অধ্যায় ৮ : আন্তঃপ্রজন্ম দ্বন্দ্ব
আগের অধ্যায়ের শেষে উপস্থাপিত প্রশ্নগুলোর প্রথমটির উত্তর দেবার চেষ্টা করার মাধ্যমে আসুন আমরা এই অধ্যায়টি শুরু করি। মায়েদের কাছে সন্তানদের মধ্যে কি কোনো বিশেষ পছন্দ থাকা উচিৎ অথবা তার কি একইভাবে সব সন্তানদের প্রতি পরার্থবাদী আচরণ করা উচিৎ? পাঠকদের বিরক্তিকর মনে হতে পারে এমন ঝুঁকি সত্ত্বেও আমার অবশ্যই উচিৎ হবে নিয়মমাফিক আমার সাবধানবাণীটি আবার উল্লেখ করা। প্রিয়’ বা ‘বিশেষ পছন্দ’ শব্দটি কিন্তু আত্মগত বা ব্যক্তিক কোনো অনুভূতি জনিত অর্থ প্রকাশ করছে না এবং “উচিৎ’ শব্দটিরও কোনো নৈতিক গুণবাচক অর্থ সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি একটি মাকে গণ্য করছি একটি মেশিন হিসাবে, যা প্রোগ্রাম করা আছে তার ক্ষমতায় করা সম্ভব এমন সব কিছু করার। জন্য যেন তার বহনকারী জিনগুলোর অনুলিপি প্রজন্মান্তরে হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিৎ করা যায়। যেহেতু আমি ও আপনি মানুষ, যারা জানি সচেতন কোনো উদ্দেশ্য থাকলে সেটি কেমন অনুভূত হতে পারে, সেকারণে আমার জন্য উদ্দেশ্য সংশ্লিষ্ট ভাষা রুপকার্থে ব্যবহার করা সুবিধাজনক হবে, যা কিনা সারভাইভাল মেশিনগুলোর আচরণ ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করবে।
প্রায়োগিক ক্ষেত্রে, কি বোঝাতে পারে, যখন বলা হয় কোনো একটি মায়ের তার সন্তানদের মধ্যে একটি সবচেয়ে প্রিয় সন্তান আছে? এর মানে হবে মা তার সন্তান প্রতিপালনের জন্য বরাদ্দকৃত সম্পদ তার সন্তানদের মধ্যে অসমভাবে বিনিয়োগ করবেন। কোনো একটি মায়ের প্রতিপালনের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার মত যে সম্পদ থাকতে পারে, তা নানা কিছু হতে পারে। খাদ্য অবশ্যই তার মধ্যে একটি, এর সাথে যুক্ত আছে খাদ্য সংগ্রহ করার নিমিত্তে ব্যবহৃত সময় ও শক্তি, কারণ এর কারণে মাকেও কিছু মূল্য পরিশোধ করতে হয়। শিকারী প্রাণী থেকে সন্তানদের সুরক্ষা করার লক্ষ্যে নেয়া ঝুঁকি হচ্ছে আরো একটি সম্পদ যা মা ‘খরচ করতে পারেন বা খরচ করতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন। সময় ও শক্তি যা ব্যবহৃত হয় নীড় বানানো আর সেটি রক্ষণাবেক্ষণ করতে, প্রকৃতির নানা শক্তি থেকে রক্ষা এবং কিছু প্রজাতিতে শিশুদের শেখানোর জন্য ব্যবহৃত সময়, এই সবই হচ্ছে আসলে মূল্যবান সম্পদ যা কোনো একটি পিতামাতা তার সন্তানের ভরণপোষণের জন্য বরাদ্দ করতে পারেন, সমানভাবে বা অসমভাবে, তার পছন্দ অনুযায়ী।
এমন কোনো একটি সাধারণ বিনিময় মূল্যের কথা ভাবা খুব কঠিন, যা দিয়ে সেই সম্পদগুলো পরিমাপ করা সম্ভব যা কোনো পিতামাতা তার সন্তানের প্রতিপালনের জন্য বিনিয়োগ করতে পারে। ঠিক যেমন মানব সমাজগুলো টাকা ব্যবহার করে সর্বজনীনভাবে বিনিময়যোগ্য একটি বিনিময় মূল্য হিসাবে, যা কিনা অনুদিত হতে পারে খাদ্য, বাসস্থান আর শ্রমের সময়ের মূল্যমান হিসাবে, সুতরাং আমাদেরও একটি বিনিময় মূল্য প্রয়োজন, যা দিয়ে আমরা এই সব সম্পদগুলো পরিমাপ করতে পারি, যা কিনা একক সারভাইভাল মেশিন হয়তো অন্য আরেক জনের জীবনে বিনিয়োগ করতে পারে– বিশেষ করে কোনো একটি শিশুর জীবনে। যেমন, শক্তি পরিমাপে ‘ক্যালোরি ব্যবহার করার জন্য আমরা প্রলোভিত হতে পারি এবং কিছু পরিবেশবিদ আসলেই প্রকৃতির এই শক্তি খরচের হিসাব নিকাশ করার জন্য নিজেদের নিবেদিত করেছেন। যদিও আমাদের প্রয়োজনের জন্য এটি অপ্রতুল, কারণ এটি শুধুমাত্র হালকাভাবে রুপান্তরযোগ্য সেই বিনিময় মূল্যটির যা আসলেই মূল্যবান, বিবর্তনের ‘গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড’, আর সেটি হচ্ছে জিন সারভাইভাল বা জিনদের টিকে থাকা। আর. এল. ট্রিভার্স ১৯৭২ সালে এই সমস্যাটি তার Parental Investment বা ‘পিতামাতার বিনিয়োগ’-এর ধারণাটি দিয়ে পরিষ্কারভাবে সমাধান করেছিলেন (যদিও খুব আটোসাটো বাক্যগুলোগুলো কি বোঝাতে চাইছে সেটা অনুধাবন করতে পারলে যেকোনো পাঠকেরই একটি বিষয় অনুভব করার কথা যে, স্যার রোনাল্ড ফিশার, বিংশ শতাব্দী অন্যতম শ্রেষ্ঠ তাত্ত্বিক জীববিজ্ঞানী তার parental expenditure ধারণাটি দিয়ে ১৯৩০ সালে একই কথা বোঝাতে চেয়েছিলেন)(১)।
পিতামাতার বিনিয়োগকে (‘parental Investment‘ বা P.I. বা পিআই) সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে এমনভাবে: ‘তাদের অন্য সন্তানের জন্য যতটুকু বিনিয়োগ করতে তারা সক্ষম ছিলেন তার বিনিময়ে, কোনো একটি সন্তানের জন্য পিতামাতার যেকোনো ধরনের বিনিয়োগ, যা কিনা সেই সন্তানটির টিকে থাকার সম্ভাবনা (এবং সেকারণে প্রজনন সফল হবার সম্ভাবনাও) বাড়াবে’, ট্রিভার্সের পিতামাতার বিনিয়োগ সংক্রান্ত ধারণাটির সৌন্দর্য হচ্ছে এটি মাপা হয়েছে সেই ‘এককগুলো ব্যবহার করে যেগুলো সত্যিকারের গুরুত্বপূর্ণ এককগুলোর খুব নিকটবর্তী। যখন কোনো শিশু তার মায়ের বুকের দুধের কিছু অংশ ব্যবহার করে খাদ্য হিসাবে, যে পরিমান দুধ খাওয়া হলো সেটি পাইন্ট দিয়ে পরিমাপ করা হয় না, ক্যালোরি দিয়েও না বরং একই মায়ের অন্য সন্তানদের প্রতি ক্ষতির একক হিসাবে সেটি পরিমিত হয়। যেমন, যদি কোনো একটি মায়ের দুটি সন্তান থাকে, ‘ক’ ও ‘খ’, এবং ‘ক’ এক পাইন্ট দুধ খায়, পিতামাতার বিনিয়োগের একটি সিংহভাগ যা এই পাইন্টটি প্রতিনিধিত্ব করে তা পরিমাপ করা হয়, সম্ভাবনা বৃদ্ধির একক হিসাবে যে ‘খ’ মারা যাবে, কারণ সেই এক পাইন্ট দুধ সে খেতে পারেনি। পিতামাতার বিনিয়োগ’ বা ‘পিআই’ অন্য শিশুদের, যারা জীবিত আছে বা এখনও জন্ম নেয়নি, তাদের সবার প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের কত এককের হ্রাস পায় সেই হিসাবে পরিমাপ করা হয়।
পিতামাতার বিনিয়োগ সম্পূর্ণভাবে একটি আদর্শ কোনো পরিমাপ না, কারণ, অন্যান্য জিনগত সম্পর্কগুলোর বিপরীতে এটি পিতৃত্ব/মাতৃত্ব অর্থাৎ বংশপরিচয়ের গুরুত্বের উপর অত্যাধিক জোর দেয়। আদর্শ পরিস্থিতিতে আমাদের সাধারণীকৃত পরার্থবাদী বিনিয়োগ (altruism investment) পরিমাপটি ব্যবহার করা উচিৎ হবে। যেমন, সদস্য ‘ক’ সম্পর্কে হয়তো বলা যেতে পারে, সে ‘খ’ এর উপর বিনিয়োগ করেছে, যখন ‘ক’, ‘খ’ এর টিকে থাকার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়, সে নিজে সহ অন্যদের প্রতি একই ভাবে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে ‘ক’ এর যতটুকু ক্ষমতা ছিল সেই মূল্যের বিনিময়ে, সব মূল্য পরিশোধ যখন সঠিক আত্মীয়তার পরিমাপে ওজন করা হয়। এভাবে কোনো পিতামাতার তাদের কোনো একটি শিশুর প্রতি বিনিয়োগ আদর্শগতভাবে পরিমাপ করতে হবে শুধুমাত্র তাদের অন্য সন্তানদের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের ক্ষতি করার অর্থেই, বরং সেই হিসাবে আছে, ভাইপো, ভাইঝি, সে নিজেও ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রেই, যদিও, এটি মূল বিষয়টি এড়িয়ে চলা কথার মারপ্যাঁচ, এবং ট্রিভার্সের পরিমাপ ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করার অনেক সুফল আছে।
এখন যেকোনো নির্দিষ্ট একজন প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যের তার সম্পূর্ণ জীবনে নির্দিষ্ট একটি মোট পরিমান পিতামাতার বিনিয়োগ থাকে, যা সে তার সন্তানদের জন্য বিনিয়োগ করতে পারে (এবং অন্যান্য আত্মীয় এবং তার নিজে জন্যেও, তবে খুব সরল ব্যাখ্যার খাতিরে আমরা শুধুমাত্র সন্তানদের কথাই এখানে বিবেচনা করবো)। এটি প্রতিনিধিত্ব করে সর্বমোট পরিমান খাদ্য, যা সে জড়ো করতে পারে বা এমন কিছু যা সে তৈরী করতে পারে তার সারাজীবনের শ্রমের বিনিময়ে, সেই সব ঝুঁকিগুলো, যা সে নেবার জন্য প্রস্তুত এবং সব শক্তি আর পরিশ্রম যা সে ব্যবহার করতে পারে তার শিশুদের কল্যাণে। কিভাবে একটি তরুণ স্ত্রী প্রাণীর, প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের প্রারম্ভে তার জীবনের সম্পদগুলো বিনিয়োগ করা উচিৎ হবে? তার জন্য কোনটি বিচক্ষণ একটি বিনিয়োগ নীতিমালা হতে পারে যা তার অনুসরণ করা উচিৎ? আমরা ইতিমধ্যে ‘ল্যাকের তত্ত্ব’ থেকে জেনেছি যে, তার সম্পদ খুব বেশী সংখ্যক শিশুর মধ্যে ভাগ করে দেয়া উচিৎ হবে না। কারণ সেরকম কিছু করলে সে অনেক বেশী পরিমান জিন হারাবে: তার যথেষ্ট পরিমান নাতি-নাতনী থাকবে না। আবার অন্যদিকে, অবশ্যই সে যেন তার সব সম্পদ খুব অল্প সংখ্যক সন্তানের মধ্যে বিনিয়োগ না করে– বেশী মাত্রায় সযত্নে বড় করা বখে যাওয়া শিশুদের জন্য। সে হয়তো আসলেই তার নিজের জন্য কিছু নাতি-নাতনী নিশ্চিৎ করতে পারবে, কিন্তু তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী যে তার জন্য সবচেয়ে অনুকূল সংখ্যক সন্তানের জন্য বিনিয়োগ করে, তার বেশী সংখ্যক নাতি-নাতনী হবার সম্ভাবনা থাকবে। সুতরাং ন্যায়সঙ্গত বিনিয়োগ নীতিমালা নিয়ে আলোচনা এখানেই শেষ হলো। আমাদের বর্তমান আলোচনার বিষয় হচ্ছে যদি কোনো মা তার সন্তানদের মধ্যে বৈষম্যমূলকভাবে তার সম্পদ বিনিয়োগ করেন, যেমন, তার কি বিশেষ পছন্দের কোনো সন্তান থাকতে পারে কিনা, আর এতে মা কি লাভবান হতে পারে?
প্রশ্নটির উত্তর হচ্ছে, তার সন্তানদের মধ্যে মায়ের কোনো নির্দিষ্ট পছন্দ থাকার জিনগত কোনো কারণ নেই। সব সন্তানের সাথে তার আত্মীয়তার সম্পর্ক একই, ১/২। তার জন্য সবচেয়ে অনুকূল কৌশলটি হচ্ছে সমানভাবে সর্বোচ্চ সংখ্যক সন্তানদের জন্য বিনিয়োগ করা যেন সে তার সব সন্তানদের সেই বয়স অবধি প্রতিপালন করতে পারে, যখন তারা নিজেরাই সন্তানের পিতামাতা হতে পারে। কিন্তু যেমন আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি, কিছু সদস্য অন্য সদস্যের তুলনায় জীবন বীমার ঝুঁকির নিশ্চয়তা হিসাবে বেশী উত্তম। একটি আকারে ছোট আর দুর্বল রান্ট (কোনো প্রাণীর একগুচ্ছ সন্তানের মধ্যে যে সবচেয়ে দূর্বল) তার অন্যান্য সবল লিটার সঙ্গীদের মতোই তার মায়ের সব জিনই বহন করে। কিন্তু তার প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল সংক্ষিপ্ত। অন্য আরেকটি উপায়ে বিষয়টি বলা যেতে পারে যে, পিতামাতার বিনিয়োগে তার যে ভাগ পাওয়ার কথা, তার প্রয়োজন’ আরো বেশী, শুধুমাত্র তার ভাইবোনদের সমান হয়ে উঠবার জন্য। এই পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে, তার সন্তানদের মধ্যে দূর্বলতমকে খাদ্য দিতে অস্বীকার এবং তার ভাগে বরাদ্দকৃত পিতামাতার বিনিয়োগটিকে বাকী ভাইবোনের জন্য বরাদ্দ করলে মায়ের জন্য হয়তো বেশী লাভজনক হতে পারে। সত্যি, হয়তো তার জন্য লাভজনক হবে যদি তার ভাইবোনকে তার এই দুর্বল সন্তানটিকে খাদ্য হিসাবে সরবরাহ করে। বা সে নিজেই যদি তাকে খেয়ে ফেলে এবং তাকে ব্যবহার করে আরো দুধ বানাতে। মা শূকর মাঝে মাঝে তার নিজের শিশুকে খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে, তবে আমার জানা নেই তারা কি বিশেষভাবেই খাদ্য হিসাবে তাদের দুর্বল শিশুটিকে বেছে নেয় কিনা।
রান্ট বা দুর্বল শিশুরা একটি বিশেষ উদাহরণ গঠন করে। আমরা কিছু সাধারণ ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি যে, কিভাবে একটি মায়ের কোনো একটি শিশুর প্রতি বিনিয়োগ প্রভাবিত হতে পারে তার বয়সের কারণে। যদি তার একটি সরাসরি বাছাই করার বিষয় থাকে, বিশেষ একটি শিশুকে বা অন্য কোনো একটি শিশুর জীবন বাঁচানোর জন্য, বিশেষ করে যখন সে যাকে বাঁচাবে না, তার মৃত্যু অবধারিত, তার জন্য উচিৎ হবে, বয়সে বড় শিশুটিকে বাঁচানো। এর কারণ যদি তার ছোট ভাইয়ের বদলে বয়সে বড় শিশুটি মারা যায় সেখানে তার দীর্ঘ দিনের জীবনে পিতামাতার বিনিয়োগের অপেক্ষাকৃত বড় একটি অংশ নষ্ট হবে। হয়তো বিষয়টি আরো ভালো করা বলা যাবে এভাবে, যদি সে তার ছোট ভাইটিকে বাঁচায়, সেক্ষেত্রে তাকে আরো কিছু মূল্যবান সম্পদ তাকে তার বড় ভাইয়ের বয়স অবধি নিয়ে আসার জন্য বিনিয়োগ করতে হবে।
অন্যদিকে, যদি পছন্দ করার বিষয়টি জীবন আর মৃত্যুর মধ্যের কোনো একটিকে বাছাই করার মত এত স্পষ্ট কিছু না হয়, তাহলে তার সেরা বাজীর দানটি হবে অপেক্ষাকৃত কম বয়সী সন্তানটিকে বাছাই করা। যেমন, ধরুন তার দ্বন্দ্ব, একটি নির্দিষ্ট টুকরো খাবার সে কি বয়সে যে বড় সেই সন্তানটিকে দেবে, নাকি তার ছোট সন্তানটিকে। সম্ভবত তার বড় সন্তানটি যথেষ্ট বড় সুতরাং কোনো সাহায্য ছাড়াই নিজের খাদ্য নিজেই খুঁজে নেবার ক্ষমতা তার হয়তো আছে। সুতরাং যদি সে তাকে খাওয়ানো বন্ধ করে দেয়, সে অবধারিতভাবে মারা যাবেই, এমন কিছু বলা যাবে না। কিন্তু অপরদিকে, তার ছোট সন্তানটি যে নিজের খাদ্য নিজে সন্ধান করার জন্য এখনও বয়সে অনেক ছোট, তার মারা যাবার সম্ভাবনা থাকে বেশী, যদি তার মা তাকে বাদ দিয়ে তার বড় ভাইকে খাবার দেয়। এখন, যদিও মা হয়তো চাইবে বড় ভাইয়ের বদলে ছোট ভাই মারা যাক, তারপরও সে কিন্তু ছোট সন্তানকেই খাবার দেবে, কারণ তার বড় সন্তানটির মরে যাবার সম্ভাবনা এমনিতেও কম। এ কারণে স্তন্যপায়ী মায়েরা তাদের সন্তানদের জীবনে অনির্দিষ্টকাল সময় ধরে বুকের দুধ খাওয়ানো বদলে, ধীরে ধীরে তার বুকের দুধ খাওয়ানো পরিমান কমাতে থাকে, যেন সে অন্য খাবারে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারে, যাকে বলা হয় “উইনিং’ বা মাই ছাড়ানো। একটি শিশুর জীবনে এমন একটি সময় আসে, তার সেই সন্তানটির প্রতি বিনিয়োগটিকে তার ভবিষ্যত সন্তানের প্রতি পরিচালিত করাই যখন তার মায়ের জন্য লাভজনক একটি পদক্ষেপ হয়। যখন এই মুহূর্তটি আসে, তখন সে তাকে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেবার প্রক্রিয়াটি শুরু করে। একটি মা, তার যদি কোন উপায়ে জানা থাকে যে, শেষ যে সন্তানটি সে জন্ম দিয়েছিল সে হয়তো প্রত্যাশা করতে পারে তার মা বাকী পুরোটা জীবন ধরে তার সম্পদের বিনিয়োগ অব্যাহত থাকবে তার জন্য, হয়তো তাকে বুকের দুধ খাইয়ে প্রাপ্তবয়স্ক করে তুলবে। তবে যাই হোক না কেন, তার উচিৎ হবে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা, তার নাতি-নাতনী অথবা ভাইপো-ভাইঝিদের জন্য বিনিয়োগ করা তার জন্য বেশী লাভজনক হবে কিনা, যদিও আত্মীয়তার সম্পর্কের পরিমানে তারা তার নিজের সন্তানরা যতটা জিনগতভাবে আত্মীয়, সেই পরিমানের অর্ধেক, তার বিনিয়োগের কারণে তাদের লাভ করার ক্ষমতা হতে পারো তার নিজের কোনো একটি সন্তানের দ্বিগুণ।
এই মুহূর্তটি মনে হয় আরো একটি বিস্ময়কর প্রপঞ্চ, যা পরিচিত ‘মেনোপজ বা রজোনিবৃত্তি হিসাবে, নিয়ে আলোচনা করার উত্তম সময়। রজোনিবৃত্তি হচ্ছে মধ্য বয়সে মানব নারীর প্রজনন উর্বরতার আকস্মিক পরিসমাপ্তি। আমাদের বন্য উত্তরসূরিদের মধ্যে ঘটনাটি হয়তো খুব সচরাচর ঘটেনি, কারণ এমনিতেই সেই সময় সময় অবধি খুব বেশী সংখ্যক স্ত্রী সদস্যরা বেঁচেও থাকতেন না। কিন্তু তারপরও, হঠাৎ করে কোনো নারীর জীবনের এই পরিবর্তন আর পুরুষের উর্বরতার হ্রাসের ক্ষেত্রে ক্রমশ ধীর পরিবর্তন ইঙ্গিত করে রজোনিবৃত্তি প্রক্রিয়াটিতে কোনো কিছু আছে যাকে আমরা বলতে পারবো ‘জিনগতভাবে পুর্বপরিকল্পিত বা বলা যায় একটি ‘অভিযোজন’। বিষয়টি বরং ব্যাখ্যা করা বেশ কঠিন। প্রথম দৃষ্টিতে আমরা আশা করি যে কোনো নারী তার মুত্যুর আগ অবধি সন্তান জন্ম দেয়া অব্যাহত রাখবে, এমনকি যদিও বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার জন্ম দেয়া কোনো সন্তানের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও ক্রমশ হ্রাস পাবে। নিশ্চয়ই মনে হতে পারে এমন কাজ করার প্রচেষ্টা অবশ্যই তার জন্য লাভজনক, তাই না? কিন্তু আমরা অবশ্যই মনে রাখবো সে তার নাতি-নাতনীদেরও আত্মীয়, যদিও তার সন্তানদের সাথে যতটা তার অর্ধেক মাত্রায়।
বেশ কিছু বিচিত্র কারণে, মেদাওয়ারের বৃদ্ধ হবার তত্ত্বটির সাথে যা হয়তো সংশ্লিষ্ট (মূল বইয়ের পৃষ্ঠা ৫১), নারীরা তাদের প্রাকৃতিক অবস্থায় বয়স বাড়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে সন্তান প্রতিপালনে অপেক্ষাকৃত অদক্ষ হয়ে ওঠে। সেকারণে কোনো একটি বয়স্ক মায়ের শিশুর প্রত্যাশিত জীবনের আয়ুষ্কাল একটি তরুণী মায়ের জন্ম দেয়া সন্তানের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের চেয়ে বেশ কম হবে। এর অর্থ হচ্ছে যদি কোনো নারী একটি শিশুর জন্ম দেয় এবং একই দিনে তার একটি নাতির জন্ম হয়, তার নাতি তার সন্তানের চেয়ে বেশী দিন বাঁচবে এমন প্রত্যাশা করা যায়। যখন কোনো নারী এমন একটি বয়সে পৌঁছায় যখন তার প্রতিটি জন্ম দেয়া সন্তানের প্রাপ্তবয়স্ক বয়সে পৌঁছাবার গড় সম্ভাবনা সেই একই বয়সের তার নাতি নাতনীর পূর্ণবয়স্ক হবার সম্ভাবনার অর্ধেকেরও চেয়েও কম হয়, সন্তান অপেক্ষা নাতিনাতনীর জন্য বিনিয়োগ করতে প্ররোচিত করে এমন কোনো জিন, সেই জিনপুলে ভালো করার জন্য প্রাকৃতিক নির্বাচনের আনুকূল্য পাবে। এই ধরনের কোনো জিন বহন করবে তার প্রতি চারটি নাতি-নাতনীর মধ্যে মাত্র একজন, অপরদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী জিন যা বহন করবে তার প্রতি দুই সন্তানের মধ্যে একজন, কিন্তু নাতি-নাতনীদের জীবনের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল বেশী হবার কারণে এই বৈষম্যটির ভারসাম্য পায় বিপরীত দিকে এবং ‘নাতি নাতনী পরার্থবাদী’ জিন জিনপুলে প্রভাব বিস্তার করে। কোনো নারী তার নাতি-নাতনীর জন্য পুরোপুরি বিনিয়োগ করতে পারে না, যদি সে তার নিজের সন্তান উৎপাদন অব্যহত রাখে। সুতরাং জনসংখ্যায় মধ্য বয়সে প্রজননগতভাবে অনুর্বর হবার কোনো জিন সংখ্যায় বাড়তে থাকে। যেহেতু সেই জিনটি বহন করে নাতি-নাতনীদের শরীর, পিতামহী/মাতামহী পরার্থবাদীতা যাদের টিকে থাকায় সহায়তা করে।
নারীদের রজোনিবৃত্তি বিবর্তনের এটি একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা। আর কেন পুরুষদের প্রজনন উর্বরতা আকস্মিকভাবে বন্ধ না হয়ে ধীরে ধীরে হ্রাস পায়, এর কারণ, যেকোনো ক্ষেত্রেই সম্ভবত পুরুষরা কোনো একটি শিশুর প্রতি নারীদের মত বিনিয়োগ করে না। তরুণী নারীদের দ্বারা সে সন্তান উৎপাদন করতে পারে এই শর্তে একজন খুব বৃদ্ধ পুরুষের পক্ষে নাতি-নাতনীর চেয়ে তার সন্তানের জন্য বিনিয়োগ করা লাভজনক।
আপাতত এই অধ্যায় ও এর আগেরটিতে, আমরা সবকিছু দেখেছি কোনো পিতামাতার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে, বিশেষ করে মায়ের দৃষ্টিকোণ থেকে। আমরা প্রশ্ন করেছি, আসলেই কি পিতামাতার পছন্দের কোনো সন্তান থাকা আমরা প্রত্যাশা করতে পারি কিনা এবং সাধারণভাবে পিতামাতার জন্য সেরা বিনিয়োগ কৌশল বা নীতিমালা কি হতে পারে। কিন্তু তার পিতামাতা তার ভাই এবং বোনদের বিপরীতে তার জন্য কতটুকু বিনিয়োগ করবে সেটি হয়তো প্রভাবিত করতে পারে প্রতিটি শিশু। এমনকি যদিও পিতামাতা তাদের সন্তানদের মধ্যে এই বিশেষ ‘পক্ষপাতিত্ব’ দেখাতে আগ্রহী নয়, হতে পারে কি, সন্তানরা নিজেরাই তাদের প্রতি তার পিতামাতার বিশেষ ‘সুনজর কেড়ে নেয়? এমন কোনো কাজ করলে তারা কি লাভবান হয়? আরো কঠোর অর্থে, সন্তানদের মধ্যে কেড়ে নেয়ার স্বার্থপর এই আচরণের জন্য জিনটি কি জিনপুলে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো জিন অপেক্ষা সংখ্যায় বাড়বে, যে জিন কিনা সন্তানদের মেনে নিতে শেখায় তার ভাগে যা পাবার কথা, সেটাই সে পেয়েছে? এই বিষয়টির চমৎকার ভাবে বিশ্লেষণ করেছেন ট্রিভার্স, ১৯৭৪ সালে লেখা তার Parent-Offspring Conflict গবেষণাপত্রে।
একজন মা সমানভাবেই তার সব সন্তানদের সাথে সম্পর্কযুক্ত, যাদের জন্ম হয়েছে আর যারা জন্ম হবার অপেক্ষায় আছে। আমরা যেমন দেখেছি, শুধুমাত্র জিনগত কারণের ভিত্তিতে সন্তানদের মধ্যে তার বিশেষ কোনো পছন্দ থাকা উচিৎ না। কিন্তু যদি সে কোনো সন্তানের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ প্রদর্শন করে, সেটি নির্ভর করে জীবনের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের তারতম্যের উপর, এছাড়া অন্য নিয়ামকের মধ্যে আছে বয়স এবং অন্য আরো কিছু বিষয়। অন্য যেকোনো সদস্যের মতই, মায়ের তার নিজের সাথে নিকটাত্মীয়তার পরিমাপ, তার যেকোনো সন্তানের সাথে নিকটাত্মীয়তার পরিমাপের দ্বিগুণ। অন্য সব বিষয় যদি অপরিবর্তিত থাকে, এর অর্থ হচ্ছে তার উচিৎ হবে তার সম্পদের বেশীর ভাগ অংশ স্বার্থপরভাবে তার নিজের জন্য ব্যয় করা, কিন্তু অন্য বিষয়গুলো সমান নয়। সে তার জিনের বেশী উপকার করবে তার সম্পদের একটি নায্য অংশ যদি সে তার নিজের সন্তানের জন্য ব্যয় করে। এর কারণ এই সব সন্তানরা তার তুলনায় বয়সে অনেক কম এবং তার চেয়েও বেশী অসহায় এবং সে কারণে তারা প্রতি ইউনিট বিনিয়োগের জন্য সে নিজে যতটা উপকৃত হত তার চেয়ে বেশী লাভবান হবে। কারো নিজের জন্য বিনিয়োগ করার বদলে অসহায় সদস্যদের জন্য বিনিয়োগ করতে উৎসাহ দেয়া জিন, জিন পুলে সফল হতে পারে এবং এমনকি যখন সেই বিনিয়োগে উপকৃত কেউ হয়তো উপকারকারীর জিনের শুধুমাত্র একটি অংশ বহন করছে। এ কারণে প্রাণীরা পিতামাতা পরার্থবাদ (parental altruism) প্রদর্শন করে এবং আসলে, কিন-সিলেকটেড বা নির্বাচিত আত্মীয়দের প্রতি প্রদর্শিত প্রাণীদের পরার্থবাদীতারও এটাই কারণ।
এবার বিষয়টি কোনো নির্দিষ্ট একটি শিশুর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখুন। সে ঠিক ততটাই ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত তার প্রতিটি ভাইবোনের সাথে, ঠিক যতটা তার মা সম্পর্কযুক্ত তাদের সবার সাথে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই আত্মীয়তা ১/২। সেকারণে সে ‘চায়’ তার মা, তার সম্পদের কিছু অংশ তার ভাই ও বোনদের প্রতি বিনিয়োগ করুক। জিনগত ভাষায় যদি বলা হয়, ঠিক তার মায়ের মতই সেও তার ভাইবোনদের প্রতি পরার্থবাদী আচরণ করার জন্য পূর্ব নির্দেশিত। কিন্তু আবারো, নিজের সাথে তার আত্মীয়তার পরিমাপ, তার অন্য যে কোনো ভাইবোনদের সাথে তার আত্মীয়তার পরিমাপের দ্বিগুণ। এবং যদি আর সবকিছু সমান থাকে, এটাই তাকে সেটা চাইতে প্ররোচিত করে যে, তার অন্য যে কোনো ভাইবোনের তুলনায় তার মা তার জন্য বেশী বিনিয়োগ করুক। এই ক্ষেত্রে অন্য সব কিছু হয়তো আসলেই একই থাকে। যদি আপনি ও আপনার ভাই একই বয়সের হয়ে থাকেন এবং মায়ের এক পাইন্ট দুধ থেকে সমানভাবে উপকৃত হবার জন্য আপনারা দুজনেই যদি একই অবস্থানে থাকেন, আপনার উচিৎ হবে আপনার নায্যভাবে প্রাপ্য ভাগ থেকে আরে বেশী কিছু কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করা এবং একই ভাবে আপনার ভাইয়েরও ‘উচিৎ’ সেই একই চেষ্টা করা, অর্থাৎ তার নায্যভাবে প্রাপ্ত ভাগের বেশী আদায় করার চেষ্টা করা। আপনি কি কোনোদিন একদল শূকর ছানার চিৎকার শুনেছেন, মা শূকর যখন তাদের দুধ খাওয়ানোর জন্য শোয়, সেই দৃশ্যে প্রথম উপস্থিত হবার দাবী আদায় করার জন্য? আর ছোট বাচ্চা ছেলেদের কেকের শেষ টুকরোটির জন্য মারামারি করতে? মনে হতে পারে শিশুর বেশীরভাগ আচরণকেই বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করছে স্বার্থপর লোভ।
কিন্তু এছাড়াও আরো কিছু বিষয় আছে। আমি যদি আমার ভাইয়ের সাথে এক টুকরো খাবারের জন্য প্রতিযোগিতা করি এবং যদি সে আমার চেয়ে বয়সে অনেক বেশী কম হয়, যে খাদ্যটি পেলে আমার চেয়ে তার বেশী উপকৃত হবার সম্ভাবনা থাকে, আমার জিনের জন্য লাভবান হবে যদি আমি তাকে সেই টুকরোটা খেতে দেই। পিতামাতার যে কারণ থাকে, কোনো একটি বড় ভাইয়ের সেই একই কারণ থাকে তাদের আচরণে পরার্থবাদীতা প্রদর্শন করার জন্য: উভয় ক্ষেত্রে যেমন আমরা দেখেছি, আত্মীয়তার সম্পর্কের পরিমাপ হচ্ছে ১/২, এবং উভয় ক্ষেত্রেই কোনো বয়োজ্যেষ্ঠ কোনো সদস্যের তুলনায় অপেক্ষাকৃত তরুণ সদস্যরা সম্পদের ভালো ব্যবহার করতে পারে। আমি যদি খাদ্যের উপর অধিকার ছেড়ে দেবার জন্য এমন কোনো জিন বহন করি, তাহলে ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা আছে আমরা শিশু ভাইটিও সেই একই জিনটি বহন করছে। যদিও জিনটির দ্বিগুণ সম্ভাবনা আছে আমার শরীরে থাকার– ১০০ শতাংশ, এটি আমার শরীরের মধ্যে– খাদ্যের প্রতি আমার চাহিদা হয়তো জরুরীর থেকে অর্ধেকেরও কম। সাধারণভাবে, কোনো শিশুর ‘উচিৎ নায্যভাবে পিতামাতার বিনিয়োগের যতটুকু পাবার কথা তার সেই ভাগ থেকে আরো বেশী আদায় করার চেষ্টা করা, কিন্তু সেটি একটি নির্দিষ্ট সীমা অবধি। কিন্তু ঠিক কতটুকু অবধি? সে পর্যন্ত, যেখানে তার ভাই এবং বোনদের– যাদের জন্ম হয়েছে এবং যাদের জন্ম হবার সম্ভাবনা আছে– মূল্য পরিশোধ করতে হবে, যদি সেটি সে নিজে কেড়ে নেয় সেখান থেকে যে লাভ হতো, তার দ্বিগুণ।
সেই প্রশ্নটি বিবেচনা করুন– ঠিক কখন বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা উচিৎ, একটি মা তার বর্তমান শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করতে চাইছে, যেন সে এর পরের সন্তানটির জন্য প্রস্তুত হতে পারে। অন্যদিকে, বর্তমান সেই শিশুটি চায় না মায়ের বুকের দুধ খাওয়া থেকে নিজেকে এখনও বঞ্চিত করতে, কারণ দুধ হচ্ছে সুবিধাজনক, কোন ঝামেলাহীন একটি খাদ্য উৎস এবং এখনও সে বাইরে গিয়ে তার নিজের জীবনধারণের জন্য খাদ্য সংগ্রহ করতে চাইছে না। আরো সুনির্দিষ্টভাবে বললে, একসময় সে বাইরে বের হয়ে জীবন ধারণের জন্য খাদ্য সংগ্রহ করতে চাইবে, কিন্তু শুধুমাত্র তখনই, যখন প্রতিপালন পাবার উদ্দেশ্যে নিজের জন্য মাকে আগলে। রাখার চেয়ে তার ছোট ভাইবোনদের প্রতিপালন করার জন্য মাকে মুক্ত করার মাধ্যমে সে তার জিনের জন্য বরং বেশী উপকার করবে। যতই একটি শিশু বয়সে বড় হয় সে অপেক্ষাকৃত কম উপকার আদায় করতে পারে প্রতি পাইন্ট মায়ের দুধ থেকে। এর কারণ সে এখন আকারে বড়, আর সেকারণে তার চাহিদা অনুযায়ী এক পাইন্ট দুধ খুব বেশী পরিমাণ কিছু না, আর এছাড়াও সে ক্রমান্বয়ে তার নিজের জন্য খাদ্য যোগাড় করার উপযুক্ত হয়ে ওঠে যদি সেটি করতে তাকে বাধ্য করা হয়। সে কারণে যখন অপেক্ষাকৃত বয়সে বড় কোনো শিশু এক পাইন্ট দুধ পান করে, যা কিনা কম বয়সী শিশুর জন্য বিনিয়োগ করা যেতে পারতো, সে তখন পিতামাতার বিনিয়োগে নায্যভাবে প্রাপ্ত তার অংশের চেয়ে অপেক্ষাকৃতভাবে বেশী পরিমানে গ্রহন করছে তার নিজের জন্য, অপেক্ষাকৃতভাবে বয়সে কম শিশুটি যখন এক পাইন্ট দুধ পান করে তার তুলনায়। এবং যখন শিশুটি বড় হয়, বয়সে এমন কোনো মুহূর্ত আছে যখন তার মায়ের জন্য লাভ বেশী হয় যদি তার মা তাকে খাওয়ানো বন্ধ করে এবং তার বদলে সেটি বিনিয়োগ করে নতুন কোনো শিশুর জন্য। এবং আরো কিছুটা পরে এমন একটি সময় আসবে যখন বয়সে বড় শিশুটি তার নিজের জিনকে উপকার করবে সবচেয়ে বেশী যদি সে নিজেকে মায়ের দুধের খাওয়া থেকে সরিয়ে আনতে পারে। এটাই সেই মূহুর্ত যখন তার নিজের শরীরে জিনগুলোর জন্য এক পাইন্ট দুধ যতটা উপকার করবে, তার চেয়ে বেশী উপকার করবে তার জিনের অনুলিপিদের, যেগুলো হয়তো তার ভাইবোনের মধ্যে আছে।
মা ও শিশুর মধ্যে মতানৈক্য অবশ্যই চূড়ান্ত কোনো বিষয় নয়, বরং বিষয়টি সংখ্যাবাচক, এই ক্ষেত্রে এই অমিলটা হচ্ছে সময় সংক্রান্ত। মা চায় তার বর্তমান সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে সেই মুহূর্ত অবধি যখন তার প্রতি বিনিয়োগ ‘নায্যভাবে তার যতটুকু প্রাপ্য তার সমান হয়, তবে এখানে সেই বিষয়গুলো কথা মনে রাখতে হবে, এটিকে প্রভাবিত করে তার প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল এবং ইতিমধ্যে মা তার জন্য কতটুকু বিনিয়োগ করে ফেলেছে। এই অবধি আর কোনো ধরনের মতানৈক্য নেই, একইভাবে মা ও শিশু উভয়ে একমত যে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর শিশুটি যেন আর বুকের দুধ পান করা অব্যাহত না রাখে, যখন ভবিষ্যৎ শিশুদের জন্য এর পরিশোধিত মূল্য, তার যা উপকার হবে, সেটির দ্বিগুণ হবে। কিন্তু মা এবং সন্তানের মধ্যে মতানৈক্য ঘটে এই অন্তবর্তীকালীন পর্বে, সেই পর্বটি, যখন শিশুটি তার নায্যভাবে যতটুকু প্রাপ্য তার চেয়ে বেশী পাচ্ছে বলে মায়ের কাছে অনুভূত হয়, কিন্তু তার সেই সন্তানটির যতটুকু উপকৃত হয় সেই পরিমানটি অন্য শিশুদের পরিশোধিত মুল্যের দ্বিগুণ অপেক্ষা তখনও কম থাকে।
দুধ ছাড়ানোর সময়টা শুধু একটি উদাহরণ মাত্র, যা মা আর সন্তানের মধ্যকার দ্বন্দ্বটির প্রতিনিধিত্ব করে, কিন্তু এছাড়াও এটিকে কোনো একক সদস্যের সাথে তার ভবিষ্যত এখনও জন্ম হয়নি সব ভাই। বোনদের একটি দ্বন্দ্ব হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে, যেখানে মা তার ভবিষ্যৎ অনাগত সন্তানের ভূমিকা নেয়। মায়ের বিনিয়োগের জন্য সমসাময়িক প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে আরো সরাসরিভাবে প্রতিযোগিতা থাকতে পারে, যেমন কোনো লিটার বা নীড়ের সদস্যদের মধ্যে। এখানে আরো একবার, মা সাধারণত উৎকণ্ঠিত থাকবে সম্পদের সুবন্টনে।
বহু শিশু পাখি তাদের পিতামাতার সাহায্যে নীড়ে বসেই খাদ্য পায়। তারা সবাই মুখ হা করে খাবারের জন্য চিৎকার করে এবং তাদের পিতামাতা কোনো কেঁচো বা অন্য কোনো টুকরো খাবার তাদের কোনো একজনের খোলা মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়; যে তীব্রতা আর উচ্চকণ্ঠের সাথে প্রতিটি শিশু চিৎকার করে, আদর্শ পরিস্থিতিতে, সেটি নির্ভর করে কে কতটা ক্ষুধার্ত তার উপর, সেকারণে, যদি পাখি পিতামাতা সবসময় যে সবচেয়ে বেশী চিৎকার করে তাকে যদি প্রথমেই খাবার দেয়, তাহলে সবারই তাদের নায্য ভাগ পাওয়ার কথা, কারণ, যখন কোনো শিশু পাখি তার জন্য যথেষ্ট পরিমান খাওয়া পায় সে আর ততটা জোরে চিৎকার করেনা। অন্ততপক্ষে কোনো আদর্শ পরিস্থিতিতে এটাই হবার কথা, যদি কোনো সদস্য প্রতারণার আশ্রয় না নেয়। কিন্তু স্বার্থপর জিনের আলোকে আমদের অবশ্যই প্রত্যাশা করতে হবে যে একক সদস্যরা প্রতারণা করবে’ এবং তারা আসলেই কতটুকু ক্ষুধার্ত সে বিষয়ে তারা মিথ্যা বলবে। এটি ক্রমশ বাড়তে থাকবে, আপাতদৃষ্টিতে বরং মনে হবে উদ্দেশ্যহীনভাবে, কারণ হয়তো মনে হতে পারে যে তারা যদি সবাই উচ্চস্বরে চিৎকার করার মাধ্যমে মিথ্যা ভান করছে, তাহলে উচ্চস্বরে চিৎকার করার এই পর্যায়টি সাধারণ একটি নিয়মে পরিণত হবে এবং আসলেই এর মূল প্রভাবে এটি একটি মিথ্যা হওয়া থেকে বিরত হবে। তবে, এর তীব্রতায় এটি কখনো হ্রাস পাবে না, কারণ কোনো একটি সদস্য যে প্রথম পদক্ষেপটি নেবে বাকী সবার থেকে তার চিৎকারের তীব্রতা কমাতে, সে শাস্তি পাবে কম খাদ্য পাওয়ার মাধ্যমে এবং তার না খেয়ে মারা যাবার সম্ভাবনাও বেশী হবে। শিশু পাখিদের চিৎকারগুলা কখনো অনির্দিষ্টভাবে উচ্চস্বরের হয়না কারণ সেখানে অন্য বিষয়গুলো বিবেচনায় আসে। যেমন, উচ্চ কণ্ঠে চিৎকার, একই সাথে শিকারী প্রাণীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং কাজটি করার জন্য তাদের শক্তিরও ক্ষয় হয়।
কখনো কখনো, যেমন আমরা দেখেছি, কোনো এক গুচ্ছ বাচ্চার। মধ্যে একজন থাকে, যাকে বলা হয় “রান্ট’ বা যে সবচেয়ে দুর্বল এবং আকার-আকৃতিতে সবার চেয়ে ছোট। বাকীদের মত সে শক্তির সাথে খাওয়া পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করতে পারে না, এবং রান্টরা সাধারণত প্রায়শই মারা যায়। আমরা সেই পরিস্থিতিগুলো বিবেচনা করেছি যখন তার দূর্বল শিশুটিকে মরার সুযোগ দিলে মায়ের জন্য আসলেই লাভজনক হবে। আমরা হয়তো সহজাতভাবেই মনে করবো যে, রান্টরা নিজেই তাদের সংগ্রাম অব্যহত রাখবে শেষ অবধি কিন্তু তত্ত্ব আবশ্যিকভাবে তেমন কিছু ঘটার পূর্বধারণা করেনা। যখনই রান্টরা খুব ক্ষুদ্র আর দূর্বল হয়ে পড়ে, তাদের প্রত্যাশিত জীবনকাল এমন একটি পর্যায়ে নেমে আসে যে, পিতামাতার বিনিয়োগের ফলে তার উপকৃত হবার পরিমান, সেই একই পরিমান বিনিয়োগ তাদের অন্যান্য শিশুদের জন্য বিনিয়োগ করলে যে পরিমান উপকৃত হবার সম্ভাবনা আছে তার অর্ধেকেরও কম হয়। এবং রান্টদের মরে যাওয়া উচিৎ স্বেচ্ছায় ও মার্জিতভাবে। এবং এটা করার মাধ্যমে তাদের জিনকে তারা সবচেয়ে বেশী সাহায্য করতে পারে। এর মানে হচ্ছে বলা, কোন একটি জিন যা নির্দেশ দেয়, শরীর, তুমি যদি খুব বেশী ছোট হও, তোমার অন্যান্য ভাইবোন বা লিটারমেটদের তুলনায়, বেঁচে থাকার সংগ্রাম পরিত্যাগ করো এবং মারা যাও’– জিনপুলে সেই জিন সফল হতে পারে, কারণ জিনটির প্রায় ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা আছে তার বেঁচে যাওয়া প্রতিটি ভাইবোনের শরীরে থাকার। এবং কোনো রান্টের শরীরে তার বাঁচার সম্ভাবনা এমনিতেই কম। এমন একটা মুহূর্ত থাকা উচিৎ কোন একটি রাষ্টের জীবনে, সেই মুহূর্তে পৌঁছাবার আগে তার উচিৎ হবে সংগ্রাম অব্যাহত রাখা। এবং যখনই সেই মুহূর্তে সে পৌঁছাবে তার উচিৎ হবে হাল ছেড়ে দেয়া এবং আরো কাঙ্খিত হবে তার ভাইবোন কিংবা তার পিতামাতাকে তাকেই খাদ্য হিসাবে গ্রহন করার সুযোগ দেয়া।
আমি বিষয়টি উল্লেখ করিনি যখন আমরা ল্যাক-এর ক্লাচ সাইজের তত্ত্বটি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম, কিন্তু পিতামাতার জন্য নিম্নে বর্ণিত কৌশলটি যুক্তিসঙ্গত একটি কৌশল হতে পারে, যারা কিনা এখনও মনস্থির করতে পারেনি সেই সাম্প্রতিক বছরে তার জন্য সবচেয়ে অনুকূল ক্লাচ সাইজ কি হতে পারে। তার জন্য যেটি সত্যিকারভাবে সবচেয়ে অনুকূল সংখ্যা হতে পারে বলে সে ‘ভাবছে’, তারচেয়ে সে হয়তো আরো একটি বাড়তি ডিম পাড়তে পারে। তারপর যদি বছরের খাদ্যের পরিমান যা আশা করা হয়েছে। তার চেয়ে ভালো হয়, তাহলে সে আরো একটা বাড়তি শিশু প্রতিপালন করতে পারবে। যদি সেটি না হয় তাহলে সে তার ক্ষতির পরিমান হ্রাস করতে পারবে। তার সন্তানদের খাওয়ানোর সময় সবসময় সতর্কভাবে একই ক্রম অবলম্বন করে, যেমন ধরুন শরীরের আকার অনুযায়ী তার বাচ্চাদের খাওয়ানো মাধ্যমে, যেন সে লক্ষ্য রাখে একটি, হয়তো একটি রান্ট, যেন দ্রুত মারা যায়, এবং খুব বেশী খাদ্য যেন তার জন্য অপচয় করা না হয়, তাদের ডিমের কুসুম অথবা সমতুল্য প্রাথমিক বিনিয়োগের অতিরিক্ত কিছু না। মায়ের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, এটি হয়তো রান্ট প্রপঞ্চটির একটি ব্যাখ্যা হতে পারে। সে তার মায়ের খেলা বাজিটার হেজিং বা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা করে। বিষয়টি বহু প্রজাতির পাখিদের মধ্যে দেখা যায়।
প্রতিটি একক প্রাণীকে সারভাইভাল মেশিন হিসাবে ভাবার রুপকটি যদি ব্যবহার করি, যেখানে সারভাইভাল মেশিনগুলো এমনভাবে আচরণ করে যেন জিনদের সুরক্ষা করতে এর একটি উদ্দেশ্য আছে; আমরা পিতামাতা ও সন্তানদের মধ্যে একটি দ্বন্দ্ব নিয়ে কথা বলতে পারি, প্রজন্মদের মধ্যে কোনো একটি দ্বন্দ্ব। এই যুদ্ধটা সুক্ষ। ধরনের, এবং কোনো ধরনের প্রচলিত নিয়ম দ্বারা এটি আবদ্ধ নয় কোনো দিকেই। প্রতারণা করার জন্য একটি শিশু কোনো সুযোগই নষ্ট করবে না। সে যতটা না তারচেয়ে বেশী সে নিজেকে ক্ষুধার্ত হিসাবে ভান করবে, হয়তো যতটা না তারচেয়েও বেশী ছোট, কিংবা যতটা আসলেই না তারচেয়ে বেশী বিপদগ্রস্থ হিসাবে সে ভান করবে। পিতামাতাকে দিয়ে কোনো কিছু জোর করে করানো বা শারীরিকভাবে চাপ দেবার জন্য এটি অনেক ছোট আর দুর্বল, কিন্তু তার আয়ত্ত্বে আছে এমন সব মনোজাগতিক অস্ত্র সে ব্যবহার করবে; মিথ্যা বলা, প্রতারণা করা, নিজের স্বার্থে ব্যবহার করা, ঠিক সেই পর্যায় অবধি, যতক্ষণ পর্যন্ত জিনগত সম্পর্ক যতটুকু অনুমতি দেয় তার চেয়ে বেশী যখন তার আত্মীয়দের শাস্তি দেয়া শুরু করে। আবার অন্যদিকে পিতামাতাকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে প্রতারণা আর। ছলনাগুলোর ব্যাপারে এবং অবশ্যই তারা চেষ্টা করবে যেন সেগুলো তাদের বোকা বানাতে না পারে। মনে হতে পারে কাজটি খুব সহজ। যদি পিতামাতা জানে যে সে আসলে কতটা ক্ষুধার্ত সে বিষয়ে তার সন্তানের মিথ্যা বলার সম্ভাবনা আছে, সে হয়তো এমন কোনো কৌশল প্রয়োগ করতে পারে, যে একটি নির্দিষ্ট পরিমানই খাওয়াবে তার বেশী নয়, এমনকি যদিও শিশুটি চিৎকার অব্যহত থাকে। এর একটি সমস্যা হচ্ছে যে শিশুটি হয়তো মিথ্যা কিছু বলছে না, এবং যদি সে মারা যায় না খেতে পাবার কারণে তাহলে বাবা মা তাদের কিছু মূল্যবান জিন হারাবে। বুনো পাখিরা মারা যেতে পারে মাত্র কয়েক ঘন্টা না খেয়ে থাকলে।
এ. জাহাভী সুনির্দিষ্টভাবে নিষ্ঠুর শিশুদের ব্ল্যাকমেইল ধারণাটির একটি প্রস্তাব করেছিলেন: শিশুরা এমনভাবে চিৎকার করে যেন, এটি তাদের নীড়ের দিকে ইচ্ছা করেই শিকারী প্রাণীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। শিশুটি যেন বলছে’, ‘শিয়াল, শিয়াল, আসো, আমাকে শিকার করো। আর একটি মাত্র যে উপায়ে পিতামাতা তাকে চুপ করাতে পারে তাহলে একে খাওয়ানো। সুতরাং শিশু তার নায্যভাবে যতটুকু খাদ্য পাবার কথা ছিল তার চেয়ে বেশী পায়, তবে নিজের ঝুঁকি বাড়িয়ে তাকে বাড়তি খাদ্যের মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে। এই নিষ্ঠুর কৌশলের নীতি একই রকম সেই হাইজাকারের মত, যে কিনা কোনো উড়োজাহাজ উড়িয়ে দেবার জন্য হুমকি দিচ্ছে
তার নিজেকে সহ, যদি না তাকে মুক্তিপন দেয়া না হয়। আমি সন্দিহান এটি আদৌ কখনো বিবর্তনের সুবিধা পেতে পারে কিনা, শুধু এই কারণ না যে তারা খুবই নিষ্ঠুর বরং আমার সন্দেহ ব্ল্যাকমেইল করা শিশুর কি আসলেই কোনো উপকার হয় কিনা। কারণ তার হারাবার বহু কিছু আছে যদি আসলেই কোনো শিকারী প্রাণী আক্রমণ করে। বিষয়টি স্পষ্ট যখন একটি মাত্র শিশু থাকে, যে বিষয়টি নিয়ে জাহাভী নিজে গবেষণা করেছেন। তার মা তার জন্য ইতিমধ্যে যত কিছু বিনিয়োগ করুক না কেন, তার নিজের জীবনের মূল্য তারপরও তার বেশী দেয়া উচিৎ, তার মা যতটা মূল্য দেয় তার চেয়ে বেশী, কারণ তার মা শুধু তার অর্ধেক পরিমান জিন বহন করে। উপরন্তু, এই কৌশলটি কোনো সুফল দেবে না এমনকি যদি ব্ল্যাকমেইলার পাখিটি সেই ক্লাচের সবচেয়ে ঝুঁকিপুর্ণ শিশু হয়ে থাকে, তারা সবাই একই নীড়ের বাসিন্দা, যেহেতু ব্ল্যাকমেইলারের ৫০ শতাংশ জিন স্বার্থ আছে তার প্রতিটি হুমকির মুখে থাকা ভাই বোনদের উপর, এছাড়া ১০০ শতাংশ জিন স্বার্থ আছে তার নিজের উপর। আমি মনে করি হয়তো ভাবা যেতে পারে যে এই তত্ত্বটি কাজ করে যদি মূল শিকারী প্রাণীর এমন কোনো প্রবণতা থাকে যে পাখির নীড়ের সবচেয়ে বড় বাচ্চাটিকে প্রথমে সে ধরে নিয়ে যায়। তাহলে হয়তো আকারে ছোট শিশুদের জন্য লাভজনক হবে কোন শিকারী প্রাণীকে ডাকাটি হুমকি হিসাবে ব্যবহার করার জন্য, কারণ এটি তাকে অতিরিক্ত বেশী কোন ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে না। এটি তুলনা করা যেতে পারে, নিজেকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেবার হুমকি দেবার বদলে আপনার ভাই এর মাথায় পিস্তল ঠেকানোর মত।
আরো বিশ্বাসযোগ্যভাবে, এই ব্ল্যাকমেইল করার কৌশল হয়তো কোনো শিশু কোকিলের স্বার্থ রক্ষা করে। সুপরিচিত একটি বিষয় হচ্ছে স্ত্রী কোকিলরা একটা করে ডিম পাড়ে তাদের বেশ কয়েকটি ‘পোষক’ পাখির নীড়ে এবং তারপর সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতির পোষক পাখি পিতামাতাদের উপর তাদের অজান্তেই শিশু কোকিলকে প্রতিপালন করার দ্বায়িত্ব দিয়ে যায়। সুতরাং কোনো একটি শিশু কোকিলের জিনগত কোনো দায়ভার থাকে না তার পোষক ভাইবোনদের সাথে কিছু কোকিল প্রজাতির শিশু তো কোনো পোষক ভাইবোনই রাখে না, আরো অশুভ সেই কারণ নিয়ে আমরা পরে আলোচনা করছি। আপাতত আমি ধরে নিচ্ছি আমরা এমন কোনো প্রজাতির কোকিলের কথা বলছি, যারা পোষক পিতামাতার সন্তানের সাথে বড় হয়); যদি কোনো শিশু কোকিল, শিকারী প্রাণীতে আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট জোরে চিৎকার করতে পারে, তার অনেক কিছু হারাবার সম্ভাবনা আছে– তার জীবনটাও যেতে পারে– কিন্তু তার তুলনায় পোষক মার হারাবার আছে আরো বেশী, হয়তো তার চারটি বাচ্চাই মারা যেতে পারে। সুতরাং তার জন্য বরং উপকারী হবে এই চিৎকার করা পাখিটাকে তার নায্য ভাগের চেয়ে বেশী পরিমানে খাওয়ালে এবং কোকিলের জন্য এর সুবিধা হয়তো এর ঝুঁকির চেয়েও বড়।
এটি হচ্ছে সেই উপলক্ষ্যগুলোর অন্যতম যখন সংশ্লিষ্ট জিনের ভাষায় পুনরায় অনূদিত করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে, শুধুমাত্র আমাদের অন্তত আশ্বস্ত করার জন্য যে আমাদের ব্যক্তিক ধারণার রুপকগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে আমরা মূল সত্যটির খেই হারিয়ে ফেলিনি। শিশু কোকিলরা তাদের পোষক পিতামাতাদের ব্ল্যাকমেইল করে চিৎকার করে, “শিকারী পাখি, শিখারী পাখি আসো আমাকে আর আমার সব ছোট ভাইবোনদের খেয়ে ফেলো’ এমন কোনো হাইপোথিসিস দাঁড় করানোর আসল অর্থ কি? জিনগত ভাষায় এর অর্থ হচ্ছে একরম:
উচ্চস্বরে চিৎকার করার জন্য কোকিলের জিনটি কোকিলদের জিন পুলে সংখ্যায় বাড়ে কারণ তাদের উচ্চস্বরে চিৎকার সেই সম্ভাবনাটিকে বাড়িয়ে দেয় যে তার পোষক পিতামাতা চিৎকার করা শিশু কোকিলদের আগে খাওয়া দেবে। এবং পোষক পিতামাতা এইভাবে চিৎকারের প্রতি তাদের প্রতিক্রিয়া দেখায় তার কারণ সেই জিনটি পোষক প্রজাতির জিনপুলে বিস্তার লাভ করে। আর এই জিনটি পোষক পাখিদের প্রজাতির জিনপুলে বিস্তারের কারণ হচ্ছে যে, পোষক প্রজাতির পিতামাতারা যারা কোকিলদের বাড়তি খাদ্য দেয়নি, তারা সংখ্যায় কম নিজেদের সন্তানদের প্রতিপালন করতে পেরেছে– তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রজাতিদের তুলনায় কম, যারা কোকিলের শিশুকে বাড়তি খাওয়া দিয়েছে। এর কারণ শিকারী প্রাণীরা পাখির নীড়ের প্রতি আকর্ষিত হয় কোকিল শিশু চিৎকারের কারণে। যদিও চিৎকার না করার জন্য কোকিলের জিনের কম সম্ভাবনা থাকে চিৎকারের জন্য জিনের তুলনায় শিকারী প্রাণীর খাদ্য হবার, চিৎকার না করা কোকিল শিশু আরো আরো বড় শাস্তি পায় বাড়তি খাদ্য না পাওয়ার মাধ্যমে। সুতরাং চিৎকার করা জিন কোকিলের জিনপুলে বিস্তার লাভ করে।
একই ধরনের জিনগত যৌক্তিকতার শৃঙ্খল, যা উপরে উল্লেখিত অপেক্ষাকৃত বেশী আত্মগত যুক্তিকে অনুসরণ করলে আমাদের দেখাবে যে, যদি এমন কোনো ব্ল্যাকমেইল করা জিন কল্পনা করা যেতে পারে, যা কোকিলের জিন পুলে বিস্তার লাভ করে ঠিকই, তবে কোনো এটি সাধারণ প্রজাতির মধ্যে বিস্তার লাভ করার সম্ভাবনা খুব কম। অন্ততপক্ষে সেই বিশেষ কারণে না– শিকারী প্রাণীকে আকর্ষণ করা। অবশ্যই, কোনো সাধারণ প্রজাতিদের মধ্যে এই চিৎকার করার জিনটি বিস্তার লাভ করার আরো অন্য কারণ থাকতে পারে, যেমন আমরা দেখেছিলাম এবং এর একটি সংশ্লিষ্ট ‘ঘটনাক্রমে’ প্রভাব থাকবে মাঝে মাঝে শিকারী প্রাণীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করায়। কিন্তু এখানে শিকারী প্রাণী আক্রমনের স্বীকার হবার নির্বাচনী প্রভাবটি হবে, যদি কিছু হয়ে থাকে, সেই কান্নাটি তীব্রতা কমানোর দিকে। কোকিলদের এই হাইপোথেটিকাল কেসে, শিকারী প্রাণীদের মূল প্রভাব হতে পারে, যদিও ধাঁধার মত শোনাবে প্রথমে, এই চিৎকারটির তীব্রতা আরো বৃদ্ধি করা।
কোনো প্রমাণ নেই, যেকোনো দিক বরাবর, আসলেই কি কোকিলরা বা অন্যান্য পাখিরা যারা একই ধরনের ব্রুড় প্যরাসাইট বা প্রজনন পরজীবি আচরণ প্রদর্শন করে, আসলেই এমন কোনো ব্ল্যাকমেইলের কৌশল অবলম্বন করে। কিন্তু অবশ্যই তাদের আচরণে নিষ্ঠুরতার কোনো ঘাটতি নেই। যেমন, হানিগাইড পাখিদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোকিলদেও মতই তারা তাদের ডিম পাড়ে প্রজাতির পাখির নীড়ে। শিশু হানিগাইড পাখিদের ধারালো আর বাঁকানো ঠোঁট থাকে, যে মুহর্তে সে ডিম থেকে বের হয়ে আসে, যদিও তখন সে চোখে কিছু দেখে না, গায়ে কোন পালকও নেই, অন্যথায় অসহায়, ঠিকই সে তার ঠোঁট দিয়ে ঠুকরে ঠুকরে তার পোষক বাবা মার সন্তানদের মেরে ফেলে: মত ভাইবোনরা খাদ্য নিয়ে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারেনা। পরিচিত ব্রিটিশ কোকিলও সেই একই কাজটি করে একটু অন্যভাবে; যেহেতু তাদের তা দেবার পর ডিম ফুটে বের হয়ে আসার সময় কিছুটা দ্রুত, শিশু কোকিল তাই আগেই ডিম ফুটে বের হয়ে আসতে পারে তার পোষক পিতামাতার সন্তানদের তুলনায়। যেই মুহূর্তে এটি ডিম ফুটে বের হয়ে আসে, অন্ধের মত, যান্ত্রিকভাবে, কিন্তু মারাত্মক বিধ্বংসী দক্ষতায়, এটি অন্য ডিমগুলোকে নীড় থেকে বের করে ফেলে দেয়। কোনো একটি ডিমের নিচে এটি ঢুকে ডিমটিকে সে তার পিঠের ভবিষ্যতের ডানা হবার সেই খানিকটা উঁচু হবার জায়গায় ধরে ভারসাম্য রক্ষা করে বহন করে নিয়ে যায় নীড়ের একেবারে কিনারায়, তারপর নীড়ের বাইরে সে ডিমটিকে ছুঁড়ে মাটিতে ফেলে দেয়। একইভাবে সে প্রতিটি ডিমের সাথে একই কাজ করে, যতক্ষণ না সেই নীড়টিকে সে তার নিজের দখলে না নেয়, এভাবে তার পালক পিতামাতা পূর্ণ মনোযোগ সে দখল করে নেয়।
আরো একটি সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য যা আমি জানতে পেরেছিলাম গত বছর, সেটি রিপোর্ট করেছিলেন এফ, আলভারেজ, আরিয়াস দে রেইনা এবং এইচ, সেগুরা। তারা সম্ভাব্য পোষক পিতামাতার ক্ষমতা যাচাই করছিলেন– কোকিলদের সম্ভাব্য শিকার যারা– এরকম কোনো অনুপ্রবেশকারীকে শনাক্ত করার জন্য তারা আসলে কতটুকু সক্ষম –কোকিলে বাচ্চা কিংবা ডিম কি তারা শনাক্ত করতে পারে? তাদের গবেষণাকালীন সময়ে তাদের সুযোগ হয়েছিল ম্যাগপাইদের নীড়ে কোকিলের ডিম আর বাচ্চাদের প্রতিস্থাপন করার এবং এর সাথে তুলনা করার জন্য কিছু ম্যাগপাইয়ের নীড়ে অন্য কোন প্রজাতির শিশু আর ডিম রেখেছিলেন, যমন, সোয়ালো। একবার যখন তারা একটি শিশু সোয়লোকে ম্যাগপাইয়ের নীড়ে রেখেছিলেন, পরের দিন তারা লক্ষ করেছিলেন যে একটি ম্যাগপাই পাখির ডিম নীড়ের পাশে মাটিতে পড়ে আছে, তবে তা ভেঙ্গে যায়নি তখনও, সেকারণে তারা সেটি পাখির নীড়ে আবার তুলে রেখে এবং লক্ষ রেখেছিলেন। তারা যা দেখেছিলেন তা আসলেই অত্যন্ত বিস্ময়কর। শিশু সোয়ালোটি ঠিক সেই শিশু কোকিলের মতই আচরণ করছে, তারাই একটি ডিম বাইরে ফেলে দিয়েছিল। আবারো তারা সেটাই করে। সেই শিশু সোয়ালোটি ঠিক কোকিলের মত তাদের পিঠের ডানার ভাজে ম্যাগপাইদের ডিম বহন করে পেছন বরাবর হেঁটে নীড়ের প্রান্তে এসে ডিমটি ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। হয়তো বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েই আলভারেজ ও তার সহযোগীরা তাদের এই বিস্ময়কর
পর্যবেক্ষণটি ব্যাখ্যা করার কোনো চেষ্টা করেনি। কিভাবে এই আচরণটি বিবর্তিত হতে পারে সোয়ালেদের জিন পুলে? নিশ্চয়ই এই আচরণটি সোয়ালোদের স্বাভাবিক জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট। শিশু সোয়ালোরা নিশ্চয়ই নিজেদের ম্যাগপাইদের নীড়ে খুঁজে পেতে অভ্যস্ত নয়। সাধারণত তাদের নিজেদের নীড় ছাড়া অন্য কোথাও তাদের পাওয়া যায়না। এই আচরণটি তাহলে একটি বিবর্তিত কোকিল বিরোধী অভিযোজনের প্রতিনিধিত্ব করছে? প্রাকৃতিক নির্বাচন কি সোয়ালো জিন পুলে কোনো প্রতি-আক্রমনের জিনকে সাহায্য করেছে বিশেষভাবে, কোকিলদের পদ্ধতি ব্যবহার করে কোকিলদের বিরুদ্ধে প্রতি-আক্রমনে? আর এটাও বাস্তব সত্য যে কোকিলরা সোয়ালোদের নীড় সাধারণত পরজীবির মত ব্যবহার করেনা। হয়তো এটাই সেই কারণ। এই তত্ত্ব মোতাবেক, পরীক্ষায় ম্যাগপাই ডিম ঘটনাচক্রে এই ধরনের আচরণের শিকার হচ্ছে, হয়ত কারণ, কোকিলের ডিমের মত, তারা সোয়ালো ডিমের চেয়ে বড়। কিন্তু যদি শিশু সোয়ালো একটি বড় ডিম আর সাধারণ সোয়ালোর ডিমের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে, নিশ্চয়ই তাদের মায়েরও সেটা করতে পারা উচিৎ। তাহলে এই ক্ষেত্রে কাজটি তাদের মা নিজেই করছে না কেন, কেন সে কোকিলের ডিম তার নীড় থেকে বাইরে ফেলে দিচ্ছে না, কারণ সেটা করা তার জন্য অনেক বেশী সহজতর হবে তার শিশুর তুলনায়? এই একই অভিযোগ প্রযোজ্য সেই তত্ত্বটির ক্ষেত্রে যে, কোনো শিশু সোয়ালোর একটি আচরণ আছে যে নীড়ের মধ্যে কোনো ময়লা কিংবা পঁচা ডিম সে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। আবারো, এই কাজটি শিশু সোয়ালোর পিতামাতারা আরো ভালোভাবে করতে পারতো। বাস্তব সত্যটি হচ্ছে এই কঠিন আর দক্ষ ডিম-ছুঁড়ে ফেলে দেবার অপারেশনটি দেখা গেছে করে কোনো দুর্বল অসহায় সোয়ালো শিশু, যে কাজটি কোনো প্রাপ্তবয়স্ক সোয়ালো অনায়াসেই করতে পারতো– এই পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করছে সেই উপসংহারে পৌঁছাতে, পিতামাতার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে, শিশুটির মতলব ভালো নয়।
আমার কাছে এটাও সম্ভাব্য মনে হতে পারে যে সত্যিকারের ব্যাখ্যাটির সাথে কোকিলদের আদৌ কোনো যোগসূত্র নেই। রক্ত হয়তো শীতল হতে পারে ভেবে, কিন্তু এটাই কি শিশু সোয়ালোরা একে অপরের সাথে করতে পারে? যেহেতু যে প্রথমে জন্ম নেয়, তাকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে হয় এখনও ডিম থেকে না বের হওয়া ভাই বোনদের সাথে, একটি ডিম নীড়ের বাইরে ফেলে দিয়ে জীবন শুরু করা তার জন্য এটি সুবিধাজনক একটি পদক্ষেপ হতে পারে। ক্লাচের আকার সংক্রান্ত ল্যাকের তত্ত্ব পিতামাতার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে কোনটি সবচেয়ে অনুকূল সেটি বিবেচনা করে। আমি যদি কোন মা সোয়ালো হয়ে থাকি, আমার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সবচেয়ে উপযুক্ত ক্লাচ সাইজ হবে, ধরুন পাঁচ। কিন্তু আমি যদি শিশু সোয়ালো হয়ে থাকি,তাহলে আমার জন্য উপযুক্ত ক্লাচ সাইজ হবে আরো ছোট কোনো সংখ্যা, শর্ত শুধু আমিও তাদের একজন হববা! পিতামাতার একটি নির্দিষ্ট পরিমান ‘পিতামাতার বিনিয়োগ’ আছে, যা সে চায় তার পাঁচটি সন্তানের মধ্যে সমানভাবে বন্টন করতে, কিন্তু প্রতিটি শিশু তাদের নায্য প্রাপ্যের এক পঞ্চমাংশের আরো বেশী দাবী করে। কোকিলের ব্যতিক্রম, সে পুরোটা চায় না, কারণ সে অন্য ভাইবোনদের সাথে জিনগতভাবে আত্মীয়তার সম্পর্ক বহন করে। কিন্তু সে এক পঞ্চমাংশ ভাগের চেয়ে বেশী পরিমানে চায়। সে এক চতুর্থাংশ (১/৪) ভাগ অনায়াসে নিশ্চিৎ করতে পারে, নীড় থেকে একটি ডিম ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে। এক তৃতীয়াংশ (১/৩) পেতে পারে আরেকজনকে বাইরে ফেলে দিতে পারলে। জিনের ভাষায় অনুবাদ করলে, কোনো একটি জিন যা ভাতৃহত্যার জন্য দায়ী, কল্পনা করা সম্ভব যে জিন পুলে ছড়িয়ে পড়বে কারণ এর ১০০ শতাংশ সম্ভাবনা আছে ভাতৃহত্যাকারী কোনো প্রাণীর সদস্যর শরীরে থাকার। কিন্তু মাত্র ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা আছে এই ভাতৃহত্যার শিকার কোন সদস্যের শরীরে থাকার।
এই তত্ত্বটির মূল বিরোধিতা হচ্ছে যে খুবই কঠিন বিশ্বাস করা যে কেউই এই অশুভ আচরণ দেখবেন না যদি এটি সত্যি ঘটে। আমার কাছে কোনো বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা নেই এর। বহু ধরনের সোয়ালো পাখি আছে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে। আমরা জানি যে সোয়ালোদের স্প্যানিশ গ্রুপটি কিছু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন ব্রিটিশ সোয়ালোদের থেকে ভিন্ন। ব্রিটিশ সোয়ালোদের মত স্প্যানিশ সোয়ালোদের উপর একই মাত্রার নিবিড় কোনো গবেষণা হয়নি এবং আমার মনে হয় এটি সম্ভাব্য যে ভাতৃহত্যা সেখানেও ঘটে কিন্তু বিষয়টি খেয়াল করা হয়নি।
এখানে ভাতৃহত্যা হাইপোথিসিসের এমন কোনো অসম্ভাব্য ধারণা প্রস্তাব করার জন্যে আমার কারণ হচ্ছে যে, আমি একটি সাধারণ বিষয় সামনে আনতে চাই। সেটি হচ্ছে শিশু কোকিলদের নিষ্ঠুর ব্যবহার হচ্ছে চূড়ান্ত কোনো উদাহরণ যা কোনো পরিবারে অবশ্যই ঘটে থাকে। আপন ভাইরা একে অপরের আরো বেশী জিনগতভাবে ঘনিষ্ঠ, যতটা কোনো কোকিল শিশু তার পোষক পিতামাতার সন্তানদের সাথে ঘনিষ্ঠ। কিন্তু পার্থক্যটি হচ্ছে শুধুমাত্র মাত্রায়। এমনকি যদিও আমরা বিশ্বাস করতে পারিনা যে ভাতৃহত্যা বিবর্তিত হতে পারে, তবে অবশ্যই প্রকৃতিতে অসংখ্য অপেক্ষাকৃত কম নিষ্ঠুর স্বার্থপরতার উদাহরণ আছে, যেখানে শিশুর পরিশোধিত মূল্য বেশী হয়, তার ভাইবোনদের ক্ষতি রুপে, দ্বিগুণের বেশী, তার নিজের প্রতি লাভের দ্বারা। এই সব ক্ষেত্রে, যেমন বুকের দুধ খাওয়ানো সময়ের উদাহরণে, আসলেই একটি সত্যিকারের স্বার্থের সংঘর্ষ আছে পিতামাতা ও সন্তানদের মধ্যে।
কে তাহলে সবচেয়ে সম্ভাব্য বিজয়ী এই প্রজন্ম যুদ্ধে? আর. ডি. আলেকজান্ডার একটি চমৎকার প্রবন্ধ লিখেছিলেন, যেখানে তিনি প্রস্তাব করেন, এই প্রশ্নটির একটি সাধারণ উত্তর আছে। তার মতানুযায়ী পিতামাতাই সবসময় বিজয়ী হয় (২)। এখন যদি এটাই ঘটে থাকে, তাহলে আপনি এই অধ্যায়টি পড়ে আপনার সময় নষ্ট করছেন। যদি আলেকজান্ডার সঠিক হন, কৌতূহলোদ্দীপক সব বিষয়গুলোর মুখোমুখি আমরা হবে। যেমন, পরার্থবাদী আচরণ বিবর্তিত হতে পারে, সেই একক সদস্যের জিনদের সুবিধা হবে সেই কারণে না বরং পুরোপুরি এর কারণ তার পিতামাতার জিনদের স্বার্থে। পিতামাতার নানা কৌশল বা আর, ডি, আলেকজান্ডারের ভাষায় ‘প্যারেন্টাল ম্যানিপুলেশন’, পরার্থবাদী আচরণের বিকল্প বিবর্তনীয় একটি কারণে পরিণত হয়, যা স্পষ্টভাবে কিন সিলেকশন থেকে স্বতন্ত্র। সেকারণেই আমরা আলেকজান্ডারের যুক্তিটি পরীক্ষা করে দেখা গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশ্বাসের সাথে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আমরা বুঝতে পেরেছি, তিনি কেন ভুল। এটা আসলেই করা সম্ভব গাণিতিকভাবে, কিন্তু আমরা সুস্পষ্টভাবে কোনো গাণিতিক ব্যাখ্যা এড়িয়ে চলছি এই বইয়ে। তবে যে আলেকজান্ডারের মূল প্রস্তাবনায় ভুলটা আসলে কোথায় সেটি বোঝানোর জন্য একটি সহজাত ধারণা দেয়া সম্ভব।
তার মৌলিক জিন নির্ভর যুক্তিটি নিম্নলিখিত সংক্ষিপ্ত উদ্ধৃতির মধ্যে আমরা দেখতে পাবো: ‘ধরুন কোনো একটি অল্পবয়স্ক প্রাণী ..তার নিজের সুবিধার স্বার্থে পিতামাতার বিতরণ করা সম্পদের অসম বন্টনের কারণ হয় এবং এভাবে মায়ের সার্বিক প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস। করে। একটি জিন যে এই নিয়মে কোনো একক সদস্যর ফিটনেসের উন্নতি করে যখন কিনা সে অপ্রাপ্তবয়স্ক, সেটি আরো বেশী ফিটনেস কমাতে ব্যর্থ হতে পারে না যখন কিনা সে প্রাপ্ত বয়স্ক, কারণ এমন কোনো পরিবর্তিত জিন কোনো মিউট্যান্ট সদস্যের সন্তানদের মধ্যে অনেক বেশী হারে উপস্থিত থাকবে। যে বিষয়টি আলেকজান্ডার এখানে তার বিবেচনায় এনেছেন তাহলে একটি নতুন মিউটেশন হওয়া জিন এই যুক্তির জন্য আবশ্যিক কোনো মৌলিক বিষয় না। বরং আরো ভালো হয় কোন দূর্লভ জিনের কথা ভাবলে, যা সে পিতামাতার কোনো একজনের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পায়। ‘ফিটনেস’ এর একটি বিশেষ কারিগরী অর্থ আছে প্রজনন সাফল্যের ব্যপারে। আলেকজান্ডার মূলত যা বলছেন সেটি হোলো, কোনো একটি জিন যা কোনো শিশুকে তার নায্য ভাগের চেয়ে বেশী পরিমান দখল করতে সাহায্য করেছে যখন সে শিশু ছিল, তার পিতামাতার মোট প্রজনন সাফল্য কমে যাওয়ার মূল্য পরিশোধের বিনিময়ে, আসলেই হয়তো সে তার টিকে থাকার সম্ভাবনাকে বাড়াবে। কিন্তু সে যখন নিজেই পিতামাতা হবে তাকেও এই একই শাস্তি পেতে হবে, কারণ তার নিজের শিশুরও সেই একই স্বার্থপর জিনটিকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাবার সম্ভাবনা থাকবে এবং সেটি তার নিজেরই প্রজনন সাফল্য হ্রাস করবে। সেই প্রাণীটি নিজের অস্ত্রে নিজেই ঘায়েল হয়। সুতরাং জিনটি সফল হতে পারবে না এবং পিতামাতাই সবসময় জিতবে এই দ্বন্দ্বে।
আমাদের মনে এই যুক্তিটির তাৎক্ষণিকভাবেই সন্দেহ উদ্রেক করা উচিৎ, কারণ এটির মূল ভিত্তি হচ্ছে জিনগত অসাম্যতার ধারণাটি, যা আসলেই সেখানে অনুপস্থিত। আলেকজান্ডার ‘পিতামাতা/প্যারেন্ট’ আর ‘সন্তান বা অফস্প্রিঙ’ শব্দগুলো ব্যবহার করছেন যেন তাদের মধ্যে মৌলিকভাবে কোনো জিনগত পার্থক্য আছে। যেমন আমরা দেখেছি, যদি পিতামাতা আর সন্তানের মধ্যে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে কিছু না কিছু পার্থক্য আছে, যেমন পিতামাতারা তাদের সন্তানের চেয়ে বয়সে বড় এবং সন্তানের জন্ম হয় পিতামাতা শরীর থেকেই, কিন্তু সেখানে আসলেই কোনো মৌলিক ‘জিনগত অসাম্যতা নেই। তাদের সম্পর্কের মাত্রা ৫০ শতাংশ, যেদিক থেকেই আপনি দেখুন না কেন। আমি যা বলতে চাইছি সেটির উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর জন্য আমি আবারো আলেকজান্ডারে পুনরাবৃত্তি করবো, কিন্তু ‘পিতামাতা’, ‘তরুণ সন্তান এবং অন্যান্য প্রযোজ্য শব্দ প্রতিবর্তন করে। ধরুন যে কোনো ‘পিতামাতার একটি জিন আছে, যে জিনটি পিতামাতার উপকারিতা ‘সমানভাবে তাদের সন্তানদের মধ্যে যেন বন্টন হয় সেটি নিশ্চিৎ করে। কোনো জিন যা এইভাবে একটি একক সদস্যর ফিটনেসের উন্নতি করে যখন এটি ‘পিতামাতা’ এবং এটি তার ফিটনেসকে হ্রাস করতে পারেনা যখন কিনা সে অল্পবয়সী ‘সন্তান। সুতরাং আমরা আলেকজান্ডার এর বিপরীত কোনো উপসংহারে পৌঁছাই, সেটি হচ্ছে যে কোন পিতামাতা/সন্তান দ্বন্দ্বে সন্তানরা অবশ্য জয় লাভ করে।
স্পষ্টতই বেশ কিছু বিষয় এখানে ভুল। দুটো যুক্তিই অতি সরলীকরণ করে এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমার এই উল্টো করে সাজানো উদ্ধৃতি আলেকজান্ডারের বিপরীত কোনো বিষয়কে প্রমাণ করছে না বরং শুধুমাত্র দেখাচ্ছে যে আপনি তর্ক করতে পারবেন না ঐ ধরনের কৃত্রিম কোনো অপ্রতিসম উপায়ে। আলেকজান্ডারের যুক্তি এবং আর আমার এটি উল্টো করে সাজানো দুটোই ভুল করেছে কোন একটি একক সদস্যের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে পুরো ব্যাপার দেখে– আলেকজান্ডারের ক্ষেত্রে, পিতামাতা, আমার ক্ষেত্রে তাদের সন্তান। আমি বিশ্বাস করি এই ধরনের ভুল খুব সহজেই করা সম্ভব যখন আমরা এখানে ‘ফিটনেসের মত কোনো কারিগরী বিশেষ অর্থবাচক শব্দ ব্যবহার করি। একারণে আমি এই বইতে শব্দটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থেকেছি। বিবর্তনের ক্ষেত্রে আসলেই শুধুমাত্র এটি সত্তা থাকে যার দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ আর সেই সত্তাটি হচ্ছে স্বার্থপর জিন। কোনো তরুণ প্রাণীদের শরীরে জিনরা নির্বাচিত হতে তাদের পিতামাতার শরীরকে বোকা বানানোর দক্ষতার উপর ভিত্তি করে; পিতামাতার শরীরে জিনরা নির্বাচিত হবে তাদের তরুণ সন্তানদের বোকা বানানোর মাধ্যমে। সেই বাস্তব সত্যটিতে কোনো স্ববিরোধী ধাঁধা নেই যে সেই একই জিন ধারাবাহিকভাবে একটি তরুণ শরীরে এবং এরপর একটি পিতামাতার শরীরে বাস করে। জিনরা নির্বাচিত হয় তাদের হাতে থাকা ক্ষমতা সঠিক সদ্ব্যবহার করার যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে তারা তাদের বাস্তব সুযোগগুলো তাদের স্বার্থে ব্যবহার করে। যখন কোনো জিন একটি অপ্রাপ্তবয়স্কের শরীরে বাস করে তার ব্যবহারিক সুযোগ ভিন্ন হবে যখন এটি কোনো পিতামাতার শরীরে বাস করে। সেকারণে এর সবচেয়ে উপযুক্ত নীতিমালাও ভিন্ন হবে জীবনের ইতিহাসের দুটি পর্বে। কোন কারণ নেই মনে করা যেমন আলেকজান্ডার করেছেন, এবং পরের উপযুক্ত নীতিমালার আবশ্যিকভাবে এর আগের নিয়মকে বাতিল করে দেয় নতুন নিয়ম আরোপ করে।
আলেক্সান্ডারের যুক্তির বিরুদ্ধে প্রস্তাব দাঁড় করানোর আরেকটি উপায় আছে। তিনি অনুক্তভাবে মেনে নিয়েছেন যে একটি মিথ্যা অসাম্যতা থাকে যেমন একদিকে পিতামাতা/সন্তানের সম্পর্কে, এবং অন্যদিকে ভাই/বোনের সম্পর্কের মধ্যে। আপনি মনে করতে পারবেন যে, ট্রিভার্সের মতে, একটি স্বার্থপর শিশুর তার নায্যভাবে প্রাপ্য ভাগের বেশী কিছু কেড়ে নেবার বিনিময় মূল্য কি হতে পারে। এবং সে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত শুধু কেড়ে নেবার এই চেষ্টা করে তার কারণ হচ্ছে, এরপরে সেটি তার ভাইবোনদের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়, যারা প্রত্যেকেই তার অর্ধেক জিন বহন করে। কিন্তু ভাইবোনরা হচ্ছে শুধুমাত্র একটি বিশেষ ধরনের আত্মীয় যাদের ৫০ শতাংশ আত্মীয়তা থাকে। কোনো স্বার্থপর সন্তানের নিজের ভবিষ্যৎ সন্তান কম বা বেশী ‘মূল্যবান’ নয় তার নিজের ভাই এবং বোনদের তুলনায়। সুতরাং আপনার নিজের নায্য ভাগের চেয়ে বেশী দখল করে নেবার মোট মূল্য পরিমাপ করার উচিৎ শুধুমাত্র হারানো ভাইবোনদেরই দিয়ে না বরং আপনার ভবিষ্যত সন্তানদের পরিমাপেও, ভাইবোনদের মধ্যে স্বার্থপর দ্বন্দ্বে যাদের হারিয়েছেন। আপনার নিজের সন্তানদের মধ্যে শৈশবের স্বার্থপরতা বিস্তার লাভ করার অসুবিধা নিয়ে আলেক্সান্ডারের যুক্তি, যার মাধ্যমে আপনার নিজের দীর্ঘমেয়াদী প্রজনন সাফল্যের ঘাটতি হবে, খুব ভালোভাবে গৃহীত হয়েছে, কিন্তু শুধুমাত্র সেটি যা বোঝায় তা হলো আমাদের অবশ্যই যোগ করতে হবে সমীকরণের মূল্য পরিশোধ সংক্রান্ত দিকে। কোনো একক সদস্য তারপরও ভালো করবে স্বার্থপর হয়ে, যতক্ষণ না তার জন্য মোট সুবিধা অন্তত তার আপন স্বজনের পরিশোধিত মূল্যের অর্ধেক। কিন্তু নিকটাত্মীয় বলতে শুধুমাত্র ভাইবোন না বরং কারো নিজের ভবিষ্যৎ সন্তানদের কথাও ভাবতে হবে। কোনো একক সদস্যর উচিৎ হবে তার নিজের কল্যাণটি তার ভাইয়ের কল্যাণের চেয়ে দ্বিগুণ মূল্যবান হিসাবে গন্য করা, এবং এটাই মূল প্রাকধারণা যা কিনা ট্রিভার্স করেছিলেন। কিন্তু একই সাথে সে তার নিজেকে দ্বিগুণ মূল্যবান ভাববে তার নিজের ভবিষ্যত সন্তানদের তুলনাতেও। আলেকজান্ডারের উপসংহারটি যে, আসলেই অন্তর্নিহিত কিছু সুবিধা আছে স্বার্থের এই সংঘাতে পিতামাতার পক্ষে, সেটি আসলে ঠিক নয়।
তার মৌলক জিন সংক্রান্ত যুক্তিটি ছাড়াও, আলেকজান্ডার আরো বেশ কিছু ব্যবহারিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি আছে, পিতামাতা/শিশুর অনস্বীকার্যভাবে অপ্রতিসম সম্পর্কের মধ্যে যার সূচনা হয়েছে। পিতামাতা হচ্ছে সক্রিয় অংশীদার, যে আসলেই মূল কাজগুলো করে, যেমন, খাদ্য সংগ্রহ এবং এটি সেকারণে এমন একটি অবস্থানে আছে যা কিনা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যদি পিতামাতা সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা সেই কষ্টটি আর করবে না, শিশুটির আসলে তখন সে ব্যাপারে কিছু করার থাকে না, কারণ এটি আকারে ছোট, এবং কোনো প্রত্যুত্তর দেবার মত ক্ষমতা নেই। সুতরাং পিতামাতা হচ্ছে এমন একটি অবস্থানে আসীন যেখানে সে তার নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে পারে, শিশুটির নিজের চাহিদা যাই থাকুক না কেন। এই যুক্তি অবশ্যই ভুল নয়, কারণ এখানে অসাম্যতা যা এটি প্রস্তাব করছে তা আসলেই সত্যিকারের। পিতামাতারা আসলে আকারে বড়, শক্তিশালী এবং শিশু সন্তানদের তুলনায় ব্যবহারিক অনেক জ্ঞান রাখে। মনে হতে পারে আসলেই তাদের হাতে সব ভালো তাশগুলো আছে। কিন্তু শিশু সন্তানদেরও হাতেও কিছু শক্তিশালী অস্ত্র আছে। যেমন, কোনো পিতামাতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ জানা যে তার প্রতিটি সন্তানের কে কতটা ক্ষুধার্ত, সুতরাং সে যেন সর্বোত্তম উপায়ে তাদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করতে পারে। তারা অবশ্যই তাদের সবার জন্য সমানভাবে খাদ্য রেশন করে বিলি করতে পারে, কিন্তু সম্ভাব্য সর্বোত্তম কোনো পরিস্থিতিতে এটি তেমন দক্ষ কোনো পদ্ধতি হবে না সেই পদ্ধতির তুলনায়, যেখানে যারা সত্যিকারভাবে বেশী পেলে সবচেয়ে বেশী উপকৃত হবে তাদের কিছুটা বেশী যদি দেয়া হয়। একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে প্রতিটি শিশু তাদের পিতামাতাকে জানায় যে তারা কতটা ক্ষুধার্ত সে, সেটি আসলে পিতামাতার জন্য সবচেয়ে উপযোগী পদ্ধতি হবে। এবং যেমনটি আমরা দেখেছি,এই ধরনের সিস্টেম বিবর্তিতও হয়েছে। কিন্তু তরুণ শিশুরা মিথ্যা করার বলার জন্য সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থাকে কারণ তারা জানে আসলেই ঠিক কতটা ক্ষুধার্ত তারা, যখন পিতামাতা শুধুমাত্র অনুমান করতে পারে তারা সত্যি কথা বলছে কি বলছে না। পিতামাতার পক্ষে অসম্ভব ছোট খাটো কোনো মিথ্যা কথা শনাক্ত করা। যদিও তারা বড়সড় মিথ্যা ঠিকই শনাক্ত করতে পারে।
তারপরও, কোনো পিতামাতার জন্য সুবিধা হচ্ছে জানা যখন একটি শিশু তৃপ্ত এবং এটিও ভালো বিষয় কোনো শিশুর জন্য তার পিতামাতাকে জানানো যখন সে তৃপ্ত আর আনন্দিত। গরগর শব্দ করা বা হাসা এধরনের সংকেত হয়তো একারণেই নির্বাচিত হয়েছে কারণ সেগুলো পিতামাকে বুঝতে সাহায্য করে তাদের কোন কাজটি তাদের সন্তানের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক। কোনো শিশুর হাসি মুখ বা সে যদি বিড়াল হয় তার বাচ্চাদের গরগর শব্দ মায়ের জন্য সন্তোষজনক একই ভাবে কোনো গোলকধাঁধার মধ্যে থাকা ইঁদুরের পেটে খাদ্য যেমন তৃপ্তিদায়ক। কিন্তু একবার যখন এটি সত্যে রূপান্তরিত হয় যে কোনো মিষ্টি হাসি বা উচ্চ স্বরে ডাকা লাভজনক, তখন শিশুটি তার সেই অবস্থানে উপনীত হয়, যেখান থেকে সে তার পিতামাতার আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে, এবং পিতামাতার বিনিয়োগের তার নায্যভাবে প্রাপ্য ভাগের চেয়ে বেশী সে অর্জন করে।
তাহলে, দেখা যাচ্ছে সেই প্রশ্নটির কোনো সাধারণ উত্তর নেই কে আসলে প্রজন্মের মধ্যে এই দ্বন্দ্বে জয়লাভ করবে। পরিশেষে যা বেরিয়ে আসে হয় তাহলো, কোনো একটি আদর্শ পরিস্থিতি যা কিনা কোনো শিশু কামনা করে এবং পিতামাতা যে আদর্শ পরিস্থিতি কামনা করে তার মধ্যে একটি সমঝোতা। এটি সেই যুদ্ধের সাথে তুলনাযোগ্য, কোকিল ও তার পোষক পিতামাতার মধ্যে যে যুদ্ধ হচ্ছে। অবশ্যই কোনো হিংস্র যুদ্ধ না নিশ্চয়ই, কারণ শত্রুদের একটি সাধারণ জিনগত স্বার্থ আছে– তারা শুধু শক্র একটি নির্দিষ্ট সীমা অবধি বা কোনো নির্দিষ্ট সংবেদনশীল সময়েই সীমাবদ্ধ। তবে, কোকিলদের ব্যবহৃত বহু প্রতারণা আর স্বার্থপরভাবে কোনো কিছু নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার কৌশল হয়তো ব্যবহার করতে পারে পিতামাতা নিজেদের সন্তানরাও, যদিও পিতামাতার নিজেদের সন্তান পুরোপুরি স্বার্থপর হবার আগেই থেমে যাবে, যে চূড়ান্ত স্বার্থপরতা প্রত্যাশা করা যেতে পারে কোকিলদের মধ্যে।
এই অধ্যায়টি ও পরবর্তী অধ্যায়টি, যেখানে আমরা সঙ্গীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিয়ে আলোচনা করবো, মনে হতে পারে ভয়াবহ হতাশাবাদী এবং মনে হতে পারে এমনকি মানব পিতামাতার জন্য রীতিমত যন্ত্রণাদায়ক, যেহেতু তারা তাদের সন্তানদের প্রতি এবং একে অপরের সাথে খুব বেশীভাবে নিবেদিত প্রাণ। আবারো আমি বিশেষভাবে উল্লেখ করছি, আমি কিন্তু কোনো সচেতন উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলছিনা। কেউই প্রস্তাব করছে না যে শিশুরা সুপরিকল্পিতভাবে এবং সচেতনভাবই তাদের পিতামাতার সাথে প্রতারণা করে, কারণ তাদের মধ্যে ধারণ করা স্বার্থপর জিনগুলো। এবং আমি অবশ্যই পুনরাবৃত্তি করতে চাই যখন আমি কিছু বলি যেমন, কোনো একটি শিশুর উচিৎ না প্রতারণার করার কোনো সুযোগ হারানো .. মিথ্যা বলা, ছলনা করা, নিজের স্বার্থে কোনো কিছুকে ব্যবহার করা..’; আমি ‘উচিৎ’ শব্দটা ব্যবহার করছি বিশেষ অর্থে। এগুলো নৈতিক বা কাঙ্খিত কোনো আচরণ হিসাবে আমি এই ধরনের কোনো আচরণের সপক্ষে কোনো সাফাই গাইছি না। আমি শুধুমাত্র বলছি যে প্রাকৃতিক নির্বাচন সেই সব শিশুদের পক্ষে আনুকুল্যতা প্রদর্শন করে যারা এইভাবে আচরণ করে। এবং সেটাই সুতরাং যখন আমরা বন্য প্রাণী জনগোষ্ঠীদের দিকে তাকাই, আমরা প্রত্যাশা করতে পারি পরিবারদের মধ্যে প্রতারণা আর স্বার্থপরতা দেখার। শিশুর প্রতারণা করা উচিৎ হবে’ এই বাক্যটির অর্থ যে জিন যা কোন শিশুকে দিয়ে প্রতারণা করায় তাদের বাড়তি সুবিধা আছে জিন পলে। যদি কোনো ধরনের মানবিক নৈতিকতার শিক্ষা আমাদের এখানে থেকে বের করে আনতে হয়, সেটি হবে আমাদের অবশ্যই আমাদের শিশুদের ‘পরার্থবাদীতা’ শেখাতে হবে, কারণ আমরা এটিকে তাদের জৈববৈজ্ঞানিক প্রকৃতির অংশ হিসাবে প্রত্যাশা করতে পারিনা।
নোটস: (অধ্যায় ৮)
(১) রবার্ট ট্রিভার্স– যার সত্তরের দশকের শুরুর দিকে প্রবন্ধগুলো আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রেরণা ছিল এই বইটি প্রথম সংস্করণ লেখার জন্য, এবং তার সেই ধারণাগুলো বিশেষভাবে প্রাধান্য বিস্তার করেছে অধ্যায় ৮ এ– পরিশেষে তিনি নিজেই তার বই প্রকাশ করেছেন, Social Evolution; আমি এই বইটি পড়ার জন্য অনুরোধ করবো শুধুমাত্র এর ভিতরে যা আছে তার জন্য না, এছাড়া এর লেখক শৈলীর জন্য। সুস্পষ্ট চিন্তা, অ্যাকাডেমিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নির্ভূল, কিন্তু সেই যথেষ্ট পরিমান নরাত্বরোপমূলক দ্বায়িত্বহীনতা, যা হামবড়াদের তিরষ্কার করার মত এবং ব্যাক্তিগত জীবনের কাহিনী কিছু ঘটনার মশলায় মিশ্রিত। আমি নিজেকে সংবরণ করতে পারছি না সেখান থেকে একটি উদ্ধৃতি এখানে উল্লেখ না করতে, কারণ এটি এত বেশী বৈশিষ্ট্যসূচক; এখানে ট্রিভারস তার উত্তেজনার কথা বর্ণনা করছেন কেনিয়াতে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী বেবুনদের আচরণ চাক্ষুষ দেখে: ‘আমার উত্তেজনার আরো একটি কারণ ছিল এবং সেটি হচ্ছে অবচেতন মনের স্তরে আমি আর্থার এর সাথে নিজেকে একাত্ম অনুভব করেছিলাম। আর্থার চমৎকার একটি পুরুষ, তার জীবনে শিখরে’; ট্রিভার্সের নতুন অধ্যায় যা আলোচনা করেছে পিতামাতা ও সন্তানের দ্বন্দ্ব, এই আলোচনাটাকেই হালনাগাদ করেছেন। ১৯৭৪ সালে তার সেই প্রবন্ধে আসলেই আর তেমন কিছু যোগ করার মত নেই, কিছু নতুন সত্যিকারের উদাহরণ ছাড়া। তত্ত্বটি সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। আরো বিস্তৃত গাণিতিক ও জিনগত মডেলগুলো নিশ্চিৎ করেছে ট্রিভারস এর মূলত মৌখিক যুক্তি আসলেই এসেছে বর্তমানে গৃহীত ডারউইনীয় তত্ত্ব থেকে।
(২) আলেক্সান্ডার উদারতার সাথে তার অবস্থানের ভ্রান্তি মেনে নিয়েছেন, তার ১৯৮০ সালের Darwinism and Human Affairs এর বইটিতে (পৃষ্ঠা ৩৯), যে তার আসলে ভুল হয়েছে অবশ্যম্ভাবীভাবে মৌলিক ডারউইনীয় ধারণা থেকে এসে পিতামাতা/সন্তানদের দ্বন্দ্বে পিতামাতার জয় হয় এমন যুক্তি প্রস্তাব করে। আমার এখন মনে হয় যে তার থিসিস, যে পিতামাতারা একটি অসম সুবিধা পায় তাদের সন্তানদের উপর, প্রজন্মের মধ্যকার দ্বন্দ্বে– যাকে শক্তিশালী করা যেতে পারে একটি ভিন্ন ধরনের যুক্তি ব্যবহার করে, যা আমি শিখেছি এরিক চার্নভ এর কাজ থেকে।
চার্নভ সামাজিক কীট পতঙ্গ নিয়ে লিখেছিলেন, বিশেষ করে প্রজনন অক্ষম অনুর্বর শ্রেণীর উৎপত্তি সম্বন্ধে। কিন্তু তার যুক্তি আরো সাধারণভাবে অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা যায় এবং আমি সাধারণভাবেই সেটি ব্যাখ্যা করবো। কোনো একটি একগামী প্রজাতির তরুণ স্ত্রী সদস্যের কথা ধরুন– তাকে কীটপতঙ্গ হতে হবে এমন কোনো কথা নেই, যে প্রাপ্তবয়স্ক হবার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। তার উভয়সঙ্কটময় পরিস্থিতি হচ্ছে, সে কি তার গ্রুপ ত্যাগ করবে আর চেষ্টা করবে নিজেই প্রজনন শুরু করার করার, নাকি তার পিতামাতার নীড়ে থাকবে তার ছোট ভাইবোনদের প্রতিপালন করতে সাহায্য করার জন্য। তার প্রজাতির প্রজনন আচরণের জন্য, সে আত্মবিশ্বাসী হতে পারে যে, তার মা আরও বহুদিন ধরে তার জন্য ভাইবোনের জন্ম দিতে থাকবে। হ্যামিলটনের যুক্তি অনুযায়ী, তার এই সব ভাইবোনরা তার কাছে জিনগতভাবে একই রকম ‘মূল্যবান’ তার নিজের সন্তান যতটা মূল্যবান ততটাই। জিনগত সম্পর্ক আমরা যতটুকু বিবেচনা করি, সেখানে এই তরুণ স্ত্রী সদস্যটি এই দুইটি কর্মপন্থার প্রতি নির্বিকার হবার কথা। বা সে আদৌ ‘চিন্তিত’ না সে কি যাবে, নাকি থাকবে। কিন্তু তার পিতামাতার কেউ কিন্তু কোনভাবেই নির্বিকার নয়, সে কি করবে সেই বিষয়ে। তার বৃদ্ধ মার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিষয়টি দেখার চেষ্টা করুন, সেখানে তার বাছাই করতে হবে নাতি নাতনী অথবা সন্তানদের মধ্যে। নতুন সন্তানরা জিনগতভাবে দ্বিগুণ মূল্য নতুন নাতি-নাতনীদের তুলনায়। আমরা যদি পিতামাতা ও সন্তানদের দ্বন্দ্বের কথা বলি, বিশেষ করে সন্তানরা চলে যাবে নাকি নীড়ে থেকে যাবে প্রতিপালনে সহায়তা করার জন্য, চার্নভের মূল বক্তব্য হচ্ছে এই দ্বন্দ্ব খুব সহজ একটি জয় পিতামাতার জন্য খুব ভালো কারণে যে শুধুমাত্র পিতামাতাই এটাকে দ্বন্দ্ব হিসাবে দেখে।
এটা অনেকটা দুজন দৌড়বিদের মধ্যে দৌড়ের প্রতিযোগিতার মত, যেখানে একজনকে ১০০০ পাউন্ড দেবার প্রস্তাব করার হয়েছে সে। যদি জেতে, অন্যদিকে তার বিরোধীকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে তাকে ১০০০ পাউন্ড দেওয়া হবে সে হারুক কিংবা জিতুক যে কোনো পরিস্থিতিতে। আমাদের প্রত্যাশা করা উচিৎ প্রথম দৌড়বিদটি জেতার জন্য অনেক বেশী চেষ্টা করবে এবং সেটাই, যদি দুজনেই অন্যসব দিক থেকে সমপরিমান যোগ্য হয়ে থাকে, তাকে সম্ভবত বিজয়ী করবে। আসলেই চার্নভের বক্তব্যটি আরো অনেক শক্তিশালী এখানে যে তুলনামূলক উদাহরণটি প্রস্তাব করা হয়েছে তার চেয়ে, কারণ সর্বস্ব দিয়ে দৌড়ানোর মূল্য তেমন বেশী কিছু না যা বহু মানুষকে উৎসাহিত করতে পারে, তারা আর্থিকভাবে তার জন্য পুরষ্কার পাক কিংবা না পাক। ডারউইনীয় বিবর্তনীয় খেলায় এধরনে অলিম্পিক আদর্শ বেশী মাত্রায় বিলাসিতা: কোনো একটি দিকে প্রচেষ্টা সবসময় পুরষ্কৃত হয় অন্য হারানো কোন প্রচেষ্টার বিনিময় মূল্য পরিশোধ হিসাবে। এটি যেমন, আপনি যত বেশী প্রচেষ্টা যে কোনো একটি প্রতিযোগিতায় জেতার জন্য দেবেন, ভবিষ্যতের কোনো প্রতিযোগিতায় জেতায় ততই আপনার সম্ভাবনা কমবে চরম প্ররিশ্রান্ত হবার কারণে।
ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির জন্য এই শর্তগুলোও ভিন্ন হবে, সুতরাং আমরা সবসময় আগে থকে ডারউইনীয় খেলার ফলাফল সম্বন্ধে ধারণা করতে পারিনা। যাইহোক না কেন, যদি আমরা বিবেচনা করি শুধুমাত্র জিনগত আত্মীয়তার নিকট সম্পর্কগুলো এবং মনে করে নেই একটি একগামী প্রজনন পদ্ধতি ( যেন কন্যারা নিশ্চিৎ হতে পারে তার ভাইবোনরা তার আপন ভাইবোন), আমরা প্রত্যাশা করতে পারি যে একজন বৃদ্ধ মা সফল হবে তার তরুণ পূর্ণবয়স্ক কন্যাকে তার ভাইবোনদের প্রতিপালনে সহায়তা ও নীড়ে থেকে যাবার জন্য প্ররোচিত করে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য। এখানে মায়ের স্বার্থই সবচেয়ে বেশী, তারই সব লাভ হবার কথা, অন্যদিকে তার কন্যার নিজের কোনো প্ররোচনা থাকবে না তার মায়ের এই উদ্দেশ্যপুরণকে প্রতিরোধ করার জন্য কারণ সে জিনগতভাবে নির্বিকার তার হাতে থাকা সবগুলো বিকল্প পরিস্থিতিগুলোর প্রতি।
আবারো, গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টির উপর জোর দিতে হবে সেটি হচ্ছে, ‘অন্য সব কিছু যদি একই থাকে’ ধরনের একটি যুক্তি। এমনকি যদিও অন্য সব কিছু কখনো এক হয় না সাধারণত, চার্নভের যুক্তি তারপরও আলেক্সান্ডার বা অন্য যে কোনো কারোর জন্য উপযোগী হতে পারে যারা ‘প্যারেন্টাল ম্যানিপুলেশন’ তত্ত্বর পক্ষে কথা বলছেন। তবে যাই হোক না কেন আলেক্সান্ডারের প্রায়োগিক যুক্তিগুলো যা প্রত্যাশা করে পিতামাতার বিজয়– কারণ পিতামাতা আকারে বড়, শক্তিশালী এবং ইত্যাদি– যুক্তিসঙ্গতভাবে বিবেচনাযোগ্য।