রেবেকা কাঁপা গলায় বলল, আমি ভেবেছিলাম বাসায় কেউ নেই। যা ভয় পেয়েছিলাম! একা-একা কীভাবে ফিরব, তাই ভাবছিলাম।
মাৰ্থা নামিয়ে গেছে। ওকে ঠিকানা বলতেই সে চিনল। মাৰ্থা আমার রুমমেট। বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকব নাকি? ভেতরে আসতে বলুন।
ভেতরে এস রেবেকা।
রেবেকা হাসিমুখে ভেতরে ঢুকল। ওভারকোটের পকেট থেকে হাত বের করল। হাত নীল হয়ে আছে। কোনো গ্লাভস নেই হাতে।
আপনি এত অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন?
শীতের দেশে এরকম হুট করে আসা ঠিক না। আমি নাও থাকতে পারতাম। তখন ফিরে যেতে কীভাবে? মার্থা মেয়েটিরই-বা কী রকম কাণ্ডজ্ঞান। চলে যাবার আগে তার তো দেখা উচিত ছিল বাসায় কেউ আছে কিনা।
আপনি এত রাগছেন কেন?
রাগছি না। টেলিফোন নাম্বার তো ছিল। ছিল না?
আমি কেন শুধু-শুধু টেলিফোন করব? পনের দিন ধরে এখানে আছি। আপনি কি আমাকে টেলিফোন করেছেন? এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে এসে ভাবছেন খুব উপকার করা হয়েছে, তাই না?
পাশা লক্ষ করল মেয়েটি কথা বলছে রেগে-রেগে কিন্ত মুখ হাসি-হাসি।
আমি আসতাম না। এসেছি শুধু আপনাকে টাকাটা দেবার জন্যে। ঐদিন। জিনিসপত্র কিনতে মোট কত ডলার খরচ করেছেন?
এক শ সতের।
এই নিন এক শ কুড়ি। তিন ডলার আপনার বখশিস।
রেবেকা শব্দ করে হাসল। তার বেশ মজা লাগছে। কেন লাগছে, সে নিজেও পরিষ্কার জানে না। বাংলায় কথা বলতে পারছে, এটা একটা বড় কারণ। গত সপ্তাহের উইকণ্ডের বিকেলে ডরমিটরি ছেড়ে সবাই চলে গেল। শুধু আরিয়ে রত্না ছিল। সে ঘর বন্ধ করে তাঁর নিজের দেশের ক্যাসেট চালু করে দিয়েছে। কী ভয়ানক অবস্থা।
চা খাব। চায়ের পানি গরম করুন। আজ চা বানাব আমি।
পাশা চায়ের পানি বসাল। সে বেশ অবাক হয়েছে। ঐদিন রাতে যে-মেয়েকে নিয়ে আসা হয়েছে এই মেয়ে সেই মেয়ে নয়। এ অন্য মেয়ে। যে-কোনো কারণেই হোক সে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে। নতুন পরিবেশে নিজেকে কিছুটা মানিয়েও নিয়েছে।
রেবেকা বলল, আমি খুব বেশি কথা বলছি, তাই না? দেশে কিন্তু খুব কম কথা বলতাম। আপনি বোধহয় বিশ্বাস করছেন না।
করছি।
বাংলায় কথা বলতে পারছি এই আনন্দেই বকবক করতে ইচ্ছা হচ্ছে। গত পনের দিনে কারো সঙ্গে একটা বাংলা কথা বলি নি। এক বার শুধু ভুলে আরিয়ে রত্নাকে বললাম–কেমন আছেন? সে হাঁ করে তাকিয়ে রইল আমার দিকে।
আরিয়ে রত্না কে?
আরিয়ে রত্না হচ্ছে শ্রীলঙ্কার মেয়ে। ভালো নাম হল–আরিয়ে রত্না চন্দ্রাণী।
কোটটা খুলে আরাম করে বস রেবেকা। ছটফট করছ কেন? রেবেকা কোট খুলতে-খুলতে বলল, আজ আপনি আমাকে তুমি-তুমি করে বলছেন। আপনি কি কিছুক্ষণ তুমি, তারপর আপনি, আবার কিছুক্ষণ তুমি–এইভাবে কথা বলেন?
পাশা কী বলবে ভেবে পেল না। পানি গরম হয়ে গিয়েছিল, সে নিজেই চা বানাল।
রেবেকা চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, আপনাকে আমি কী বলে ডাকি, বলুন তো? প্রথম যেদিন আপনার সঙ্গে দেখা, তখন মনে হয়েছিল ছোটমামার মত। মুখের নিচের দিকটা।
ছোটমামা ডাকতে পার।
কিন্তু এখন আপনাকে ছোটমামার মত লাগছে না। খুব এক জন চেনা লোকের মতো লাগছে। সেই চেনা লোকটি কে, ধরতে পারছি না।
পাশা নরম স্বরে বলল, বিদেশে এ রকম হয়। যে কোনো বাঙালী দেখলেই মনে হয় চেনা। পরিচিত কারো চেহারার সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। আসলে অবশ্যি তেমন কোন মিল থাকে না।
কিন্তু আপনার চেহারার সঙ্গে এক জন লোকের চেহারার সত্যি-সত্যি মিল আছে। আমি মনে করতে চেষ্টা করছি। মনে পড়লেই বলব। আপনি ছাড়া এখানে আর কোনো বাঙালী নেই?
করিম সাহেব ছিলেন। এখন নেই, সপরিবারে শিকাগো গিয়েছেন, স্প্রিং-এ ফিরবেন। স্প্রিং পর্যন্ত তুমি যদি থাক, তাহলে তাঁর সঙ্গে দেখা হবে।
রেবেকার শীত লাগছিল। ঘরটা বোধহয় সেরকম গরম নয়। সে গ্যাসের চুলার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। আগুনের ওপর হাত মেলে বলল, শুনুন, দশটার সময় আমার বান্ধবী আমাকে নিতে আসবে। ও গিয়েছে কোন এক পাবে। ফেরার পথে সে আমাকে নিয়ে যাবে। কাজেই দশটা পর্যন্ত আমি অনবরত বাংলায় কথা বলব। আপনি রাগ করতে পারবেন না। আর আমি আপনার এখানে ভাত খাব। গত এক সপ্তাহ ধরে ভেবে রেখেছি, আপনার এখানে ভাত খাব।
মুশকিলে ফেললে, ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা তো এখানে নেই।
সে কি! আপনি ভাত খান না?
ভাত খাব না কেন? ভাত খাই, তবে রান্নটান্নার অনেক ঝামেলা, কাজেই ঐ ঝামেলাতে যাই না।
বলেন কি আপনি!
রেবেকা সত্যিকার অর্থেই নিভে গেল।
আপনি ভাত খান না, এটা জানলে আমি সন্ধ্যেবেলায় আসতাম না।
তুমি ভাত খাবার জন্যেই এসেছ?
হ্যাঁ। আপনি রাগ করেন আর যাই করেন, আমি সত্যি কথাটা বলে ফেললাম।
পাশা উঠে দাঁড়াল। পাকা গায়ে দিতে-দিতে বলল, তুমি বস, আমি ব্যবস্থা। করছি।
কী ব্যবস্থা করবেন?
পাঁচ ব্লক দূরে একটা গ্রোসারি শপ আছে। চাল পাওয়া যায়। এক প্যাকেট চাল নিয়ে আসব। ভাত এবং মুরগির মাংস। তুমি রাঁধতে পার?
খুব পারি। আমিও তো আসছি আপনার সঙ্গে?
না, তুমি থাক। আমার গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। হেঁটে যেতে হবে।
আপনার কি ধারণা, আমি হাঁটতে পারি না?
নিশ্চয়ই পার। কিন্তু বাইরে অসম্ভব ঠাণ্ডা। তোমার অভ্যেস নেই। ঠাণ্ডা লেগে যাবে। আমার খুব দেরি হবে না। একা-একা তোমার আবার ভয় লাগবে না তো?
আমার এত ভয়টয় নেই। ভয় থাকলে একা-একা এত দূর আসতাম?
মেয়েটি তাকিয়ে আছে হাসিমুখে। ভারি সুন্দর লাগছে তো মেয়েটিকৈ! লিকুইড আইজ কি এই চোখকে বলে? ঐ রাতে মেয়েটিকে এত সুন্দর লাগে নি কেন? একটি মেয়ে কখনো রূপবতী, কখনো নয়-এরকম তো হতে পারে না। যে সুন্দর, সে সব সময়ই সুন্দর।
রেবেকা বলল, এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন?
পাশা লজ্জা পেয়ে গেল। বিব্রত স্বরে বলল, দরজা বন্ধ করে দাও। আরেক কাপ চা বানিয়ে খাও। ফ্রীজে পনির আছে, পনির খেতে পার। আমার দেরি হবে না।
একা-একা রেবেকার খানিকটা ভয় লাগতে লাগল। এ বাড়ির হিটিং-এ কোনো গণ্ডগোল আছে। বেশ শব্দ করে গরম বাতাস আসতে থাকে। শব্দটা ভয় ধরিয়ে দেয়।
রেবেকা ফ্ৰীজ খুলল-খালি ফ্রীজ। এক টুকরো পনির পড়ে আছে। কাগজের প্যাকেটে দুধ। মাল্টার মত কয়েকটা ফল শুকিয়ে দড়ি-দড়ি হয়ে আছে।
সে চায়ের পানি চাপাল। চা খেতে ইচ্ছা করছে না। চুপচাপ বসে থাকার চেয়ে কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকা। ঘরে অনেক বই দেখা যাচ্ছে, একটিও বাংলা বই নয়। ভদ্রলোক সম্ভবত অনেক দিন ধরে এদেশে আছেন। জিজ্ঞেস করা হয় নি। এটা বেশ আশ্চর্য যে, রেবেকা তার সম্পর্কে কিছু জানতে চায় নি। ভদ্রলোকও কিছু জানতে চান নি। দু জন সম্পূর্ণ অচেনা মানুষ খুব স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলছে।
বড়োখালু বলে দিয়েছিলেন–এক বার গিয়ে পৌঁছাতে পারলে গাদাগাদা বাঙালী পাবি। দেখবি এরা কত হেল্পফুল। বিদেশে বাঙালীতে-বাঙালীতে খাতির অন্য জিনিস। এক জনের জন্য অন্য জন জান দিয়ে দেবে।
পানি ফুটতে শুরু করেছে, রেবেকা এগিয়ে গেল। আর ঠিক তখন বিদ্যুৎ চমকের মতো মনে পড়ল এই লোকটির চেহারা সুরাইয়ার বড়োচাচা বদিউজ্জামান সাহেবের মত। সুরাইয়া তাঁকে ডাকত বদি চাচা।
ক্লাস ফোরে সুরাইয়া তাদের সঙ্গে ভর্তি হয়। এবং প্রথম দিনেই খাতির হয়ে যায় রেবেকার সঙ্গে। যা কথা বলতে পারে মেয়েটা, গুজগুজ ফুসফুস করছে সবার সঙ্গে। এক মুহূর্তের বিশ্রাম নেই। সেই কথাবার্তার বেশির ভাগই হচ্ছে বদি চাচাকে নিয়ে-যিনি জার্মানীতে থাকেন, যাঁর একটি জার্মান বউ আছে। অবিকল রাজকন্যার মত দেখতে। যার বড়ো ছেলের নাম পল, যে একটুও বাংলা জানে না। এক বার দেশে এসে তেলাপোকা উড়তে দেখে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। বদি চাচার গল্পের কোনো শেষ নেই।
সেই বদি চাচা এক বার দেশে বেড়াতে এলেন। রেবেকা বন্ধুর বাড়িতে তাঁকে দেখতে গেল। ভদ্রলোক সুরাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন, তোর বন্ধু? এরকম লজ্জা পাচ্ছে কেন? উকি দিচ্ছে কেন পর্দার আড়াল থেকে? এই মেয়ে, ভেতরে আস।
রেবেকা ভেতরে এসে দাঁড়াল। ভদ্রলোক বললেন, আরে, এ তো বড়ো সুন্দর মেয়ে! শ্যামলা রঙের মধ্যে এত সুন্দর কোনো মেয়ে তো আর্মি জীবনে দেখি নি। কী নাম তোমার খুকি?
রেবেকা।
বাহ্, নামও তো খুব সুন্দর। এস, আমার কাছে এসে বস। এত লজ্জা কেন তোমার, খুকি?
ভদ্রলোক একটা কালো ব্যাগ খুলে লাল রংয়ের একটা কলম বের করলেন। কলমের ভেতর ব্যাটারি লাগান, সুইচ টিপলেই আলো বের হয়। সেই আশোয় অন্ধকারে লেখা যায়।
এই কলমটা নাও রেবেকা। আরে বোকা মেয়ে, এত লজ্জা কিসের! নাও নাও। আর শোন, তুমি কাল এক বার আসবে, তোমার ছবি তুলব। আসবে কিন্তু।
রেবেকা গিয়েছিল। ভদ্রলোক ছিলেন না। পরে সে আরো অনেক বার গিয়েছে, কোনো বারই তাঁর সঙ্গে দেখা হয় নি। তিনি মাত্র এক সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন। দারুণ ব্যস্ততার মধ্যে তাঁর সময় কাটছিল।
সুরাইয়ার কাছে যেদিন শুনল বদি চাচা চলে গেছেন, এমন মন খারাপ হল তার। বেশ মনে আছে, সে টিফিন পিরিয়ডে খানিকক্ষণ কেঁদেছিল।
পাশা চৌধুরীর সঙ্গে সুরাইয়ার চাচার চেহারায় কোথায় যেন একটা মিল আছে। মিলটি কোথায় রেবেকা ধরতে পারল না। তার কেমন জানি অস্বস্তি লাগতে লাগল। যেন মিল থাকাটা ঠিক নয়।
রিনরিন শব্দে কলিং-বেল বাজছে। দুটি ব্রাউন পেপার ব্যাগ হাতে পাশা দাঁড়িয়ে আছে। তার সারা গায়ে বরফ। খুব বরফ পড়ছে বাইরে।
আমার রান্না কেমন তা তো বলছেন না, শুধু খেয়েই যাচ্ছেন।
খুব ভালো রান্না। চমৎকার রান্না।
কাঁচা মরিচ পেলে আরো ভালো হত। কাঁচা মরিচ পাওয়া যায় না এদেশে, তাই না?
পাওয়া যায়। মেক্সিকো থেকে আসে। আমার কিনতে মনে ছিল না। পরের বার কিনব।
হাত ধুতে-ধুতে রেবেকা নিচুস্বরে বলল, আপনি যখন ছিলেন না, তখন আমি একটা অন্যায় করেছি। ভেবেছিলাম আপনাকে বলব না। কিন্তু না বললে আমার খারাপ লাগবে।
পাশা অবাক হয়ে বলল, কী অন্যায়? রাগ করার মতো অন্যায় করার এখানে কোন সুযোগ তোমার নেই। ব্যাপারটা কী বল।
রেবেকা চোখমুখ লাল করে বলল, দেশ থেকে আপনার যে চিঠিগুলো এসেছে, সেগুলো পড়ে ফেলেছি।
পাশা শব্দ করে হাসল।
হাসছেন কেন?
হাসি আসছে তাই হাসছি। তুমি বেশ অদ্ভুত মেয়ে তো রেবেকা।
মজার কী দেখলেন আপনি?
পাশা সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল, চিঠিগুলো পড়তে কেমন লাগল?
আপনার ভাইয়ের চিঠিটা খুব মজার।
গত পনের বছর ধরে এই রকম চিঠি পাচ্ছি, একই ভাষা, একই বক্তব্য। তবে এবার ভাষা বা বক্তব্য দুটোই বদলাবে।
কেন?
টাকা পাঠান হয় নি।
পাঠান নি কেন?
আমার একটা দুঃসময় যাচ্ছে।
কী দুঃসময়?
আমি কোনো চাকরিবাকরি করি না। ভিডিও গেম-এর সফটঅয়ার তৈরি করে বিক্রি করি। বেশ কিছু দিন ধরে কিছু বিক্রি করতে পারছি না।
রেবেকা বিস্মিত হয়ে বলল, আপনি কী করেন আমি বুঝতে পারলাম না।
অন্য এক দিন বুঝিয়ে দেব।
আজকে বোঝাতে আপনার অসুবিধাটা কী?
না, কোনো অসুবিধা নেই।
আপনার ধারণা আমি খুব বোকা মেয়ে?
না, সেরকম ধারণা হবে কেন?
জানেন, আমি সব কটি পরীক্ষায় সবার চেয়ে বেশি নম্বর পাচ্ছি।
তাই নাকি?
হ্যাঁ। প্রফেসর ওয়ারডিংটন আমাকে কী বলেছেন শুনতে চান?
শুনতে চাই।
প্রফেসর ওয়ারডিংটন বলেছেন–আমার মতো ইন্টেলিজেন্ট মেয়ে তিনি খুব কম দেখেছেন। কি, আমার কথা বিশ্বাস হল না?
বিশ্বাস হবে না কেন?
তাহলে আপনি এমন মুখ টিপে হাসছেন কেন?
আর হাসব না।
বাইরে গাড়ি হন দিচ্ছে। মাৰ্থা এসে গেছে। রেবেকা কোট গায়ে দিতে-দিতে বলল, আসছে উইকণ্ডে আপনি নিজে গিয়ে যদি আমাকে না আনেন, তাহলে কিন্তু আমি আসব না।
আমি নিজে গিয়েই আনব।
চারটার সময় আমাদের ক্লাস শেষ হয়। আপনি অবশ্যই পাঁচটার মধ্যে চলে আসবেন।
আসব। পাঁচটার মধ্যেই আসব।
আর, অনেকক্ষণ বকবক করলাম, কিছু মনে করবেন না।
ঠিক আছে, মনে করব না।
পাশা তাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গেল। গুঁড়িগুঁড়ি তুষার পড়ছে। রেবেকা অবাক হয়ে বলল, বরফ পড়ছে, তাই না?
হ্যাঁ।
কী সুন্দর।
পাশা সহজ স্বরে বলল, আমেরিকার এই একটি জিনিসই সুন্দর।
রেবেকা পা ফেলছে খুব সাবধানে। প্রথম রাতেই পাশা তাকে যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছিল, ঠিক সেইভাবে। প্রথমে গোড়ালি। তারপরে পা।
সারারাত ধরে তুষারপাত হল। ছ ইঞ্চি বরফে ঢেকে গেল ফাগো শহর। এক রাতের ভেতর তাপমাত্রা নেমে গেল শূন্যের পনের ডিগ্রী নিচে। ক্রিসেন্ট লেকের পানি জমে যেতে শুরু করল। ফাগগাবাসী আনন্দে উৎফুল্ল হল। হোয়াইট ক্রিসমাস হবে এবার। এর আগের বছর ক্রিসমাসের সময় কোনো বরফ ছিল না। আচমকা খানিকটা গরমে সমস্ত বরফ গলে প্যাচপ্যাচে কাদা হয়ে গিয়েছিল। এরা বলে ইণ্ডিয়ান সামার। কেন বলে কে জানে?