০৮. দ্য হিয়ারিং
হ্যারি বড় বড় শ্বাস নিতে লাগল; একটু চিন্তা, একটু ভয় করতে লাগল। যে বিরাট অন্ধকার ঘরে ও ঢুকলো, ওর কাছে সেই ঘর বীভৎসভাবে পরিচিত। ওইরকম অন্ধকারাচ্ছন্ন স্যাঁতস্যাঁতে ঘর আগে যে দেখেনি তা নয়, সেখানে থেকেছেও। এই সেই ঘর যেখানে ও আগে এসেছিল ডাম্বলডোরের পেনসিভে। এই জায়গাতে ও দেখেছিল লেস্ট্রানজেনসকে আজকাবানে আজীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে যেতে।
কাল পাথরের দেয়ালে মিট মিট করে মশাল জ্বলছে। দুধারে লম্বা লম্বা শূন্য বেঞ্চি; পিছনে সবচেয়ে বড় বড় বেঞ্চে অনেক আবছা আবছা আকৃতির দেখতে পেল। ওরা খুব নিচু গলায় আলাপ-আলোচনা করছে। ওর পেছনের ভারি দরজাটা সবেগে বন্ধ হয়ে যাবার সাথে সাথে চতুর্দিকের কোলাহল বন্ধ হয়ে নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
কোর্ট রুম থেকে কে যেন বরফশীতল গলায় বললো–তুমি দেরি করে এসেছ।
–হ্যারি ঘাবড়ে গিয়ে বললো–দুঃখিত, আ–আমি জানতাম না সময় বদলে গেছে।
সেই গম্ভীর বরফ শীতল কণ্ঠস্বর–ওয়াইজেনগেমটসের সেটা দোষ নয়। সকালে পেঁচা মারফৎ তোমাকে সময় পরিবর্তন জানান হয়েছিল। বসতে পার।
হ্যারি সেই ঘরের মাঝখানে রাখা একটা চেয়ারের দিকে তাকাল, চেয়ারের হাতল দুটো লোহার চেনে বাধা। হ্যারি দেখেছে ওইরকম সুপ্ত চেন, চেয়ারের ওপর দিয়ে কেউ বসার সাথে সাথে বেঁধে ফেলতে। ও পাথরের তৈরি মেঝের ওপর হেঁটে যাবার সময় শুনতে পেল ওরই পদ শব্দের প্রতিধ্বনি। ও ধীরে ধীরে চেন বাধা শূন্য চেয়ারটায় বসতেই চেন ঝন ঝন শব্দ করে উঠল। কিন্তু ওকে বাঁধল না। ওর বেশ ভয় করতে থাকে। কোনো রকমে সামনের বেঞ্চে যারা বসে রয়েছে তাদের দিকে মুখ তুলে তাকাল।
ও দেখল প্রায় পঞ্চাশজন লোক বসে রয়েছে। তাদের পরণে পাম রঙের লম্বা লম্বা কোট। কোটের বাঁ দিকের বুক পকেটে সুন্দর করে রূপালী অক্ষরে ডব্লিউ লেখা রয়েছে। ও চেয়ারে বসতেই লোকগুলো মুখ তুলে ওর দিকে তাকাল। কারও দৃষ্টি খুব কঠোর, আবার কারও কারও দৃষ্টি কৌতূহল মাখা।
সামনের সারিতে মধ্যস্থলে বসে রয়েছেন কর্নেলিয়স ফাজ, জাদু বিভাগের মন্ত্রী। ফাজ বেশ মোটা সোটা হৃষ্টপুষ্ট লোক। সব সময় মাথায় হালকা সবুজ ক্রিকেট বোলারদের মত হ্যাট পরেন। আজ অবশ্য হ্যারির দিকে গম্ভীর মুখে তাকালেন। আগের মতো মুখে মিষ্টি হাসি নেই। ফাজের বা পাশে বসে আছে চৌকো মুখো ছোট চুলওয়ালা ধুসর এক চোখে চশমাওয়ালা একজন। ভয় পাইয়ে দেওয়া চেহারা তার। ফাজের ডানধারে আর একটি জাদুকরী। ও এমনভাবে বসে আছে যে, তার মুখ ছায়াতে ঢেকে গেছে।
–আচ্ছা বেশ, ফাজ বললেন–অভিযুক্ত হাজির, তাহলে এখন শুরু করা যাক। আপনারা সবাই প্রস্তুত? ফাজ সকলের দিকে তাকাল।
–হ্যাঁ স্যার, একজন কৌতূহলী গলায় বললো। হ্যারি তাকে চেনে। রনের দাদা পার্সি, সামনের বেঞ্চের এককোণে ও বসেছিল। হ্যারি, পার্সির দিকে তাকাল। ভেবেছিল পার্সি ওর দিকে তাকিয়ে চিনতে পারবে। কিন্তু পার্সি চুপ করে বসে রইল। ওর মোষের সিং-এর চশমা পরা দুচোখ, হাতে ধরা পার্চমেন্টের ওপর যেন আটকে রয়েছে।
ফাজ সকলকে অবহিত করার জন্য বললেন–বারই আগস্ট সংঘটিত শৃঙ্খলা ভঙ্গের শুনানি। পার্সি কথাটা শোনার পর লিখতে শুরু করল: ডিক্রি ফর দ্য রিজিনেবল রেস্ট্রিকসন অফ আন্ডারএজ সোরসারী অ্যান্ড দ্য ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাটুট অফ সিক্রেসী লঙ্ঘন করার অপরাধী। হ্যারি জেমস পটার, চার নম্বর প্রাইভেট ড্রাইভ, লিটিল হুইংগিং সারে।
–জেরা করবেন কর্নেলিয়স অসওয়াল্ড ফাজ, মাননীয় মন্ত্রী, জাদু বিষয়ক। অ্যামেলিয়া সুসান বোনস, অধিকর্তা, ম্যাজিক্যাল ল এনফোর্সমেন্ট ডলোরেস জেন আমব্রিজ, সিনিয়র আন্ডার সেক্রেটারি মাননীয় কোর্ট স্ক্রাইব মন্ত্রী; পার্সি ইগনেটিয়াস উইসলি
প্রতিবাদীর সাক্ষী অ্যালবাস পার্সিভ্যাল ওয়ালফ্রিক, ব্রেইন ডাম্বলডোর হ্যারির পেছন থেকে একজন শান্ত স্বরে বললো–ও এত তীব্রভাবে মাথা ঘোরাল যে গলায় ক্রিক করে শব্দ হল।
ডাম্বলডোর লম্বা মিডনাইট–আলখিল্লা পরে অতি শান্তভাবে লম্বা লম্বা পা ফেলে কোর্ট রুমে ঘোরা ফেরা করছিলেন। তার শুভ্র লম্বা দাড়ি মশালের আলো পড়ে চক চক করছে। মাঝে মাঝে হ্যারি ও ফাজের দিকে তাকাচ্ছেন, অর্ধ চন্দ্রের মত চশমা লম্বা নাকের ডগায় ঝুলে পড়েছে।
ওয়াইজেনগেমটের সদস্যরা আস্তে আস্তে কিছু বলে চলেছে। সকলের দৃষ্টি ডাম্বলডোরের দিকে। কেউ মনে হয় বিরক্ত, কেউ সামান্য ভীত। পেছনের দুজন বয়স্কা জাদুকরী হাত তুলে সকলকে স্বাগত জানাল।
ডাম্বলডোরকে দেখতে পেয়ে হ্যারি পটার যেন আনন্দ-উচ্ছ্বাস-উত্তেজনায় ফেটে পড়ল, বুকের ভেতরটা ধুক ধুক করতে থাকে। এক সুরক্ষিত আশাজনক অনুভব অথবা ওইরকম কিছু একটা ফনিক্সের সঙ্গীতের সুর ওকে ছেয়ে ফেললো। ও এক দৃষ্টে ডাম্বলডোরের দিকে তাকিয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করল। কিন্তু ডাম্বলডোরের দৃষ্টি অন্যদিকে। অবশ্যই দৃষ্টি তার বিক্ষুব্ধ ফাজের দিকে।
–ফাজ বললেন–ওকে দেখে মনে হয় কোর্টের ব্যাপার স্যাপারে ওর কোনই উৎসাহ নেই।
–ডাম্বলডোর, হা, হা আপনি আমাদের শুনানির সময় পরিবর্তনের বার্তা নিশ্চয়ই পেয়েছেন?
–মনে হয় সেটা হারিয়ে ফেলেছি, ডাম্বলডোর খুশি মনে বললেন। যাই হোক ভাগ্য ভাল, ভুলের জন্য আমি তিন ঘণ্টা আগে মন্ত্রণালয়ে এসেছি।
–হ্যাঁ
–ঠিক আছে, আমাদের আরও একটি চেয়ারের দরকার।
–উইসলি আপনি কি ব্যবস্থা করতে পারবেন?
–না না আপনি ব্যস্ত হবেন না; ডাম্বলডোর অতি অমায়িকভাবে বললেন। তারপর পকেট থেকে নিজস্ব জাদুদণ্ডটা বার করে ক্লিক করতেই কোথা থেকে একটা আর্ম চেয়ার হ্যারির পাশে এসে গেল। ডাম্বলডোর সেই চেয়ারে বসলেন। হাতের লম্বা লম্বা আঙ্গুলগুলো একত্রিত করে খুব ভদ্রভাবে ফাজের দিকে তাকালেন। ওয়াইজেনগেমট তখনও বিড় বিড় করে কিছু বলে যাচ্ছে আর অস্থিরভাবে পায়চারি করছে। ফাজ দ্বিতীয়বার বলার পর সকলে চুপ করল।
–ও হ্যাঁ, ফাজ আবার ওর হাতের নোটগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে বললেন, হ্যাঁ, তাহলে অভিযোগ হল। ও হ্যাঁ।
–কথাটা বলে ফাজ ওর ফাইল থেকে এক টুকরো পার্চমেন্ট বার করে খুব বড় দেখে একটা শ্বাস নিয়ে বললেন–অভিযোগ, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথাক্রমে
–ও জেনেশুনে ইচ্ছাকৃত এবং সজ্ঞানে যা করেছে তা সম্পূর্ণ আইনত অপরাধ। ইতিপূর্বে ওই একই রকম অপরাধ করার জন্য ম্যাজিক মন্ত্রণালয় তাকে সাবধান করে দিয়েছিল। মাগল অধিষ্ঠিত এলাকায় আগস্টের দুতারিখে রাত্রি নটা বেজে তেইশ মিনিটে পুনরায় পেট্রোনাস ও চার্ম প্রয়োগ করেছে। ওই রূপ করা প্যারা সি রিজিনেবল রেস্ট্রিকসন অব আন্ডার এজ সিক্রেসি ১৮৭৫ সেকশন ১৩ অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ।
–তুমি হ্যারি জেমস পটার, চার নম্বর, প্রাইভেট ড্রাইভ, লিটিল উইংগিং সরে থাক? ফাজ বললেন, হ্যারির দিকে তাকিয়ে।
–হ্যাঁ, হ্যারি বললো।
–তিন বছর আগে মন্ত্রণালয় থেকে আইনী জাদু প্রয়োগ করার জন্য তুমি অফিসিয়াল ওয়ার্নিং পেয়েছিলে, না পাওনি?
–পেয়েছিলাম, কিন্তু।
–তা সত্ত্বেও তুমি আগস্ট মাসের দু তারিখে পেট্রোনাস প্রয়োগ করেছিলে? ফাজ বললেন।
–হ্যা; হ্যারি বললো, কিন্তু।
–স্কুলের বাইরে ম্যাজিক ব্যবহার করার অধিকার নেই জেনেও করেছ, তাছাড়া তোমার বয়স সতের বছরের কম, তাই না?
–হ্যাঁ, কিন্তু…।
–সেই এলাকাটা সম্পূর্ণ মাগল অধিষ্ঠিত জেনেও?
–হা, কিন্তু।
–একজন মাগলের খুব কাছে আছ, জেনে শুনে?
–হ্যাঁ, হ্যারি রেগে গিয়ে বললো; কিন্তু আমি ব্যবহার করেছিলাম কারণ আমরা…।
যে জাদুকরী এক চোখে চশমা পরেছিল হ্যারির কাছে এসে গুরুগম্ভীর গলায় বললো–তুমি পুরোপুরি একটা পেট্রোনাস ব্যবহার করেছিলে।
–হ্যাঁ করেছিলাম, কারণ…।
একটি কর্পোরাল প্যাট্রোনাস?
–একটি কী? হ্যারি বললো।
–তোমার পেট্রোনাস পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা আছে? আমি বলতে চাই ওটা গ্যাস বা ধোঁয়ার চেয়ে বেশি?
–ঠিক বলেছেন, হ্যারি বেশ অধৈৰ্য্য ও বেপরোয়া হয়ে বললো–ওটা হরিণের সিং, হরিণের সিং ছাড়া অন্য কিছু নয়।
–অন্য কিছু নয়? মাদাম বোনস গর্জে উঠলেন। এর আগে তুমি পেট্রোনাস ব্যবহার করেছ?
হ্যাঁ করেছি, হ্যারি বললো–এক বছরেরও বেশি ব্যবহার করছি।
–তোমার বয়স কিন্তু মাত্র পনের বছর।
–হ্যাঁ, কিন্তু!
–ওটা তুমি স্কুলে শিখেছ?
–হ্যাঁ, আমি যখন তৃতীয় বছরের ছাত্র তখন প্রফেসর লুপিন শিখিয়েছিলেন।
–মাদাম বোনস ওর দিকে তাকিয়ে বললেন–দারুণ একেবারে খাটি পেট্রোনাস ওই বয়সে; সত্যিই খুব ইমপ্রেসিভ।
কিছু কিছু জাদুকরী আর জাদুকর বিড়বিড় করতে লাগল, কেউ কেউ মাথা নাড়ল, কিন্তু বাকি সবাই ভুরু কুঁচকে মাথা ঝাঁকুনি দিতে লাগল।
ফাজ খিট খিটে গলায় বললেন–প্রশ্নটা এই নয় ম্যাজিকটা কতোটা ইমপ্রেসিভ ছিল। আসলে যতটা বেশি প্রভাবিত তার চেয়েও বেশি হচ্ছে তার ক্ষতিকারক দিকটা। আমার সুচিন্তিত মত, ছেলেটি মাগলদের অস্তিত্ব জেনেও কাজটা করেছে।
যারা বসে বসে ভুরু কোঁচকাচ্ছিল তারা ফাজের কথা শোনার পর নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগল। ঠিক সেই সময় পার্সি পটারের দিকে তাকিয়ে কিছু বলার জন্য ইঙ্গিত করল।
–ডিমেন্টসদের জন্য বাধ্য হয়ে আমি করেছি, অন্য কেউ বাধা দেবার আগে কথাটা খুব জোরে জোরে বললো হ্যারি। ও ভেবেছিল প্রতিবাদের ফিসফিসানির ঝড় উঠবে, কিন্তু সমস্ত ঘরটা আগের চেয়েও নিস্তব্ধতায় ভরে গেল।
ম্যাডাম বোনস বললেন–ডিমেন্টরস? কথা বলার সময় ওর এক চোখে চশমাটা প্রায় খুলে পড়েছিল, সামলে নিয়ে বললেন–কী বলতে চাও তুমি?
–আমি বলতে চাই–আমি ও আমার কাজিন যখন কানাগলিতে দাঁড়িয়েছিলাম তখন ওরা আমাদের আক্রমণ করেছিল।
ফাজ ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে ওয়াইজেনগমটের চতুর্দিকে তাকালেন, যেন চাইলেন আরও কিছু লোকের মতামত। হ্যাঁ হ্যাঁ আমিও যেন সেইরকম কিছু একটা শুনেছিলাম, যেন হ্যারি জোক করছে এমন মনোভাব তার।
ম্যাডাম বোনস বললেন–লিটিল হুইংগিং-এ ডিমেন্টরস? দারুণ বিস্ময় ওর গলায়, মানে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।
ফাজ তখনও বোকার মত হাসছেন। বললেন–তুমি জান না অ্যামেলিয়া? মনে মনে ডিমেন্টরদের সম্বন্ধে একটা কভার স্টোরি বানাবার প্রচেষ্টা করছিল। মাগলরা ডিমেন্টরদের দেখতে পায় না, পারে মাই বয়? দারুণ সুবিধাজনক, দারুণ, এটা তোমার কথা কোনও সাক্ষী সাবুদ নেই।
আদালতে কারও কিছু বলার আগে হ্যারি উত্তেজিত হয়ে বললো–আমি মিথ্যে বলছি না! ওরা দুজন ছিল, কানাগলির অন্যদিক থেকে এসেছিল, যেখানে দারুণ অন্ধকার শুধু নয় দারুণ ঠাণ্ডা ছিল। ওরা আমার কাজিনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ও দৌড়াতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল।
ফাজের চোখে মুখে গর্বিত উন্নাসিক ভাব; অনেক হয়েছে, অনেক হয়েছে। আমি অত্যান্ত দুঃখের সঙ্গে বলছি–তুমি কারও পরামর্শে একটি সুন্দর গল্প কেঁদেছ। দারুণ তালিম দেওয়া হয়েছে।
ডাম্বলডোর গলা খাকারি দিলেন। ওয়াইজেনগেমট আবার স্তব্ধ গুমট, ফিসফাস শব্দ বন্ধ হয়ে গেল। ডার্সলি ছাড়াও মালিতে ডিমন্টরদের আবির্ভাবের আরও সাক্ষী আছে–আমি বলতে চাই।
ফাজের ফোলা ফোলা মুখ চুপসে গেল। যেন কেউ ওর মুখের মধ্য থেকে হাওয়া বার করে দিয়েছে। ডাম্বলডোরের দিকে দুএক মুহূর্ত তাকালেন, তারপর অতর্কিতে মাটিতে পড়ে গেছে এমনভাবে সোজা হতে হতে বললেন–আমাদের মিথ্যা কাহিনী শোনার সময় নেই। ডাম্বলডোর আমি শিগগিরই ব্যাপারটা শেষ করতে চাই।
ডাম্বলডোর বললেন–আমার হয়ত ভুল হতে পারে; কিন্তু একটা ব্যাপারে আমি নিশ্চিত যে ওটা ওয়াইজেনগেট চার্টার অব রাইটসের অন্তর্গত অভিযুক্তের তার মামলার জন্য সাক্ষী করার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। তা সে পুরুষ হোক বা মহিলা হোক। ম্যাডাম বোনস এটা কী ম্যাজিক্যাল ল এনফোর্সমেন্ট বিভাগের পলিসি নয়?
ম্যাডাম বোনস বললেন–হ্যাঁ একেবারে সত্য।
ফাজ বললেন–খুব ভাল খুব ভাল, তা সাক্ষীটি কোথায়?
ডাম্বলডোর বললেন–আমি তাকে নিয়ে এসেছি। তিনি ঘরের বাইরে অপেক্ষা। করছেন। তাকে কী ডাকতে পারি?
–না, উইসলি তুমি যাও। ফাজ পার্সির দিকে তাকিয়ে হুংকার দিলেন।
পার্সি কথাটা শোনা মাত্র উঠে দাঁড়াল। হ্যারি, ডাম্বলডোরের দিকে না তাকিয়ে আদালতের বাইরে চলে গেল।
সামান্য সময় পরে পার্সি মিসেস ফিগকে সঙ্গে নিয়ে আদালত কক্ষে ঢুকলেন। মিসেস ফিগকে সামান্য ভীত ও আগের চেয়ে জবুথবু মনে হয়। মিসেস ফিগের দিকে তাকিয়ে হ্যারির মনে হলো এখানে আসার আগে বাড়িতে পরার স্লিপারটা ছেড়ে আসতে পারতেন।
ডাম্বলডোর উঠে দাঁড়িয়ে মিসেস ফিগকে নিজের চেয়ারটা ছেড়ে দিলেন। মন্ত্রবলে নিজের জন্য একটা চেয়ার আনলেন।
মিসেস ফিগ চেয়ারে বসতে যাবেন ঠিক সেই সময় ফাজ জোরে জোরে বললো–আপনার পুরো নাম?
–আরাবেল্লা ডোরিন ফিগ, মিসেস ফিগ কাঁপা কাঁপা গলায় বললো।
–আপনার সম্বন্ধে অনুগ্রহ করে বিস্তারিত জানান; ফিগ তার একঘেয়ে দাম্ভিক গলায় বললেন।
–হ্যারি পটার যেখানে থাকে তারই কাছাকাছি হুইংগিং-এর অধিবাসী, মিসেস ফিগ বললেন।
–হ্যারি পটার ছাড়া ওই অঞ্চলে কোনও জাদুকর বা জাদুকরী থাকে তেমন রেকর্ড আমাদের কাছে নেই; ম্যাডাম বোনস উঠে দাঁড়িয়ে বললেন।
–আমি অতি নগন্য এক মহিলা, স্কুইব (যারা ভেল্কি দেখায়)। আপনাদের খাতায় আমার নাম থাকার কোনও সম্ভাবনা নেই। আছে কী?
–হেঃ হেঃ স্কুইব? ফাজ বললেন, মিসেস ফিগকে একদৃষ্টে দেখতে দেখতে।
–আমরা সেটা দেখে নেব–হ্যাঁ আপনি আপনারা বাবা-মার নাম বিষদভাবে আমার সহকারী উইসলির কাছে দেবেন। এই প্রসঙ্গে বলতে চাই একজন স্কুইব কী ডিমেন্টরস দেখতে পায়? কথাটা বলে ফাজ ডাইনে–বায়ে উপবিষ্ট সকলকে দেখলেন। মিসেস ফিগ রাগ রাগ গলায় বললেন–অবশ্যই আমরা পারি!
ফাজ মিসেস ফিগের দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বললেন–ভাল ভাল, তা আপনার দেখা ঘটনাটি বলুন।
মিসেস ফিগ থেমে থেমে বললেন–দোসরা অগাস্ট রাত প্রায় নটার সময় আমি উইস্টিরিয়া ওয়াকে আমার বেড়ালের জন্য খুব কাছের একটা দোকানে খাবার কিনতে গিয়েছিলাম। আমি যখন ম্যাগনোলিয়া ক্রিসেন্ট আর একটা কানাগলির কাছাকাছি গেছি তখন আমি কিছু হৈ চৈ শুনতে পেলাম, আমি হন্তদন্ত হয়ে গলির মুখে গিয়ে দেখতে পেলাম ডিমন্টররা ছুটে পালাচ্ছে
ম্যাডাম বোনস বললেন–ছুটছে? ডিমেন্টরসরা তো ছুটে পালায় না, ওরা তো উড়ে যায়।
–সেটাই তো আমি বলতে চাই; মিসেস ফিগ সঙ্গে সঙ্গে বললেন। ওর শুষ্ক গালটা সামান্য লাল হয়ে গেল। গলি দিয়ে উড়ছিল, দুটো ছেলের মত দেখতে। ম্যাডাম বোনস বললেন–কি রকম দেখতে? চোখটা এমনভাবে ছোট করলেন যে ছোট চশমাটা চোখের খাজে আটকে গেল।
-একজন খুব লম্বা, একজন রোগা। না না ছেলে দুটো নয়, ডিমেন্টররা।
তাদের দেখতে কেমন তাই বলুন।
–ওহ! গালের লাল লাল ছোপ আর নেই –ওরা খুব লম্বা বিরাট আকারের। গায়ে তাদের আলখিল্লা ছিল।
হ্যারির পেটের ভেতরটা মনে হল যেন তলিয়ে যাচ্ছে। মনে হল মিসেস ফিগ যাই বলুন না কেন, উনি ডিমেন্টরদের ছবি দেখেছিলেন। একটা ছবি আসলটা নাও প্রকাশ করতে পারে। ভৌতিকভাবে ওরা চলাফেরা করেছিল, মাটি থেকে ইঞ্চি খানেক ওপরে উঠে ঝুলছিল অথবা তাদের গায়ে পচা গন্ধ অথবা অতি ভয়াবহ এমন এক শব্দ করছিল যেন আশপাশের হাওয়া চুষে নিচ্ছে।
দ্বিতীয় সারিতে একজন বড় বড় গোঁফওয়ালা বেঁটে–মোটা জাদুকর ওর পাশের একজন কোঁকড়া কোঁকড়া চুলওয়ালা জাদুকরের কানে কানে কিছু বললো। জাদুকরটি বোকার মত হেসে মাথা নাড়ল।
ম্যাডাম বোনস শান্তভাবে বলতে লাগলেন–বিরাট আকারের ও আলখিল্লা পরেছিল! ফাজ উপহাসের ভঙ্গিতে ঘোৎ ঘোঁৎ করে বললেন–আর কিছু আছে?
–অবশ্যই! মিসেস ফিগ বললেন, আমি তাদের উপস্থিতি অনুভব করেছি। গ্রীষ্মের গরমে সব কিছু বরফের মত ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল, যেন আমার সব আনন্দ এই পৃথিবী থেকে লুপ্ত হয়ে গেছে। আজও আমার সেই ভয়ঙ্কর রাতটির কথা মনে আছে।
মিসেস ফিগের কণ্ঠস্বর কাঁপতে কাঁপতে স্তব্ধ হয়ে গেল। ম্যাডাম বোনসের চোখ সামান্য বড় হয়ে গেল। হ্যারি স্পষ্ট দেখতে পেল ওর ভুরুর নিচে লাল গোল দাগ। চশমাটা ওখানে চেপে বসে ছিল।
-তা ডিমেন্টররা ওখানে কী করেছিল? বোনস প্রশ্ন করলেন। হ্যারির মনে সামান্য আশার সঞ্চার হল।
–ওরা ছেলে দুটোর দিকে গেল, মিসেস ফিগ বললেন–গলার স্বর আর মিনমিনে নয়, খুব দৃঢ়তায় ভরা।
মিসেস ফিগের গালের লাল ছোপ ছোপ দাগটা সম্পূর্ণভাবে মিলিয়ে গেছে। বললেন–একজন মাটিতে পড়ে গিয়েছিল, অন্য যে ছেলেটি পেছন থেকে ডিমেন্টরকে ঠেকাতে চেষ্টা করছিল, সেই ছেলেটি হচ্ছে হ্যারি। ও দুবার চেষ্টা করার পর শুধুমাত্র এক ঝলক রূপালী বাষ্প সৃষ্টি করেছিল। যখন তাতেও কোন কাজ হল না তখন ও পেট্রোনাস দিয়ে আক্রমণ করল। পেট্রোনাসে একজন ডিমেন্টর হেরে গেল। দ্বিতীয় জন ওর কাজিনের বুকের ওপর চেপে বসেছিল। তারপর পেট্রোনাসের আঘাতে দ্বিতীয়টা পালাল। এটাই সত্য ঘটনা।
কথাগুলো মিসেস ফিগ দৃঢ় স্বরে বলে তার সাক্ষ্য শেষ করলেন। হ্যারির মনে হল মিসেস ফিগ আরো জোরদার করে কথাগুলো বলতে পারতেন।
–হ্যাঁ এটাই ঘটেছিল, মিসেস ফিগ একই কথা দুবার বললেন।
মিসেস ফিগের মুখের দিকে তাকিয়ে ফাজ বললেন–এবার আপনি যেতে পারেন।
মিসেস ফিগ, ফাজ ও ডাম্বলডোরের মুখের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দরজার দিকে ধিরে ধিরে এগিয়ে গেলেন। হ্যারি দরজাটা বন্ধ করার শব্দ শুনতে পেল।
ফাজ দাম্ভিক গলায় বললেন–খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষী নয়। বোনস বললেন তবে উনি ডিমেন্টরদের আক্রমণ নিখুঁতভাবে বলেছেন। আমি ভাবতে পারছি না ওরা যদি স্পটে নাই আসে তো উনি সবিস্তারে কেমন করে বললেন?
ফাজ বাঁকা বাঁকা স্বরে বললেন–ডিমেন্টররা মাগলদের এলাকায় ঘোরাফেরা কহিল তারপর হঠাৎ এক জাদুকরের সামনে পড়ল? ব্যাগম্যানও এমন অদ্ভুত গল্প বলতে পারতেন না, আমি বাজি ধরতে পারি।
ডাম্বলডোর গুরুত্ব না দিয়ে বললেন–আমাদের মধ্যে কেউ বিশ্বাস করতে পারে না বা করবে না এমন কোনও কারণ নেই, অথচ ডিমেন্টররা ওখানে পৌঁছেছিল।
যেসব জাদুকরীরা ফাজের ডানধারে বসেছিল, ছায়াতে তাদের মুখ দেখা যাচ্ছিল না। ওরা নড়েচড়ে বসল। কিন্তু সবাই চুপচাপ।
ফাজ বললেন–আমরা তাহলে তার কি মানে ধরতে পারি?
ডাম্বলডোর বললেন–তার একটি মানে ওদেরকেও সেখানে যেতে আদেশ করা হয়েছিল।
–আমি মনে করি এটা রেকর্ড করে রাখা দরকার, যে কেউ, একজোড়া ডিমেন্টরকে অর্ডার দিয়েছিল লিটিল হুইংগিংতে ঘুরে বেড়াতে। ফাজ হুংকার দিয়ে বললো।
ডাম্বলডোর ধীর স্থির ভাবে বললো–ডিমেন্টররা ইদানীং ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের আদেশ ছাড়া অন্য কারও কথায় চলে তা অনেক আগেই তোমার দৃষ্টিগোচর করেছি কর্নেলিয়াস।
–হ্যাঁ, করেছেন, ফাজ জোর দিয়ে বললো, তবে আমার বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। আপনার মতামত জাহাজের ছিদ্রের মত ডাম্বলডোর। ডিমেন্টররা আজকনে থাকে, যা কিছু করছে শুধুমাত্র আমাদের আদেশে।
–তাহলে? ডাম্বলডোর বললেন খুব সংযত ও পরিষ্কারভাবে তাহলে আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করতে হয়, কারা মন্ত্রণালয় থেকে অগাস্টের দু তারিখে ওখানে দুজন ডিমেন্টরকে যেতে বলেছিল।
আদালতের সম্পূর্ণ নীরবতা যেন ডাম্বলডোরের ওই প্রশ্ন সমর্থন করল।
যে জাদুকরী ফাজের ডানপাশে বসেছিল সে মুখ তুললে হ্যারি তাকে পরিষ্কারভাবে দেখতে পেল।
ও ভেবেছিল জাদুকরীকে দেখতে মোটা কাল একটা কোলা ব্যাঙের মত। কিন্তু তা নয়। চৌকো ফোলা ফোলা মুখ। ছোট গলা আঙ্কল ভার্ননের মত চওড়া থলথলে মু। বড় বড় চোখ দুটো ঠিকরে পড়ার মত। ওর ঘোট ঘোট কাটা মাথার চুলের ওপরে একটা ভেলভেটের বাউ, দেখে মনে হল ওর লম্বা জিব দিয়ে একটা মাছি ধরবে।
ফাজ বললো, অবশ্যই সকলে ডলোরেস জেন আমব্রিজ, সিনিয়র আন্ডার সেক্রেটারী মন্ত্রী মহোদয়কে চেনেন।
হ্যারি আমব্রিজের বাচনভঙ্গী দেখে অবাক হয়ে গেল।
–আমি নিশ্চিত যে, আমি আপনাকে হয়ত ভুল বুঝেছি প্রফেসর ডাম্বলডোর, ও খুব সহজভাবে বললো। কিন্তু আপনার কথা শুনে মনে হয় মন্ত্রণালয় কেন ওই ছেলেটিকে আক্রমণের নির্দেশ দেবেন। কথাটা বলে এমনভাবে হাসল যে হ্যারির সেই হাসি শুনে ঘাড়ের চুলগুলো দাঁড়িয়ে পড়ল। ওর সঙ্গে ওয়াইজেনগেমটের সদস্যরাও হাসল।
ডাম্বলডোর খুবই স্র ও সভ্যভাবে বললেন–একথা সত্যি যে, একমাত্র মন্ত্রণালয়ের আদেশ ছাড়া ডিমেন্টররা কিছু করে না; কিন্তু এ কথাও সত্যি এক সপ্তাহ আগে হ্যারি আর তার ভাইকে দুজন ডিমেন্টর আক্রমণ করেছিল। তাহলে আমরা কি বলতে পারি না মন্ত্রণালয় থেকে কেউ না কেউ তাদের আক্রমণের নির্দেশ দিয়ে থাকতে পারে? এমনও হতে পারে ওই দুই ডিমেন্টর মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
ফাজ বাধা দিয়ে বললেন–না সেরকম কোনও ডিমেন্টরস মন্ত্রণালয়ের আয়ত্বের বাইরে নেই।
ফাজের মুখ দেখে মনে হয় রাগে ছটফট করছেন।
ডাম্বলডোর মাথাটা সামান্য নত করলেন।
–তাহলে, বলা যেতে পারে ডিমন্টররা আজকাবানের থেকে কোনও আদেশ ছাড়া কেন ওইরকম বে-আইনী কাজ করলো, সে সম্বন্ধে সম্পূর্ণ তদন্ত করবেন মন্ত্রণালয়।
আপনি নয়, ম্যাজিক মন্ত্রণালয় ঠিক করবে তদন্ত হবে কি হবে না, বাধা দিয়ে বললেন ফাজ। ফাজের এই কথাটা আঙ্কল ভার্নন শুনলে বোধহয় খুশি হতেন।
–অবশ্যই না, ডাম্বলডোর নরম সুরে বললেন। আমি শুধু চিন্তা করতে বলেছি তদন্তের ব্যাপারটা। তদন্ত যেন হয়। কথাটা বলে ডাম্বলডোর ম্যাডাম বোনসের দিকে তাকালেন। ফাজ বললেন–আমি উপস্থিত সকলকে মনে করিয়ে দিতে চাই দুজন ডিমেন্টরের কার্যকলাপ যদি প্রয়োজন হয় তাহলে তদন্ত করবে কিন্তু ওই ছেলেটির কল্পনায় করবে না। তদন্ত আজকের শুনানির মধ্যেও সীমাবদ্ধ নয়! আমরা এখানে এসেছি হ্যারি পটারের অপরাধ সম্বন্ধে বিচার করতে। রিজিনেবল রেস্ট্রিকসন অব আন্ডার এজ সিক্রেসী ভঙ্গের অপরাধ।
অবশ্যই সেই জন্য এসেছি, ডাম্বলডোর বললেন। কিন্তু ওইদিন গলিতে ডিমেন্টরদের উপস্থিতি আজকের এই বিচারের সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িত। ডিক্রির ধারা সাত বলে–ম্যাজিক, মাগলদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে কেবল মাত্র অনিবার্য কারণে এবং এই অনিবার্য কারণ শুধুমাত্র জাদুকর জাদুকরী নয় অনেক ক্ষেত্রে মাগলদেরও আত্মরক্ষার সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িত।
ফাজ বিজ্ঞের মত বললো–আমরা ধারা সাত সম্বন্ধে বিশেষভাবে পরিচিত। আপনাকে ধন্যবাদ।
ডাম্বলডোর অতি দ্রভাবে বললেন–অবশ্যই আপনি পরিচিত। আমি মনে করি হ্যারির : পেট্রোনাস চার্ম সেদিন ব্যবহার করাটা তার ও তার ভাইয়ের জীবন রক্ষার্থে প্রয়োজন হয়েছিল। বলতে পারেন বিশেষ কারণে।
–ডিমন্টটরস সত্যিই এসেছিল কি না, আমার সন্দেহ হয়। ডাম্বলডোর বাধা দিয়ে বললেন–সেটাতো স্বচক্ষে দেখা সাক্ষীরা বলেছেন। যদি মিসেস ফিগের সতোর ওপর সন্দেহ হয় তাহলে আবার তাকে ডেকে পাঠান, তাকে প্রশ্ন করুন, আমার মনে হয় না তিনি আপত্তি করবেন।
–মানে! মানে! আমি, ফাজ সামনের কাগজগুলো তুমুল শব্দ করে ঘটতে ঘটতে বললেন–আজই আমি এই কেস শেষ করতে চাই, ডাম্বলডোর!
–কিন্তু স্বাভাবিকভাবে কোনও নির্ণয় নিতে গেলে একবারেরও বেশি সাক্ষীদের ডাকার প্রয়োজন হয়। সেটা না করলেও বিচারের প্রহসন হবে, ডাম্বলডোর বললেন।
–আপনি নিশ্চই জানেন এই ছেলেটি আপনার স্কুলে পড়ে ও নানারকম উদ্ভট মাথামুণ্ডহীন সব গল্প সৃষ্টি করে। আপনি কী কখনও সেগুলো বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন? আপনি নিশ্চয়ই তিন বছর আগে ছেলেটির বেআইনীভাবে হুভার চার্ম ব্যবহার করা ভুলে গেছেন।
হ্যারি বললো–আমি করিনি এলফ করেছিল?
ফাজ হাস্যজ্জ্বল মুখে হ্যারির দিকে তাকিয়ে জোরে বললেন–তাই নাকি? মাগলদের বাড়িতে হাউজ এলফ? ঠিক করে বল।
ডাম্বলডোর বললেন–সে এখন হোগার্টস স্কুলে কাজ করে। আমি এখনই এক সেকেন্ডের মধ্যে তাকে আনতে পারি, তাকে যা প্রশ্ন করার করতে পারেন।
–আমার বাড়ি দেখা শুনা করা লোকদের কথা শোনার সময় নেই। ওর আরও অনেক অপরাধ আছে। ওর আন্টকে বিরক্ত করে–ঈশ্বর ওকে রক্ষা করুন! কথাটা বলে ফাজ প্রবল চিৎকার করে উঠে সামনের টেবিলে সজোরে একটা ঘুষি মারতেই এক বোতল কালি উল্টে পড়ে গেল।
–তার জন্য আশাকরি আপনি অভিযুক্ত করবেন না, ধরে নিচ্ছি করবেন না। আমার মনে হয়, সবচেয়ে শান্ত ভাল জাদুকররাও সময় সময়ে তাদের রাগ–বিরক্তি চেপে রাখতে পারে না। ফাজ যখন ওর কাগজে কালি মুছবার চেষ্টা করছিলেন। তখন ডাম্বলডোর হেসে বললো।
–ওহো! ও স্কুলে কি করে, কি না করে আমি তো সে সম্বন্ধে এখনও জানতে চাইনি।
ডাম্বলডোর শান্ত গম্ভীর স্বরে বললেন–হোগার্টসের স্কুলেল ব্যাপারে কিছু আলোচনা বা প্রশ্ন করার ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার নেই। আজকের শুনানিতে তাই হ্যারির স্কুলের আচরণ প্রাসঙ্গিক নয়।
ফাজ বললেন–ও হো! স্কুলের ব্যাপার আমাদের দেখার কিছু নেই আপনি তাই মনে করেন ডাম্বলডোর?
–আমি মনে করি মন্ত্রণালয়ের কোনও ক্ষমতা নেই হোগার্টস স্কুল থেকে কোনও ছাত্রকে বহিষ্কার করার। ডাম্বলডোর বললেন–কর্ণেলিয়স, আমার বেশ মনে আছে দুই আগস্টের রাতের ঘটনা আপনাকে আমি জানিয়েছিলাম। তাছাড়া হ্যারির ম্যাজিক ওয়ান্ড বাজেয়াপ্ত করার কোনও অধিকার নেই–যতদিন না তার বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তাছাড়া আমি আরও আপনাকে দুই আগস্ট রাতে মনে করিয়ে দিয়েছিলাম, যেন তাড়াতাড়ি করে কিছু করা না হয়। দুঃখিত আপনি মাঝে মাঝে আইন ভুলে যান।
ফাজ উগ্রভাবে বললো–আইন পরিবর্তন করা চলে।
–অবশ্যই করা যায়, ডাম্বলডোর মাথা ঝুঁকিয়ে বললেন–কর্ণেলিয়স আপনি অবশ্যই অনেক পরিবর্তন করেছেন। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না আমাকে ওয়াইজনগেমট থেকে চলে যাবার নির্দেশ দেবার পর মাত্র অতি সাধারণ। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ছোট অপরাধমূলক ব্যাপার নিয়ে বিচার টিচার চলছে। তার মধ্যে আন্ডার এজ ম্যাজিকও পড়ে।
ডাম্বলডোরের কথা শোনার পর কোর্টের অনেকেই নড়েচড়ে বসল। ফাজের মুখটা রক্তিম হয়ে গেল। ওর ডানধারে বসে থাকা ব্যাঙের মুখের মত জাদুকরী ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে ডাম্বলডোরের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
–আমি যতদূর জানি, ডাম্বলডোর বললেন–এই আদালতের, হ্যারিকে তার প্রতিটি ম্যাজিক প্রয়োগের শাস্তি দেয়ার কোনও আইনত ক্ষমতা নেই। ওকে একটি বিশেষ অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং আত্মপক্ষ সমর্থনে যা বলার তাও স্পষ্ট করে বলেছে। এখন আমরা দুজনেই অপেক্ষা করছি আপনার রায়ের জন্য। আদালত কক্ষ নিঃস্তব্ধ। এবার ভোট নেবার পালা।
ফাজ বিচারকদের বললেন–যারা শাস্তির পক্ষে তারা হাত তুলুন। স্বভাবতই ফাজ, তার ডান ধারের জাদুকরী বড় গোঁফ ওয়ালা জাদুকর ও আরও দুচারজন শান্তির পক্ষে হাত তুলল।
তারপর শাস্তির বিপক্ষে।
বিপক্ষে বেশি সংখ্যক হাত উঠল।
ফাজ দুটো বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলে বললো–খুব ভাল খুব ভাল, সব অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়া হলো।
ডাম্বলডোর বললেন–সত্যই আনন্দের। তারপর জাদুদণ্ড বার করে ক্লিক করতেই দুটো চেয়ার অদৃশ্য হয়ে গেলে বললেন–আমাকে এবার যেতে হবে। সকলকে আমার শুভেচ্ছা রইল। একবারও হ্যারির দিকে না তাকিয়ে আদালত ছেড়ে চলে গেলেন ডাম্বলডোর।
হ্যারি নিজের পায়ের দিকে তাকাল। ওর মনে হল বুকের হৃদপিণ্ডটা অসম্ভব ফুলে উঠেছে, ভেতরটা জোরে জোরে শব্দ করে ধুক ধুক করছে। ও আশা করেছিল শুনানির সময় আরো বেশি হবে। সকলের সামনে খুব একটা ভাল ভাবমূর্তি রাখতে পেরেছে কিনা এ বিষয়ে ও একেবারেই নিশ্চিত নয়। ডিমেন্টরদের সম্বন্দে আরও কিছু বলার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল।