দ্বিতীয় অনুবাক
প্রথম সূক্ত : শত্রুনাশনম্
[ঋষি : চাতন। দেবতা : অগ্নি! ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ, জগতী, গায়ত্রী ]
রক্ষোহণং বাজিনমা জিঘর্মি মিত্রং প্রথিষ্ঠমুপ যামি শর্ম। শিশানো অগ্নিঃ ক্রতুভিঃ সমিদ্ধঃ স নো দিবা সরিষঃ পাতু নক্তম। অয়োদংষ্ট্রো অর্চিষা যাতুধানানুপ স্পৃশ জাতবেদঃ সমিদ্ধঃ। আ জিয়া মূরদেবান্ রভস্ব ক্ৰব্যাদো বৃষ্টাপি ধস্বাস ॥২॥ উভোভয়াবিনুপ ধেহি দংষ্ট্রেী হিংস্রঃ শিশানোহবরং পরং চ। উতান্তরিক্ষে পরি যাহ্যগ্নে জভৈঃ সং ধেহ্যভি যাতুধানান ॥৩॥ অগ্নে ত্বং যাতুনস্য ভিন্ধি হিংসাশনিৰ্হর হন্থেন। প্ৰ পৰ্বাণি জাতবেদঃ শৃণীহি ক্ৰব্যাৎ ক্রবিষ্ণুর্বি চিনোত্বেনম্ ॥৪॥ যত্ৰেদানীং পশ্যসি জাতবেদস্তিষ্ঠমগ্ন উত বা চরন্তম। উতান্তরিক্ষে পতন্তং যাতুধানং তমস্তা বিধ্য শর্বা শিশানঃ ॥৫॥.. যজ্ঞৈরিঃ সন্নমমাননা অগ্নে বাঁচা শল্যা অশনিভিৰ্দিহানঃ। তাভির্বিধ্য হৃদয়ে যাতুনা প্রতীচো বাহুন ভঙুগ্ধ্যোম্ ॥৬৷৷ উতারক্কান্ শৃণুহি জাবেদ উতারেভাণা ঋষ্টিভির্যাতুধানান। অগ্নে পূর্বে নি জহি শোশুচান আমাদঃ ঙ্কিাস্তমদন্ত্বেনীঃ ॥৭॥ ইহ প্র ব্রহি যতমঃ সো অগ্নে যাতুনো য ইদং কৃণোতি। তমা রভম্ব সমিধা যবিষ্ঠ নৃচক্ষসশ্চক্ষুষে রন্ধয়ৈন ॥ ৮ ৷৷ তীক্ষেনাগ্নে চক্ষুষা রক্ষ যজ্ঞং প্রাঞ্চং বসুভ্যঃ প্রণয় প্রচেতঃ। হিংস্রং রক্ষাংস্যভি শোশুচানং মা ত্বা দভ যাতুনা নৃচক্ষঃ ॥৯॥ নৃচক্ষা রক্ষঃ পরি পশ্য বিক্ষু তস্য ত্রীণি প্রতি শূণীহ্যগ্রা। তস্যাগ্নে পৃষ্টীর্যরসা শৃণীহি ত্রেধা মূলং যাতুনস্য বৃশ্চ ॥১০৷
বঙ্গানুবাদ –আমি সূত্রে বর্ণিত ফলের কামনাশালী হয়ে রাক্ষসগণের অপহন্তা বলবান্ অগ্নির উপর সকল দিক হতে ঘৃত (অর্থাৎ আজ্য) সিঞ্চন করছি। আমি অগ্নিকে প্রদীপ্ত করে সুখের নিমিত্ত সেই সখীভূত ও পৃথুতর (বিপুলকায়) অগ্নির শরণ গ্রহণ করছি (বা তার নিকট গমন করছি)। সেই অগ্নি আজ্যের দ্বারা আপন জ্বালাসমূহকে তীক্ষ্ণীকৃত করে যজ্ঞাঙ্গভূতরূপে সমিদ্ধ অর্থাৎ সম্যক দীপ্ত হয়ে উঠুন। সেই হেন রাক্ষসবিনাশক অগ্নি দিবা-রাত্র আমাদের প্রতি হিংসকদের নিকট হতে আমাদের রক্ষা করুন। ১।
হে জাতবেদা অগ্নি! আমাদের আজ্য ইত্যাদির দ্বারা উত্তম প্রকারে প্রবৃদ্ধ হয়ে তুমি লৌহময় দণ্ডশালীরূপে আপন জ্বালামালায় যন্ত্রণাদায়ক রাক্ষসগণকে স্পর্শ করো এবং অভিচারকারীগণকে ভস্ম করে ফেলো। মাংসাশী রক্ষঃ-পিশাচ ইত্যাদিকেও ভক্ষণ করো। ২।
তুমি হননযোগ্য ও রক্ষণযোগ্যকে জ্ঞাতশালী (পরিজ্ঞানবা)। তুমি তীক্ষ্ণজ্বালাযুক্ত ও শক্তিসম্পন্ন। আমাদের অপেক্ষা নিকৃষ্ট ও আমাদের অধিক দ্বেষ্যগণকে তোমার উপর ও নিম্ন দন্তের মধ্যে গ্রহণ করো, অর্থাৎ চর্বণ করে ফেলো এবং আকাশে বিচরণপূর্বক তথায় সঞ্চরমান রাক্ষসগণকেও আপন দন্তে পেষণ করে ফেলো ॥ ৩॥
হে অগ্নি! তুমি রাক্ষসগণের বাহিরের ত্বক (গাত্রচর্ম) ছিন্ন করে ফেলো এবং তোমার হিংসক বজ্র তাপের দ্বারা এদের তেজোহীন (বা বিনাশ) করে দিক। হে জাতধন বা জাতপ্রজ্ঞ অগ্নি! তুমি রাক্ষসবর্গের শরীরগ্রন্থিগুলি প্রকর্ষের সাথে ছিন্ন-ভিন্ন করে দাও। মাংসভক্ষী শৃগাল ইত্যাদি প্রাণীগণ মাংসের অভিলাষে এদের দেহগুলি চারিদিক হতে আকর্ষণ (অর্থাৎ টানাটানি) করতে থাকুক। ৪
হে জাতবেদা অগ্নি! তুমি যেখানে কোনও না কোন উপদ্ৰবী রাক্ষসগণকে উপবিষ্ট বা আকাশে বিচরণ করতে দেখবে, তবে তাদের ঐ স্থানেই পাতিত করে দেবে এবং তীক্ষ্ণ হয়ে হিংসাত্মক জ্বালারূপ শরের দ্বারা বিদ্ধ করে ফেলবে ৫
হে অগ্নি! আমাদের অনুষ্ঠিত যাগকর্মের প্রয়োগের দ্বারা আপন বাণসমূহকে ঋজু করে এবং মন্ত্রের দ্বারা সেগুলিকে তীক্ষ্ণ করে রাক্ষসগণের হৃদয়প্রদেশে বিদ্ধ করো। তারপর তাদের সেই বাহুগুলি, যেগুলি আমাদের বধ করার নিমিত্ত বর্ধিত করে, সেগুলিকে ভগ্ন করে দাও ৬
অধিকন্তু, হে জাতবেদা অগ্নি! তোমার আরব্ধমান স্তুতিকারী আমাদের তুমি পালন করো। শব্দকারী (শব্দং কৃতবতো) রাক্ষসগণকে আপন আয়ুধের দ্বারা নিহত করো। তোমাদের দ্বারা হিংসিত সেই রাক্ষসগণের অপক্ক মাংসকে শুভ্রবর্ণ বা সন্ধ্যাবর্ণ ক্ষিঙ্ক নামক (শকুনি জাতীয়) মাংসভক্ষী পক্ষীবিশেষ ভক্ষণ করুক।৭
হে অগ্নি! যে রাক্ষস আমাদের এই প্রকৃত শান্তিবিষয়ক কর্মে শরীর পীড়ন ইত্যাদি (অত্যাচার) করছে, তাকে বলে দাও, (অর্থাৎ সাবধান করে দাও)। হে পাপীঘাতক যুবতম অগ্নি! তুমি তোমার ভস্ম-করণশালী জ্বালার দ্বারা সেই পাপীকে স্পর্শ করো। হে অগ্নি! সেই পাপীকে আপন কর্মসাক্ষি- রূপ দৃষ্টির দ্বারা বশীভূত (অর্থাৎ দগ্ধীভূত) করো ॥ ৮৷৷
হে অগ্নি! তুমি তোমার আপন বিকরাল নেত্রের দ্বারা আমাদের যজ্ঞকে রক্ষা করো। হে প্রচেতঃ (অর্থাৎ প্রকৃষ্টরূপে চিত্তশালী) অগ্নি! আমাদের এই যজ্ঞকে বসুদেবতাগণের সমীপে শীঘ্র উপনীত করিয়ে দাও। হে নৃচক্ষঃ (অর্থাৎ মনুষ্যগণের দ্রষ্টা) অগ্নি! আমাদের এই যজ্ঞকে রক্ষার কালে তুমি সেই রাক্ষসগণকে হনন করো, তারা যেন দহনকারী তোমাকে নিজেদের বশীভূত করতে (বা তোমাকে হিংসনে) সমর্থ না হয় ॥৯॥
হে অগ্নি! তুমি মনুষ্যগণের দণ্ড এবং অনুগ্রহ যোগ্য কার্যের দ্রষ্টা। তুমি প্রজাপীড়ক রাক্ষসের উপর সর্বতোভাবে অবলোকন করো। তার অঙ্গের উপরের তিনটি অংশ ছিন্ন করে দাও; আপন তেজের দ্বারা তার পঞ্জরগুলি (বক্ষঃপার্শ্বস্থ অস্থিসমূহ) এবং পাদপ্রদেশের তিন পর্বকেও ছেদিত করো ॥১০।
বিনিয়োগঃ –অস্যানুবাকস্য চাতনগণে পাঠাৎ চাতনানাং অপনোদনেন ব্যাখ্যাতং (কৌ. ৪১) ইত্যক্তেষু কর্মসু বিনিয়োগঃ। তানি কর্মানি কথ্যন্তে। রক্ষোগ্রহপিশাচাদিভৈষজ্যার্থং অনেনানুবাকেন ফলীকরণক্ষবৃক্ষনাকলানাং অন্যতমং জুহুয়াৎ। এতেরৈব ধূপয়েদ বা। তথা অনেনানুবাকেন পিশাচাদিগ্রস্তং পুরুষং অনুক্ৰয়াৎ।…তথা ঘৃতকম্বলাখ্যে মহাভিষেকে অভিষেকানন্তরং রক্ষোহণং ইত্যনুবাকং জপেৎ।…ইত্যাদি। (৮কা, ২অ. ১সূ১-১০ঋক্)।
টীকা –এই অনুবাকটির বিনিয়োগগুলি কৌশিক সূত্রে (৪/১) বাখ্যাত হয়েছে। সেই কর্মের প্রসঙ্গেই এখানে কথিত হচ্ছে। রক্ষঃ-গ্রহ-পিশাচ ইত্যাদির দ্বারা গৃহীত পুরুষের ভৈষজ্যার্থে এই অনুবাকের মন্ত্রগুলির দ্বারা ফলীকরণ, তুষ ও বৃক্ষখণ্ডসমুহের যে কোনটির দ্বারা অগ্নিতে আহুতি প্রদান কর্তব্য বা এইগুলির দ্বারা ধূপ প্রজ্বলন করণীয়। পিশাচ ইত্যাদি গ্রস্ত পুরুষকে এই অনুবাকের মন্ত্রগুলি পাঠ করানো বিধেয়। এই অনুবাকের সূক্তমন্ত্রগুলি সমিধ গ্রহণে, যবসক্র দ্বারা বা পলাশপর্ণের পৃষ্ঠভাগের দ্বারা যাগ-করণে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। অযুগ্ম খাদির-কীলক স্থাপনের নিমিত্ত ভূমি নিখননে, অমাবস্যায় বিশেষ আভিচারিক ক্রিয়া-করণে, এবং ঘৃতকম্বলখ্য মহাভিষেকে অভিষেকের পর জপ-করণে এই অনুবাকের মন্ত্রগুলি বিনিযুক্ত হয়ে থাকে।…ইত্যাদি। (৮কা, ২অ. ১সূ১-১০ঋক্)।
মন্ত্রঃ ত্রির্যাধানঃ প্রসিতিং ত এতৃতং যো অগ্নে অনৃতেন হন্তি। তমর্চিষা স্ফুর্জয় জাতবেদঃ সমক্ষমেনং গৃণতে নি যুঙগ্ধি ॥১১। যদগ্নে অদ্য মিথুনা শপাতো যৎ বাচষ্টং জনয়ন্ত রেভাঃ। মনন্যার্মসঃ শরব্যা জায়তে যা তয়া বিধ্য হৃদয়ে যাতুনান্ ॥১২। পরা শৃণীহি তপসা যাতুনা পরাগ্নে রক্ষো হরসা শৃণীহি। পরার্চিষা মূরদেবানছুণীহি পরাসুতৃপঃ শশাশুচতঃ শৃণীহি ॥১৩৷৷ পরাদ্য দেবা বৃজিনং শৃণন্তু প্রত্যগেনং শপথা যন্তু সৃষ্টাঃ। বাঁচাস্তেননং শরব ঋচ্ছন্তু মর্ম বিশ্বস্যৈতু প্রসিতিং যাতুধানঃ ॥১৪ যঃ পৌরুষেয়েন বিষা সমঙক্তে যো অশ্যেন পশুনা যাতুধানঃ। যযা অগ্ন্যায়া ভরতি ক্ষীরমগ্নে তেষাং শীর্ষাণি হরসাপি বৃশ্চ ॥১৫৷৷ বিষং গবাং যাতুনা ভরন্তামা বৃশ্চন্তামদিয়ে দুরেবাঃ। পরৈণা দেবঃ সবিতা দদাতু পরা ভাগমোষধীনাং জয়ন্তাম্ ॥১৬৷৷ সম্বৎসরীণং পয় উস্রিয়ায়াস্তস্য মাশী যাতৃধানো নৃচক্ষঃ। পীযুষমগ্নে যতমস্তিতৃপ্সাৎ তং প্রত্যঞ্চমৰ্টিষা বিধ্য মর্মণি ॥১৭ সনাদগ্নে মৃণসি যাতুধানান্ ন রক্ষাংসি পৃতনাসু জিণ্ড্যঃ। সহমূরাননু দহ ক্ৰব্যাদো মা তে হেত্যা মুক্ষত দৈব্যায়াঃ ॥১৮৷ ত্বং নো অগ্নে অধরাদুদক্তং পশ্চাদুত রক্ষা পুরস্তাৎ। প্রতি ত্যে তে অজরাসন্তপিষ্ঠা অঘশংসং শশাশুচতো দহন্তু ॥১৯৷৷ পশ্চাৎ পুরস্তাদধরাদুতোত্তরাৎ কবিঃ কাব্যেন পরি পাহ্যগ্নে। সখা সখায়মজরো জরিমণে অগ্নে মর্তা অমতত্ত্বং নঃ ॥২০
বঙ্গানুবাদ –হে অগ্নি! তোমার জ্বালামালাসমূহকে যাতুন (অর্থাৎ রাক্ষসগণ) তিনবার প্রাপ্ত হোক। (অর্থাৎ প্রথমে অগ্নিশিখার স্পর্শ, পরে অর্ধদগ্ধ এবং শেষে সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয়ে যাক)। যে রাক্ষস আমার সত্য যজ্ঞকে ছলনা পূর্বক বিনষ্ট করছে, হে জাতপ্রজ্ঞ অগ্নি! তাকে তোমার স্তোত্রকারী আমার দৃষ্টির সম্মুখে আনয়ন পূর্বক তোমার আপন জ্বালামালায় নিগৃহীত করে বিনাশ করো। (নিগৃহ্য বিনাশয়)। ১১।
হে অগ্নি! যে যাতুনের কারণে স্ত্রী-পুরুষ পরস্পর আক্রোশময় হয়ে থাকে, এবং স্তোতা কটুবাণীতে মন্ত্রোচ্চার করতে থাকছে, সেই যাতুধানের উপর আপন জ্বালাযুক্ত ক্রোধিত মনঃস্বরূপ ইমুর দ্বারা আঘাত করো (বা ক্রুদ্ধ মনের জ্বালা হতে জাত ইযুর দ্বারা তার হৃদয়দেশ বিদ্ধ করো)। ১২।
হে অগ্নি! যাতুধান বা রাক্ষসগণকে তোমার তেজের দ্বারা পরাম্বুখ করে বা নিম্নাভিমুখী করে বিনাশ করো। অভিচার কর্মপরায়ণগণকে আপন তেজোময় প্রাণঘাতী দীপ্ত জ্বালাসমূহের দ্বারা বিনাশ করো। অপরের প্রাণ নিয়ে আপন আত্মায় সন্তোষশালী সেই রাক্ষসগণকে দীপ্যমান জ্বালার প্রভাবে বিনাশ করো। ১৩।
অদ্য অগ্নি ইত্যাদি সকল দেবতা সম্মিলিত ভাবে সেই প্রাণনাশক পাপপরায়ণ রাক্ষসকে এমনভাবে প্রহৃত (বা হিংসা) করুন, যেন সে পুনরায় আর না প্রত্যাবর্তন করতে পারে। আমাদের প্রতি প্রয়োগ করা তার শপনগুলি (অর্থাৎ গালিসমূহ) তাকেই প্রাপ্ত হোক। সেই মিথ্যাভাষীর হৃদয়কে দেবতাবর্গের আয়ুধ ছেদিত করুক। (অথবা, সে বিশ্বব্যাপ্ত অগ্নির জ্বালায় দগ্ধীভূত হয়ে যাক)। ১৪।
যে রাক্ষস অশ্বের বা অজ ইত্যাদির মাংসের দ্বারা অথবা মনুষ্যের মাংসের দ্বারা নিজেকে পোষণ, করে; যে রাক্ষস অবধ্যা (অহন্তব্যা) গাভীর দুগ্ধ জোরপূর্বক হরণ করে, সেই সকল প্রকার রাক্ষসের মস্তকগুলিকে, হে অগ্নি! তুমি আপন তেজে অর্থাৎ জ্বালায় ছিন্ন করে ফেলল ৷৷ ১৫৷৷
গো-দুগ্ধের কামনাশালী রাক্ষস গাভীর বিষ প্রাপ্ত হোক। দুর্গমনশীল যাতুন পৃথিবীর উপর উপলব্ধ পদার্থ হতে বিচ্যুত হোক (অর্থাৎ পদনিম্নস্থ ভূমি উপলব্ধি করতে পেরে যেন পতন লাভ করে)। সর্বানুজ্ঞাতা সবিতাদেব যেন তাদের ব্রীহি ইত্যাদির ঔষধিসমূহের ভাগ গ্রহণ করতে অনুজ্ঞা না প্রদান করেন এবং তাদের হিংসক ঘাতকদের হস্তে সমর্পণ করে দিন। ১৬৷৷
হে মনুষ্যের প্রতি দৃষ্টিশালী অগ্নি! গাভীগণের গর্ভাধান ইত্যাদি প্রসব কাল হতে সম্বৎসরব্যাপী পর্যন্ত আমাদের প্রাপ্য গো-দুগ্ধ রাক্ষস যেন পান করতে সমর্থ না হয়। যে রাক্ষস গাভীর অমৃতরূপ বা হবিলক্ষণযুক্ত ঘৃতের দ্বারা নিজেকে তৃপ্ত করতে ইচ্ছা ই করে থাকে, তুমি তোমার জ্বালাসমূহকে তার প্রতিমুখে তাড়িত করে তার মর্ম প্রদেশে বিদ্ধ করো। ১৭ ॥
হে অগ্নি! তুমি রাক্ষসগণকে সদা সংহার (বা মর্দন) করে থেকেছে। কোনও রাক্ষসই তোমাকে কখনও বশীভূত (বা পরাভূত করতে সক্ষম হয়নি। তুমি এই মাংসভক্ষী রাক্ষসগণকে সমূলে বিনাশ (বা ভস্ম) করো। এরা যেন তোমার দিব্যাস্ত্র হতে নিস্তার না প্রাপ্ত হয়। (এই মন্ত্রটি ৫ম কাণ্ডের ২৯ সূক্তের ১১ মন্ত্রেও পাওয়া যায়)। ১৮
হে অগ্নি! তুমি অবধাদেশ হতে পীড়াদায়ক রাক্ষসগণের কবল হতে আমাদের রক্ষা করো। সেইরকম, দক্ষিণ, উত্তর, পশ্চিম ও পূর্ব দিক সমুদায়ে অবস্থানকারী রাক্ষসগণের উৎপীড়ন হতে আমাদের রক্ষা করো। তোমারই অজর, তাপদাহক ও অতিশয় দীপ্ত জ্বালাসমূহ হিংসক যাতুধানগণকে (অর্থাৎ রাক্ষসবর্গকে) নাশ করতে সমর্থ। ১৯।
হে অগ্নি! তুমি কবি অর্থাৎ ক্রান্তপ্রজ্ঞ। সেই হেতু তুমি পশ্চাৎ ইত্যাদি চতুর্দিকে ব্যাপ্ত রাক্ষসগণকে প্রজ্ঞাত হয়ে আমাদের সর্বতো রক্ষা করো। তুমি রক্ষক, তোমার রক্ষণ-সাধনোপায় সমূহেয় দ্বারা আমাদের রক্ষা করো। তুমি আমার সখাভূত হয়ে আমাকে নির্ভয় করো। তুমি জরারহিত; সুতরাং অত্যন্ত জীর্ণ আমাকে রক্ষা করো। হে অগ্নি! তুমি অমর্ত্য (অর্থাৎ অমর); সুতরাং মরণধর্মশীল আমাকে পালন (বা রক্ষা) করো। ২০।
বিনিয়োগঃ— ত্রির্যাতুধানঃ ইতি মন্ত্রস্য রক্ষোহণং ইত্যনেন উক্তো বিনিয়োগঃ। গবাং লোহিতদোহলক্ষণাদ্ভূতশান্তৰ্থ যঃ পৌরুষেয়েণ (১৫-১৮) ইতি চতুঋচেন আজ্যং জুহুয়াৎ। সূত্রিতং হি।…ইত্যাদি। (৮কা, ২অ. ১-১১-২০ঋক্)।
টীকা –উপযুক্ত ১০টি মন্ত্র ১ম সূক্তেরই অন্তর্গত। সুতরাং পূর্বে উল্লিখিত মতোই এগুলির বিনিয়োগ হবে। তবে উপযুক্ত ১৫ হতে ১৮, এই চারটি মন্ত্র গাভীর রক্তদুগ্ধ দোহনের লক্ষণ শান্তির উদ্দেশে সূত্রোক্তপ্রকারে আজাহুতি প্রদানে বিনিয়োগ হয়ে থাকে।…ইত্যাদি। (৮কা, ২অ. ১সূ১১-২০ঋক)।
মন্ত্রঃ তদগ্নে চক্ষুঃ প্রতি ধেহি রেভে শফারুজো যেন পশ্যসি যাতুনা। অথর্ববজ্জ্যোতিষা দৈব্যেন সত্যং ধূর্বমচিতং নন্যাষ। ২১। পরি ত্বগ্নে পুরং বয়ং বিপ্রং সহস্য ধীমহি। ধৃষদ্বর্ণং দিবেদিবে হন্তারং ভঙ্গুরাবতঃ। ২২। বিষেণ ভঙ্গুরাবতঃ প্রতি স্ম রক্ষসো জহি। অগ্নে তিগেন শোচি তপুরগ্রাভিৰ্চিভিঃ। ২৩ বি জ্যোতিষা বৃহতা ভাত্যগ্নিরাবিবিশ্বানি কুণুতে মহিত্বা। প্রাদেবীৰ্মায়াঃ সহতে দুরেবাঃ শিশীতে শৃঙ্গে রক্ষোভ্যো বিনিক্ষে ॥ ২৪ যে তে শৃঙ্গে অজরে জাতবেদস্তিগুহেতী ব্ৰহ্মশংশিতে। তাভ্যাং দুহামভিদাসম্ভং কিমীদিনং প্রত্যঞ্চমচিঁষা জাতবেদো বি নি ৷৷ ২৫৷৷ অগ্নী রক্ষাংসি সেধতি শুক্রশোচিরমঃ। শুচিঃ পাবক ঈড্যঃ ॥ ২৬৷৷
বঙ্গানুবাদ— হে অগ্নি! শব্দকারী রাক্ষসগণকে ভস্ম করো। শধারী (খুর বা নখধারী) পশুরূপ ধারণ করে আমাদের পীড়িত করণশালী রাক্ষসগণের উপর তোমার দৃষ্টি পতিত করো এবং মহর্ষি। P অথবা যে মন্ত্রবলে রাক্ষসগণকে দগ্ধকার্য সমাপন করেছিলেন, তেমনই আপন দিব্য তেজঃপ্রভাবে ঐ নিরন্তর হিংসককারী কাণ্ডাকাণ্ড-জ্ঞানহীন রাক্ষসগণকে ভস্মীভূত করে দাও। ২১।
হে অগ্নি! তুমি কামনাসমূহের সম্পূরক মেধাবী, ধর্ষকবৰ্ণশালী (খৃষদ্বর্ণ), মন্থন বা বল হতে উৎপন্ন হওনশীল (অর্থাৎ অভিভবনশীল) এবং অনেক প্রকারে তৃপ্ত করণশালী। আমরা তোমাকে সর্বতোভাবে ধ্যান করছি। তুমি প্রতিদিন ভঙ্গ-স্বভাবোপেত বলযুক্ত রাক্ষসবর্গকে আপন দর্শনমাত্রের দ্বারা বলহীন করে বিনাশ করণশালী ॥ ২২।
হে অগ্নি! বিষবৎ ভয়ঙ্কর তেজের দ্বারা ভঙ্গশালী রাক্ষসবর্গকে বিনাশ করো এবং জ্বালসমূহের তাপের দ্বারা তাদের ভস্ম করো ॥ ২৩
এই অগ্নি আপন মহান তেজের দ্বারা তেজস্বী হয়ে অবস্থান করছেন। হে অগ্নি! তুমি সেই জ্যোতির দ্বারা সকল ভূত জাতকে (অর্থাৎ প্রাণীকে) স্পষ্টরূপে প্রতিভাত করাচ্ছো। এই অগ্নি আসুরী মায়াকে প্রকর্ষের দ্বারা অভিভব করে থাকেন এবং রাক্ষস্বর্গকে সংহারের নিমিত্ত আপন জ্বালারূপ শৃঙ্গ তীক্ষ্ণ (বা প্রবৃদ্ধ) করে তুলছেন। ২৪।
হে জাতবেদা অগ্নি! তোমার জ্বালারূপ প্রসিদ্ধ ও অবিনশ্বর যে দুটি শৃঙ্গ আমাদের ব্রহ্ম-মন্ত্রের প্রয়োগে তীক্ষ্ণভূত হয়েছে, সেই শৃঙ্গ দুষ্টবর্গকে ক্ষয় করতে সক্ষম। তুমি তার দ্বারা ছিদ্রান্বেষী যাতুধান অর্থাৎ রাক্ষসগণকে সংহার করো ॥ ২৫৷
এই অগ্নি. সকল প্রকার সন্তাপদানশীল রাক্ষসবর্গকে বিনাশ করেন। ইনি অমরণ-ধর্মশীল; এঁর প্রকাশ দীপ্ত হয়ে বিরাজমান থাকে। ইনি শুচি অর্থাৎ শুদ্ধ। ইনি পাবক অর্থাৎ সকলকে শোধন করে থাকেন। ইনি সকলের স্তুতির পাত্র ॥ ২৬৷৷
বিনিয়োগঃ –তদগ্নে চক্ষু ইতি মন্ত্রস্য রক্ষোহণং ইত্যত্ৰোক্তা বিনিয়োগ অনুসন্ধেয়া। অগ্নিরহিত প্রদেশে অগ্নিদর্শনলক্ষণে অদ্ভুতে তচ্ছান্ত্যর্থং অগ্নী রক্ষাংসী ইত্যনয়া আজ্যং জুহুয়াৎ। ….ইত্যাদি। (৮কা, ২অ. ১সূ-২১-২৬ঋ)৷
টীকা –মূল এই ছয়টি মন্ত্রও প্রথম সূক্তের অন্তর্গত। ইতিপূর্বে প্রথমোক্ত ১০টি মন্ত্র এবং দ্বিতীয়োক্ত দশটি মন্ত্রের বিনিয়োগে যা বলা হয়েছে, এখানে তা-ই প্রযোজ্য। তবে উপযুক্ত ছয়টি মন্ত্রের শেষটির অর্থাৎ অগ্নী রক্ষাংসী সেধতি ইত্যাদি মন্ত্রের দ্বারা অগ্নিরহিত প্রদেশে অদ্ভুত অগ্নিদর্শনলক্ষণে তার শান্তির নিমিত্ত আজাহুতি প্রদান করণীয়।…ইত্যাদি। (৮কা, ২অ. ১সূ–২১-২৬ঋক্)।
.
দ্বিতীয় সূক্ত : শত্রুদমনম
[ঋষি : চাতন। দেবতা : ইন্দ্র, সোম ইত্যাদি। ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ]
ইন্দ্রাসোমা তপতং রক্ষ উক্তৃতং ন্যপঁয়তং বৃষণা তমোবৃধঃ। পরা শৃণীতমচিতো নন্যাষতং হতং নুদেথাং নি শিশীমত্ৰিণঃ ॥ ১। ইন্দ্রাসোমা সমঘশংসমভ্যঘং তপুর্যয়স্তু চরুরগ্নিমাঁ ইব। ব্ৰহ্মদ্বিষে ক্ৰবাদে ঘোরচক্ষসে দ্বেষো ধমনব্যয়ং কিমীদিনে ॥ ২॥ ইন্দ্রাসোমা দৃষ্কৃতত বব্রে অন্তরনারম্ভণে তমসি প্র বিধ্যতম। যতো নৈষাং পুনরেকশ্চনোদয়ৎ তদ বামস্তু সহসে মোমচ্ছবঃ ॥ ৩॥ ইন্দ্রাসোমা বর্তয়তং দিবো বধং সং পৃথিব্যা অঘশংসায় তহণম্। উৎ তক্ষতং স্বর্যং পর্বতেভ্যো যেন রক্ষো বাবৃধানঃ নিজুৰ্বৰ্থঃ ॥ ৪৷৷ ইন্দ্রাসোমা বর্তয়তং দিবস্পর্যাগ্নতপ্তেভিযুবমন্মহম্মভিঃ। তপুর্বধেভিরজরেভিরত্রিণে নি পানে বিধ্যতং যন্তু নিস্বরম্ ॥ ৫৷৷ ইন্দ্রাসোমা পরি বাং ভূতু বিশ্বত ইয়ং মতিঃ কক্ষ্যাশ্বেব বাজিনা। যাং বাং হোত্ৰাং পরিহিনোমি মেধয়েমা ব্রহ্মাণি নৃপতী ইব জিম্বত ৷৷ ৬৷ প্রতি স্মরেথাং তুজয়দ্ভিরেবৈতং হো রক্ষসো ভঙ্গুরাবতঃ। ইন্দ্রাসোমা দুষ্কৃতে মা সুগং ভুদ যো মা কদা চিদভিদাসতি দ্রুহুঃ ॥ ৭ যো মা পাকেন মনসা চবন্তমভিচষ্টে অনৃতেভিৰ্বচোভিঃ। আপ ইব কাশিনা সংগৃভীতা অসন্নস্তুাসত ইন্দ্ৰ বক্তা ॥ ৮ যে পাকশংসং বিহরন্ত এবৈর্যে বা ভদ্রং দূষয়ন্তি স্বধাভিঃ। অহয়ে বা তা প্রদদাতু সোম আ বা দধাতু নিঋতেরুপস্থে ৷ ৯৷৷ যো নো রসং দিম্পতি পিয়ো অগ্নে অশ্বানাং গবাং যন্তনা। রিপু স্তেন স্তেয়কৃ দমেতু নি ষ হীয়তাং তন্ন তনা চ। ১০
বঙ্গানুবাদ –হে ইন্দ্র! হে সোম! রাক্ষসগণকে সন্তাপিত করো (দুঃখ প্রদান করো) তাদের বিনাশ করে ফেলো। তোমরা অভীষ্টসমূহের বর্ষণকারী; তমসাবৃত রাত্রে বা মায়ার দ্বারা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত অজ্ঞানী রাক্ষসগণকে তোমরা ভস্মীভূত করে দাও। ভক্ষণশীল রাক্ষসগণকে প্রহার পূর্বক আমাদের দিক হতে অপসারিত করে দাও এবং তাদের পক্ষকে অত্যন্ত নির্বল করে দাও ॥ ১।
হে ইন্দ্র ও সোম দেবদ্বয়! এই পাপী (অনর্থকারী) রাক্ষসকে তিরস্কৃত করো; যেমন অগ্নির তাপে চরু তপ্ত হয়, তেমনই অগ্নির তাপে সংযুক্ত হয়ে এই রাক্ষস চরম পরিণতি প্রাপ্ত হোক। ব্রাহ্মণদ্বেষ্টা, মাংসভক্ষী, ভয়ঙ্করদর্শন, যেথা-সেথা বিচরণকারী রাক্ষসদের মধ্যে পরস্পর দ্বেষ ও শত্রুভাব উৎপন্ন করো৷৷ ২।
হে ইন্দ্র! হে সোম! দুষ্ট কর্মশীল রাক্ষসগণকে আশ্রয়হীন করে বিতাড়িত করো। এই রাক্ষসগণের মধ্যে একজনও যেন অন্ধকার হতে নিষ্ক্রান্ত (বা উখিত) হতে না পারে। এদের তিরস্কার করণের নিমিত্ত তোমাদের বল ক্রোধে পূর্ণ হয়ে যাক ৷ ৩৷৷
হে ইন্দ্র ও সোম দেবদ্বয়। পাপকে বর্ধনশীল রাক্ষসগণের উপর প্রয়োগের নিমিত্ত আকাশ ও ভূলোক হতে হিংসা-সাধন আয়ুধ একত্রিত করো। পর্বত ও মেঘ সমুদায় হতে উদয় হওয়া রাক্ষসগণকে সংহার করার নিমিত্ত আপন বজ্ৰকে তীক্ষ্ণ করো ॥ ৪।
হে ইন্দ্র ও সোম দেবদ্বয়! তোমরা অগ্নির দ্বারা তপ্ত হওয়া লৌহাস্ত্রগুলিকে অন্তরিক্ষের সর্ব দিকে পরিভ্রামিত করো এবং ঐ রাক্ষসগণের বক্ষঃপঞ্জর (পার্শ্বস্থ অস্থি) ভঙ্গ করে দাও, যাতে তারা শব্দহীন হয়ে (কোন আতাঁরব উৎসারিত করতে না পেরেই) পতন লাভ করে। ৫।
হে ইন্দ্র ও সোম দেবদ্বয়! যেমন কক্ষবন্ধনসাধনভূতা রঞ্জু বলবন্ত অশ্বদ্বয়কে একত্রে বন্ধন করে, তেমনই আমাদের স্তুতি তোমাদের দুজনকে গ্রহণ করুন। আমি যে আহ্বানযোগ্য বুদ্ধির দ্বারা তোমাদের উদ্দেশে (স্তুতি) প্রেরণ করছি, তা তোমাদের বন্ধনযুক্ত করুক। যেমন বন্দী জনগণের কৃত স্তুতিসমূহ (প্রশস্তিসম্বলিত গান) রাজন্যবৃন্দকে হর্ষিত করে থাকে, তেমনই এই ব্রহ্মমন্ত্র তোমাদের দুজনকে হর্ষান্বিত করুক ॥ ৬।
হে ইন্দ্র ও সোম দেবদ্বয়! তোমরা গমনসাধন অশ্বগণকে স্মরণ করো, তাদের দ্বারা এই স্থানে আগত হয়ে দ্রোহী ভঙ্গকারী রাক্ষসবর্গকে সংহার করো। অধিকন্তু, হে ইন্দ্র ও সোম! সেই দুষ্কর্ম করণশীল রাক্ষসগণের জীবন দুঃখময় হোক। আমাদের যে দ্রোহশীল শত্রু (রাক্ষস) আমাদের একবারও দুঃখ প্রদান করেছে, তার জীবন সদা দুঃখে পূর্ণ হয়ে থাকুক ॥ ৭
হে ইন্দ্র! যে রাক্ষস ইত্যাদি (শত্রু) পরিপক্ক মনে (জেনেশুনে) যজ্ঞে নিয়োজিত আমাকে মিথ্যা অজুহাতে অভিশাপ শাপ প্রদান করে, সেই দুষ্টের অসৎ বাক্যরূপ অভিশাপ সেই রকমেই বিগলিত (অর্থাৎ ব্যর্থ হয়ে যাক, যেমন মুষ্টিতে গৃহীত জল অঙ্গুলির সন্ধি (ফাঁক) দিয়ে বিগলিত হয়ে যায়। (অর্থাৎ অকৃতের বা অন্যায়ের বক্তা (শাপদানকারী) স্বয়ংই শূন্য বা ব্যর্থ হয়ে যাক)। ৮।
যে রাক্ষসগণ আমা হেন সত্যভাষীকে মিথ্যা নিন্দায় পীড়িত করে থাকে, এবং যারা আমার মঙ্গলকারী কর্মকে বা স্বধাকে অন্নের নিমিত্ত দূষিত করে থাকে, সোমদেবতা সেই পাপীদের সর্পের মুখে নিক্ষেপ বা সমর্পণ করুন অথবা পাপদেবতা নির্ঋতির (অর্থাৎ মৃত্যুর) ক্রোড়ে স্থাপন করুন ॥৯॥
হে অগ্নি! যে রাক্ষস আমাদের শরীরের বা আমাদের অশ্ব, গাভী ইত্যাদি পশু ও আত্মীয় পুত্র ইত্যাদির শরীরের রস (জীবনীশক্তি) হরণ করতে আকাঙ্ক্ষা করে, সেই দুষ্ট শত্রু তস্কর (মোষকর্তা) নিজেরই শরীর হতে তথা পুত্র ইত্যাদির হতে বিযুক্ত হয়ে যাক (হীয়তাং বিযুক্তো ভবতু)। ১০।
বিনিয়োগঃ –ইন্দ্রাসোমা ইতি সূক্তস্য রক্ষোহনং ইত্যনেন (সহ) উক্তা বিনিয়োগ। ….ইত্যাদি। (৮কা, ২৩, ২সু-১-১০ঋ)।
টীকা— এই সূক্তটির বিনিয়োগ এই অনুবাকের প্রথম সূক্তের অনুরূপ ॥ (৮কা, ২অ, ২সূ১-১০ঋ)।
মন্ত্রঃ পরঃ সো অস্তু তন্ন তনা চ তিস্রঃ পৃথিবীরঘো অস্তু বিশ্বাঃ। প্রতি শুষ্যতু যশো অস্য দেবা যো মা দিবা দিম্পতি যশ্চ নক্ত। ১১। সুবিজ্ঞানং চিকিতুষে জনায় সচ্চাস বচসী পম্পৃধাতে। তয়োর্যৎ সত্যং যতরদৃজীয়স্তদিৎ সোমোহবতি হত্যাসৎ ১২৷৷ ন বা উ সোমো বৃজিনং হিনোতি ন ক্ষত্রিয়ং মিথুয়া ধারয়ন্ত। হন্তি রক্ষো হত্যাস বদন্তমুভাবিন্দ্রস্য প্রসিতৌ শয়াতে ॥ ১৩৷ যদি বাহমন্তদেবো অস্মি মোঘং বা দেবাঁ অপূহে অগ্নে। কিমম্মুভ্যং জাতবেদো রূণীষে দ্রোঘবাচস্তে নিঋথং সচন্তাম্ ৷৷ ১৪৷৷ অদ্যা মুরীয় যদি যাতুনো অস্মি যদি বায়ুস্ততপ পূরুষস্য। অধা স বীরৈদর্শভির্বি ঘূয়া যো মা মোঘং যাতুনেত্যাহ৷৷ ১৫৷৷ যো মাষাতুং যাতুনেত্যাহ যো বা রক্ষাঃ শুচিরস্মীত্যাহ। ইন্দ্ৰস্তং হন্তু মহতা বধেন বিশ্বস্য জন্তোরধমম্পদীষ্ট।১৬। প্র যা জিগাতি খৰ্গলেব নক্তমপ দ্রুহুস্তং গৃহমানা। বব্রমনন্তমব সা পদীষ্ট গ্রাবাণো ঘন্তু রক্ষস উপব্দৈঃ ॥১৭ বি তিষ্ঠধ্বং মরুতো বিক্ষীচ্ছত গৃভায়ত রক্ষসঃ সং পিনষ্টন। বয়ো মে ভূত্বা পতয়ন্তি নক্তভির্যে বা রিপো দধিরে দেবে অধ্বরে। ১৮। প্ৰ বৰ্ত্তয় দিবোহশ্মনমিন্দ্র সোমশিতং মঘবন্তসং শিশাধি। প্রাক্তো অপাক্তো অধরাদুদক্তোহভি জহি রক্ষসঃ পর্বতেন। ১৯। এত উত্যে পতয়ন্তি শ্বয়াতব ইন্দ্ৰং দিন্তি দিন্সবোহদাভ্যম। শিশীতে শক্রঃ পিশুনেভ্যো বধং নূনং সৃজদশনিং যাতুমদ্ভ্যঃ ॥ ২০।
বঙ্গানুবাদ –হে দেববর্গ! সেই রাক্ষস ইত্যাদি শত্রুগণ, যারা রাত্রি বা দিনে আমাদের বধ করতে ইচ্ছা পোষণ করছে, তারা আপন শরীর ও পুত্রের শরীর হতে বিযুক্ত হয়ে যাক। তারা তিন পৃথিবীর নীচে স্থিত (অর্থাৎ দিব্য, অন্তরীক্ষ ও ভূমি–এই তিন পৃথিবীর নিম্নে অবস্থিত) নরকে বা তমোলোকে উপনীত হোক। তাদের অন্ন বা কীর্তি বিনাশপ্রাপ্ত হোক। ১১।
এইটি বিদ্বান জন জানেন যে, সৎ ও অসৎ বচন পরস্পর প্রতিদ্বন্দিতা করে থাকে। তাদের মধ্যে সত্যবচনকে রক্ষা সোম করে থাকেন, তথা তিনি অসত্য বচনশালীকে হিংসিত করে থাকেন। এই হতে মিথ্যাভাষী কে, তা উত্তমরূপে জ্ঞাত হয়ে যায়। ১২।
পাপযুক্ত অসুরকে এবং মিথ্যাচারী এবং ক্ষত্রবলসম্পন্ন রাক্ষসগণকে সোমদেবতা অব্যাহতি দেন না। তিনি পাপী অসুরকে হিংসা করে থাকেন। উপরোক্ত দুই প্রকারের দুষ্টজনই ইন্দ্রের বন্ধনসাধন পাশে বদ্ধ হয়ে শায়িত থাকে ॥ ১৩ ৷৷
হে অগ্নিদেব! আমি দেবতাগণ হতে কখনও রহিত (বা বিচ্যুত) হইনি, তাদের ব্যর্থ আহ্বান করিনি, কখনও মিথ্যাচরণে রত হইনি। তথাপি, হে জাতবেদা! কি কারণে আমার প্রতি রুষ্ট হয়েছো? যে রাক্ষসবর্গ দেবতাগণের দ্রোহী, তারা অত্যন্ত নিকৃষ্ট গতি প্রাপ্ত হোক ॥ ১৪
আমি যদি কাউকে সন্তাপ দানশালী হয়ে থাকি, তবে আজই যেন মৃত্যুমুখে পতিত হই। হে মিথ্যা দোষারোপকারী পুরুষ! যদি তুমি নিরপরাধী আমার উপর মিথ্যা (বা ব্যর্থ দোষারোপ করে থাকো, তো তুমি দশ পুত্রের সাথে বিচ্ছেদ প্রাপ্ত হও ॥ ১৫৷৷
যে দুষ্ট রাক্ষস নিজেকে শুদ্ধ রূপে ঘোষণা করে থাকে, অথবা যে দুষ্ট নিজে রাক্ষসিক বৃত্তিশালী হয়েও যথার্থ সদাচরণশীল আমাকে রাক্ষস নামে অভিহিত করে থাকে, সেই উভয়বিধ অসত্যবাদীকে ইন্দ্রদেব আপন বিকরাল হিংসাত্মক বজের দ্বারা বিনষ্ট করুন। সেই দুষ্ট সকল প্রাণী অপেক্ষা নিকৃষ্টরূপে পতিত (বা বিনাশ প্রাপ্ত) হোক। ১৬।
উলুকীর (অর্থাৎ পেচকীর) সমান যে রাক্ষসী রাত্রিকালে আমাদের হননের নিমিত্ত বেগে ধাবিত হয় এবং যে দ্রোহপরায়ণা রাক্ষসী নিজেকে অদৃশ্যরূপে রক্ষা করে আগমন করে, সেই দুষ্টা অথৈ গহ্বরে পতিত হোক। এবং সোম-অভিষবকারী পাষাণগুলির শব্দে দুষ্ট রাক্ষস-রাক্ষসী স্বয়ংই বিনাশ প্রাপ্ত হোক। ১৭।
হে মরুৎ-বর্গ! তোমরা প্রজাগণের মধ্যে অনেক প্রকারে ব্যাপ্ত হয়ে থেকে দুষ্টগণকে হনন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করো। তাদের গ্রহণ পূর্বক সম্যক পেষণ (অর্থাৎ চূর্ণিত) করো। যে রাক্ষসগণ পক্ষীরূপ ধারণ করে রাত্রিকালে সঞ্চরণ করতে থাকে, এবং যারা দেবতার উদ্দেশে অনুষ্ঠিত যজ্ঞকর্মের বাধক হয়ে থাকে, তাদের সকলকে পেষণ করে ফেলো ॥ ১৮৷৷
হে বজি! অন্তরিক্ষ হতে অশনিলক্ষণ বর্জকে সঞ্চালিত করো;, সেটিকে সোমের দ্বারা সম্যক তীক্ষ্ণ করো। তারপর পর্ববৎ (পর্বত সদৃশ) বজ্রের দ্বারা পূর্ব-পশ্চিম-দক্ষিণ-উত্তর ইত্যাদি সকল দিকে। অবস্থানকারী রাক্ষস্বর্গকে নষ্ট করে দাও। ১৯।
কুকুরের সমান ভক্ষণ করণশালী যে রাক্ষসবর্গ অগ্রবর্তী হয়ে অহিংসক ইন্দ্রকে হত্যা করতে ইচ্ছুক হয়ে উঠেছে; এবং ইন্দ্র যে রাক্ষসগণকে বিনাশ করার উদ্দেশে আপন বর্জকে তীক্ষ্ণ করছেন; সেই ইন্দ্র সেই বজ্রের দ্বারা সেই রাক্ষসবর্গকে নিহত করুন। (অথবা তাদের হননের নিমিত্ত বর্জ্য সৃষ্টি করেছেন–বং সৃজতি বা) ॥ ২০।
বিনিয়োগঃ –পরঃ সো অস্ত ইতি মন্ত্রস্য রক্ষোহণং ইত্যনুবাকপ্ৰযুক্তো বিনিয়োগো দ্রষ্টব্যা। (৮কা, ২অ. ২সূ-১১-২০ঋক)।
টীকা –মূল গ্রন্থানুসারে উপযুক্ত ১০টি মন্ত্রও পূর্বোল্লিখিত ২য় সূক্তের অন্তর্গত। সুতরাং এই মন্ত্রগুলির পূর্বোক্ত ১০টি মন্ত্রের সাথে বিনিয়োগ হয় ॥ (৮কা, ২অ. ২সূ১১-২০ঋ)।
মন্ত্রঃ ইন্দ্রো যাতুনামভবৎ পরাশরো হবিথীনামভ্যাহবিবাসতাম। অভীদু শক্রঃ পরশুর্থ বনং পাত্রে ভিসত এতু রক্ষসঃ ॥ ২১। উকয়াতুং শুশুল্কয়াতুং জহি শ্বয়াতুমুত কোকয়াতু। সুপর্ণয়াতুমুত গৃধ্রুয়াতুং দৃষদেব প্র মৃণ রক্ষ ইন্দ্র৷ ২২ মা নো রক্ষো অভি নঙ যাতুমাবদপোচ্ছন্তু মিথুনা যে কিমীদিনঃ। পৃথিবী নঃ পার্থিবাৎ পাত্বংহসোহন্তরিক্ষং দিব্যাৎ পাত্বম্মা৷৷ ২৩ ৷৷ ইন্দ্র জহি মাংসং যাতুধানমুত স্ত্রিয়ং মায়য়া শাশদানা। বিগ্রীবাসো মুরদেবা ঋদন্তু মা তে দৃশসূর্যমুচ্চরন্ত৷ ২৪৷৷ প্রতি চক্ষু বি চন্দ্ৰেশ্চ সোম জাগৃত। রক্ষোভ্যো বধমস্যতমশনিং যাতুমদ্ভ্যঃ ২৫৷৷
বঙ্গানুবাদ –ইন্দ্রদেব সেই হিংসক রাক্ষসগণের প্রতি আপন আয়ুধ (বা শর) প্রক্ষেপণ করুন, যারা দেবতার উদ্দেশে প্রদত্ত পুরোডাশ ইত্যাদি হবিকে বিনাশিত করার নিমিত্ত যজ্ঞাভিমুখে গমন করে থাকে। যেমন বৃক্ষসমূহকে ছেদন করতে কুঠার লাগে যেমন মৃৎপাত্র ভগ্ন করার নিমিত্ত দণ্ড (লকুট) লাগে, তেমনই যাতুনবর্গকে বিনাশ করণের প্রয়োজনে ইন্দ্রের আগমন ঘটুক। ২১।
হে ইন্দ্র! যেমন পাষাণাঘাতে মৃৎপাত্র ভগ্ন হয়ে থাকে, সেইভাবে উলুকাকৃতি রাক্ষসগণকে সপরিবারে অর্থাৎ শিশু উলুকাকৃতি সম্পন্ন রাক্ষসগণকেও ইন্দ্র বিনাশ করুন। সেইরকম যারা কুকুরাকৃতি সম্পন্ন, যারা চক্ৰবাকের আকারধারী, যারা গরুড় মূর্তিধারী, এবং যারা শকুনীর ন্যায় রূপগ্রাহী, সেই সকল রাক্ষসবর্গকে ইন্দ্রদেব হনন করুন ॥ ২২
যাতনা প্রদানশীল রাক্ষসজাতি যেন আমাদের নিকটবর্তী হতে না পারে। কিমীদিন অর্থাৎ কি ইদানীং বা কি এটি বলে যত্রতত্র বিচরণশীল মিথুনভূত (অর্থাৎ স্ত্রী-পুরুষ সমন্বিত) রাক্ষসগণ দূর হয়ে যাক। অন্তরিক্ষদেবতা আমাদের দেব সন্তাপ হতে রক্ষা করুন। এবং পৃথিবী দেবী আমাদের তাঁর-সম্বন্ধীয় রক্ষ-পিশাচ ইত্যাদি কৃত পীড়ন বা পাপ হতে আমাদের রক্ষা করুন ॥ ২৩ ৷৷
হে ইন্দ্র! পুরুষরূপধারী যাতনা দানশীল রাক্ষসগণকে তুমি বিনাশ করো; আরও, মোহে আকর্ষণপূর্বক পাতনকারিণী হিংসিকা রাক্ষসীকে বিনাশ করো। আরও, বিষৌষধির দ্বারা মারণক্রীড়াশালী অর্থাৎ অভিচার কর্মকারী দুষ্টগণের গ্রীবা বিচ্ছিন্ন পূর্বক বিনাশ করো; তারা যেন আর সূর্যোদয় দর্শন করতে না পারে ॥ ২৪
হে সোম! হে ইন্দ্র! তোমরা প্রত্যেক হিংসক রাক্ষসদের প্রতি দৃষ্টিপাত করো। আমাদের রক্ষার নিমিত্ত তোমরা জাগরিত (বা চৈতন্যসম্পন্ন) থাকো; অধিকন্তু, ঐ হিংসক রাক্ষসগণের উপর হননসাধন বায়ুধ ক্ষেপণ করো ॥ ২৫
বিনিয়োগঃ –ইন্দ্রো যাতুনাং ইতি মন্ত্রস্য রক্ষোহণং ইত্যনুবাকেন উক্তো বিনিয়োগঃ। (৮কা, ২অ. ২সূ-২১-২৫ঋ)। টীকা–মূল গ্রন্থ অনুসারে এই ২য় অনুবাকের ২য় সূক্তের মোট ঋংখ্যা ২৫; সুতরাং উপযুক্ত পাঁচটি মন্ত্র তারই অন্তর্গত এবং এগুলির বিনিয়োগ একই সঙ্গে হওয়া বিধেয় ॥ (৮কা, ২অ, ২সূ–২১-২৫ঋক)।