০৮. টুনির বয়স এখন ন মাস

টুনির বয়স এখন ন মাস।

ন মাস বয়েসী বাচ্চারা বাবা, মা, দুদু এই জাতীয় কথা বলতে শেখে, কিন্তু টুনির ব্যাপারটা হয়েছে এই রকম, সে শুধু শিখেছে একটি শব্দ–জেজে। যাই দেখে উল্লসিত হয়ে ওঠে এবং হাত নেড়ে বলে ওঠে, জেজে।

তাকে কথা শেখানোর দায়িত্ব নিয়েছে শাহানা। শাহানার পরীক্ষা হয়ে গেছে। কাজেই প্রচুর অবসর। শাহানা ঘোষণা করেছে, এক মাসের মধ্যে টুনিকে সব কথা শিখিয়ে ফেলবে।

শাহানা টুনিকে সোফায় গায়ে হেলান দিয়ে বসিয়েছে। টুনি তাকে লক্ষ করছে তীক্ষ্ণ। শাহানা তার মনযোগ আরো ভালোভাবে আকর্ষণ করবার জন্যে কিছুক্ষণ হাত নাড়ল, তারপর বলল, বল তো টুনি–মামা।

টুনি তার দুটি দাঁত বের করে ফিক করে হেসে ফেলল, তারপর গম্ভীর হয়ে বলল–জেজে।

উহুঁ, জেজে নয়। বল মামা।

জেজে, জেজে।

হল না। বোকা মেয়ে, বল, মা মা।

জে জে। জে…

মোটেও হচ্ছে না। ইচ্ছা করলেই তুমি পারবে। তোমার কত বুদ্ধি!

জে জে। জে…

হচ্ছে না।

জেজে, জেজে, জেজে।

শাহানা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল। টুনি হাত বাড়িয়ে দিল। সে কোলে উঠতে চায়। দুটি জিনিস সে খুব ভালো শিখেছে–কোল এবং ছাদ। কোলে উঠেই সে দরজার দিকে দেখাবে। দরজা খোলামাত্র ছাদের দিকে হাত বাড়বে।

ছাদে নিয়ে ছেড়ে দিলে সে নিজের মনে হামাগুড়ি দেবে। মাঝে মাঝে একা একা দাঁড়াতে গিয়ে ধাপ করে পড়ে যাবে। ব্যথা পেলেও কাঁদবে না। অবাক হয়ে বলবে।–জেজে, জেজে।

শাহানা টুনিকে কোলে নিয়ে উঁচু গলায় বলল, ভাবী, আমি ওকে একটু ছাদে নিয়ে যাচ্ছি। কেউ তার কথার কোনো জবাব দিল না। নীলু রান্না ঘরে রান্না নিয়ে ব্যস্ত। মনোয়ারা গেছেন ডেনটিষ্টের কাছে। কাল রাত থেকে তাঁর দাঁতে ব্যথা। আজ গেছেন দাঁত ফেলে আসতে।

শাহানা ছাদে উঠে গেল। রাতে তুমুল বৃষ্টি হয়েছে। ছাদ ভেজা। টুনিকে নামানোর প্রশ্নই ওঠে না, কিন্তু সে নেমে পড়ার জন্যে ছটফট করছে। শাহানা আনিসের ঘরে উঁকি দিল।

আনিস তিনিকোণা একটা কাঠের বাক্সে হাতুড়ি দিয়ে পেরেক মারছিল। শাহানাকে দেখেই চট করে বিছানার চাদর টেনে বাক্স ঢেকে ফেলল। শাহানা অবাক হয়ে বলল, এটা আবার কী!

আনিস বলল, আমার ম্যাজিকের বাক্স। পারলিককে দেখানো নিষেধ আছে।

ম্যাজিকের ব্যাপারটি অল্প কিছু দিন হল শুরু হয়েছে। আনিস মনস্থির করেছে, সে ম্যাজিশিয়ান হবে। পড়াশোনায় তার মাথা নেই। এই লাইনে কিছু করতে পারবে না। তার ধারণা, ম্যাজিকের লাইনে সে উন্নতি করবে।

রশীদ সাহেব মহা বিরক্ত হয়েছেন। কোনো ভদ্রলোকের ছেলে ম্যাজিশিয়ান হতে চায়, এটা ভাবলেই তাঁর মাথায় রক্ত উঠে যায়। সার্কাস, ম্যাজিক এইসব হচ্ছে ফালতু লোকের কাজ। ভদ্রলোকের কাজ না। আনিসকে তিনি ঘাড় ধরেই বের করে দিতেন, কিন্তু মেয়ের জন্যে পারেন নি। বীণা আনিসকে তাড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে শুনেই খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে এমন একটা কাণ্ড করেছে যে, তিনি রীতিমত হকচকিয়ে গেছেন। স্ত্রীকে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করেছেন, প্ৰেম-ফ্রেম না তো? লতিফা রেগে গিয়ে বলেছেন, কী পাগলের মতো কথা বল। বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পেয়েছে নাকি তোমার? চাকর শ্রেণীর একটা লোকের সঙ্গে তোমার মেয়ে প্রেম করবে? এসব নিয়ে আর কোনোদিন কোনো কথা বলবে না।

আনিসকে কি চলে যেতে বলব?

থাক, চলে যেতে বলার দরকার নেই। তবে, ওর এ বাড়িতে ঢোকা আমি বন্ধ করছি।

কীভাবে?

আমি ব্যবস্থা করব, তুমি দেখ না।

ব্যবস্থা তিনি কী করলেন ঠিক জানা গেল না। শুধু দেখা গেল আনিস একটা কেরোসিন কুকার কিনেছে। নিজের রান্না এখন নিজেই রাঁধছে।

আনিসের ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হবার জন্যে লতিফা বেশ কিছু দিন

দেখা যায়। না, দেখা গেল না।

বীণার একটা তালাবন্ধ সুটকেস আছে। চাবি জোগাড় করে গোপনে একদিন সেই সুটকেস খুললেন, যদি চিঠিপত্র কিছু পাওয়া যায়। আনিসের কোনো চিঠি পাওয়া গেল না, তবে পাশা নামের একটি ছেলের কুৎসিত ধরনের একটা চিঠি পাওয়া গেল। সেই চিঠি পড়ে তাঁর রক্ত হিম হয়ে যাবার জোগাড়। কী সৰ্ব্বনাশ!

লতিফা চিঠির কথা কাউকে বলতে পারলেন না। এটি এমনই এক চিঠি, যা কাউকে দেখানো যায় না, কারো সঙ্গে এ নিয়ে গল্পও করা যায় না। বীণা সেই চিঠি সুটকেসের পকেটে যত্ন করে রেখে দিয়েছে কেন কে জানে?

 

টুনিকে কোলে নিয়ে শাহানা কৌতূহলী হয়ে আনিসের ঘরে ছড়িয়ে-ছড়িয়ে থাকা জিনিসপত্র দেখছে। সে বলল, সবই কি আপনার ম্যাজিকের জিনিস নাকি আনিস ভাই?

হুঁ।

ঐ আংটাগুলি কী?

লিংকিং রিঙ। একটা চাইনিজ টিক। একটার ভেতর দিয়ে একটা ঢুকে যায়, আবার বের হয়ে আসে।

তাই নাকি? দেখানো না।

এখন দেখান যাবে না, প্রাকটিস নেই। পুরোপুরি ওস্তাদ না হয়ে আমি কোনো ম্যাজিক দেখাব না। বাইরে দাঁড়িয়ে আছ কেন, ভেতরে আস।

না।

না, কেন?

ইচ্ছা করছে না।

প্লিজ, আসা। চা বানিয়ে খাওয়াব, আমার ঘরে এখন চা বানানোর সব সরঞ্জাম আছে।

চা আমি খাই না।

টুনিকে কোলে নিয়ে শাহানা নিচে নেমে গেল।

নীলু রান্না চড়াতে গিয়ে দেখল, লবণ নেই। কাজের কোনো লোক নেই। এমন মুশকিল হয় একেক বার। এখন লবণের জন্যে পাঠাতে হবে রফিককে, সে বোধহয় এখনো ঘুমুচ্ছে। ঘুম ভাঙালে সে রাগ করবে। দশটা বেজে যাচ্ছে, শফিকের অফিসে যাবার সময় হয়ে এল। আজ না খেয়েই অফিসে যেতে হবে।

নীলু উঠে এল। রফিককে অনুরোধ–টনুরোধ করে পাঠাতে হবে, এছাড়া উপায় নেই!

রফিকের ঘরের সামনে এসে নীলু থমকে দাঁড়াল। দরজায় নোটিশ ঝুলছে।–রাত তিনটা দশ মিনিটে ঘুমাতে যাচ্ছি। কেউ যেন সকাল এগারটার আগে না ডাকে। ডাকলে খুনখুনি হয়ে যাবে।

পদ্ম নেই। নীলুদরজায় ধাক্কা দিল। রফিক চচিয়ে উঠল, কে?

আমি।

ভাবী, তুমি অন্ধ নাকি? নোটিশ দেখছি না?

দেখছি। উপায় নেই আমার, প্লিজ উঠে আস।

কী করতে হবে?

লবণ এনে দিতে হবে। রান্না চড়াতে পারছি না।

রফিক অত্যন্ত বিরক্ত মুখে দরজা খুলল। বিড়বিড় করে বলল, ভোর রাতে তোমাকে রান্না চড়াতে হয় কেন বল তো? তোমাদের যন্ত্রণায় শান্তিতে একটু ঘুমাবার উপায় নেই।

রফিকের দাড়ি অনেকখানি বড়ো হয়েছে। তাকে দাড়িতে এখন ভালোই লাগছে। স্বাস্থ্যও আগের চেয়ে একটু ভালো হয়েছে। পড়াশোনায় ঝামেলা চুকেছে, এই শান্তিতেই বোধহয়।

এম. এ. পরীক্ষায় রফিকের রেজাল্ট বেশ ভালো হয়েছে। সেকেণ্ড ক্লাস থার্ড। সে সেকেণ্ড ক্লাস আশা করেছিল, তবে নিচের দিকে। রেজাল্ট বের হবার পর অন্যদের চেয়েও সে নিজে বেশি অবাক হয়েছে। নীলুকে বলেছে, আরেকটু খাটাখাটনি করলে ফার্স্ট ক্লাস মেরে দিতে পারতাম ভাবী। কী, পারতাম না?

হ্যাঁ, তা তো পারতেই।

আমি যে এক জন ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র, তা আগে বুঝতে পারি নি। আগে বুঝতে পারলে রাতদিন পড়তাম। আর তো পড়ার স্কোপ নাই। শেষ পরীক্ষাটাও দিয়ে দিলাম।

বিসিএস-এর জন্যে পড়। বিসিএস দাও।

বিসিএস আমার হবে না, ভাবী। তাইবাতে আউট করে দেবে।

কেন?

বিসিএস-এ চেহারা-টেহারা দেখে। আমার তো সেই দিক দিয়ে জিরো। শর্ট। বোকা-বোকা চাউনি। তাও দাড়িটা থাকায় রক্ষা!

তোমার কি ধারণা, দাড়ি রাখায় তোমাকে খুব হ্যাণ্ডসাম লাগছে?

হ্যাণ্ডসাম না লাগলেও ইন্টেলিজেন্ট লাগছে। চেহারায় একটা শাপনেস চলে এসেছে। কী, আসে নি? একটা অনেষ্ট ওপিনিয়ন দাও তো ভাবী

চাকরির চেষ্টা সে বেশ করছে। তিনটি ইন্টারভ্যু দিয়েছে এ পর্যন্ত। একটা সিলেট চা বাগানে, বাকি দুটি ব্যাঙ্কে। চা বাগানের ইন্টারভু্যু খুব ভালো হয়েছিল। রফিকের ধারণা ছিল, সেখানেই হবে। হয় নি। ব্যাঙ্কের ইন্টারভু্যু ভালো হয় নি। তাকে জিজ্ঞেস করেছে, বাংলাদেশের আয়তন কত? সে বলতে পারে নি। ইন্টারভু্যু বোর্ডের এক ভদ্রলোক বললেন এম এ পাশ করেছেন, আর বাংলাদেশের আয়তন কত এটা জানেন না? আওয়ামী লীগের ছয় দফা কী কী বলতে পারবেন? এটাতেও সে গণ্ডগোল করে ফেলল। ভদ্রলোক বিরক্ত স্বরে বললেন, ইন্টারভু্যু বোর্ড একটু প্রিপেয়ার্ড হয়ে ফেস করবেন। পড়াশোনা করে তারপর আসবেন।

রফিক এরপর অবশ্যি আটঘটি বেধে নিমেছে। জেনারেল নলেজের বই কিনে এনেছে তিনটি। নোট করছে, পড়ছে। উৎসাহের সীমা নেই।

 

শফিক অফিসের কাপড় পরে খাবার ঘরে আসতেই নীলু, লজ্জিত মুখে বলল, আজ রান্না শেষ হয় নি এখনো। শফিক কিছু বলল না। কিন্তু তার মুখ দেখেই মনে হচ্ছে, সে কিছুটা বিরক্ত।

লবণ ছিল না। রফিক লবণ আনতে গিয়ে অনেকখানি দেরি করল। তুমি আজ ক্যানটিনে খেয়ে নিও।

ঠিক আছে। নীলু ইতস্তত করে বলল, আর ঐ চায়ের দাওয়াতের কথাটা মনে আছে?

কোন দাওয়াত?

ঐ যে, আমার বন্ধু বন্যা চায়ের দাওয়াত দিয়েছে আমাদের দু জনকে। ওদের ম্যারেজ এ্যানিভার্সারি। রাতে তোমাকে বলেছিলাম।

কটোর সময় যাবার কথা?

চারটায়।

ঐ সময় তো আমি থাকব টঙ্গি। ছটা পর্যন্ত ফিন্ডে কাজ।

এক দিন না গেলে হয় না?

আরে না। না গেলে হবে কেন?

আমি একাই যাব?

যদি যেতেই হয়, এক যাও। কিংবা রফিককে বল, পৌঁছে দেবে।

নীলু কিছু বলল না। তার মনে ক্ষীণ আশা ছিল, শফিক হয়তো যেতে রাজি হবে। অনেক দিন তারা একসঙ্গে কোথাও যায় না। রাতে দাওয়াতের কথা শুনে হাই তুলে বলেছিল, আচ্ছা, দেখি। তার মানে যাওয়া যেতে পারে। এখন মনে হচ্ছে। আচ্ছা দেখির মানে-সম্ভব না। নীলু ঘরের কাজ শেষ করতে লাগল। একাই যাবে সে। এবং ফিরবে সন্ধ্যা পার করে। এমন দেরি করবে, যাতে সবাই চিন্তায় পড়ে যায়।

মনোয়ারা দাঁত দেখাতে সেই সকালে গিয়েছেন, এখনো ফেরেন নি। এটাও একটা চিন্তার ব্যাপার। কোনো ঝামেলা হয়েছে কিনা কে জানে। এত দেরি হবার তো কথা নয়।

নীলু রান্না শেষ করে ময়লা কাপড় ধুতে ঢুকল বাথরুমে। যেদিনই সে কাপড় ভেজায়, সেদিনই আকাশ অন্ধকার করে বৃষ্টি নামে। শাশুড়ি চেঁচামেচি করতে থাকেন, দিনক্ষণ দেখে কাপড় ভেজাতে পার না। এ কি বিশ্ৰী অভ্যাস তোমার বৌমা, বৃষ্টি-বাদলা ছাড়া তুমি কাপড় ধুতে পার না! এক কথা কত বার করে বলব তোমাকে?

আজ অবশ্যি বৃষ্টি হবে না, কড়া রোদ উঠেছে। ঘণ্টা দু-এক এ-রকম থাকলে সব কাপড় শুকিয়ে খটখাটে হয়ে যাবে।

বালতিতে ভেজা কাপড় নিয়ে নীলু ছাদে গেল। আনিস ছাদে হাঁটতে হাঁটতে সিগারেট টানছিল। নীলুকে আসতে দেখেই সিগারেট ছুঁড়ে ফেলল।

নীলু বলল, যাদুকরের খবর কী?

কোনো খবর নেই ভাবী। রানা চড়িয়েছি।

কী রান্না আজ?

ভাত আর ডিম ভাজা।

রোজ রোজ ডিম ভাজা খেতে অরুচি লাগে না?

না। কাপড় আমার কাছে দিন ভাবী, আমি মেলে দিচ্ছি।

তোমার মেলতে হবে না। এটা মেয়েদের কাজ।

মেয়েদের কাজ বলে আলাদা কিছু আছে?

আছে। এখনো আছে। তোমার ম্যাজিক কেমন চলছে?

ভালোই চলছে ভাবী। এখন পামিং শিখছি।

কী শিখছ?

পামিং। অর্থাৎ হাতের তালুতে লুকিয়ে রাখার কৌশল।

এইসব কৌশল আমরা কবে দেখতে পাব?

খুব শিগগিরই পাবেন।

পিসি সরকার হচ্ছে তাহলে?

হ্যাঁভাবী। আপনি হাসছেন—আমি কিন্তু সত্যি সত্যি হব।

নিশ্চয়ই হবে। হবে না কেন? সেদিন আমরা সবাইকে বলব, যাদুকর আনিস সাহেবকে আমরা ছোটবেলা থেকেই চিনতাম। তিনি আমাদের দোতলার চিলেকোঠায় থাকতেন।

ভাবী, আপনি মনে-মনে হাসছেন।

না ভাই, হাসছি না।

শফিকের অফিস মতিঝিলে-বিটা ফার্মাসিউটিক্যালস এণ্ড ইনসেষ্টিসাইড। নেদারল্যাণ্ডের একটা ওষুধ তৈরির কারখানা। মূল কারখানাট তেজগায়। এখন সেটি আরো বাড়ানো হচ্ছে। টঙ্গিতে নতুন একটি কারখানা হচ্ছে।

বিদেশি কোম্পানিগুলোতে যেমন সাহেবী কায়দাকানুন থাকে, এখানে সে-রকম নয়। দেশীয় অফিসগুলির মতই টিলাঢ়ালা ভাব, সুরেনসেন হচ্ছে একমাত্র বিদেশি। বাংলাদেশে কোম্পানির বড়োকর্তা। সুরেনসেনের বাড়ি নরওয়েতে, পড়াশোনা করেছে ফ্রান্সে। ইংরেজি ভালো বলতে পারে না।

বিদেশিদের সম্পর্কে আমাদের সাধারণ ধারণা হচ্ছে—এরা অত্যন্ত কর্মঠ। সময় সম্পর্কে সচেতন। কাজ ছাড়া কিছুই বোঝে না।–ইত্যাদি। সুরেনসেনের সঙ্গে এর কোনোটাই মেলে না। লোকটি মহা ফাঁকিবাজ। কাজ কিছুই বোঝে না, অকারণে চেঁচায়।

শফিক অফিসে ঢুকেই শোনে সাহেব খুব রেগে আছে। সবাইকে বকবিকি করছে। শফিক অবাক হয়ে বলল, কেন?

কে জানে কেন? কয়েক বার আপনার খোঁজ করেছে। যান স্যার, দেখা করে আসেন।

শফিক ঘরে ঢুকতেই সাহেব চেঁচিয়ে উঠল, কি, ব্যাপার শফিক, এত দেরি কেন?

দেরি না, তুমিই চলে এসেছ সকাল—সকাল। মনে হচ্ছে তুমি কোনো কারণে আপসেট।

আপসেট হব না। তুমি পড়ে দেখ, হল্যাণ্ডের হোম অফিস থেকে কী লিখেছে।

কী লিখেছে?

আহ, পড়তে বলছি পড়। জিজ্ঞেস করছ কেন?

এমন মেজাজ খারাপ করার মতো কোনো চিঠি নয়। হেড অফিস জানতে চেয়েছে। লাট নং ৩৭২-এর স্যাম্পল কেন এখনো পাঠানো হয় নি। র্যানডম স্যাম্পলিং করা হচ্ছে না এবং আনুষঙ্গিক অন্য কাজও আটকে আছে, কাজেই~।

শফিক বলল, স্যাম্পল যথাসময়ে পাঠানো হয়েছে। শিপমেন্টের ঝামেলায় হয়তো পৌঁছয় নি। এই নিয়ে আপসেট হওয়ার কিছুই নেই।

পাঠানো হয়েছে?

নিশ্চয়ই পাঠানো হয়েছে। কাগজপত্র এনে দেখাচ্ছি। তোমাকে।

দেখানোর দরকার নেই। তুমি একটা চিঠি পাঠাবার ব্যবস্থা কর। চিঠিতে লেখা থাকবে, এত তারিখে স্যাম্পল শিপমেন্ট করা হয়েছে। তোমরা যদি না পাও, আমাদের অবিলম্বে জানাও!

ঠিক আছে।

চিঠি না। একটা টেলেক্স করে দাও।

টেলেক্সই করব।

সুরেনসেন মুহুর্তের মধ্যে ঠাণ্ডা হয়ে গেল। অমায়িক গলায় বলল, কফি খাবে নাকি?

না, কফি খাব না।

টঙ্গির কাজ কেমন এগুচ্ছে?

ভালোই এগুচ্ছে।

খুব লক্ষ রাখবে, তোমাদের দেশের লোক কিন্তু সূযোগ পেলেই ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করে।

শফিক কিছু বলল না। সাহেব গম্ভীর গলায় বলল, আমার কমেন্ট শুনে আবার মন খারাপ কর নি তো?

না।

গুড। শোন শফিক, আজ আমি একটু সকাল—সকাল ঘরে ফিরব। কাজেই আমাকে দিয়ে কোনো সই-টই কারাবার থাকলে করিয়ে নিও।

ঠিক আছে। আমি তাহলে যাই এখন?

যাও।

শফিক তার নিজের ঘরে ঢুকল। তার পদ হচ্ছে ম্যানেজারের। ম্যানেজার, এডমিনিষ্ট্রেশন। তবে সে গত ছ মাস ধরে জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছে। আগের জেনারেল ম্যানেজার ইংল্যাণ্ডের মিঃ রেভার্স টনির সঙ্গে বড়োকর্তার খিটিমিটি চলছিল বহু দিন থেকে। গত খ্রিসমাসে সেই খিটিমিটি চরমে উঠেছে এবং রেভার্স সাহেব এক দিন অফিসে এসে বড়ো সাহেবকে যে কথাগুলি বলল, তার বাংলা অর্থ হচ্ছে-তোমার অফিস এবং কারখানা তুমি তোমার পশ্চাৎদেশে প্রবেশ করিয়ে বসে থাক, আমি চললাম। সাহেবরাও নোংরা কথা আমাদের মতোই গুছিয়ে বলতে পারে।

বড়োসাহেব এক সপ্তাহ গম্ভীর হয়ে রইল। প্রতি সন্ধ্যায় সাত-আট পেগ হুঁইঙ্কি খেয়ে পুরোপুরি আউট হবার চেষ্টা করতে লাগল। সেটা সম্ভব হল না। এ্যালকোহল তাঁকে খুব একটা প্রভাবিত করতে পারে না। এক সপ্তাহ পর জেনারেল ম্যানেজার হারানোর দুঃখ তার অনেকটা কমে এল। সে শফিককে ডেকে বলল, তুমি জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্ব নিয়ে নাও। আমি দশ দিনের মধ্যে হেড অফিস থেকে অর্ডার আনিয়ে দিচ্ছি। ব্রিটিশগুলি হচ্ছে মহা হারামজাদা। টনি কোম্পানিটার বারটা বাজিয়ে দিয়ে গেছে। তোমার দায়িত্ব হচ্ছে সব ঠিকঠাক করা।

দশ দিনের মধ্যে অর্ডার আসার কথা। ছ মাস হয়ে গেল অর্ডারের কোনো খোঁজ নেই। যখনই কোনো রকম ঝামেলা উপস্থিত হয়, বড়োসাহেব শফিককে ডেকে বলে, ব্যাপারটা খুব ঠাণ্ডা মাথায় ট্যাকল কর শফিক, আমি হেড অফিসে টেলেক্স করছি।-কেন তারা তোমাকে এখনো কনফার্ম করছে না। এরা পেয়েছেটা কী? এভাবে কোনো আন্তর্জাতিক কোম্পানি চলে, না চলা উচিত?

অফিসে শফিকের অবস্থা একটু অস্বস্তিকর। সিদ্দিক সাহেব হচ্ছেন তার দু বছরের সিনিয়ার। আগে ছিলেন প্রডাকশন ম্যানেজার বছরখানেক আগে তাকে ঢাকা হেড অফিসে ট্রান্সফার করা হয়েছে। তাঁকে ডিঙিয়ে জেনারেল ম্যানেজার হওয়াটা তিনি সুনজরে দেখছেন না। শফিকের বিরুদ্ধে বেশ জোরালো একটি দলও তীর আছে। তাঁর আচার-আচরণে সেটা কখনো বোঝা যায় না। সিদ্দিক সাহেব অত্যন্ত মিষ্টভাষী ভদ্রলোক। সবার সঙ্গেই প্রচুর রসিকতা করেন।

শফিক তার ঘরে বসামাত্রই সিদ্দিক সাহেব ঢুকলেন, এবং তাঁর স্বভাবমতো বললেন, তারপর জি. এম. সাহেব, হোয়াট ইজ নিউ? সাহেবকে ঠাণ্ডা করেছেন?

হুঁ। এখন ঠাণ্ডা।

আসলে এই কোম্পানিতে একটা পোস্ট ক্রিয়েট করা দরকার, যে পোস্টের কাজই হবে সাহেবকে ঠাণ্ডা রাখা।

শফিক কিছু বলল না। সিদ্দিক সাহেব বললেন, আপনার জন্যে একটা দুঃসংবাদ আছে। দুঃসংবাদটা দিতে এলাম।

কী দুঃসংবাদ?

হিস্টোলিনের একটা নতুন ব্যাচের কাজ শুরু হয়েছে। প্রডাকশন ম্যানেজার জানিয়েছেন, এই ব্যাচটা নষ্ট হয়েছে। প্রায় এক লাখ টাকা নর্দমায় ফেলা হল।

সিদ্দিক সাহেব নির্বিকার ভঙ্গিতে সিগারেট ধরালেন। যেন তাঁর কিছুই যায়-আসে না। শফিক উদ্বিগ্ন স্বরে বলল, ব্যাচ বাতিল করা হয়ে গেছে?

না, এখনো হয়নি। তবে বাতিল করা ছাড়া উপায় নেই। ইমালসিফায়া নেই। কাজ যখন শুরু করা হল, তখন জানা গেল ইমালসিফায়ার নেই।

সেকি। আগে জানা যায় নি?

স্টোর বলেছিল আছে। সেই ভরসাতেই শুরু করা হয়েছিল। মাঝপথে বলা হল নেই।

শফিক উঠে দাঁড়াল। সিদ্দিক সাহেব বললেন, যাচ্ছেন কোথায়?

তেজগাঁয়ে যাই।

সেখানে গিয়ে করবেন কী?

খোঁজ নিই। কী হচ্ছে। অন্য কোথাও পাওয়া যায়। কিনা দেখি।

কোথায় পাবেন? আর পেলেও সেটা ব্যবহার করা যাবে না। কোম্পানির দেওয়া নিজস্ব জিনিস ব্যবহার করতে হবে। রেগুলেশন নাম্বার সিক্সটিন। কাজেই শান্ত হয়ে বসুন। চায়ের অর্ডার দিন। প্রডাকশন ম্যানেজার, স্টোর ইনচার্জ এবং চিফ কেমিষ্টকে ডেকে পাঠান। লিখিত রিপোর্ট দিতে বলুন। হেড অফিসে টেলেক্স পাঠান।

শফিক কপালের ঘাম মুছল। হাত বাড়াল টেলিফোনের দিকে। সিদ্দিক সাহেব বললেন, আপনার টেলিফোন করবার দরকার নেই, আমি ইতিমধ্যেই টেলিফোন করেছি। এবং ওরা খুব সম্ভব রওনাও হয়ে গেছে।

বড়োসাহেবকে খবর দেওয়া দরকার।

সিদ্দিক সাহেব অলস ভঙ্গিতে বললেন, তা দরকার। তবে এখন খবর না দেওয়াই ভালো। বড়োসাহেব ব্যস্ত আছেন। ডিকটেশন দেবার জন্যে মিস রীতাকে ডেকেছেন।

সিদ্দিক সাহেব মুচকি হ্রাসলেন। বড়ো সাহেব মাঝেমধ্যেই ডিকটেশন দেবার জন্যে মিস, রীতাকে ডেকে নেন নিজের কামরায়। তখন দরজা বন্ধ থাকে। এবং কিছুক্ষণ পরপর মিস, রীতার খিলখিল হাসি শোনা যায়।

মিস, রীতা গোমেজ এখানকার রিসিপশনিষ্ট! বয়স ত্ৰিশের কাছাকাছি হলেও এখনো চমৎকার শরীরের বাঁধুনি। চেহারায় স্নিগ্ধ ভাব আছে। খুবই আমুদে মেয়ে। বড়োসাহেবের সঙ্গে তার বিয়ে হয়ে যাবে এ-রকম একটা গুজব অনেক দিন থেকে শোনা যাচ্ছে।

শফিকের দিন শুরু হল খুবই খারাপভাবে। বড়োসাহেবের সঙ্গে কোনো কথা হল না। তিনি জানিয়ে দিলেন, আজ অত্যন্ত ব্যস্ত। অফিসের কোনো ব্যাপারে নাক গলাতে চান না।

দুপুরবেল শফিক রাজশাহী থেকে শাশুড়ির একটি চিঠি পেল। তাকেই লেখা।

বিলুর একটি ছেলে হইয়াছে গত বুধবারে রাত আটটায়। ছেলে ভালো আছে। কিন্তু বিলুর অবস্থা খুবই খারাপ। তাহাকে রাজশাহী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হইয়াছে। বেশ কয়েক বার রক্ত দেওয়া হইয়াছে। আমি কী করিব কিছুই বুঝিতে পারিতেছি না। জামাই ফরিদপুরে। তাহারও কোনো খোঁজ নাই। বাবা, তুমি কি নীলুকে সঙ্গে নিয়া একবার আসিবো? আমার মন বুলিতেছে, বিলুর দিন ফুরাইয়াছে–,

বিরাট চিঠি। শফিক চিঠি হাতে দীর্ঘ সময় চেয়ারে বসে রইল। নীলুকে আজ রাতের কোচেই পাঠানো দরকার। সঙ্গে কিছু টাকা পয়সাও দিয়ে দেওয়া দরকার। টাকার জোগাড় করা যায় কীভাবে?

 

বন্যার বাসা খুঁজে বের করতে বেশি ঝামেলা হল না। সুন্দর ছিমছাম ওয়ান বেডরুম এ্যাপার্টমেন্ট। বসার ঘরে বেতের সোফা। দেয়ালে জলরঙ ছবি। মুগ্ধ হবার মতো সাজসজ্জা। নীলুমুগ্ধ হয়ে গেল।

সুন্দর সাজিয়েছিস বন্যা!

আমি সাজাই নি। ও সাজিয়েছে। এসব দিকে আমার ঝোঁক নেই।

আর সব গেস্ট কোথায়?

তোকে এবং তোর বরকে ছাড়া আর কাউকে বলি নি। তাও তুই এলি একলা। এটা ভালোই হল। আমার বরের সঙ্গেও আমার ঝগড়া হয়েছে। ও সকালবেলা ঘর ছেড়ে চলে গেছে। এখন আমরা দু জনে মিলে গল্প করব। রাতে ভাত খেয়ে তারপর যাবি।

ঝগড়াটা হয়েছে কী নিয়ে?

রেগুলার ফিচার। পার্সোনালিটি ক্ল্যাশ। ও চায় আমার বাচ্চাকাচ্চা হোক। চাকরি ছেড়ে দিয়ে আমি ঘরসংসার করি।

তুই বাচ্চাকাচ্চা চাস না?

এখন চাই না। ও চাইলেই আমাকে বাচ্চা পেটে ধরতে হবে নাকি? পুরুষদের কথামতো সারা জীবন চলব। আমরা? আমাদের কোনো ইচ্ছা-অনিচ্ছা নেই? আমরা বানের জলে ভেসে এসেছি?

তুই এত রেগে যাচ্ছিস কেন?

রাগব না কেন? নিশ্চয়ই রাগব। মেয়ে হয়েছি বলে কি আমরা মানুষ না? বাদ দে এসব, তোর কথা বল। বরকে নিয়ে এলি না কেন?

ওর কী যেন কাজ পড়েছে। টঙ্গি যেতে হবে।

আর তুই বিশ্বাস করে বসে আছিস? তোকে বুঝ দেয়ার জন্যে বলা। কাজটাজ কিছুই না। স্ত্রীদের কারণে কিছু করবে না। এটা হচ্ছে পুরুষদের মটো। ওদের আমি হাড়ে হাড়ে চিনেছি।

সমগ্র পুরুষ জাতিটার উপর তুই রেগে আছিস।

তা আছি। তুই বোস, চা বানিয়ে আনি। রাতে কী খাবি, বল?

রাতে কিছু খাব না। একা একা এতদূর যেতে পারব না।

একা যেতে হবে না, আমি পৌঁছে দিয়ে আসব।

ভয় করবে না তোর?

আমার এত ভয়টয় নেই।

খুব সাহস তোর?

হ্যাঁ, খুব এক জন পুরুষ যদি রাত দশটায় হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরতে পারে, তাহলে এক জন মেয়েও পারে।

থাক, এত সাহস দেখানোর দরকার নেই।

বাসায় ফিরতে ফিরতে নীলুর সন্ধ্যা হয়ে গেল। বন্যা সঙ্গে আসতে চেয়েছিল, নীলু রাজি হয় নি। বন্যার স্বামী জহুর সাহেব চলে এসেছেন ততক্ষণে। বন্যা তাকেই বলল, তুমি নীলুকে পৌঁছে দাও না। বেচারি একা একা যেতে ভয় পায়। একটা বেবিট্যাক্সি নিয়ে চলে যাওঁ। কী সর্বনাশের কথা! অচেনা পুরুষমানুষের সঙ্গে সে বাসায় ফিরবো? নীলু আঁৎকে উঠে বলেছে, কিছু লাগবে না, আমি চলে যেতে পারব।

ঠিক তো?

হুঁ, ঠিক।

ভয় পাবি না তো?

না।

নীলু ভয় পায় নি। তার মতো একা একা অনেক মেয়েই যাচ্ছে। তা ছাড়া মাত্র সন্ধ্যা হয়েছে। বাসার কাছাকাছি এসে মনে হল শফিক খুব রাগ করবে। শুধু শফিক না, তার শাশুড়িও রাগ করবেন। আর শাশুড়ির রাগ মানেই ভূমিকম্প। কী যে অবস্থা হবে, কে জানে!

কিন্তু আশ্চর্য, কেউ কিছু বলল না। সন্ধ্যা পার করে বাড়ি ফেরা যেন তেমন কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। শফিক বলল, তোড়াতাড়ি একটু গোছগাছ করে নাও নীলু, নাইট কোচে রাজশাহী যাবে। তোমার বোনের শরীর ভালো না।

নীলু আতঙ্কিত স্বরে বলল, মারা গেছে?

না, না। চিঠি পড়ে দেখ। অবস্থা ভালো না, তবে বেঁচে আছেন। তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও, রফিক তোমার সঙ্গে যাবে।

টুনি, টুনি?

টুনি থাকবে এখানেই। অসুবিধা হবে না। তুমি যাও।

বিলুআপা বেঁচে আছে তো?

বললাম না, ভালোই আছেন। চিঠিটা পড়ে দেখ, চিঠিতেই সব লেখা আছে। তেমন খারাপ হলে টেলিগ্রামই আসত। আসত না?

শফিকের কথা সত্যি না। বিকাল পাঁচটায় বিলুর মৃত্যুসংবাদ নিয়ে টেলিগ্রাম এসেছে। নীলুকে মৃত্যুসংবাদ দেওয়া হবে কি হবে না, এই নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। খবরটা দিতেই চেয়েছিল। তার মতে খবর না দিলে সে বোনের সঙ্গে দেখা হবার আশা নিয়ে যাবে এবং যখন দেখবে বোন বেঁচে নেই, তখন অনেক বড়ো শক পাবে। শফিকের যুক্তি অন্যদের ভালো লাগে নি।

নীলু চলে যাবার পর শফিকের মনে হল, কাজটা ঠিক হল না। তার সঙ্গে যাওয়া উচিত ছিল। সে চলে গেলে বিটা ফার্মাসিটিক্যালস-এর সব কাজ আটকে থাকবে, এই ধারণাটা ঠিক না। কারো জন্যেই কিছু আটকে থাকে না। স্ত্রীর দুঃসময়ে স্বামী পাশে এসে না দাঁড়ানটা দুঃখজনক। যে-কোনো স্ত্রী এইটুকু তার স্বামীর কাছ থেকে আশা করতে পারে, এবং আশা করা উচিত।

বাড়ি খালি-খালি লাগছে। বড়ো খারাপ লাগছে বউমার জন্যে। এটা তাঁর কথার কথা নয়, তিনি ঠিকমতো খেতে পারলেন না। আধখাওয়া প্লেট ঠেলে সরিয়ে উঠে পড়লেন। রাতে শোবার সময় হোসেন সাহেবকে বললেন, তোমার ছেলের এমনই রাজকাৰ্য পড়ে গেছে, বৌটার সঙ্গে যেতে পারল না। যত অপদাৰ্থ আমি পেটে ধরেছি! এই অপদার্থগুলির কপালে দুঃখ আছে।

হোসেন সাহেব ক্ষীণকণ্ঠে বললেন, তুমি শফিককে বললে না কেন সঙ্গে যেতে?

কেন আমি বলব? এটা সে নিজে কেন বোঝে না! দুটা পয়সা রোজগার করে সে কী ভেবেছে? সবার মাথা কিনে নিয়েছে? লাটসাহেব হয়ে গেছে?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *