০৮.
আমি মামাকে গাইগার কাউন্টারে বেশি সিগন্যাল পাওয়ার ঘটনাটা বলতেই পারলাম না। সেটা বলার জন্য মামাকে একা পাওয়া দরকার কিন্তু মামাকে একা পাওয়া যাচ্ছিল না। আমার সাথে মাহবুব, ডোরিন আর টনি, তারা সব সময়েই আশে পাশে আছে।
আমাদেরকে ফিরে আসতে দেখে মামা খুশি হলো, বলল, “তোমরা ভালোয় ভালোয় ফিরে এসেছ। ভেরি গুড। তোমাদের দেরী দেখে একটু চিন্তা হচ্ছিল।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কী চিন্তা হচ্ছিল মামা।”
“তোরা বাচ্চা মানুষ, আবার কোনো ঝামেলায় পড়িস কিনা।”
“না, মামা ঝামেলায় পড়ি নাই। আমরা চারজন একসাথে। আমাদের চারজনের বয়স যোগ করলে আমরা দুইজন বড় মানুষের সমান।”
ডোরিন বলল, “কিংবা একজন বুড়ো মানুষের সমান।”
মামা ডোরিনের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমাদের আব্বু কয়েকবার ফোন করেছিলেন।”
“আব্বু কী বলেছেন?”
“আমাকে বলেছেন তোমাদের সবাইকে নিয়ে মনি কাঞ্চনে যেতে। একসাথে লাঞ্চ করবেন।”
আমি আনন্দের মতো শব্দ করলাম। ডেইলি সাপ্লাই হিসেবে আমরা দুপুরে খাওয়ার জন্য যেটা এনেছি মনি কাঞ্চনের খাওয়া তার থেকে হাজার গুণ ভালো হওয়ার কথা। আমার সাথে সাথে ডোরিন অনেক জোরে এবং টনি আস্তে আস্তে হাততালি দিল। শুধু মাহবুব কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
মামা মাহবুবের দিকে তাকিয়ে বলল, “কী হলো, তোমার যেতে আপত্তি আছে?”
“না, ঠিক নাই, কিন্তু
“কিন্তু কী?”
“এই রকম বড় বড় হোটেল রিসোর্টে কাটা চামুচ দিয়ে কিভাবে খেতে হয় জানি না তো“।
ডোরিন বলল, “তুমি কী ভেবেছ আমি ওসব জানি? আর হোটেলে এইগুলো কেউ মানে? দুই হাতে খাবলা দিয়ে গপ গপ করে খাব।”
মামা বলল, “আমি সব নিয়ম জানি। আমি শিখিয়ে দেব। একবার নিয়ম জানা থাকলে যত খুশি ভাঙতে পারবে। আধুনিক কবিতার মতো।”
আমি অবাক হয়ে বললাম, “আধুনিক কবিতার মতো। খাওয়ার সাথে কবিতার কী সম্পর্ক?”
“তুই যদি ছন্দ দিয়ে কবিতা লিখতে পারিস শুধু তাহলেই ছন্দ ভেঙ্গে আধুনিক কবিতা লিখতে পারবি।”
“আমি ভেবেছিলাম তুমি সায়েন্টিস্ট”
মামা গরম হয়ে বলল, “সায়েন্টিস্ট হলে সে দুনিয়ার অন্য কিছু জানতে পারবে না?”
আমি আর কিছু বললাম না। বড় মানুষদের সাথে যুক্তি দিয়ে কথা বলার কোনো উপায় নাই।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “আমরা কেমন করে যাব, মামা?”
“এই মাইক্রোবাসেই চলে যাই।”
এবারে অন্য সবাই আনন্দে হাততালি দিল।
মাহবুব মাইক্রোবাসের সামনে মামার পাশে বসল, তার নাকি বিজ্ঞান, নিয়ে অনেকগুলো প্রশ্ন আছে। আমরা বাকী তিনজন পিছনে ঢুকে গেলাম। কাজেই আমাকে একা পাওয়া গেল না। কিছু বলতেও পারলাম না।
সত্যিকারের রাস্তায় ওঠার আগে আমরা উঁচু নিচু জায়গা দিয়ে গাড়ির ভেতর উলট পালট খেতে খেতে যেতে লাগলাম। সত্যিকারের সিটে বসে এ রকম রাস্তায় মোটামুটি যাওয়া যায়, কিন্তু এখানে আমরা মাইক্রোবাসের ভিতরে উলট পালট হতে লাগলাম। সত্যি কথা বলতে কী তিনজন মিলে চিৎকার করে আহা উঁহু করে এমন অবস্থা করলাম যে মামা কয়েকবার তার মাইক্রোবাস থামিয়ে আমাদের খবর নিতে নেমে এলো। আমরা তখন বললাম যে আমাদের আসলে সেরকম কোনো সমস্যা নেই, চিৎকার দিতে আনন্দ হয় সেইজন্য চিৎকার দিচ্ছি। মামা ব্যাপারটা ঠিক ধরতে পারল বলে মনে হলো না। ধরতে না পারলে নাই, বড় মানুষদের কোনো কিছু সহজে বোঝানো যায় না, শুধু শুধু সময় নষ্ট করে লাভ নেই।
সত্যিকারের রাস্তায় উঠার পর কিছুক্ষণের মাঝেই আমরা মনি কাঞ্চন পৌঁছে গেলাম। গেটে আমাদের থামাল, মামার সাথে কথা বলল, লাঠির আগায় লাগানো আয়না দিয়ে গাড়ির নিচে দেখল, গাড়ির ভিতরে উঁকি দিল এবং রীতিমতো চমকে উঠল। তখন বার মামার সাথে কথা বলল, কোথায় জানি ফোন করল তখন আরো একজন মানুষ নেমে এলো, সে আবার মামার সাথে কথা বলল, তখন শেষ পর্যন্ত আমাদের ঢুকতে দিল।
মামা পার্কিং লটে তার মাইক্রোবাস পার্ক করে আমাদেরকে নিয়ে মনি কাঞ্চনের বড় গেট দিয়ে ভিতরে রওনা দিল। সেখানে মেটাল ডিটেকটর লাগানো গেট দিয়ে আমরা ভিতরে ঢুকলাম। আমি একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম, মামার পিস্তলটা নিয়ে নাকি আবার কোনো ঝামেলা হয়। কোনো ঝামেলা হলো না। মামা নিশ্চয়ই তার পিস্তলটা মাইক্রোবাসে রেখে এসেছে। পিস্তল রাখার জন্য মাইক্রোবাসে একটা গোপন বাক্স আছে। এটা খুলতে পাসওয়ার্ড লাগে, মামা জানে না, আমি গোপনে পাসওয়ার্ডটাও বের করে ফেলেছি।
লবিতে ডোরিন আর টনির আব্বু আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল, আমাদের দেখে এগিয়ে এল। ছেলে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বলল, “কী খবর? তোমাদের এডভেঞ্চার কেমন হলো?”
ডোরিন বলল, “তুমি চিন্তা করতে পারবে না আমরা কতো মজা করেছি।”
“দেখেই বোঝা যাচ্ছে। যাও বাথরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে এসো।” আমাকে আর মাহবুবকে দেখিয়ে বলল, “তোমাদের বন্ধুদের নিয়ে যাও।”
কাজেই ডোরিন আর টনির সাথে আমরা লিফটে করে উপরে উঠে গেলাম। ডোরিন আর টনি তাদের আব্বু আম্মুকে নিয়ে যেখানে আছে সেটা রীতিমতো একটা বাসা। অনেকগুলি বেড রুম, বড় একটা লিভিং রুম, অনেকগুলো বাথরুম। না জানি এই রুমগুলোর ভাড়া কতো হাজার টাকা।
লিভিং রুমের ভিতর টনির বিখ্যাত কাদের মামা এবং তাদের মায়ের সাথে দেখা হলো। কাদের মামার চেহারাটা যেরকম কল্পনা করেছিলাম ঠিক সেরকম। মাথার চুল কম, অল্প যে কয়টা চুল আছে সেটা সারা মাথায় ল্যাপটে রাখা হয়েছে, নাকের নিচে নবাব সিরাজদ্দৌলার মতো গোঁফ, যখন মুখ খুলেছে দেখলাম পান খেয়ে তার দাঁত তরমুজের বিচির মতো কালো। ডোরিন আর টনির আম্মু ফর্সা গোলগাল, এবং হাসিখুশি। বড়লোক মহিলাদের চেহারা যেরকম হয়।
আমাদের দেখে ডোরিনের আম্মু বলল, “তোমরা এসেছ শেষ পর্যন্ত? আমি তো দুশ্চিন্তাই করতে শুরু করেছিলাম। যদিও তার চেহারা এবং গলায় দুশ্চিন্তার কোনো চিহ্ন ছিল না।
ডোরিন বলল, “না আম্মু, আমাদের সাথে মাহবুব আর টোপন ছিল, তারা সব সময় আমাদের দেখে শুনে রেখেছে।”
“ভেরি গুড।” তারপর আমাদের দুইজনের দিকে তাকিয়ে বলল, “বাচ্চারা, তোমরা দেখো আমার এই ছেলে মেয়ে দুজনকে একটু রিয়েল লাইফের এক্সপোজার দিতে পার কিনা। এরা বড়লোকের বাচ্চাদের মতো চব্বিশ ঘণ্টা প্রটেক্টেড লাইফে থাকে। আমি ভাবছিলাম একটু মাঠে ঘাটে ঘুরাঘুরি করে দেখুক সত্যিকারের লাইফটা কী রকম। কোনো কিছু বুঝে সুঝে না একটু দেখে শুনে রেখো
ডোরিন চোখ বড় বড় করে বলল, “কী বলছ মা, আমরা কিছু বুঝি সুঝি না!”
“ঠিক আছে। ঠিক আছে, তোরা সব কিছু বুঝিস।”
ডোরিন আর টনি আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই তাদের কাদের মামা বলল, “আপা, এদেরকে পথে ঘাটে বেশি ঘুরতে ফিরতে দিয়ো না। এদের ব্রেনের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাবে। আমি এতো সোজা একটা প্রবলেম দিয়েছি সেটাও করতে পারে নাই।”
টনি জিজ্ঞেস করল, “কোন প্রবলেম মামা?”
“ওই যে তিন তালা যদি তিরিশ ফুট উঁচু হয় তাহলে সাত তালা কতো ফুট উঁচুতে।”
“ও! সেইটা। কেন সেইটাতো সোজা।”
“তাহলে পারিস না কেন?”
“পারি নাই? টনি চিন্তা করার একটা অভিনয় করল খুবই কাঁচা অভিনয়, শুধু আমরা বুঝতে পারলাম। তারপর বলল, “নব্বই ফুট।” তারপর ভুরু কুচকে বলল, “হয়েছে?”
কাদের মামার মুখটা একটু কালো হয়ে গেল। কাদের মামা চায় কেউ তার প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারুক যেন সারাক্ষণ সেটা দিয়ে খোটা দিতে পারে। মুখ কালো করেই আমতা আমতা করে বলল, “যা। হয়েছে।”
টনি বলল, “মামা, তুমি সব সময় আমাদের ইন্টারেস্টিং প্রবলেম করতে চাও। এইবার আমি তোমাকে একটা প্রবলেম দিই।”
কাদের মামার মুখটা কেমন জানি বাঁকা হয়ে গেল। সেই বাঁকা মুখেই জিজ্ঞেস করল, প্রবলেম দিবি? দে।”
টনিকে আজকে সকালেই আমরা শিখিয়ে দিয়েছি। টনি মুখটা সূচালো করে বলল, “একটা গ্রামে একটা নাপিত শুধু তাদের দাড়ি শেভ করে দেয় যারা নিজেরা নিজেদের দাড়ি শেভ করে না।”
টনি থামল। কাদের মামা বলল, “তাহলে?”
টনি বলল, “নাপিত কী নিজের দাড়ি নিজে শেভ করে?”
কাদের মামা মুখটা আরো বাঁকা করে বলল, “এইটা তোর প্রবলেম?”
“হ্যাঁ।”
মামা মুখটা বাঁকা করে চিন্তা করতে শুরু করল। মামার বাঁকা মুখটা প্রথমে সোজা হয়ে গেল তারপর কেমন জানি ঝুলে গেল। তারপর মাছের মতো একবার খুলতে লাগল তারপর একবার বন্ধ হতে লাগল।
ডোরিনের আম্মু বলল, “অনেক হয়েছে। এখন যা বাথরুমে গিয়ে ভালো করে হাত মুখ ধুয়ে নিচে চল। লাঞ্চ করতে হবে। তোর আব্বু সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে।
ডোরিন আর টনি আমাদের বাথরুমে নিয়ে গেল। অনেকগুলো বিশাল বড় বড় বাথরুম। মনে হয় বাথরুমের ভিতর ফুটবল খেলা না গেলেও ব্যাডমিন্টন খেলা যাবে। টনি টান দিয়ে ধবধবে সাদা টাওয়েল বের করে আমাদের হাতে দিয়ে সাবান লোশন এগুলো দেখিয়ে দিল।
আমরা একেকজন একেকটা বাথরুমে হাত মুখ ধুয়ে বের হয়ে এলাম। কাদের মামা তখনো একটুখানি হা করে চিন্তা করছে। টনি বলল, “বের করেছ মামা?”
কাদের মামা বলল, “না, মানে প্রবলেমটা ইন্টারেস্টিং
টনি বলল, না পারলে চেষ্টা করতে হবে না। তোমাকে আরেকটা প্রবলেম দিতে পারি, এবারে একটু সোজা দেখে–”।
ডোরিনের আম্মু এবারে তার ছেলেমেয়েদের ছোট একটা ধমক দিয়ে বলল, “অনেক হয়েছে। এখন নিচে যা, আমরা আসছি।”
আমরা তখন নিচে রওনা দিলাম। ঘর থেকে বের হয়ে টনি আনন্দে হি হি করে হাসতে লাগল। সারা জীবন কাদের মামা তাদেরকে জ্বালাতন করে গেছে, আজকে তার একটা প্রতিশোধ নেওয়া গেছে।
রেস্টুরেন্টে মাহবুব মামার পাশে বসল। মামা তখন মাহবুবকে ছুরি কাটা দিয়ে খাওয়া শিখিয়ে দিল। আমিও শিখে নিলাম। নিয়মটা খুবই সোজা, ছুরি যদি ব্যবহার করতেই হয় তাহলে সেটা ধরতে হবে ডান হাতে এবং সেটা দিয়ে কোনো খাবার মুখে ঢোকানো যাবে না। এছাড়া আর কোনো নিয়ম নাই যা ইচ্ছা তাই করা যাবে, যেভাবে খুশি খাওয়া যাবে।
মামা শিখিয়ে দেবার পর আমি চোখের কোণা দিয়ে এদিকে সেদিকে তাকালাম, বেশ কয়েকজন বিদেশি মানুষ আছে তারা সবাই মামার নিয়ম মানছে। দেশি বেশ কয়েকজন মানুষ আছে যাদের কথাবার্তা ভাব ভঙ্গী বিদেশিদের মতো, তারাও মামার নিয়ম মেনে খাচ্ছে।
তবে মামা নিয়ম কানুন শিখিয়ে দিলেও নিজে কিন্তু হাত দিয়ে মাখিয়ে গপগপ করে খাচ্ছে। তার দেখা দেখি আমরাও! খেতে খেতে মামা বলল, হাত দিয়ে মাখিয়ে না খেলে তার নাকি পেট ভরে না! বিয়ে বাড়ির মতো টেবিলে খাবার দিয়ে যাচ্ছে না। লাঞ্চ টেবিলে খাবার সাজিয়ে রেখেছে যার যেটা ইচ্ছা যত ইচ্ছা খাবার নিয়ে আসছে। আমি আর মামা আবার কবে ভালো করে খেতে পারব কে জানে তাই দুইজনই আচ্ছা মতন খেয়ে নিচ্ছিলাম। খাওয়া শেষ করে আমি টেবিলে রাখা দই মিষ্টি আনতে গেলাম। একটা বাটিতে করে বেশ খানিকটা দইয়ের উপর দুই দুইটা রসগোল্লা বসিয়ে আনছি, ঠিক যখন দুইজন বিদেশির টেবিলের পাশ দিয়ে হেঁটে আসছি তখন হঠাৎ করে একজন বিদেশির কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম, মানুষটা পরিষ্কার বলল, ইউরেনিয়াম’ এর আগে পিছে আরো অনেক কিছু বলছে কিন্তু শুধু এই শব্দটা আমি বুঝতে পেরেছি।
মানুষ দুইটা কি নিয়ে কথা বলছে আরেকটু ভালো করে শোনার জন্য আমি আমার হাতের চামুচটা ইচ্ছে করে নিচে ফেলে দিলাম। তারপর সেই চামুচটা তোলার জন্য নিচু হয়ে শোনার চেষ্টা করলাম মানুষ দুটো ইউরেনিয়াম নিয়ে কী বলছে। ব্যাটাদের উচ্চারণ বোঝা যায় না মনে হলো, টু থার্টি ফাইভ’ ‘রেডিও একটিভিটি’ এই দুটো শব্দও শুনতে পেলাম।
চামুচ তুলতে তো আর খুব বেশি সময় লাগে না, যদি দশ মিনিট ধরে হাতড়ে হাতড়ে চামুচ তুলতেই থাকি তাহলে শুধু এই দুজন মানুষ নয় অন্যরাও চিন্তায় পড়ে যাবে। তাই চামুচটা তুলে নিজের টেবিলে ফিরে এলাম। কিন্তু এই বিদেশি মানুষগুলো এখানে এসে ইউরেনিয়াম নিয়ে কেন কথা বলছে সেটা নিয়ে চিন্তার মাঝে পড়ে গেলাম।
আমার পাশে ডোরিন বসেছে। আমি গলা নামিয়ে তাকে বললাম, “ডোরিন তুমি কী বিদেশিদের ইংরেজি বুঝো?”
“বুঝি। কেন?”
“ঐ যে দুইটা সাদা চামড়ার বিদেশি বসে আছে দেখেছ?”
ডোরিন মাথা ঘুরিয়ে দেখে বলল, “হ্যাঁ দেখেছি। কেন, কী হয়েছে?”
“এই দুইটা মানুষ কী নিয়ে কথা বলছে শুনে আসতে পারবে?”
ডোরিন অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল। বলল, “কেন?”
“দরকার আছে। তোমাকে পরে বলব। কিন্তু মানুষ দুইটা যেন বুঝতে না পারে। বুঝেছ?”
“বুঝেছি।” ডোরিন কয়েক সেকেন্ড কী যেন একটা চিন্তা করল, তারপর বলল, “ঠিক আছে। চেষ্টা করে দেখি।” তারপর সে তার আম্মুর দিকে ঝুঁকে পড়ে বলল, “আম্মু, তোমার টেলিফোনটা একটু দেবে?”
“কেন?”
‘আমার ঈশিতাকে একটা ফোন করতে হবে। খুব জরুরি।”
“আগে খেয়ে নে তারপর ফোন করিস।”
“আমার খাওয়া শেষ। দাও ফোনটা।”
ডোরিনের আম্মু তার ফোনটা বের করে দিল। ডোরিন তখন উঠে দাঁড়িয়ে সেটা ডায়াল করার ভান করল। তারপর কানে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল। তারপর কথা বলার ভান করে একটু এগিয়ে গেল। অনবদ্য অভিনয়। কথা বলার এবং শোনার ভান করতে করতে সে ইতস্তত হাঁটতে হাঁটতে বিদেশি মানুষ দুইটার টেবিলের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
বিদেশি মানুষ দুইটা একবার আড়চোখে ডোরিনকে দেখল কিন্তু কোনো কিছু সন্দেহ করল না। ডোরিন কাছাকাছি দাঁড়িয়ে তার বন্ধু ঈশিতার সাথে কথা বলার অভিনয় করতে করতে মানুষ দুইটার কথা শোনার চেষ্টা করতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ কথা শুনে সে আবার আমাদের টেবিলে ফিরে এসে আমার পাশে বসে গেল। আমি গলা নামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কথা শুনেছ?”
“হ্যাঁ কিছু শুনেছি।”
“কী নিয়ে কথা বলছে?”
“সিমেন্ট ফ্যাক্টরি।”
আমি অবাক হয়ে বললাম, “সিমেন্ট ফ্যাক্টরি?”
“হ্যাঁ। ট্রিপল স্টার সিমেন্ট ফ্যাক্টরি। কী একটা খনিজ সিমেন্টের বস্তায় করে নিয়ে যাবে।”
‘কীসের খনিজ?”
“ঠিক বুঝতে পারি নাই–কি যেন নাম খনিজটার।”
“ইউরেনিয়াম?”
ডোরিন মাথা নেড়ে বলল, “হ্যাঁ। হ্যাঁ। ইউরেনিয়াম।”
আমি চোখ বড় বড় করে ডোরিনের দিকে তাকালাম, ডোরিন অবাক হয়ে বলল, “কী হয়েছে?”
আমি ফিসফিস করে বললাম, “বলব তোমাকে পরে বলব।”