আগরতলা থেকে কলকাতা যাত্রা সহজ ব্যাপার নয়। বাষ্পরূপী দৈত্যের শক্তিতে এখন লৌহনির্মিত শকট ছুটে চলে। সিপাহি বিদ্রোহের পর এক স্থান থেকে আর এক স্থানে দ্রুত সৈন্য পাঠাবার সুবিধার জন্য ভারতের নানা অঞ্চলে দ্রুত রেল লাইন পাতা হচ্ছে, সেই রেল সাধারণ যাত্রীদেরও বহন করে। কিন্তু ত্রিপুরা রাজ্য ইংরেজ সাম্রাজ্যের মধ্যে পড়ে না, সেখানে রেল গাড়ি চালাবার গরজ নেই ইংরেজ সরকারের। ত্রিপুরার রাজার সামান্য সাধ্যে এই বিপুল ব্যয়বহুল যানবাহনের ব্যবস্থা করাও সম্ভব নয়। ত্রিপুরার রাজধানী থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী রেল স্টেশন আছে বঙ্গদেশের কুষ্টিয়া শহরে, সেখানে পৌঁছোতেই বেশ কয়েকদিন লেগে যায়।
রাধারমণ ঘোষ মশাই যাত্রা শুরু করলেন হাতির পিঠে। এ যাত্রায় তাঁর সঙ্গী হয়েছেন শশিভূষণ, রাজ-সরকারের খরচে কলকাতায় যাওয়ার এই সুযোগটি তিনি ছাড়তে চাননি, কলকাতায় তাঁর নিজস্ব বিষয়-সম্পত্তি নিয়ে কিছু গোলযোগ তিনি মিটিয়ে আসতে চান। হাওদার ওপরে বসেছেন দু’জন, হাতি চলেছে দুলকি চালে। মাহুত একটা অঙ্কুশ উঁচিয়ে মাঝে মাঝে শব্দ করছে হি রো-রো-রে হি রো-রো-রে…।
হেমন্তকালের বাতাসে সামান্য শিরশিরানি ভাব এসেছে। আকাশ পরিষ্কার। গাছপালাগুলি পত্র বিমোচনের জন্য তৈরি হচ্ছে, অনেক গাছের পাতায় হলুদাভ ছাপ পড়ছে এর মধ্যেই। অসমতল বনপথ, মাঝে মাঝে গাছের ডাল চাবুকের মতন শপাং শপাং করে লাগে, তাই মাথা বাঁচাবার জন্য সতর্ক থাকতে হয়। কোথাও বা কোনও গাছের গায়ে পরগাছা দেখলে হাতিটি শুর দিয়ে তা ছেড়ার জন্য থেমে যায়, মাহুত তখন তার মাথায় ডাঙস মারে।
এই যাত্রায় লটবহর থাকে অনেক। রাত্রিযাপনের জন্য তাঁর রাখতে হয়, এই ক’দিনের প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য বহন করতে হয়। সেই জন্য ছ’জন মালবাহকও সঙ্গে চলেছে পায়ে হেঁটে, এই মিছিলটির সামনে ও পিছনে রয়েছে দু’জন বন্দুকধারী প্রহরী। এই পথে হিংস্ৰ জন্তু-জানোয়ার ছাড়াও দস্যুর ভয় আছে।
শশিভূষণের সঙ্গেও একটি বন্দুক রয়েছে। তিনি যেমন ক্যামেরা চালাতে পারেন, তেমনি বন্দুক চালনাও শিখেছেন। আজ তার পরনে বিলিতি পোশাক, মাথায় শোলার টুপি। বন্দুকটা দু’ হাতে ধরে তিনি ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কোনও চকিত বন্যপ্রাণীর সন্ধানে রয়েছেন। ঘোষমশাই ধুতি ও বেনিয়ানের সঙ্গে কাঁধে চাদর দিয়ে বাঙালীবাবু সেজে আছেন, তিনি মাথায় কখনও পাগড়ি বা টুপি ব্যবহার করেন না। চিন্তামগ্ন ভাবে তিনি হুঁকো টানছেন। কলকাতা থেকে মহারাজের জন্য অর্থসংগ্রহের প্রচেষ্টায় তাকে সফল হয়ে ফিরতেই হবে। সাহেব কোম্পানিকে পাহাড় ইজারা দেবার প্রস্তাব একবার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল, এখন আবার উপযাচক হয়ে গেলে তারা কতটা দর কমাবে কে জানে!
শশিভূষণ হঠাৎ হাঁটুতে ভর দিয়ে উঁচু হয়ে মাহুতের পিঠ ছুঁয়ে বললেন : থামো, থামো! তারপর ঘোষমশাইয়ের দিকে ফিরে ওষ্ঠে আঙুল ছুঁইয়ে নিঃশব্দ থাকার ইঙ্গিত করলেন।
ডান দিকে খানিক দূরে ঝোপের আড়ালে দেখা যাচ্ছে লাল রঙের ঝিলিক। অতি উজ্জ্বল লাল, ভোরের সূর্যের মতন লাল। শশিভূষণ সেদিকে বন্দুক তাক করলেন, রাধারমণ ভেবে পেলেন না এমন লাল রঙের কী প্রাণী হতে পারে। নিশ্চিত পাখি, অকারণে পাখি হত্যা তাঁর মনঃপূত নয়, তিনি শশিভূষণকে নিবৃত্ত করতে গেলেন, তার আগেই গুড়ুম শব্দে গুলি ছুটে গেল।
সঙ্গে সঙ্গে ডানা ঝটপটিয়ে শূন্যে উঠে গেল দুটি বড় আকারে পাখি, তাদের কঁ কঁ কঁ কঁ আওয়াজে বোঝা গেল, সে দুটি বন্য কুক্কুট। বন্দুকে আবার দ্রুত গুলি ভরে ট্রিগার টিপলেন শশিভূষণ। মুরগিকে ঠিক পাখি বলা যায় কিনা এ বিষয়ে সন্দেহ থাকায় রাধারমণ আর আপত্তি করলেন না, ব্যগ্র হয়ে দেখতে লাগলেন ফলাফল। শশিভূষণের নিশানা বেশ ভালো। সেই ঝোপে গোটা পাঁচেক বনমোরগ ঝাঁক বেঁধে ছিল, তার মধ্যে দুটি নিহত হল শশিভূষণের তৎপরতায়। মালবাহকেরা হৈ হৈ করে ছুটে গিয়ে সে দুটিকে কুড়িয়ে নিয়ে এলো। দুপুরবেলায় আহারের জন্য যোগ হল একটি উৎকৃষ্ট পদ, বনমোরগের স্বাদ অতি উত্তম।
হিন্দুরা মুরগির মাংস ছোঁয় না, অপবিত্র জ্ঞান করে। এই পাখিদুটি বুনো হলেও মুরগির জাত তো বটে। রাধারমণ ও শশিভূষণ দু’জনেই ইংরেজি শিক্ষিত এবং ইয়াং বেঙ্গলের দলের ধারার অনুগামী। এঁরা গরুর মাংস ভক্ষণ করেও নিজেদের আধুনিকতার প্রমাণ দিতে পিছু-পা নন। ত্রিপুরার রাজারা যদিও মহাভারতীয় ঐতিহ্য টেনে নিজেদের ক্ষত্ৰিয়ত্ব প্রমাণে উৎসাহী, আসলে তারা ত্রিপুরি উপজাতির বংশধর। বর্তমানে আচার-ব্যবহারে উচ্চ জাতীয় হিন্দু হতে চাইলেও খাদ্য অভ্যেস বদল করেননি। ত্রিপুরায় মুরগি ভক্ষণের চল আছে।
রাধারমণ শশিভূষণকে যেন নতুন চোখে দেখলেন। শিক্ষকরা সচরাচর নিরীহ সম্প্রদায়ের মানুষ হয়। কোনও শিক্ষকের এরকম বন্দুক চালনার কৃতিত্বের কথা কখনও শোনা যায়নি। এ ছাড়াও শশিভূষণের আরও অনেক গুণপনা আছে।
হাতি আবার চলতে শুরু করলে রাধারমণ হুঁকোতে কয়েকটা টান দেবার পর বললেন, শশী, তোমাকে গোটাকতক কথা জিজ্ঞেস করব? ব্যক্তিগত প্রশ্ন, আশা করি তুমি কিছু মনে করবে না!
শশিভূষণ হুঁকো ব্যবহার করেন না। এখন বন্দুকটা পাশে নামিয়ে রেখে তিনি একটা চুরুট ধরিয়েছেন। কুচবিহারে দা-কাটা তামাকের শস্তা চুরুট নয়, রীতিমতো বিলিতি, অনেক দাম। সাধারণ অবস্থার মানুষের পক্ষে এরকম চুরুটের নেশা করা সাধ্যে কুলোয় না।
শশিভূষণ খানিকটা কৌতূহলের সঙ্গে সম্মতি দিলে রাধারমণ বললেন, তুমি এই ত্রিপুরায় পড়ে আছ কেন? এখানে তোমার কী এমন আকর্ষণ আছে?
শশিভূষণ লঘুভাবে হেসে উত্তর দিলেন, এখানে এসেছি চাকরি করতে। কলকাতায় চাকরি পাইনি, এখানে মহারাজ ভালোই বেতন দিচ্ছেন।
রাধারমণ বললেন, না হে, এটা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য হল না। তোমার যা যোগ্যতা, তাতে তুমি বাংলা দেশে ভালোই চাকরি পেতে পারতে। তা ছাড়া, তুমি কত বেতন পাও তা আমি জানি। সে টাকায় তো এত বাবুয়ানি চলে না। তোমার ক্যামেরার শখ, বন্দুকের শখ। এ তো রাজা-রাজড়াদের শখের বস্তু। এই সব শখ তুমি কলকাতায় বসেই অনায়াসে মেটাতে পারতে, তবু এই পাণ্ডব-বর্জিত দেশে থাকতে এলে কেন?
শশিভূষণ বললেন, আমার কিঞ্চিৎ পৈতৃক সম্পত্তি আছে বটে। কিন্তু ঘোষমশাই, আপনি আগে বলুন তো, আপনিই বা ত্রিপুরায় এতদিন পড়ে আছেন কেন? আপনার ইংরেজি জ্ঞান অসাধারণ, আইনের মারপ্যাঁচ বোঝেন ভালো, আপনিও আলবাত বাংলায় ডেপুটিগিরি পেতে পারতেন।
রাধারমণ বললেন, আমার উদ্দেশ্য পরিষ্কার। মাস্টারি কিংবা ডেপুটির চাকুরী নিয়ে আমি জীবন কাটাতে চাইনি। বাংলায় এর বেশি কিছু আমি পেতাম না। ত্রিপুরায় প্রথমে রাজকুমারদের শিক্ষকতার কাজ নিয়ে এসেছিলাম কিছুটা ঝোঁকের মাথায়। এ দেশটি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা ছিল না। ভেবেছিলাম, দু এক বছর থেকে ফিরে যাব। কিন্তু কিছুদিন থাকার পরই বুঝলাম, এখানে উন্নতির অনেক সুযোগ আছে। মহারাজ খামখেয়ালী, অন্যরা শাসনকার্যের বিশেষ কিছু বোঝে না, চতুর্দিকে অরাজক অবস্থা। তখনই ঠিক করলাম, মহারাজের বিশ্বাসভাজন হতে পারলে অনেক ক্ষমতা আমি হাতের মুঠোয় নিতে পারব। তা আমি পেরেছি, মহারাজ এখন অনেকখানি আমার ওপরে নির্ভরশীল। এই ক্ষমতা কি আমি বাংলায় কোনও চাকরিতে পেতাম?
একটু থেমে তিনি আবার বললেন, শশী, প্রথমে আমার মনে হয়েছিল, তুমিও ওই একই মতলবে এসেছ। কিন্তু ত্রিপুরার রাজনীতিতে তোমার কোনও ঝোঁক দেখি না। তুমি যদি উচ্চ শিখরে উঠতে চাইতে, তা হলে প্রথমেই আমার বিরুদ্ধ ষড়যন্ত্রে মেতে উঠতে। বাঙালিদের এটাই স্বভাব। বাঙালিই বাঙালির শত্রু। তোমার পেছনে আমি চর লাগিয়েছিলাম, কিন্তু কোনও ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাইনি। সকলের ধারণা, যে পাঠশালায় প্রায় দিনই কোনও ছাত্র থাকে না, তুমি সেই পাঠশালার গুরুগিরি করেই খুশি। এত সহজ ব্যাখ্যা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না।
শশিভূষণ এবার আরও জোরে হেসে উঠে বললেন, তবে এমন হতে পারে আমি ব্রিটিশের স্পাই!
রাধারমণ বললেন, মহারাজের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে কেউ একজন যে ব্রিটিশের স্পাই সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। কিন্তু তুমি তা নাও। তোমার ওপর নজর রাখা আছে বললাম যে! তোমার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি, বিবাহের অল্পদিনের মধ্যেই পত্নী বিয়োগ হওয়ায় তুমি আর সংসার করনি। ভবানীপুরে তোমাদের বেশ বড় বাড়ি আছে, তোমার দুই দাদা তোমাকে কলকাতায় ফিরিয়ে নেবার জন্য ব্যস্ত। কিছু অভিমান-টভিমানের ব্যাপারে আছে নাকি হে?
আস্তে আস্তে মাথা নেড়ে শশিভূষণ বললেন, হ্যাঁ, আছে!
রাধারমণ বললেন, থাক, তা হলে আর কিছু শুনতে চাই না। অভিমান হল হৃদয়ের অতি গোপন প্রকোষ্ঠের ব্যাপার। যে-কেউ সেখানে হাত ছোঁয়াতে পারে না।
শশিভূষণ বললেন, এ অভিমান তেমন নয়। বলা যায়। ঘোষমশাই, আপনাকে ছাড়া কারুকে একথা বলিনি। একটু ধৈর্য ধরে শুনতে হবে। মুর্শিদাবাদে কান্দি অঞ্চলে আমার পিতার কিঞ্চিৎ জমিদারি ছিল। আমার বড় দাদা বিমলভূষণই তা দেখাশোনা করতেন, আমি বিষয়কর্ম ঠিক বুঝি না, আমি সেখানে যেতাম পাখি শিকার করতে। ভারি সুন্দর একটি বাড়ি ছিল আমাদের একটা ছোট নদী যেন বাড়িটিকে ঘিরে বয়ে চলেছে, বাড়ির তিন দিকেই সেই নদী, খুব মজার না? নদীর উপরে জঙ্গল, যতদূর দেখা যায় শুধু জঙ্গল, বাচ্চা বয়েসেই আমি একা একা গেছি সেই জঙ্গলে। ওই বাড়িটি নিয়ে আমার অনেক স্মৃতি আছে।
রাধারমণ জিজ্ঞেস করলেন, বাড়িটি বুঝি আর নেই?
দীর্ঘশ্বাস গোপন করে শশিভূষণ বললেন, বাড়িটি আছে সেই একই জায়গায়। কিন্তু মালিক বদলে গেছে। সে তালুকও আর আমাদের নেই। বেশি বাড়াব না, সংক্ষেপে বলি। ঘোষমশাই বাচ্চা বয়স থেকেই আমার শিকারের শখ। বাবার একটা বন্দুক নিয়ে আমি জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরতাম। আমাদের ওদিককার বনে প্রচুর খরগোশ, শুয়োর, হরিণ, ভাম, বাগাডাসা, এমনকি চিতাবাঘও আছে। বহরমপুর থেকে সাহেবরা প্রায়ই সেখানে শিকার করতে যায়। আমার একাচোরা স্বভাব, আমি কখনও সঙ্গী-সাথী নিতাম না। একদিন, সেই দিনটার কথা আমার মনে আছে, সেদিনটা ছিল কালীপূজা, রাঢ় অঞ্চলে ওই দিনটায় সকলেই যেন তান্ত্রিক হয়ে যায়, অতি বৃদ্ধেরাও মাংস খায়, শিশুরাও মদ্যপান করে। আমি গিয়েছিলাম শিকারে। সেদিন জঙ্গলে অন্য শিকারিদের উপস্থিতি টের পেয়েছিলাম, আমি গ্রাহ্য করিনি, জন্তু-জানোয়ারে অভাব নেই, যার খুশি শিকার করুক। অনেকক্ষণ ঘুরে ঘুরে আমি একটা হরিণ মেরেছি, এটা জেনে রাখবেন, হরিণ মারা বাঘ মারার চেয়েও শক্ত, জল-কাদা-কাঁটা ঝোপ ঠেলে ঠেলে আমার শরীরও তখন ক্ষতবিক্ষত, হরিণটার কাছে গেছি…
হঠাৎ থেমে গেলেন শশিভূষণ, তার ফর্সা মুখটি রক্তাভ হয়ে গেল, স্থির হয়ে গেল চোখ, তিনি কাঁপতে লাগলেন।
রাধারমণ উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন, কী হল, কী হল, শশী? থাক, আর বলতে হবে না!
শশিভূষণ কটমট করে তাকালেন রাধারমণের দিকে। তারপর ভূতগ্ৰস্তের মতন ঘড়ঘড়ে গলায় বলতে লাগলেন, সেই সময় ঘোড়া ছুটিয়ে এলো দুটি ইংরেজ। সঙ্গে কয়েকজন আর্দালি। তারা আমার শিকার করা হরিণটা নিতে দিল না।
রাধারমণ বললেন, তোমার হরিণ তারা কেড়ে নিলো। ইংরেজরা তো সাধারণত এত নিচু কাজ, এমন অখেলোয়াড় সুলভ কাজ করে না!
শশিভূষণ গর্জন করে উঠে বললেন, ইংরেজরা আরও কত নীচ, জঘন্য কাজ করতে পারে তা আপনি কী জানেন?
রাধারমণ বললেন, সেই সাহেবরাও কি ওই একই হরিণকে গুলি করেছিল?
শশিভূষণ বলল, না! আমি আর কোনও গুলির শব্দ পাইনি, সাহেবব্যাটারা এসে বলল, এই, তুই বন্দুক কোথায় পেলি? তুই ডাকাত! ঘোষমশাই, ওই জঙ্গল আমাদেরই তালুকের মধ্যে, আমরাই মালিক, অথচ একটা বাইরের লোক এসে বলে কি না, আমি ডাকাত?
রাধারমণ বললেন, তোমাদের তালুক হলেও রাজত্বটা তো ইংরেজের। তাই তাদের এত প্ৰতাপ। তোমার জল-কাদা মাখা চেহারা দেখে তারা তোমাকে চিনতে পারেনি। থাক, থাক, আর উত্তেজিত হয়ে না। শান্ত হও!
শশিভূষণ বললেন, এখনও শেষ হয়নি। সাহেবের মুখে ওরকম বর্বর কথা শুনে আমি ইংরেজিতে বললাম, এই বন্দুক আমার বাবার। কলকাতার রানী মুদিনীর গলির স্মিথ অ্যান্ড ফার্গুসনের দোকান থেকে কেনা, আর এই জঙ্গলও আমাদের পারিবারিক সম্পত্তি। আমার একথাও ওরা গ্রাহ্য করল না। সাহেবদের হুকুমে আর্দালিরা আমার বন্দুকটা কেড়ে নিলো, হরিণটা তুলে নিলো। এবং ঘোড়ায় চড়া একজন সাহেব, পরে তার নাম জেনেছি, বহরমপুরের পুলিশের কর্তা হ্যামিলটন, সে ঘোড়াটার মুখ ফিরিয়ে যাবার সময় একটা লাথি কষাল আমার মুখে। আমি মাটিতে পড়ে গেলাম।
রাধারমণ বললেন, পাপ। মীরজাফর-জগৎ শেঠদের পাপ! সেই পাপের ফল ভোগ করছি আমরা।
শশিভূষণ বললেন, না, ঘোষমশাই! অতীতের পাপের কথা ভেবে আমরা বর্তমানের কাপুরুষতাকে চাপা দিতে পারি না! ফিরে এসে আমি এই ঘটনার কথা আমার দাদাদের জানিয়েছি। কলকাতায় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জানিয়েছে। সবাই মাথা দুলিয়েছে, জিভ দিয়ে চুকচুক শব্দ করেছে, কিন্তু এই অপমানের প্রতিকারের কোনও পথ বাতলাতে পারেনি। হ্যামিলটনের বিরুদ্ধে আমি তবু মামলা করেছিলাম।
রাধারমণ বললেন, সাহেবের বিরুদ্ধে মামলা করে কি কোনও লাভ হয়? তাও পুলিশ সাহেব!
শশিভূষণ বললেন, স্যাঙাতে স্যাঙাতে মুখ শোঁকাশুঁকি। জজও তো সাহেব। মামলা ডিসমিস করে দিল। আমার কোনও সাক্ষি ছিল না। হ্যামিলটন কারুকে লাথি মারেনি বলল, তার কথাই বিশ্বাস করা হল। বন্দুকটা শুধু ফেরত দিয়েছেন। কলকাতার কাগজওয়ালাদের আমি এই ঘটনা ছাপাতে বলেছিলাম, কেউ ভয়ে রাজি হয়নি! আমার দাদারা কি করল জানেন! পুলিশ সাহেবের সঙ্গে বিবাদ করে ওখানে টেকা যাবে না। এই ভেবে অমন সুন্দর তালুকটা বিক্রি করে দিল ঝটপট। এত কাপুরুষ, এত মেরুদণ্ডহীন যদি কোনও জাতি হয়ে যায়, সে জাত আর কোনওদিন উঠে দাঁড়াতে পারবে?
রাধারমণ জিজ্ঞেস করলেন, তারপর তুমি ত্রিপুরা চলে এলে?
শশিভূষণ বললেন, ইংরেজের রাজত্বে আর বাস করব না প্ৰতিজ্ঞ করেছি। তাই কাছাকাছি এই স্বাধীন বিপুরা রাজ্যে চলে এসছি।
রাধারমণ বললেন, ত্রিপুরা কেমন স্বাধীন রাজ্য, তা আশাকরি এতদিনে তুমি জেনেছি। ঢাল নেই, তরোয়াল নেই, নিধিরাম সর্দার!
শশিভূষণ বললেন, তা জানি। তবু তো ইংরেজকে বার্ষিক কর দেয় না! ইংরেজ জজ-ম্যাজিস্ট্রেটরা এখানে হাকিম হয়ে বসেনি। ঘোষমশাই, ত্রিপুরার এই স্বাধীন অস্তিত্বটুকু অন্তত টিকিয়ে রাখতে হবে। মহারাজ বীরচন্দ্রকে আপনি সামলে সুমলে রাখবেন।
রাধারমণ বললেন, সেই চেষ্টাই তো করছি, শশী! তা হলে তোমার অভিমান কোনও নারী ঘটিত নয়! তোমার অভিমানের মধ্যে ক্ৰোধ বেশি, তা একদিন কেটে যাবে। নারীর প্রতি অভিমান সারা জীবনেও যায় না!
শশিভূষণ বললেন, অভিমান হয়েছে আমার দাদাদের উপর। তারা ওই তালুকটা বেচে দিয়েছে বলে। রাগ আছে ইংরেজদের ওপর। সেই রাগ কবে ঘুচিবে জানেন? যেদিন আমি একজন ইংরেজের মুখে ওই রকম লাথি মারতে পারব। মারবই একদিন-আপনি জেনে রাখুন!
রাধারমণ বললেন, সর্বনাশ! এ রাজ্যে যেন ও রকম কম্মো করতে যেও না! তা হলে আমরাই তোমাকে জেলে ভরে দেব!
এই সময় মালবাহকদের মধ্যে কী যেন চ্যাঁচামেচি শুরু হয়ে গেল। মাহুত হাত তুলে হাতিকে থামাবার ইঙ্গিত দিল। গভীর জঙ্গল, এখানে থামবার কোনও কারণ নেই।
চারজন মালবাহক তাদের কাঁধের ভার নামিয়ে রেখে ছুট দিল এক দিকে। শশিভূষণ জিজ্ঞেস করলেন কী, কী ব্যাপার, ওরা চলে যাচ্ছে কেন?
রাধারমণ বললেন, ওদের ডিউটি শেষ। ছ’জনকে দেখছিলে তো, ওদের মধ্যে মাত্র দু’জন আমাদের কর্মচারী। বাকি চার জন্য গ্রামবাসী। আমরা যখন যে গ্রামের পাশ দিয়ে যাব, তখন সেই গ্রামের লোক আমাদের মাল বয়ে দেবে।
শশিভূষণ ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, এমনি এমনি মাল বয়ে দেবে? পয়সা পাবে না?
রাধারমণ বললেন, উঁহু! পয়সা কিসের? প্রজারা রাজার কাজ করে দিচ্ছে, এর মধ্যে মজুরির প্রশ্নই ওঠে না। একে বলে তিতুন প্ৰথা। বহুদিন ধরে এ রাজ্যে এ প্রথা চলে আসছে।
শশিভূষণ বিরক্তভাবে কিছু বলতে যেতেই রাধারমণ হেসে হাত তুলে তাকে বাধা দিয়ে বললেন, জানি, জানি, তুমি কী বলতে চাও! তোমার শিক্ষিত বিবেক বলবে, মানুষকে বিনা পয়সায় খাটানো উচিত নয়। কিন্তু ভুলে যেও না, কয়েক বছর আগেও এ দেশে দাস প্রথা ছিল, মানুষ কেনা-বেচা চলত। মহারাজকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে সে প্রথা রদ করিয়েছি। বেশি তাড়াহুড়ো করলে লাভ হবে না। মহারাজকে ধীরে সুস্থে বুঝিয়ে এইসব কুপ্রথা নিবারণ করতে হবে। দেখ না, সতীদাহ বন্ধ করার জন্য মহারাজকে বারবার বলছি, তিনি রাজি হচ্ছেন না। তবু ধৈর্য হারালে চলবে না।
শশিভূষণ বিরাগের সঙ্গে বললেন, আমার অন্ত ধৈৰ্য নেই। মানুষকে মানুষের মর্যাদা না দিলে সে রাজ্যের কোনও উন্নতি হতে পারে!
নতুন মালবাহকরা এসে গেছে, আবার শুরু হল যাত্রা।
মাঝে মাঝে ছোট ছোট পাহাড় পার হতে হচ্ছে। কোথাও জঙ্গল এমন নিবিড় যে পায়ে চলা পথও দেখা যায় না। সন্ধের দিকে একটু ফাঁকা জায়গা নির্বাচন করে যাত্রা স্থগিত হয়, খটাখট শব্দে খাটানো হয় তাঁবু। জঙ্গল থেকে শুকনো কাঠ এনে জ্বালানো হয়, সেই আগুন ঘিরে বসে মালবাহকরা গান ধরে।
রাত্রের আহারাদি পর্ব শেষ হলে অন্য সকলে বাইরেই শুয়ে পড়ে, রাধারমণ-শশিভূষণ তাঁবুতে। রাধারমণ নিয়মনিষ্ঠ মানুষ, তাঁর যেন ইচ্ছা ঘুম, ঘড়ি দেখে ঠিক সাড়ে নটার সময় শুয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মৃদু নাসিকা গর্জন শুরু হয়। ভোর সাড়ে চারটের সময় তাঁর ঠিক ঘুম ভাঙবে। শশিভূষণ অত সহজে যেখানে সেখানে ঘুমোতে পারেন না, তাঁবুর বাইরে মশাল জ্বলে, সেই আলোয় বই পড়ার চেষ্টা করেন। বন্দুকধারী প্রহরী দু’জনের মধ্যে পালা করে একজন ঘুমোয়, একজন জাগে। বন্দুকটা হাতে নিয়ে তাঁবু থেকে বেরিয়ে এসে শিকার সন্ধান করেন শশিভূষণ। সারা রাত আগুন জ্বলে বলে জন্তু-জানোয়াররা এদিকে আসে না, দূরে তাদের গমনাগমন টের পাওয়া যায়। জন্তু জানোয়ারদের চেয়েও হিংস্র আদিবাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হবার ভয়ই বেশি। তবে তাদের বন্দুক নেই।
অন্ধকারে একা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে শশিভূষণ বিমনা হয়ে যান। তাঁর অতীত জীবনের নানান দৃশ্য যেন নদীর স্রোতের মতন বয়ে যায় তার সামনে দিয়ে। হঠাৎ কোনও গাছে পাখিদের ডানা ঝঁটপটানি ও আর্ত চিৎকার শোনা যায়। নিশ্চয়ই কোনও সাপ হানা দিয়েছে তাদের বাসায়। কয়েকটা শিয়াল ফেউ ফেউ করে ডেকে উঠলে বোঝা যায় কাছাকাছি বাঘ এসেছে।
তৃতীয় দিনের যাত্রা বেশ বিঘ্ন-বহুল। এখানে অন্যান্য গাছের চেয়ে বাঁশ ঝাড় বেশি। চতুর্দিকে শুধু বাঁশ। হাতির গায়ে খোঁচা লাগে, সে আর এগোতে চায় না। মাহুত বার বার ডাঙস মারে আর চ্যাঁচায়। এক জায়গায় বাঁশের খোঁচায় শশিভূষণেরও বাহু ছড়ে গেছে। রাধারমণের আদেশে মালবাহকেরা বাঁশ কেটে হাতির জন্য পথ পরিষ্কার করতে লাগল।
শশিভূষণ বললেন, এত বাঁশ, এগুলো কেটে কেটে বাংলায় চালান দিতে পারেন না? তা হলে তো ত্রিপুরার রাজস্ব বাড়ে।
রাধারমণ বললেন, এগুলো মুলি বাঁশ, এখানেই খুব কাজে লাগে।
শশিভূষণ বললেন, কতই তো রয়েছে। সব তো কাজে লাগে না। এমনি এমনি নষ্ট হচ্ছে।
রাধারমণ বললেন, সব বাঁশের ভালো দাম পাওয়া যায় না। বয়ে নিয়ে যাবার খরচা পোষায় না। এদিকে তো নদীনালা নেই ভালো। এখানকার লোক আবার দু’এক রকম বাঁশ কাটতেই চায় না, সংস্কার আছে।
শশিভূষণ বললেন, বাঁশের আবার এরকম সেরকম হয় নাকি?
রাধারমণ বললেন, বাঃ, বাঁশের জাত নেই? কালি বাঁশ, পাপুয়া, মৃতিঙ্গা, রুপাই, ভালু, কলাই এরকম কত ধরুনের বাঁশ হয়। লক্ষ করে দেখ, ওই যে কুলিরা বাঁশ কাটছে, এক একটা ঝাড়ে কিন্তু তারা দায়ের কোপ মারছে না, এড়িয়ে যাচ্ছে, ওগুলা কালি বাঁশ। মাঝে মাঝে মাড়ের মধ্যে উকি দিয়ে ওরা কী দেখছে বল তো?
-কী?
—দেখছে ফুল, ফুটছে কি না। বাঁশের ফুল বড় সাঙ্ঘাতিক জিনিস। দশ-কুড়ি বছরে একবার ফোটে, তখন দুর্ভিক্ষ, মড়ক, মহামারি আসে দেশে।
-সত্যি?
-অন্তত লোকের তো তাই বিশ্বাস। বাঁশের ফুল দেখলে নাকি ইঁদুররা পাগল হয়ে যায়!
-বাবাঃ, কত কিছুই এখনও শেখার বাকি আছে।
—শেখার কী শেষ আছে? তুমি বাঁশের কোড়া খেয়েছ, শশী? ছেলেবেলায় দেখেছি, বাঁশ ঝাড়ে কচি কচি ডগা উঠলে তার ওপর হাঁড়ি চাপা দিয়ে রাখত। তখন সেই কচি ডগা বাড়তে না পেরে ফুলে-ফেঁপে একটা মস্ত বড় ফুলকপির মতন হয়ে যায়। তা দিয়ে ব্যঞ্জন রাঁধলে কী অপূর্ব স্বাদ!
এই রকম নানা গল্প করত করতে সময় কাটে। দিন কাটে। চতুর্থ দিন দুপুরে এই দলটি এসে পৌঁছল মেঘনা নদীর তীরে এক গঞ্জে। এখানে প্রথম পর্বের সমাপ্তি। হাতি নিয়ে মাহুত ও অধিকাংশ মালবাহক এবার ফিরে যাবে, পরের যাত্রা শুরু হবে নৌকোয়।
বিশাল মেঘনা নদী থৈ থৈ করছে, ফনফন করছে বাতাস, খেয়াঘাটে দাঁড়িয়ে শশিভূষণের রোমাঞ্চ হল। ত্রিপুরায় আসবার সময় একবারই মাত্র তিনি এই নদীপথে এসেছিলেন, সেবারে ঝড় উঠেছিল, মাঝিদের সামাল সামাল রবে বুক কেঁপে উঠেছিল তাঁর। প্রশস্ত গয়নার নৌকোটি মোচার খোলার মতন উথাল-পাথাল করছিল। এখন আকাশে মেঘ নেই, তবু নিশ্চিন্ত হওয়া যায় না কিছুতে।
নৌকো তৈরিই আছে, কিন্তু কিছু কিছু রসদপত্রে কিনে নেবার জন্য কিছুটা দেরি হবে। গঞ্জে বেশ ভিড়, ভিখিরি, ফড়ে, দালালরা গিসগিস করছে, গোটা তিনেক মনিহারি দোকানে সেফটি পিন থেকে হামান দিস্তা পর্যন্ত নানান দ্রব্য সাজানো। পাশাপাশি হিন্দু ও মুসলমানদের দুটি ভাতের হোটেলে খাওয়া-দাওয়া চলছে কলরবের সঙ্গে, তার ঠিক পেছনেই একটা বেশ্যালয়।
রাস্তার ধারে ভিখিরিরা বসে আছে প্রত্যেকের সামনে এক টুকরো চট পেতে, একটু দূরেই তাসে জুয়ার আসর, তার পাশেই মাছওয়ালা চেল্লাচেল্লি করছে। নদী থেকে সদ্য ধরা হয়েছে একটা বোয়াল মাছ, এত বড় যে মনে হয় হাঙর। শশিভূষণ অলসভাবে হাঁটছেন সেই রাস্তা দিয়ে। তিনি চুরুট খুঁজছেন। তাঁর সঙ্গে এক বাক্স চুরুট ছিল, কিন্তু মালবাহকরা নৌকোয় তোলার সময় সেটি জলে ফেলে দিয়েছিল, সঙ্গে সঙ্গে তোলা হয়েছে বটে। কিন্তু চুরুটগুলোর অবস্থা যাচ্ছেতাই হয়ে গেছে। এত ছোট জায়গায় তাঁর পছন্দমতন চুরুট পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর তিনি হঠাৎ অস্বস্তি বোধ করলেন। এর মধ্যে তিনি কিছু একটা দেখেছেন। অথচ বিশেষভাবে লক্ষ করেন নি, তবু খচখচ করছে মনের মধ্যে। কী দেখেছেন? সেটা মনে পড়ছে না। এখন রোদ বেশ চড়া। ঘোরাঘুরি না-করে নৌকোর ছইয়ের মধ্যে বসে থাকাই ভালো, শশিভূষণ ঘাট পর্যন্ত গিয়েও থেমে গেলেন। দ্রুত পদে ফিরে এলেন মাছের বাজারে। যেখানে ভিখিরিদের লাইন, তার থেকে একটু দূরে একটা জারুল গাছে ঠেস দিয়ে বসে আছে একটি কিশোর। দেখেই মনে হয় পাগল। কোমরে সামান্য একটা ত্যানা জড়ানো, এ ছাড়া আর কোনও বস্ত্র নেই শরীরে, বুকের পাঁজরা বেরিয়ে গেছে, মুখে ধুলোর পরত, ন্যাড়া মাথা। সে অনবরত মাথা নাড়ছে আর বিড় বিড় করে কী যেন বলছে।
শশিভূষণ একটুক্ষণ তীক্ষ্ণ চোখে তাকে দেখলেন, তারপর উবু হয়ে সামনে বসলেন। পাগলটি মাথা দোলাতে দোলাতে বিকৃত স্বরে বলছে, পাখি, পাখি, পাখি-
শশিভূষণ বিহ্বলভাবে বললেন, ভরত! এক পলকের জন্য থামল, চেখের সম্পূর্ণ জ্যোতি ফুটল না, সে আবার বলতে লাগল, পাখি, পাখি, পাখি সব করে রব, পাখি পাখি
শশিভূষণ এবার তার কাঁধ ধরে ঝাঁকানি দিয়ে বললেন, ভরত! তুই এখানে কী করে এলি?
ভরত তবু শশিভূষণকে চিনতে পারল না, মাখা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলে যেতে পাগল, পাখি, পাখি, পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল।
শশিভূষণ জোর করে পাঁজাকোলো করে তুলে নিলেন তাকে। তারপর ছুটলেন নৌকোর দিকে।