আত্মপ্রতারণা
রাষ্ট্র একটি বাস্তবতা, কল্পলোকের কোনো বস্তু নয়। রাষ্ট্রের নীতি-আদর্শের প্রতি নাগরিকদের আনুগত্য থাকতেই হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রটিও ছিল এক বাস্তবতা। তারও ছিল নিজস্ব নীতি-আদর্শ। শাসকেরা তার ভিত্তিতেই রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চাইতেন। নাগরিকেরা তার প্রতি অনুগত ছিলেন। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশের সব নাগরিকই ছিল পাকিস্তানি, যদিও জাতিসত্তার দিক থেকে তাদের প্রায় ৯৮ শতাংশ ছিল বাঙালি, অবশিষ্টদের কেউ ছিল চাকমা, সাঁওতাল, গারো, হাজং, মণিপুরি, ত্রিপুরা প্রভৃতি। তবে ৯৯ শতাংশের বেশি মানুষ ছিল বাংলাভাষী।
বহু শতাব্দী বাঙালি– বাঙালি মুসলমান ছিল অবহেলিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত। একপর্যায়ে তারা অর্থনৈতিকভাবে পড়ে পিছিয়ে এবং শিক্ষা-সংস্কৃতিতে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বাঙালি মুসলমানের দূরত্ব সৃষ্টি হয় প্রায় অনতিক্রম্য। ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসনে তারা শিকার হয় চরম বৈষম্যের। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে স্বশাসনের স্পৃহা জাগে। কৃষি অর্থনীতিতে বাঙালি মুসলমান কৃষকশ্রেণির বিপুল অবদান থাকা সত্ত্বেও তারা জমিদার-জোতদার-মহাজনদের শোষণের শিকার হয়। তাই মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে পৃথক রাষ্ট্র গঠনের দাবি উত্থাপিত হলে বাঙালি মুসলমান অপার আগ্রহ ও আশা নিয়ে তার সমর্থন করে। তাদের ভোটেই প্রতিষ্ঠিত হয় পাকিস্তান। তাদের প্রত্যাশা ছিল পাকিস্তান হবে একটি শোষণমুক্ত ও ন্যায়বিচারভিত্তিক রাষ্ট্র।
লাখ লাখ হিন্দু পূর্ব বাংলা থেকে ভারতে চলে যাওয়ার পরও পূর্ব পাকিস্তানের এক-চতুর্থাংশ মানুষ ছিলেন হিন্দুধর্মাবলম্বী। বাঙালি সংস্কৃতি ছিল হিন্দু মুসলমান প্রভৃতি সব ধর্মাবলম্বীর সমন্বিত সংস্কৃতি। সব ধর্মের উপাদান নিয়ে হাজার বছরে গড়ে উঠেছে সেই সংস্কৃতি। পাকিস্তান আন্দোলনের সময় যত কথাই বলুন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার লগ্নে গণপরিষদে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যে ভাষণ দেন, তাতে পাকিস্তান একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হবে বলেই ঘোষণা দেন। রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক থাকবে না বলেই তিনি তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ধর্ম ব্যক্তিগত ব্যাপার। স্বাধীনভাবে যে যার মতো ধর্ম পালন করবে, স্বাধীনভাবে কেউ যাবে মসজিদে, কেউ মন্দিরে, কেউ গির্জায়, কেউ প্যাগোডায় অথবা অন্য কোনো উপাসনালয়ে; তাতে রাষ্ট্রের কোনো সম্পর্ক নেই। রাষ্ট্র চলবে গণতান্ত্রিক বিধি অনুসারে। জিন্নাহ এ কথা বললেও সাম্প্রদায়িক মুসলিম লীগের নেতারা পাকিস্তানকে ‘এসলামি জমহুরিয়াহ’ বানাতে চাইলেন। সে জিনিসটি যে কী –তা দেশের মানুষ জানত না। শাসকশ্রেণির মধ্যে পূর্ব বাংলার বাঙালি নেতা অনেকে ছিলেন, তাঁরা বাংলাদেশকে ‘তৌহিদবাদী পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চাইলেন। এখানে যে এক-চতুর্থাংশ অমুসলমান, বিশেষ করে হিন্দু, বৌদ্ধ, আদিবাসী রয়েছে, তাদের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলেন না। নতুন রাষ্ট্রের সংস্কৃতিতে সাম্প্রদায়িকতা জায়গা করে নেয়।
পূর্ব বাংলার মুসলমান শিক্ষিত মধ্যবিত্ত নানা মতবাদে বিভক্ত ছিলেন। কেউ ছিলেন মুসলিম জাতীয়তাবাদী, তাঁরা তাঁদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের জন্য মধ্যযুগের মধ্যপ্রাচ্যে হাতড়ে বেড়াতেন। কেউ ছিলেন অসাম্প্রদায়িক আধুনিকতাবাদী, তাঁরা সংখ্যায় কম। আরও কম সংখ্যায় ছিলেন একদল, তারা সমাজবাদী ধ্যানধারণা। পোষণ করতেন। পল্লিপ্রধান দেশে বিশাল জনগোষ্ঠী অশিক্ষিত ও অজ্ঞতার অন্ধকারে পড়ে থাকায় ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক মুসলিম জাতীয়তাবাদীরা তাদের সহজেই প্রভাবিত করতে পারতেন তাদের মতাদর্শে। ধর্মের নামে তাদেরকে শোষণ করা সহজ ছিল।
পাকিস্তানের শাসকশ্রেণি রাষ্ট্রকে ইসলামীকরণে বদ্ধপরিকর ছিলেন। কালচার অর্থে সংস্কৃতি শব্দটি তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না, তাঁরা চাইতেন তার পরিবর্তে তাহজিব বা তমদ্দুন শব্দ দুটি ব্যবহার করতে। আমরা একসময় বলতাম পাকিস্তান জিন্দাবাদ’, কিন্তু ষাটের দশকে দেখা গেল ওটা যথেষ্ট নয়, বলা শুরু হলো ‘পাকিস্তান পায়েন্দাবাদ’। এই শব্দের মানে কোনো বাঙালি জানেন কি না জানি না, আজও আমার কাছে এই পায়েন্দাবাদের অর্থ অজানা। বাঙালিদের মধ্যে– বিশেষ আর কাউকে বলতে শুনিওনি, শুধু গভর্নর মোনায়েম খান তাঁর বক্তৃতা শেষ করতেন ‘পায়েন্দাবাদ’ বলে। জাতীয় জীবনে এবং সংস্কৃতিতে গায়ের জোর খাটে না।
এক ভাষাভাষী ও এক ধর্মাবলম্বীর রাষ্ট্র সম্ভবত পৃথিবীতে একটিও নেই। পাকিস্তান পর্বে পূর্ব বাংলায় উর্দুভাষী মানুষ কয়েক লাখ ছিলেন। তাঁদের উর্দু দৈনিক পত্রিকাও ছিল। সাপ্তাহিক ও মাসিক উর্দু সাময়িকী তো ছিলই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কলেজগুলোতে উর্দু, আরবি বিভাগও ছিল। কিন্তু সাধারণভাবে বাঙালিরা উর্দুর চর্চা করতেন না। বাংলা সাহিত্যের অনেক গল্প-উপন্যাস উর্দুতে তরজমা হয়েছে, অনেক উর্দু গল্প-কবিতা বাংলায় অনূদিত হয়েছে। সেটা স্বাভাবিক। কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠীর মদদে এবং তাদের খুশি করতে আগবাড়িয়ে বাঙালি শিক্ষাবিদদের কেউ কেউ বাংলাদেশে উর্দুচর্চার ব্যবস্থা করেছেন। বিশেষ করে, কবি ইকবালকে পূর্ব বাংলায় জনপ্রিয় করতে বিচিত্র উদ্যোগ নেওয়া হতো এবং তাতে বাঙালি শিক্ষাবিদ ও লেখকদের সহযোগিতা ছিল সর্বাত্মক।
একটি দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে। নতুন প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের মতো একটি উর্দু ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থাকা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু সেখানে ১৯৬৭-তে উপাচার্য আজিজুর রহমান মল্লিকের প্রধান পৃষ্ঠপোষকতায় এবং তাঁরই উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি সংস্থা : ‘বাজম-ই-আনজুম’। তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল ইকবাল ও পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দু কবি-সাহিত্যিকদের নিয়ে গবেষণা ও সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করা। চট্টগ্রামের একটি সুন্দর বাঙালি জাতীয়তাবাদী আবহাওয়া দীর্ঘকাল থেকে ছিল। ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেখানকার কোনো বাঙালি কবি-সাহিত্যিকের সম্পর্ক ছিল বলে তখন শুনিনি।
প্রগতিশীল বলে কথিত ও দাবিদার অনেকেই সেকালে ছদ্মবেশী মুসলিম জাতীয়তাবাদী ছিলেন। তারা সাম্প্রদায়িক ছিলেন তা-ও নয়, কিন্তু তাঁদের মুসলমান সত্তাকে প্রাধান্য দিতেন। সেকালের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, যেসব বাঙালি কবি-সাহিত্যিক-শিক্ষাবিদ ঢাকায় পাঞ্জাবি-পাজামা, প্যান্ট-শার্ট, স্যুট পরতেন, তাদের কেউ কেউ পশ্চিম পাকিস্তানে কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন আচকান ও চোস্ত পাজামা এবং মাথায় লিয়াকত টুপি বা আইয়ুব টুপি পরে। বিষয়টি হাস্যকর মনে হয়। পশ্চিম পাকিস্তান সফরে গিয়ে এমন অনেকে এ কাজ করেছেন, যারা আমাদের সবচেয়ে আধুনিক বলে পরিচিত ছিলেন।
রাষ্ট্র থেকে কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা সুযোগ-সুবিধা নেবেন, তা দোষের নয়। অনেক সময় ভালো কাজের জন্য রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য প্রয়োজন। কিন্তু তা আত্মবিসর্জন দিয়ে নয়। পাকিস্তান আমলে বাঙালি শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীরা প্রচুর সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। তাঁরা সরকারি খরচে ব্যাপক বিদেশ সফর করেছেন; করাচি, লাহোর, রাওয়ালপিন্ডিতে গিয়ে দামি হোটেলে থেকেছেন, আর্থিক সহায়তা নিয়েছেন, তা নিয়ে তারা কোনো অন্যায় করেননি। রাষ্ট্রের টাকা জনগণের টাকা, সরকারপ্রধানের পৈতৃক সম্পত্তি নয়। কিন্তু দুঃখজনক হলো, সেকালে যাদের থেকে এই সুবিধা নিয়েছেন, ১৯৭২ থেকে তারা হয় তা অস্বীকার করেছেন অথবা গোপন করে গেছেন। এই অসাধুতা বা সৎ সাহসের অভাবেই তারা প্রশংসার যোগ্য নন।
রাষ্ট্রীয় আদর্শের সঙ্গে কোনো নাগরিক ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন, কিন্তু তাকে অগ্রাহ্য করতে পারেন না, অস্বীকার করাও সম্ভব নয়। একাত্তরের আগে বাঙালি কোনো লেখক বুদ্ধিজীবী তা করেছেন তার প্রমাণ নেই। পাকিস্তান রাষ্ট্রের অত্যন্ত বিশ্বস্ত নাগরিক ছিলেন তাঁরা। অক্টোবর ১৯৬৮তে, মুক্তিযুদ্ধের সোয়া দুই বছর আগে, বাংলা একাডেমি সাহিত্য ও সংস্কৃতি সপ্তাহ পালনের আয়োজন করে। তাতে প্রধান বাঙালি কবি সাহিত্যিক অংশগ্রহণ করেন এবং প্রবন্ধ পাঠ করেন। সে সব লেখা দিয়ে সরদার ফজলুল করিমের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় আমাদের সাহিত্য (১৯৬৯)। আমাদের সাহিত্য কোনো ভালো শিরোনাম নয়। বইটির নামকরণ হতে পারত পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা সাহিত্য আশির দশকের এক কবি সম্মেলনে আমি সরদার ফজলুল করিমকে জিজ্ঞাস করেছিলাম বইটির পুনর্মুদ্রণ না হওয়ার কারণ কী? তিনি ছিলেন সরল সজ্জন মানুষ। বললেন, ‘থাক, আর ওসব বই নিয়ে আলোচনা করা ভালো। অথচ বইটি কোনো আপত্তিকর বই নয়। মানসিক দুর্বলতা থেকে সেকালের অনেক ভালো বইটির কথাও বলতে সংকাঁচবোধ করতেন স্বাধীনতার পরে সেগুলোর লেখকেরাই। বাংলা একাডেমি আর একটি বই বের করেছিল, তার নাম। ‘পাকিস্তান আন্দোলন ও মুসলিম সাহিত্য (১৯৬৮)।
মুক্তিযুদ্ধের দেড়-দুই বছর আগে মুস্তাফা নূরুল ইসলামের মুসলিম বাংলা সাহিত্য (১৯৬৮), আনিসুজ্জামানের মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য (১৯৬৮) এবং মুসলিম বাংলার সাময়িকপত্র (১৯৬৮) প্রকাশিত ও পুরস্কৃত হয়। যদি পাকিস্তান টিকে যেত ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয় না ঘটত, তাহলে এই সব বইয়ের সুবাদেই তারা পাকিস্তান সরকার থেকে আরও অনেক পদক পুরস্কার ও সুযোগ-সুবিধা পেতেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অথচ তাদের সহকর্মীদের যাঁরা। পাকিস্তানে আসলে যেমন ছিলেন এবং স্বাধীনতার পরে তারা একই বিশ্বাস ধারণ করে রইলেন তারা শুধু অবহেলার শিকার হলেন না, নানাভাবে অপমানিত হলেন, কেউ কেউ হলেন নিগৃহীত। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সেটা বৈশিষ্ট্য নয়।
পাকিস্তানের এক অংশ ছিল এক মুল্লুকে, আরেক অংশ আরেক দিকে। দুই অংশের মানুষ, ভাষা, সংস্কৃতি, জীবনযাপন একেবারেই দুই রকম। বাঙালি সংগীতশিল্পী, চিত্রশিল্পী, চলচ্চিত্রশিল্পীদের রুজি-রোজগারের একটি বড় ক্ষেত্র ছিল পশ্চিম পাকিস্তান। বাঙালি চিত্রশিল্পীদের ছবির বাজার ছিল করাচি-লাহোর। পূর্ব বাংলায় ছবি কেনার মতো মানুষ ছিলেন অতি অল্প। যে ছবি ঢাকায় বিক্রি হতো খুব বেশি হলে চার-পাঁচ শ টাকায়, সেটাই ওখানকার বড়লোকেরা কিনতেন পাঁচ হাজার টাকায়। বাঙালি অনেক কবি উর্দুতে গান লিখেছেন। আমাদের প্রগতিশীল চলচ্চিত্র পরিচালকেরা বাংলায় ছবি করে লাভবান হতে পারেননি, তাঁরা উর্দুতে ছবি বানিয়েছেন। সে ছবির বাজার পাকিস্তানের দুই অংশেই পাওয়া গেছে। এই জাতীয় কাজে কোনো দোষই ছিল না। কিন্তু ষাটের দশকে যে শিল্পী সরকারি খরচে সাত-আটবার মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে গেছেন, উর্দু ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন, তিনিও তাঁর জীবনবৃত্তান্তে এখন উর্দু ছবিগুলোর উল্লেখ করেন না। পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের সদস্য হয়ে বিশ্বভ্রমণ করেছেন, সে কথা তো স্বীকারই করতে চান না। এসব খুব বড় রকমের হীনম্মন্যতা।
ষাটের দশকটা অনেকের জীবনেই ছিল স্বর্ণকাল। তাঁরা সব পেয়েছেন সে সময়। বিশেষ অন্যায়ভাবে পাননি। প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবেই পেয়েছেন। তাঁদের শ্রেষ্ঠ কাজগুলো সে সময়েরই। ৭২-এ আমাদের একজন শীর্ষ চিত্রশিল্পী বললেন, স্বাধীনতার আগে ছবিই আঁকতে পারতাম না, আমি এখন মুক্তমনে ছবি আঁকতে পারি। অথচ তার সব উল্লেখযোগ্য কাজই পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের। আমি তখন তাঁর ওই নিরর্থক বক্তব্যের সমালোচনা করে ইত্তেফাঁক-এ লিখেছিলাম।
কোনো জাতিই সত্যকে আড়াল করে মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। সে চেষ্টা করলে সে জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না, হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাবে। মানুষ মাত্রেই ভুলভ্রান্তি ও দুর্বলতার ঊর্ধ্বে নয়। বাস্তবতাকেও অস্বীকার করা যায় না। বাঙালি মুসলমানের প্রতিভাবান অংশটি নানা বিভ্রান্তিতে তাঁদের শক্তির অপচয় করেছেন। তারা ভুল করেছেন ব্রিটিশ আমলে, তারা ভুল ও বিভ্রান্তির মধ্যে ছিলেন পাকিস্তানি আমলে, এবং বেদনার বিষয়, তারা ভুল ও বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছেন স্বাধীন বাংলাদেশেও। বুদ্ধিবৃত্তির সততা ছাড়া কোনো জাতি স্থায়িত্বশীল উন্নতি করতে পারে না। সত্যের সাধনা ছাড়া জাতির কল্যাণ হয় না। এখনো সময় আছে, যদি বাঙালিদের নতুন প্রজন্ম তাদের পূর্বজদের ভুল থেকে শিক্ষা নেয়, তাহলে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, তা না হলে বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে বাঙালির কোনো স্থান থাকবে না। পদানত থাকতে হবে বহু বছর।