০৮. নির্যাতন-বাতিক

৮. নির্যাতন-বাতিক

চরম আকারের নির্যাতন-বাতিক উন্মত্ততার একটি স্বীকৃত রূপ। কোনও কোনও মানুষের ধারণা অন্যেরা তাকে হত্যা করতে চায়, অথবা বন্দী করতে চায় অথবা অন্য কোনও গুরুতর ক্ষতি করতে চায়। এই কাল্পনিক নির্যাতনকারীদের কবল থেকে নিজেকে রক্ষা করার ইচ্ছা তাদের প্রায়ই হিংসামূলক কাজে প্ররোচিত করে, যে জন্যে তাদের স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন দেখা দেয়। অন্যান্য ধরনের মস্তিষ্কবিকৃতির মতো এটা একটি বিশেষ প্রবণতার বাড়াবাড়ি মাত্র, যা যেসব মানুষ স্বাভাবিক বলে পরিচিত তাদের মধ্যে দেখা যায় না তা নয়। এর চরম অবস্থাসমূহ নিয়ে আমি আলোচনা করব না কারণ তা মনোবিদদের ব্যাপার। আমি মৃদুতর অবস্থাসমূহ নিয়ে কিছু বলব। কারণ সেগুলি প্রায় ক্ষেত্রে অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, আর সেসব নিশ্চিতরূপে উন্মত্ততার সীমায় যখন না পৌঁছায় রোগী নিজেই তার ব্যবস্থা করতে পারে, অবশ্য যদি তাকে সঠিক রোগ নির্ণয়ে সম্মত করানো যায় এবং সে বুঝতে পারে এই বাতিকের উদ্ভব তার নিজের ভিতর থেকেই হয়েছে, অন্যের কল্পিত শত্রু বা নিষ্ঠুরতা থেকে নয়।

নারী বা পুরুষ, এমন এক ধরনের মানুষের সাথে আমরা পরিচিত, যারা চিরদিন নিজেদের অকৃতজ্ঞতা, নিষ্ঠুরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতার কাছে বলিপ্রদত্ত বলে মনে করে। এই ধরনের মানুষদের ক্ষেত্রে তাদের কথা প্রায় বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয় এবং যারা তাদের বেশিদিন ধরে চেনে না তাদের কাছ থেকে প্রচুর সহানুভূতি পায়। স্বাভাবিকভাবে তারা আলাদা আলাদা ভাবে যেসব গল্প বলে তার মধ্যে অসম্ভাব্য কিছুই থাকে না। যেসব দুর্বহারের কথা তারা বলে তা নিঃসন্দেহে মাঝে মাঝে ঘটে থাকে। কিন্তু যারা তাদের হাতে এইরকম যন্ত্রণা ভোগ করে সেই দুর্জনদের সংখ্যা দিনে দিনে এত বাড়তে থাকে যে, শেষ পর্যন্ত শ্রোতার মনে কাহিনীর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ জাগে। সম্ভাবনা রীতির নিয়মে কোনও বিশেষ সমাজে বিভিন্ন ধরনের যেসব লোক বাস করে তারা সারা জীবন সমপরিমাণ দুর্ব্যবহার পায়। যদি কোনও বিশেষ গোষ্ঠীর একজন লোক, তার নিজের মধ্যেই নিহিত থাকার সম্ভাবনা বেশি এবং হয় সে যে যন্ত্রণা ভোগ করেনি তাই ভোগ করছে বলে কল্পনা করছে অথবা অচেতনভাবে এমন ব্যবহার করছে, যাতে অন্যের মনে অনিয়ন্ত্ৰণীয় বিরক্তির উদ্রেক হচ্ছে। অভিজ্ঞ লোকেরা তাই যারা নিজেদের বিশ্বের দ্বারা উৎপীড়িত বলে নিজেদের মনে করেন, তাদের সন্দেহের চোখে দেখে এবং তাদের সহানুভূতি না পেয়ে এই হতভাগারা মনে করে প্রত্যেকটি লোক তাদের বিরুদ্ধে চলে গেছে। এ অবস্থার প্রতিবিধান সহজ নয়, কারণ তা সহানুভূতি পেলে যেমন, সহানুভূতি না পেলে তেমন বেড়েই যায়। নির্যাতন-বাতিকগ্রস্ত মানুষ যখন দেখে যে তার দুর্ভাগ্যের কাহিনী বিশ্বাস করা হচ্ছে তখন সে তা আরও অলংকৃত করে বলতে থাকে এবং একসময় তা বিশ্বাসযোগ্যতার শেষ সীমায় পৌঁছে যায়। অন্যদিকে সে যদি দেখে তার কথা বিশ্বাস করা হচ্ছে না, তখন সে তার প্রতি মানুষের বিচিত্র ধরনের নির্দয়তার একটি উদাহরণ সেই লোকের মধ্যে দেখতে পায়। এই রোগ এমন যে শুধু বোঝাঁপড়ার মাধ্যমে তার নিরাময় সম্ভব এবং সেই উদ্দেশ্য সফল করতে হলে এই বোধ রোগীর মনেও প্রতিষ্ঠা করাতে হবে। এই অধ্যায়ে আমি কিছু সাধারণ পরামর্শ দেব, যার সাহায্যে প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজের মধ্যে কী পরিমাণ নির্যাতন-বাতিক রয়েছে (যা থেকে সকলেই কমবেশি ভুগছে), তা সন্ধান করতে পারবে এবং তাদের চিহ্নিত করা গেলে পরিত্যাগ করাও সহজ হবে। সুখের অন্বেষণে এটি একটি প্রয়োজনীয় অংশ। কারণ, প্রত্যেকেই আমাদের প্রতি খারাপ আচরণ করে, এই কথা যদি আমরা সবসময় ভাবি, তা হলে সুখী হওয়া একেবারেই অসম্ভব।

বিদ্বেষপূর্ণ জল্পনা নিয়ে প্রায় প্রত্যেকটি লোক যে ধারণা পোষণ করে, তাতে দেখা যায় যুক্তিহীনতার একটি সর্বজনীন ধরণ পরিচিতদের সম্পর্কে এমন কি বন্ধুদের সম্পর্কে বিদ্বেষপূর্ণ রটনা প্রচার করার লোভ কম লোকেই সংবরণ করতে পারে। তবু যখন মানুষ তার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রচারের কথা শোনে তখন ক্ষুব্ধ এবং স্তম্ভিত হয়। একথা তারা মনেই করে না যে, তারা যেমন অন্যের বিরুদ্ধে প্রচার করে অন্যেরাও তেমনি তাদের বিরুদ্ধে একই কাজ করে। এই ধারণা মৃদু স্তরের। কিন্তু এর আধিক্য ঘটলে মানুষ নির্যাতন-বাতিকগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আমরা নিজেদের প্রতি যে কোমল ভালবাসা এবং গভীর সম্মান বোধ করি অন্যদের কাছ থেকেও সেই অনুভূতি কামনা করি। আমরা এ কথাটা ভাবি না যে, আমরা অন্যকে নিয়ে যা চিন্তা করি, অন্যেরা আমাদের সম্পর্কে ভাল কিছু চিন্তা করুক তা আমরা আশা করতে পারি না। এ রকম যে হয় না তার কারণ আমাদের যোগ্যতা অনেক বেশি এবং তা স্পষ্ট আর অন্যের যোগ্যতা, যদি কিছু থেকেও থাকে তবে তা শুধু বদান্য দৃষ্টিতেই ধরা পড়ে। কোনও না কোনও ব্যক্তি আপনার বিরুদ্ধে ভীষণ কিছু বলেছে এ কথা শুনলে আপনার মনে পড়ে যাবে তার বিরুদ্ধে উচিত এবং ন্যায্য, যা আপনি করতে পারতেন তা থেকে নিরানব্বই বার বিরত থেকেছেন এবং ভুলে যাবেন যে শততম বারে একটা অসতর্ক মুহূর্তে তার সম্পর্কে সত্যি আপনি কী ভাবেন তা প্রকাশ করে ফেলেছেন। তখন কিন্তু আপনার মনে হবে, এই কী আপনার সংযমের পুরস্কার? ক’বার আপনি মুখ খোলেন নি, সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি শুধু জানেন আপনি শততম বলে কী বলেছেন, তা হলে আমার ধারণা প্রথমেই প্রায় সব বন্ধুত্বের অবসান হয়ে যেত। দ্বিতীয় যে ফলটি পাওয়া যায় সেটি খুব চমৎকার হতে পারত। কারণ বন্ধুহীন জগৎ অসহ্য হয়ে উঠত এবং তখন আমরা পরস্পরকে যে সম্পূর্ণ কলঙ্কশূন্য মনে করি না, তা মিথ্যার আবরণে লুকিয়ে রাখার প্রয়োজন বোধ না করে পরস্পরকে ভালবাসতে শিখতাম। আমাদের বন্ধুদের অনেক ত্রুটি রয়েছে তা আমরা জানি। কিন্তু তবুও সাধারণভাবে তারা মনের মতো মানুষ এবং তাদের আমরা পছন্দ করি, কিন্তু তারাও অসহনীয়। আমরা আশা করি, তারা মনে করুক জগৎ সংসারে সব মানুষের ক্রটি আছে, শুধু আমাদের নেই। যখন আমাদের ত্রুটির কথা স্বীকার করতে বাধ্য হই, তখন আমরা এই প্রত্যক্ষ ব্যাপারটার ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব প্রদান করি। সম্পূর্ণ ত্রুটিহীন থাকার ধারণা কারও থাকা উচিত নয় এবং তার জন্যে তাদের অহেতুক দুর্ভাবনাও কিছু নেই।

নির্যাতন-বাতিকের শিকড় প্রবেশ করেছে আমাদের নিজেদের যোগ্যতাবিষয়ে অতিরঞ্জক ধারণার অতি গভীরে। ধরা যাক আমি একজন নাট্যকার, প্রত্যেকটি নিরপেক্ষ ব্যক্তির কাছে এটা নিশ্চয় স্পষ্ট যে আমি এই যুগের শ্রেষ্ঠ নাট্যকার। তার পরেও কোনও কারণে আমার নাটক খুব কম অভিনীত হয় এবং যখন হয়ও, সফল হয় না। এই অদ্ভুত ঘটনার ব্যাখ্যা কি? স্পষ্টই বোঝা যায় কোনও না কোনও কারণে সকল ব্যবস্থাপক, অভিনেতা এবং সমালোচক একসাথে মিলে আমার বিরুদ্ধাচরণ করছে। এর কারণ আমার নিজের কাছে মহা গৌরবের। আমি নাট্যজগতের মহারথীদের পায়ে মাথা নোয়াতে অস্বীকার করেছি। আমি সমালোচকদের চাটুকারিতা করিনি। আমার নাটকসমূহে এমন সব স্পষ্ট কথা রয়েছে যা তাদের আঘাত করলে তা অসহনীয় হয়ে উঠবে। আর এই কারণে আমার অন্য সকলকে লঙ্ঘন করে যাওয়া যোগ্যতার স্বীকৃতি মেলে না।

এরপর ধরা যাক যন্ত্র আবিষ্কারের কথা। সে কোনও দিন তার আবিষ্কারের মূল্য অন্য কোনও ব্যক্তিকে দিয়ে পরীক্ষা করাতে পারল না। যন্ত্র উৎপাদকেরা ছকবাঁধা পথে চলে। নুতন কিছুতেই তাদের আগ্রহ নেই। আর তাদের নিজেদেরই যন্ত্র উদ্ভাবনের লোক রয়েছে, তারাই অস্বীকৃত নতুন নতুন প্রতিভার অধিকার প্রবেশ রোধ করতে সফল হয়। অবাক হওয়ার কথা শিক্ষিত গোষ্ঠীর কাছে লেখার পাণ্ডুলিপি পাঠালে তারা তা হারিয়ে ফেলেন অথবা না পড়েই ফেরত পাঠিয়ে দেন। যেসব ব্যক্তিদের কাছে আবেদন জানানো হয়, তারা কোনও অজানা কারণে তাতে সাড়া দেন না। এসব ব্যাপারকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? বেশ বোঝা যায় বিশেষ কিছু লোকের একটা মিলন সমিতি আছে। যারা শুধু নিজেদের মধ্যেই নতুন সব উদ্ভাবনের ফল ভাগ করে নিতে চান। যে লোক তাদের সমিতির অন্তর্ভুক্ত নন, তার কোনও কথা তারা শোনেন না।

এরপর আরেকজন মানুষ যার অভিযোগ বাস্তব ঘটনার সাথে জড়িত এবং যথার্থ, কিন্তু সে তার অভিজ্ঞতার আলোকে তাকে সাধারণভাবে দেখে এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে জগতের চাবি তার দুর্ভাগ্যের মধ্যেই রয়েছে। আমরা মনে করতে পারি সে হয়তো গুপ্তচর বিভাগের কোনও কলঙ্ক সম্পর্কে জানতে পেরেছে যা সরকারের স্বার্থে গোপন থাকা প্রয়োজন। তার পক্ষে এই উদ্ভাবনের জন্যে প্রচার পাওয়া কঠিন। কিন্তু এই কলঙ্ক কাহিনী যদিও তাকে উত্তেজিত করেছে যারা তাঁর কাছে মহৎ প্রাণ মানুষ বলে বিবেচিত, তাঁরা এর প্রতিকারে সামান্যতম ব্যবস্থা গ্রহণেও স্বীকৃত নন। তার বর্ণিত ঘটনা যথার্থ হলেও তার ধারণা হল, নানা অপরাধকে সমর্থন দিয়ে যারা ক্ষমতাশালী হয়েছে সেইসব অপরাধ চাপা দিয়ে রাখতেই তারা সারাক্ষণ নিজেদের ব্যস্ত রাখে। এ ধরনের রোগীদের সারিয়ে তোলা বেশ কঠিন, কারণ দৃষ্টিভঙ্গীতে আংশিক সত্যতা থাকে। অনেক বেশি বিষয়ে তাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা না থাকলেও প্রত্যক্ষভাবে যেটুকুর সংস্পর্শে তারা এসেছে, তাই তাদের মনে স্বাভাবিকভাবে গভীর প্রভাব রেখে দিয়ে গেছে, এটা তাদের ভুল মাত্রাজ্ঞান দেয়। ফলে যা ঘটে, তা হল, সাধারণ ঘটনার চেয়ে ব্যতিক্রমী ঘটনায় তারা অহেতুক বেশি গুরুত্ব আরোপ করে।

আর এক ধরনের লোক যারা প্রায়ক্ষেত্রে বাতিকগ্রস্ত হয়ে থাকেন, তারা হলেন পরোপকারী। তারা লোকের ইচ্ছার বিরুদ্ধেও তাদের উপকার করে বেড়ান এবং তারা কোনও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলে ভয়ে, বিস্ময়ে শিউরে ওঠেন। পরের উপকার করার উদ্দেশ্যকে যতটা দোষহীন ভাবা হয় বাস্তবে তা নয়। ক্ষমতালিপ্সার মধ্যে ছলনা আছে, এর রয়েছে নানা ছদ্মবেশ। অন্যের উপকার করা হচ্ছে বলে যা বিশ্বাস করা হয় তার থেকে যে আনন্দ পাওয়া যায়, প্রায় ক্ষেত্রে তার মূলে থাকে সেই ক্ষমতালিপ্সা। লোকের উপকার করার অর্থ বলতে সাধারণভাবে তাদের কোনও আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা বোঝায়। যেমন মদ্যপান বা জুয়া খেলা বা অলসতা বা অন্য কিছু। এক্ষেত্রে এমন একটা উপাদান দেখা যায় যার অনেকটা সামাজিক নৈতিকতার উত্তম দৃষ্টান্ত। যেমন তাদের প্রতি আমরা বিরত থাকি বন্ধুদের শ্রদ্ধা ধরে রাখার জন্যে। বলা যায় যারা ধূমপানের বিরুদ্ধে আইন তৈরীর জন্যে (এ ধরনের আইন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অঙ্গরাজ্যে আছে অথবা ছিল) তাঁরা নিঃসন্দেহে ধূমপায়ী নন এবং তাদের কাছে অন্যের সুখদায়ক ধূমপান বেদনার উৎস। তারা যদি প্রত্যাশা করে থাকেন যারা পূর্বে ধূমপানের আসক্ত ছিল তাদের একটি প্রতিনিধিদল এই জঘন্য দুষ্কর্ম থেকে তাদের মুক্তি দেওয়ার জন্যে ধন্যবাদ জানাতে আসবে, তাহলে তাঁরা হতাশ হবেন। এরপর তাঁরা ভাবতে পারেন যে, জনকল্যাণে তারা জীবন সমর্পণ করেছেন এবং এজন্যে যাদের কৃতজ্ঞ হওয়ার সবচেয়ে বেশি কারণ ছিল তারাই সেটা প্রকাশ করার সুযোগ খুঁজে পেল না এবং এই বিষয়ে সবচেয়ে বেশি অসচেতন হয়ে রইল।

যে সব গৃহকত্রী পরিচালিকাদের নৈতিকতা পাহারা দিয়ে রাখেন তাদেরও গৃহ পরিচারিকাদের সম্পর্কে একই ধরনের মনোভাব দেখা যায়। কিন্তু বর্তমানে ভৃত্যসমস্যা এমন প্রবলরূপ নিয়েছে যে, পরিচারিকাদের প্রতি এ ধরনের অনুগ্রহ প্রদর্শন দেখা যায় না।

রাজনীতির উচ্চস্তরে একই রকম ঘটনা দেখা যায়। যে রাষ্ট্রনেতা ধীরে ধীরে সব ক্ষমতা নিজের মধ্যে কেন্দ্রীভূত করেছেন এই জন্যে যে তিনি জনকল্যাণে উচ্চমাত্রায় এবং মহৎ কিছু করতে পারবেন, যার জন্যে তিনি নিজের আরাম পর্যন্ত ত্যাগ করেছেন এবং যার জন্যে তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ। সেই তিনি যখন দেখেন জনসাধারণ তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে তখন তাদের অকৃতজ্ঞতায় তিনি হতবাক হয়ে যান। একথা তার মনেই হয় না যে তার কাজের মধ্যে জনসেবার উদ্দেশ্য না থাকতে পারে অথবা ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ করার আনন্দই তাঁকে সেসব কজে প্রেরণা যুগিয়েছে। রাজনৈতিক সভায় বা দলীয় মুখপত্রে যেসব বাধা ভাষা ব্যবহার করা হয়, ক্রমে সেইসব তাঁর কাছে সত্যি বলে মনে হয় এবং তিনি দলীয় বাগাড়ম্বরকে উদ্দেশ্যের যথার্থ বিশ্লেষণ বলে ভুল করেন। বিরক্ত এবং মোহমুক্ত হয়ে পৃথিবী থেকে অবসর নেন যখন পৃথিবীও তার কাছ থেকে দূরে সরে যায়। তিনি এই বলে অনুতাপ করেন যে কেন তিনি জনকল্যাণরূপী একটি কৃতজ্ঞতাবিহীন কাজে নেমেছিলেন।

এই উদাহরণগুলি থেকে চারটি সাধারণ নীতির পরিচয় পাওয়া যাবে, যদি তার সত্যতা ভালভাবে উপলব্ধি করা যায় তাহলে নির্যাতন-বাতিকের নিরাময় সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা দেবে। প্রথমটি হল : আপনার উদ্দেশ্য আপনার কাছে যতটা পরার্থবাদী বলে মনে হচ্ছে সবসময় ততটা নয়, সে কথা অবশ্যই মনে রাখবেন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে : নিজের যেগ্যেতা সম্পর্কে অতিরিক্ত ধারনা পোষণ করবেন না। তৃতীয়টি হচ্ছ : নিজের সম্পর্কে আপনার যে পরিমাণ উৎসাহ অন্যের কাছ থেকে ততটা আশা করবেন না। এবং চতুর্থটি হচ্ছে : আপনাকে নির্যাতন করার জন্যে অধিকাংশ লোক ব্যস্ত হয়ে পড়েছে এমন কল্পনা করবেন না। আমি পরপর এইসব সাধারণ নীতি সম্পর্কে কিছু বলছি।

পরকল্যাণব্রতী এবং নির্বাহিকদের পক্ষে তাদের অভিপ্রায় নিয়ে সন্দেহ পোষণ করা প্রয়োজন। এই ধরণের ব্যক্তিদের কল্পনায় পৃথিবী বা তার অংশবিশেষ কী রকমের হওয়া উচিত তার একটা দৃশ্য থাকে এবং তারা কখনো সঠিকভাবে, কখনো বা ভুলভাবে মনে করেন যে, সেই কল্প-দৃশ্য বাস্তবে রূপায়িত করলে সমগ্র মানবসমাজ অথবা তার কোনও অংশের পরম মঙ্গল হবে। কিন্তু তারা একথাটা সম্পূর্ণ উপলব্ধি করতে পারেন না যে, যারা তাদের কাজের ফলে উপকৃত হবেন তাদের প্রত্যেকেরই, কে কেমন পৃথিবী চায়, সে সম্পর্কে তাদের নিজস্ব মতো প্রকাশের সমান অধিকার রয়েছে। নির্বাহী ব্যক্তিদের প্রত্যেকের নিশ্চিত ধারণা যে তাঁদের কল্পিত দৃশ্যই যথার্থ এবং তার সঙ্গে যার অমিল হবে সে ভুল। কিন্তু তার কল্পিতচিত্র যে নিশ্চয়তা দিচ্ছে বাস্তবে তা যথার্থ কিনা তার কোনও প্রমাণ নেই। তা ছাড়া বিশ্বাস হচ্ছে প্রায় সময় দেখা যায় শুধুমাত্র আনন্দ লাভের ছদ্মবেশ যা উঠে এসেছে যেসব পরিবর্তন তিনি ঘটাতে চান সেখান থেকে, যেখানে তিনি নিজেই তার কারণ। ক্ষমতাপ্রিয়তা ছাড়াও আরো একটি উদ্দেশ্য দেখা যায় তা হল দম্ভ, যে এসব ব্যাপারে প্রবলভাবে ক্রিয়া করে। আমি অভিজ্ঞতা থেকে বলছি পার্লামেন্টের সদস্যপদ প্রার্থী মহৎ, আদর্শবাদী যখন দেখেন যে ভোটদাতারা ধরেই নিয়েছে যে তিনি নামের শেষে ‘এম. পি’ অক্ষর দুটি লেখার গৌরব অর্জন করার জন্যেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তখন তিনি তাদের বিশ্বনিন্দুকতার ভাব দেখে বিস্মিত হন। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর যখন তিনি চিন্তা করার সময় পান, তখন তার মনে হয় হয়তো বিশ্বনিন্দুক ভোটদাতারাই সঠিক, আদর্শবাদ সাধারণ উদ্দেশ্যকেও একরকম অদ্ভুত ছদ্মবেশ পরিয়ে দেয়। সুতরাং আমাদের জনপ্রতিনিধিদের কাছে কিছু প্রকৃতনিন্দা অপ্রীতিকর হয় না। চলিত নৈতিকতা যতটা জনকল্যাণ লোকের মনে জাগে, তারা অধিকাংশ মানুষের সাধ্যের অতীত এবং যারা নিজেদের মহৎ গুণের জন্যে গর্বিত তারা প্রায় সময়েই কল্পনা করেন যে সেই দুর্লভ আদর্শে তাঁরা পৌঁছে গেছেন। মহৎ ব্যক্তিদের বিভিন্ন কার্যধারার মধ্যেও আত্ম-স্বার্থের উদ্দেশ্য থাকে, তবে তার জন্যে দুঃখপ্রকাশের কোনও প্রয়োজন নেই, কেন না ব্যাপারটা অন্যরকম হলে মানুষ জাতি হিসাবে বেঁচে থাকতে পারত না। যে মানুষ অন্যেরা খেল কিনা শুধু তাই দেখতে সময় নষ্ট করে এবং নিজের খাওয়ার কথা ভুলে যায়, তার বিনাশ অবধারিত। অবশ্য শক্তির বিরুদ্ধে পুনরায় সংগ্রাম করার জন্যেই শুধু সে কিছু খেয়ে নিতে পারে। এই কারণে কিছু খেলে তা সম্পূর্ণ হজম হয় কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ এতে পরিপাকের যে রস নিঃসরণ হওয়ার কথা তা যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষরিত হয় না, তাই কাজের কথা হচ্ছে খাওয়ার প্রয়োজনেই তার তা করা উচিত এবং ভোজনের সময় জনকল্যাণের ইচ্ছায় আপুত থাকা উচিত নয়।

এবং আহার সম্বন্ধে যা সত্যি, অন্য সব ব্যাপারেও তা সমান সত্যি। যা কিছু করতে হবে তা প্রচুর পরিমাণে করতে হলে কোনও উদ্দীপনার সাহায্য প্রয়োজন এবং স্বার্থ জড়িত না থাকলে উদ্দীপনা আসে না। এদিক থেকে দেখতে গেলে আমি স্বার্থের উদ্দেশ্যের সাথে আরো কিছু যুক্ত করতে চাই এবং তা হচ্ছে জৈব-সম্পর্কিত ব্যক্তিদের স্বার্থ। যেমন শত্রুর বিরুদ্ধে স্ত্রী এবং সন্তানদের রক্ষা করার সহজ প্রবৃত্তি। এই মাত্রার পরার্থবাদ মানুষের সাধারণ প্রকৃতির অংশ কিন্তু যে মাত্রা সাধারণ নৈতিকতা দাবি করে তা খুব কম ক্ষেত্রেই খাঁটিভারে পাওয়া যায়। যেসব ব্যক্তি নিজেদের নৈতিক উৎকর্ষতা নিয়ে উচ্চ প্রশংসা পেতে চান, তারা যে মাত্রায় আত্মস্বার্থহীনতা লাভ করেছেন কিনা সন্দেহ। তা তারা অর্জন করেছেন বলে বিশ্বাস করেন। এবং এই কারণেই সতোর মর্যাদালাভের চেষ্টার সাথে এক ধরনের আত্মপ্রতারণা যুক্ত হয়, আর তা থেকেই অতি সহজেই জন্ম নেয় নির্যাতন-বাতিক।

আমার চারটি সাধারণ নীতির দ্বিতীয়টিতে বলা হয়েছে, নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে অতিরিক্ত ধারণা পোষণ করা ঠিক নয়, তার নীতি সম্পর্কিত অংশে এ পর্যন্ত যা বলা হয়েছে তাতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু নৈতিক যোগ্যতা ছাড়া অন্য যোগ্যতা সম্পর্কেও অতিরিক্ত ধারণা পোষণ করা ঠিক নয়। যে নাট্যকারের কোনও নাটকই সাফল্য লাভ করেনি তার শান্তভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত সেগুলি ভাল নাটক নয়। এই ধারণা সমর্থনযোগ্য নয় বলে সাথে সাথে বাতিল করে দেওয়া ঠিক নয়। যদি দেখা যায় ধারণার সাথে বাস্তবের সঙ্গতি আছে, তা হলে একজন পরিচয়দায়ক দার্শনিকের মতো তিনি তা গ্রহণ করবেন। একথা সত্যি যে যোগ্যতা স্বীকৃতি পায়নি এমন দৃষ্টান্ত ইতিহাসে রয়েছে। কিন্তু স্বীকৃতি পেয়েছে এমন দৃষ্টান্ত তার চেয়ে অনেক বেশি। যদি কোনও প্রতিভা সমকালে মূল্য না পেয়ে থাকেন, তা হলেও যে পথে তিনি এগিয়েছেন তা থেকে দূরে সরে যাওয়া উচিত নয়, স্বীকৃতি না পাওয়া সত্ত্বেও। পক্ষান্তরে তিনি যদি অহংসর্বস্ব প্রতিভাহীন ব্যক্তি হন, তিনি পথ থেকে দূরে সরে দাঁড়ালেই ভাল করবেন। এই দুইজনের মধ্যে কে কোন দলের মধ্যে পড়েন তা জানবার কোনও উপায় নেই যদি একজন তার শ্রেষ্ঠ কর্ম অস্বীকৃত হওয়ার জন্যে বেদনায় আহত হয়ে থাকেন। আপনি যদি প্রথম দলে পড়েন তাহলে আপনার অধ্যবসায়কে বলব বীরোচিত। যদি দ্বিতীয় দলের হন তাহলে বলব হাস্যকর। আপনার মৃত্যুর শতবর্ষ পরে জানা যাবে আপনি কোন্ দলভুক্ত ছিলেন। এর মধ্যে একটি পরীক্ষা করা যেতে পারে, যদিও তা অব্যর্থ সে কথা বলা যায় না, যদি নিজেকে আপনি একজন প্রতিভাবান মনে করেন কিন্তু প্রকাশকালে আপনি কী জরুরী তাগিদ অনুভব করেন কোনও ধারণা বা অনুভূতি তুলে ধরার জন্যে অথবা আপনি প্রশংসা অর্জনের ইচ্ছা থেকে তাড়িত হন? প্রকৃত শিল্পী তার শিল্পকর্ম শেষ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এবং আশা করেন যে তাঁর কাজ প্রশংসিত হবে। কিন্তু কেউ যদি প্রশংসা নাও করেন তাহলেও তিনি তাঁর শিল্পরীতি পরিবর্তন করবেন না। কিন্তু যার কাছে অন্যের প্রশংসা লাভ করাই মুখ্য, তার নিজের মধ্যে কোনও জোর নেই নিজস্ব কোনও শিল্পরীতি গঠনের। শিল্পকর্ম প্রশংসা না পেলে এমন ধরনের শিল্পীর সেই কাজ ছেড়ে দেওয়া উচিত। আরো সাধারণভাবে বলতে গেলে বলা যায়, জীবনে যে শাখাই আপনি বেছে নিন, যদি দেখেন যে আপনার পারদর্শিতা সম্বন্ধে আপনি যতটা উচ্চ ধারণা পোষণ করেন, অন্যেরা তা করছেন না, তাহলে নিশ্চিত মনে ভাববেনও না তারাই ভুল করছেন। আপনি যদি এইভাবে ভাবতে থাকেন, তাহলে সহজেই এই বিশ্বাসের শিকার হবেন যে, আপনার যোগ্যতা যাতে স্বীকৃতি না পায় তার জন্যে একটি ষড়যন্ত্র চলছে আর এই বিশ্বাসই, নিশ্চিত থাকুন যে আপনার জীবনে সুখের অন্তরায় হয়ে উঠবে। আপনার যোগ্যতা যতটা আপনি আশা করেছিলেন ততটা নয়। একথা মেনে নিতে মুহূর্তের জন্যে আপনি ব্যথাতুর হয়ে উঠতে পারেন। কিন্তু এই ব্যথাও একসময় শেষ হবে, তার পরেও আবার সুখী জীবন ফিরে আসা সম্ভব।

আমাদের তৃতীয় সাধারণ নীতি হচ্ছে অন্যের কাছ থেকে বেশি আশা না করা। আগে এটাই রীতি ছিল কোনও মহিলা দীর্ঘকাল রোগে শয্যাশায়ী থাকলে তিনি আশা করতেন অন্তত তার একটি কন্যা তার সেবাশুশ্রূষায় নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পিত করবে। তার জন্যে যদি মেয়েটিকে অবিবাহিতা থাকতে হয়, তবুও। অন্যের কাছ থেকে এই ধরনের পরার্থপরতা কামনা করা যুক্তি বিরোধী। কারণ পরার্থবাদীর কাছে এই প্রত্যাশা যত ক্ষতির অহংবাদীর কাছে ততটাই লাভের। অন্যের সাথে বিশেষ করে নিকটজন এবং প্রিয়জনদের সাথে ব্যবহারে একটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ, যদিও কথাটি সব সময় মনে রাখা কঠিন, তারা জীবনকে দেখে তাদের নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে যা তাদের অহংবোধকে অন্যের জন্যে নিজের জীবনের মূল পথ পরিবর্তন করবে। এতটা আশা তাদের কাছে প্রত্যাশা করা অনুচিত। এমন একটা সময় আসে যখন স্নেহের আকর্ষণ এত তীব্র হয় যে চরম আত্মত্যাগও স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু আত্মত্যাগ যদি স্বাভবিক না হয় তা করা উচিত নয় এবং তা না করার জন্যে নিন্দিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। লোকে প্রায়ই অন্যের যে আচরণের নিন্দা করে তা যথাযথ সীমা অতিক্রম করা সর্বগ্রাসী অহংবোধের বিরুদ্ধে তা অন্যের স্বাভাবিক অহংবোধের সুস্থ প্রতিক্রিয়ার চেয়ে বেশি নয়।

আমাদের উল্লেখিত সাধারণ নীতি হচ্ছে আমরা নিজেদের বিষয়ে চিন্তা করতে যত সময় নষ্ট করি, অন্যেরা আমাদের বিষয়ে চিন্তা করতে অনেক কম সময় নষ্ট করে, এই সত্যি কথাটা বুঝতে পারা। নির্যাতন-বাতিকে যে উন্মাদ হয়ে গেছে সে কল্পনা করে সব ধরণের লোক, যাদের প্রকৃতপক্ষে অনেক কাজ এবং সমস্যা রয়েছে তারা ঐ ভাগ্যহত উন্মাদের ক্ষতি সাধনের জন্যে সকাল-দুপুর-রাত্রি নিজেদের ব্যস্ত করে রেখেছে। অনুরূপভাবে যে নির্যাতন বাতিকগ্রস্ত তুলনামূলকভাবে একটু ভাল সে সবরকম কাজকেই নিজের সম্পর্ক থেকে দেখে অথচ তা নয়। প্রকৃপক্ষে তার কোনও অস্তিত্বই নেই। অবশ্য এই ধারণা তার আত্মশ্লাঘাকে পরিতৃপ্ত করে। অনেক বছর ধরে ব্রিটিশ সরকার প্রধানত নেপোলিয়নকে পরাস্ত করার কাজে ব্যাপৃত ছিল। কিন্তু যখন একজন ব্যক্তি, যার কোনও গুরুত্ব নেই কল্পনা করে অন্যেরা সর্বক্ষণ তার কথা ভাবছে তখন বুঝতে হবে সে ধীরে ধীরে উন্মাদ হয়ে যাওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে। ধরা যাক, কোনও নৈশভোজসভায় আপনি একটি ভাষণ দিয়েছেন। সচিত্র কাগজসমূহে অন্যান্য বক্তাদের ছবি প্রকাশিত হয়েছে কিন্তু আপনার কোনও ছবি নেই। এর কারণ কীভাবে দেখা হবে? আপনার মনে হবে অন্যান্য বক্তারা আপনার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হওয়ার কারণে নয়, এর কারণ নিশ্চয়ই পত্রিকার সম্পাদকেরা আপনাকে অগ্রাহ্য করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু কেন তারা এমন নির্দেশ দেবেন? এর কারণ নিশ্চয়ই তারা আপনার মহান গুরুত্বকে ভয় পান। এইভাবে আপনার ছবির অপ্রকাশ, আপনার মনে হবে, আপনাকে অবহেলা করার বদলে সূক্ষ্মভাবে আপনাকে অভিনন্দন জানানো। কিন্তু এই ধরণের আত্মপ্রতারণা নির্দোষ আনন্দ দিতে পারে না। আপনার মনের পিছনে যে মন আছে, সে জানতে পারছে প্রকৃত ঘটনা এর বিপরীত এবং তা নিজের কাছে যথাসম্ভব গোপন রাখার জন্যে ক্রমে ক্রমে আপনাকেই নানা ধরনের উদ্ভট হেতু উদ্ভাবন করতে হবে। এসব বিশ্বাস করার চেষ্টা থেকে শেষ পর্যন্ত মনের ওপর যে চাপ পড়বে তা অত্যন্ত বেশি। তা ছাড়া এই বিশ্বাসের সাথে জড়িত হয়ে যাবে যে আপনি ব্যাপক শত্রুতার লক্ষ্যবস্তু যা আপনার মনে অত্যন্ত বেদনাদায়ক যে অনুভূতি জাগিয়ে রাখবে তা হচ্ছে পৃথিবীর সাথে আপনার সদ্ভাব নেই। আর এই অনুভূতি আপনার আত্মমর্যাদাবোধকে বাঁচিয়ে রাখবে। যে তৃপ্তির ভিত্তি আত্মপ্রতারণা, তা দৃঢ় নয়। সত্য যতই অতৃপ্তিকর তোক প্রথমবারেই তার সাথে সমতা রেখে জীবনকে গঠন করার দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *