মাথার উপর উজ্জ্বল আলো। চারদিকে মুখোশ-পরা সব মানুষ। সাবাই বড় বেশি চুপচাপ। আমার একটু শীতশীত করছে। কে এক জন আমার নাকের উপর কী একটা চেপে ধরে বললেন, সহজভাবে নিঃশ্বাস নিন। বকুল ফুলের মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছি। নেত্রকোণায় আমাদের বাড়ির পাশে বকুলগাছে প্রচুর ফুল ফুটত, সেই বকুলগাছে এক বার কে চাকু দিয়ে কেটে লিখুল ফরিদনীলু। নীলু ফুড কন্ট্রোলার সাহেবের বড় মেয়ে। বাবা সেই লেখা পড়ে আমাকে উঠোনে চিৎ করে ফেলে পেটে পা দিয়ে চেপে ধরে বললেন, বেশি রস হয়েছে? গাছে প্রেমপত্র লেখা হচ্ছে। নীলু এখন কোথায় আছে? কত বড়ো হয়েছে সে? সে কি দেখতে আগের মতোই আছে, না বদলে গেছে? সবাই আমরা বদলে যাই কেন?
আবার কে যেন বললেন, সহজভাবে নিঃশ্বাস নিন। তাঁর কথা অনেক দূর থেকে আসছে। আমি মনে মনে বললাম, আপনারা আমাকে বাঁচিয়ে তুলুন, একটি খুব জরুরী কথা আমার বলা হয় নি। অস্পষ্টভাবে কেউ যেন বলল, কী সেই কথা? কী কথা, সেটা আর মনে পড়ছে না। আমি প্রাণপণে মনে করবার চেষ্টা করলাম। বকুল ফুলের গন্ধের সঙ্গে সেই কথা মিশে গেছে। কিছুতেই আলাদা করা যাচ্ছে না। কে যেন গম্ভীর স্বরে বলল, তাড়াতাড়ি মনে করবার চেষ্টা করুন। সময় নেই। হ্যাঁ, মনে পড়েছে। আমি খুব স্পষ্টভাবে বললাম, আমি সবাইকে ভালোবাসি। এই কথাটি কখনো কাউকে বলা হয় নি। আমাকে বলার সুযোগ দিন, আমার প্রতি দয়া করুন।
ডাক্তারের কথা শুনতে পাচ্ছি। তিনি বলছেন, আপনি বডড নড়াচড়া করছেন। সহজভাবে শ্বাস নিন।
আমি শ্বাস নিই। বকুল ফুলের গন্ধ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে।