০৭. শুভ্ৰ যে ঘরে বসে আছে

শুভ্ৰ যে ঘরে বসে আছে সেটা বেশ বড়। মোটামুটিভাবে পরিচ্ছন্ন। শুভ্ৰ আসবে এই জন্যেই কি ঘর পরিষ্কার করা হয়েছে? কার্পেটের ধূলা ঝাড়া হয়েছে? তিনটা গদি আটা চেয়ার। চেয়ারে গাদির ভেলভেটের লাল রং চটে গিয়েছে। তাতে অসুবিধা হচ্ছে না, কারণ সাদা কাপড়ের কভার লাগানো হয়েছে। কভারগুলি ধুয়ে ইস্ত্রি করা। পরিষ্কার-পরিষ্কার গন্ধ বের হচ্ছে।

শুভ্র বসেছে মাঝখানের চেয়ারে। ম্যানেজার সাহেব সঙ্গে এসেছেন। তিনি ইচ্ছা করলেই শুভ্রর পাশের কোনো একটা চেয়ারে বসতে পারতেন। তিনি তা করেন নি— শুভ্রর বা পাশে ডিভানে বসেছেন। সেই ডিভানেও সাদা কাপড়ের চান্দর। এই চাঁদরও ধুয়ে ইস্ত্রি করা। মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে। ফ্যানে বাতাসের চেয়ে শব্দ হচ্ছে বেশি। পুরনো কালো রঙের একটা ওয়ারডোব দেয়ালের সঙ্গে লাগানো। ওয়ারডোবের ওপর বড় ক্যাসেট প্লেয়ার। ক্যাসেট প্লেয়ারটা নতুন। দুটা সাউন্ড বক্স ওয়ারডোবের দুপাশে মেঝেতে নামানো। ক্যাসেট প্লেয়ারের ওপর গাদা করে রাখা ক্যাসেট।

শুভ্রর ডান পাশে বেতের বড় ইজিচেয়ার। ইজিচেয়ারে একটা বালিশ এবং কোলবালিশ। দুটাতেই সাদা ওয়ার। ইজিচেয়ারটা দেখে শুভ্রর খানিকটা অস্বস্তি লাগছে। ঠিক এ রকম একটা ইজিচেয়ার তাদের বাড়িতে আছে। বারান্দায় থাকে। মোতাহার সাহেব এই চেয়ারে অনেক সময় কাটিয়েছেন। তবে সেই চেয়ারে বালিশ বা কোলবালিশ কোনোটাই নেই। এ ব্লকম একটা চেয়ার শুভ্ৰ তার বাবার অফিসেও দেখেছে। সেখানে বালিশ আছে কি-না শুভ্ৰ মনে করতে পারছে না।

শুভ্রর বাবা কি এই বাড়িতে প্রায়ই আসতেন? এই বড় ঘরটা কি বিশেষভাবেই তার জন্যে সাজানো? ম্যানেজার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলে জানা যাবে। এই মুহূর্তে তাঁকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করছে না। মঞ্জুকে জিজ্ঞেস করলেও জানা যাবে। মোতাহার সাহেবের খাস বেয়ারা মঞ্জু শুভ্ৰর সঙ্গে এসেছে। সে ভেতরে ঢুকে নি, বারান্দায় মোড়ায় বসে আছে। এবং একটু পরপরই মাথা ঘুরিয়ে শুভ্রকে দেখার চেষ্টা করছে। মঞ্জুর ভাবভঙ্গি দেখে শুভ্রর মনে হচ্ছে তার বাবা যতবার এই বাড়িতে এসেছেন, মঞ্জুও ততবার এসেছে। তবে কখনো ঘরে ঢুকে নি। মঞ্জুকে ঘরের বাইরে মোড়াতে বসেই সময় কাটাতে হয়েছে।

শুভ্র ঘরের দৃশ্য দেখায় মন দিল। দেয়ালে তিনটা ছবি আছে। তিনটা ছবিই রঙ পেন্সিলে আঁকা। ছবির নিচে শিল্পীর নামের আদ্যক্ষর ইংরেজিতে লেখা— A, চার বছর আগের তারিখ দেয়া। শিল্পীর পছন্দের বিষয়বস্তু মনে হয়। সূর্যস্ত। নদীতে সূর্যস্ত হচ্ছে। পাখি উড়ে যাচ্ছে। মেঘের ওপর সূর্যের লাল আলো পড়েছে। ছবিগুলি কাচা তারপরেও দেখতে ভাল লাগছে। ঘরে মোট তিনটা দরজা। একটা বাইরে থেকে ঘরে ঢোকার জন্যে। আর দুটা দরজা অন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্যে। তিনটা দরুজাতেই লাল ভেলভেটের পর্দা। মনে হচ্ছে লাল ভেলভোটের পর্দা এদের খুব পছন্দ। ঘরের দেয়াল ঝকঝকি করছে। খুব সম্ভব অল্প কিছুদিন হল প্লাষ্টিক পেইন্ট করা হয়েছে। রঙের গন্ধ ঘরের ভেতর আটকা পড়ে আছে, এখনো যায় নি। শুভ্রর ঠিক মুখোমুখি একটা দেয়াল ঘড়ি আছে। পেন্ডুলাম ঘড়ি— তবে ঘড়ির ঘণ্টা নষ্ট। কিছুক্ষণ আগে এগারোটা বেজেছে। কিন্তু কোনো ঘণ্টা বাজে নি। দেয়াল ঘড়ির পেন্ডুলাম বাক্সে লেখা–Swing Burn Company Calcutta. ঘরে কোনো ফুলদানী দেখা গেল না। তাঁর কেন জানি মনে হচ্ছিল। ফুল ভর্তি ফুলদানী দেখবে। হলুদ রঙের বড় বড় ফুল। সূর্যমুখী ফুল। এত ফুল থাকতে সূৰ্যমুখী ফুলের কথা তার মনে হচ্ছে কেন তাও পরিষ্কার হচ্ছে না।

কোনো গ্রান্ডমাস্টারের আঁকা ব্রথেল হাউসের ছবির ক্লিপ্রিন্ট-এ কি সে সূৰ্যমুখী ফুলের ছবি দেখেছে। শুভ্ৰ মনে করতে পারল না। সূর্যমুখী ফুলের ছবি সবচে বেশি কে এঁকেছেন? গাগিনী। কান কেটে প্রেমিককে তিনিই কি পাঠিয়েছিলেন?

শুভ্রর নিজের কাছে খুব অদ্ভুত লাগছে। আজ রবিবার, সময় সকাল এগারোটা। সে তার ম্যানেজার এবং অফিসের খাস বেয়ারা নিয়ে এসেছে তার মৃত বাবার একটি বিশেষ ধরনের ব্যবসার খোঁজখবর করতে। পুরো ব্যাপারটায় এক ধরনের সূক্ষ্ম হিউমার আছে। হিউমারটা ঠিক কোথায় শুভ্র ধরতে পারছে না। শুধু বুঝতে পারছে তার কেন জানি হাসি পাচ্ছে। মানুষ পৈতৃক সূত্রে অনেক কিছু পায়। কেউ পায় বৈভব, কেউ দেন, কেউ সম্মান, কেউ বা অসম্মান। সে পৈতৃক সূত্রে ছোটখাট একটা ব্রোথেল পেয়েছে। একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। চোরাকারবারির মত কোনো বেআইনি ব্যবসা না। খুবই আইনসম্মত ব্যবসা। এর জন্যে যথারীতি ট্যাক্স দেয়া হয়। এই বাড়িতে একটা লিকার হাউস আছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স পাওয়া লিকার হাউস! ক্যাশিয়ার সাহেবের কাছে শুভ্ৰ শুনেছেএই ব্যবসাটাই সবচে লাভের এবং ঝামেলা সবচে কম। লিকার শপটাও শুভ্ৰর দেখার শখ ছিল। অফিস থেকে বলা হয়েছে, লিকার শপ দেখার কিছু নাই। ছোটখাট গুদামের মত। দুজন কর্মচারী লিকার শপ চালায়। যার দরকার বোতল কিনে নিয়ে যায়; বাকিতে কোনো বিক্রি হয় না। দোকান খুলে সন্ধ্যার পর, চালু থাকে। সারা রাত। ফজরের আজানের সঙ্গে সঙ্গে দোকান বন্ধ হয়ে যায়। শুভ্র অবাক হয়ে বলেছে- দোকান যারা চালায় তারা ঘুমায় না?

ম্যানেজার সাহেব বলেছেন, দিনে ঘুমায়।

খারাপ লাগে না?

খারাপ লাগবে কেন? অভ্যাস হয়ে গেছে।

লিকার শপ যে চালায় তার নাম কী?

তার নাম সগীর মিয়া। সে আসবে। তাকে বলেছি। এইখানে আপনার সঙ্গে দেখা করতে।

এখনতো দিন, সগীর মিয়া নিশ্চয়ই ঘুমাচ্ছে।

জ্বি ঘুমাচ্ছে।

এই বাড়ির মেয়েগুলিও নিশ্চয়ই ঘুমাচ্ছে।

না তারা ঘুমায় নাই। আপনি আজ আসবেন সবাই জানে।

শুভ্ৰ তাকিয়ে আছে দেয়াল ঘড়ির পেন্ডুলামের দিকে। পোণ্ডুলাম দুলছে। পোণ্ডুলামের টাইম পিরিয়ড T ইজ ইকুয়েলস টু…

আচ্ছা সে এইসব ভাবছে কেন? তার চিন্তা স্থির হচ্ছে না। দ্রুত সরে সরে যাচ্ছে। ব্রোথেলি হাউসের কোনো ঘড়ি দেখে যদি মনে হয়। টাইম পিরিয়ড T ইকুয়েলস টু তাহলেতো মুশকিল। আচ্ছা মস্ত বড় একটা পেণ্ডুলাম তৈরি করলে কেমন হয়? পোণ্ডুলামের কেন্দ্ৰবিন্দু থাকবে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্ৰবিন্দুতে। পেন্ডুলামের দৈর্ঘ্য ধরা যাক দশ আলোকবর্ষ। পেণ্ডুলামের দোলনপথ যদি দশ আলোকবর্ষ হয় তাহলে টাইম পিরিয়ড T কত হবে? এই দোলকের দোলনকালের ওপর দর্শকের কোনো ভূমিকা কি থাকবে না? দর্শক যদি পেণ্ডুলামের ওপর বসে। থাকে তাহলে কী হবে? শুভ্রর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। মাথার ভেতরের চিন্তাগুলি জট পাকিয়ে যাচ্ছে।

তোমার চারদিকে আমি অসংখ্য ছোট ছোট ধাঁধা তৈরি করে রেখেছি। এইসব ধাধা। যদি তোমার চোখে পড়ে তাহলে সমাধান করতে শুরু করা। তখন তোমাকে জটিল ধাঁধা দেয়া হবে? তোমার যদি ভাগ্য ভাল হয় তাহলে তোমাকে এমন ধাধা দেব যার সমাধান আমি নিজেও করি নি।

দ্য ব্লাইন্ড কসমস নামের এক উপন্যাসের প্রধান চরিত্র কথাগুলি বলছে। প্রধান চরিত্র মানুষ না, সে একটি কম্পুটার। আচ্ছা হঠাৎ করে ব্লাইন্ড কসমস:- এর নায়কের কথা মনে হল কেন? সে কি নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্যে এসব ভাবছে?

ভেলভেটর পর্দা সরিয়ে একজন মহিলা ঢুকছেন। তাঁর বয়স পঁচিশ থেকে ত্ৰিশের ভেতর। গোলগাল মুখ। মাথা ভর্তি চুল। চুল কালো না, লালচে ভাব আছে। স্বাস্থ্য ভাল। তিনি তেমন কোনো সাজসজ্জা করেন নি, তবে চোখে গাঢ় করে কাজল দিয়েছেন। মহিলা সাধারণ বাঙালি মেয়েদের চেয়ে লম্বা। গায়ের রঙ গোলাপি না হলেও গোলাপির কাছাকাছি। শুভ্র কী করবে? উঠে দাঁড়াবে? উঠে দাঁড়িয়ে মেয়েদের প্রতি সম্মান দেখানো একটি প্রাচীন নিয়ম। এই সন্মান শুধু মেয়ে বলেই কাউকে দেখানো হচ্ছে না।– মেয়ের ভেতরে একজন মা বাস করছেন, তাকে দেখানো হচ্ছে। সম্মান দেখানোর এই নিয়মটা সুন্দর এবং শোভন। শুভ্ৰ উঠে দাঁড়াল। ম্যানেজার সাহেব অবাক হয়ে শুভ্রর দিকে তাকালেন। তাঁর উঠে দাঁড়ানো হয়ত ঠিক হয় নি। মহিলাও মনে হয় লজ্জা পেয়ে গেছেন। কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। ম্যানেজার সাহেব ধমকের গলায় বললেন, তোমার মা কোথায়?

মার শরীর খুব খারাপ। একশ তিন জ্বর।

ম্যানেজার বিরক্ত মুখে বললেন, যখনি আসি শুনি জ্বর। আজ ছোট সাহেবকে নিয়ে এসেছি। উনার কিছু জরুরি কথা ছিল। আসতে বল।

শুভ্ৰ বলল, না না আমার কোনো জরুরি কথা নেই। আমি শুধুইনাদের দেখতে চেয়েছিলাম। এর বেশি কিছু না।

মহিলা বসতে বসতে বললেন, সবাইরে ডাক দিব। দেখবেন?

না দরকার নেই। ম্যানেজার শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনার কী সব প্রশ্ন ছিল। আপনি জিজ্ঞেস করেন। এই মেয়ের নাম আসমানী।

আসমানী বসেছে মেঝের কার্পেটে। তার মনে হয়। কার্পেটে বসে অভ্যাস আছে। সে সুন্দর করে বসেছে এবং খুবই কৌতূহলী চোখে শুভ্ৰকে দেখছে। শুভ্র অনেক কিছু বলবে বলে ভেবে এসেছিল, এখন কোনো কিছুই মনে আসছে না। বরং মেয়েটির কৌতূহলী চোখের সামনে নিজেকে খুবই অসহায় লাগছে। মেয়েটা এমন ভাবে তার দিকে তাকিয়ে না থাকলে হয়ত তার ভাল লাগত। শুভ্র নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। তারপর মনে হল এই কাজটাও ঠিক হয় নি। সে মেয়েটার সঙ্গে কথা বলবে। আর তাকিয়ে থাকবে। Swing Born company-র ঘড়ির দিকে। এটা কেমন কথা? মেয়েটা কানে সাদা পাথরের দুল। পরেছে! দুলগুলি সুন্দর। ঝকঝাক। করছে। শুভ্র বলল, আপনি ভাল আছেন?

আসমানী হোসে ফেলে বলল, ভাল আছি।

ম্যানেজার সিগারেট ধরাতে ধরাতে বিরক্ত মুখে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বললেন, এদেরকে আপনি করে বলার দরকার নাই।

আসমানী এবার শব্দ করে হোসে ফেলল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই হাসি থামিয়ে শুভ্ৰকে বলল, আপনের ময়না পাখিটা কি বেঁচে আছে?

শুভ্ৰ বিস্মিত হয়ে বলল, ময়না পাখির খবর আপনি জানেন কীভাবে?

আসমানী বলল, পাখিটা আমার মা আমার জন্যে কলমাকান্দা থেকে আনছিল। বড় সাহেবের পাখিটা দেখে খুব পছন্দ হল। তিনি নিয়ে গেলেন। কাজটা ঠিক হয় নাই। একজনের পছন্দের জিনিস আরেকজনরে দিতে নাই। বড় সাহেব যখন দোজখে যাবেন তখন এই ময়না পক্ষী ঠোকর দিয়া তার চোখ গেলে দিবে। হি হি হি।

শুভ্র আসমানীর হাসি সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বলল, বাবা কি প্রায়ই এখানে আসতেন?

মাঝে মধ্যে আসতেন।

বাবা মানুষ কেমন ছিলেন?

আসমানী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সহজ গলায় বলল, একেকজন মানুষ একেকজনের কাছে একেক রকম। আপনের বাবা আপনের কাছে এক রকম, আপনের মার কাছে আরেক রকম আবার আমার কাছে অন্য আরেক রকম।

শুভ্ৰ মেয়েটির কথায় সামান্য ধাঁধার মধ্যে পড়ে গেল। সে বেশ গুছিয়ে কথা বলছে। কথা বলার মধ্যে সামান্য গ্ৰাম্য টান আছে, তবে অস্পষ্টতা নেই।

শুভ্র বলল, আপনি পড়াশোনা কতদূর করেছেন?

সামান্য।

সামান্যটা কতটুক?

বাংলা বই পড়তে পারি। স্কুল কলেজে কোনোদিন যাই নাই।

আপনে কি গান জানেন?

না, আমি গান জানি না।

আসমানী আবারো শব্দ করে হাসতে গিয়েও হাসল না। হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বলল, আপনে যে কথা বলেছেন, বড় সাহেবও যেদিন আমাকে প্রথম দেখলেন এই কথা বললেন। বললেন, আসমানী তুমি গান জান? আমি যখন বললাম, না— তখন তিনি মনে দুঃখ পেলেন।

দুঃখ পেলেন বুঝলেন কী করে?

দেখে বুঝলাম। কেউ দুঃখ পেলে বোঝা যায়।

সব সময় বোঝা যায় না। আমি আপনাকে দেখে খুবই দুঃখ পাচ্ছি। কিন্তু আপনি বুঝতে পারছেন না।

আসমানী কিছু বলল না। তাকিয়ে রইল।

শুভ্র বলল, বাবা কি আপনাকে খুব পছন্দ করতেন?

জানি না। কোনোদিন জিজ্ঞাস করি নাই। তবে আমার বুক তাঁর খুব পছন্দ ছিল। আপনেরও পছন্দ হবে। ব্লাউজ খুলব? বুক দেখবেন?

ম্যানেজার ছালেহ উদ্দিন ক্ষিপ্ত গলায় বললেন, আসমানী খবরদার। তোমার বেয়াদবী অনেক সহ্য করেছি। আর না।

আসমানী মিষ্টি করে হাসল। ম্যানেজারের কথায় সে ভয় পেয়েছে বলে মনে হল না। শুভ্ৰ বলল, বাবা মারা গেছেন এই খবর শুনে কি আপনার মন খারাপ হয়েছিল?

না হয় নাই। আমার দুঃখ কষ্ট কম।

শুধু আপনারই দুঃখ কষ্ট কম না-কি আপনার মত যারা এখানে থাকেন তাদের সবারই দুঃখ কষ্ট কম?

সবারই কম। তবে আমার একটু বেশি কম।

ম্যানেজার শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি আসল কথা যা বলতে এসেছ বলে শেষ কর। চল যাই। এইখানকার মেয়েরা সব দুষ্ট প্রকৃতির। আসল কথাটা বল।

আসমানী বলল, আসল কথাটা কী?

শুভ্ৰ বলল, আসল কথাটা হচ্ছে আমি এসেছি আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্যে। আমি কোনোদিন কল্পনাও করিনি যে এমন কিছুর সঙ্গে আমরা যুক্ত।

আপনে আর যুক্ত থাকবেন না?

না।

আমরা যাব কোথায়? আমাদের যাবার কোনো জায়গা নাই। আমাদের দেশের বাড়ি বলে কিছু নাই। বাড়ি ঘর বলে কিছু নাই। এইটাই আমাদের ঠিকানা।

আমি আপনাদের সবার জন্যে ব্যবস্থা করে দেব। বলতে পারেন ক্ষতিপূরণ।

কী দিয়া ক্ষতিপুরণ করবেন? টাকা দিয়া?

যেভাবেই হোক আমি ক্ষতি পূরণ করব।

আচ্ছা ভাল। আর কিছু বলবেন?

শুভ্র বলল, দেয়ালের এই ছবি তিনটা কি আপনার আঁকা?

আসমানী বলল, না। পুরুষ মানুষের সঙ্গে শোয়া ছাড়া আমার অন্য কোনো গুণ নাই। আমি আপনের বাবার সঙ্গে বিছানায় গেছি- আপনে চাইলে আপনার সঙ্গে যাব।

আসমানী তীক্ষ্ণ এবং তীব্র দৃষ্টিতে শুভর দিকে তাকিয়ে আছে। সেই দৃষ্টিতে ঘৃণা ছাড়া আর কিছু নেই। শুভ্র এই ঘৃণার কারণ ধরতে পারল না। ম্যানেজার শুভ্ৰর দিকে তাকিয়ে বললেন, চলতো উঠি। যথেষ্ট হয়েছে। তোমাকে এখানে আনা ভুল হয়েছে। বিরাট ভুল।

শুভ্ৰ উঠে দাঁড়াল। সে সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে অস্বস্তি বোধ করছে। তার বারবারই মনে হচ্ছে কী একটা জরুরি কথা জিজ্ঞেস করার ছিল। জিজ্ঞেস করা হয় নি। কথাটা এখন মনে পড়ছে না, পাৱে মনে পড়বে; তখন খুব কষ্ট লাগবে। এইসব ক্ষেত্রে প্রশ্নটা সাধারণত খুবই তুচ্ছ ধরনের হয়। তুচ্ছ প্রশ্ন বলেই মস্তিষ্ক প্রশ্নটা উপস্থিত সময়ে ভুলে যায়, পরে মনে করে। তখন তুচ্ছ প্রশ্ন আর তুচ্ছ থাকে না। ভারী একটা প্রশ্ন হয়ে মাথায় চাপ ফেলতে থাকে।

 

রাস্তার পাশেই গাড়ি দাঁড়ানো। সরু রাস্তা, ছোট্ট গাড়িতেই রাস্তা আটকে গেছে। রিকশাওয়ালা গালি দিতে দিতে অনেক কস্টে গাড়ির পাশ দিয়ে রিকশা পার করছে। শুভ্র ম্যানেজারকে বলল, গাড়িকে চলে যেতে বলুন, আমি হেঁটে যাব।

ম্যানেজার বলল, হাঁটার দরকার কী?

দরকার নেই। তবু হাঁটব। এমন কিছু দূরতো না। দেখতে দেখতে যাই।

ছালেহ উদ্দিন বললেন, এইসব জায়গায় দেখার কিছু নাই। নোংরা, ময়লা। ডাস্টবিন পরিষ্কার করার জন্যে মিউনিসিপালটির গাড়ি পর্যন্ত আসে না। নরকের রাস্তাঘাট এরকমই থাকে।

মঞ্জু গাড়ির দিকে ছুটে গেল। ড্রাইভারকে হাতের ইশারায় চলে যেতে বলে আবারো ছুটে ছোট সাহেবের কাছে চলে এল; মঞ্জু গত এক সপ্তাহ ধরে ছোট সাহেবকে ছায়ার মত অনুসরণ করছে। সম্ভবত তাকে কিছু বলা হয়েছে। মঞ্জু এখন আর অফিসে ঘুমায় না। ছোট সাহেবের বাড়ির বারান্দায় শুয়ে থাকে। সে রাতে ঘুমায় না বলেও মনে হয়। রাতে শুভ্ৰ যতবার দরজা খুলে বাইরে আসে ততবারই মঞ্জু বিছানায় উঠে বসে শুভ্রর দিকে তাকায়। শুভ্ৰ আবার ঘরে ঢুকলে মঞ্জু শুয়ে পড়ে।

রাস্তার লোকজন শুভ্ৰর দলটার দিকে তাকাচ্ছে। তাদের চোখে কৌতূহল। কৌতূহলের সঙ্গে চাপা কৌতুক। রাস্তার পাশের পান-সিগারেটের ছোট ছোট দোকানগুলির মালিকরা কি শুভ্রকে চিনে? তারা প্ৰত্যেকেই শুভ্রকে সালাম দিল। দোকানিদের আরেকটা ব্যাপারও শুভ্ৰকে বিস্মিত করল। তাদের সবার মাথায় টুপি। সবার চেহারাতেই ধাৰ্মিক ভাব। কারো কারো চোখে সুরমা।

ছালেহ উদ্দিন শুভ্রর পাশে পাশে হাঁটছেন। তার হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। সিগারেটের ধোঁয়ায় শুভ্রর কষ্ট হচ্ছে; শুভ্ৰ আগে তাঁকে কখনো সিগারেট খেতে দেখে নি। বাবার মৃত্যুর দিন দেখেছে আর আজ দেখছে। আজ তাঁকে মনে হচ্ছে চেইন স্মোকার। সে একটার পর একটা সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে। মুখের সামনে ধোঁয়া না থাকলে লোকটার মনে হয় ভাল লাগে না। ধোয়ার ভেতর দিয়ে কথা বলতেই তার বোধহয় ভাল লাগে।

ছোট সাহেব।

জ্বি।

শুনেছেন বোধহয় সাপ মাঝে মাঝে ব্যাঙ গিলে খুব অসুবিধায় পড়ে। না পারে ব্যাঙটাকে পুরোপুরি গিলতে, না পারে পুরোপুরি উগরে ফেলতে।

হ্যাঁ শুনেছি।

আমাদের হয়েছে সাপে ব্যাঙ গেলার অবস্থা। আমরা ব্যাঙ গিলতেও পারব না, উগরাতেও পারব না। আমাদের পক্ষে হাজার চেষ্টা করেও এই ব্যবসা থেকে বের হওয়া সম্ভব না।

আপনি এক সময় বলেছেন সম্ভব। চব্বিশ ঘণ্টার ভেতর সম্ভব। আপনার হাতে পার্টি আছে। তাদেরকে ব্যবসা বিক্রি করে দেবেন।

আপনাকে সান্ত্বনা দেবার জন্যে বলেছিলাম। আসলে সম্ভব না। আমাদের ব্যাঙ গিলে ফেলেছি। ছোটখাট ব্যাঙ না, বিরাট গঁতা ব্যাঙ।

এরকম অবস্থা যখন হয় তখন সাপটায় কী হয়? সাপটা কি ব্যাঙ মুখে নিয়ে মারা যায়?

ছালেহ উদ্দিন কিছু বললেন না। তাকিয়ে রইলেন। তার ভুরু কুঁচকে আছে। তাকে খুবই চিন্তিত মনে হচ্ছে। সেই তুলনায় শুভ্রকে হাসি খুশি দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে সে তার দল নিয়ে বেড়াতে বের হয়েছে।

ম্যানেজার সাহেব।

জ্বি।

চা খেতে ইচ্ছা করছে। ঐ যে দোকানটায় চা বানাচ্ছে, লোকজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে- ওদের খাওয়া দেখে মনে হচ্ছে চা-টা ভাল। চলুন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা খাই।

শুভ্রর ধারণা হয়েছিল ম্যানেজার আপত্তি করবে। তা করল না। শুভ্রর মনে হল— ম্যানেজার ভদ্রলোকের বুদ্ধি আছে। একজন বুদ্ধিমান ম্যানেজার মালিকের প্রতিটি ইচ্ছা পালন করবে। শুধু বিশেষ বিশেষ ইচ্ছার ক্ষেত্রে বলবে— না। সেই না বলা হবে শক্ত গলায়। সেই না কখনো হ্যাঁ হবে না।

ম্যানেজার সাহেব।

জ্বি।

আপনার ধারণা বাবার এই ব্যবসা থেকে আমরা মুক্তি পাব না?

পাব না কেন, অবশ্যই পাব। তবে সময় লাগবে।

কত সময় লাগবে?

এখনো বুঝতে পারছি না।

এটা কি বুঝতে পারছেন যে আমি এই ব্যবসা থেকে মুক্তি চাই।

বুঝতে পারছি।

একটা কাজ করতে পারবেন?

কী কাজ বলুন দেখি পারি কি-না।

যে কটি মেয়ে ঐ বাড়িতে থাকে তাদের সবার নাম, বয়স, কে কোথেকে এখানে এসেছে, তাদের পড়াশোনা, তাদের শখ, তাদের স্বপ্ন এইসব খুব গুছিয়ে লিখে আমাকে দিতে পারবেন?

তার দরকার কী?

দারকার আছে।

আচ্ছা আমি দেব।

কবে দেবেন?

খুব শিগগীরই দেব। তুমি কি চা খেয়ে অফিসে আসবে? অফিসের কাগজপত্র তোমাকে বুঝে নিতে হবে।

আজ থাক। আরেক দিন যাব।

আচ্ছা থাক।

আপনাকে আরেকটা কাজ করতে হবে।

বল কী কাজ।

ময়না পাখিটা আসমানীকে পৌঁছে দেবেন।

আচ্ছা।

চায়ের দোকানি শুভ্ৰকে দেখে খুবই অবাক হল। চা বানানো বন্ধ করে সে ছুটে গিয়ে কোথেকে যেন একটা টুল নিয়ে এল। শুভ্র বলল, আপনি কি আমাকে চেনেন?

দোকানদার হাসি মুখে বলল, জ্বি চিনি।

আমার নাম জানেন?

জ্বি না। নাম জানি না।

আমার নাম শুভ্ৰ। আপনার নাম কী?

আমার নাম কেরামত আলি।

আপনি আমার নাম জানেন না, অথচ আমাকে চেনেন। এটা কীভাবে হল?

আপনার পিতাকে চিনতাম। সেইভাবে আপনারে চিনি।

আমার বাবা কি আপনার দোকানো কখনো চা খেয়েছেন?

জ্বি না।

আপনার সঙ্গে তার কি কখনো কোনো কথা হয়েছে?

জ্বি না।

তারপরেও আপনি তাকে চেনেন? আমার বাবা তাহলে একজন বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন?

জ্বি অবশ্যই।

একজন বিখ্যাত মানুষের পুত্র আপনার দোকানে এসে চা খাচ্ছে। আপনার সঙ্গে গল্প করছে। আপনার ভাল লাগছে না?

কেরামত কিছু বলল না। ভীত চোখে তাকাল ম্যানেজারের দিকে। ম্যানেজার সিগারেট ধরিয়াছে। সিগারেটের ধোঁয়ায় সে তার মুখ ঢেকে ফেলেছে।

চা খেতে ভাল হয় নি। গাদাখানিক চিনি দেয়া হয়েছে। সর ভাসছে। কিন্তু শুভ্ৰ আগ্রহ করেই সেই চায়ে চুমক দিচ্ছে। সে হঠাৎ চায়ের কাপ নামিয়ে কেরামতের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার দোকানে আগরবাতি পুড়ছে কেন? শুধু আপনার দোকানো না- সব দোকানেই দেখছি আগরবাতি। কারণটা জানতে পারি?

কোনো কারণ নাই। অনেকদিন থাইকাই চলতাছে। আমার বাপজানরেও দেখছি আগরবাতি জ্বালাইতে। আমিও জ্বালাই।

আপনার বাপজান এখন কোথায়?

উনার ইন্তেকাল হয়েছে।

বাবার পর আপনি এইখানেই দোকান দিলেন।

জ্বে। এই জাগায় একবার যে বসে হে আর বাইর হইতে পারে না। বড় কঠিন জায়গা।

ছালেহ বলল, শুভ্ৰ চা খাওয়াতো হয়েছে। চল এখন উঠি।

শুভ্র বলল, আমি পান খাব। হাফিজ মিয়ার দোকানের পান। আর আমি এখন যাব না। কেরামতের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করব। আপনার কাজ থাকলে চলে যান।

ম্যানেজার গেলেন না। একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন। তাঁর ভুরু কুঁচকে আছে। তিনি বিরক্তি সামলাতে পারছেন না। মঞ্জু ছুটে গেছে পান আনতে।

শুভ্ৰ কেরামতের দিকে তাকিয়ে বলল, এই জায়গাটা সম্পর্কে কিছু বলুনতো শুনি।

কী বলব। কন? এইটা সাক্ষাত হাবিয়া দোজখ।

আপনার রুটি রুজি সবই এইখানে— আপনারতে হাবিয়া দোজখ বলা উচিত না।

কেরামত নিঃশ্বাস ফেলে বলল, এই জায়গা থাকব না। এইটা উইঠা যাইব।

কোন?

পরিষ্কার আলামত আছে। অন্য কেউ বুকুক না বুঝুক আমরা বুঝি।

কীভাবে বুঝেন?

এইসব জায়গায় সব সময় কিছু হিজড়া থাকে। এরার নিজেরার কোনো ভাগ্য নাই বইল্যা এরা যে জায়গায় থাকে সেই জায়গার জন্যে ভাগ্য নিয়া আসে। এইখান থাইক্যা সব হিজড়ারা উঠাইয়া দিছে।

উঠিয়ে দিল কেন?

জানি না। জানার চেষ্টাও করি না। আমি দোকানদার মানুষ। অত জানলে আমার পুষে না। আমি চা বেচি। আর রং দেখি।

শুভ্ৰ উঠে দাঁড়াল। চায়ের দাম দিতে গেল। কেরামত জোড়হস্ত করে বিনীত গলায় বলল, চায়ের দাম দিলে মনে কষ্ট পাব ছোট সাহেব। বড়ই কষ্ট পাব।

শুভ্র তার মনে কষ্ট দিল না। চায়ের দাম না দিয়েই রওনা হল। তার এখন বাড়িতে যেতে ইচ্ছা করছে না। অফিসেও যেতে ইচ্ছা করছে না। ইচ্ছে করছে। পরিচিতি কারো সঙ্গে গল্প করতে। মীরার সঙ্গে গল্প করতে পারলে ভাল হয়। অনেকদিন মীরার সঙ্গে গল্প করা হয় না।

ম্যানেজার সাহেব।

জ্বি।

একটা টেলিফোন করা দরকার।

বাসায় চলে যান। বাসা থেকে কথা বলেন।

না বাসায় যাব না। অফিসেও যাব না।

আচ্ছা ব্যবস্থা করছি।

 

টেলিফোন ধরলেন ইয়াসিন সাহেব। শুভ্ৰর হ্যালো বলা শুনেই বললেন, কে শুভ্র না?

শুভ্র বলল, জ্বি।

কেমন আছ তুমি?

ভাল।

মীরার কাছে তোমার অসাধারণ রেজাল্টের কথা শুনেছি। আমি মীরাকে বললাম, ছেলেটাকে একদিন নিয়ে আয়। সারদিন থাকবে তার সঙ্গে গল্প করব। মীরা মনে হয় তোমাকে কিছু বলে নি।

জ্বি না।

তুমি নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে কথা বলার জন্যে টেলিফোন কর নি। মীরাকে দেব?

জ্বি দিন।

ও টেলিফোন ধরবে কি-না বলতে পারছি না। ওর প্রচণ্ড মাথা ধরেছে বলে স্টিমেটিল খেয়ে দরজা বন্ধ করে শুয়ে আছে। আমাকে বলে গেছে কিছুতেই তাকে ডাকা যাবে না।

তাহলে থাক।

উঁহু তুমি ধরে থাক। প্রিয় মানুষের সঙ্গে কথা বলা মাথা ধরার সবচে ভাল অষুধ। তবে শোন ও যদি টেলিফোন না ধরে তুমি কিন্তু মন খারাপ করো না।

মীরা এসে টেলিফোন ধরল। শুভ্ৰ বলল, তোমার নাকি খুব মাথা ব্যথা?

আরে দূর মাথা ব্যথা ফ্যথা কিছু না। বাবা সকাল থেকে এমন বক বক শুরু করেছে। বাবার হাত থেকে বাঁচার জন্যেই মাথা ব্যথার কথা বলে দরজা বন্ধ করে গান শুনছিলাম।

কী গান?

ট্রাম্পেট। তুই বোধহয় জানিস না। ট্রাম্পেট আমার খুব প্রিয় বাজনা।

আগে জানতাম না। এখন জানলাম।

তোর খবর কী?

ভাল।

কী রকম ভাল?

বেশ ভাল।

আমার কিন্তু মনে হচ্ছে না। তুই খুব ভাল আছিস। আমার ধারণা তুই বদলে যাচ্ছিস। দ্রুত বদলাচ্ছিস।

এ রকম ধারণ হচ্ছে কেন?

কেন হচ্ছে বলতে পারছি না। আমার কোনো সিক্সথ সেন্স নেই। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি। আমি কি তোকে একটা ছোট্ট উপদেশ দিতে পারি? উপদেশ যে তোকে কাজে লাগাতে হবে তা না। দেব উপদেশ।

না।

না কেন?

উপদেশ মানুষকে কন্ডিশান্ড করে ফেলে। আমি কিছু সময় প্রভাব মুক্ত হয়ে থাকতে চাই। যে-কোনো বড় এক্সপেরিমেন্ট প্রভাব মুক্ত হয়ে করতে হয়।

তোর ধারণা তুই বড় কোনো এক্সপেরিমেন্ট করছিস?

হ্যাঁ।

শুভ্ৰ তুই কিন্তু বোকা। আমরা ক্লাসের সবাই তোকে বোকা হিসেবে জানি। যখন তোর চারপাশে বইপত্র থাকে তখন তুই অসম্ভব বুদ্ধিমান। কিন্তু সেই বুদ্ধি শুধুমাত্র পড়াশোনাতেই সীমাবদ্ধ। এর বাইরে তোর কোনো বুদ্ধি নেই।

পড়াশোনার বাইরে আমার বুদ্ধির কোনো পরীক্ষা হয় নি! এবার হবে।

যদি হয় তার ফলাফল মারাত্মক হবে।

শুভ্ৰ হাসল। মীরা বলল, তোর হাসি আগের মত নেই। অন্যরকম হয়ে গেছে।

বোকা বোকা ধরনের হয়ে গেছে?

বোকা বোকা আগেই ছিল। এখন তার সঙ্গে ধূর্ততা মিশেছে বলে মনে হচ্ছে।

ও আচ্ছা।

শুভ্ৰ তুই কি আমার কথায় রাগ করছিস?

না।

রাগ করছিস না কেন? আমি তোকে রাগাতে চাচ্ছি।

আমি টেলিফোন ধরে আছি। মীরা তুমি চেষ্টা চালিয়ে যাও। আমি নিজেও রাগ করতে চাচ্ছি। পারছি না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *