॥ ৮ ॥
পাণ্ডবরা যে রাজ্যে ছদ্মবেশে অজ্ঞাতবাস করছিলেন, সেই রাজ্যের সেনাপতি ছিলেন কীচক। সবাই তাঁকে খুব বড় বীর যোদ্ধা মনে করত। তিনি তো মারা গিয়েছেন, এখন কোনও দেশ যদি এই রাজ্য আক্রমণ করে, তা হলে বৃদ্ধ বিরাট রাজা নিশ্চয়ই হেরে যাবেন। তাই কৌরবরা বহু সৈন্যসামন্ত নিয়ে মৎস্যরাজ্য জয় করার জন্য ধেয়ে এলেন।
বিরাট রাজা যথাসাধ্য লড়াই করতে গেলেন, কিন্তু বেশিক্ষণ পারলেন না, ফিরে এলেন রাজধানীতে। কৌরবরা যেমন ইচ্ছে লুটপাট চালাতে লাগলেন। এদেশের রাজপুত্রের নাম উত্তর, তিনি খুব গর্ব করে বলতে লাগলেন, “আমি ইচ্ছে করলেই ভীষ্ম, কর্ণ, দ্রোণ, দুর্যোধন সবাইকে হারিয়ে দিতে পারি। কিন্তু আমার রথের কোনও সারথি নেই, একজন ভাল সারথি পেলে আমি দেখিয়ে দিতাম!”
তা শুনে দ্রৌপদী জানালেন যে, বৃহন্নলা নামে যে-লোকটি নাচ-গান শেখান, তিনি ভাল রথ চালাতেও জানেন। রাজকুমার তখন তাঁকেই সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন যুদ্ধযাত্রায়।
তারপর বৃহন্নলা তো খুব জোরে চালিয়ে দিলেন রথ। কিছু দূর গিয়ে দেখা গেল, বিরাট সমুদ্রের মতো অসংখ্য কৌরব সৈন্য, তার মধ্যে বড়-বড় বীরদের বিশাল-বিশাল রথ। তা দেখেই উত্তরের মুখ শুকিয়ে গেল। তিনি বললেন, “সারথি তুমি রথ ঘোরাও, আমি এদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারব না।”
বৃহন্নলা বললেন, “সে কী রাজকুমার, তুমি খানিক আগেই রাজসভায় দাঁড়িয়ে কত আস্ফালন করছিলে, এখন ফিরে যেতে চাইছ? এটা তোমাকে মানায় না!”
উত্তর বললেন, “ওরে বাবা রে, এদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গেলে আমি বাঁচব না। আগে তো নিজের প্রাণ! তুমি ফিরে চলো, ফিরে চলো”
বৃহন্নলা বললেন, “ক্ষত্রিয়দের এ রকম ব্যবহার করতে নেই। যুদ্ধ শুরু করেই দ্যাখো না!”
বৃহন্নলা কিছুতেই রথ ঘোরাতে রাজি হচ্ছেন না দেখে রাজকুমার লাফিয়ে নেমে দৌড়ে পালাতে লাগলেন। বৃহন্নলাও রথ ছেড়ে তাড়া করতে লাগলেন তাঁকে।
অর্জুন তো বৃহন্নলা হয়ে মেয়েদের মতো সাজ করে আছেন। কাঁচুলি আর ঘাগরা পরা, চুলে লম্বা বেণী। সেরকম একজন রাজকুমারকে তাড়া করছেন দেখে শত্রুপক্ষের সৈন্যরা হাহা-হিহি করে হাসতে লাগল।
একশো পা দৌড়ে গিয়ে অর্জুন রাজকুমারের চুলের মুঠি চেপে ধরলেন।
রাজকুমার কাঁদো-কাঁদো হয়ে বললেন, “বৃহন্নলা, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি বাঁচতে চাই। আমি তোমাকে অনেক স্বর্ণমুদ্রা, মণিমাণিক্য, রথ আরও অনেক কিছু দেব, তুমি আমাকে রাজধানীতে ফেরত নিয়ে যাও।”
অর্জুন তাঁকে টানতে-টানতে রথের কাছে নিয়ে এসে বললেন, “তুমি যখন পারবে না, তখন আমি নিজেই যুদ্ধ করব। তুমি এখন রথ চালাও।”
রাজকুমার বাধ্য হয়ে সারথির আসনে বসে অর্জুনের নির্দেশ মতো রথটা নিয়ে এলেন একটা শমী গাছের কাছে। অর্জুন বললেন, “তুমি এই গাছের উপরে ওঠো, এক জায়গায় দেখবে পাতার আড়ালে অনেক অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে রাখা আছে, সেগুলো নামিয়ে আনো।”
রাজকুমার সেই বিরাট বোঝাটা নামিয়ে আনার পর অত দারুণ-দারুণ অস্ত্র দেখে বিস্ময়ে একেবারে হতবাক, “এই সব অস্ত্র কাদের?”
অর্জুন বললেন, “পাণ্ডবদের।”
রাজকুমার জানতে চাইলেন, “পাণ্ডবরা কোথায়?”
অর্জুন তখন স্মিত হাস্যে নিজের পরিচয় দিলেন। তাঁর অন্য চার ভাই ও দ্রৌপদী যে কোন ছদ্মবেশে আছেন তাও জানালেন।
মেয়েদের মতো সাজ, নাচ-গান শেখায়, তিনিই মহাবীর অর্জুন? প্রথমে তো বিশ্বাসই হতে চায় না। তারপর আরও একটুক্ষণ কথাবার্তা বলে বুঝতে পেরে তিনি অর্জুনকে অভিবাদন করে বললেন, “আপনার দেখা পেয়েছি, আমি ধন্য। না-জেনে আপনাকে খারাপ কথা বলেছি, সে জন্য আমাকে ক্ষমা করুন।”
অর্জুন যুদ্ধের সাজ-পোশাক পরে নিয়ে তাঁর গাণ্ডীব ধনুতে টংকার দিলেন। সেই বজ্রের মতো শব্দ শুনে কৌরবপক্ষের সবাই বুঝে গেলেন, ইনি তো অৰ্জুন ছাড়া আর কেউ হতে পারেন না।
অনেকে ভয় পেলেও দুর্যোধন আনন্দের সঙ্গে বললেন, “বাঃ, তা হলে তো বেশ হল। চুক্তি ছিল যে পাণ্ডবরা বারো বছর বনবাস করবে, তারপর এক বছর অজ্ঞাতবাস। সেই অজ্ঞাতবাসের সময় না-ফুরোতেই ওরা ধরা পড়ে গেল। এবার ওদের আবার বারো বছরের জন্য বনবাসে যেতে হবে।”
তখন ভীষ্ম গণনা করে দেখে বললেন, “না, পাণ্ডবরা ধরা পড়েনি, ওদের অজ্ঞাতবাস শেষ হয়ে গিয়েছে। অর্জুন তা দেখেশুনেই আত্মপ্রকাশ করেছে।”
দুর্যোধন বললেন, “আসুক না অর্জুন। আমরা যুদ্ধ করে ওদের এখানেই শেষ করে দেব।”
শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ।
এক দিকে অর্জুন, অন্য দিকে ভীম প্রবল বিক্রমে আক্রমণ করলেন কৌরবদের। অনেক দিন এঁরা যদিও যুদ্ধ করেননি। কিন্তু অপমানের জ্বালায় এমন জ্বলছেন যে, তাঁদের তেজের সামনে কৌরবপক্ষের বড়-বড় যোদ্ধারাও দাঁড়াতে পারছেন না। সেই ভয়ংকর যুদ্ধ দেখে রাজকুমার উত্তর ভয়ে কাঁপতে লাগলেন।
একসময় অর্জুন সম্মোহন নামে এমন একটা বাণ ছুড়লেন, যাতে ভীষ্ম ছাড়া অন্য সব কৌরবপক্ষের বীরেরা অজ্ঞান হয়ে গেলেন। তখন অর্জুন রাজকুমারকে বললেন, “তুমি ভীষ্মকে এড়িয়ে দ্রোণ, কৃপ, কর্ণ, অশ্বত্থামা আর দুর্যোধনের উপরের জামাগুলো খুলে নিয়ে এসো। ততক্ষণ আমি ভীষ্মকে সামলাচ্ছি।”
উত্তর দৌড়ে গিয়ে সকলের জামাগুলো খুলে নিয়ে এলেন।
একটু পরে জ্ঞান ফিরে পেয়ে দুর্যোধন দারুণ রেগে গিয়ে ভীষ্মের কাছে এসে বললেন, “পিতামহ, আপনি যেমন করে পারেন, অর্জুনকে আটকে রাখুন।”
ভীষ্ম হেসে বললেন, “তুমি এখন এই কথা বলছ! তুমি যখন অজ্ঞান হয়ে ছিলে, তখন অর্জুন তো তোমাকে মেরে ফেলতেই পারত। সেরকম কিছুই করেনি। এখন শুধু-শুধু অর্জুনদের সঙ্গে যুদ্ধ করে কী লাভ? বরং এখন ফিরে চলো। ফিরে গিয়ে ধৃতরাষ্ট্রকে পাণ্ডবদের খবর জানাও।”
কৌরবপক্ষের অন্য বীররাও ভীষ্মকে সমর্থন করলেন।
কৌরবসৈন্যরা ফিরে যাচ্ছে দেখে এ রাজ্যের সৈন্যরা উল্লাসে জয়ধ্বনি করতে লাগল।
অর্জুন রাজকুমারকে বললেন, “তুমি রাজধানীতে গিয়ে আগেই তোমার বাবার কাছে আমাদের পরিচয় দিও না। আস্তে-আস্তে জানাতে হবে। তুমি খবর পাঠাও যে তুমি নিজেই এই যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছ!”
দূতের মুখে এই সংবাদ শুনে বিরাট রাজার আনন্দের অবধি রইল না। সবাইকে ডেকে-ডেকে ছেলের বীরত্বের কথা শোনাতে লাগলেন। সবাইকে আদেশ দিলেন রাজধানী আলো দিয়ে সুন্দর করে সাজাতে। রাজকুমার কখন ফিরবেন সেই অপেক্ষায় অধীর হয়ে তিনি কঙ্কের সঙ্গে পাশা খেলতে বসলেন। আর বারবার বলতে লাগলেন, “শুনেছ আমার ছেলের কথা। সে কত বড় বীর! কৌরবদের সবাই ভয় পায়, কৌরবদেরও সে তাড়িয়ে দিয়েছে।”
কঙ্কবেশী যুধিষ্ঠির তো সবই বুঝলেন। তিনি একবার বলে ফেললেন, “বৃহন্নলা যার রথের সারথি, সে তো জিতবেই!”
তা শুনে বিরাট রাজা খুব রেগে গিয়ে বললেন, “তুমি তো অতি বাজে লোক! তুমি আমার ছেলের বীরত্বের কথা গ্রাহ্য না করে বৃহন্নলার প্রশংসা করছ? মুখ সামলে থাকো।”
একটু পরে বিরাট রাজা আবার তাঁর ছেলের নামে গর্ব করতেই যুধিষ্ঠির আবার বলে ফেললেন, “ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণের সঙ্গে বৃহন্নলা ছাড়া কেউ এই যুদ্ধ করতে পারে?”
এবার বিরাট রাজা আরও রেগে গিয়ে বললেন, “কী, তোমার যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা? এখনও বৃহন্নলার প্রশংসা!”
তিনি হাতের একটা পাশা ছুড়ে মারলেন যুধিষ্ঠিরের মুখে। তাঁর নাক দিয়ে ঝরঝর করে রক্ত পড়তে লাগল। আড়াল থেকে দ্রৌপদী তা দেখেই একটা পাত্র নিয়ে দৌড়ে এসে যুধিষ্ঠিরের নাকের কাছে ধরলেন।
ওদিকে অর্জুন সেই শমী গাছটার কাছে গিয়ে অস্ত্রগুলো লুকিয়ে রাখলেন। তারপর যুদ্ধের পোশাক খুলে আবার পরে নিলেন বৃহন্নলার বেশ। তারপর রাজকুমারকে রথে বসিয়ে নিজে সারথি হয়ে ফিরে এলেন রাজধানীতে। কৌরবদের পোশাকগুলো রাজবাড়ির মেয়েদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে দেখা করতে গেলেন রাজার সঙ্গে।
দ্বারপাল যখন এসে খবর দিল যে, ওই দু’জন আসছেন দেখা করতে, তখন যুধিষ্ঠির তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন, “বৃহন্নলাকে এখন দেখা করতে বারণ করো! তার আসার দরকার নেই!”
যুধিষ্ঠিরকে আহত অবস্থায় দেখলে অর্জুন নিশ্চয়ই রেগে গিয়ে বিরাট রাজার পুরো রাজ্যটা ধ্বংস করে দিতেন, রাজকুমার উত্তর সেখানে এসে বাবাকে প্রণাম করার পর যুধিষ্ঠিরের দিকে তাকিয়ে তাঁর রক্তাক্ত মুখ দেখে আঁতকে উঠে বললেন, “এ কী? এঁর এই অবস্থা হল কী করে?”
বিরাট রাজা বললেন, “এ লোকটার এত স্পর্ধা, তোমার বদলে বৃহন্নলার প্রশংসা করছিল। একে শাস্তি দেওয়া উচিত।”
রাজকুমার বললেন, “সর্বনাশ! বাবা, উনি ইচ্ছে করলে আমাদের সবাইকে ধ্বংস করে দিতে পারেন। শিগগির এঁর কাছে ক্ষমা চাও।”
রাজা বিরাট ঘাবড়ে গিয়ে যুধিষ্ঠিরের কাছে ক্ষমা চাইতে গেলে যুধিষ্ঠির বললেন, “আমার রাগ নেই, আমি আপনাকে আগেই ক্ষমা করেছি।”
এর দু’-তিন দিনের মধ্যেই পাণ্ডবদের পরিচয় সব জায়গায় জানাজানি হয়ে গেল। সারা রাজ্য জুড়ে চলল উৎসব। পাণ্ডবরা ছদ্মবেশ ছেড়ে রাজপোশাক পরে বসলেন রাজসভায়।
সেখানেই রাজ্যের রাজকন্যা উত্তরার সঙ্গে অর্জুনের ছেলে অভিমন্যুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। কৃষ্ণ, বলরাম, আরও অনেকে সুভদ্রা ও অভিমন্যুকে নিয়ে এলেন। দ্রৌপদীর বাপের বাড়ি থেকেও এলেন আত্মীয়-স্বজনরা, খুব ধুমধাম করে হল বিয়ের অনুষ্ঠান।
এত বছর দুঃখ-কষ্ট ভোগ করার পর এখন পাণ্ডবদের সুখের দিন। পাণ্ডবরা সব শর্ত মেনেছেন। বারো বছর বনবাস আর এক বছর অজ্ঞাতবাসে ঠিকঠাক কাটিয়েছেন। যুধিষ্ঠির পাশা খেলায় যে রাজ্য হারিয়েছিলেন, তা তো এখন ফিরে পাওয়ার কথা। কিন্তু গুপ্তচরদের মুখে, আরও নানা সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, দুর্যোধন নাকি কিছুতেই রাজ্য ফিরিয়ে দিতে রাজি নন। ভীষ্ম, দ্রোণ, বিদুর এমনকী, বাবার কথাও শুনছেন না দুর্যোধন। এরই মধ্যে যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন রাজার কাছে দূত পাঠিয়ে তাঁদের সমর্থন চাইছেন।
শান্তিপ্রিয় যুধিষ্ঠির যুদ্ধ চান না। মহাবীর অর্জুনও যুদ্ধের পক্ষপাতী নন। কিন্তু প্রচুর সৈন্যসামন্ত নিয়ে কৌরবরা যদি হঠাৎ আক্রমণ করে বসে, সেজন্যও তো তৈরি থাকা দরকার। পাণ্ডবরাও দূত পাঠালেন অনেক রাজ্যে। তখন দেখা গেল, সারা ভারতের বেশ কিছু রাজা কৌরবপক্ষে যোগ দিতে চান, আর অনেক রাজা সমর্থন করেন পাণ্ডবদের। দেশটাই দু’ ভাগে ভাগ হয়ে গেল।
কৃষ্ণ যাবেন কোন পক্ষে?
কৃষ্ণ পাণ্ডবদের মামাতো ভাই। আবার কৃষ্ণের এক ছেলে শাম্ব দুর্যোধনের মেয়েকে বিয়ে করেছে। দু’ পক্ষেই তাঁর আত্মীয় আর কুটুম্ব।
অর্জুন একা চলে গেলেন দ্বারকায়। দুর্যোধনও একই উদ্দেশ্যে একটু আগেই পৌঁছে গিয়েছেন সেখানে। কৃষ্ণ তখন ঘুমোচ্ছেন। দুর্যোধন রাজার মতো বসে রইলেন কৃষ্ণের মাথার কাছে উচ্চ আসনে। আর অর্জুন বসলেন কৃষ্ণের পায়ের কাছে।
কৃষ্ণ চোখ মেলে দু’জনকে দেখার পর জিজ্ঞেস করলেন, “কী ব্যাপার? তোমরা দু’জনেই এখানে উপস্থিত কী জন্য?”
দুর্যোধন হেসে বললেন, “কারণটা তুমি ঠিকই বুঝতে পারছ। আমি চাই, তুমি আমাদের পক্ষে যোগ দাও। জানি, আমার আর অর্জুনের সঙ্গে তোমার সমান সম্পর্ক, কিন্তু আমি আগে এসেছি। যে আগে আসে, তার অনুরোধই তো আগে রাখতে হয়।”
কৃষ্ণ বললেন, “দুর্যোধন, তুমি যা বললে, তা ঠিক। তুমিই আগে এসেছ। কিন্তু আমি চোখ মেলে অর্জুনকেই আগে দেখেছি। আমি দু’জনকেই সাহায্য করতে চাই। এক পক্ষে থাকবে আমার প্রায় দশ কোটি নারায়ণী সেনা। তারা সাংঘাতিক যোদ্ধা। অন্য পক্ষে শুধু একা আমি, কিন্তু আমি যুদ্ধ করব না, শুধু পরামর্শ দিতে পারি। অর্জুন তোমার চেয়ে বয়সে ছোট, সেই জন্য তাকেই আগে বেছে নিতে দাও।”
অর্জুন সঙ্গে-সঙ্গে বললেন, “আমি শুধু তোমাকেই চাই।”
দুর্যোধন দশ কোটি সৈন্য পেয়ে খুব খুশি। কৃষ্ণ তো যুদ্ধ করবেনই না। বলেছেন।
এর পর বলরামের কাছে যাওয়া হল। তিনি বললেন, তিনি কোনও পক্ষেই যোগ দিতে চান না।
যুদ্ধ কি তা হলে সত্যিই লাগবে? কোনও রকমেই আটকানো যায় না? শেষ চেষ্টা হিসেবে কৃষ্ণকে কৌরবসভায় পাঠাবার প্রস্তাব হল।
যুধিষ্ঠির এখনও যুদ্ধ চান না। এমনকী, পুরো রাজ্যের বদলে দুর্যোধন যদি তাঁদের পাঁচখানা মাত্র গ্রাম দিতে রাজি থাকেন, তাও তিনি মেনে নেবেন। অর্জুনও যুদ্ধ না হওয়াটাই ভাল মনে করেন। এমনকী, ভীমও বলে ফেললেন যে, কৌরব ও পাণ্ডবরা তো একই বংশ, যুদ্ধে দু’ পক্ষেরই বিনাশ হবে। তার চেয়ে শান্তির সপক্ষে সন্ধি করাই তো ভাল!
দ্রৌপদী কাঁদতে-কাঁদতে কৃষ্ণকে বললেন, “মধুসূদন, তুমি তো সবই জানো। ধিক অর্জুনের বীরত্ব আর ভীমসেনের শক্তি। তাঁরা কী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, ভুলে গিয়েছেন? কৌরবসভায় আমার কী অপমান হয়েছিল, দুঃশাসন আমার চুল টেনেছিল, আমি তখন তোমাকে স্মরণ করেছিলাম। আমার স্বামীরা এখন প্রতিশোধ নেবার বদলে ধর্মের কথা বলছেন।”