তখন আসমানতারা তাকে চেনে, আসমানতারা বড় হয়েছে, সে সালোয়ার কামিজ পরে, বুকে ওড়না জড়ায়, তার আগের বালিকাভাব নাই এবং সে ভোলে না যে, সে ওদুদ চৌংয়ের মাইয়াপোয়া, ফলে সে এখন খরকোসকে দেখে তার ছোট্ট নাকটা ইকটু কুঁচকায়া ফালায় এবং বলে, অ তুই খরকোস, খরকোস ন খদ্দে কিয়া, তুই কথে আইবক হইয়োদুদে!
খরকোস যখন তাকে বলে যে, কুতুবউদ্দিন আইবেক দীল্লির বাদশাহ ছিল, ইবায় দাস রাজবংশ খায়েম কইরগিল দে; তখন আসমানতারা বলে, আঁই জানি, তুই কন বাশা হইয়োছ? আসমানতারার সঙ্গে খরকোস পেরে ওঠে না, তখন আব্দুল ওদুদ চৌধুরির ট্রলার বহরে দুইটা নতুন স্টিল বড়ি জাহাজ যোগ হয়, নাম রাখা হয়, এম ভি খোদার দান এবং এম ভি খোদার রহমত, এবং ডলি আক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে আব্দুল ওদুদ চৌং তার ফ্ল্যাগশিপ জাহাজ এম ভি খোদার দান-এর হেড সারেঙ বানায় আঠারো/উনিশ বছরের খরকোসকে; খরকোস ওরফে কুতুবউদ্দিন আইবেক খুশি হয়, কিন্তু তার এম ভি মায়ের দোয়া ছেড়ে আসতেও খারাপ লাগে, তবে সে সঙ্গে করে তার রাঙতা মোড়ানো কাঠের সিংহাসনটা নিয়া আসে, নতুন জাহাজের হুইলঘর মাথার উপরে দোতলায়, এই কেবিনের পাশে খোলা ব্রিজের উপরে সে সিংহাসনটা পাতে, পায়ায় ইস্কুপ মেরে ডেকের সঙ্গে লাগায়া দেওয়া হয়, মাস্তুলের ডগায় নেভিগেশন লাইটের নিচে লাল এবং হইলদা রঙ্গের দুই টুকরা কাপড় পতাকার মত ওড়ে। তখন হয়তো একবার সোনাদিয়ার কাছে খোদার দান নেভির ধাওয়া খায়, নেভির উৎপাত ইদানিং বেশি, সঙ্গে আছে কোস্টগার্ডের যন্ত্রণা, কোস্টগার্ডকেই খরকোসের বেশি ভয়, কারণ নেভির জাহাজগুলা বেশিরভাগ আকারে বড়, দূর থেকে দেখেই সাবধান হওয়া যায়, কিন্তু কোস্টগার্ড হালারপোতেরা ছোট গানবোট নিয়া ঘোরে, দেখাই যায় না, কাছে আইসা কামানের নলের উপর থেইকা কাপড় সরায়া ভো-ফিনিস! সেইদিনও হয়তো খোদার দান-এর পাটাতনের উপরে এবং খোলের ভিতরে অকটেন আর সার ছিল, বার্মিজদের সারের এবং অকটেন তেলের চাহিদার শেষ নাই, মনে হয় তারা সার খায় অকটেন পান করে, এইসব মালের একটা অংশ আরাকানের ভিতর দিয়া হয়তো ইন্ডিয়ার ত্রিপুরায়ও যায়, ফলে প্রচুর ব্যবসা, তখন এম ভি খোদার দান-এর ব্রিজের উপর থেকে কুতুবউদ্দিন আইবেক কোস্টগার্ডের টহল জাহাজটাকে দেখে, সে নিশ্চিত হয় যে, কোস্টগার্ডও তাকে দেখে ফেলেছে, ফলে লুকানোর পথ বন্ধ এবং একমাত্র উপায় পালানোর চেষ্টা করা, কোস্টগার্ডের জাহাজের গতি বেশি হলেও গভীর উত্তাল সাগরে জাহাজ চালানোর দক্ষতাও পালানোর সুযোগ করে দিতে পারে, এবং খরকোস তাই করে। কোস্টগার্ডের জাহাজ থামার জন্য ওয়ার্নিং শট ছোড়ে, ভুম্ ভুম, কিন্তু এইখানে কি থামা যায়? সে খোদার দান-কে থামায় না, যা থাকে কপালে, ফলে কোস্টগার্ডের মেশিন গানের গুল্লিতে উপরের হুইল রুম ঝাঝরা হয়, কামানের গোলা মাস্তুল ভাঙ্গে, তিরপল ছিঁড়া ফালাফালা করে, কিন্তু দীর্ঘ দৌড়ের পর খোদার দান বেঁচে যায়, এবং নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যাওয়ার আগে সে আব্দুল ওদুদকে জিপিটুজিপি মোবাইলে ফোন করে বলে যে, কোস্টগার্ড গুল্লি করে হুইলরুম ফুটা করে মাস্তুল ভেঙ্গে দিয়েছে, তবে জাহাজের আর কোন ক্ষতি হয় নাই, এখন সব ঠিক আছে। আব্দুল ওদুদ চৌধুরি হয়তো তখন তার বাড়ির বসার রুমে ছিল, সে সব শুনে বলে, আলহামদুলিল্লাহ, এবং তখন–আসমানতারা আসে, সেতো আদরের মাইয়াপোয়া, সে তার বাপকে জিগাস করে, ক্যান হইয়্যেদে আব্বা? কিন্তু আব্দুল ওদুদ সওদাগর মেয়েকে এত কথা বলতে পারে না, আসমানতারা যদি জানতে পারে যে, সে মহা এক স্মাগলারের মেয়ে সে হয়তো কেন্দেই দেবে, তার এমন ফুলের মতো জীবন শেষ হয়া যাবে, সে হয়তো খাওয়া বন্ধ করবে, তার বাপ সাধবে, মা সাধবে, সে খাবে না; তারপর যখন পেটে চিনচিন শুরু হবে তখন সে খাবে এবং বলবে, ঠিক আছে, স্মাগলারই ভাল, বাংলাদেশে কার দাম আছে? কারো নাই, সাতকানিয়া গার্লস হাই স্কুলের ক্লাস সেভেনের ইচা মাছের মত চঞ্চল ছাত্রীরা এইসব গল্প মারে, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারে কয় টাকা বেতন পায়, ফকির হল! তারা এদেরকে বিয়া করবে না, আসমানতারার মনে হয়েছিল সে বিসিএস এ্যাডমিন ক্যাডারের অফিসারকে বিয়া করতে পারে, যুদি তার বাপ একটা যোগড় করে আনে ভাল হয়, এ্যাডমিন ক্যাডারের অফিসারদের ডাট আছে, ইউএনওর বৌয়ের কি হাবভাব, সাতকানিয়া গার্লস স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের নতুন ল্যাবরেটরি উদ্বোধনের ফিতা কাটতে এসেছিল একদিন, ফিতা কাটার পর সকলে ভাবি ভাবি করে অস্থির হয়া গেল, তার সামনে সরবতের গ্লাস ধরা হলো, আঙ্গুরের প্লেট ধরা হলো, কাপে চা ঢেলে দেওয়া হলো, কিন্ত্র সে খেল না কিছুই, না ভাই আমার অসুবিধা আছে, সে বললো এবং একটু থেকে ইউএনওর জিপে উঠে চলে গেল; আসমানতারা কোন এক ইউএনও-কে বিয়া করবে, অবিবাহিত ইউএনও না পেলে কোন এক এসি ল্যান্ডকে, যে পরে ইউএনও হবে, তাদের একজনকে তার বাপ কি খুঁজে বের করতে পারবে না যুদি চিটাগাংয়ে মেয়ের বাপের বাড়ি আছে বলে, কিংবা ঢাকায়—তার বাপতে ঢাকায় একটা বাড়ি কিনতেই পারে-তখন কি রাজি না হয় পারবে? এবং তখন লোহাগাড়া কিংবা চন্দনাইশে যদি তার এই স্বামীর পোস্টিং হয়, সেও ফিতা কাটবে এবং কেউ খেতে বললে খাবে না, বলবে, না ভাই আমার অসুবিধা আছে, এবং সে তার স্বামীর সরকারী জিপ নিয়া সাতকানিয়া বেড়াইতে আসবে, তখন তাকে দেখে তার স্কুলের বান্ধবীরা ফিট হয়া যাবে। কিন্তু তার বাপের বসার ঘরে সাতকানিয়া উপজেলার এসি ল্যান্ডিকে দেখে তার সেই শখ শেষ হয়া যায়, তার বাপ এই তরুণ এসি ল্যান্ডকে ধমকাচ্ছিল, আপনে খামাখাই এত কথা বলছেন। কেন, বাজারের বড় পুকুরটা আপনে আমার নামে করে দেন যে, আর ঝামিলা করিয়েন না; এইসব ধমক খাওয়া লোকদের আসমানতারা বিয়া করবে না, ফলে স্মাগলার নিয়া আসমানতারার অত শুচিবাই ছিল না, তারপরেও মেয়ের কাছে বাপের একটা লজ্জার ব্যাপারতো থাকতে পারেই, তাই আব্দুল ওদুদ আসমানতারাকে বলে যে, খরকোস ফোন করেছিল, সে জাহাজ নিয়া হক্সোবাজার যাচ্ছে, এবং তখন টেকনাফের অদূর দিয়া মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক পার হতে হতে খরকোসের জানেআলম বধের কথা মনে পড়ে, সেদিন লোহার ডান্ডার বাড়ি খায় তার মাথার ঘিলু বের হয়া গিয়েছিল আলু ভর্তার মত, জাকির এবং শমসুর মাথা, পাঁজর এবং হাতপাওয়ের হাড়িগুড়ি ভেঙ্গে মেসমার হয়া গিয়েছিল, সেইদিন টেকনাফের কাছ দিয়া যেতে যেতে সে সাগরে ফালায়া দিয়েছিল তিনটা লাশ। খরকোস খোদার দানকে একটা পাগলা ঘোড়ার মত পানির উপর দিয়া দৌড়ায়া নিয়া যায়, তখন ওদুদ চৌধুরির সঙ্গে কথা শেষ হয়া গেলে সে তার পকেটে মোবাইল রেখে দিয়া দূরে বার্মার তটরেখার দিকে তাকায়, কত কাছে মনে হয় ভূমি, কিন্তু তবু কত দূরে; তখন আসমানতারার কথা তার মনে পড়ে, তুই কতুথে বাশো হইয়োছ দে ওড়া? ফলে ওদুদ চৌধুরি যখন ফোন করে তাকে একদিন বলে, আইবেক তুই সাতকাইন্না আসবি কবে? তাকে আইবেক বলে ডাকায় খরকোস খুশি হয়, সে বলে, কিয়া, কোনো খাম আছে না? অবশ্যই খরকোস ক্রমে আব্দুল ওদুদের প্রিয় হয়া . উঠেছিল, তবে খরকোস যে আইবেক হয় যাবে ভাবাই যায় নাই, ডলি আক্তার হয়তো আব্দুল ওদুদকে বলে যে, পোলাটা খুবই কাজের, এবং তখন হয়তো বার্মায় তার ব্যবসা সংক্রান্ত কোন জটিলতা নিয়া আব্দুল ওদুদ তার পুত্রদের পাশাপাশি আইবেকের সঙ্গেও পরামর্শ করতে চায়। তখন আইবেক আসে, রাইতের বেলা ডাইনিং টেবিলের পাশেই ফ্লোরের উপরে মাদুর পেতে তাকে ভাত দেওয়া হয়, ডলি আক্তার কাছে বসে থেকে খাওয়ার তদারকি করে এবং তখন আব্দুল ওদুদ তার সঙ্গে কথা বলে, খরকোস হয়তো শোনে, অথবা হয়তো ভালমত শোনে না, সে ডলি আক্তারের দিকে তাকায়া থাকে, মায়ের মত এই মহিলা কত আদর দেয় তাকে, কি এই মহিলা আসলে তার কে? তারপর সে ওদুদ চৌধুরিকে বলে, আপনে একদিন গহিরায় আসেন না কেন, আম্মা আর ভাইজানদের নিয়া আসেন, সাগরের গভীর ভিতর থেইকা ঘুরায়া আনবনি, আপনেতো খোদার দান-এ একদিনও চড়লেন না। ডলি আক্তারের প্রস্তাবটা খুব পছন্দ হয়, নভেম্বর/ডিসেম্বরে আসমানতারা এবং আব্দুল ওহাবের স্কুলের পরীক্ষা হয়া গেলে তারা এম ভি খোদার দান-এ চড়ে বঙ্গোপসাগরে প্রমোদ ভ্রমণে যাবে, তখন শীতের দিনে আবহাওয়াও ভাল থাকবে। মনে হয় যেন, বিষয়টা ভাগ্যের লিখন হয়া দাঁড়ায়, আব্দুল ওদুদ এবং তার পরিবার ডিসেম্বরের শেষে পৌষের ১২ তারিখে সমুদ্র বিহারে যায় এবং তারা ডুবে মরে, শুধু অসমানতারা সকলের সঙ্গে যেতে পারে না বলে বেঁচে যায়। গহিরা যাত্রার সকালে এককাপ চা খেয়ে রহস্যজনকভাবে তার পেট খারাপ হয়, এতটাই খারাপ হয় যে, তাকে বারে বারে পায়খানায় দৌড়াইতে হয়, সে বলে, আঁই ন যাইয়ুম; ফলে আয়োজন বাতিল হওয়ার উপক্রম হয়, কিন্তু আসমানতারা বলে যে, সে একা থাকতে পারবে, তখন ডলি আক্তার রাজি হয় এবং খরকোস বলে যে, তারা ফিরা আসতে পারবে বিকালেই, অসুবিধা হবে না। তারা সেইদিন খুব সকালে রওনা হয় এবং মোটর গাড়িতে করে দোহাজারির ভিতর দিয়া গহিরা পৌছায়,তখন বেলা দশটার দিকে এম ভি খোদার দান দড়ি খুলে রওনা হয়, তারা দক্ষিণের পথ ধরে, তারপর মহেশখালি বরাবর পশ্চিম দিকে মুখ ঘুরালে ট্রলার গভীর সমুদ্রের দিকে আগায়া যায় এবং তখন পিছনের দিগন্তে মহেশখালির রেখা মিলায়া যাওয়ার পর তারা গানবোটটা দেখে, মনে হয় সেটা তাদের জন্য অপেক্ষা করে ছিল; কিন্তু ট্রলারে সন্দেহজনক কোন কিছু না থাকায় ভয়ের কিছু ছিল না, তবুও আইবেক কিংবা খরকোস হয়তো ভয় পায়া কাণ্ডজ্ঞান হারায়া ফালায়, সে ট্রলারের মুখ ঘুরায়া পালাইতে থাকে, আব্দুল ওদুদ উপরে হুইল ঘরে বসে এইসব দেখে এবং বলে, ইন ক্যান করদ্দে ওভা?
তখন আইবেক বলে, চঅন না!
কিন্তু এইবার গানবোর্টের গতির সঙ্গে খোদার দান পারে না, কোস্টগার্ড তাদের ধরে ফেলতে থাকে, তারা ওয়ার্নিং শট ছোড়, কিন্তু খরকোস থামে না, তখন ওদুদ চৌধুরি এবং তার পরিবার নিচে নেমে জাহাজের হোল্ডের ভিতরে যায় আশ্রয় নেয়, এবং খরকোস মাষ্টার সারেঙের সিটের গদির তলা থেকে একটা স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র বের করে কোস্টগার্ডের গান বোট লক্ষ করে গুলি ছোড়ে, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করার ফলে তখন তাদের ভাগ্য নির্ধারিত হয়া যায়, কোস্টগার্ড নিশ্চিত হয় যে, দুবৃত্ত ভেসেলটা সশস্ত্র এবং কোন দুষ্কর্মে লিপ্ত, তারা এবার সরাসরি টার্গেটের দিকে কামানের নল ঘুরায়, প্রথম গোলাটা হুইল কেবিন উড়ায়া দিলে খরকোস একটা বয়া নিয়া ট্রলারের এক সাইডে ঝুলে পড়ে এবং এভাবে আবার গুলি চালায়, ফলে কোস্টগার্ডের গানবোট টার্গেট ধ্বংস করার ব্যবস্থা করে, কামানের গোলায় এম ভি খোদার দান ছিন্নভিন্ন হয়া যায়, ট্রলারের সঙ্গে পানির নিচে হারায়া যায় আব্দুল ওদুদ চৌং এবং তার স্ত্রী ও ছেলেরা-কেবল সাতকানিয়ায় আসমানতারা বেঁচে থাকে। সেই দিন সন্ধ্যায় টেলিভিশনের খবরে আসমানতারা ট্রলার ডুবি এবং চোরাচালান দলের সলিল সমাধির খবর পায়, তারপর গহিরা থেকে মায়ের দোয়া কিংবা তাদের অন্যকোন ট্রলারের কর্মচারি ফোন করে জানায় যে, এম ভি খোদার দান ডুবে গেছে, এই জাহাজে ওদুদ চৌধুরি এবং তার পরিবার ছিল, আসমানতারার জীবনের গতি তখন থেমে যায়, তার বাপের সংসার ছত্রখান হয় ভেঙ্গে পড়ে, তখন তিনদিন পরে আইবেক কিংবা খরকোস এসে হাজির হয়, এম ভি খোদার দান-এর একমাত্র সে রক্ষা পায়, সে হয়তো কোস্টগার্ডের চোখ ফাকি দিয়া কোন বয়া টয়া কিংবা ভাঙ্গা কাঠের কোন টুকরা ধরে সাগরে ভেসে যায় জীবন বাঁচায়, খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার হলেও এরকম হতেই পারে; তখন কেসি তিন দিন ধরে অর্ধবেহুশ আসমানতারার মাথার কাছে বসে মাথায় জলপট্টি লাগায়, আসমানতারার অবস্থার কিঞ্চিত উন্নতি হয় এবং খরকোস গহিরায়, তার ঘাটি গুটায়া সাতকানিয়ায় এসে পড়ে। সাতকানিয়ায় খরকোসের বসবাস শুরু হয়, আব্দুল ওদুদের দালানের ভিতরে আসমানতারা থাকে এবং টিনের ঘরে থাকে খরকোস, আসমানতারার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়া যায়, বাইরের লোক আর তাকে দেখে না, আব্দুল মাবুদ হয়তো ঢাকা থেকে আসে, কিন্তু আসমানতারার সঙ্গে তার দেখা হয় না, খরকোস তাকে দালানের ড্রয়িং রুমে বসায়া আপ্যায়ন করে এবং বলে, ইবার শরীর গম নয়, ফলে আব্দুল মাবুদ চৌধুরি খরকোসের দেওয়া তিন বস্তা টাকা নিয়া ফিরা যায়, আর এইমুখো হয় না; তখন আসামনতারার সঙ্গে খরকৌসের দেখা হয়, কিম্ভ তাদের কথা হয় না, খরকোস চাকরানিকে হুকুম দেয় ব্লেন্ডারে আঙ্গুরের রস বানায়া দেওয়ার জন্য, চাকরানি রস করে দিলে আসমানতারা খায়। আসিয়া বুয়াকেও খুঁজে বের করে আনা হয়, খরকোস তাকে আসমানতারার। সার্বক্ষণিক দেখাশোনার কাজে লাগায়, তারপর একদিন ঘরে একা খরকোস আসে এবং আসমানতারা তাকে বলে, আইবেক আঁরে তুই ম মারো কিয়া? খরকোস এই মেয়ের মুখের দিকে তাকায়া থাকে, কেন্দে কেন্দে ফেকাসে এবং দুর্বল হয়া গেছে তার শরীর, তখন বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে সে পড়ে যেতে থাকে এবং খরকোস তাকে একটা শিশুর মত দুই হাতের ভিতরে তুলে নেয় এবং আসমানতারার চোখ দিয়া পানি গড়ায়া নামে, সে বলে, আইবেক আঁরে লই ইত্তার ক্যান করিবাদে?
খরকোস হয়তো কথা হারায়া ফালায়, সে জানে আসমানতারা কিছুদিন গেলে সুস্থ হয়া উঠবে, সুস্থভাবে চিন্তা করতে পারবে, এবং তখন এইসব কথা সে বলবে না, ফলে আসিয়া বুয়া তাকে বেদানার রস বানায় খাওয়ায়, মুরগির সুপ খাওয়ায়, কিন্তু আসমানতারার সুস্থ হতে দেরি হয় এবং খরকোস মোবাইলে আব্দুল ওদুদের চট্টগ্রাম শহরের কর্মচারিদের সঙ্গে কথা বলে, গহিরার কাজ কারবার ম্যানেজ করে, কিন্তু তার অস্থিরতা ক্রমাগত বাড়ে এবং দ্রিাহীনতা দেখা দেয়, সে টিনের ঘরের ভিতরে বসে অপেক্ষা করে, কিন্তু আসিয়া বুয়া কোন আশার বাণী বয়া আনে না। আসিয়ার হয়তো খরকোসের প্রতি ক্ষোভ ছিল, কিন্তু তার নারীর মন দ্রুত দ্রবীভূত হয়, খরকোসের জন্য তার খারাপও লাগে, খরকোসতো তাকে ভোলে নাই; ফলে সে আসমানতারাকে খরকোসের বিষয়টা বোঝায়, এই খরকোস কি তার প্রাণের চেয়ে প্রিয় ছিল না। ছিল না কি? এবং আসমানতারার এই কথা স্বীকার না করে উপায় থাকে না, ফলে কোস্টগার্ডের হাত থেকে বেঁচে আসা খরকোস সেইদিন রাইতে গলায় দড়ি বেন্ধে আসমান তারার ঘরে প্রবেশ করে তার খাটের কাছে ফ্লোরের উপরে যায় বসে এবং গলা পর্যন্ত চাদর টেনে শোয়া আসমানতারার দিকে দড়ির মুক্ত প্রান্তটা বাড়ায়া ধরে, তখন আসমানতারা জুরে জান্নাত স্নানভাবে হাসে, সে দড়িটা হাতে নিয়া বলে, ক্যান কইরগম? খাঁচা খডে?
তখন পুকুরের কিনারা থেকে রইদবৃষ্টিতে কালা হয়া যাওয়া খরকোসের খাঁচা খুঁজে বের করে এনে আসমানতারার শোয়ার ঘরে দেওয়াল ঘেঁষে পাতা হয়, এবং খরকোস ওরফে কুতুবউদ্দিন আইবেক তার অবলম্বনহীনতা অতিক্রম করে পুনরায় আসমানতারার খরকোসে পরিণত হয়। তখন সেদিন বিকালে কিংবা রাইতে খরকোস এসে আসমানতারার খাটের কিনারায় বসে, তারপর খাঁচার ভিতরে ঢুকে গোল হয়া হাঁটু ভাজ করে শোয়, তার চোখে ঘুম আসে এবং আসমানতারা যায় খাঁচার দরজা বাইরে থেকে লাগায়া দিয়া রাখে এবং তখন ঘটনাটা ঘটে; এম ভি মায়ের দোয়া হয়তো ক্ষেপ নিয়া বার্মা যাচ্ছিল, মোজাফফর হয়তো চালাচ্ছিল ট্রলারটা, তখন খরকোস তার মোবাইলে মোজাফফরের জিপিটুজিপি ফোনটা পায়, মায়ের দোয়া কোস্টগার্ডের হাতে মারা পড়েছে, বাংলাদেশের জলসীমা পার হয়া বার্মায় ঢুকে যাওয়ার পরেও এইদিন হারামির বাচ্চারা বার্মার সীমানায় ঢুকে মায়ের দোয়া-কে গোলা মেরে ডুবায়া দেয়। আসমাতারার ঘরে খাঁচার ভিতরে কুঁজা হয়া শুয়ে থাকা কিংবা তার খাটের কাছে গলায় দড়ি বান্ধা অবস্থায় বসে থাকার সময় তার মনে হয় যে, মায়ের দোয়া ডুবে গেল? এতদিন ছিল, এখন নাই–কে তার মা? এবং তার তখন দুইটা জিনিস মনে পড়ে, তার নাম মামুন এবং তার বাড়ি ঢাকার নারিন্দার ভূতের গল্লিতে, ফলে সে গলার দড়ি এবং খাঁচা ফালায়া ঢাকা রওনা হয় এবং আসমানতারা হতভম্ব হয়া থাকে; হয়তো মিসেস জোবেদা রহমানও খুবই বিচলিত হয়, তার সামনে দেখা দেয়, খুবই কঠিন একটা সমস্যা কিংবা রহস্য, তার যদিও ভাবতে ইচ্ছা হয় যে, এইসবই খৈমনের কাজ, তার কারসাজি, কিন্তু সে বোঝে যে, ষড়যন্ত্র হিসাবে এইটা খৈমনের জন্য খুবই বড় হয়া যায়, ফলে সে ঘোলা চোখে তার সামনে খাড়ানো খরকোস মামুনের দিকে তাকায়া থাকে, তারপর বলে, বাবা আইবেক তুমি কি আমার কতা হুনবা?
: ন হুইম কিয়া? আপনে বলেন যে!
খরকোস তখন মামুনদের বাসার বাইরের ঘরে বসে মামুনের মার কথা শোনে, এবং সে মামুনের মা মিসেস জোবেদা রহামনের মতই বিভ্রান্ত হয়া পড়ে, আপনে এইটা কি বলতেছেন, আমি বুজতে পারতেছি না, এবং মামুনের মা তাকে পুনরায় বুঝায়া বলে, কি দাম আছে করতি কলের কয়েকটা গানজাখোর মূখ কুলির কথার, না বুইঝা না শুইনা তারা কি বলছে তার কি কোন মাথা মুণ্ডু আছে? থাকারতো কোন কারণ নাই, কার পোলারে তারা ভুসির সঙ্গে পাঠায়া দিয়া কার পোলা মনে করে বসে আছে, হয়তো কুতুবউদ্দিন আইবেক অন্য কারো ছেলে, অন্য কারো পোলা, এখন নামহীন ঠিকানাহীন হয়া পড়ছে, ফলে জোবেদা বেগম তার পোলা মামুনকে হারানোর ভয়ে কাহিল হয়া খরকোল মামুন ওরফে কুতুবউদ্দিন আইবেকের দিকে চায়ের কাপ আগায়া দিয়া যখন বলে, মনে করো আমার আরেক পোলা আছিল, তুমি আমার সেই পোলা, আমি তুমার মা, তুমি আমারে মা, ডাইকো, আইবেক গরম চায়ের কাপে চুমুক দিয়া তাকয়াি থাকে, তারপর সে কান্দে, ধুরন্ধর এবং নৃশংস খরকোস ওরফে আইবেকের মানবিক জীবন ভেঙ্গে পড়ে, তার দিকে তাকায়া জোবেদা রহমানের চিন্তা থৈ পায় না, এবং তখন আইবেক উঠে চলে যায়। সেদিন বিজয় নগর রোডের হোটেল আরজুতে যায়া আইবেক আরো কান্দে, তার কান্দা দেখে তার বুড়া খাদেম, পুরান চাকর আবুইল্যা তার মাথায় হাত বুলায়া দেয়, চুচু শব্দ করে তাকে সান্ত্বনা দিয়া বলে, ন হাদিস বাজি, ন হান্দিল, এবং তখন খরকোস কাশী থামায়া বলে, আঁরে একবস্তা ট্যাকা আনি দঅও! আবুল তখন চট্টগ্রামে জিপিটুজিপি ফোন করে নাইট কোচে এক বস্তা টাকা দিয়া যেতে বলে, এবং খরকোস পরদিন বিকালে অর্ধেকবস্তা টাকা দিয়া কাকরাইল থেকে একটা রিকন্ডিশনড় লেক্সাস গাড়ি কিনে ফালীয় এবং নিজে চালায় মিসেস জোবেদা রহমানের বাড়িতে যায় তার সামনে বাকি টাকা উপুড় করে দেয়, আমি আপনের চেলে, সে বলে!
মিসেস জোবেদা রহমানের জন্য এক মহাসঙ্কট তৈরি করে খরকেস, এখানে কত টাকা? আল্লাহ মালুম, সে দিশা হারায়া তাকায়া থাকে, আমি কি করুম তুমি কও?
: আপনে সত্যি করে বলেন আমি কি আপনের চেলে না?
তখন কি বলবে জোবেদা রহমান? তার মায়ের হৃদয় উথলায়, সামনে আজীবন স্নেহ বঞ্চিত বুভুক্ষু খরকোস করুণ চোখে তাকায় এবং পায়ের কাছে মেঝের শানের উপরে ছড়ানো টাকার বান্ডিল, সে কি মামুনুল হাইকে বিসর্জন দিতে পারে না? মামুনুল হাই কি আসলেই তার ছেলে? নাকি খরকোসই তার পোলা, নয়াবাজারে ভুসি আনতে যায় হয়তো আর ফিরা আসে নাই, অন্য কেউ ফিরা এসেছিল, মামুনুল হাই হয়তো অন্য কেউ, এবং কোন গোলেমালে হয়তো তারা বুঝতে পারে নাই-এই রকম কি হতে পারে না? কিন্তু মিসেস জোবেদা রহমান তার মত বদলায় না, পোলাটা তার টিচারের মেয়ের সঙ্গে প্রেম করছে, খুবই দুর্বল অবস্থায় আছে সে, এই সময় তাকে ত্যাগ করা যায় না, ফলে মামুনুল হাই বেঁচে যায়, এবং খরকোসের কোন গতি হয় না, সে মিসেস জোবেদা রহমানকে বলে, এই টাকা আপনে নেন, আপনের জনাই আনছি।
: এই ট্যাকা আমি নিয়া কি করুম, আমি কি পোলা বদলামু, আশ্চাইর্য!
খরকোস হয়তো তখন আবার কান্দে, সে মোবাইল টেলিফোনে হোটেল আরজুতে অপেক্ষমাণ আবুইলার সঙ্গে কথা বলে, ওড়া আবুল কাকা, আঁই আইর, আজিয়া আঁরা যাইয়্যুম গৈ!
কিন্তু খরকোস মিঞার যাওয়া হয় না, কারণ মন্দিরের সামনে চানমিঞা হয়তো কোসের ঝকঝকে লেক্সাসটা দেখে, এবং মামুনদের বাড়ি থেকে বের হয়া খরকোস তার গাড়ি খুঁজে পায় না, মন্দিরের সামনে পার্ক করা তার গাড়িটা নাই। এই গাড়ি চুরির ঘটনায় খরকোসের চাইতে জোবেদা বেগম এবং তার পরিবার বেশি মর্মাহত এবং উত্তেজিত হয়া পড়ে, জোবেদা রহমান বলে, খরকোস আমার পোলা না? আমার পোলার গাড়ি চুরি করে কিমুন চোর? তারা খরকোসকে নিয়া সূত্রাপুর থানায় যায়, বড় দারোগা কিংবা ছোট দারোগা সব কিছু শুনে একটা কথা জিগাস করে, একদিন আগে ঢাকা আইসা আপনে একটা লেক্সাস গাড়ি কিনা ফালাইলেন, আপনে কি করেন বলেন তো? তখন খরকোস মিঞার সঙ্কট হয়, কি করে সে? সে তার পকেট থেকে বেনসনের প্যাকেট বের করে দারোগার দিকে মেলে ধরে, কিন্তু বুদ্ধিমান দারোগা নেয় না, বেনসনে এইসব কেসের ফয়সালা হয় না, দেশের এইরকম একজন নাগরিক কি করে ভাত খায় সেটা জানা খুবই জরুরি, সে বলে, আমি সিগারেট খাই না!
: ঠিক আছে, আইজ বিকালে হোটেল সাগরিকায় আসেন যে, মগবাজার মোড়ে।
হোটেল সাগরিকায় বসে সূত্রাপুর থানার দারোগার সঙ্গে খরকোস ঝামেলা মিটায়া ফালায়, কিন্তু দারোগী গাড়ি চোরের বিষয়ে কিছুই জানে না, সে খরকোসকে কোন নির্দিষ্ট সাহায্য করতেই রাজি হয় না, ভাবখানা এমন যে, কেস দিয়া যান দিতে চাইলে, আমরা পরে দেখব; তখন খরকোস তাকে বলে, আপনে চোরটাকে চেনেন?
: আমি গাড়ি চোরকে চিনব কেন!
খরকোসের তখন কিছু করার থাকেনা, সে বলে, ঠিক আছে ছার, আমার গাড়ি লাগবে না, আপনের কিছু লাগলে বলবেন যে, এবং সে সাতকানিয়া ফেরার পরিকল্পনা বাদ দেয়, হোটেল আরজুর ডবগবেডের রুম ছেড়ে দিয়া একটা বড় সুইট নেয়, এবং পরদিন ভূতের গল্লিতে মামুনদের বাসায় এসে হাজির হয়, মামুনের মাকে বলে, আম্মা আপনে ভলি আছেন?
তার এই কথা শুনে মামুনের মা আনন্দে উদ্বেলিত হয়া পড়ে এবং ক্রমে সে ইনায়াবিনায় খরকোসের কাছে চানমিঞা এবং তার বান্দর বাহিনীর কথা প্রকাশ করে; জোবেদা বেগমের কথা শুনে খরকোস মামুন ভাবে যে, বান্দরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কোন জাতের কাম না, ঢাকার মানুষ বড়ই চিড়িয়া, বান্দর নিয়া আছে, বান্দরের লগে ফাইট করে, আমাগো সামনে হোস্টেগার্ড, গানবোট, মেশিনগান, কামান বন্দুক। সে জোবেদা বেগমকে আশ্বস্ত করে, আপনে চিন্তা করিয়েন না, আমার কাছে আবুলকাসেম ফরটিসেভেন আছে, একবার মারলে ফিনিস; কিন্তু সে যখন মামুনদের বাড়ির ছাদে উঠে বন্দিরের হিসাব নেয়, চারদিকে বান্দরের গু দেখে পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করতে পারে এবং সে বুঝতে পারে যে, এই চিপা গল্লির মধ্যে বন্দরের মত চঞ্চল টার্গেটের বিরুদ্ধে আবুলকাসেম৪৭এর মত অস্ত্র ব্যবহার করা হয়তো সম্ভব হবে না। তবে প্রথমে খরকোল যখন বলে, সে আবুলকাসেম৪৭ ব্যবহার করবে, তখন আশায় উত্তেজনায় জোবেদা বেগম এবং তার পরিবার অস্থির হয়া পড়ে, এইটা কি বাবা, আবুলকাসেম৪৭?
: আছে একটা জিনিস, খুবই দামি।
কিন্তু পরে যখন খরকোস সিদ্ধান্ত নেয় যে, এই জিনিস সে ব্যবহার করবে না, চট্টগ্রাম থেকে এটা ঢাকায় আনাও ঝামেলা, তখন জোবেদা বেগম এবং তার পরিবার হতাশ হয়, তারা বলে, ব্যবহার না কর, আমাগো একবার দেখাও, আমরা কুনোদিন দেখিনাইকা আবুলকাসেম৪৭, এইটা কেমুন আমরা দেখতে চাই।
: আচ্ছা দেখামু।
কিন্তু খরকোস কোস্টগার্ড/নৌবাহিনীর ধাওয়া খাওয়া লোক, সে এইটা বোঝে যে, বাহিনী খুব খারাপ জিনিস, গাড়ি চোরের খবর নিতে হলে তার বান্দর বাহিনীরও সুরাহা করাই লাগবে, ফলে সে আরজু হোটেলের চাইর তলায় এ-থ্রি নম্বর সুইটে বসে পরিকল্পনা তৈরি করে, ছুতার ডেকে মামুনদের বাসার পিছনের উঠানে ৩x৩ সাইজের তিন/চাইরটা কাঠের ফন্দি বানায়, তারপর সে এবং মিসেস জোবেদা রহমানের দুই ছেলে মিলা ছাদে নিয়া যায়া ফন্দিগুলা পাতে, ভিতারে হরলিকসের বয়াম দিয়া রাখে, কিন্তু বিটলা বান্দরেরা এগুলা ধরে না। তখন খরকোস বিষ মিশায়া লাড়ুর টোপ ছাদের উপরে ছড়ায়া দেয়, বিষ খায়া দুই চাইরটা গেছে ইন্দুর মরে, হয়তো এক/দুইটা কাকও, কিন্তু বান্দরেরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে, তারা খরকোসের এইসব কীর্তিকলাপ দেখে, হয়তো হাসে, বন্দরেরা হাসতেও পারে, কে জানে, এবং হয়তো তারা ভাবে ঠিক আছে, খাড়াও-ফলে বিষঅলা লা পাতার পরদিন বিকালে পরিস্থিতি দেখার জন্য যখন খরকোস ছাদে ওঠে বান্দরের পাশের বিল্ডিংয়ের সিঁড়িঘরের উপর থেকে তার কাপলি বেড়ায়া একটা আধলা ইটা ছুড়ে মারে, ইটটা উড়ে এসে কিছু বোঝার আগেই তার চান্দির উপরে পরে, ঢাপ, এবং খরকোস স্লো-মোশনে বান্দরের প্রয়ের বিছানায় শুয়ে জ্ঞান হারায়া ফেলে! তবে খরকৌসের। লেল্লাসটার আসলেই পরিণতি কি হয়, বলা মুশকিল, চনিমিঞা নিয়া থাকলে সেটা গাজিপুরের বসুমতি মোটর গেরেজ লিঃ-এর ভিতর ঢোকার পর নিশ্চয়ই হজম হয়া যায়, কিন্তু দিন কয়েক পর মন্দিরের গল্লির মোড়ে চানমিঞাঁকে আর একটা গাড়ির মধ্যে দেখা যায়, হয়তো অরি একটা হোভা-হয়তো একর্ড, সিভিকও হতে পারে-সে গাড়ির ভিতরে বসে তার বান্দর বন্ধুদের নিয়া কলা খায়। তখন লেদু, মোর্টকা ফখরুল আলম লেদু, আসে এবং সে যখন বলে, আমারে তুর গাড়িতে চড়াবি না? চানমিঞা বলে, কৈ যাবি?
লেদুর মাথায় কোন দুর্বুদ্ধি ছিল না, চিকন বুদ্ধির সেইরকম পোলা সে না, মোটা শরীর নিয়া চিকন বুদ্ধি রাখা খুব মুশকিল, ফলে তারা সেদিন ভূতের গল্লি থেকে বের হয়া গৌরের মঠ এবং খ্রিষ্টানদের গোরস্থানের সামনে দিয়া হাটখোলার দিকে যায়, হয়তো তারা যাত্রাবাড়ি দিয়া পোস্তগোলার ব্রিজ পার হয়া মাওয়ার রাস্তায় লং ড্রাইভে যেতে পারতো, তখন বলধা গার্ডেন পার হওয়ার পর লেদু বলে, তুই জানছ এই সামনে কে থাকে?
: টিচার!
: ল যাই দেইখা আহি।
চানমিঞা হঠাৎ করে রাজি হয়, তখন সেই বিকালে কিংবা সন্ধ্যায় নারীশিক্ষা মন্দিরের গল্লিতে জুলি ফ্লোরেন্সের সঙ্গে. চানমিল্লার প্রায় দুই যুগ পরে দেখা হয়, ফখরুল আলম লেদু বলে, চিনো? এবং আশ্চর্য জুলি চিনতে পারে, চানমিঞা?
: আমি মাঙ্কি বয়!
মিসেস মেরি ক্লার্ক ভিতরের ঘরে খাটের উপরে চোখ বুজে শুয়ে ছিল, চানমিঞা কাছে যায়া খাড়ায়া যখন বলে, টিচার আমি চানমিঞা, মেরি জয়েস হয়তো তাকায়া দেখে, কে এই পোলাটা? এবং জুলি অনুমতি দিলে নিচে চানমিঞার গাড়ি থেকে তার বান্দর বন্ধুদের দোতলার ঘরে নিয়া আসা হয়, জংলি বান্দরেরা লাফায়াঝাপায়া জুলি ফ্লোরেন্সের ঘর লন্ডভন্ড করে, জুলি আতকে উত্তেজনায় অস্থির হয়া যায়; এবং যেহেতু বান্দর থাকলে কলা থাকবে, ঘরের ভিতরে তারা সকলে মিলা কলা খায়, চানমিঞা হয়তো একটা/দুইটা কলা জুলির দিকে আগায়া দিয়া বলে, কলা বান্দরেরা খাইতে পারে, মানুষও পারে, নেও, এবং জুলিকে এই কলা নিতে হয়, তার তখন তার মার কথা মনে পরে, বি ওয়্যার অফ …। কিন্তু তার মনে হয়, তখন অনেক দেরি হয়া গেছে, কারণ লেদু কি তাকে বলে নাই যে, খুব ছুটুকালেই সে চানমিঞার দেওয়া কলা খাওয়ার কাজ সাঙ্গ করে রেখেছিল, ফলে জুলির জন্য ইট ওয়াজ টু লেট হয়; সে চানমিঞা, লেদু এবং বান্দরদের সঙ্গে মজা করে কলা খায়, এবং যখন সে চানমিঞাকে বলে, আপনে আসেন না কেন? তখন চানমিঞা আবার আসে, নিচে তার গাড়ি এবং বান্দরেরা থাকে, সে মিসেস ক্লার্কের বাসার ড্রয়িং রুমে বসে জুলির সঙ্গে কথা বলে, আমি টিচারকে ভুলি নাই।
: আপনে এখন কি করেন? হোয়াট ডু ইউ ডু নাউ?
: আমি গাড়ি চুরি করি।
জুলির একদম আক্কেলগুড়ুম হয়।
: হোয়াট?
: আমি গাড়ি চুরি করে বেচি, আমি গাড়ি চোর, কার থিফ; নিচে একটা গাড়ি খাড়ায়া আছে, টয়োটা প্রিন্টার, আইজ সকালে চুরি করছি!
জুলি হয়তো ভাবে যে, চানমিঞা নিশ্চয়ই মশকারি করে, এবং তখন চানমিঞা উঠে চলে যায়; একদিন দুইদিন কিংবা পাঁচদিন পর যখন চানমিঞা আবার আসে জুলি তাকে বলে, আজকে কি গাড়ি চুরি করলেন মিস্টার গাড়ি চোর?
: গাড়ি নাই, রিস্কায় আসছি।
তখন চানমিঞার সামনে এক অন্য জুলি খাড়ায়া যায়, সে বলে, আপনের বান্দর বন্ধুদের আনেন নাই?
: গাড়ি ছাড়া তারা চলতে পারে না।
: কলা আছে পকেটে?
জুলি ফ্লোরেন্স কি এইসব ডেসপারেট হয়া করে? কেন সে ডেসপারেট হয়? চানমিঞা পকেট থেকে দুইটা চিনিচম্পা কলা বের করে তাকে দেয়, যেমন বহুকাল আগে ফাদার আলবার্ট চার্লস ডিসুজা দিয়েছিল কুমারী বিদুন্মালা কিংবা লাবণ্যপ্রভা দাসীকে; জুলি সতর্কতার সঙ্গে কামড়ায়া কলা খায় এবং দেখে চানমিঞা ঘরের কোনার ছায়ার মধ্যে অদৃশ্য হয়া বসে আছে, সে তখন বলে, আমাকে একদিন তোমার গাড়িতে চড়াই চানমিঞা? এবং চানমিঞা ভাবে, সে মাঙ্কিবয়, কার থিফ, তার কোন মায়া নাই এই মাইয়ালোক জুলির জন্য, সে শিকারের জন্য তৈরি হয়, চাকু সে ঢুকায় দেবে কইলজা বরাবর, এবং সে বলে, চড়ামু চড়তে চাইলে, আমি একটা বিএমডাম্বু চুরি কইরা আনুম!
চানমিঞা হয়তো বিএমড়াক্কু গাড়ির কথা প্রথম জানতে পারে বসুমতি গেরেজের আরফান আলির কাছেই, জুলির সঙ্গে কথা হওয়ার পর সে এই গাড়ি সম্পর্কে আরো খোঁজখবর নেয়; আরফান আলি এই লাইনে বিদ্যান লোক, সে চানমিঞাকে সব খুলে বলে, মার্সিডিজ ভাল, তার থেইকা ভাল বিএমড়ায়ু, এইটা জার্মানির তৈরি গাড়ি, খুবই দামি, এককোটিরও বেশি দাম হইতে পারে, ঢাকায় আছে কয়েকটা, একশ/দেড়শ হইবো-কি কার আছে আরফান আলি বলতে পারে না। তখন চানমিঞা বলে,আমার একটা দরকার ওস্তাদ, আপনেরে একটা আইনা দেই?
আরফান আলির আগ্রহ দেখা যায় না, বিএমডারু খায়া ফালানো মুশকিল, হজম করা অসম্ভব, পাবলিক নাই কেনার, এই কামে সব থেইকা ভাল টয়োটা, ফটাফট হাওয়া, আরফান আলি দুইদশটা টয়োটা দিনে ম্যানেজ করতে পারে। কিন্তু চানমিঞার জন্য একটা বিএমডাব্লু পাওয়া একান্ত প্রয়োজন হয়া পড়ে, জুলির বাসায় যেতে হলে এখন বিএমডা ছাড়া গতি নাই, সে কথা দিয়েছে, এখন ইজ্জতের ব্যাপার। তাছাড়া সে জুলিকে একটা টয়োটা কি হোভা কি নিসানে চড়াইতে পারে না, এইগুলা ডাইলভাত গাড়ি, একটা মারুতি-সুজুকি এসটিম কিংবা টাটা ইন্ডিকয়িতো প্রশ্নই আসে না-এইগুলা গাড়ি না, লোহা! তখন চানমিঞার মূল কাজে গাফিলতি দেখা দেয়, সে বিএমডাব্লু-র সন্ধানে ব্যস্ত হয়া থাকে এবং একদিন ঢাকা শেরাটন কিংবা সোনারগাঁওয়ে অথবা গুলশানের লেক শোর কিংবা লেক ক্যাসেলে সে বিএমডাব্লু-র খোঁজ পায়, কোন এক ছুটির দিনে, শুক্র কিংবা শনিবার, সে দেখে যে, একটা না, এক আঁক বিএমড়ায়ু লাইন দিয়া খাড়ায়া আছে, এবং তখন চানমিঞার ধূসর জগৎ পুনরায় তার সামনে বাস্তব হয়া ওঁঠে, সে দেখে যে, পাঁচটা গাড়ির মধ্যে একটা কালা, একটা সাদা এবং একটা নীল রঙের, এবং অন্য দুইটার রঙ ধূসর কিংবা ছাই, ফলে সে ব্লু কালারের এক্সসিরিজের এক্স-ফাইভ গাড়িটা পছন্দ করে। যাইহোক, জায়গাটা হয়তো হোটেল সোনারগাও-ই ছিল, চাইরটা গাড়ি পার্কিং এলাকার কাঠবাদাম গাছের নিচে দুই লাইনে, এক দিকে দুইটা করে পরস্পরের বাম্পারের সঙ্গে নাক লাগায়া খাড়ায়া ছিল, নীল রঙের গাড়িটা ছিল একটু দূরে, বিচ্ছিন্ন অবস্থায়, চানমিঞা এইটাকে টার্গেট করে। সে পার্কিং লটের সিকিউরিটি গার্ডের সঙ্গে আলাপ করে, ওস্তাদ বিএমড়াক্কু গাড়ি কার? তার কথা শুনে সিকিউরিটি গার্ডের, তার নাম হয়তো হাবিবুর রহমান, চুল খাড়া হয়া যায়, সে বলে, তোমার দরকার কি? কিন্তু হাবিবুর রহমানের সঙ্গে রফা করা কোন ব্যাপারই ছিল না, গাড়ির ড্রাইভারকেও সে ম্যানেজ করে, চানমিঞী বোঝায় যে, হাবিবুর রহমানের কোন রিস্ক নাই, কারণ গাড়ি খোয়া যাবে না, দেশে চুরি করা বিএমড়াকু গাড়ি বেচা যায় না, গ্রাহক নাই, সে বলে যে, গাড়িটা সে নিয়া যাবে, হয়তো দশবার ঘন্টার জন্য, তারপর অবশ্যই ফিরায়া দেবে-বেইলি রোডের মুখের কাছে রমনা পার্কের অরুণোদয় গেটের সামনে থাকবে গাড়ি। সে হাবিবুর রহমানকে বলে, পুলিশে ধরলে কুনুরকমে বারটা ঘন্টা পার করতে পারলেই আপনের আর ঝামেলা নাই-গাড়িগুলা কার ওস্তাদ?
হাবিবুর রহমান হয়তো এই গাড়ির মালিকদের চেনে, করোনা এবং করোলা কিংবা সানির ভিড়ে বিএমডাব্লু এলে তাদের মালিকদের না চিনা হাবিবুর রহমানের উপায় কি? হয়তো চানমিঞা তার হাতের মধ্যে অতিরিক্ত খাতির হিসাবে একটা প্রাণ ক্যান্ডি ধরায়া দেয়-খান দেশি জিনিস-দেখা যায় যে, হাবিবুর রহমান জ্ঞানী এবং অভিজ্ঞ লোক, দুনিয়া সম্পর্কে তার বিভিন্ন মতামত আছে, ফলে চকলেটের চোকলা ছাড়ায়া মুখে পুরে দিয়া সে গাড়ির মালিকদের বয়ান দেয়: সাদা গাড়িটা ঘাসির বিন আহরামের, সে উড়াজাহাজ দৌড়ায়, আদম উড়ায়া নিয়া যায় মিডিলইস্টে, বাংলাদেশের বাঙ্গাল আদমদের দুবাই, দাহরান কিংবা জেদ্দা এয়ারপোর্টে পাকিস্তানি এবং ইন্ডিয়ান লেন্দু কর্মচারিরা তুই বলে ডাকে, এই কিধার যাতা তু, আরবি ভাইয়েরা তাদের সঙ্গে কথাই বলে না, কিন্তু তাদের উড়ায়া নিয়া যাওয়া খুবই ভালজনক ব্যবসা; কাল রঙেরটা এন্ড্রু এল বাউটপের, তাঁর দোকানের নাম ডোকাল, সে ছড়া মুখস্ত করে চুলটানা বিবিয়ানা/সাহেববাবুর বৈঠকখানা এবং কান্দে, ডাক্তার সাব প্যার্টের ঘাস বাইর করতে পারতেছি না, মরলাম; নীলটার মালিক গাণ্ডিব বহতা, তার কম্পানি রূপের লাগিয়া, রূপতো আছেই মুরগি তুমার আন্ডার খোঁজে পাগল; লাল গাড়িটা অন্বন্তরি টুনাবঙ্গের, সে ট্যাকার কুমির, ট্যাকা দেয়, নেয়, সরকার দুই/চাইরটা ব্যাংক বেসকারিকরণ করলে গিলা ফালাবে-চানমিঞা লাল গাড়ি দেখে না, ভাবে যে, ধূসরের একটা শেড হচ্ছে লাল-আর ছাই রঙের গাড়িটা কোকিল চন্দের, তার কাজ হচ্ছে খাওয়ানো, খায়া যান ট্যাকা ফালান, সে টাকা জমায়া সময়মত ঢাকা শেরাটনটা কিনতে চায়, থ্রি-সিরিজের কম দামি গাড়িটা কিনছে বন্ধুদের দেখাদেখি বিএমডব্লু ক্লাবের সদস্য হওয়ার জন্য। ফলে বাংলাদেশে বিএমড়ায়ু ক্লাবের এই পাঁচজন সদস্য সোনারগাও এর পুল সাইডে বসে গল্প করে, হয়তো রিল্যাক্স করে, আরাম করে, স্ট্রেচ করে, ব্রেক নেয়—তাদের কত কাজ, তাই তাদের বিশ্রাম দরকার। এই সেঁতসেঁতে বৃষ্টির দেশে মরুভূমির ঘাসির বিন আহরাম নবাগত, সে বাগানের ঘাসের ভিতরে সবুজ গিরগিটির মত মিশা যাওয়া গাণ্ডি বহতাকে ওস্তাদ মনে, বলতো ওস্তাদ ব্যবসা বাড়ানোর ফন্দিটা কি?
: বিজ্ঞাপন এবং বিজ্ঞাপন।
: দেবনি বিজ্ঞাপন।
ঘাসিরের ব্যবসার সঙ্গে গাণ্ডিবের কোন সংঘর্ষ নাই, সে পরম উদারতা দেখায়, একটা ভাল বিজ্ঞাপন এজেন্সি ধরো, এই দেশে এইটা খুবই ইম্পরটেন্ট।
: আর একটু বল।
: এই দেশের সিভিল সোসাইটির নেতারা বিজ্ঞাপন এজেন্সি চালাইতে পছন্দ করে, এদের ট্যাকা দিয়া দেও, দে উইল মেক এভরিথিং একসেপ্টেল।
হাবিবুর রহমান আরেকটা প্রাণ টফি চাবায়া খায়া চানমিঞাকে বলে, যাও ভিতরে যায়া দেইখা আস গা; এবং চানমিঞা হোটেলের সুইমিং পুলের কাছে মায়া পাঁচ জনকে পায়, তারা দেড় আউন্স ড্রাই জিন আর আধা আউন্স ড্রাই ভারমুথ এবং বরফের কুঁচি দিয়া বানানো, সঙ্গে লেবুর টুকরা কেটে দেওয়া, মার্টিনির গ্লাসে চুমুক দেয়, এবং হনলুলু থেকে আমদানি করা কাজুবাদাম চাবায়, তখন চানমিঞা যায় তাদের কাছে ঘুরঘুর করে, তারা ভাবে যে, হোটেলের কোন লোক হয়তো হবে। গান্ডিব বহতা তখন বলে, এরা আর্ট কালচারের সঙ্গে জড়িত, ডোনেশন টোনেশন দেই।
: আমিও দেব।
: প্রোগ্রাম স্পন্সর করি।
: আমিও করব।
অন্বন্তরির আগ্রহ অন্য বিষয়ে, সে গান্ডিবকে বলে, খুবই ড্রাই হয়া আছি, বুজছো!
: লবঙ্গকে নিয়া পাতায়া কিংবা কোটা কিনা বালু ঘুইরা আস, ফাইভ নাইটস ওয়ান লাখ, থাকা খাওয়া যাতায়াত তোমার, আমার কাছে মোবাইল নাম্বার আছে, লাগলে দিতে পারি।
তখন তাদের চিন্তাগুলা কাছাকাছি আসে, তাদের বাক্য এবং শব্দের ভিতরকার পার্থক্য এবং অস্পষ্টতা দূর হয়; তারা, অন্বন্তরি টুনারত্নে, ঘাসির বিন আহাম, এন্ড্রু এল বাউটপ, গাণ্ডিব বহতা এবং কোকিল চন্দ, এক ভাষায় কথা বলে।
: এই দেশের লোকেরা বলে যে, দে হ্যাভ দা চিপেস্ট লেবার ইন দা ওয়ার্ল্ড।
: প্রোবলি, নো প্রবলেম, উই উইল ইউজ দেম, এন্ড উই উইল মেক মানি।
: দে আর দা চিপেস্ট, ইয়েস, উই উইল গিভ দেম ওয়ার্ক, এন্ড দে উইল সিং টু আস।
: দেয়ার উইমেন উইল!