সকাল দশটার উপর বাজে।
খাবার টেবিলে ফরিদের নাশতা সাজানো। ফরিদ নাশতা খেতে আসছে না সে বাগানে বসে আছে। তাকে দেখেই মনে হচ্ছে সারারাত ঘুম হয়নি। অঘুমোজনিত ক্লান্তির সঙ্গে এক ধরনের চাপা উত্তেজনাও তার মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মিলিকে খবর পাঠানো হয়েছে। ফরিদ অপেক্ষা করছে মিলির জন্যে। মিলি ইউনিভার্সিটিতে যাবার জন্যে তৈরি হয়েই নিচে নামল। মামার খোজে বাগানে গেল।
একটা ব্যাপার মামা?
সারারাত ঘুম হয়নিরে মিলি।
তাতে তো তোমার খুব অসুবিধা হবার কথা না। প্রচুর ঘুম তোমার একাউন্টে জমা আছে। বছর খানেক না ঘুমালেও কিছু হবে না।
তোর কি খুব তাড়া আছে?
হ্যাঁ আছে। এগারোটায় ক্লাস, এখন বাজে দশটা দশ।
আজকের ক্লাসটা না করলে হয় না?
না হয় না। ব্যাপারটা কি বলে ফেল।
অদ্ভুত একটা আইডিয়া মাথায় চলে এসেছে। অন্ধকারে যেন একটা এক হাজার ওয়াটের বাতি জ্বলে উঠল।
তাই না-কি?
দুলা ভাইয়ের মৎস্য ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছিলাম। কি করে তাকে সাপোর্ট করা যায় এই সব ভাবতে ভাবতে প্রায় ঘুমিয়েই পড়েছি। হঠাৎ মাথার মধ্যে দপ করে হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বলে উঠল। আমি ইউরেকা বলে লাফিয়ে উঠলাম।
আইডিয়া পেয়ে গেল?
রাইট। আইডিয়া পেয়ে গেলাম, ছবি বানাব।
ছবি বানাবে মানে?
দেশের মৎস্য সম্পদ নিয়ে একটা শর্ট ফ্রিম। মাছের জীবন কথা বলতে পারিস। মাছদের জীবনে আনন্দ-বেদনার কাব্য। ছবির নামও ঠিক করে ফেললাম। ছবির নাম–হে মাছ।
হে মাছ?
হ্যাঁ–হে মাছ। এই ছবি যখন রিলিজ হবে তখন চারদিকে হৈ চৈ পরে যাবে। মৎস্য সমস্যার এটু জেড পাবলিক জেনে যাবে। দুলাভাই যা চাচ্ছিলেন তাই হবে তবে অনেক তাড়াতাড়ি হবে। এক গুলিতে যুদ্ধ জয় যাকে বলে।
ছবি যে বানাবে টাকা পাবে কোথায়?
কোন মহৎ কাজ কখনো টাকার অভাব আটকে থাকে বল?
মামা যাই, আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।
একদিন ইউনিভার্সিটিতে না গেলে কি হয়?
অনেক কিছু হয়। তুমি তোমার চিন্তা ভাবনা করতে থাক পরে শুনব।
ফরিদ সারা দুপুর দরজা বন্ধ করে বসে রইল। কাদেরের কাজ হল কিছুক্ষণ পর পর চা এনে দেয়া। ফরিদ কোথায় যেন পড়েছিল তামাকের নিকোটিন ক্রিয়েটিভিটিতে সাহায্য করে। কাদেরকে দিয়ে সিগারেট আনানো হল। সিগারেটের ধূয়া মাথা ঘুরা, বমি ভােব এবং কাশি তৈরি ছাড়া অন্যকোনভাবে সাহায্য করল না। দুপুরে ফরিদ কিছু খেল না— শুধু একটা টোস্ট বিসকিট এবং আধা কাপ দুধ। কারণ ফুল স্টমাকে ক্রিয়েটিভ কাজ কিছু হয় না। জগতে বড় বড় ক্রিয়েটিভ কাজ করছে। প্রতিভাবান ক্ষুধার্তা মানুষ। ক্ষুধার সঙ্গে প্রতিভার ঘনিষ্ট যোগাযোগ আছে।
সন্ধ্যা নাগাদ হে মাছ চিত্ৰনাট্যের খসড়া তৈরি হয়ে গেল। প্রথম পাঠক সৈয়দ মোহাম্মদ কাদের। ফরিদ বলল, কেমন বুঝছিস কাদের?
কাদের গাঢ় স্বরে বলল, বোঝাবুঝির কিছু নাই মামা–ফাডাফাডি জিনিস হইছে!
ক্লাইমেক্সগুলো কেমন এসেছে?
কেলাইমেক্সের কথা কইয়া আর কাম কি মামা? ফলে পরিচয়। এই দেহেন শইলের লোম খাড়া হইয়া গেছে। হাত দিয়ে দেহেন।
ফরিদ হাত দিয়ে দেখল— যে কোন কারণেই হোক কাদেরের গায়ের লোম সত্যি সত্যি খাড়া হয়ে আছে।
কাদের!
জ্বি মামা।
এখনো ফাইন্যাল করিনি। তবে মনে হচ্ছে তোকে একটা রোল দেব।
কি কইলেন মামা?
নৌকার হতদরিদ্র মাঝির ভূমিকা তোর পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
কাদের স্তম্ভিত। সে মূর্তির মত বসে রইল। নড়াচড়া করতে পারল না।
সোবাহান সাহেবের শরীর আজ বেশ ভাল। জ্বর নেই। ক্লান্তির ভাব ছাড়া তার কোন শারীরিক অসুবিধাও নেই। তিনি যথারীতি বারান্দায় তার ইজিচেয়ারে বসে আছেন। তার কোলে বিশাল খাতা। যার মলাটে লেখা মৎস্য সমস্যা। আজ আবার মৎস্য সমস্যা নিয়ে বসেছেন। বাংলাদেশের মাছের পূর্ণ তালিকা এখনো তৈরি হয়নি। ছোট প্ৰজাতির মাছগুলোর একেক অঞ্চলে একেক নাম। এও এক যন্ত্রণা।
রহিমার মা সোবাহান সাহেবের সামনে বসে আছে। মাছের নাম বলছে। বেশ কিছু নাম সোবাহান সাহেব তার কাছ থেকে পেয়েছেন।
কি নাম বললে?
দাঁড়কিনি মাছ।
দাঁড়কিনি মাছ? সত্যি সত্যি এই নামে কোন মাছ আছে না বসে বসে বানোচ্ছ? দাঁড়কাকের কথা জানি। দাড়কিনিতো কখনো শুনিনি।
আছে, আফনে লেহেন–পিতল্ল্যা মাছ।
পিতল্ল্যা মাছ?
জ্বি।
সেটা কেমন?
খুব ছোড, লেজ আছে।
ফাজলামি করছ না-কি রহিমার মা? লেজ তো সব মাছেরই আছে। এমন কোন মাছ আছে যার লেজ নেই?
থাকতেও পারে। আল্লাহর কুদরতেরতো কোনো সীমা নাই।
আচ্ছা তুমি এখন যাও।
নামডা লেখছেনতো–পিতল্ল্যা মাছ। পিতলের লাহান রং এই কারণে নাম পিতল্ল্যা মাছ।
সোবাহান সাহেব পিতল্ল্যা মাছ লিখলেন। তবে ব্রাকেটে প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিয়ে রাখলেন।
আনিসকে দোতলার সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখা গেল। তার সঙ্গে টগর এবং নিশা। আনিস হাসিমুখে বলল, স্নামালিকুম স্যার।
টগর এবং নিশাও সঙ্গে সঙ্গে বলল, স্নামালিকুম স্যার, স্নামালিকুম স্যার।
যাচ্ছচ কোথায় আনিস?
কোথাও না। ওদের নিয়ে একটু হাঁটতে বের হয়েছি। আপনি কি করছেন?
আমি মাছের নাম লিখছি। তোমাকে বলেছিলাম না মৎস্য সমস্যা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি। আমাদের দেশ হচ্ছে মাছের দেশ অথচ মাছের কি ভয়াবহ আকাল।
তাতো বটেই।
দুটা মিনিট দাড়াওতে আনিস–আমি নামগুলো তোমাকে পড়ে শুনাচ্ছি। দেখ কোন নাম বাদ পড়েছে কিনা।
সোবাহান সাহেব পড়তে শুরু করলেন— রুই,কাতল, মৃগেল, পাঙ্গাশ, চিতল, বোয়াল, কালি বাউস, নানিদ, চিংড়ি, কৈ, মাগুর, শিং, পুঁটি, শোল, মহাশোল, রিঠা, ভেটকি, টেংরা, খইলসা, কাইক্যা, পাবদা, লাটি, বাতাসী, আইড়, বাইম, তপসে, নলা, ফইল্যা, দাঁড়কিনি, পিতল্ল্যা— কিছু কি বাদ পড়ল আনিস?
আনিস কিছু বলার আগেই নিশা বলল— ইলিশ বাদ পড়েছে স্যার। সোবাহান সাহেব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। সত্যি সত্যি ইলিশ বাদ পড়েছে। এটা কি করে হল? আসল মাছটাই বাদ পড়ে গেল। সোবাহান সাহেব ক্ষীণ স্বরে বললেন, এটা কেমন করে হল আনিস? এত বড় ভুল কি করে করলাম?
আনিস হাসিমুখে বলল, এটা কোন বড় ভুল না, খুবই সাধারণ ভুল—যা আমরা সব সময় করি। যে জিনিস চোখের সামনে থাকে তাকে আমরা ভুলে যাই। যে ভালবাসা সব সময় আমাদের ঘিরে রাখে। তার কথা আমাদের মনে থাকে না। মনে থাকে হঠাৎ আসা ভালবাসার কথা।
ঠিকই বলেছ আনিস।
স্যার যাই, স্নামালিকুম।
তিনি জবাব দিলেন না। টগর বলল, স্যার যাই স্নামালিকুম। নিশাও বলল, স্যার যাই স্নামালিকুম। সোবাহান সাহেব হেসে ফেললেন। হঠাৎ তার কাছে মনে হল এই পৃথিবী বড়ই আনন্দের স্থান। এই পৃথিবীতে বাস করতে পারার সৌভাগ্যের জন্যে তিনি নিজের প্রতিই খানিক ঈর্ষা অনুভব করতে লাগলেন।
খাবার টেবিলে হে মাছের চিত্ৰনাট্য নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। খেতে বসেছে মিলি এবং ফরিদ। মিলির চিত্ৰনাট্য বিষয়ক কথাবার্তা শোনার আগ্ৰহ নেই, কিন্তু ফরিদ শোনাবেই। ফরিদ গম্ভীর গলায় বলছে—
সব মিলিয়ে চরিত্র হচ্ছে চারটি। জেলে, জেলের স্ত্রী, খেয়া নৌকার মাঝি এবং একটা চোর।
মিলি বলল, মাছ নিয়ে ছবি এর মধ্যে আবার চোর কেন?
পুরোটা না শুনেই কথা বলিস এটাই হচ্ছে তোর বড় সমস্যা। চোরের প্রয়োজন আছে বলেই চোর আছে। একটা হাই ড্রামা স্টোরী। এখানে. টেনশন বিন্ড আপ করতে চোর লাগবে। জেলের নিজস্ব কোন নৌকা নেই, সে খেয়া নৌকায় করে মাছ মারতে বের হয়েছে। সেই নৌকায় বসে আছে। একজন চোর। ওপেনিং শটে— নৌকা দেখা যাচ্ছে। দিনের অবস্থা ভাল না। ঢেউ উঠেছে। নৌকা টালমাটাল করছে। ফাস্ট ডায়লগা জেলে দিচ্ছে–ক্যামেরা জুম করে জেলের মুখে চলে গেল, মিলি শুনছিসতো কি বলছি?
হ্যাঁ শুনছি।
জেলে বলল, ও মাঝি ভাই, একখান গীত গান। মাঝি বলল, পেডে যদি ভাত না থাহে, গীত আইব ক্যামনে। জেলে বলল, কথা সত্য। নদীত নাই মাছ। তখন হঠাৎ কি মনে করে যেন মাঝি গান ধরল, ও আমার সোনা বন্ধুরে ও আমার রসিয়া বন্ধুরে। এই গানের সঙ্গে সঙ্গে জাল ফেলা হবে। ক্যামেরা মাঝির মুখ থেকে কাট করে চলে যাবে জালে। সেখান থেকে কাট করে পানিতে, কাট করে লং শটে নৌকা। কাট মিড ক্লোজ আপে তোর মুখ।
আমার মুখ মানে?
জেলের স্ত্রীর ভূমিকায় তুই অভিনয় করছিস। দুঃখ, অভাব অনটনে পর্যুদস্ত বাংলার শাশ্বত নারী। হৃদয়ে মমতার সমুদ্র, পেটে ক্ষুধার অগ্নি।
মামা, তোমার এসব ঝামেলায় কিন্তু আমি নেই।
আমি কি বাইরে থেকে আটিষ্ট আনিব না-কি? নিজেদেরই কাজ করতে হবে। আমি পৃথিবীকে দেখিয়ে দেব— অভিনয়ের অ জানে না। এমন মানুষ নিয়েও ছবি হয় এবং এ ক্লাস ছবি হয়। ডায়ালগ মুখস্ত করে ফেলবি, পরশু থেকে রিহার্সেল।
মিলি বিরক্ত গলায় বলল, তোমার এই পাগলামীর কোন মানে হয় মামা? মুখে বললেই ছবি হয়ে যাবে? টাকা-পয়সা লাগবে না?
আমার কি টাকা পয়সার অভাব? দুলাভাইয়ের কাছে আমার কত টাকা জমা আছে তুই জানিস? প্রয়োজন হলে মগবাজারের বাড়ি বিক্রি করে দেব। মরদক বাত, হাতিকা দাঁত। একবার যখন বলে ফেলেছি–
হবে না। শুধু শুধু—
আগেই টের পেয়ে গেছিস শেষ পর্যন্ত কিছু হবে না? জীবন সম্পর্কে এমন পেসিমিস্টক ভিউ রাখবি না। মনটাকে বড় কর।
আর কে কে অভিনয় করছে তোমার ছবিতে?
এখানো ফাইন্যাল হয় নি। ডাক্তার ছোকরাকে বলে দেখব, আর দেখি নতুন ভাড়াটে আনিস রাজি হয় কি-না।
ওরা ছবিতে অভিনয় করবে। কেন?
শিল্পের প্রতি মমত্ববোধ থেকে করবে। মহৎ কাজে শরিক হবার স্পিরিট থেকে করবে। আনিস ছোকরাকে আজ রাতেই ধরব।
মিলি তাকিয়ে আছে মামার দিকে। সে যে খুব উৎসাহ বোধ করছে তা মনে হচ্ছে না।
আনিস আছ না-কি?
আনিস দরজা খুলল। ফরিদকে দেখে অবাক হলেও ভাব ভঙ্গিতে তার কোন প্ৰকাশ হল না। সে হাসি মুখে বলল, স্নামালিকুম।
ওয়ালাইকুম সালাম। তুমি করে বললাম। কিছু মনে করনিতো? আমি মিলির মামা।
জ্বি আমি জানি। আসুন ভেতরে আসুন।
ভেতরে যাব না। কাজের কথা সেরে চলে যাব। খুব ব্যস্ত। ছবির স্ত্রীপ্ট করছি, মাছ নিয়ে শর্ট ফ্রিম বানাচ্ছি। নাম হচ্ছে হে মাছ।
তাই না কি?
হ্যা! তাই। এখন কথা হচ্ছে তুমি কি ছবিতে অভিনয় করবে? এক গাদা কথা বলার দরকার নেই। বল হ্যাঁ কিংবা না।
আনিস হকচকিয়ে গেল। কেউ তাকে অভিনয়ের জন্যে ডাকতে পারে তা তার মাথায় কখনো আসে নি। ফরিদ বলল, আমার ছবিতে একটা চোরের ক্যারেক্টার আছে। এই জন্যেই তোমার কাছে আসা নয়ত আসতাম না। তোমার চেহারায় একটা চোর চোর ভাব আছে।
আনিস হতভম্ব হয়ে বলল, আমার চেহারায় চোর চোর ভাব আছে?
হ্যাঁ আছে।
আনিস বিস্মিত গলায় বলল, নিজের সম্পর্কে আজে বাজে কথা অনেক শুনেছি, কিন্তু আমার চেহারা চোরের মত এটা এই প্রথম শুনলাম।
সত্যি কথা আমি পেটে রাখতে পারি না। বলে ফেলি। তুমি আবার কিছু মনে করনি তো?
জ্বি না, কিছু মনে করিনি।
অভিনয় করবে, না করবে না?
করব। এ জীবনে অনেক কিছুই করেছি। অভিনয়টাই বা বাদ থাকবে কেন?
ফরিদ হৃষ্টচিত্তে নিচে নেমে এল। এখন ডাক্তার ছোকরা রাজি হলেই কাজ শুরু করা যায়। তবে ছোকরার ব্রেইন বলে কিছু নেই। তার কাছ থেকে অভিনয় আদায় করা কষ্ট হবে। ব্যাটা হয়তো রাজিও হতে চাইবে না। ফরিদের ধারণা ডাক্তার এবং ইনজিনিয়ার এই দুই সম্প্রদায়, অভিনয় কলার প্রতি খুব উৎসাহী নয়। আজ রাতেই ব্যাপারটা ফয়সালা করে ফেললে কেমন হয়?
ফরিদ কাদেরকে পাঠাল মনসুরকে ডেকে আনতে। মনসুর সঙ্গে সঙ্গে চলে এল। মনে হল যেন কাপড় পরে এ বাড়িতে আসার জন্যে তৈরি হয়েই ছিল। মনসুরের সঙ্গে ফরিদের নিম্নলিখিত কথোপকথন হল।
ফরিদ : তোমাকে একটি বিশেষ কারণে ডেকেছি। অসুখ বিসুখের সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই।
মনসুর : জ্বি বলুন।
ফরিদ : আচ্ছা স্ত্রী হিসাবে মিলি কি তোমার জন্যে মানানসই হবে বলে মনে হয়? মিলি আবার একটু বেঁটে, ভেবে চিন্তে বল।
মনসুর : (তোতলাতে তোতলাতে) জ্বি মামা, অবশ্যই হবে। বেঁটে কি বলছেন? পারফেক্ট হাইট। মানে আমার ধারণা-মানে—
ফরিদ : মিলি স্বামী হিসেবে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে?
মনসুর : অবশ্যই পারব। একশ বার পারব।
ফরিদ : তাহলে কাল থেকে রিহার্সেল শুরু করে দাও।
মনসুর : (বিস্মিত) কিসের রিহার্সেল?
ফরিদ : মিলি করবে জেলে স্ত্রীর ভূমিকা আর তুমি হচ্ছে জেলে।
মনসুর : আমি মামা কিছুই বুঝতে পারছি না।
ফরিদ : ছবি বানাচ্ছি। শর্ট ফ্রিম। সেখানে তোমার ভূমিকা হচ্ছে অভাব অনটনে পর্যুদস্ত জেলে, আর মিলি তোমার স্ত্রী।
মনসুর : ছবির কথা বলছেন? ফরিদ : অফকোর্স ছবির কথা বলছি। তুমি কি ভেবেছিলে?
মনসুর : (শুকনো গলায়) একগ্লাস ঠাণ্ডা পানি খাব। একগ্লাস ঠাণ্ডা পানি খেয়ে মনসুর ক্ষীণ স্বরে বলল, মিস মিলি কি আমার সঙ্গে অভিনয় করতে রাজি হবেন?
সেতো রাজি হয়েই আছে।
তাই নাকি–আরেক গ্রাস পানি খাব।
মনসুর দ্বিতীয় গ্লাস পানি খেয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় জানাল যে, সে অতি আগ্রহের সঙ্গে মিস মিলির অভিনয় করবে।
তুমি আগে অভিনয় করেছ?
জ্বি না। অসুবিধা হবে না–আমি শিখিয়ে দেব। অভিনয় কঠিন কিছু না। জাল ফেলতে জান?
শিখে নেবে।
জ্বি আচ্ছা।
মাথাটা কাল পরশু কামিয়ে ফেল।
ডাক্তার হকচকিয়ে গেল। টোক গিলে ভয়ে ভয়ে বলল, কি বললেন মামা?
মাথাটা কামিয়ে ফেলতে বললাম। জেলেদের মাথায় থাকে কদমছাট চুল। মাথা না কামালে ঐ জিনিস পাব কোথায়? কোন অসুবিধা আছে?
জ্বি না। কোন অসুবিধা নেই। আপনি যা বলবেন তাই করব।
ভেরি গুড।
অভিনয় নিয়ে মিস মিলির সঙ্গে কি একটু কথা বলতে পারি?
ফরিদ বিরক্ত হয়ে বলল, তার সঙ্গে আবার কি কথা? সে অভিনয়ের জানে কি? যা জানতে চাইবে আমাকে প্রশ্ন করলেই জানবে।
ডাক্তার বলল, জি আচ্ছা।