিল?
গঙ্গার বুকের উপর দিয়ে বজরা ফিরে আসছে দিল্লি থেকে উৎসব করে। বাঈজীর মিষ্টি গলার গান, নাচের নূপুরধ্বনি দুধারের জনপদ দিয়ে যেতে লাগল ছড়িয়ে। যমুনা জাহ্নবী পেরিয়ে হুগলি নদীতে এসে পড়ল ঢোলকরতালের ঝমাঝম রামা হো শব্দের তাণ্ডবে উৎসবের জোয়ারে। নপুংসকের মেয়ে বাঈজীর পোশাকে উকট কামোখানের লাগ ঝমাঝম্ নাচে বজরার ছাদে হল্লা মাতালের।