আগের রাত্রির অর্ধেক শেষ করা ইংরেজি উপন্যাসটা বালিশের পাশেই ছিল। ঘুম ভাঙার পরই অনিন্দ্য আবার বইটা তুলে নিল বুকের ওপর। ঘুমের ঘোরে বইটার ওপর অনেকবার তার মাথা এসে পড়েছিল, তাই কয়েকটা পাতা দুমড়ে গেছে, শক্ত বাঁধাই বলে ঘেঁড়েনি।
মস্তবড়ো খাটে অনিন্দ্যর একটা বিছানা। চারটে মাথার বালিশ, তিনটে পাশবালিশ, একটা ছোটো কান-বালিশ। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বালিশ রেখে ঘুমোননা তার অভ্যেস। জেগে উঠেও সে বই পড়ার সময় অন্যমনস্কভাবে বালিশগুলো নিয়ে চটকা-চটকি করে।
বিছানায় শুয়ে শুয়েই সে তিন কাপ চা খেল এবং চারটে সিগারেট। ঝি-চাকররা চা দিয়ে যায়, বাড়ির কোনো লোক সকাল বেলা তার ঘরে আসে না। তার মা স্নান করে ঠাকুরঘরে ঢুকেছেন, দশটার আগে বেরোবেনই না।
অনিন্দ্যর ঘরের সামনের বারান্দায় ঝোলানো খাঁচায় একটা ময়না অনেকক্ষণ ধরে কর্কশভাবে চেঁচাচ্ছে। সে বোধ হয় সকালের বরাদ্দ ছোলাটা এখনও পায়নি। অদূরে রেলিং এর ওপরে বসে ডাকাডাকি করছে কয়েকটা স্বাধীন শালিক। একতলায় কেউ কারুকে
ডাকছে, ও রতনের মা, রতনের মা! অনিন্দ্যর দাদার অফিসঘরে টাইপরাইটারের শব্দ হচ্ছে খটাখট খটাখট। গ্যারেজে ড্রাইভার গাড়ির ইঞ্জিন গরম করছে, তার শব্দ আসছে গ্যার গ্যার গ্যাররর–।
অনিন্দ্য ধ্যানীর মতন একমনে উপন্যাসটা পড়ে যাচ্ছে। তার লম্বা শরীরটা বিছানায় শুয়ে থাকলেও মনটা তখন স্পেনের পাহাড়ি এলাকায়। প্রায় ন-টায় সময় সে-বইটা হাতে নিয়েই চলে গেল বাথরুমে। সেখান থেকে প্রায় চল্লিশ মিনিট বাদে যখন বেরোলো, তখন বইটা শেষ হয়ে গেছে। মুখটা গম্ভীর, চোখে একটা বিষণ্ণ ভাব। কোনো ভালো বই শেষ করলে এ-রকম হয়।
একজন চাকর এসে জিজ্ঞেস করল, দাদাবাবু খাবার দেব?
দাও।
একটু পরে খাবার এল। দু-টি ডিমের পোচ দু-স্লাইস টোস্ট, একটি কলা, এক গেলাস দুধ। অনিন্দ্য অন্যমনস্কভাবে খাবারগুলো শেষ করল। এবং ওই বইটা পড়ার সুফল তার মধ্যে কাজ করে গেল অনেকক্ষণ।
তন্ময় হয়ে বলতে লাগল, স্পেনের বিপ্লবীদের মতন সেও কোনো বিপ্লবী দলে যোগ দিতে পারত না? জঙ্গলে, পাহাড়ের গুহার মধ্যেই দিনের পর দিন..খাদ্য নেই, কাঁধে ঝোলানো রাইফেল—লড়াই কাকে বলে সে দেখিয়ে দিত! অনিন্দ্যদের বাড়িতে সবরকম আরামের ব্যবস্থা আছে, অথচ সে কষ্ট সহ্য করতে চায়।
পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে, এখন দু-টি কাজ সে করতে পারে। কলেজের ইউনিয়নের ইলেকশনে খানিকটা মদত দেবে, সে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। পরীক্ষা যখন ঠিকঠাক হয়ে গেল, তখন এ ব্যাপারে তার একটা নৈতিক দায়িত্ব আছে। এদিকে আবার মুম্বই থেকে ছোটোমামা নেমন্তন্ন করেছেন। গোয়া বেড়াবার প্রলোভন আছে সেইসঙ্গে। অনিন্দ্যর অবশ্য নিজের বেশি ইচ্ছে অন্য একটা ব্যাপারে। দিল্লি থেকে তেহরান পর্যন্ত একটা মোটরগাড়ির রেস হচ্ছে— ছোটোকাকার বন্ধু সোমেন যোগ দিচ্ছে তাতে। সোমেনদার গাড়িতে চড়ে যদি তেহরান যাওয়া যেত—দারুণ এক্সাইটিং। দাদাকে রাজি করানো গিয়েছিল, টাকাপয়সার ব্যাপারেও অসুবিধে হত না, স্টিলের ব্যাবসা করে দাদার হাতে এখন অনেক টাকা। কিন্তু মা একেবারে বেঁকে বসেছেন। গাড়ির রেসে নাকি প্রাণের ভয় আছে।
মায়ের ওপর রাগ হয় অনিন্দ্যর। মায়েরা একটা জিনিস বোঝে না, প্রত্যেকেই নিজের প্রাণটা ভালোবাসে। ছেলের প্রাণের ওপর ছেলের চেয়েও মায়ের ভালোবাসা বেশি, এ কখনো হতে পারে?
অনিন্দ্যর বাবা মারা গেছেন অনেক আগে। ব্যাবসার ব্যাপারে সে-সময় কী একটা দারুণ গন্ডগোল হয়েছিল। খুব সম্ভবত তাঁকে পুলিশে ধরত, তার আগেই স্ট্রোক হয়। বাবা স্বর্গে চলে গেছেন বেশ সসম্মানে। এই বিষয়টা অনিন্দ্যর কাছে অনেকদিন গোপন করে রাখা হয়েছিল, কিন্তু সে জেনে গেছে ঠিকই। দাদা এখন ব্যাবসাটা আবার খুব ভালোভাবে সামলে নিয়েছে। এবাড়িতে দুঃখের কোনো ছায়া নেই।
জানলা দিয়ে অনিন্দ্য তাকিয়ে থাকে বাইরের দিকে। খবরের কাগজ পড়া হয়নি, কিন্ত অনিন্দ্য সেজন্য বিশেষ আগ্রহ বোধ করছে না।
জল-মেশাননা ফিনফিনে হাওয়া দিচ্ছে। এইসব দিন বেড়াবার দিন। দাদার গাড়িটা ম্যানেজ করে বেরিয়ে পড়তে পারলে বেশ হত। এক-এক সময় দাদার গাড়িতে চড়তে ঘেন্না করে। দাদা একবার একটা লোককে ধাক্কা মেরেছিল। জনতার দাবিতে সেই লোকটাকে সেই গাড়িতেই তুলে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, হাসপাতালে পৌঁছোবার আগেই লোকটা মারা যায়। আশ্চর্য, একটা আহত মানুষ আর একটা মৃত মানুষের মধ্যে মাত্র কয়েক মিনিটের তফাত, তবু সব কিছু কীরকম বদলে যায়। একজন আহত মানুষ গাড়িতে চাপলে ঘেন্না করে না, কিন্তু যখনই মনে হয়, পেছনের সিটে একটা মৃতদেহ শুয়েছিল, অমনি গাটা গুলিয়ে ওঠে। লোকটার কশ থেকে গড়ানো কালো কালো রক্ত লেগেছিল সিটে।
সিগারেট ধরিয়ে অনিন্দ্য রাস্তার দিকের বারান্দায় এসে দাঁড়াল এটা তার মেয়ে দেখার সময়। গলির মোড়েই একটা মেয়েদের কলেজ। অনিন্দ্য যে শুধু মেয়েদের দেখে তাই নয়, অনেক মেয়েও চোরাচোখে বারবার তাকায় তার দিকে। অনিন্দ্যর ফর্সা চেহারা, সুন্দর স্বাস্থ্য এবং ইচ্ছে করেই সে হাতকাটা গেঞ্জি পরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেক্স অ্যাপিল দেয়।
ঝাঁক ঝাঁক প্রজাপতির মতন মেয়েরা আসছে। প্রত্যেকের শাড়ির রং আলাদা। আজ পর্যন্ত কখনো হুবহু একরকমের শাড়ি পরা দু-টি মেয়েকে একসঙ্গে দেখা যায়নি। মেয়ে-কলেজের মেয়েরা কিন্তু গেটের সামনে দাঁড়িয়ে জটলা করে না। ক্লাস কেটে চায়ের দোকানে আড্ডা মারতেও শেখেনি এখনও। বড়জোর ক্লাস পালিয়ে সিনেমায় যায়। ওঃ, কী সিনেমাখোর হয় এই মেয়েগুলো! অনিন্দ্য হালকাভাবে শিস দিয়ে একটা গান গাইতে লাগল।
অনিন্দ্যদের উলটো দিকের বাড়িটা সদ্য বিক্রি হয়ে গেছে। ওটা তালুকদারদের বাড়ি ছিল। একসময় কচি তালুকদারকে অনেকেই চিনত। মুম্বই থেকে আর্টিস্টদের এনে ফাংশান করাত। ওর নামই হয়ে গিয়েছিল ফাংশান-দাদা। ওদের বাড়ির এক বউ আত্মহত্যা করায় পরিবারটা একেবারে লন্ডভন্ড হয়ে গেল। কচি তালুকদারের কথা ভেবে অনিন্দ্য ঠোঁটটা একটু বেঁকালো। লোকটা হেরে গেছে। ফাঁপা মানুষ ছিল, একদিন-না-একদিন হারতই।
বাড়িটা এখন কিনেছে কী এক গন্ডেরিয়া না, ঢনঢনিয়া। বড়ো বড়ো বাড়িগুলো ওরাই কেনে। পুরোবাড়িটা প্রায় ভেঙে আগাগোড়া নতুন করে বানাচ্ছে। অনেক কুলি-মজুর খাটছে। বাঁশের ভারায় ইট মাথায় নিয়ে উঠছে কয়েকটা কুলি মেয়ে, মনে হয়, যেকোনো সময় পা পিছলে পড়ে যেতে পারে। অনিন্দ্য অলসভাবে তাকিয়ে আছে সেইদিকে। বিশেষ একটি মেয়ের দিকে তার দৃষ্টি যাচ্ছে বার বার। মেয়েটির শাড়ি শতচ্ছিন্ন, বুকের অনেকটা অংশ দেখা যায়, মুখটা অনেকটা সোফিয়া লোরেনের মতো, মাথায় একসঙ্গে প্রায় দশ-বারোটা ইট নিয়ে উঠছে, পা টিপে টিপে তাল সামলে। মেয়েটি পড়ে না গেলেও তার মাথা থেকে ইটগুলো যেকোনো বার খসে পড়তে পারে—সত্যিই পড়ে কি না সেটা দেখাই যেন অনিন্দ্যর দায়িত্ব।
মেয়েটির পিঠে একটা পোঁটলার মতন বাঁধা। একসময় অনিন্দ্য দেখল, সেটা নড়ছে। তার বুকটা ধক করে উঠল। মেয়েটির পিঠে বাঁধা একটি শিশু। একখানা ইটও যদি খসে ওই শিশুটির মাথায় পড়ে…। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে ঈশ্বর আছেন, এই শিশুটির মধ্যেও? ওই কুলি-জননীর পিঠের বোঁচকার মধ্যে বাঁধা অবস্থায় শুয়ে আছেন ঈশ্বর। অনিন্দ্যর শরীরে একটা রোমাঞ্চ হল। মেয়েটি ভারার মাঝপথে দাঁড়িয়ে একটু দম নিচ্ছে, মাথায় অগোছালো ইট, অনিন্দ্য আর সে-দিকে তাকাতে পারছে না ভয়ে।
সকাল বেলা একটা ভালো বই পড়ার জন্যই অনিন্দ্যর তরুণ চিত্ত উদবেলিত হয়ে উঠল। সে একটা জামা গায়ে গলিয়ে বেরিয়ে এল রাস্তায়। অন্য সময় এ-রকম অনেক কিছু দেখেও মনে হয় কী আর হবে! এদেশের অবস্থাই তো এই! এখানে কী মানুষের প্রাণের কোনো দাম আছে? কিন্তু এখন অনিন্দ্যর মনের অবস্থা সেরকম নয়। সে কিছু একটা করতে চায়।
একজন ঠিকাদার কাজ করাচ্ছিল মজুরদের। অনিন্দ্য তার সামনে এসে কর্কশ গলায় বলল, আপনি মানুষ না জানোয়ার?
সে বেচারা হকচকিয়ে গেল একেবারে। কিছু বুঝতে না পেরে এদিক-ওদিক তাকাতে লাগল। অনিন্দ্য তার বুকে তর্জনীর খোঁচা মেরে আবার বলল, হ্যাঁ আপনাকেই বলছি। আপনি মানুষ না জানোয়ার।
লোকটা বিমূঢ়ভাবে বলল, কী হয়েছে?
কী হয়েছে? ইচ্ছে করলে এপাড়ায় এবাড়ি আমরা ধুলো করে দিতে পারি। দেখবেন?
আরে ভাই, কী হলটা কী?
লজ্জা করে না আপনার? ওই যে ওই মেয়েছেলেটা, পিঠে একটা বাচ্চা, ওকে দিয়ে আপনি ইট বয়াচ্ছেন? চোখের চামড়া নেই?
লোকটি এবার কুলি রমণীটির দিকে তাকিয়ে বেশ বিরক্ত হল। ভুরু কুঁচকে বলল, তা আমি কী করব? কাজ করার সময় বাচ্চা আনে কেন?
লোকটির হ্যালবেলে ভাব দেখে অনিন্দ্য আরও রেগে গেল। বোধ হয় সে এবার মেরেই বসবে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, আপনার নিজের বাড়িতে বাচ্চা নেই? নাকি আঁটকুড়ে? কখনো মায়ের দুধ খাননি?
লোকটি রাগল না। ঠিকাদারদের কক্ষনো পাড়ার ছেলেদের ওপর তেজ দেখাতে নেই। অমায়িকভাবে হেসে বলল, আর বলেন কেন ভাই, এদের যা কারবার! যেখানেই যাবে এণ্ডি-গেণ্ডি সব নিয়ে যাবে। জন্মায়ও তেমনি গন্ডায় গন্ডায়! এই, এই শোন, শোন, এদিকে শোন…
কুলি মেয়েটি তখন নীচে নেমে আসছিল। ঠিকাদার তাকে কাছে ডাকল। তারপর তার পিঠের বোঁচকার দিকে তাকিয়ে বলল, এটা কী? বাচ্চা, এঃ! ইতনা ছোটা বাচ্চা লেকে কাম মে কিঁউ আতা হ্যায়?
পিটপিট করে তাকিয়ে আছে শিশুটি। আট ন-মাস বয়েস হবে। চোখে রোদ লাগছে। সারামুখ লালায় মাখামাখি।
অনিন্দ্য বলল, অন্য দেশ হলে আপনার জেল হয়ে যেত!
ঠিকাদার সে-কথা গায়ে মাখল না। সেইরকম হাসিমুখেই বলল, জানেন না, এদের ধরনই এইরকম।
তারপর হাসিটা মুছে ধমক দিয়ে মেয়েটিকে বলল, যাও, ঘরে যাও! কাম নেহি করনে হোগা।
মেয়েটি ভীরু কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে আছে। ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছে না।
আপনি সিগারেট খাবেন?
অনিন্দ্য বলল, না।
আপনি কোন বাড়িতে থাকেন? আপনাদের পাড়াটা খুব নিরিবিলি।
অনিন্দ্যর আর কথা বাড়াবার ইচ্ছে নেই। সে ফেরার জন্য পা বাড়াল।
একটুখানি আসবার পরই তার পিঠের জামাটায় টান পড়ল। সেই কুলিমেয়েটা ডাকল, এ বাবু!
অনিন্দ্য মুখ ফেরাতেই মেয়েটি দুর্বোধ্য ঠেট হিন্দিতে অনর্গল কী যেন বলে গেল। রাগে তার মুখখানা গনগনে। অনিন্দ্য তার কথা কিছু বুঝতে না পারলেও এটুকু বুঝতে পারল যে মেয়েটি তাকে বকছে। এমন তার বকুনির ঝাঁঝ যে অনিন্দ্য কুকড়ে যাচ্ছে প্রায়। হাত তুলে সে কিছু বোঝাবার চেষ্টা করল, কিন্তু মেয়েটি তার কথাই শুনবে না। অদূরে দাঁড়িয়ে ঠিকাদারবাবু সিগারেট টানছে। মুখে দিব্যি মিটিমিটি হাসি। মেয়েটি দৌড়ে গিয়ে ঠিকাদারবাবুর হাত ধরে টেনে আবার বকবক করতে লাগল।
ঠিকাদারবাবু বলল, আমি কী করব? এই বাবু বারন করছে! চেঁচামেচি শুনে আরও কয়েকজন মজুর-মজুরানি কাজ থামিয়ে এদিকে তাকিয়ে ছিল। এবার তারা এদিকে এগিয়ে এল, তাদের চোখ-মুখের চেহারা দেখে অনিন্দ্য বুঝল, ব্যাপার সুবিধের নয়, আর এখানে থাকার কোনো মানে হয় না। সে সুট করে কেটে পড়ল।
বাড়ি না-ফিরে অনিন্দ্য মোড়ের মাথায় এসে বাস ধরল। মুখটা তেতো লাগছে। সকাল বেলায় ভালো লাগার মেজাজটা নষ্ট হয়ে গেল। সুর কেটে গেছে, এখন অন্য একটা কিছু করা দরকার-–
সেন্ট্রাল কাফেতে পাওয়া গেল ধূতিকান্তকে। তাকে একটু আগের ঘটনাটা শুনিয়ে বলল, মাইরি প্র্যাকটিক্যালি আমাকে পালিয়ে আসতে হল। ব্যাপারটা কিছুই বুঝলাম না। অত রেগে গেল কেন?
ধূতিকান্ত হাই তুলে বলল, তোর কি আর কোনো কাজ নেই, তুই কুলি মেয়েদের পেছনে লেগেছিস? কেন, অন্য মেয়ের অভাব!
না, না, সে-কথা বলছি না।
এক-একটা সাঁওতাল মেয়েকে এক-এক সময়ে হেভি দেখতে লাগে। যাক গে শোন অরবিন্দরা কিন্তু তোর ওপর দারুণ রেগে আছে। একটু সাবধানে থাকিস!
অনিন্দ্য ওষ্ঠ উলটে বলল, যা যা, ওরা আমার ইয়ে ছিঁড়বে!
তুই সব কিছু ওরকম অবহেলা করে উড়িয়ে দিস না। ওদের একটা বছর নষ্ট হয়ে গেল। সুব্রতটাও বোকার মতন ওর মধ্যে গিয়ে পড়ল।
অনিন্দ্যর এখন মেজাজ খারাপ, এখন সে সব কিছুই অবজ্ঞা করবে। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, ওদের তো সারাজীবনটাই নষ্ট হবে। একটা বছরে কী যায়-আসে! চল, ওঠ।
ওদের পাশের টেবিলেই আরও তিনটি ছেলে বসে মৃদুগলায় কথা বলছে। অলকেন্দু, দেবজ্যোতি আর শংকর। এরা হচ্ছে খাঁটি ভালো ছেলে। এরা খারাপ কথা উচ্চারণ করে না, পরীক্ষা ভণ্ডুল করে না। এরা পৃথিবীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মাথা ঘামায়। ভবিষ্যতে এরা প্রত্যেকেই বড়ো চাকরি করবে। ধৃতির একার ইচ্ছে হল অনিন্দ্যকে ছেড়ে দিয়ে ওদের সঙ্গে বসে। কিন্তু অনিন্দ্যর হাতে একবার পড়লে আর নিস্তার নেই।
কোথায় যাবি?
চল না। শিখার সঙ্গে খানিকটা হিড়িক মেরে আসি।