০৭. রাজভবনের পোর্টিকোতে গাড়ি

রাজভবনের পোর্টিকোতে গাড়ি থামতেই তকমা আঁটা বেয়ারা এগিয়ে এসে গাড়ির দরজা খুলে দিল। এ-ডি-সি সাহেবের সঙ্গে মণিকাকে দেখে মার্বেল হলের এপাশে ওপাশে যে সব বেয়ারারা ছিল, তারা সবাই একটু অবাক হল। আগে কোনো কোনো এ-ডি-সি-কে ওরা গার্ল নিয়ে আসতে দেখেছে, কিন্তু ক্যাপ্টেন রায় কোনোদিন কাউকে নিয়ে আসেননি।

আশপাশের বেয়ারারা মুখে কিছু বলল না, বলতে পারে না, শুধু সেলাম দিল।

লিফটম্যানও সেলাম দিয়ে উপরে নিয়ে গেল। করিডোরের বেয়ারারাও সেলাম দিল। সেলাম কুড়ুতে কুড়ুতে ক্যাপ্টেন রায় মণিকাকে নিয়ে নিজের ঘরের দরজায় এলেন। সেখানেও একটা বেয়ারা সেলাম দিয়ে দরজা খুলে দিল।

ক্যাপ্টেন রায় মাথার টুপিটা খুলে সসম্ভ্রমে দরজা দেখিয়ে বললেন, প্লিজ।

একটু মুচকি হেসে মণিকা ঘরে ঢুকেই থমকে দাঁড়াল, এখানে কিভাবে থাকেন বলুন তো?

কেন বলুন তো? আমার ঘরটা কি এত খারাপ?

চোখ থেকে সানগ্লাস খুলতে খুলতে মণিকা বলে, আপনার ঘরের কথা বলছি না বলছি এই রাজভবনের কথা।

অবাক হয় ক্যাপ্টেন রায়, রাজভবনের আবার কী হল।

একটা ছোট্ট দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে মণিকা আবার বলে, মাই গড! সে বোধশক্তিও হারিয়ে ফেলেছেন?

এক্সকিউজ মি…

মণিকা নিজের মুখের সামনে একটা আঙুল তুলে বললে, এই ফর্মালিটিগুলো ছেড়ে কথা বলতে পারেন না?

অনেকটা নিশ্চিন্তবোধ করে ক্যাপ্টেন রায়। দুএক পা এগিয়ে এসে একটা কৌচের টুপিটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললেন, বাট হোয়াট হ্যাঁপেনড় টু রাজভবন?

প্রাণহীন পুতুলের মতো এই লোকগুলোর সেলাম নিতে বুঝি আপনার খুব ভালো লাগে?

ক্যাপ্টেন রায় এবার হেসে ফেলে। প্লিজ হ্যাঁভ ইওর সিট…

আবার প্লিজ?

আই অ্যাম সরি।

শুধু দুঃখ প্রকাশ করলেই চলবে না। প্রতিজ্ঞা করুন আমার সঙ্গে ওই ধরনের ফর্মাল কথাবার্তা বলবেন না।

ক্যাপ্টেন রায় যেন হঠাৎ একটু দুষ্টুমি করে একটু চাপা গলায় জানতে চায়, যদি বেশি ইনফর্মাল হই?

মণিকা এবার ব্রেক করে, আপনি আমাকে কফি খাওয়াবেন বলে এখানে এনেছেন। সেকথা। মনে আছে কি?

আই অ্যাম সরি…

ক্যাপ্টেন রায় বেল বাজিয়ে বেয়ারাকে তলব করল। আমজাদ আভি ডিউটিমে হ্যায়?

হ্যাঁ সাব।

পাঠিয়ে দাও তো।

কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমজাদ এসে দুজনকেই সেলাম দিল।

আমজাদ, এই মেমসাহেব আমার পয়লা মেহমান। একটু ভালো করে কফি-টফি খাওয়াবে?

জরুর।

তাহলে জলদি লে আও।

এতকাল রাজভবনে কাজ করে মেহমানের মর্যাদা বোঝে আমজাদ আলি। তাইতো, শুধু কফি আনেনি, এনেছিল ডবল ডিমের ওমলেট, কেক, পেস্ট্রি, ক্যাসুনাটস ও আরো কি যেন।

মণিকা ঘাড় বাঁকা করে ক্যাপ্টেন রায়ের দিকে তাকিয়ে বলে, আপনি কি ভেবেছেন বলুন তো?

কেন? কি হল আবার?

সামনে ট্রে দেখেও বুঝতে পারছেন না কি হল?

হাসতে হাসতে ক্যাপ্টেন রায় বলে, আই সি। কিন্তু আমি জানতাম বার্মিজ মেয়েরা বেশ খেতে পারে।

হোয়াট ডু ইউ মিন?

না, না, আমি কিছু মিন করছি না তবে…

তবে-টবে ছাড়ুন। এক কাপ কফি খাওয়াতে এনে যা ইচ্ছে তাই বলে যাবেন?

কেন যে অহেতুক দুজনে তর্ক করল, তা ওরা কেউ জানে না। মনে যখন ঝঙ্কার লাগে, দূর থেকে যখন একটা অস্পষ্ট স্বপ্ন উঁকি দেয়, তখন বোধহয় এমনি হয়। সবারই হয়। ক্যাপ্টেন-মণিকার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ঘটল না।

ক্যাপ্টেন সকালে শুধু এক কাপ চা খেয়েই এয়ারপোর্টে গিয়েছিল। বেশ খিদে লেগেছিল।

আপনি ভদ্রতা করলেও করতে পারেন; আমার কিন্তু ভীষণ খিদে পেয়েছে।

নিশ্চয়ই। বলে নিজেই ক্যাপ্টেনকে খাবার-দাবার এগিয়ে দিল। নিজেও দুচারটে নাটস মুখে দিল।

ক্যাপ্টেন নিজেই কফি করতে হাত বাড়ালে মণিকা বাধা দিল। থাক, থাক। আমি থাকতে আপনাকে আর নিজে হাতে কফি তৈরি করতে হবে না।

আই অ্যাম এক্সট্রিমলি গ্রেটফুল ফর দি কাইন্ড কন্সিডারেশন।

আবার ভদ্রতা? অত ভদ্রতা করলে এক্ষুনি চলে যাব।

অভদ্রতা করলে অনেকক্ষণ থাকবেন? চাপা হাসি হাসতে হাসতে ক্যাপ্টেন রায় জানতে চান।

মণিকাও হাসতে হাসতে জবাব দেয়, ভদ্রতা-অভদ্রতা কিছুই করতে হবে না! স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলুন। একটু গল্পগুজব করেই পালাই।

ক্যাপ্টেন যেন উদ্বিগ্ন হয়, এক্ষুনি যাবেন?

যাব না?

ক্যাপ্টেন একটু আনমনা হয়। কৌচ থেকে উঠে একবার জানালার ধারে দাঁড়িয়ে কোনো সুদূরের দিকে একবার দেখে নেয়। প্যান্টের পকেটে দুটো হাত পুরে ধীরে ধীরে ফিরে আসে মণিকার দিকে।

জানেন মিস ব্যানার্জি, কলকাতায় আসার পর আপনিই আমার ফার্স্ট ফ্রেন্ড অ্যান্ড ফার্স্ট গেস্ট।

মণিকা যেন আঘাত পেল তার দরদী মনে। কেন, এখানে আপনার কেউ নেই?

না।

সময় কাটান কিভাবে?

সময়? রাজভবনের শাসন অমান্য করেই ক্যাপ্টেন রায়ের একটা দীর্ঘনিশ্বাস পড়ে। ডিউটির পর চুপচাপ শুয়ে শুয়ে বইপত্তর পড়ি, নয়তো এই বেয়ারা-চাপরাশিদের সঙ্গে গল্পগুজব করি।

ডক্টর মঙের নিঃসঙ্গতার বেদনা অনুভব করত যে মণিকা, সে যেন ক্যাপ্টেন রায়ের নিঃসঙ্গতার জ্বালায় অস্থির হয়ে উঠল। কলকাতায় আপনার কোনো বন্ধু-বান্ধব নেই?

না।

এমন করে একলা থাকেন কিভাবে?

ক্যাপ্টেন কোনো জবাব দেয় না। কি জবাব দেবে? মণিকাও চুপ করে বসে বসে নিঃসঙ্গ, বন্ধুহীন প্রিয়হীন ক্যাপ্টেনকে দেখে আর মনে মনে অস্বস্তিবোধ করে।

কয়েক মিনিট কেটে গেল। ক্যাপ্টেন রায়ের আবার মনে পড়ে, সে এ-ডি-সি! সে রাজভবনে রয়েছে।

আই অ্যাম সরি মিস ব্যানার্জি। কতকগুলো আজেবাজে কথা বললাম বলে মনে কিছু করবেন না।

না না মনে করব কেন?

আবার কয়েকটা মুহূর্ত চুপচাপ। ক্যাপ্টেন আবার বলেন, একলা বেশ ছিলাম। দুঃখ কষ্টটা ঠিক অনুভব করতাম না। কিন্তু এই কদিন আপনার সঙ্গে আলাপ করে ঘোরাঘুরি করে নিঃসঙ্গতার বেদনাটা যেন প্রথম অনুভব করলাম।

মণিকা হাসল।

আপনি হাসছেন?

একটা কথা মনে হল।

কি কথা?

সেদিন সকালে যখন আপনাকে প্রথম দেখি তখন ভাবতে পারিনি আপনি এত লোনলি! আপনার হাসিখুশি ভরা মুখ আর স্মার্ট ব্যবহার দেখে ভেবেছিলাম ইউ আর দি হ্যাপিয়েস্ট ম্যান ইন দিস ওয়ার্লড।

ক্যাপ্টেন হাসতে হাসতে দুটো লাইন আবৃত্তি করলেন, The wind blows out of the gates of the day, the wind blows over the lonely of heart…0.378 TROSTRI CHOYT হাওয়া…

ক্যাপ্টেন আরো কি বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু মণিকা বাধা দিল, আপনি তত বেশ মজার লোক।

কেন বলুন তো?

ইয়েটসকেও মুখস্থ রেখেছেন?

ক্যাপ্টেন কোনো কথা না বলে সামনের সেন্টার টেবিলে রাখা সিগারেট কেস থেকে একটা সিগারেট বের করে মুখে তুলে নেয়। লাইটারটাও হাতে তুলেছিল কিন্তু মণিকা হাত থেকে নিয়ে নিল, আমি জ্বালিয়ে দিচ্ছি।

মণিকা লাইটার জ্বালতেই ক্যাপ্টেন সিগারেট ধরিয়ে একগাল ধোঁয়া ছেড়ে বলল, ধন্যবাদ।

কিছু ধন্যবাদ দিতে হবে না। এটা আমার হ্যাঁবিট হয়ে গেছে। ডক্টর মঙ চুরুট তুললেই আমি লাইটার জ্বেলে ধরতাম।

Lord, lift thou up the light of thy countenance upon us.

মণিকা হাসতে হাসতে বলে, আই উইস আই ওয়াজ ইওর লর্ড!

এই অন্ধকারে যখন একবার আলো জ্বালিয়েছেন, তখন লর্ড না বলে অস্বীকার করতে পারি?

.

মণিকার সঙ্গে এই ভাবেই আলাপ। আরো অনেক মেয়ের সঙ্গেই আলাপ হয়েছে। নানা জায়গায়, নানা ভাবে। আম্বালা ক্যান্টে থাকার সময় দুর্গাপুজো নিয়ে বেশ ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল মনীষার সঙ্গে। জীপে চড়ে সারা ক্যান্টনমেন্ট ঘুরেছে দিনের পর দিন, চাদা তুলেছে প্রতিটি কোয়ার্টার থেকে। বিজয়ার দিন মা দুর্গার স্বামীর ঘর করতে চলে যাবার পরও সে সম্পর্ক হারিয়ে যায়নি। হায়দ্রবাদে থাকার সময় বাঙালিদের নববর্ষ উৎসবে আলাপ হয়েছিল সীমার সঙ্গে। আরো কত জনের সঙ্গে এমনি আলাপ হয়েছে। কিন্তু এবারের সুর যেন আলাদা। স্বতন্ত্র। হয়তো বা অনন্য।

ক্যাপ্টেন রায়ের বার বার মনে হল মণিকা চলে গেলেও কি যেন রেখে গেছে, কি যেন নিয়ে গেছে। সব কিছু ঠিক ছিল, কিন্তু তবুও যেন একটা লেনদেন হয়ে গেছে দুজনেরই অজ্ঞাতসারে।

দিনগুলো শুরু হতো, শেষ হতো ঠিক আগেরই মতো। সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে শুয়ে শুয়েই খবরের কাগজে লাটসাহেবের ছবি দেখা, আমজাদের দেওয়া ব্রেকফাস্ট খাওয়া, তাড়াহুড়ো করে ইউনিফর্ম চেক করা, হাতে স্যাফরন কলারের আর্ম ব্যাচ পরা থেকে শুরু করে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার মুখে লর্ড ওয়েলেসলীর বিরাট পেন্টিংটার সামনে মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়ালেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে, গুডমর্নিং লর্ড!

ঘড়ির কাঁটার মতো সব কিছুই আগের মতো চলছিল। কিন্তু তবুও কেমন ব্যতিক্রম মনে হচ্ছিল ক্যাপ্টেনের। অফিস ঘরের জানালা দিয়ে মাঝে মাঝে যে ক্যাপ্টেন শুধু দুরের ফুলের মেলা দেখতেন, সেই ক্যাপ্টেন টিউলিপ বা লিলির গোছা নিয়ে নিজের ঘরে রাখতে শুরু করলেন। টিউলিপ লিলির বিনষ সৌন্দর্যের মধ্যে দিয়ে হয়তো মণিকাকে দেখতেন।

একে আর্মি অফিসার তার উপর লাটসাহেবের এ-ডি-সি। ভদ্রতা, সৌন্দর্য শৃঙ্খল দিয়ে মনকে বন্দী করতে চেষ্টা করতেন সর্বদা। টেলিফোন ডাইরেক্টরীতে ডক্টর ব্যানার্জির নাম্বারের পাশে লাল পেন্সিসের নিশানা দিয়েছিল কিন্তু তবুও ডায়াল ঘোরাতে পারেনি।

ডিউটির পর একলা একলা চুপচাপ শুয়ে থাকে নিজের ঘরে। মোরাভিয়াকে পড়তেও ঠিক মন বসে না।

দুদিনের জন্য লাটসাহেবের সঙ্গে মেদিনীপুর ঘুরে এলেন। সেদিন গভর্নরের বিশেষ কোনো প্রোগ্রাম ছিল না। শুধু বিকেলে কাউন্সিল চেম্বারে স্টেট লেপ্রসি বোর্ডের একটা মিটিং ছিল। ডিউটিতে ছিল লেফটেন্যান্ট ধীলন। ক্যাপ্টেনের অফছিল। দুপুরে ফোর্ট উইলিয়ামে গিয়েছিলেন এক বন্ধুর সঙ্গে লাঞ্চ খেতে। ফিরে এলেন প্রায় সাড়ে তিনটে নাগাদ। শুয়ে শুয়ে বইবত্তর নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ল।

ঘুম ভাঙল টেলিফোনের জন্য।…ইয়েস ক্যাপ্টেন রায়…।

গলাটা শুনেই চমকে উঠলেন, কে?

আমি মণিকা ব্যানার্জি বলছি।

মণিকা দেখতে পেল না ক্যাপ্টেন আনন্দে লাফিয়ে উঠে বসলেন। বলুন কেমন আছেন?

মেদিনীপুর থেকে ঘুরে এলেন?

আপনি জানলেন কেমন করে?

কেমন করে আবার! খবরের কাগজে ছবি দেখে।

রিয়েলি?

তবে কি ঠাট্টা করছি?

আরো কি যেন বলে দুজনেই। তারপর মণিকা বলল, ডক্টর আপনার খুব প্রশংসা করে চিঠি লিখেছেন।

প্রশংসা করার মতো তো কিছু করিনি।

আমি কি করে জানব বলুন? তবে অনুমতি দিলে ওর চিঠিটার রেলিভ্যান্ট পোর্সান পড়ে শোনাতে পারি।

ইফ ইউ উইস।

মণিকা পড়ল, প্লিজ কনভে মাই পার্সোন্যাল থ্যাঙ্কস টু দ্যাট চার্মিং ইয়ং এ-ডি-সি টু দি গভর্নর। এমন একদিন আসবে যেদিন হয়তো গভর্নরকে ভুলে যাব কিন্তু ক্যাপ্টেন রায়কে নিশ্চয়ই ভুলব না।

মণিকার কাছে এসব শুনতে খুব ভালো লাগে। হাসতে হাসতে বললেন, মাই গড। হোয়াট হ্যাঁভ আই ডান?

মণিকাও একটু হাসতে হাসতে বলল, আমিও তাই ভাবছিলাম।

এ চিঠি গভর্নরের হাতে পড়লে এক্ষুনি আমাকে বিদায় করবেন।

ক্যাপ্টেন একটু হেসে আবার জানতে চায়, আর কি লিখলেন?

এর বেশি জানতে হলে এখানে এসে দেখে যান।

অপ্রত্যক্ষ আমন্ত্রণ জানায় মণিকা।

ডিনারের সময় বেড়াতে যাওয়া কি ঠিক হবে? ঠাট্টা করেন এ-ডি-সি।

সারা দুনিয়াটাকেই রাজভবন ভাবেন কেন বলুন তো?

সেইদিন সন্ধ্যায় ক্যাপ্টেন রায় দ্বিতীয়বার পদার্পণ করলেন ডক্টর ব্যানার্জির বাড়িতে।

মণিকা দরজার গোড়ায় অভ্যর্থনা জানাতে গিয়ে বলল, আপনার মতো বলব নাকি প্লিজ কাম ইন?

ক্যাপ্টেন হাসতে হাসতে বলেন, অতিথিকে অপমান করছেন?

দাঁত দিয়ে জিভ কেটে মণিকা বলে, ছি, ছি। অপমান করব কেন? আসুন আসুন ভিতরে আসুন।

মণিকার মা ভিতরের বারান্দা থেকে ড্রইংরুমে ঢুকেই বললেন, এসো, এসো। এতদিন পরে মনে পড়ল?

মিসেস ব্যানার্জির কথায় খুশি হয় ক্যাপ্টেন। না, না, ওকথা কেন বলছেন? একটু ব্যস্ত ছিলাম কদিন।

বসো, বসো, কোনো তাড়াহুড়ো নেই তো? একেবারে খাওয়া-দাওয়া করে যাবে।

ক্যান্টেনের জবাব দেবার আগেই মিস ব্যানার্জি বলে, সে কি মা? উইদাউট প্রপার ইনভিটেশন এ-ডি-সি কি ডিনার খেতে পারেন?

ভদ্রমহিলা মেয়েকে শাসন করেন, আঃ! বুলু কি হচ্ছে?

মণিকা যখন ছোট্ট ছিল তখন বুলবুলি পাখির মতো দিনরাত্তির বক বক করত। সেই থেকেই ওর নাম হয় বুলু। ছোট্ট মেয়েকে বুলু বলে ডাকলে হয়তো ভালোই লাগে কিন্তু তাই বলে এম-এ পাশ করার পরও বুলু?

আঃ! মা, সবার সামনে কি বুলু বুলু করছ?

এবার আর ক্যাপ্টেন চুপ করে থাকে না এত রাগ করছেন কেন? বুলু নামটা তো ভারি সুন্দর।

পরের ডাকমান শুনতে সবারই ভালো লাগে।

মিসেস ব্যানার্জি যেন অনুযোগ করেন, আজকালকার কি যে ফ্যাশান তা বুঝি না। ডাকনাম ধরে ডাকলেই রেগে যায়।

ক্যাপ্টেনের মুখ দিয়ে হঠাৎ বেরিয়ে গেল, না মাসিমা। আমি কিন্তু রাগ করি না।

মণিকা বলে, আপনি তো ডেঞ্জারাস লোক। বুড়ো-বুড়িদের খুশি করার বেশ কায়দা জানেন তো?

মিসেস ব্যানার্জি ভিতরে যাবার সময় বলে গেলেন, তুমি ওর কথা গ্রাহ্য করো না।

মিসেস ব্যানার্জি চলে যাবার পর মণিকা বলল, তারপর বলুন কেমন আছেন।

আপনি কেমন আছেন?

বেকারের আবার ভালো-মন্দ থাকার কি আছে?

আপনার চাকরি করার প্রয়োজন কি?

তাই বলে সারাজীবন বাপ-মার অন্ন ধ্বংস করব?

সারা জীবন কেন করবেন? লেখাপড়া শিখেছেন, এবার বিয়ে করে…

ক্যাপ্টেনকে আর বলতে দেয় না মণিকা, বুড়ো লাটসাহেবের সঙ্গে থেকে বুড়োদের মতো কথাবার্তা চিন্তা-ভাবনা করতে শিখেছেন তো বেশ।

বিয়ের কথা বললেই বুড়োদের মতো হলাম?

তবে কি?

চাকরটা এক কাপ কফি নিয়ে আসতে না আসতেই মিসেস ব্যানার্জিও ড্রইংরুমে এলেন। এখন আর কিছু দিলাম না। একটু পরেই খেতে দেব।

ক্যাপ্টেন হাসিমুখে বলে, ঠিক আছে মাসিমা।

এবার মণিকার দিকে ফিরে বলেন ডক্টর মঙের চিঠিটা কই?

চিঠিটা সত্যিই পড়বেন? পড়লে কিন্তু আপনার অহংকার বেড়ে যাবে। বাঁকা চোখে হাসতে হাসতে মণিকা বলল!

আপনি বড্ড বেশি তর্ক করেন।

মণিকা হাসতে হাসতেই উঠে গেল।

একটু পরেই ডক্টর মঙের চিঠিটা নিয়ে এল, এই নিন, পড়ুন।

আপনিই পড়ুন।

না, না, আপনিই পড়ুন।

ওটা আপনার চিঠি। আমার পড়া ঠিক নয়।

শেষ পর্যন্ত মণিকাই পড়ল, মাই সুইট লিটল মাদার, বেনারস আর গয়াতে এত বেশি পোগ্রাম ছিল যে কিছুতেই তোমাকে চিঠি লিখতে পারিনি। তাই তোমার বাবাকে শুধু একটা টেলিগ্রাম করি। যাই হোক সব সময় তোমাদের কথা মনে হয়। তোমার বাবা, মা ও তুমি আমাকে এত বেশি প্রাণের মধ্যে টেনে নিয়েছ যে একমুহূর্তও তোমাদের ভুলতে পারি না। বার বার মনে হচ্ছে আবার কবে রেঙ্গুন ফেরার পথে কলকাতা আসব…

এবার মণিকা থামে। বলে, এবার আসল জায়গাটা পড়ি।

অ্যাজ ইউ প্লিজ।

তবে শুনুন। মণিকা আবার শুরু করে, ক্যাপ্টেন রায়ের কি খবর? তোমার সঙ্গে এর মধ্যে দেখা হয়েছে নাকি ছেলেটিকে বড় ভালো লেগেছে। চেহারাটির মধ্যেই কেমন যেন একটা সুন্দর আকর্ষণ আছে…

মণিকা মুখ টিপে হাসতে হাসতে জোর করে একটি কাশির আওয়াজ করল। একবার এক ঝলক দেখেও নেয় ক্যাপ্টেনকে।

আরো পড়ব?

ক্যাপ্টেনও চাপা হাসি হাসতে হাসতে বলল, অ্যাজ ইউ প্লিজ!

আমি কিন্তু আপনার গভর্নর নই? কথায় কথায় এত প্লিজ প্লিজ না করলেও চলবে।

ইউ আর মাচ মোর ইমপর্ট্যান্ট দ্যান মাই গভর্নর।

সত্যি?

সত্যি।

বসন্তের একটা দমকা হাওয়া বয়ে গেল।

ক্যাপ্টেন এবার জিজ্ঞাসা করে, আপনার বাবাকে দেখছি না?

বাবা কটকে গিয়েছেন।

কটকে?

হ্যাঁ। কটক ইউনিভার্সিটিতে একটা মিটিং আছে। বাবা থাকলে কি আমাকে বকবক করতে হতো?

কেন, আপনার বাবা বুঝি কথাবার্তা বলতে খুব পছন্দ করেন?

সারাজীবন প্রফেসারি করে কাটিয়েছেন। ছেলেমেয়ে দেখলেই বক্তৃতা না দিয়ে থাকতে পারেন না।

মিসেস ব্যানার্জি আবার ড্রইংরুমে এলেন, কিরে বুলু, ছেলেটাকে খেতেটেতে দিবি নাকি শুধুই বকবক করবি?

খাওয়া-দাওয়ার পর্বটা বেশ ভালোই হল। বহুদিন পর কেন, বহু বছর পর এমন খাওয়া হল।

বাংলাদেশের বাঙালিদের খাওয়া-দাওয়ার একটা ধরন আছে। হরেক রকম ডাল, তরকারি, মাছ। তার সঙ্গে দই, মিষ্টি। মাঝে চাটনি। প্রবাসী বাঙালিরা আধিক্য বর্জন করেন কিন্তু ঠিক বাঙালিপনা ছাড়তে পারেন না। ডাল থাকে, মাছ থাকে; বাদ পড়ে তরকারি। তার বদলে হয়তো বা মাংস। চাটনি থাকলেও একটু আচার, স্যালাড, ফ্রাই, সসের মতো কিছু পাওয়া যাবে। এর ব্যতিক্রম হয় দেশ, কাল ভেদে। দক্ষিণ দেশের বাঙালিগৃহে সম্বার, চন্ডীগড়ে বাঙালিগৃহে বেসনের কাড়ি পাওয়া যায়।

যেসব বাঙালিরা দেশ-বিদেশে ঘুরে বাংলাদেশেই ফিরে আসেন, খাওয়া-দাওয়াটা তাদের ঘরেই ভালো হয়। নানারকম খাবারের আদিতে একটু সূপ, অন্তে একটু পুডিং ও এক কাপ কফিও থাকে।

আর্মি মেসে আর রাজভবনে খেয়ে খেয়ে মার হাতের রান্নার কথা ভুলেই গেছে ক্যাপ্টেন। আজ মনে পড়ল মা-র রান্নার কথা।

ক্যাপ্টেনকে খাইয়ে মিসেস ব্যানার্জি খুব খুশি। কষ্ট করে রান্না-বান্না করার পর অশ্রদ্ধা করে খেলে বড় বিরক্ত লাগে।

আমি কিন্তু অশ্রদ্ধা করে খাইনি, মাসিমা।

না বাবা। আমি তো তা বলছি না।

একটু যেন আপন মনে হয় ক্যাপ্টেনকে।

দৃষ্টিটা মণিকার দিকে ঘুরিয়ে বলেন, ওর বাবা বেশ খাওয়া-দাওয়া পছন্দ করতেন! এখন অবশ্য কিছুই খেতে পারেন না। কিন্তু এই হতভাগী মেয়েটা কিছু খায় না।

আবার একটু থামলেন। লোকে না খেলে কি রান্না-বান্না করতে ভালো লাগে?

মাসিমা, ওটা আজকালকার মেয়েদের ফ্যাশান।

এতক্ষণ মণিকা চুপ করেছিল। মা-র মোসাহেবী করছেন কেন বলুন তো?

ক্যাপ্টেন মজা করে, হোয়াট?

হাসিটা চেপে থাকলেও ইরানি ঠোঁটের কোণায় যে সামান্য ইঙ্গিতটুকু ছিল, তাতেই মণিকার সারা মুখে মিহি আভা ছড়িয়ে পড়েছিল। আর হোয়াট, হোয়াট করবেন না। লাটসাহেবের মোসাহেবী করে করে মোসাহেবী করাটা অভ্যাস হয়ে গেছে।

আঃ! বুলু কি যা তা বলছিস?

দিন কতক পরে যখন মণিকার সঙ্গে দেখা হল তখন ক্যাপ্টেন বলেছিল, আপনি এখনও সেই ছোট্ট বুলবুলিই থেকে গেছেন।

কেন বলুন তো?

ক্যাপ্টেন হাসতে হাসতে জবাব দিয়েছিল, এখনও বেশ মিছিমিছি সুন্দর কথা বলতে পারেন।

সেই সুন্দর ইরানি ঠোঁটটা উল্টেই বলেছিল, পঁচিশ বছরের বুড়ির আবার মিছিমিছি কথা?

আপনি বুড়ি?

তবে কি? জানেন না বাঙালি মেয়েরা কুড়িতে বুড়ি হয়?

ইউ উইল নেভার বি বুড়ি।

মণিকা ভুলতে পারেনি কথাটা। ঘরে, বাইরে, সর্বত্র প্রতিধ্বনি হয়ে কানে ভেসে আসছিল। ইউ উইল নেভার বি বুড়ি, ইউ উইল নেভার বি বুড়ি!।

ক্যাপ্টেনের দৃষ্টিটা যে ধীরে ধীরে পাল্টে যাচ্ছে, তা বুঝতে কষ্ট হল না মণিকার। ভালোই লাগল।

কথাটা তো ভালো লেগেছিল। এমন দৃষ্টি নিয়ে আগে কি কেউ দেখেছে? মণিকার মনে পড়ে না। জাল ফেললেই পুকুরের সব মাছ ধরা পড়ে না, পড়তে পারে না। ফসকে যায়, পালিয়ে যায়। কলেজ ইউনিভার্সিটির জীবনে মণিকাও ধরা পড়েনি। কিন্তু আজ?

মনের মধ্যে এই এখন দোলা লাগল। দ্বিধা, দ্বন্দ্ব, সঙ্কোচ যেন এই এখন অনুভব করল মনে মনে।

কটক থেকে ডক্টর ব্যানার্জি ফিরে এলেন কদিন পর।

ওগো, ওই এ-ডি-সি ছেলেটিকে একদিন খেতে বলেছিলাম…

তাই নাকি?

বেশ ছেলেটি।

হ্যাঁ আমারও বেশ লেগেছে। ডক্টর ব্যানার্জি হাতের বইটা নামিয়ে রেখে বলেন, নিশ্চয়ই ভালো ফ্যামিলির ছেলে।

ক্যাপ্টেন রায়ের পরিবারের কোনো খবরই জানেন না মিসেস ব্যানার্জি। তবুও বললেন, তাতো বটেই।

হাসতে হাসতে ডক্টর ব্যানার্জি বললেন, গভর্নরের চাইতে এ-ডি-সি-কেই তো প্রফেসার মঙের বেশি ভালো লেগেছে।

উনি ঠিকই বলেছেন।

পরে ডক্টর ব্যানার্জি মণিকাকে বলেছিলেন, হারে বুলু, আমি যখন ছিলাম না, তখনই তোর মা ওই এ-ডি-সি ছেলেটিকে খেতে বলল?

মণিকা শুধু একটু হাসল। কিছু বলল না।

আর একদিন ওকে আসতে বলিস।

মা-কে বলো। মার সঙ্গে খুব ভাব হয়েছে।

ডক্টর ব্যানার্জির মজা লাগে নিজের স্ত্রীর কথা শুনতে। তোর মা-র ব্যাপারই আলাদা।

এ-ডি-সি তো বেশ চালাক আছে। মাসিমা-মাসিমা করে বেশ জমিয়েছে।

প্রথম দিনই যখন মাসিমা বলেছে তখন তো তোর মা গলে গেছে।

আর্মি লাইফে একটা উত্তেজনা আছে। কাজকর্মের মাঝে অবকাশ থাকলেও অবসর নেই। কখনো নিজেকে নিয়ে, কখনো পরকে নিয়ে। কখনও বা সবাইকে নিয়ে। পরিচিত, অপরিচিত, আধা পরিচিতদের নিয়ে। কোথাও ব্যারাকে, কোথাও মেসে, কোথাও কোয়ার্টারে থেকেছে। একা একা। তবে নিঃসঙ্গ হয়নি কোনোদিন। আর্মি বা এয়ারফোর্সে কেউ নিঃসঙ্গ নয়। ওরা খায়-দায়-ঘুমোয় একসঙ্গে। নাচ-গান মদ খায় একসঙ্গে। যুদ্ধ করে একসঙ্গে। মৃত্যুর সময়ও ওরা নিঃসঙ্গ নয়। দল বেঁধে মরে ওরা।

রাজভবনে আসার পরই সুরটা পাল্টে গেল। এখানে নিজের নিজের তালে সবাই মত্ত। যারা দল বেঁধে মরতে শিখেছে, তারা যেন এখানে বেমানান। এরা এক টুকরো রুটি কাউকে দিতে পারে না, নিজেরা কে খেতে ওস্তাদ!

এতদিনের অভ্যাস, এতদিনের ট্রেনিং ভুলতে পারেননি। ধীরে ধীরে বহু দুরে সরে গিয়েছিলেন। পাশাপাশি কাজ করেছেন কিন্তু কাছাকাছি আসতে পারেননি। মতের মিল হয়নি।

আমজাদ-রমজানের সঙ্গে গল্প করেছেন। ডায়ানা-ডরোথির গল্প শুনেছেন। পুরনো দিনের গভর্নমেন্ট হাউসের কাহিনি শুনেছেন, অফিসারদের নোংরামি জেনেছেন। তাদের নিয়ে সময় কেটেছে। ব্যস, তার বেশি কিছু নয়। লাইটার জ্বালিয়ে সিগারেট ধরাতে গেলে সতীনাথের অতৃপ্ত আত্মার ছবিটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আশেপাশেই কোথাও মিস বিশ্বাসকে দেখতে পায়।

সময় কাটে আরো নানা ভাবে। সভা-সমিতিতে, পার্টি রিসেপশনে ককটেলে। তবুও ক্যাপ্টেন নিঃসঙ্গ থেকে যায়।

সেদিন রাত্রে নেমন্তন্ন খেয়ে আসার পর অনেকবার টেলিফোন করতে ইচ্ছা করেছে, আগ্রহ হয়েছে। তবুও করেননি। লজ্জা, সংকোচ আর কিছু আত্মসম্মানবোধ বাধা দিয়েছে।

আর দেরি করলেন না। হাজার হোক একটা ধন্যবাদ জানানো কর্তব্য। বেটার লেট দ্যান নেভার।

আমি ক্যাপ্টেন রায় বলছি।

ডক্টর ব্যানার্জি প্রায় বেরিয়ে গিয়েছিলেন। টেলিফোনের ঘণ্টা শুনে তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছেন।

কেমন আছ?

ভাল। আপনি ভালো আছেন?

হ্যাঁ, এর মধ্যে এসো। আমি একটু বেরুচ্ছি। তুমি কথা বলল।

ডক্টর ব্যানার্জি চলে গেলেন।

মণিকা ভেবেছিল কোনো পুরনো ছাত্র হবে।

আমি মণিকা বলছি।

আমি ক্যাপ্টেন রায়।

হঠাৎ এক ঝলক হাসি ছড়িয়ে পড়ল মণিকার মুখে। আপনি! এতদিন পর মনে পড়ল?

আপনার বুঝি রোজ মনে পড়ত?

মনে পড়ত বৈকি! কিন্তু সে কথা কি বলা যায়? স্বীকার করা যায়?

আমরা সাধারণ মানুষ, আমাদের কথা বাদ দিন।

আপনিও তো একবার টেলিফোন করতে পারতেন।

একবার কেন, একশো বার করতে পারি, কিন্তু আপনাকে কি পাওয়া যাবে?

আপনার জন্য, আই অ্যাম অলওয়েজ অ্যাট ইওর সার্ভিস।

মজা করে মণিকা। সিরিয়াসলি? নাকি রাজভবনের প্রোটোকলের মতো কথা বলছেন? বুড়ো গভর্নরের চাইতে আপনাদের সান্নিধ্য নিশ্চয়ই মোর ইন্টারেস্টিং।

ক্যাপ্টেন যে বলতে চাইছিল ওরই সান্নিধ্যে মোর ইন্টারেস্টিং, তা বঝুতে কষ্ট হল না মণিকার। হাজার হোক পঁচিশটি বসন্ত-মল্লিকার সৌরভে ভরেছে দেহ মন। তাই তো বারতা পেয়েছি মনে মনে সব নিঃশ্বাস পরশনে কিন্তু বলতে পারে না কেন বঞ্চনা কর মোরে, কেন বাঁধ অদৃশ্য ডোরে-দেখা দাও দেখা দাও দেহ মন ভরে মম নিকুঞ্জবনে।

বলতে পারে না অনেক কথাই। কিন্তু মন? মুখে শুধু বলল, সেইজন্যই তো এতদিন পর টেলিফোন করছেন। একটু থেমে আবার বলল, বাবা বলছিলেন আপনি যদি একদিন আসতেন…

শুধু আপনার বাবাই বলছিলেন?

মা তো চান আপনি রোজই আসুন।

তাই নাকি? এনিবডি এলস্?

মণিকার মুখে একটু হাসির রেখো ফুটে ওঠে। এই কিছুদিন রাজভবনে থেকেই তো বেশ পলিটিক্স শিখেছেন।

কেন বলুন তো?

এসব কথার অর্থ নেই, তাৎপর্য শুধু মনে মনে। রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে থাকে হাহানা, ছড়িয়ে পড়ে তার সৌরভ।

শেষে ক্যাপ্টেন বলে, আমি তবুও একবার ঘুরে এসেছি। এবার তো আপনার একবার আসা উচিত।

আসব বৈকি। আপনি এর মধ্যে একবার আসুন। তারপর নিশ্চয়ই যাব।

ঠিক তত?

নিশ্চয়ই।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *