প্রথম দিন বকুল ব্যাপারটাকে বেশি গুরুত্ব দিল না। হিজল গাছটার ডালটাকে পানিতে ঝাঁপটিয়ে শব্দ করার পরেও টুশকি এল না। হতে পারে নদীর নিচে কিংবা এত দূরে কোথাও গেছে যে তাকে যে ডাকা হচ্ছে সেটা সে শুনতে পায়নি।
দ্বিতীয় দিনে ব্যাপারটিতে বকুল বেশ চিন্তার মাঝে পড়ে যায়। সারাদিনই সে ছাড়াছাড়া ভাবে টুশকিকে ডেকেছে কিন্তু টুশকির দেখা নেই। তৃতীয় দিন বকুল ঘুম থেকে উঠল একটা চাপা দুশ্চিন্তা নিয়ে, যদি আজকেও টুশকিকে পাওয়া না যায়?
সত্যি সত্যি সারাদিন টুশকিকে ডাকাডাকি করেও কোন লাভ হল না। বকুলের ইচ্ছে হল সে চিৎকার করে কাঁদে। বিকেলবেলা যখন কেউ আশেপাশে নেই তখন সে সত্যি সত্যি খানিকক্ষণ কাঁদল। কোথায় গেল তার টুশকি? তাকে ছেড়ে চলে গেছে সেটা তো হতে পারে না।
দেখতে দেখতে আরও দুদিন কেটে গেল, এখনও টুশকির কোন দেখা নেই। বকুল শুকনো-মুখে নদীর তীরে ঘুরোঘুরি করে, নদীর পানিতে পা ভিজিয়ে বসে থাকে, হিজল গাছের ডাল পানিতে ঝাঁপটিয়ে শব্দ করে। সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সত্যি টুশকি হারিয়ে গেছে, আর কোনদিন তাকে ফিরে পাবে না। বুকের ভিতরটা তার মোচড় দিতে থাকে, গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায়, সে বিছানায় উঠে বসে থাকে। জানালা দিয়ে সে নদীর দিকে তাকিয়ে থাকে, না জানি কোথায় কোন্ বিপদে পড়েছে টুশকি!
এক সপ্তাহ পর এক শুক্রবার সন্ধ্যেবেলা শরিফ ছুটতে ছুটতে এল বকুলের কাছে, দৌড়ে এসে হাঁপিয়ে গেছে, নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। কিছু-একটা বলতে চাইছে কিন্তু উত্তেজনায় বলতে পারছে না কিছু। বকুল ভয়-পাওয়া গলায় বলল, “কী হয়েছে?”
“টুশকি!”
“টুশকি? কোথায়?”
“টেলিভিশনে।”
“টেলিভিশনে?”
“হ্যাঁ।” শরিফ লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, “মণ্ডলবাড়িতে টেলিভিশনে খবরে টুশকিকে দেখিয়েছে। ঢাকায় টুশকিকে নিয়ে একটা সার্কাস হচ্ছে।”
“সার্কাস?”
“হ্যাঁ।”
বকুল হতবাক হয়ে বসে রইল। পুরো ব্যাপারটা এখনও তার বিশ্বাস হচ্ছে না, তাদের টুশকিকে ধরে নিয়ে সেটা দিয়ে সার্কাস দেখানো হচ্ছে! বকুল আবার জিজ্ঞেস করল, “তুই নিজে দেখেছিস?”
“আমি নিজে দেখেছি।” শরিফ বুকে থাবা দিয়ে বলল, “খোদার কসম।”
বাংলা খবরে যেটা বলা হয় সেটা রাত দশটার ইংরেজি খবরেও বলা হয় কাজেই রাত দশটার সময় বকুল মণ্ডলবাড়িতে হাজির থাকল। মণ্ডলবাড়িতে টেলিভিশন আছে, সেটা দেখতে গ্রামের অনেক মানুষ এসে ভিড় জমায়, বাইরের ঘরে মানুষ গিজগিজ করতে থাকে, তার মাঝে বকুল খানিকটা জায়গা করে নিল। ইংরেজি খবর শুনে কেউ বিশেষ কিছু বোঝে না বলে অনেকেই তখন চলে গেল, বকুল সুযোগ পেয়ে একেবারে কাছে এসে অপেক্ষা করতে থাকে। সত্যি সত্যি খবরের শেষের দিকে হঠাৎ করে টেলিভিশনে টুশকিকে দেখানো হল, টুশকি পানির মাঝে ভুস করে বের হয়ে আসছে, অসংখ্য মানুষ হাততালি দিচ্ছে। তারপর খবরের একজন মানুষ কয়েকজন সাক্ষাৎকার নিল, খবরটি ইংরেজি হলেও সাক্ষাৎকারটি বাংলা। বকুল শুনতে পেল মানুষগুলো বলছে যে বিদেশে যেরকম ডলফিনের খেলা দেখানো হয় তারাও সেরকম বাংলাদেশের নিজস্ব সম্পদ শুশুকের খেলা দেখাচ্ছে। তারা আপাতত একটি শুশুক দিয়ে শুরু করছে, কয়েকদিনের মাঝেই আরও শুশুক নিয়ে আসবে। যে-মানুষটি সাক্ষাৎকার নিচ্ছে সে তখন জিজ্ঞেস করল, “আপনারা কীভাবে শুশুককে খেলা দেখানো শিখাচ্ছেন?”
”আমাদের সেজন্যে বিদেশ থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানুষ আনা হয়েছে, তাদের একজন হচ্ছেন পিটার ব্ল্যাংক।”
তখন পিটার ব্ল্যাংককে দেখানো হল এবং বকুল চমকে উঠে দেখল পিটার ব্ল্যাংক হচ্ছে ঝড়ের মাঝে স্পিডবোট ডুবে-যাওয়া যে-মানুষটিকে সে উদ্ধার করেছিল সে। খবরের প্রতিবেদন আরও অনেক কিছু বলা হল, যে-প্রতিষ্ঠানটি বিনোদনের জন্যে এই খেলা দেখাচ্ছে তাদের নাম ‘ওয়াটার ওয়ার্ল্ড। তাদের খেলা দেখানো হয় প্রতিদিন বিকাল পাঁচটা এবং সন্ধ্যে সাতটার সময়। যেখানে খেলাটি দেখানো হচ্ছে সেই জায়গাটি নাম ‘উত্তরণ’, বনানীর কাছাকাছি সেটি একটি নতুন এলাকা।
পলাশপুর গ্রামের সবাই বকুলকে এবং টুশকিকে দেখেছ কাজেই সবাই টেলিভিশনের টুশকিকে চিনতে পারল। তারা এমন ভান করতে লাগল যে এটা টুশকির বিশাল একটা সৌভাগ্য যে তাকে টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছে। নদী থেকে তাকে ধরে নেওয়া যে একটা অন্যায় কাজ সেটা একজনও বুঝতে পারল না। মণ্ডলবাড়ি থেকে বকুল প্রায় চোখ পানি নিয়ে বের হল। অন্ধকার পথে বাড়ি ফিরে আসতে আসতে বকুল ঠিক করে ফেলল সে কাল ভোরেই ঢাকা যাবে। নীলাকে ঘটনাটা খুলে বললে নীলার আব্বু নিশ্চয়ই কিছু-একটা ব্যবস্থা করতে পারবেন। তার কাছে নীলার ঠিকানা আছে, ঢাকা শহরে গেলে নীলার বাসা খুঁজে বের করা কঠিন হবার কথা নয়।
রাতে বিছানার শুয়ে শুয়ে বকুল কীভাবে কী করবে চিন্তা করতে থাকে। একা একা ঢাকা পৌঁছানো মনে হয় সবচেয়ে কঠিন অংশটুকু। সে যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হত তা হলে কোন সমস্যাই ছিল না। বারো-তেরো বছরের একটা মেয়ে একা একা ঢাকা যায় না, কিন্তু তাকে যেতেই হবে। তাদের স্কুল থেকে মাইলখানেক উত্তরে ঢাকা যাবার রাস্তা, সেখানে ঢাকা যাবার বাস থামে। কোনভাবে সেটাতে উঠে পড়লে একটা-কিছু ব্যবস্থা হয়ে যাবে। সঙ্গে আর কাউকে নিতে পারলে হত, কিন্তু চিন্তা-ভাবনা করে সে একাই যাবে বলে ঠিক করল। ঢাকা যাবার জন্যে কিছু টাকা-পয়সা দরকার, সে তার পয়সা জমানোর কৌটায় যে পয়সা জমিয়ে এসেছে সেটা মনে হয় যথেষ্ট নয়। বাজারে রহমত চাচার মনোহারী দোকান থেকে বাবার কথা বলে কিছু টাকা ধার করা যেতে পারে, বেশ কিছুদিন আগে একবার বাবা তাকে দিয়ে কিছু টাকা আনিয়ে নিয়েছিলেন। স্কুলের বেতনের কথা বলে মায়ের কাছ থেকেও কিছু টাকা নেওয়া যেতে পারে।
পরদিন সকালে স্কুলে যাবার কথা বলে সে তাদের গ্রামের অন্য বাচ্চাদের সাথে বের হল। মাকে স্কুলের বেতনের কথা বলে কিছু টাকা নিয়েছে। নিজের জমানো খুচরাও টাকাও আছে সাথে। বাজারের পাশ দিয়ে যাবার সময় বাবার কথা বলে রহমত চাচার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নিল। এখন ঢাকা যাওয়ার এবং ঢাকায় পৌঁছানোর পর নীলার বাসায় যাবার জন্যে রিকশা ভাড়াটুকু উঠে গেছে মনে হয়। স্কুলের কাছাকাছি পৌঁছে সে তার বই-খাতা রতনের কাছে দিয়ে বলল বিকেলবেলা সেগুলো তার বাসায় পৌঁছে দিতে।
রতন চোখ কপালে তুলে বলল, “সে কী! তুমি কোথায় যাচ্ছ বকুলাপ্পু?”
“ঢাকায়।”
“ঢাকায়? কার সাথে?”
“একা।”
রতন মুখ হাঁ করে বলল, “একা?”
“হ্যাঁ। টেলিভিশনে দেখিসনি টুশকিকে চুরি করে নিয়েছে?”
রতন মাথা নাড়ল, সে নিজে দেখেনি, কিন্তু ঘটনাটার কথা শুনেছে। সে ঢোক দিলে বলল, “তুমি কী করবে?”
“টুশকিকে বাঁচাতে হবে না?”
“কেমন করে বাঁচাবে?”
“সময় হলেই জানবি। যদি বিকেলের মাঝে ফিরে না আসি তা হলে বাড়িতে বলিস আমি নীলাদের বাসায় গেছি।”
“তোমার বাড়িতে চিন্তা করবে না বকুলাপ্পু?”
“সেটা তো করবেই। বলিস নীলা আর তার আব্বু গাড়ি করে এসে আমাকে নিয়ে গেছে। তা হলে বেশি চিন্তা করবে না। বলতে পারবি না?”
রতন দুর্বল গলায় বলল, “পারব।”
“যদি না বলিস তোর মাথা ছিঁড়ে ফুটবলের মতো কিক দিয়ে নদীর ঐ পাড় পাঠিয়ে দিব। মনে থাকে যেন।”
রতন আবার ঢোক গিলে বলল তার মনে থাকবে।
ঢাকায় যাবার অংশটুকু নিয়ে সে যত ভয় পেয়েছিল দেখা গেল ব্যাপারটা তত কঠিন হল না। ছাদে এবং ভিতরে মানুষে বোঝাই গাদাগাদি ভিড়ের একটা বাসে উঠে যাবার সময় সবাই মনে করতে লাগল সে কারও সাথে উঠেছে। কন্ডাক্টর ভাড়া নেবার সময় বুঝতে পারল সে একা–তখন বকুল ভান করতে লাগল তার সাথে যে এসেছে সে বাসের ছাদে উঠেছে। কন্ডাক্টর ভাড়া পেয়েই খুশি, কার সাথে সে এসেছে, কে ছাদে উঠেছে এবং কে নিচে বসেছে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাল না।
ঢাকা শহরে নেমে নীলার বাসায় যাওয়া নিয়ে একটা বড় সমস্যা হল। যেখানে বাসে নেমেছে সেখান থেকে কোন রিকশাই নীলাদের এলাকায় যেতে রাজি হল না–সেটা নাকি অনেক দূর। কী করবে সেটা নিয়ে যখন বকুল খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে তখন হঠাৎ করে তার ফোন করার কথা মনে পড়ল। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সে একটি দোকান পেয়ে গেল যার বাইরে বড় বড় করে লেখা ‘ফোন ফ্যাক্স’। ভিতরে ঢুকে মানুষটাকে নীলাদের বাসার টেলিফোন নম্বরটা দিতেই মানুষটা তাকে নম্বরটা ডায়াল করে টেলিফোনটা এগিয়ে দিল। বকুল এর আগে জীবনে টেলিফোনে কথা বলেনি, কী করতে হয় সে জানেও না। রিসিভারটা কানে লাগিয়ে সে কিছু-একটা শোনার চেষ্টা করতে থাকে, খানিকক্ষণ পিপি একটা শব্দ হয়ে হঠাৎ সে একটা মেয়ের গলায় শব্দ শুনতে পেল, “হ্যালো!”
“নীলা?”
“হ্যাঁ, আপনি কে বলছেন?”
“নীলা, আমি বকুল।”
“বকুল!” টেলিফোনে নীলা একটা বিকট চিৎকার দিল”তুমি কোথা থেকে কথা বলছ?”
“ঢাকা থেকে।”
“ঢাকা কোথায়? কার কাছে এসেছ? কখন এসেছ?”
“একসাথে এত কিছু জিজ্ঞেস কোরো না। আমি এক্ষুনি এসেছি।”
“কার কাছে?”
“তোমার কাছে। খুব দরকার।” নীলা শঙ্কিত গলায় বলল, “কী হয়েছে?”
“টুশকি চুরি হয়ে গেছে।”
“কী বললে? নীলা চিৎকার করে বলল, “কী বললে?”
“টুশকিকে চুরি করে নিয়ে গেছে। আমি টেলিভিশনে দেখেছি।”
“কোথায় দেখেছ–দাঁড়াও তুমি কোথায়?”
“আমি জানি না।”
“কোথা থেকে ফোন করছ?”
“একটা দোকান থেকে।”
“দোকানটা কোথায়?”
“সেটাও জানি না।”
“তুমি দোকানের মানুষের কাছে টেলিফোনটা দিয়ে এখানে বসে থাকো আমি গাড়ি নিয়ে আসছি। অন্য কোথাও যাবে না। ঢাকা শহরে কেউ হারিয়ে গেলে তাকে আর পাওয়া যায় না।”
“ঠিক আছে।”
নীলা ফোনের দোকানের মানুষের সাথে কথা বলে ঠিকানাটা নিয়ে আধঘণ্টার মাঝে বিশাল একটা গাড়ি নিয়ে চলে এল। গাড়ি করে যেতে যেতে বকুলের কাছে সবকিছু শুনতে শুনতে নীলার চোখ বড় বড় হয়ে ওঠে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে হাতে কিল মেরে বলল, “কত বড় সাহস দেখেছ! আমাদের টুশকিকে চুরি করে নিয়ে যায়!”
“এখন কী করবে?”
“তুমি কোন চিন্তা করবে না, আমি সব ব্যবস্থা করব। আল্লুকে বললেই দেখো আব্বু একটা ব্যবস্থা করে দেবে।”
বকুল মাথা নাড়ল। নীলার আব্বু নিশ্চয়ই কিছু-একটা ব্যবস্থা করতে পারবেন, সে-ব্যাপারে বকুলের কোন সন্দেহ নেই।
নীলা একটু ইতস্তত করে বলল, “শুধু একটা সমস্যা।”
“কী সমস্যা?”
“আব্বু ঢাকায় নেই।”
“কোথায় গিয়েছেন?”
“সিঙ্গাপুর।”
“কবে আসবেন?”
নীলা মাথা চুলকে বলল, “জানি না।”
ঢাকার রাস্তায় গাড়ি দুজনকে নিয়ে যেতে থাকে, নীলা হাতে কিল দিয়ে বলল, “আমাদেরই একটা ব্যবস্থা করতে হবে।”
বকুল ভয়ে ভয়ে বলল, “আমাদেরকেই?”
“হ্যাঁ, আমাদেরকেই। আমাকে আর তোমাকে।”
নীলাদের বাসায় পৌঁছে বকুল একেবারে হতবাক্ হয়ে গেল। মানুষের বাসা যে কখনো এত সুন্দর হতে পারে সেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। বাসার এক-একটা বাথরুম এত বড় যে মনে হয় ভিতরে ফুটবল খেলা যায়। বকুল হাত-মুখ ধুয়ে যে-তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছল সেটা এত নরম যে মনে হল বুঝি ফুলের পাপড়ি দিয়ে তৈরি। বকুল আর নীলা যে খাবারের টেবিল খেতে বসল সেটা কুচকুচে কালো পাথরের তৈরি। টেবিলটি এত মসৃণ যে শুধু হাত বুলাতে ইচ্ছে করে।
বকুল আর নীলা খেতে খেতে আলাপ করতে থাকে। নীলা বলল, “আব্বু নেই তাই খুব মুশকিল হল কিন্তু আল্লু থাকলে যেটা করতেন আমরা সেটাই করব।–”
“সেটা কী?”
“শমসের চাচা!”
নীলা তখন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে লাগল, “শমসের চাচা শমসের চাচা!’
সাথে সাথে প্রায় নিঃশব্দে শমসের এসে ঢুকল, বলল, “আমাকে ডাকছ নাকি নীলা?”
“হ্যাঁ শমসের চাচা। বকুল একটা খবর নিয়ে এসেছে, একেবারে সর্বনাশ হয়ে গেছে।”
“কী খবর?”
“টুশকির কথা মনে আছে না? সেটা চুরি হয়ে গেছে।”
শমসের চাচা নিজের নখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “হ্যাঁ। আমি টেলিভিশনে দেখেছি। ওয়াটার ওয়ার্ল্ড নাম দিয়েছে, সেখানে শুশুকদের খেলা দেখানো হয়।”
নীলা চোখ বড় বড় করে বলল, “হ্যাঁ, সেখানে টুশকিকে চুরি করে এনেছে।”
শমসের কোনো কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। নীলা বলল, টুশকিকে উদ্ধার করতে হবে শমসের চাচা। কতক্ষণ লাগবে?”
শমসের চাচা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “টুশকিকে এত সহজে উদ্ধার করা যাবে না নীলা।”
নীলা ভয়-পাওয়া গলায় বলল, “কেন?”
“টুশকি কারও সম্পত্তি ছিল না। সেটা নদীর একটা শুশুক। নদীর যে-কোন মাছ যেমন ধরা যায় ঠিক সেরকম যে-কোন শুশুকও ধরে আনা যায়–”
বকুল প্রায় আর্তনাদ করে বলল, “টুশকি আমাদের শুশুক। আমাদের–আমার–”
শমসের একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, “আমি জানি। কিন্তু আইনের দিক দিয়ে তোমার ছিল না। এখন এটা আইনের দিক দিয়ে ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের। তারা যদি ছেড়ে না দেয় আমাদের কিছু করার নেই।”
নীলা প্রায় কেঁদে ফেলে বলল, “কিছু করার নেই?”
শমসের একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “না, নেই। স্যার যদি থাকতেন তা হলে কিছু করতে পারতেন।
“শমসের চাচা! আবুকে এক্ষুনি ফোন করেন। এক্ষুনি।