০৮. উধাও স্থূলকায়া

০৮. উধাও স্থূলকায়া

খুব অল্প সময়ের মধ্যে ডিফেন্স এগেনস্ট দ্য ডার্ক আর্টস ছাত্রদের সবচেয়ে প্রিয় ক্লাশ হয়ে গেল। শুধুমাত্র ড্ৰকো ম্যালফয় এবং তার স্লিথারিন দঙ্গলই প্রফেসর লুপিনের বিরুদ্ধে কথা বলত।

ওর পোশাকের দিকে তাকাও, পাশ দিয়ে প্রফেসর লুপিন যাওয়ার সময় হয়ত সরবে ফিস ফিস করছে ম্যালফয়। আমাদের বাড়ীর পুরনো গৃহ-ডাইনীর মতো কাপড় পড়েছেন উনি।

এ ছাড়া আর কারো মাথা ব্যথা ছিল না প্রফেসরের পোশাক নিয়ে, তার কাপড় তালি দেয়া, না ছেঁড়া এটা কারো নজরেই পড়তো না। তার পরের ক্লাশগুলোও প্রথমটার মতোই ইন্টারেস্টিং ছিল। বোগার্টস-এর পর ওরা পড়েছে রেড ক্যাপ সম্পর্কে, পড়েছে ছোট ছোট কদাকার ভূতের কথা। যেখানেই রক্তপাত হয় সেখানেই ওগুলো ওত পেতে থাকে; তা সে প্রাসাদের মাটির তলার অন্ধ কুঠুরিতেই হোক অথবা পরিত্যক্ত যুদ্ধক্ষেত্রের গর্তেই হোক, যেখানেই হোক একাকী পথহারা কাউকে পেলেই হলো, অমনি তাকে মুগুরপেটা করে রক্তাক্ত করার জন্য ওত পেতে থাকে। রেড ক্যাপের পর ওরা কাপ্লাস–কে মোকাবেলা করল। কাপ্লাস মানে পানিতে থাকা লতানো একপ্রকার জীব বিশেষ, দেখতে আঁশযুক্ত বানরের মতো, হাতের আঙুলগুলো জোড়া লাগানো, সব সময় নিশপিশ করছে পানিতে হেঁটে আসা মানুষের গলা টিপে মারবার জন্যে।

হ্যারি শুধু ভাবত অন্য ক্লাশগুলোও যদি এমনই ভালো লাগত। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ক্লাশ হচ্ছে পোশন। আজকাল স্নেইপ যেন বিশেষভাবে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে গেছে, এবং কারো কোন ধারণাই নেই কেন। ঘটনাটা দাবানলের মতো ছড়িয়ে গেছে; বোগার্টের স্নেইপের রূপ ধারণ এবং যেভাবে নেভিল ওটাকে তার দাদীর পোশাক পরিয়েছে কোন কিছুই আর কারো জানতে বাকী নেই। ব্যাপারটা সেইপের কাছে মোটেই উপভোগ্য মনে হয়নি। প্রফেসর লুপিনের নাম উচ্চারণ মাত্রই তার চোখ ভীতিকরভাবে জ্বলে ওঠে। এর পর নেভিলের ওপর তার উৎপীড়ন বেড়ে গেল অনেক বেশি।

বেঢপ আকৃতি আর প্রতাঁকের অর্থ বের করতে করতে এবং তার দিকে তাকানো প্রফেসরের ট্রিলনির পানিতে ভরে ওঠা চোখের দৃষ্টি উপেক্ষা করতে করতে দম আটকানো ক্লাশ রুমের সময়টাও হ্যারির কাটছে ভয়ে ভয়ে। যদিও ক্লাশের অনেকেই প্রফেসর ট্রিলনিকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করে তবুও সে প্রফেসরকে পছন্দ করতে পারেনি। লাঞ্চের সময় পার্বতী পাতিল আর ল্যাভেন্ডার ব্রাউন প্রফেসর ট্রিলনির টাওয়ার–রুমে ঘুরে বেড়ায় আর প্রতি বারই একটা বিরক্তিকর সবজান্তার ভাব নিয়ে ফিরে আসে। হ্যারির সঙ্গে কথা বলার সময় ফিস ফিস করে কথা বলে ওরা যেন মৃত্যু সজ্জায় শুয়ে আছে হ্যারি।

এখন আর কেয়ার অফ ম্যাজিক্যাল ক্রিয়েচার্স ক্লাশটা কেউই পছন্দ করছে, ঘটনাবহুল প্রথম ক্লাশটার পর ওটা একেবারেই নিরস হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে হ্যাগ্রিড নিজের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। ওরা এখন একের পর এক ক্লাশে ফ্লোবারওয়ার্ম-এর পরিচর্যা বিষয়ে শিখছে। ফ্লোবারওয়ার্ম, সবচেয়ে বিরক্তিকর জীব।

এগুলোর যত্ন নিয়ে সময় নষ্ট করবে কেন কেউ? বলল রন ঘন্টাখানেক ফ্লোবারওয়ার্মকে লেটুস খাওয়ানোর কসরৎ করার পর।

অক্টোবরের শুরুতে অবশ্য হ্যারি করার মতো আরো কিছু কাজ পেয়ে গেল, এমন আনন্দদায়ক যে অপছন্দের ক্লাশগুলোকে ভুলিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। কুইডিচ মওশুম চলে এসেছে, নতুন মওশুমের কৌশল ঠিক করবার জন্যে গ্রিফিন্ডর টিমের ক্যাপ্টেন অলিভার উড সভা ডাকল এক বৃহস্পতিবার।

কুইডিচ টিমে সাতজন খেলোয়াড় থাকে: তিনজন চেসার, যাদের কাজ হচ্ছে পিচের দুই প্রান্তের পঞ্চাশ ফুট উঁচু ধাতব বৃত্তের মধ্যে দিয়ে কোয়াল (ফুটবলের সমান লাল বল) পাঠিয়ে গোল করা; দুইজন বিটার, দুটি ভারী ব্যাট দিয়ে এরা উড়ন্ত ব্লাজার (দুটি ভারী কালো বল) ফেরানো ওদের কাজ, ব্লাজারগুলো উড়তে উড়তে খেলোয়ারদের আক্রমণ করে; একজন কীপার, গোলরক্ষণই যার কাজ; এবং একজন সীকার, যার কাজ সবচেয়ে কঠিন, গোল্ডেন স্নিচ (আখরোটের সমান ছোট কিন্তু পাখাওয়ালা বল) ধরা, স্নিচটা ধরতে পারলেই খেলা শেষ হয় এবং সীকার-এর টিম পায় অতিরিক্ত একশত পঞ্চাশ পয়েন্ট।

অলিভার উড হৃষ্ট পুষ্ট লম্বা চওড়া সতরো বছরের তরুণ, হোগার্টস-এর সপ্তম এবং শেষ বর্ষে পড়ছে। অন্ধকার হয়ে আসা কুইডিচ পিচের প্রান্তের কাপড় বদলাবার রুমটার মধ্যে ঠাণ্ডায় ছয় সঙ্গীর সঙ্গে কথা বলবার সময় ওকে বেশ বেপরোয়া মনে হচ্ছিল।

এটা আমাদের শেষ সুযোগ–আমার শেষ সুযোগ কুইডিচ কাপটা জেতার, সে বলল ওদের পায়চারি করতে করতে। এই বছরের শেষেই আমাকে চলে যেতে হচ্ছে। এরপর আমি আর কোনো শট নিতে পারব না।

গত সাত বছর ধরে জেতেনি গ্রিফিন্ডর। ঠিক আছে, আমাদের ভাগ্যটাই সবচেয়ে খারাপ ছিল গতবছর টুর্নামেন্টই বাতিল হয়ে গেলো  ঢোক গিলল উড, যেন স্মৃতিটা এখনও তার গলায় দলা পাকায়। কিন্তু আমরা এও জানি যে আমাদেরই রয়েছে স্কুলের–সবচেয়ে ভালো–রাড়ি–টিম, বলল সে হাতের তালুতে ঘুষি মেরে, ওর চোখে পুরনো সেই উন্মাদের দৃষ্টি জ্বলে উঠতে দেখা গেল।

আমাদের রয়েছে সুপার তিনজন চেসার।

অ্যালিসিয়া পিনেট, অ্যাঞ্জেলিনা জনসন এবং কেটি বেল-এর দিকে আঙুল তাক করল উড।

আমাদের দুজন অপরাজেয় বিটার রয়েছে।

হয়েছে এবার থামো উড, আমাদের ব্ৰিত করছ তুমি অলিভার, একসাথে বলে উঠল ফ্রেড আর জর্জ উইজলি, লজ্জা পাওয়ার ভান করে।

এবং আমাদের এমুন একজন সীকার রয়েছে যে কোনদিনই আমাদের ম্যাচ জেতার ব্যাপারে অসফল হয়নি! বলল উড প্রচণ্ড গর্বের সঙ্গে উজ্জ্বল দৃষ্টিতে হ্যারির দিকে তাকিয়ে। এবং আমি, সে যোগ করল, যেন পরে মনে পড়েছে এমনভাবে।

আমরা মনেকরি তুমিও খুব ভালো, অলিভার, বলল জর্জ।

ক্র্যাকিং কীপার, বলল ফ্রেড।

কথা হচ্ছে, বলে চলল উড, আবার পায়চারি করতে শুরু করেছে সে, গত দুবছর ধরে কুইডিচ কাপটা আমাদেরই জেতা উচিৎ ছিল। হ্যারি যখন থেকে টিমে যোগ দিয়েছে তখন থেকেই আমি ভেবেছিলাম কাপটা আমাদেরই হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা জিততে পারিনি, এবং সম্ভবত এ বছরই ওটা জেতার সর্বশেষ সুযোগ 

এত মনমরা হয়ে কথা কয়টি বলল উড যে ফ্রেড এবং জর্জও সহানুভূতিশীল হয়ে উঠল।

অলিভার, এ বছরটা আমাদের বছর, বলল ফ্রেড।

আমরা এবার জিতবই, অলিভার! বলল অ্যাঞ্জেলিনা।

অবশ্যই, বলল হ্যারি।

দৃঢ় সংকল্প নিয়েই গ্রিফিন্ডর টিম ট্রেনিং শুরু করল, সপ্তাহে তিন সন্ধ্যা। ঠান্ডা বাড়ছে, আবহাওয়াও ভেজা, রাতের অন্ধকার বাড়ছে, কিন্তু কাদা, বাতাস অথবা বৃষ্টি কোনটাই রূপালী কুইডিচ কাপ জেতার ব্যাপারে হ্যারির দৃষ্টিকে স্নান করতে পারছে না।

ট্রেনিং-এর পর এক সন্ধ্যায় গ্রিফিন্ডর কমনরুমে ফিরে এলো হ্যারি, ঠাণ্ডায় জমে গেছে কিন্তু প্র্যাকটিস ভালোভাবে চলছে বলে খুশি, কিন্তু কমনরুমে উত্তেজিত গুঞ্জন।

কী হয়েছে? জানতে চাইল সে রন আর হারমিওনের কাছে, আগুনের পাশে ভালো দুটো আসনে বসে ছিল ওরা দুজনে, জ্যোতির্বিদ্যার জন্যে কয়েকটি তারার তালিকা তৈরি করছে।

প্রথম হগসমিড ছুটি, বলল রন পুরনো নোটিস বোর্ডে টাঙানো নোটিসটা দেখিয়ে।হ্যালোঈন, অক্টোবরের শেষে।

একসেলেন্ট, বলল ফ্রেড, হ্যারিকে অনুসরণ করে ছবির ফুটো দিয়ে এসেছে সেও। জোঙ্কোর দোকানে যেতে হবে আমাকে, বন্দুকের ছোট ছোট গুলি প্রায় শেষ হয়ে গেছে।

হ্যারির পাশে একটা চেয়ারে ধপ করে বসল হ্যারি। ওর উচ্ছাস কমতে শুরু করেছে। হারমিওন যেন ওর মনের কথা পড়তে পারছে।

হ্যারি, আমি নিশ্চিত যে পরেরবার তুমিও যেতে পারবে, বলল সে। ওরা দ্রুতই ব্ল্যাককে ধরে ফেলবে, এরই মধ্যে ওকে দেখা গেছে।

হগসমিডে কিছু করবার চেষ্টা করবে এত বোকা নয় ব্ল্যাক, বলল রন। ম্যাকগোনাগলকে জিজ্ঞাসা কর এবার তুমি যেতে পারো কি না, হ্যারি, পরেরটা হয়তো কয়েক যুগেও হবে না।

রন! বলল হারমিওন। হ্যারির স্কুলেই থাকার কথা

থার্ড ইয়ারের একমাত্র ওই স্কুলে থেকে যেতে পারে না, বলল রন। হ্যারি যাও, ম্যাকগোনাগলকে জিজ্ঞাসা করো।

হু, মনে হয় আমি জিজ্ঞাসাই করব, বলল হ্যারি মনস্থির করে।

তর্ক করবার জন্যে মুখ খুলতে যাচ্ছিল হারমিওন, কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে কশ্যাঙ্কস আলতো করে লাফিয়ে ওর কোলে উঠল। ওর মুখে একটা বড়সড় মৃত মাকড়সা ঝুলছে।

ওকে কী ওটা আমাদের সামনেই খেতে হবে? বিদ্বেষে ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞাসা করল রন।

ধীরে ধীরে ক্রুকশ্যাঙ্কস মাকড়সাটা চিবিয়ে খেয়ে ফেলল, ওর হলুদ চোখ দুটো উদ্ধত ভাবে স্থির হয়ে আছে রনের ওপর।

ওটাকে ওখানেই রাখ, তাহলেই হবে, বিরক্ত হয়ে বলল রন। আমার ব্যাগে স্ক্যাবার্স ঘুমিয়ে রয়েছে।

হাই তুলল হ্যারি। ঘুম পাচ্ছে ওর, কিন্তু ওর তারার তালিকাটা এখনও তৈরি হয়নি। ব্যাগটা নিজের দিকে টেনে একটা পার্চমেন্ট, কালি আর পাখার কলমটা বের করে কাজ শুরু করে দিল ও।

চাইলে আমারটা টুকে নিত পারো, বলল রন নিজের শেষ তারাটা আঁকালোভাবে লেবেল করে তালিকাটা হ্যারির দিকে ঠেলে দিল।

হারমিওন নকল করা একেবারেই অপছন্দ করে, নিজের ঠোঁট চেপে রাখল সে সজোরে, কিন্তু কিছু বলল না। কশ্যাঙ্কস তখনও অপলকে তাকিয়ে রয়েছে রনের দিকে, লেজের ডগাটা নাড়াচ্ছে এদিক ওদিক। তারপর, কোন রকম আগাম হুশিয়ারি না দিয়ে হঠাৎ লাফ দিল।

ওই! রন গর্জন করে উঠল, নিজের ব্যাগটা ঝট করে টেনে নিল, কশ্যাঙ্কস ওর চারটে থাবা ব্যাগের মধ্যে সেঁধিয়ে দিল, হিংস্র আক্রোশে ছিঁড়ছে সে ব্যাগটা। সর, সরে যা, দূর হ হতচ্ছাড়া জানোয়ার!

ব্যাগটা টেনে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করল রন কিন্তু ছাড়াতে পারল না, কশ্যাঙ্কস ছাড়ছে না ওটা, ফালা ফালা করছে।

রন, ওকে মারবে না! চিৎকার করে উঠল হারমিওন। পুরো কমনরুমটা দেখছে ওদেরকে–ব্যাগটা সজোরে ঘোরালোরন, কশ্যাঙ্কস তখনো ব্যাগটা ধরে ঝুলছে আর স্ক্যাবার্স বেরিয়ে এলো ব্যাগ থেকে ওপর দিয়ে

ওই বেড়ালটাকে ধরো! আর্তনাদ করে উঠল রন, ব্যাগের অবশিষ্টাংশ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে টেবিলে লাফিয়ে পড়ল ক্রুকশ্যাঙ্কস, ধাওয়া করল ভীত সন্ত্রস্ত স্ক্যাবার্সকে।

জর্জ উইজলি লাফ দিয়ে বেড়ালটাকে ধরবার চেষ্টা করল, কিন্তু পারল না; প্রায় বিশ জোড়া পায়ের ফাঁক দিয়ে দৌড়ে গিয়ে পুরনো একটা চেষ্ট অফ ডুয়ার্স-এর তলায় লুকালো স্ক্যাবার্স। পিছলে গিয়ে থামল কুকশ্যাঙ্কস, হামাগুড়ি দিয়ে বসে সামনের থাবা দিয়ে চেস্ট অফ ড্রয়ার্স এর নিচে আঁচড়াতে লাগল ক্রুদ্ধ বেড়ালটা।

রন আর হারমিওন দুজনেই দৌড়ে ওখানে গেল; কুকশ্যাঙ্কস-এর মাঝখানে ধরে টেনে ওকে নিয়ে এলো হারমিওন; উপুড় হয়ে শুয়ে অনেক কষ্টে লেজ ধরে টেনে বার করল স্ক্যাবার্সকে রন, চেস্ট অফ ড্রয়ার-এর নিচতলা থেকে।

দেখো ওর কি হাল! ক্ষিপ্ত রন বলল হারমিওনকে উদ্দেশ্য করে–ওর সামনে স্ক্যাবার্সকে দোলাতে দোলাতে। এটা একেবারে হাড্ডিসার! ওই বেড়ালটাকে ওর কাছ থেকে দূরে রাখবে তুমি!

ক্রুকশ্যাঙ্কস মনে করে না এটা অন্যায়! বলল হারমিওন, কাঁপছে ওর স্বর। রন, সব বেড়ালই ইঁদুর ধাওয়া করে!

ওই জানোয়ারটা কেমন যেন অদ্ভুত! স্ক্যাবার্সকে পকেটে ভরার চেষ্টা করতে করতে বলল রন, ওটা তখনও ওর হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ছটফট করছে। ওটা আমাকে বলতে শুনেছে যে ব্যাগে স্ক্যাবার্স রয়েছে!

ওহ, কি যা তা বলছ, বলল হারমিওন ধৈর্য হারিয়ে। কশ্যাঙ্কস ওর গন্ধ পেয়েছে, অন্য কোন ভাবে, তুমি কি ভেবেছ–

ওই বেড়ালটা স্ক্যাবার্সের পেছনে লেগেছে! রন বলল, চারপাশে যে লোক রয়েছে সেটা পাত্তাই দিল না সে, ওরা হাসতে শুরু করেছে। স্ক্যাবার্সই এখানে আগে এসেছে, অসুস্থ সে!

কমনরুমের থেকে গটগট করে বেরিয়ে একেবারে সোজা ছেলেদের হোস্টেলে চলে গেলো রন।

পরদিনও হারমিওনের সঙ্গে মুখ ভার করে থাকল রন। হারবলজি ক্লাশে হারমিওনের সঙ্গে কথা প্রায় বললই না, যদিও সে, হ্যারি আর হারমিওন একই সঙ্গে কাজ করছিল।

স্ক্যাবার্স কেমন আছে? ভীরু গলায় জিজ্ঞাসা করল হারমিওন। গাছ থেকে গোলাপী রঙের শিম গুলো ছিঁড়ে চকচকে বিচিগুলো কাঠের বালতিতে রাখছে ওরা তখন।

আমার বিছানার নিচে লুকিয়ে আছে সে, ভয়ে কাঁপছে, বলল রন রাগত স্বরে, শিমের বিচিগুলো বালতিতে রাখতে গিয়ে গ্রীন হাউজের মেঝেতে ছড়িয়ে দিল।

সাবধান, উইজলি, সাবধান! চিৎকার করে উঠলেন প্রফসর স্প্রাউট, শিমের বিচিগুলো থেকে ওদের চোখের সামনেই ততক্ষণে চারা গজিয়ে গেছে।

পরের ক্লাশটা ট্রান্সফিগিউরেশন-এর। ক্লাশের পর হ্যারি প্রফেসর ম্যাকগোনাগলকে জিজ্ঞাসা করবে যে অন্যদের সঙ্গে সেও হগসমিড-এ যেতে পারবে কি না, সে জন্যে সে ক্লাশের বাইরের লাইনটার পেছনে দাঁড়াল, মনে মনে ভাবছে কি ভাবে তার আর্জির পক্ষে যুক্তি দেবে। লাইনের সামনে একটা সমস্যা হলো, হ্যারির মনোযোগ সেদিকে চলে গেল।

ল্যাভেন্ডার ব্রাউন মনে হয় কাঁদছে। ওকে জড়িয়ে ধরে আছে পার্বতী। সঙ্গে সঙ্গে সিমাস ফিনিগান আর ডিন থমাসকে কি যেন বোঝাবার চেষ্টা করছে। ওদেরকেও বেশ সিরিয়াস দেখাচ্ছিল।

কী হয়েছে ল্যাভেন্ডার? জিজ্ঞাসা করল হারমিওন, এরই মধ্যে সে, হ্যারি আর রন এগিয়ে গেছে সামনে।

 বাড়ী থেকে চিঠি এসেছে, ফিস ফিস করে বলল পার্বতী,একটা শেয়াল ওর খরগোশ বিঙ্কিকে মেরে ফেলেছে।

হায়! সত্যিই আমি দুঃখিত ল্যাভেন্ডার, বলল হারমিওন।

আমার বোঝা উচিত ছিল! বিলাপ করতে করতে বলল ল্যাভেন্ডার। তুমি জান আজ কোন দিন?

ইয়ে–

অক্টোবরের ষোল তারিখ! যে জিনিষটা হবে বলে তুমি সবচেয়ে ভয় পাও সেটা অক্টোবরের মোল তারিখই হবে! মনে আছে? ঠিকই বলেছিল সে, ঠিকই বলেছিল।

পুরো ক্লাশটা ল্যাভেন্ডারের চারদিকে জড়ো হলো। গাম্ভীর্যের সঙ্গে মাথা ঝাঁকাচ্ছে সিমাস। একটু দ্বিধা করল হারমিওন, তারপর বলল, তুমি–তুমি ভয় পাচ্ছো বিংকিকে শেয়ালে মেরেছে?

মানে, শেয়ালই যে মেরেছে তেমন নাও হতে পারে, বলল ল্যাভেন্ডার, চোখে জলের ধারা নিয়ে হারমিওনের দিকে তাকাল সে, কিন্তু আমি তো ভয়ই পাচ্ছিলাম যে ও মারা যাবে, তাই না?

ওহ, বলল হারমিওন। খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে আবার বলল

বিংকি কি বুড়ো হয়ে গিয়েছিল?

ন–না! ফুঁপিয়ে উঠল ল্যাভেন্ডার। ও–ও ছোট্টটি ছিল–বেবি!

ল্যাভেন্ডারের কাঁধটা আরো গভীরভাবে জড়িয়ে ধরল পার্বতী।

কিন্তু, তাহলে ও মরে যেতে পারে বলে ভয় পাচ্ছিলে কেন? জিজ্ঞাসা করল হারমিওন।

চোখ গরম করে পার্বতী তাকাল ওর দিকে।

মানে, যুক্তি দিয়ে যদি বিচার করো, গ্রুপের অন্যদের দিকে ফিরে বলল হারমিওন। মানে আমি বলতে চাচ্ছি, দেখো এমনও ঘটনা না যে বিংকি আজই মারা গেছে, তাই না, আজ শুধু খবরটা পেয়েছে ল্যাভেন্ডার বিলাপ করে উঠল ল্যাভেন্ডার–সে যে এটা আশংকা করছিল তা নয়, কারণ খবরটা ওর জন্যে সত্যিই মর্মান্তিক–।

হারমিওনের কথায় কিছু মনে করো না ল্যাভেন্ডার, জোরে বলে উঠল। রন, অন্যের পোষা জীবের কোন মূল্যই নেই ওর কাছে।

সৌভাগ্যবশত ঠিক সেই সময়ই প্রফেসর ম্যাকগোনাগল দরজা খুললেন; কারণ হারমিওন আর রন পরস্পরের দিকে তাকিয়েছিল এমনভাবে যেন মেরে ফেলবে একজন অন্যজনকে। ক্লাশে গিয়ে হ্যারির দুপাশে বসল দুজন এবং কথা বলল না কেউ কারো সঙ্গে।

হ্যারি তখনও ঠিক করতে পারেনি প্রফেসর ম্যাকগোনাগলকে সে কি বলবে, এরই মধ্যে ক্লাশ শেষ হওয়ার ঘন্টা বাজল, কিন্তু উনিই প্রথম হগসমিড-এর বিষয়টা তুললেন।

সবাই বেরিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ করতেই তিনি বললেন, এক মিনিট! তোমরা যেহেতু আমার হাউজে রয়েছ, হ্যালোঈন-এর আগে যার যার হগসমিড পারমিশন ফরম আমার কাছে পৌঁছে দেবে। ফরম নেই তো গ্রামেও (হগসমিড-এ) যাওয়া নেই, সে জন্যে ভুলে যেও না কিন্তু!

নেভিল ওর হাত তুলল।

প্লিজ প্রফেসর, আ–আমার মনে হচ্ছে, আমি হারিয়ে ফেলেছি

তোমার দাদী তোমার ফরম আমার কাছে সরাসরি পাঠিয়ে দিয়েছে, লংবটম, বললেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল। উনি মনে করেছেন এটাই নিরাপদ (ফরম হারাবার ভয় নেই]। আজ এ পর্যন্তই, তোমরা এখন যেতে পার।

এখনই ওঁকে বলো, হ্যারিকে ফিস ফিস করে বলল রন।

কিন্তু, মানে– বলতে শুরু করেছিল হারমিওন।

যাও, হ্যারি বলল, রন নাছোড়বান্দা।

হ্যারি অপেক্ষা করল, ক্লাশের বাকি সবাইকে চলে যেতে দিল, দ্বিধান্বিত চিত্তে প্রফেসরের টেবিলের দিকে এগোল।

হ্যাঁ, বলো পটার?

গভীরভাবে শ্বাস নিল হ্যারি।

প্রফেসর, আমার আংকল এবং আন্টি–মানে–আমার ফরমটা সই করতে ভুলে গিয়েছেন, বলল ও।

চৌকো চশমার ওপর দিয়ে প্রফেসর ম্যাকগোনাগল ওর দিকে চেয়ে রইলেন, কিন্তু কিছু বললেন না।

তাহলে–মানে–আপনি কি মনে করেন ঠিক হবে–আমি বলতে চাচ্ছি–যদি–যদি, আমি হগসমিড-এ যাই তবে সেটা ঠিক হবে তো?

নিচের দিকে তাকিয়ে প্রফেসর ম্যাকগোনাগল তার কাগজপত্র গোছাতে শুরু করলেন।

আমার মনে হচ্ছে ঠিক হবে না, পটার, বললেন তিনি। তুমি শুনেছ, আমি কি বলেছি। ফরম নেই তো যাওয়াও নেই। এটাই নিয়ম।

কিন্তু–প্রফেসর, আমার আংকল এবং আন্টি দুজনই মাগল–আপনি জানেন, হোগার্টস-এর ফরম আর অন্যান্য বিষয়ে ওরা বোঝেন না, বলল হ্যারি, রন প্ররোচিত করছে ওকে প্রবলভাবে মাথা নেড়ে। শুধু যদি আপনি বলেন যে আমি যেতে পারি।

কিন্তু আমি বলতে পারি না, বললেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল, উঠে দাঁড়িয়ে সুন্দরভাবে একটা ড্রয়ারে কাগজগুলো রাখতে রাখতে। ফরমে পরিষ্কার লেখা রয়েছে মা-বাবা অথবা অভিভাবকদেরকেই অনুমতি দিতে হবে। ফিরে ওর দিকে তাকালেন তিনি, মুখে একটা অদ্ভুত অভিব্যক্তি। ওটা কি করুণার? দুঃখিত পটার, কিন্তু ওটাই শেষ কথা। তুমি বরং তাড়াতাড়ি যাও, না হলে পরের ক্লাশে দেরী হয়ে যাবে।

***

আর কিছু করবার নেই। প্রফেসর ম্যাকগোনাগলকে বেছে বেছে বেশ কয়টা গালি দিল রন, ওতে আবার বিরক্ত হলো হারমিওন; ওর চেহারায় একটা যা হয় তা ভালোর জন্যেই হয় ভাব দেখা গেল, ওটা দেখে আরো ক্ষেপে গেল রন। আর ক্লাশের সবাই বেশ জোরে জোরেই আলাপ করছে এবার হগসমিড-এ পৌঁছে কে কি করবে প্রথমে, এ সবই আবার নীরবে সহ্য করতে হচ্ছে হ্যারিকে।

হ্যারিকে উৎফুল্ল করার চেষ্টায় রন বলল, জানোতো, সব সময়ই একটা ভোজ হয়ে থাকে, সন্ধ্যার হ্যালোঈন ভোজ।

ইয়েহ, বলল হ্যারি, মুখ ভার করে, বিরাট।

হ্যালোঈনের ভোজ সব সময়ই ভালো হয়, কিন্তু একদিন সকলের সঙ্গে হগসমিড-এ কাটিয়ে এসে ভোজটায় গেলে ওটা আরো মজা লাগত। যে যাই বলুক না কেন, তাকে যে থেকে যেতে হচ্ছে এর সান্তনা কেউই দিতে পারছে না। ডিন টমাস হাতের লেখা খুব ভালো নকল করতে পারে, সে প্রস্তাব দিল ফরমে আংকল ভারনন-এর স্বাক্ষর দিয়ে দেবে, কিন্তু হ্যারি তো আগেই বলে দিয়েছেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগলকে যে তার ফরমে স্বাক্ষরই করা হয়নি; সেই কারণে ওর প্রস্তাবটা মাঠে মারা গেল। দোনোমনো করে রন প্রস্তাব করল অদৃশ্য হওয়ার আলখাল্লাটার কথা, কিন্তু ওটা একেবারেই নাকচ করে দিল হারমিওন, ওকে স্মরণ করিয়ে দিল প্রফেসর ডাম্বলডোরের কথা, ডিমেন্টাররা ওটার ভেতর দিয়েও দেখতে পারে। স্পারসি যা বলেছে তার মধ্যে আর যাই পাওয়া যাক না কেন সান্তনা পাওয়া গেল না মোটেই।

 হগসমিড নিয়ে ওরা হৈ চৈ করে ঠিকই, কিন্তু আমি তোমাকে বলতে পারি হ্যারি যত বলা হয় তত নয় আসলে, বলল ও গম্ভীরভাবে। আচ্ছা, মিষ্টির দোকানগুলো ভালো, কিন্তু জোঙ্কোর জোঁক শপটা, সত্যি বলতে কি বিপদজনক, তবে, হ্যাঁ, শিকিং শ্যাক-এ যথার্থই যাওয়া যায়, এ ছাড়া তুমি সত্যিই আর কিছু মিস করছ না।

***

হ্যালোঈন-এর দিন সকালে অন্য সকলের মতোই ঘুম থেকে উঠে হ্যারি নাস্তা খেতে গেল, পুরোপুরি বিমর্ষ সে, অবশ্য ভাব দেখাচ্ছে এমন যে সব কিছুই ঠিকঠাক স্বাভাবিক।

আমরা তোমার জন্যে হানিডিউকস থেকে অনেক চকলেট নিয়ে আসব, বলল হারমিওন, হ্যারির জন্যে ওকে ভীষণ দুঃখিত দেখাচ্ছে।

হ্যা এক বোঝা, বলল রন। হ্যারির বিমর্ষতার মধ্যে কুকশ্যাংকে নিয়ে ওদের ঝগড়ার কথা ভুলে গেছে সে আর হারমিওন দুজনই।

আমার জন্যে চিন্তা করো না, বলল হ্যারি, যেন কথার কথা বলছে এমনভাবে বলল সে। রাতের ফিস্টে দেখা হবে তোমাদের সঙ্গে। ওখানে তোমাদের সময় ভালোভাবে কাটুক।

সামনের হলঘর পর্যন্ত সে গেল ওদের সঙ্গে, ওখানে কেয়ারটেকার ফিলচ লম্বা একটা তালিকার সঙ্গে নাম মিলিয়ে দেখছে, প্রত্যেকটা মুখের দিকে সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছে, নিশ্চিত করছে যার যাওয়া উচিত নয় সে যেন চুপি চুপি বেরিয়ে যেতে না পারে।

এখানেই থেকে যাচ্ছ, পটার? চিৎকার করে উঠল লাইন থেকে ম্যালফয়, ক্র্যাব আর গয়লের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে সে। ডিমেন্টারদের পার হয়ে যেতে ভয় পাচ্ছো?

ওকে উপেক্ষা করল হ্যারি। মার্বেল সিঁড়ি ধরে জনশূন্য করিডোর ধরে গ্রিফিন্ডর টাওয়ারে ফিরে গেল ও।

পাসওয়ার্ড, ঘুম ঘুম ভাব থেকে যেন ধাক্কা খেয়ে উঠে জিজ্ঞাসা করল স্থূলকায়া মহিলা।

ফরচুনা মেজর, উদাস স্বরে বলল হ্যারি।

দেয়ালে টাঙানো ছবিটা সড়াৎ করে খুলে গেল, ফুটোর ভেতর দিয়ে গলে ও কমন রুমে চলে এলো। প্রথম আর দ্বিতীয় বর্ষীয়দের পরিপূর্ণ কমন রুম, সবাই বকবক করছে, আরো রয়েছে সিনয়ার দুএকজন, যারা এতবার হগসমিড-এ গেছে যে আকর্ষণই হারিয়ে ফেলেছে।

হ্যারি! হ্যারি! হাই, হ্যারি!

কলিন ক্রিভি। দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সব সময় বিস্ময়ে হতবাক হয়ে থাকে হ্যারির প্রতি এবং কথা বলার সুযোগ পেলেই তার সদ্ব্যবহার করে।

তুমি হগসমিড-এ যাচ্ছে না, হ্যারি? কেন? এই–কলিন আগ্রহ নিয়ে চারদিকে ওর বন্ধুদের দিকে তাকাল, তোমরা ইচ্ছে করলে আমাদের সঙ্গে বসতে পারো, হ্যারি!

ইয়ে–না, মানে, ধন্যবাদ কলিন, মুড নেই হ্যারির, অনেকগুলো লোক লোভ নিয়ে ওর কপালের দাগটার দিকে তাকিয়ে থাকবে এটা এখন সে সহ্য করতে পারবে না। আমাকে এখন লাইব্রেরীতে যেতে হবে, কয়েকটা কাজ সারতে হবে।

এরপর ঘুরে দাঁড়িয়ে ছবিটার ফুটো দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া ছাড়া তার আর গত্যন্তর থাকল না।

আমাকে জাগিয়ে তোলার মানে কি? স্থূলকায় মহিলা মেজাজ খারাপ করে বলল হেঁটে যাওয়া হ্যারিকে উদ্দেশ্য করে।

লাইব্রেরীর দিকে বিমর্ষ হ্যারি উদ্দেশ্যহীনভাবে হেঁটে গেল, কিন্তু অর্ধেক পথ গিয়ে মন পরিবর্তন করল; কাজ করতে ইচ্ছে করছে না। ঘুরল সে। মুখোমুখি হলো ফিলচের, বোঝাই যাচ্ছে সর্বশেষ হাসমিড যাত্রীকে বিদায় করে এসেছে সে।

কি করছ ওখানে? খেঁকিয়ে উঠল সন্দেহবাতিক ফিলচ।

কিছুই না, সত্য কথাটাই বলল হ্যারি।

কিছু না, থুথু ফেলল ফিলচ, বিশ্রীভাবে কাঁপছে ওর গাল। বিশ্বাস করার মতো কথা! নিজে নিজেই ঘুরে বেড়াচ্ছো, হগসমিড-এ যাওনি কেন তোমার অন্য পাজি বন্ধুদের মতো স্টিংক পিলেট (বন্দুকের ছোট গুলি) বা বেচ পাউডার অথবা শব্দ করা পোকা কিনতে?

কাঁধ জাকালো হ্যারি।

ঠিক আছে, কমন রুমে ফিরে যাও, ওটাই তোমার যায়গা! তীব্র স্বরে বলল ফিলচ এবং হ্যারি দৃষ্টির বাইরে চলে যাওয়া না পর্যন্ত জ্বলন্ত চোখে ওর গমন পথের দিকে তাকিয়ে থাকল সে।

কিন্তু হ্যারি কমন রুমে ফিরে গেল না; সিঁড়ির এক ধাপ উঠে সে দাঁড়াল, ভাবল পেঁচাঁদের ওখানে গিয়ে হেডউইগকে দেখে এলে কেমন হয়। আরেকটা করিডোর ধরে হাঁটতে শুরু করল হ্যারি, একটা রুমের ভেতর থেকে কে যেন ডাকল, হ্যারি?

দ্রুত পেছন ফিরে এলো হ্যারি, কে ডাকছে দেখার জন্যে, প্রফেসর লুপিনকে দেখতে পেলো সে, তার অফিসের দরজা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রয়েছেন।

কী করছ তুমি? জিজ্ঞাসা করলেন প্রফেসর, ফিলচের চেয়ে একেবারেই অন্যরকম স্বরে। রন আর হারমিওন কোথায়?

হগসমিড, যেন কোন কিছু হয়নি এমনভাবে বলল হ্যারি।

আহ, বললেন লুপিন। এক মুহূর্ত হ্যারির দিকে তাকিয়ে ভাবলেন। ভেতরে এসো না কেন? এই মাত্র একটা গ্রাইন্ডিলো পেলাম আমাদের পরবর্তী ক্লাশের জন্য।

একটা কী? জিজ্ঞাসা করল হ্যারি।

লুপিনকে অনুসরণ করে ওর অফিসে ঢুকল হ্যারি। এক কোণে বিরাট একটা পানির ট্যাংক। ছোট ঘোট সরু শিং ওয়ালা একটা ফ্যাকাসে–সবুজ মতো জীব ট্যাংকের কাঁচের দেয়ালে মুখটা চেপে ধরে রয়েছে। মাঝ মাঝে মুখভঙ্গি করছে, লম্বা সরু আঙুলগুলো বাঁকাচ্ছে। 

জল-দৈত্য, বললেন প্রফেসর লুপিন, চিন্তিতভাবে ওটাকে জরিপ করতে করতে। ওকে নিয়ে খুব একটা মুশকিল হওয়ার কথা নয়, বিশেষ করে কাপ্লাস এর পরে। কৌশলটা হচ্ছে ওটার মুঠোটা আলগা করে দিতে হবে। খেয়াল করেছ আঙুলগুলো কী অস্বাভাবিক লম্বা? শক্তিশালী কিন্তু খুবই ভঙ্গুর।

সবুজ দাঁত খিচালো জীবটা তারপর ট্যাংকের কোণায় সবুজ আগাছার আড়ালে গিয়ে লুকালো।

চা খাবে? কেটলিটা খুঁজতে খুঁজতে বললেন লুপিন। আমি নিজেও খাব বলে ভাবছিলাম।

ঠিক আছে, একটু বিব্রত বোধ করে বলল হ্যারি।

জাদুর কাঠিটা দিয়ে কেটলিটায় আস্তে করে টোকা দিলেন লুপিন, হঠাৎ ওটার নল দিয়ে জলীয় বাষ্পের রাশি বের হতে শুরু করল।

বসো, বললেন লুপিন, একটা ধুলোমাখা টিনের ঢাকনা খুলতে খুলতে। আমার কাছে শুধু চায়ের ব্যাগ রয়েছে–কিন্তু আমার মনে হচ্ছে চা–পাতা সম্পর্কে তোমার যথেষ্ট [অভিজ্ঞতা] হয়েছে?

হ্যারি তাকাল প্রফেসর লুপিনের দিকে। লুপিনের চোখ পিট পিট করছে। আপনি জানলেন কি করে, জিজ্ঞাসা করল হ্যারি।

প্রসেসর ম্যাকগোনাগল বলেছেন, বললেন লুপিন, হ্যারির দিকে ফালি করে কাটা চায়ের এক পেয়ালা বাড়িয়ে দিতে দিতে। তুমি নিশ্চয়ই ভয় পাচ্ছো না তাই না?

না, বলল হ্যারি।

এক মুহূর্তের জন্য ভাবল ম্যাগনোলিয়া ক্রিসেন্টে দেখা কুকুরটার কথা প্রফেসর লুপিনকে বলে, পরে ভাবল, বলবে না। ও চায় না লুপিন ওকে ভীরু মনে করুক, বিশেষ করে যেহেতু এরই মধ্যে তিনি ভাবছেন যে সে বোগার্টকে মোকাবেলা করতে সক্ষম নয়।

হ্যারির মনের ভাব তার মুখে ফুটে উঠেছে, কারণ লুপিন জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোন সমস্যায় পড়েছ হ্যারি?

না, মিথ্যা কথা বলল হ্যারি। একটু চা খেল, লক্ষ্য করল গ্রাইন্ডিলোটা ওর দিকে তাকিয়ে মুঠো পাকাচ্ছে। হ্যাঁ, হঠাৎ বলল উঠল সে, লুপিনের ডেস্কের ওপর চায়ের কাপটা নামিয়ে রাখল। মনে আছে যেদিন আমরা বোগার্টকে মোকাবেলা করছিলাম।

হ্যাঁ, ধীরে ধীরে বললেন লুপিন।

আপনি আমাকে মোকাবিলা করতে দেননি। কেন? হঠাৎ করেই বলল হ্যারি।

ভ্রূ তুললেন লুপিন।

আমি তো ভেবেছি ওটাই হওয়া উচিত, হ্যারি। বললেন প্রফেসর, মনে হয় অবাক হয়েছেন তিনি।

হ্যারি আশা করেছিল লুপিন হয়তো অস্বীকার করবেন যে সে রকম কিছু করেছিলেন তিনি। হতবাক হয়ে গেল সে।

কেন? আবার জিজ্ঞাসা করল হ্যারি।

বেশ, বললেন লুপিন সামান্য ভ্রুকুটি করে, আমি ভেবেছিলাম যদি বোগার্ট তোমার সামনাসামনি হয় তবে ওটা লর্ড ভন্ডেমর্ট-এর রূপ ধারণ করবে।

হ্যারি তাকিয়ে থাকল অপলক। শুধু যে এই উত্তরটাই সে সর্বশেষ আশা করেছিল তা নয়, কিন্তু প্রফেসর লুপিন ভল্টেমর্টের নাম নিয়েছেন! হ্যারির জান একমাত্র ব্যক্তি যিনি সশব্দে ওই নামটি উচ্চারণ করেন (সে নিজে ছাড়া) তিনি হচ্ছেন প্রফেসর ডাম্বলডোর।

তবে আমার ভুল হয়েছিল, এখনও হ্যারির দিকে ভ্রুকুটি করে রয়েছেন। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম স্টাফ রুমের ভেতর লর্ড ভন্ডেমর্ট-এটা ঠিক হবে না। আমি ধারণা করেছিলাম সবাই আতংকিত হয়ে পড়বে।

আমিও প্রথমে ভল্টেমর্টের কথাই ভেবেছিলাম, সত্যি কথাটাই বলল হ্যারি। কিন্তু পরে আমি–আমি মনে করেছিলাম ওই ডিমেন্টারদের কথা।

তাই বুঝি, বললেন লুপিন চিন্তিত স্বরে। বেশ, বেশ বুঝতে পারছি। হ্যারির চোখে বিস্ময় দেখে সামান্য হাসলেন। বোঝা যাচ্ছে তুমি সবচেয়ে বেশি যাকে ভয় পাও সেটা হচ্ছে–ভয়। খুবই বিচক্ষণ, হ্যারি।

জবাবে কি বলবে সেটা বুঝতে পারল না হ্যারি, আরো একটু চা খেল।

তাহলে তুমি ভাবছিলে আমি মনে করছি তুমি বোগার্টকে মোকাবিলা করতে অক্ষম? প্রফেসর লুপিন বললেন তীক্ষ্ণভাবে।

ইয়ে মানে হ্যাঁ, বলল হ্যারি। এখন হঠাৎ করেই হ্যারির অনেক ভালো বোধ হচ্ছিল। প্রফেসর লুপিন, আপনি জানেন ডিমেন্টাররা

দরজায় কেউ নক করাতে বাধা পেল হ্যারি।

ভেতরে এসো। বললেন লুপিন।

দরজা খুলে প্রফেসর স্নেইপ ঢুকলেন। তার হাতে একটা ছোট পানপাত্র, ওটা থেকে ক্ষীণ ধারায় ধোয়া বেরোচ্ছে, হ্যারিকে দেখে থমকে দাঁড়ালেন, কালো চোখগুলো সরু হয়ে এলো।

ওহ, সেভেরাস, লুপিন হেসে। অনেক ধন্যবাদ, ডেস্কের ওপর রেখে যাবেন কী?

পানপাত্রটা রাখলেন স্নেইপ, হ্যারি আর লুপিনের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে ওর চোখ।

হ্যারিকে আমার গ্রাইন্ডিলোটা দেখাচ্ছিলাম, মধুর স্বরে বললেন লুপিন পানির ট্যাংকটা দেখিয়ে।

চমৎকার, বললেন স্নেইপ, ওটার দিকে না তাকিয়েই। এটা আপনাকে সরাসরি পান করতে হবে, লুপিন।

হ্যাঁ, হ্যাঁ আমি করব, বললেন লুপিন।

আমি এক কড়াই ভর্তি তৈরি করেছি, বললেন স্নেইপ, যদি আপনার আরো লাগে।

কাল আমার আরো কিছুটা পান করা উচিৎ বোধহয়। অনেক ধন্যবাদ, সেভেরাস।

ধন্যবাদের প্রয়োজন নেই, বললেন স্নেইপ, কিন্তু ওর চোখের দৃষ্টিটাকে পছন্দ করল না হ্যারি। ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন স্নেইপ, মুখে কোন হাসি নেই এবং সতর্ক।

কৌতূহলে পানপাত্রটির দিকে তাকিয়ে রইল হ্যারি। মুচকি হাসলেন লুপিন।

প্রফেসর স্নেইপ দয়া করে আমার জন্যে একটা পোশন তৈরি করেছেন, বললেন তিনি। আমি কখনোই খুব ভালো পোশন তৈরি করতে পারি না আর এটা তো খুবই জটিল। পানপাত্রটা তুলে একটু পুঁকলেন। চিনি এই পোশনের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়, বললেন তিনি এক চুমুক খাওয়ার পর শিহরিত হয়ে।

কেন? হ্যারি বলতে শুরু করেছিল। মুখ তুলে তাকালেন লুপিন, হ্যারির শেষ না করা প্রশ্নটার জবাব দিলেন।

কয়েকদিন ধরে কোন কিছুই যেন যুৎসই লাগছে না, বললেন তিনি। এই পোশনটাই শুধু এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে। প্রফেসর স্নেইপের সঙ্গে কাজ করছি সত্যিই আমি ভাগ্যবান; দুনিয়াতে খুব বেশি জাদুকর নেই যারা এই পোশন তৈরি করতে পারে।

আরেক চুমুক খেলেন প্রফেসর লুপিন কিন্তু হ্যারির ভেতর প্রবল ইচ্ছা জাগল ওর হাত থেকে গ্লাসটা ফেলে দেয়ার।

ডার্ক আর্ট সম্পর্কে প্রফেসর স্নেইপ খুবই আগ্রহী, মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেলো হ্যারির।

সত্যি? আরেক চুমুক খেতে খেতে জিজ্ঞাসা করলেন লুপিন, অল্পই আগ্রহী মনে হলো তাকে।

কেউ কেউ মনে করে– ইতস্তত করল হ্যারি, তারপর বেপরোয়াভাবে বলেই ফেলল, কেউ কেউ মনে করে ডিফেন্স এগেনস্ট দ্য ডার্ক আর্টস পড়ানোর কাজটা পাওয়ার জন্যে তিনি সব কিছু করতে পারেন।

পুরো পোশনটা গলায় ঢেলে দিলেন লুপিন, তারপর একটা মুখভঙ্গি করলেন।

বিরক্তিকর, বললেন প্রফেসর। ঠিক আছে হ্যারি, আমাকে এখন কাজে ফিরে যেতে হবে, পরে ফিস্ট-এ তোমার সঙ্গে দেখা হবে।

ঠিক আছে, চায়ের খালি কাপটা রাখতে রাখতে বলল হ্যারি।

শূন্য পানপাত্রটা থেকে তখনও ধোয়া বেরোচ্ছে।

***

এই নাও, বলল রন। ততটাই এনেছি যতটা আমাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব।

বৃষ্টির মতো হ্যারির কোলের ওপর পড়ল বিচিত্র আর উজ্জ্বল রঙের সব চকলেট। সবেমাত্র সন্ধ্যা হয়েছে রন আর হারমিওন কেবল কমন রুমে এসেছে। বাইরের ঠাণ্ডায় আরো গোলাপী হয়ে গেছে ওরা। দেখে মনে হচ্ছে সারা জীবনের আনন্দ ছড়িয়ে আছে ওদের চোখেমুখে।

ধন্যবাদ, বলল হ্যারি, একটা প্যাকেট তুলে নিয়ে। হগসমিড দেখতে কেমন? কোথায় কোথায় গেলে তোমরা?

বলতে গেলে–সবখানেই। দেরভিশ আর ব্যাঙ্গেস, জাদুর যন্ত্রপাতির দোকান, জোঙ্কোর জোঁক শপ, গরম আর উপচে পড়া বাটারবিয়ারের জন্য থ্রি ব্রুমস্টিক-এ এবং এ ছাড়াও আরো অনেক যায়গায়।

পোস্ট-অফিসে, হ্যারি! প্রায় দুশো পেঁচা, সব কটা তাকের ওপর বসে রয়েছে, রং দিয়ে চিহ্নিত, যেন বোঝা যায় কোনটা কত দ্রুত চিঠি বহন করে নিয়ে যেতে পারে!

হানি ডিউক্স-এ নতুন ধরনের চকলেট, লজেন্স, টফি বিক্রি করছে, ওরা বিনে পয়সায় স্যাম্পলও বিলি করছে, এই যে একটু খানি, দেখো–

মনে হয় আমরা একটা রাক্ষসও দেখেছি, সত্যি, ওখানে থ্রি ব্রুমস্টিকে সব ধরনের

যদি তোমার জন্য বাটারবিয়ার আনতে পারতাম, সত্যি একেবারে গরম করে ফেলে

তুমি কী করলে? বলল হারমিওন, ওকে উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে। কোন কাজ করতে পেরেছ?

না, বলল হ্যারি। লুপিন ওর অফিসে আমার জন্যে এক কাপ চা বানিয়েছিলেন। এবং তারপর স্নেইপ এসে হাজির

ওদেরকে পোশনটা সম্পর্কে সবই বলল সে। রনের মুখ একেবারে হা হয়ে গেল।

লুপিন ওটা খেয়েছেন? ঢোক গিলল সে। উনি কি পাগল?

ঘড়ি দেখল হারমিওন।

আমাদের নিচে যাওয়া উচিত, পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফিস্ট শুরু হবে  ছবির ফুটো দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে এলো ওরা ভিড়ের মধ্যে, তখনও কথা বলছে স্নেইপকে নিয়ে।

কিন্তু যদি তিনি–তোমরা জানো– গলার স্বর নিচু করল হারমিওন, ভয়ে ভয়ে চারদিকে তাকাচ্ছে, যদি তিনি লুপিনকে–বিষ দেয়ার চেষ্টা করতেন–নিশ্চয়ই হ্যারির সামনে সেটা করতেন না।

হু, হয়তো, বলল হ্যারি, সামনের হলে পৌঁছে গেল ওরা, চলে গেল গ্রেট হলে। শত শত মোমবাতি জ্বালানো কুমড়ো দিয়ে হলটাকে সাজানো হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে পাখা ঝাপটানো জীবন্ত সব বাদুড় এবং টকটকে কমলা রঙের অসংখ্য পতাকা, সিলিং বরাবর উড়ছে ওগুলো যেন চকচকে সব।

খাবারটা খুবই সুস্বাদু; হারমিওন এবং রন এমনিতেই হানিডিউ-এর টফি লজেন্স খেয়ে পেট ভর্তি করে রেখেছিল, তারপরও ওরা দুজনই সব কিছুই দুইবার করে নিল। শিক্ষকদের টেবিলের দিকে বার বার আড় চোখে তাকাচ্ছিল হ্যারি। উৎফুল্ল দেখাচ্ছিল প্রফেসর লুপিনকে, এবং যেমন বরাবর করেন তেমনি উদ্দীপ্ত স্বরে কথা বলছেন চার্মস-এর শিক্ষক ছোটখাট প্রফেসর ফ্লিটউইক-এর সঙ্গে। টেবিলের যে দিকে প্রফেসর স্নেইপ বসেছেন সেদিকে চোখ গেল হ্যারির। সেইপের চোখ কি লুপিনের দিকে চেয়ে কেঁপে কেঁপে জ্বলে উঠছে? ওটা কী স্বাভাবিক? না, তার দেখার ভুল?

হোগার্টস ভূতদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ফিস্ট শেষ হলো। দেয়াল আর টেবিলের ভেতর থেকে বের হয়ে ওরা (বিমান বাহিনীর বিমানের মতো] ছক তৈরি করে উড়ে বেড়াল। গ্রিফিন্ডর হাউজের ভুত প্রায়-মস্তক হীন নিক অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে তার নিজের (প্রায়) মস্তক হারানোর ঘটনাটা আবার ঘটিয়ে সবাইকে দেখালো।

সন্ধ্যাটা এত চমৎকার কাটল যে, ম্যালফয়ও ওটা নষ্ট করতে পারল না। যদিও হল ছেড়ে বেরিয়ে আসার সময় সে একবার চেঁচিয়ে উঠেছিল, ডিমেন্টাররা প্রীতি ও শুভেচ্ছা পাঠিয়েছে, পটার! বলে।

অন্যদের সঙ্গে হ্যারি, রন আর হারমিওন গ্রিফিন্ডর টাওয়ারের পথে রওয়ানা হলো, কিন্তু স্থূলকায়া মহিলার ছবিওয়ালা করিডোরে পৌঁছে দেখল প্রচণ্ড ভীড়।

ভেতরে যাচ্ছে না কেন ওরা? জিজ্ঞাসা করল রন।

সামনের জনের মাথার ওপর দিয়ে উঁকি দিল হ্যারি। মনে হলো ছবিটা বন্ধ।

আমাকে যেতে দাও, প্লিজ, পার্সির গলা শোনা গেল। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মতো ভাব করে কর্মব্যস্ত পার্সি এগিয়ে এলো ভিড় ঠেলে। এখানে সবাই দাঁড়িয়ে আছে কেন? তোমরা সকলেই নিশ্চয়ই পাসওয়ার্ড ভুলে যাওনি-এক্সকিউজ মি, আমি হেড বয়–

এরপর সকলেই একদম নীরব হয়ে গেল, প্রথমে সামনের সকলে, মনে হলো করিডোর ধরে তীক্ষ্ণ একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল। ওরা শুনতে পেলো পার্সির গলা, কেউ একজন প্রফেসর ডাম্বলডোরকে নিয়ে এসো, জলদি।

সকলেই মাথা ঘুরিয়ে তাকাল; যারা একবারে পেছনে ছিল ওরা পায়ের আঙুলের ওপর ভর করে দাঁড়াল।

কী হচ্ছে ওখানে? জিজ্ঞাসা করল জিনি, এইমাত্র এসেছে সে।

পরমুহূর্তেই দেখা গেল প্রফেসর ডাম্বলডোর উপিস্থিত, এগিয়ে যাচ্ছেন ছবিটার দিকে; ওঁর পেছন পেছন হ্যারি, রন আর হারমিওনও এগিয়ে গেল ঘটনা দেখার জন্যে।

হায় আল্লাহ–চিৎকার করে হ্যারির বাহু আঁকড়ে ধরল হারমিওন।

ছবি থেকে স্থূলকায়া মহিলা উধাও, ওটাকে এমনভাবে কেটে ফালা ফালা করা হয়েছে যে ক্যানভাসের টুকরা মেঝেতে পড়ে রয়েছে; বড় একটা অংশ একেবারেই ছিঁড়ে নিয়ে গেছে কেউ।

ক্ষত বিক্ষত পেইন্টিং–টার দিকে তাকালেন প্রফেসর ডাম্বলডোর তারপর ঘুরে দাঁড়ালেন, চেহারা মলিন বিষণ্ণ, দেখলেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল, লুপিন এবং স্নেইপ দ্রুত এগিয়ে আসছেন তার দিকে।

ওকে খুঁজে বের করতে হবে, বললেন ডাম্বলডোর।

প্রফেসর ম্যাকগোনাগল, প্লিজ, মিস্টার ফিলচের কাছে যান, স্থূলকায়া মহিলার জন্যে এখানকার প্রতিটি পেইন্টিং খুঁজে দেখতে বলুন।

ভাগ্য ভালো আপনাদের! একটা খনখনে গলা শোনা গেল।

ঝামেলাবাজ ভূত পিভস, সকলের মাথার ওপরে ভাসছে, খুবই খুশি দেখাচ্ছে ওকে, কারও দুর্দশা বা কোন ভাংচুরের ঘটনা দেখলেই যেমন আনন্দিত হয় সে।

কী বলতে চাচ্ছ পিভস? শান্ত স্বরে বললেন ডাম্বলডোর, পিভস-এর হাসিটা একটু মিলিয়ে গেল। ডাম্বলডোরকে চটাবার সাহস নেই তার। এর বদলে মসৃণ স্বরে কথা বলল সে, তার খোণা গলার চেয়ে ওটা কোনক্রমেই ভালো স্মৃতিমধুর নয়।

লজ্জা পেয়েছে, স্যার। দেখা দিতে চায় না। খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে। ছবিটার মধ্যে দিয়ে গাছগুলোকে এড়িয়ে তাকে পাঁচতলার দিকে দৌড়ে যেতে দেখেছি, স্যার। চিৎকার করছিল স্যার, ভয়াবহ কিছু, বেশ তৃপ্তির সঙ্গে বলল পিভস। বেচারা, বলল সে যেন ঠাট্টা করে।

ও কি বলেছে কে করেছে ওটা? শান্তভাবে বললেন ডাম্বলডোর। ওহ, হ্যাঁ নিশ্চয়ই, স্যার, এমনভাবে যেন তার বগলের নিচে একটা বোমা রয়েছে। ওকে যখন যেতে দেয়নি সে, তখন খুব রেগে গিয়েছিল সে। শূন্যে একটা ডিগবাজি খেল পিভস। দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে ডাম্বলডোরের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসল। বড়ই বদ মেজাজি ওটা, ওই সাইরিয়াস ব্ল্যাক।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *