দুৰ্গা বেশ সুশ্রী সুগঠন মেয়ে। তাহার দেহবর্ণ পর্যন্ত গৌর, যাহা তাহাদের স্বজাতির পক্ষে যেমন দুর্লভ তেমনি আকস্মিক। ইহার উপর দুর্গার রূপের মধ্যেও এমন একটা বিস্ময়কর মাদকতা আছে, যাহা সাধারণ মানুষের মনকে মুগ্ধ করে মত্ত করে—দুর্নিবারভাবে কাছে টানে।
পাতু নিজেই দ্বারকা চৌধুরীকে বলিয়াছিল—আমার মা-হারামজাদীকে তো জানেন? হারামজাদীর স্বভাব আর গেল না!
দুর্গার রূপের আকস্মিকতা পাতুর মায়ের সেই স্বভাবের জীবন্ত প্ৰমাণ।
এই স্বভাব দমনের জন্য কোনো কঠোর শাস্তি বা পরিবর্তনের জন্য কোনো আদর্শের সংস্কার ইহাদের সমাজে নাই। অল্পস্বল্প উচ্ছঙ্খলতা, স্বামীরা পর্যন্ত দেখিয়াও দেখে না। বিশেষ করিয়া উচ্ছলতার সহিত যদি উচ্চবর্ণের সচ্ছল অবস্থার পুরুষ জড়িত থাকে তাহা হইলে তো তাহারা বোব হইয়া যায়। কিন্তু দুর্গার উচ্ছঙ্খলতা সে-সীমাকেও অতিক্ৰম করিয়া গিয়াছে! সে দুরন্ত স্বেচ্ছাচারিণী; ঊর্ধ্ব বা অধঃলোকের কোনো সীমাকেই অতিক্ৰম করিতে তাহার দ্বিধা নাই। নিশীথ রাত্রে সে কঙ্কণার জমিদারের প্রমোদভবনে যায়, ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্টকে সে জানে; লোকে বলে দারোগা, হাকিম পর্যন্ত তাহার অপরিচিত নয়। সেদিন ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান মুখার্জী সাহেবের সহিত সে গভীর রাত্রে পরিচয় করিয়া আসিয়াছে, দফাদার শরীররক্ষীর মত সঙ্গে সঙ্গে গিয়াছিল। দুর্গা ইহাতে অহঙ্কার বোধ করে, নিজেকে স্বজাতীয়দের অপেক্ষা শ্ৰেষ্ঠ মনে করে; নিজের কলঙ্ক সে গোপন করে না। এ স্বভাবের জন্য লোকে দায়ী করে তাহার মা নাকি কন্যাকে স্বামী পরিত্যাগ করাইয়া এই পথ দেখাইয়া দিয়াছে! কিন্তু দায়ী তাহার মা নয়। তাহার বিবাহ হইয়াছিল কঙ্কণায়। দুর্গার শাশুড়ি কঙ্কণার এক বাবুর বাড়িতে ঝাড়ুদারণীর কাজ করিত। একদিন শাশুড়ির অসুখ করিয়াছিল—দুর্গা গিয়াছিল শাশুড়ির কাজে। বাবুর বাড়ির চাকরটা সকল কাজের শেষে তাহাকে ধমক দিয়া বাবুর বাগানবাড়ি ঝট দিবার জন্য একটা নির্জন ঘরে ঢুকাইয়া দিয়াছিল। ঘরটা কিন্তু নির্জন ছিল না। জনের মধ্যে ছিলেন স্বয়ং গৃহস্বামী বাবু। সন্ত্রস্ত হইয়া দুৰ্গা ঘোমটা টানিয়া দরজার দিকে ফিরিল, কিন্তু এ কি? এ যে বাহির হইতে দরজা কে বন্ধ করিয়া দিয়াছে!
ঘণ্টাখানেক পরে সে কাপড়ের খুঁটে-বাঁধা পাঁচ টাকার একখানি নোট লইয়া বাড়ি ফিরিল। আতঙ্কে, অশান্তিতে ও গ্লানিতে এবং সেইসঙ্গে বাবুর দুর্লভ অনুগ্রহ ও এই অর্থপ্রাপ্তির আনন্দে পথ ভুল করিয়া, সেই পথে পথেই সে পলাইয়া আসিয়াছিল আপন মায়ের কাছে। কারণ সে বাবুর কাছে শুনিয়াছিল এই যোগসাজশটি তাহার শাশুড়ির! সব শুনিয়া মায়ের চোখেই বিচিত্র দৃষ্টি ফুটিয়া উঠিয়াছিল; একটা উজ্জ্বল আলোকিত পথ সহসা যেন তাহার চোখের সম্মুখে উদ্ভাসিত হইয়া উঠিল—সেই পথই সে কন্যাকে দেখাইয়া দিয়া বলিল—যাক, আর শ্বশুরবাড়ি যেতে হবে। না। তাহার পর হইতে দুর্গা সেই পথ ধরিয়া চলিয়াছে। সেই পথেই আলাপ হইয়াছে ছিরু পালের সঙ্গে।
ছিরু পালের সহিত দুর্গার আলাপ অনেক দিনের, কিন্তু সম্বন্ধটা একান্তভাবে দেওয়া নেওয়ার সীমানার মধ্যেই গণ্ডিবদ্ধ। তাহার প্রতি এতটুকু কোমলতা কোনোদিন তাহার ছিল না। আজ এই নূতন আবিষ্কারে তাহার প্রতি দুর্গার দারুণ ঘৃণা ও আক্রোশ জন্মিয়া গেল। পাতুর সহিত তাহার যতই বিরোধ থাক, জাতি জ্ঞাতিদের যতই সে হীন ভাবুক আজ তাহাদের জন্য সে মমতাই অনুভব করিল। সারাপথ সে কেবলই ভাবিতে লাগিল—ছিরু পালের মদের সঙ্গে গরুমারা-বিষ মিশাইয়া দিলে কেমন হয়?
—ডাক্তার কি বললে, গাছ বেচবে? প্রশ্নটা করিল দুর্গার মা। চিন্তা করিতে করিতে দুর্গা কখন যে আসিয়া বাড়ি পৌঁছিয়াছে—খেয়াল ছিল না।
সচিকত হইয়া দুর্গা উত্তর দিল–না।
–বেচবে না?
–জিজ্ঞাসা করি নাই।
–মরণ! গেলি ক্যানে তবে টং করে?
দুর্গা একবার কেবল তির্যক তীব্র দৃষ্টিতে মায়ের দিকে চাহিল, কথার কোনো জবাব দিল। না। হয়ত কোনো প্রয়োজন বোধ করিল না।
কন্যার দেহবিক্রয়ের অর্থে যে মা বাঁচিয়া থাকে তাহার কাছে এ তীব্র দৃষ্টির শাসন অলঙ্খনীয়। দুর্গার চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখিয়া মা সঙ্কুচিত হইয়া চুপ করিয়া গেল; কিছুক্ষণ পর আবার বলিলহামদু শ্যাখ পাইকার এসেছিল।
দুর্গা এবারও কথার উত্তর দিল না।
মা আবার বলিল-আবার আসবে, ধর্মরাজতলায় পাড়ার নোকের সঙ্গে কথা কইছে।
দুর্গা এবার বলিল-ক্যানে? কি দরকার তার? আমি বেচব না গরুছাগল। দুর্গার একপাল ছাগল আছে, কয়েকটা গাই এবং একটা বলদ-বাছুরও আছে।
হামদু শেখ পাইকার গরু-বাছুর কেনা-বেচা করিয়া থাকে। সুতরাং অগ্নিকাণ্ডের খবর পাইয়া শেখ নিজেই ছুটিয়া এ পাড়ায় আসিয়াছে। এখন এই পাড়ার অনেকে ছাগল-গরু। বেচিবে। এ পাড়ায় সে ছাগল-গরু কেনে; প্রয়োজন হইলে চার আনা আট আনা হইতে দু-চার। টাকা পর্যন্ত অগ্রিমও দেয়। পরে ছাগল-গরু লইয়া টাকাটা সুদসমেত শোধ লইয়া থাকে। আজও সে আসিয়াছে ছাগল-গরু কিনিতে, দু-একজনকে অগ্রিমও দেবে, এত বড় বিপদে এই দারুণ প্রয়োজনের সময় ইহাদের জন্য হামদু কৰ্জ করিয়া টাকা লইয়া আসিয়াছে। দুর্গার পালিত বলদবাছুরটার জন্য হামৃদু অনেকদিন হইতে তোষামোদ করিতেছে কিন্তু দুৰ্গা বেচে নাই। আজ সে আবার আসিয়াছে এবং দুর্গার মাকে গোপনে চার আনা পয়সাও দিয়াছে। সওদা হইলে, পশ্চিম মুখে দাঁড়াইয়া আরও চার আনা দিবার প্রতিশ্রুতিও হামদু দিয়াছে। মেয়ের কথাটা মায়ের মাটেই ভাল লাগিল না—খানিকটা ঝুঁজ দিয়া বুলিল—বেচবি না তো, ঘর কিসে হবে শুনি?
—তোর বাবা টাকা দেবে বুঝলি হারামজাদী। আমি আমার শাখাবাধা বেচব। দুর্গা দুইচারিখানা সোনার গহনাও গড়াইয়াছে; অত্যন্ত সামান্য অবশ্য কিন্তু তাহাই ইহাদের পক্ষে স্বপ্ন-সাফল্যের কথা।
দুর্গার মা এবার বিস্ফোরক বস্তুর মত ফাটিয়া পড়িবার উপক্রম করিল। কিন্তু দুর্গা তাহাতে দমিবার মেয়ে নয়, সে জিজ্ঞাসা করিল—কআনা নিয়েছিস হামদু শ্যাখের কাছে? আমি কিছু বুঝি না মনে করেছিস! ধান-চালের ভাত আমি খাই না, লয়?
বিস্ফোরণের মুখেই দুর্গার মা প্রচণ্ড বৰ্ষণে যেন ভিজিয়া নিষ্ক্রিয় হইয়া পড়িল। সে অকস্মাৎ কাঁদিতে আরম্ভ করিল, প্যাটের মেয়ে হয়ে তু এত বড় কথাটা আমাকে বললি!
দুর্গা গ্রাহ্য করিল না, বলিল—থাক, ঢের হয়েছে। এখন দাদা কোথায় গেল বলতে পারি? বউটাই বা গেল কোথায়?
মা আপন মনেই বিলাপ করিয়া কাঁদিতে আরম্ভ করিল, দুর্গার প্রশ্নের উত্তর তাহার মধ্যেই ছিলগতে আমার আগুন ধরে দিতে হয় রে! নেকনে আমার পাথর মারতে হয় রে! জ্যান্তে আমায় দগ্ধে দগ্ধে মারলে রে! যেমন বেটা তেমনি বিটী রে। বিটী বলছে চোর। আর বেটা হল দ্যাশের বার! দ্যাশের লোক তালপাতা কেটে আপন আপন ঘর ঢাকলে, আর আমার বেটা গাঁ ছেড়ে চলল। মরুক, মরুক ড্যাকরা—এই অঘ্রাণের শীতে সান্নিপাতিকে মরুক।
এবার অত্যন্ত রূঢ়স্বরে দুর্গা বলিল—বলি, রান্নাবান্না করবি, না, প্যানপ্যান করে কাদবি? পিণ্ডি গিলতে হবে না?
–না, মা রে; আর পিণ্ডি গিলব না, মা রে; তার চেয়ে আমি গলায় দড়ি দেব রে। দুর্গার মা বিনাইয়া বিনাইয়া জবাব দিল।
দুর্গা মুখে কিছু বলিল না, উঠিয়া ঘরের ভিতর হইতে একগাছা গরুর্বধা দড়ি লইয়া মায়ের কোলের কাছে ফেলিয়া দিয়া বলিল, লে, তাই দেগা গলায়, যা! তারপর সে পাড়ার মধ্যে চলিয়া গেল আগুনের সন্ধানে।
হরিজন-পল্লীর মজলিসের স্থানওই ধর্মরাজ ঠাকুরের বকুলগাছতলা। বহুদিনের প্রাচীন বকুলগাছটি পত্রপল্লবে পরিধিতে বিশাল; কাণ্ডটার অনেকাংশ শূন্যগর্ভ এবং বহুকালপূর্বে কোনো প্রচণ্ড ঝড়ে অর্ধোৎপাটিত ও প্রায় ভূমিশায়ী হইয়া পড়িয়া আছে, কিন্তু বিস্ময়ের কথা, সেই গাছ আজও বাঁচিয়া আছে। ইহা নাকি ধর্মরাজের আশ্চর্য মহিমা! এমন শায়িত অবস্থায় কোথায় কোন গাছকে কে জীবিত দেখিয়াছে? গাছের গোড়ায় স্থূপীকৃত মাটির ঘোড়া; মানত করিয়া লোকে ধর্মরাজকে ঘোড়া দিয়া যায়, বাবা বাত ভাল করিয়া থাকেন। আশপাশের ছায়াবৃত স্থানটি বার মাস পরিচ্ছন্নতায় ভকতক করে। পল্লীর প্রত্যেকে প্রতি প্রভাতে একটি করিয়া মাড়ুলী দিয়া যায়; সেই মাজুলীগুলি পরস্পরের সহিত যুক্ত হইয়াগোটা স্থানটাই নিকানো হয়। হামদু শেখ সেইখানে বসিয়া পল্লীর লোকজনের সঙ্গে গরু-ছাগল সওদার দরদস্তুর করিতেছিল। পাঁচসাতটা ছাগল, দুইটা গরু অদূরে বাঁধিয়া রাখিয়াছে, সেগুলি কেনা হইয়া গিয়াছে।
পুরুষেরা সকলেই গিয়াছে জগন ডাক্তারের ওখানে। হামদুর কারবার চলিতেছে মেয়েদের সঙ্গে। মেয়েরা কেহ মাসি, কেহ পিসি, কেহ দিদি, কেহ চাচি, কেহ বা ভাবী। হামদু একটা খাসি লইয়া এক বাউরি ভাবীর সঙ্গে দর করিতেছিল–ইহার গায়ে কি আছে, তুই বল ভাবী, সেরেফ খালটা আর হাড় কখানা। পাঁচ স্যার গোস্তও হবে না ইয়াতে। জোর স্যার তিনেক হবে। ইয়ার দাম পাঁচ সিকা বলেছি—কি অন্যায় বলেছি বল? পাঁচজনা তো রয়েছে বলুক পাঁচজনায়। আর এই অসময়ে লিবেই বা কে বল? গরজ এখন তুর, না, গরজ পরের, তু বুঝ কেনে!—বলিতে বলিতেই সে চিৎকার করিয়া ডাকিলও দুগ্গা দিদি, শুগো শু। তোর বাড়ি পাঁচবার গেলাম। শুন্–শুন্!
দুর্গা আগুনের সন্ধানেই পাড়ায় বাহির হইয়াছিল, সে দূর হইতেই বলিল—বেচব না আমি।
–আরে না বেচিস, শুন্—শু। তুকে বেচতে আমি বলি নাই।
–কি বলছ বল? দুৰ্গা আগাইয়া আসিয়া দাঁড়াইল।
–আরে বাপ রে দিদি যে একেবারে ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে আলি গো!
–তাই বটে। ফিরে গিয়ে আমাকে ব্ৰাধতে হবে। কি বলছ বল?
–ভাল কথাই বলছি ভাই; বলছি ঘরে টিন দিবি? সন্ধানে আমার সস্তায় টিন আছে।
–টিন?
–হ্যাঁ গো! একেবারে লতুন। কলওয়ালারা বেচবে, কিনবি? একেবারে নিশ্চিন্তি! দেখৃ। গোটা চল্লিশ-পঞ্চাশ টাকা।
দুর্গা কয়েক মুহূর্ত ভাবিল। মনশ্চক্ষে দেখিল—তাহার ঘরের উপর টিনের আচ্ছাদন রোদের ছটায় রুপার পাতের মত ঝকমক করিতেছে। কিন্তু পরমুহূর্তেই সে আত্মসংবরণ করিয়া বলিল—উঁহুঁ! না।
—তুর টাকা না থাকে আমাকে ইয়ার পরে দিস। ছমাস, এক বছর পরে দিস।
দুর্গা হাসিয়া ঘাড় নাড়িয়া বলিল—উঁহুঁ! ও বলদের নামে তুমি হাত ধোও, হামদু ভাই। ও আমি এখন দুবছর বেচব না।—বলিয়া দেহের একটা দোলা দিয়া চলিয়া গেল।
আগুন লইয়া বাড়ি ফিরিয়া দুৰ্গা দেখিল—দড়িগাছটা সেইখানেই পড়িয়া আছে, মা সেটা স্পর্শ করে নাই। উনানে আগুন দিয়া এখন সে পাতুর সঙ্গে বসচায় নিযুক্ত। বড় বড় দুই বোঝা তালপাতা উঠানে ফেলিয়া পাতু হাঁপাইতেছে এবং মায়ের দিকে ক্রুদ্ধ বাঘের মত চাহিয়া আছে। পাতুর বউ কাঠকুটা কুড়াইয়া জড়ো করিতেছে, রান্না চড়াইবে।
দুর্গা বিনা ভূমিকায় বলিল,-বউ, রান্না আর করতে হবে না। আমিই রাধছি, একসঙ্গেই খাব সব।
পাতু দুর্গার দিকে চাহিয়া বলিল—দেখ দুগ্গা দেখ! মায়ের মুখ দেখ। যা মন চায় তাই বলছে! ভাল হবে না কিন্তুক।
—তা আমিই বা কি করব বল? এতক্ষণ তো আমার সঙ্গেই লেগেছিল। মা যে! গভ্যে ধরেছে মাথা কিনেছে! তাড়িয়ে দিতেও নাই, খুন করতেও নাই। মারধর করলেও পাপ।
–একশো বার। তোর কথার কাটান নাই, কিন্তু ই গাঁয়ে থাকব কি সুখে তুই বল দেখি?
–সত্যিই তু উঠে যাবি নাকি? হ্যাঁ দাদা? ভিটে ছেড়ে উঠে যাবি?
পাতু কিছুক্ষণ চুপ করিয়া রহিল। তারপর বলিল—তাতেই তো আবার এই অবেলাতে তালপাতা কেটে আনলাম দুৰ্গা! নইলে—জংশনে কলে কাম-কাজ, থাকবার ঘর সব ঠিক করে এসেছিলাম দুপুরবেলাতে।
দুহাত ছাঁদাছাঁদি করিয়া তাহারই মধ্যে মাথা গুঁজিয়া পাতু মাটির দিকে চাহিয়া বসিয়া রহিল।
দুর্গা বলিল, ওঠ। ওই দে কখানা লম্বা বাঁশ রয়েছে আমার, ওই কখানা চাপিয়ে তালপাতা দিয়ে ঘরখানা ঢাক। পিতি-পুরুষের ভিটে ছেড়ে কেউ কখনও যায় নাকি? তুই চালে উঠ, আমি আর বউ দুজনাতে তুলে দিচ্ছি সব।
একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া পাতু উঠিল। দুর্গা কাপড়ের আঁচল কোমরে অ্যাঁটসট করিয়া বাঁধিয়া বলিল, ওই গাদা সতীশ। সতীশ বাউরি রে! মিনসে জগন ডাক্তারকে বলছে—পাতু বায়েন বড়নোক, ব্যালেস্টার, উকিল। তা আমি বললাম,আহা, তোমার মুখে ফুলচন্নন পড়ুক! বলে বড়নোক, গা ছেড়ে উঠে চলে যাবে। ওরা যায় তো, তোদিগে ভিটে দানপত্তর নিখে দিয়ে যাবে। তোরা ভোগ করবি!
বিড়ালীর মত হৃষ্টপুষ্ট পাতুর বউটা খুব খাঁটিতে পারে, খাটো পায়ে দ্রুতগতিতে লাটিমের মত পাক দিয়া ফেরে। সে ইহারই মধ্যে বাঁশগুলাকে টানিয়া আনিয়া উঠানে ফেলিয়াছে।