০৮. বিজ্ঞান ক্লাস

. বিজ্ঞান ক্লাস

বিজ্ঞান ক্লাসে রেহানা আপা আজকে নানারকম জিনিসপত্র নিয়ে ঢুকলেন। টেবিলে সেগুলো সাজিয়ে রাখতে রাখতে গম্ভীর মুখে বললেন, “আজকে তোমাদের বিজ্ঞানের সৌন্দর্য দেখাব।”

রেহানা আপা টুশিদের বিজ্ঞান পড়ান। তার চেহারা খুব সুন্দর, ফরসা রং ফাঁপানো চুল, টানা-টানা চোখ। মানুষের চেহারা সুন্দর হলেই প্রথমে সবাই তাকে পছন্দ করে ফেলে, ধরেই নেয় তার চেহারা যেরকম সুন্দর মনটাও নিশ্চয়ই সেরকম সুন্দর–কিন্তু দেখা গেছে সেটা সবসময় সত্যি হয় না। রেহানা আপা মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেন কিন্তু সেগুলো বলেন শুধু তার পছন্দের ছেলেমেয়েদের সাথে। এমনিতে মানুষটা কেমন যেন নিষ্ঠুর প্রকৃতির–সবাই তাঁকে কেমন যেন ভয় পায়। তাই যখন টেবিলে নানারকম জিনিসপত্র রেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে বিজ্ঞানের সৌন্দর্যের কথা বললেন তখন ক্লাসের কেউ কোনো কথা বলল না। শুধু ফারিয়া খিলখিল করে হেসে বলল, “বিজ্ঞানের সৌন্দর্য হয় নাকি আপা? আমি শুধু ভাবতাম যে মানুষের চেহারায় সৌন্দর্য হয়।”

টুশি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারল না যে কেউ এরকম গাধার মতো একটা কথা বলতে পারে। কিন্তু রেহানা আপার কাছে সেটা গাধার মতো কথা মনে হল না। আপাও খুব মধুর হাসি দিয়ে বললেন, “হ্যাঁ ফারিয়া, ফুলের যেরকম সৌন্দর্য আছে, চেহারার যেরকম সৌন্দর্য আছে ঠিক সেরকম বিজ্ঞানেরও একটা সৌন্দর্য আছে।”

টুশি দাঁতে দাঁত চেপে একটা নিশ্বাস ফেলল, একজন টিচার কীভাবে এরকম কথা বলে? চেহারার সৌন্দর্যের কথা নয়, বলা উচিত ছিল মানুষের ভেতরকার সৌন্দর্যের কথা–চরিত্রের সৌন্দর্যের কথা। কিন্তু রেহানা আপা মনে হয় সেগুলোর কথা জানেনই না।

রেহানা আপা টেবিলে একটা চুম্বক, একটা পেন্ডুলাম, বিকারে একটু পানি, একটা মোমবাতি, কিছু মার্বেল, মার্কার পেন্সিল এসব সাজিয়ে রাখতে রাখতে বললেন, “বিজ্ঞান পড়ার আগে বিজ্ঞানকে জানতে হয়–বিজ্ঞানকে বুঝতে হয়। বিজ্ঞানকে অনুভব করতে হয়।”

ক্লাসের সবাই একটু উসখুস করে বসল, এখন না রেহানা আপা আবার গভীর জ্ঞানের একটা প্রশ্ন করে বসেন। মনে-মনে সবাই যেটা ভয় পাচ্ছিল তা-ই হল, রেহানা আপা জিজ্ঞেস করলেন, “বলো দেখি বিজ্ঞান বলতে আমরা কী বুঝি?”

টুশি তাড়াতাড়ি চিন্তা করে মনে-মনে উত্তরটা ঠিক করার চেষ্টা করল কিন্তু রেহানা আপা তার দিকে তাকালেন না, কখনোই তার দিকে তাকান না। ক্লাসের পিছনের দিকে বসে থাকা হাবাগোবা টাইপের শাফকাতকে জিজ্ঞেস করলেন। শাফকাত দাঁড়িয়ে মাথা চুলকে বলল, “হ্যাঁ ইয়ে মানে–যেটা দিয়ে মানে মেশিন টেশিন বানায় মানে হচ্ছে গিয়ে”

রেহানা আপা গর্জন করে বললেন, “গাধা কোথাকার!” তারপর মুখ ভেংচে বললেন, “যেটা দিয়ে মেশিন বানায়! বুদ্ধির চেঁকি। বসো।”

শাফকাত চট করে বসে পড়ল, টুশি একবার ভাবল হাত তোলে, কিন্তু সাহস হল না–উত্তরটা পছন্দ না হলে তার আরও খারাপ গালি শুনতে হবে। তার গায়ের রং নিয়ে চেহারা নিয়ে খোটা দেয়া হবে। রেহানা আপা কঠিন মুখে সারা ক্লাসের উপর দিয়ে চোখ বুলিয়ে ফারিয়ার দিকে তাকালেন, তখন তাঁর কঠিন মুখ নরম হয়ে গেল, চোখ হাসি-হাসি হয়ে উঠল। আপা জিজ্ঞেস করলেন, “ফারিয়া, তুমি বলো দেখি বিজ্ঞানটা কী?”

ফারিয়া নেকু নেকু ভাব করে নায়িকাদের মতো চুল পিছনে সরিয়ে বলল, “টেলিভিশন লাইট এইসব হচ্ছে বিজ্ঞান।”

টুশি অপেক্ষা করে রইল দেখার জন্যে রেহানা আপা কী বলেন। শাফকাতকে যদি গাধা আর বুদ্ধির ঢেঁকি বলা হয় তা হলে ফারিয়াকে কমপক্ষে ছাগল আর বেকুব ডাকা উচিত। কিন্তু রেহানা আপা সেটা ডাকলেন না। কষ্ট করে মুখে হাসিটা ধরে রেখে বললেন, “ভেরি গুড ফারিয়া–তুমি বিজ্ঞানের আবিষ্কারের চমৎকার দুইটা উদাহরণ দিয়েছ। একটা জিনিস বোঝার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে উদাহরণ দিয়ে বোঝা। টেলিভিশন আর লাইট–এই দুটি হচ্ছে বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার। সবচেয়ে সুন্দর উদাহরণ। ভেরি গুড।” ।

রেহানা আপার কথা শুনে ফারিয়ার চোখমুখ আনন্দে ঝলমল করতে লাগল, গাধা মেয়েটা জানতেও পারল না যে সে কী বোকার মতো কথা বলেছে।

রেহানা আপা এবারে টেবিল থেকে একটা চুম্বক তুলে বললেন, “এই যে ছেলে এবং মেয়েরা, আমার হাতে আছে একটা চুম্বক। চুম্বক দিয়ে কী হয় বলো দেখি?”

টুশির কথা বলার ইচ্ছে নেই তাই সে চুপ করে বসে রইল, অনেকে বলল, “চুম্বক লোহাকে আকর্ষণ করে আপা।”

 “হ্যাঁ। চুম্বক লোহাকে আকর্ষণ করে।” রেহানা আপা মাথা নেড়ে বললেন, “চুম্বক কি কাঠকে আকর্ষণ করে?”

ফারিয়া সবার চেয়ে জোরে চিৎকার করে বলল, “না আপা করে না।”

“ভেরি গুড–”

রেহানা আপা আরও কিছু কথা বললেন কিন্তু টুশি তার কিছু শুনতে পেল না, কারণ সে বিস্ফারিত চোখে দেখল ঠিক তখন কাবিল কোহকাফী হেলতে দুলতে ঢুকছে, টুশিকে দেখে সে চোখ টিপে হাত নাড়াল। টুশি মুখ শক্ত করে চোখের ইশারায় কাবিলকে সরে যেতে বলল–কাবিল সেই ইশারাকে একেবারে কোনো পাত্তা না দিয়ে রেহানা আপার টেবিলের একেবারে কাছে গিয়ে দাঁড়াল। তার চোখেমুখে একধরনের আনন্দের ভাব যেটা টুশির একেবারেই পছন্দ হল না।

রেহানা আপা চুম্বকটা হাতে নিয়ে বললেন, “এই চুম্বকটা কাঁচকে আকর্ষণ করে, কাঠকে আকর্ষণ করে না, ডাস্টারকে আকর্ষণ করে না, চককে আকর্ষণ করে না–শুধু লোহাকে আকর্ষণ করে। এই দ্যাখো–”

বলে রেহানা আপা চুম্বকটা একটা চকের কাছে ধরতেই সবাই অবাক হয়ে দেখল চকটা লাফ দিয়ে চুম্বকের গায়ে লেগে গেল–আসল কারণটা দেখতে পেল শুধু টুশি–কাবিল কোহকাফী চকটাকে টান দিয়ে নিয়ে এসেছে, অন্য সবাই বিস্ময়ের একটা শব্দ করল।

রেহানা আপা কেমন যেন ঘাবড়ে গেলেন। তিনি ভয়ে ভয়ে চুম্বকটা আবার কয়েকটা চকের কাছে ধরতেই চকগুলো জীবন্ত প্রাণীর মতো তার উপর লাফিয়ে পড়ল। রেহানা আপা ভয় পেয়ে চুম্বকটা হাত থেকে ফেলে দিয়ে দূরে সরে গেলেন। সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল, শুধু ফারিয়া হি হি করে হেসে বলল, “খুব শক্তিশালী চুম্বক তাই না আপা? চককেও আকষর্ণ করে।”

রেহানা আপা কোনো কথা না বলে চুম্বকটা হাতে নিতেই টেবিলের উপর রাখা পানির বিকারটা চুম্বকের আকর্ষণে সেটার দিকে ছুটে গেল এবং সেই পানি ছিটকে রেহানা আপাকে ভিজিয়ে দিল। রেহানা আপা চিৎকার করে পিছনে সরে গিয়ে ভয় পেয়ে চুম্বকটা হাত থেকে ফেলে দিরেন। ক্লাসের কেউ কোনো কথা বলল না, শুধু ফারিয়া বলল, “খুব শক্তিশালী চুম্বক তাই না আপা? পানিকেও আকর্ষণ করে।”

টুশি নিচু গলায় বলল, “চুম্বক পানিকে আকর্ষণ করে না গাধা।”

 “এই যে করল!”

“করে নাই। অন্য কিছু হয়েছে।”

ফারিয়া তখন রেহানা আপাকে নালিশ করে নেকু নেকু গলায় বলল, “দেখেছেন আপা কী বলছে!”

রেহানা আপা তখনও চুম্বকটার দিকে তাকিয়ে ছিলেন, ঢোক গিলে বললেন, “কী বলেছে?”

 “বলেছে চুম্বক নাকি পানিকে আকর্ষণ করে না। খুব শক্তিশালী চুম্বক হলে করে। তাই না আপা?”

রেহানা আপা শাড়ির আঁচল দিয়ে নিজের শরীর মুছতে মুছতে বললেন, “ইয়ে মানে সাধারণত করে না, কিন্তু আজকে মানে ইয়ে মনে হচ্ছে–” রেহানা আপা থেমে গিয়ে বললেন, “চুম্বকটা থাক। তোমাদের বরং অন্য একটা এক্সপেরিমেন্ট করে দেখাই।” রেহানা আপা টেবিলের ওপর রাখা স্ট্যান্ড থেকে ঝুলে থাকা পেন্ডুলামটা দেখিয়ে বললেন, “এই যে এটা হচ্ছে একটা পেন্ডুলাম। এটা দুলিয়ে দিলে কী হবে?”

ক্লাসের অফিসিয়াল ভালো ছেলে জাবেদ বলল, “এর দোলনকাল হবে দৈর্ঘ্যের বর্গমূলের সমানুপাতিক।”

রেহানা আপা মাথা নাড়লেন, খুব অনিচ্ছার সাথে বললেন “গুড।” ফারিয়া ছাড়া আর কারও উত্তর বা কথাবার্তা তার ভালো লাগে না। তিনি পেন্ডুলামটা ধরে একপাশে টেনে এনে বললেন, “এই যে পেন্ডুলামটা আমি একপাশে টেনে এনে ছেড়ে দিচ্ছি দেখবে এটা দুলতে থাকবে ডান থেকে বামে, বাম থেকে ডানে। সমানতালে। এই দ্যাখো–”

রেহানা আপা পেন্ডুলামটা ছাড়লেন সেটা দুলে অন্য পাশে যেতেই কাবিল কোহকাফী সেটা খপ করে ধরে ফেলল। ক্লাসের সবাই এবং রেহানা আপা বিস্ফারিত চোখে দেখলেন পেন্ডুলামটা অন্য পাশে গিয়ে আটকে গেছে, সেটা আর নড়ছে না। ফারিয়ার চোখ আনন্দে ঝলমল করতে থাকে, সে হাত নেড়ে বলল, “পেন্ডুলামটা বেশি ভারী দেখে আটকে গেছে আর নড়ছে না, তাই না আপা?”

রেহানা আপা কোনো কথা না বলে পেন্ডুলামটা ধরতে গেলেন ঠিক তখন সেটা তাঁর হাত গলে উপরে উঠে গেল। রেহানা আপা কিছুক্ষণ হাঁ করে সেদিকে তাকিয়ে রইলেন, তারপর পেন্ডুলামটা ধরতে গেলেন তখন সেটা কেমন যেন নাচের ভঙ্গিতে লাফাতে লাগল এবং সেটা দেখে ফ্যাকাশে ভঙ্গিতে রেহানা আপা এক লাফে পিছনে সরে গেলেন।

টুশি দেখল কাবিল কোহকাফী পেন্ডুলামটা ছেড়ে দিয়ে আনন্দে হাসতে হাসতে একপাশে সরে দাঁড়িয়েছে। সে চোখের ইশারায় তাকে নিষেধ করার চেষ্টা করল কিন্তু কাবিল কোহকাফী ভ্রূক্ষেপ করল না।

পেন্ডুলামটা থামার পর রেহানা আপা খানিকক্ষণ সেটার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “পেন্ডুলামটাও থাকুক। তোমাদের তাপ নিয়ে একটা এক্সপেরিমেন্ট করে দেখাই।”

টুসি একধরনের আতঙ্ক নিয়ে দেখল কাবিল কোহকাফী একগাল হেসে এক্সপেরিমেন্ট দেখার জন্যে এগিয়ে এল।

রেহানা আপা একটা মোমবাতি টেবিলে বসিয়ে মোমবাতিটি জ্বালালেন, কাবিল সাথে সাথে ফুঁ দিয়ে মোমবাতিটি নিভিয়ে দিল। রেহানা আপা আবার জ্বালালেন, কাবিল কোহকাফী আবার নিভিয়ে দিল। রেহানা আপা একটু বিরক্ত হয়ে এবারে হাত দিয়ে আড়াল করে একটু সাবধানে মোমবাতিটি জ্বালালেন। মোমবাতিটি ঠিকভাবে জ্বলা পর্যন্ত কাবিল কোহকাফী অপেক্ষা করল, তারপর ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিল। রেহানা আপা একটু অবাক হয়ে এদিক-সেদিক তাকালেন, ওপরে তাকালেন তারপর আবার জ্বালালেন। মোমবাতিটি যখন স্থির হয়ে জ্বলতে লাগল তখন কাবিল কোহকাফী ফুঁ দিয়ে সেটাকে নিভিয়ে দিল।

টুশি চোখ পাকিয়ে কাবিলের দিকে তাকাল কিন্তু কাবিল টুশির দৃষ্টি এড়িয়ে মোমবাতি নেভাতে লাগল। রেহানা আপার কেমন জেদ চেপে গেল, তাঁর চোখমুখ লাল হয়ে ওঠে, হাত কাঁপতে থাকে, জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকেন। একটার পর একটা ম্যাচ জ্বালাতে থাকেন আর কাবিল ফুঁ দিয়ে নেভাতে থাকে। সারা ক্লাসেই কেমন যেন রুদ্ধশ্বাস রুদ্ধশ্বাস ভাব চলে আসে। সবাই নিশ্বাস বন্ধ করে তাকিয়ে থাকে–সবাই কেমন জানি ভয় পেয়ে যায়। রেহানা আপা শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়লেন–ম্যাচটা টেবিলের উপর ছুঁড়ে ফেলে নিজের মাথা খামচে গোঙানোর মতো একধরনের শব্দ করতে লাগলেন। কাবিল কোহকাফীকে দৃশ্যটা বেশ উপভোগ করতে দেখা গেল।

কেউ কোনো কথা বলতে সাহস পেল না, শুধু বোকাসোকা ফারিয়া হি হি করে হেসে বলল, “আপা আজকের দিনটা মনে হয় উলটাপালটা। আজকে মনে হয়। বিজ্ঞানের কোনোকিছু কাজ করবে না।”

রেহানা আপা তার টেবিলের উপর রাখা জিনিসপত্রগুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, “তাই তো দেখছি!”

টুশি একটু আগেই লক্ষ করেছিল–অন্যেরা এখন দেখল যে মোমবাতিটি হঠাৎ করে নিজে নিজে জ্বলে উঠছে–এবং এখন আর নিভে যাচ্ছে না। ব্যাপারটি যে ঘটা উচিত নয় সেটা ফারিয়ার সাদাসিধে মাথায় ঢুকল না, সে আনন্দে হাততালি দিয়ে। বলল, “জ্বলে গেছে! মোমবাতি নিজে থেকে জ্বলে গেছে!”

রেহানা আপা অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে একটু ভয়-পাওয়া গলায় বললেন, “কিন্তু এটা নিজে থেকে জ্বলার কথা না! কেমন করে জ্বলল?”

ফারিয়া ব্যাখ্যা দিল, “আপা বিজ্ঞান হচ্ছে ম্যাজিকের মতো–তাই ম্যাজিকের মতো জ্বলে গেছে।”

কেউ কোনো কথা বলল না, তাই ফারিয়া একটু উৎসাহ পেয়ে গেল, নেকু নেকু গলায় বলল, “তাই না আপা?”

ফারিয়ার এই ঢঙের কথা শুনে টুশির পিত্তি জ্বলে যাচ্ছিল, রেহানা আপা তাকে পছন্দ করে না তাই সে এতক্ষণ কিছু বলছিল না, কিন্তু আর পারল না। বলল, “বিজ্ঞান মোটেও ম্যাজিকের মতো না। বিজ্ঞান হচ্ছে বিজ্ঞানের মতো।”

ফারিয়ার কথার কেউ প্রতিবাদ করবে, তাও তার প্রিয় রেহানা আপনার ক্লাসে সেটা সে বিশ্বাস করতে পারল না। নেকু নেকু গলায় বলল, “তা হলে কেমন করে এগুলো হচ্ছে?”

“আর হবে না।”

“হবে না?”

 “না।”

 রেহানা আপা ভুরু কুঁচকে বললেন, “আর হবে না?”

টুসি আমতা-আমতা করে বলল, “আমাকে যদি করতে দেন তা হলে আর হবে না।”

“কেন?”

“বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করতে হয় আপা। বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করলে সবকিছু ঠিকঠাক হয়।”

রেহানা আপা খানিকক্ষণ টুশির দিকে তাকিয়ে রইলেন তারপর বললেন, “আসো।”

টুশি টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল, সবাই অবাক হয়ে দেখল সে কনুইটা হঠাৎ করে পিছনে সজোরে নিয়ে যায়, মানুষ কনুই দিয়ে কারও পেটে গুতো মারতে হলে এরকম করে–কিন্তু এখানে কোনো মানুষ নেই, সে কেন এরকম করছে কে জানে! কাবিল কোহকাফী পেটে গুঁতো খেয়ে একটু সরে গিয়েছে, টুশি তখন টেবিলে এগিয়ে যায়, চুম্বকটা হাতে নিয়ে বলল, “এই দ্যাখোচুম্বক চককে আকর্ষণ করে না, পানিকেও আকর্ষণ করে না। শুধু লোহাকে আকর্ষণ করে।”

সবাই দেখল চক লাফিয়ে গেল না, পানিও ছলকে উঠল না, চুম্বকটা শুধু লোহাগুলোকে আকর্ষণ করল। পেন্ডুলামটাও ঠিক ঠিক দুলতে শুরু করল, নাচানাচি করল না। মোমবাতির শিখাটাও নিভে গেল না, টেস্ট টিউবের মাঝে এক টুকরো বরফ একটা তার দিয়ে নিচে আটকে রেখে উপরের পানিটিও রেহানা আপা ফুটিয়ে ফেলতে পারলেন। কাবিল কোহকাফী টুশিকে বিরক্ত করার চেষ্টা করল না, একটু কাছে থেকে এসে দেখার চেষ্টা করছিল কিন্তু টুশি কোনো ঝুঁকি নিল না, হাতের কনুই দিয়ে শরীরের শক্তি দিয়ে গুঁতো মেরে তাকে সরিয়ে রাখল।

তার এই অঙ্গভঙ্গি দেখে জাবেদ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “টুশি, তুমি একটু পরে পরে তোমার কনুই দিয়ে ওরকম করছ কেন?”

“কে বলেছে একটু পরে পরে করছি?”

 “হ্যাঁ করেছ। এই যে একটু আগে করলে!”

“ও আচ্ছা ওইটা? ওইটা মনের আনন্দে করেছি!”

“মনের আনন্দে?”

“হ্যাঁ। মনের আনন্দে কেউ হাততালি দেয়, কেউ হাত উপরে তুলে বলে ইয়াহু, আমি এরকম করি!” টুশি ব্যাপারটা বিশ্বাসযোগ্য করার জন্যে আরও একবার করে দেখাল–কাবিল ছাড়াই!

“তোমার মনে এত আনন্দ হচ্ছে কেন?”

“বিজ্ঞানের এক্সপেরিমেন্ট দেখলে আমার মনে খুব আনন্দ হয়!” টুশি সবগুলো দাঁত বের করে হেসে বলল, “তোমাদের হয় না?”

রেহানা আপা সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, তাই সবাই জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলল, “হয়।”

টুশি গম্ভীর হয়ে বলল, “ভেরি গুড।”

রেহানা আপা টুশি নামের এই একটু বিচিত্র মেয়েটাকে ভালো করে এবং একটু অন্যরকমভাবে লক্ষ করলেন।

ঠিক কী কারণ জানা নেই তাই দেখে ফারিয়া একেবারে জ্বলেপুড়ে কাবাব হয়ে গেল!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *