বাবার হঠাৎ কেন জানি শখ হয়েছে, রানার বই লিখবেন একটি। রকমারি রানার কায়দা-কানুন নোট বইয়ে লিখে রাখছেন। বাজার থেকে অনেক বইপত্রও কিনে এনেছেন। পুরানো বেগম থেকে ঘেটে ঘেটে নারকেল-ইলিশ বা ছানার ভালনার রন্ধনপ্রণালী অসীম আগ্রহে খাতায় তুলে ফেলেছেন। এ ব্যাপারে তাকে সাহায্য করছে নিনু আর ওভারশীয়ার কাকুর ছেলের বউ। মাঝে মাঝে দু-একটি রান্না বাসায়ও রাঁধা হয়। সেদিন যেমন নোয়াপতি মিষ্টি বলে একটা মিষ্টি তৈরি হল। খেতে ভালো হয়েছে বলায়, সে কী ছেলেমানুষি খুশি।
ভালোহ হয়েছে, কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকছেন। রাবেয়াও তার পড়াশোনা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। তার দেখা পাওয়াই মুশকিল। যদি বলি। আয় রাবেয়া একটু গল্প করি, রাবেয়া আত্মকে ওঠে, দু দিন পরেই আমার পরীক্ষা–এখন তোর সাথে আড্ডা দিই! পাগল আর কাকে বলে!
মন্টু রাতে বাসায় ফেরাই বন্ধ Sর দিয়েছে। কয়েক জন বন্ধু মিলে নাকি এক ঘর ভাড়া করেছে। সেখানে গল্পগুজব হয়। কাজেই বাসায় তার বড়ো একটা আসা হয় না, হঠাৎ এক-আধা দিন আসে। মেহমানের মতো ঘুরে বেড়ায়, বাবাকে গিয়ে বলে, মোট করকম রান্নার যোগাড় হল বাবা?
এক শ বারো।
ও বাবা, এত! একটা রান্না কর না। আজ, খাই। কী-কী লাগবে বল, আমি বাজার থেকে নিয়ে আসি।
বাবা মন্টুকে নিয়ে মহা উৎসাহে রানা শুরু করেন।
ঝুনু চলে যাবার পরপরই আমি একলা পড়ে গেছি।
সবাই সবার কাজ নিয়ে আছে। বাসায় আমার তেমন কোনো কাজ নেই। শুয়েবসে সময় কাটাতে হয়। কাজেই আমি দেরি করে বাসায় ফিরি। সেদিন রাত এগারটার দিকে ফিরেছি, দেখি রাবেয়া মুখ কালো করে বসে আছে আমার ঘরে।
কী হয়েছে রাবেয়া?
কিছু হয় নি। তুই হাত-মুখ ধুয়ে আয়, বলছি।
বল শুনি কী ব্যাপার।
তুই কলেজে যাবার পরপরই খালা এসেছিলেন।
কী জন্যে?
তুই জানিস না কিছু?
না তো!
কিটকির বিয়ে। আগামী কাল রাতেই সব সেটেল হবে। খালা সবাইকে যেতে বলেছেন। গাড়ি পাঠাবেন।
অ।
এক রিটায়ার্ড ডিস্ট্রিক্ট জজের ছেলে। ফরেন সার্ভিসে আছে। ফ্রান্সে পোস্টেড। ছুটিতে এসেছে, বিয়ে করে ফিরবে। ম্যানিলাতেই নাকি কিটকির সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। ছেলে গিয়েছিল সেখানে কী কারণে যেন। কিটকির সঙ্গে জানাজানি হয়। কিটকিরও ছেলে খুব পছন্দ।
এসব আমাকে শুনিয়ে কী লাভ রাবেয়া?
কোনো লাভ নেই?
না।
এ রকম হল কেন? চুপ করে আছিস যে?
আমি চুপ করেই রইলাম। আমার কী করার আছে? আমি কী করতে পারতাম? রাবেয়া একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কেঁদে ফেলবে কিনা কে জানে। রাবেয়া ফিসফিস করে বলল, আমার আর এখানে থাকতে ভালো লাগছে। না। আমি পাশ করলেই বাইরে কোথাও চলে যাব। থাকব একা একা! আর খোকা, শোন।
বল।
তুই একটা গাধা, ইডিয়েট। আমি তোর মুখে থুথু দিই।
আমি গায়ের শার্ট খুলে কলঘরের দিকে যাই। রাবেয়া আসে আমার পিছনে পিছনে। এক সময় ধরা গলায় বলে, খোকা, তুই রাগ করলি? ছিঃ, রাগ করবি না। আমার কথায় রাগ করতে আছে বোকা?
খোকা,
গত পরশু সন্ধ্যাবেলা পৌঁছেছি। এখানে। স্টেশনে স্কুলের সুপারিনটেনডেন্ট এসেছিলেন নিজেই। ভারি ভালোমানুষ। সারাক্ষণই মা মা বলে ডাকছেন। তাঁর নিজের টাকায় স্কুল, নিজের জমির উপর দোতলা স্কুলঘর। নিজের সমস্ত সঞ্চয় ঢেলে দিয়েছেন বলেই প্রতিটি জিনিসের ওপর অসাধারণ মমতা। আর যেহেতু আমি স্কুলের এক জন, কাজেই তাঁর ভালোবাসার পাত্রী।
ট্রেন থেকে খুব ভয়ে ভয়ে নেমেছিলাম। নতুন জায়গা।–কাউকে চিনি না, জানি না। কিন্তু তাঁকে দেখে সব ভয় কেটে গেল। কাউকে কাউকে দেখলে মনে হয়। যেন অনেক দিন আগে তার সঙ্গে গাঢ় পরিচয় ছিল, ঠিক সে-রকম। তিনি প্রথমে তাঁর বাসায় নিয়ে গেলেন। বাসায় তিনি আর সুরমা–এই দুটিমাত্র প্রাণী। সুরমা তার মেয়ে। রাতের খাওয়া সেরে তিনি আমাকে হোটেলে পৌঁছে দিলেন। সতের জন ছাত্রী থাকে সেখানে। আমি হয়েছি তাদের হোস্টেল সুপারিনটেনডেন্ট। ছোট্ট একটা লাল ইটের দালান। সামনে গাঁদা ফুলের এক টুকরো বাগান। পেছনেই পুকুর। সমস্ত মন জুড়িয়ে গেছে আমার।
খোকা, তোদের সঙ্গে যখন থাকতাম তখন এক ধরনের শান্তি পেয়েছি, এ অন্য ধরনের। এখানে মনে হচ্ছে জীবনের সমস্ত বাসনা কামনা কেন্দ্রীভূত হয়ে গেছে। আর বেশি কিছু চাইবার নেই। কাল রাতে ছাদে বসে ছিলাম। একা একা। কেন যেন মনে হল, একটু কাদি নির্জনে। মীর কথা ভেবে, রুনুর কথা ভেবে দু— এক ফোঁটা চোখের পানি ফেলি। কিন্তু একটুও কানা আসল না! কেন কাঁদব, বল? প্রচুর দুঃখ আছে আমার।–ত প্রচুর যে কোনো দিন কেউ জানতেও পারবে না। কিন্তু তবুও আমি খোকার মতো ভাই পেয়েছি, কিটকির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে শুনে যে–ভাই আমাকেই সািত্ত্বনা দিতে আসে। রুনু, তুনু, মন্টু, নিনু–এরা আমার পারুল বোন, চম্পা ভাই। চারদিকে এমন চাঁদের হাটে কি কোনো দুঃখ থাকে? মন্টু একটি কবিতার বই উৎসর্গ করেছে। আমাকে। সবগুলি কবিতা হতাশা আর বেদনা নিয়ে লেখা। আমার ভেতরের সবটুকু সে কী করে দেখে নিল ভেবে অবাক আমি। সেই যে দুটি লাইন :
দিতে পারো একশো ফানুস এনে?
আজন্ম সলজ্জ সাধ–এক দিন আকাশে কিছু ফানুস ওড়াই।
যেন আমার বুকের ভেতরের সুপ্ত কথাটিই সে বলে গেছে। দোওয়া করি, মস্ত বড়ো হোক সে।
এমন কেন হল খোকা? সব এমন উল্টেপান্টে গেল কেন? রুনুটার স্মৃতি কাঁটার মতো বিঁধে আছে। আমার হোস্টেলের একটি মেয়ে সুশীলা পুরকায়স্থ, অবিকল রুনুর মত দেখতে। তাকে কাল ডেকে অনেকক্ষণ আদর করেছি, মন্টুর কবিতার বই পড়তে দিয়েছি। সে বেচার ভারি অবাক হয়েছে, সে তো জানে না–তাকে বুকের সঙ্গে মিশিয়ে সারা রাত কাঁদবার কি প্রচন্ড ইচ্ছাই না হচ্ছে!
নিলুটার কথাও মনে হয়। এত অল্প বয়সে কী ভারিক্কি হয়েছে দেখেছিস? আমি যেদিন চলে আসব, সেদিন দুপুরে সে গম্ভীর হয়ে একটা সুটকেস আমার বিছানায় রাখল। আমি বললাম, কি রে নিনু, সুটকেসে কী?
কিছু নয়। আমার কাপড়াচোপড় আর বই। এটিও তুমি সঙ্গে নেবে।
সে কি! এটা নিয়ে কী করব?
বাহ, আমিও তো থাকব তোমার সঙ্গে।
কাণ্ড দেখলি মেয়ের? কাউকে কিচ্ছু বলে নি। নিজে নিজে সমস্ত গুছিয়ে তৈরি হয়ে রয়েছে। আমার সঙ্গে যাবে। এ সমস্ত দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়। মনে হয়। কিসের দুঃখ কিসের কি? মমতার এমন গভীর সমুদ্রে দুঃখ তো। টুপ করে ড়ুবে যাবে। হাসছিস মনে মনে, না? আমিও কবি হয়ে গেলাম। কিনা ভেবে। সব মানুষই তো কবি রে বোকা। বাবার কথাই মনে কর না কেন। রাতের বেলা একা একা কলতলায় বসে গান গাইতেন—ও মন মন রে–। আমি ঠাট্টা করে বলতাম নৈশ সঙ্গীত।
কাজেই আমি বলি–সব মানুষই কবি। কেউ কেউ লিখতে পারে, কেউ পারে না।
তোর খুব বড়লোক হবার শখ ছিল, তাই না খোকা? ঠিক ধরেছি। তো? আমি তোকে বড়লোক করে দি, কেমন? রেজিষ্টি করে একটা চেক পাঠাচ্ছি। দু–এক দিনের ভেতরে পেয়ে যাবি। কত টাকা আন্দাজ করে তো? তুই যত ভাবছিস তারচে অনেক বেশি। চেক পেয়েই জানাবি; না রে, ঠাট্টা করছি না। আগের মতো কি আর আছি? ঠাট্টা তামাশা একটুও পারি না এখন। টাকাটা আমি তোকে দিলাম খোকা। আমার আর দেবার মতো কী আছে বল? তোর খুব ধনী হওয়ার শখ ছিল। সেই শখ মেটাতে পারছি বলে ভারি আনন্দ হচ্ছে। খুব যখন ছোট ছিল, তখন এক বার ফুটবল কেনার শখ হল তোর। মার কাছে সাহস করে তো কিছু চাইতি না। আমাকে এসে বললি কানে কানে। আমি টাকা পাব কোথায়? যা কষ্ট লাগল। এখন পর্যন্ত বাচ্চা ছেলেদের ফুটবল খেলতে দেখলে বুক ব্যথায় টনটন করে। তোর নিশ্চয়ই মনে নেই সে-সব। সোনা ভাই আমার, এ টাকাটা সমস্তই তোর, যে ভাবে ইচ্ছে খরচ কারিস। নিনু, ঝুনু, মন্টু আর বাবাকে ভাগ করে দেব ভেবেছিলাম। কিন্তু তাদেরকে দেওয়া আর তোকে দেওয়া একই—ভেবে দিই নি। কোত্থেকে পেয়েছি? তুই কি ভাবছিস আগে বল।
না রে, চুরি করি নি। আমাকে কেউ ভিক্ষেও দেয় নি। এ আমার নিজের টাকা। মীর কথা সময় হলে তোকে বলব বলেছিলাম না? এখন বলছি, তাহলেই বুঝাবি কী করে কী হয়েছে। বাবার সঙ্গে বিয়ের আগে তাঁর আবিদ হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। তাঁদের একটি মেয়েও হয়েছিল। ছাড়াছড়ি হয়ে যায়। কী জন্যে, তা তোর জানার দরকার নেই। বাবা মাকে বিয়ে করে নিয়ে আসেন পরপরই। বুঝতেই পারছিস আমি হচ্ছি। সেই মেয়ে। খুব অবাক, না? আমার সেই বাবা ভদ্রলোক এত দিন ঢাকাতেই ছিলেন। সব ছেড়েছুঁড়ে দিয়ে কিছুদিন হল বাইরে চলে গেছেন। যাবার আগে এই টাকাটা দিয়ে গেছেন। আমাকে। সেই লোকটিও ভালো ছিল রে। আসত। প্রায়ই আমাদের বাসায়। দেখিস নি কোনো দিন? নীল রঙের কোট পরীত, গলায় টকটকে লাল রঙা টাই। আমাকে ডাকত ইমা বলে। গল্পের মতো লাগে, না?
এগার বছর বয়স থেকেই আমি জানি সব। কেমন লাগে। তখন বলা তো? তোদের যিনি বাবা, আমি নিজে তাঁকে বাবা বলেই ভেবেছি, আর তিনি একটুও বুঝতে দেন নি কিছু। সেই যে একবার কলেজে আমাকে মা কালী ডাকল। তোরা সবাই দুঃখিত হলি। বাবা কী করলেন বল তো? তিনি রাতের বেলা আমাকে ডেকে নিয়ে গেলেন বারান্দায়। ইতস্তত করে বললেন, ইয়ে মা, রখ তো এটা।
কি বাবা?
না ইয়ে, একটা ক্ৰীম, খুব ভালো, বিশ টাকা দাম।
তাকিয়ে দেখি চ্যাপ্টা মুখের বোতল একটা মুখের উপর লেখা Sevenday Beauty Programme. চোখে পানি এসে গেল আমার। সেই কৌটাটা এখনো আছে আমার কাছে, ভারি মূল্যবান সেটি। যেন বাবা বিশ টাকায় এক কৌটা। ভালোবাসা কিনে এনেছেন। জন্মে জন্মে এমন লোককেই বাবা হিসেবে পেতে চাই আমি। মানুষ তো কখনো খুব বেশি কিছু চায় না, আমি নিজেও চাই নি। মাঝে মাঝে মনে হয়, না চাইতেই তো অনেক পেয়েছি।
কিটকি ভুল করল। কী করবি বল? ভুলে যেতে বলি না। ভুলবি কেন? রুনুকে কি আমরা ভুলতে পারি, না ভোলা উচিত? কিটকি ভারি ভালোমানুষ। মেয়েটি যেন সুখী হয়। এখনো তো তার বয়স হয় নি, বুঝতেও শেখে নি কিছু। কষ্ট লাগে ভেবে।
মার কথা তোর মনে পড়ে খোকা? চেহারা মনে করতে পারিস? আমি কিন্তু পারি না। স্বপ্নেও দেখি না বহু দিন। খুব দেখতে ইচ্ছে হয়। জানি, মারি প্রতি তোদের সবার একটা অভিমান আছে। তোদের ধারণা, মা কাউকে ভালোবাসতে পারে নি। হয়তো সত্যি, হয়তো সত্যি নয়। ছোটখালা এক দিন মাকে জিজ্ঞেস করেছিল, শিরিন, তুমি তোমার ছেলেমেয়েদের একটুও দেখতে পার না!
মা জবাবে হেসে বলেছেন, এদের এমন করে তৈরি করে দিচ্ছি, যাতে ভালোবাসার অভাবে কখনো কষ্ট না পায়।
মা বড় দুঃখী ছিল রে খোকা মেয়েমানুষের দুঃখ তো বলে বেড়াবার নয়, ঢেকে রাখবার, চিরদিন তিনি তাই রেখে গেছেন। তোরা জানতেও পারিস নি। এত গানপাগল মা তেইশ বছরে একটি গানও গাইল না। প্রথম স্বামীকে ভুলতে পারে নি। যদি পারত, তবে জানত সুখের স্বাদ কত তীব্র। যাই হোক, যা চলে গেছে তা গেছে। যারা বেচে আছে তাদের কথাই ভাবি।
কিছুক্ষণ আগে নিচে ঘণ্টা দিয়েছে, খেতে যাবার সংকেত। আমার খাবার ঘরেই দিয়ে যায়। তবু নিচে গিয়ে এক বার দেখে আসি। আজ আর খাব না। শরীরটা ভালো নেই। একটু যেন জ্বরঙ্গুল লাগছে। মাঝে মাঝে অসুখ হলে মন্দ লাগে না। অসুখ হলেই অনেক ধরনের চিন্তা আসে, যেগুলি অন্য সময় আসে না।
হোস্টেলের খুব কাছ দিয়ে নদী বয়ে থিয়েছে। সুন্দর নাম। এই মুহুর্তে মনে আসছে না। রাতের বেলা সার্চলাইট ফেলে ফেলে লঞ্চ যায়, বেশ লাগে দেখতে। দেখতে পাচ্ছি লঞ্চ যাচ্ছে আলো ফেলে। তোরা ঢাকায় থেকে তো এ-সব দেখবি না।
আজ এই পর্যন্ত থাকে। শরীরের দিকে লক্ষ রাখিস। বাজে সিগারেট টানবি না। কম খাবি, কিন্তু দামী হতে হবে। টাকার ভাবনা তো নেই। ছোটবেলা চুমু খেতাম তোর কপালে, এখন তো বড়ো হয়ে গেছিস। তবু দূর থেকে চুমু খাচ্ছি।
তোর, রাবেয়া আপা।
ঠিকানাঃ সুপারিনটেনডেন্ট, গার্লস হোস্ট্রেল
আদর্শ হাইকুল
পোঃ আঃ কলসহাটি
জেলা-ময়মনসিংহ।
গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায় প্রায়ই। ছাড়া ছাড়া অর্থহীন স্বপ্ন দেখতে দেখতে হঠাৎ জেগে উঠি। পরিচিত বিছানায় শুয়ে আছি, এই ধারণা মনে আসতেও সময় লাগে। মাথার কাছের জানালা মনে হয় সরে গিয়েছে পায়ের কাছে। তৃষ্ণা বোধ হয়। টেবিলে ঢাকা-দেওয়া পানির গ্লাস। হাত বাড়িয়ে টেনে নিলেই হয়, অথচ ইচ্ছে হয় না!
কোনো কোনো রাতে অপূর্ব জোছনা হয়। সারা ঘর নরম আলোয় ভাসতে থাকে। ভাবি, একা একা বেড়ালে বেশ হত! আবার চাদর মুড়ি দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলি। যেন বাইরের উথালপাথাল চাঁদের আলোর সঙ্গে আমার কোনো যোগ নেই।
মাঝে মাঝে বৃষ্টি নামে। একঘেয়ে কান্নার সুরের মতো সে-শব্দ। আমি কান পেতে শুনি। বাতাসে জামগাছের পাতায় সরাসরি শব্দ হয়। সব মিলিয়ে হৃদয় হা-হা করে ওঠে। আদিগন্ত বিস্তৃত শূন্যতায় কী বিপুল বিষন্নতাই না অনুভব করি! জানালার ওপাশের অন্ধকার থেকে আমার সঙ্গীরা আমায় ডাকে। একদিন যাদের সঙ্গ পেয়ে আজ নিঃসঙ্গতায় ডুবছি।
*শঙ্খনীল কারাগার রফিক কায়সারের একটি কবিতার নাম। কবির অনুমতিক্রমে নামটি পুনর্ব্যবহৃত হল।
খুব অনুভূতিসম্পন্ন একটি উপন্যাস