রাগের মাথায় বললেও, কথাটা ঠিকই বলেছিল নাহার। মাহজাবীন আসলে ইয়াসমিনের চেয়েও ধুরন্ধর। বাইরে থেকে কিছু বোঝা যায় না, ভেতরে ভেতরে কী হচ্ছে। এমন চমৎকার তার অভিনয় যে মিস্টার আলির মতো দশ ঘাটের পানি খাওয়া লোক মাহজাবীনের সম্পর্কে একেবারে উলটো ধারণা নিয়ে বসে আছেন।
ইয়াসমিন যে বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে মাহজাবীন তা গতকালই জানত। দুবোনে এ নিয়ে লম্বা পরামর্শও হয়েছে।
আমি কি গোবৎস, বীন, যে একজন কৃষক আমাকে কিনিবার জন্য দেখিতে আসিতেছে? কাল তোমার বিবাহ দিবে, পরশু আমাকেও কাহারো হাতে তুলিয়া দিবে।
এই পিতামাতার হাতে পড়িয়া জীবন একশেষ হইল। হাত খরচের অর্থ পাই না চুরি করিতে হয়, বাহিরে গেলে তিরস্কার শুনিতে হয়, ফোন ব্যবহার করিলে পিতা সর্বস্বান্ত হইবার অভিনয় করেন।
আবার মায়ের বাঙালি বান্ধবীরা আমাদের চলন লইয়া যখন উদ্বেগ প্রকাশ করেন, কেন আমরা গা ঢাকিয়া পোশাক পরি না অনুযোগ করেন, কেন আমরা বাংলা বলিতে পারি না বলিয়া খুঁত ধরেন, তখন মা একেবারে আমাদের লইয়া পড়েন।
উহারা কেবল কারি রাধিতে জানে, জীবন সম্পর্কে কোনো ধারণা নাই।
আমাদের আর-আর বন্ধুরা কী সুখে আছে!
তাই আমি চলিলাম। সাবধান, প্রকাশ না পায়।
পাইবে না।
প্রকাশ হইলে তোমারই মন্দ। তোমাকে আর বাহির হইতে সাহায্য করিতে পারিব না, বীন। ভান করিবে যেন তুমি কিছুই জান না।
তোমাকে আর শিখাইয়া দিতে হইবে না। আমার বয়স যদি মোল হইত, আমিও বাড়ি ছাড়িয়া দিতাম। তোমার মতো স্বাধীন হইতাম।
সেদিন দেখিয়াছি, মালেকা, তোমার বয়সী, দিব্যি বাড়িতে সিগারেট খাইতেছে। তাহার মা কিছুই মনে করে নাই। আমরা বিয়ার লেমনেড দিয়া খাই, তাহার পরে কড়া ঝাঁঝের চুয়িংগাম খাই, তবু আশঙ্কা হয় মা ধরিয়া ফেলিবেন। কেন, আমার কি বয়স হয় নাই? আমি কি আপনার ভালোমন্দ বুঝি না।
খাঁটি কথা বলিয়াছ। তবে, আমাকে তো চুপ করিয়া সহ্য করিতেই হয়। পনের চলিতেছে। আর এক বছর পরে কাহারো তোয়াক্কা করিব না। অ্যালিসনের মতো আমিও সিনেমায় যাইব, জিনজার এল দিয়া হুইস্কি পান করিব, নাচিব, গাহিব, পায়ে হাঁটিয়া বিশ্বভ্রমণ করিব। তুমি ভাগ্যবতী, সতের বৎসর হইয়াছে, তুমি চলিলে, আমি পড়িয়া রহিলাম।
বাড়ি থেকে বেরুবার সময় মা কাছে কাছেই ছিলেন বলে ইয়াসমিন নিজের কিছু কাপড় আর দরকারি জিনিস দুটো ব্যাগে গুছিয়ে রেখেও সঙ্গে নিয়ে যেতে পারে নি। ব্যাগ দেখলেই প্রশ্ন হতো, এমনকি যেমন মা, তল্লাশীও হয়ে যেতে পারত। অবশ্য, একবার বেরিয়ে যাবার পর ফিরে এসে ব্যাগ এবং নিজের সব কিছু নিয়ে যেতে বাধা নেই। মোল বছর বয়স কবেই পার হয়ে গেছে, এখন পুলিশও তাকে বাড়ি ফিরতে বাধ্য করতে পারবে না, এমনকি এখন সে সোজা ডাক্তারের কাছে গিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি চাইতে পারে, মা-বাবার অনুমতি লাগবে না। তবু বাড়ি ছেড়ে পরদিনই বাড়িতে ব্যাগ নিতে আসাটা সহজ নয়। মা-বাবা কান্নাকাটি করতে পারে, এবং হাজার হোক তারা মা-বাবা, যত সেকেলেই হোক তারা একেবারে বুকের ওপর দাঁড়িয়ে গলায় পা দেয়া যায় না। তাই শেষ পর্যন্ত মাহজাবীনকে বলে যেতে হয়, সে যেন যে করেই হোক অলবানি স্ট্রীটে ব্যাগ দুটো না হোক অন্তত একটা আজ পৌঁছে দেয়।
দুটো নেয়া মুশকিল হবে। মাহজাবীন বোনের ঘরে ঢুকে, খাটের তলা থেকে ব্যাগ দুটো বের করে দ্রুত হাতে বিশেষ জরুরি জিনিস বেছে নেয়। নিয়ে, একটাতে ভরে ফেলে। তারপর, নিজের ঘরে গিয়ে পড়ার লাইব্রেরি থেকে গত সপ্তাহে ধার করে আনা দুখানা বই সেই ব্যাগের ওপরে সাজিয়ে রাখে।
ঘর থেকে উঁকি দিয়ে দ্যাখে, মা কোথায়।
নাহার তখন আপিস ঘরেই। মিস্টার আলি বাইরে থেকে ফেরেন নি।
নিঃশব্দে দরোজা খুলে ঢোকে মাহজাবীন। ইতস্তত করে বলে, মাম, নাসরিন ক্ষুধার্ত।
চৈতন্য হয় নাহারের। সকালবেলায় এত বড় একটা ধাক্কায় ছোট মেয়েটির খাওয়ার কথা একবারেই ভুলে গিয়েছিল। উদ্বেগ আর অপরাধবোধ মিশে গিয়ে তাকে ঝাঝালো করে তোলে।
কেন, তুমি কিছু করে দিতে পার নি? দেখছ না আমি আপিসে আছি?
তুমি অহেতুক বকিতেছ। আমি খোঁজ নিতে আসিযাছি, তুমি কিছু খাইবে কি না। নাসরিন এবং আমার বিফবার্গার করিতেছি। তুমি খাইবে তো তোমাকেও করিয়া দিই।
মেয়েটির কথায় হঠাৎ কোমল হয়ে যায় নাহারের মন। আহা, পেটের মেয়ে তো, বড়টির মতো নিষ্ঠুর নয়, মায়ের মন খারাপ দেখে কোনোদিন যা করে না, আজ খাবার তৈরি করে। দিতে চাইছে।
নাহার মেয়ের হাত ধরে কাছে টানে।
কাছে আয়।
মাহজাবীন ভেতরে ভেতরে খুশি হয়। মাকে রাজি করানো তাহলে শক্ত হবে না। চাইকি ঘণ্টা তিনেকের ছুটিও পাওয়া যেতে পারে। তাহলে সোজা অলবানি স্ট্রীট।
নাহার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, মিনার মনে কি দয়ামায়া নেইরে? বাবা-মা, ছোট ছোট দুটো বোন, কারো জন্য মন কাঁদল না?
মাহজাবীন নাহারের গালে ছোট্ট করে চুমো দিয়ে বলে, আর ভাবিও না, মাম। এখন কিছু আহার কর। আমি আনিয়া দিতেছি।
পাখির মতো উড়ে যায় মাহজাবীন। নাহারের দীর্ঘশ্বাস পড়ে। দুটো মেয়ে দু রকম হলো কেন?
ছোটটিই বা কেমন হবে, কে জানে? আল্লাকে স্মরণ করে নাহার। দেশের বাড়ির জন্য মন হঠাৎ আকূল হয়ে ওঠে। এর চেয়ে অনেক ভালো ছিল ঢাকায় থাকা।
.
ও মা, এর মধ্যে সব করে ফেলেছিস? আমার যে খিদে নেই মা। মিনার জন্যে কিছু ভালো লাগছে না।
তোমার ভালো লাগিবে এবং তুমি আহার করিবে। নহিলে বুঝিব, তুমি আমাদের ভালোবাস না, বুবুকেই ভালোবাস।
অগত্যা খাবার তুলতেই হয় নাহারকে। নাসরিনকে কোলে নিয়ে খেতে থাকে সে।
মাম। মাহজাবীন সাহস করে ডাক দেয়।
কীরে?
আজ শনিবার। পাঠাগারে বই ফিরাইয়া দিবার দিন।
নাহারের একটু খটকা লাগে। এর আগেও গত শনিবার মাহজীবন বই ফেরাতে গেছে, তার জন্যে ঘটা করে অনুমতি নেয় নি। বইয়ের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বলেছে, লাইব্রেরিতে যাচ্ছি।
মায়ের মুখে সহসা মেঘ লক্ষ করে মাহজাবীন তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, তোমাকে একা ফেলিয়া যাইতে চাহি না। অথচ, আজ বই না ফিরাইলে জরিমানা দিতে হইবে।
নাহারের মন থেকে মেঘ কেটে যায়। ইয়াসমিন অমন একটা কাণ্ড করেছে বলেই মেজ মেয়ে মায়ের কথা এত বেশি করে ভাবছে। মাহজাবীনের দিকে তার সমস্ত স্নেহ ঝাঁপিয়ে পড়ে।
বেশ তো, যা। দেরি করিস না। বাড়িতে মেহমান আসবে।
হাঁ, মাম, তাহাকে কী বলিবে?
জানি না, কী বলব। সে রওয়ানা হয়ে গেছে, ফোন করে মানা করবারও জো নেই।
আমি না হয় একটা মিথ্যা বলিয়া দিব। তাহাকে গল্পে মাতাইয়া রাখিব। সে কেমন হয়, মাম?
নাহার প্রীত চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে— বুড়ির মতো কথা তোর!
মাম, পাঠাগারের নিকটেই চন্দনা পৌলদের বাড়ি। ফিরবার পথে চন্দনাকে দেখিয়া আসিব?
উদ্বিগ্ন চোখে মাহজাবীন মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। অনুমতি আদায়ের চেয়েও এই মুহূর্তে তার বড় ভাবনা, মা মিথ্যেটুকু ধরতে পারল কি?
তাহলে নাসরিনকেও নিয়ে যা।
নাসরিন এখনো পড়ছে। সকালের চার্লি ব্রাউন শেষ হয়ে, আরেকটা শেষ হয়ে, তিন নম্বর চার্লি ব্রাউনের বই তার হাতে এখন। নীরবে পড়ে যাচ্ছে আর খাচ্ছে। কোনোদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই।
বাঁচিয়ে দিল নাসরিনই।
চন্দনাকে আমি পছন্দ করি না। তাহার মাথায় উকুন আছে।
মাহজাবীন ভাংচি কাটে।
উকুন তোমার মাথায়, ক্ষুদে শয়তান।
আমার মাথায় উকুন তোমার মাথা হইতে আসিয়াছে।
নাহার বাধা দেয়।
এই শুরু হলো দুজনের। চুপ কর। আমার মন ভালো নেই।
নাসরিন সহজে ছাড়ে না। মাকে সে মনে করিয়ে দেয়, বুবুর যে ঘর খালি হইয়াছে, আমাকে সেখানে দখল দিবে তো? আমি এই মুখরা বালিকার সহিত এক ঘরে বাস করিব না।
নাহার ধমক দেয়, আহ, রিনা। বুবুকে এভাবে তে নেই।
আমি বলিব।
না, বলবে না।
ঠাস করে পিঠে কিল বসিয়ে দেয় নাহার।
বেয়াদব মেয়ে। বীনা, তুই যাবি তো যা। আমাকে আর তোরা জ্বালাসনে। আমার চোখের সমুখ থেকে দূর হয়ে যা।
মাহজাবীন নাহারের চোখের আড়ালে নাসরিনকে ছোট্ট করে ভাংচি কেটে দ্রুত বেরিয়ে যায়। ওপরে গিয়ে ব্যাগটা নিয়ে তরতর করে নামে। এক মুহূর্ত দাঁড়ায় না। পাছে, মায়ের মত বদলে যায়। যাবার সময় হল থেকে চিৎকার করে বলে যায়, বিদায়, মাম।
টেলিফোন বেজে ওঠে, মাহজাবীনকে তাড়াতাড়ি ফেরার কথা বলবার আগেই।
নাহার ফোন তুলে নেয়।
শাপলা ট্রাভেল এজেন্সি। হ্যালো।
করিম বলিতেছি।
আপনার টিকিট তো?
হাঁ, প্রস্তুত আছে কি? কখন আসিব? আপনি কি বাংলা বলেন।
হাঁ, আমি মিসেস আলি। উনি একটু পরেই ফিরবেন। আপনি তিনটের দিকে আসুন।
আচ্ছা। আচ্ছা, কবেকার ফ্লাইট বলতে পারবেন, মিসেস আলি?
উনি বলতে পারবেন।
জানতে পারলে ভালো হতো। টেলিগ্রাম করে দিতে পারতাম। বাংলাদেশের ব্যাপার কদ্দিনে পৌঁছায়। আমার আবার আর্জেন্ট ব্যাপার। আচ্ছা, তিনটের সময় আসব।
ফোন রেখে দিতে না দিতেই কাচের ভেতর দিয়ে স্বামীকে দেখতে পায় নাহার। ক্লান্ত পায়ে ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে আসছে। রাস্তার ওপারে ক্রসিংয়ে এসে দাঁড়ান আলি। সিগন্যাল দেখে দ্রুত পায়ে পথ পেরিয়ে আবার ধীর পায়ে এগিয়ে আসছেন। হাতের ব্রিফকেসটাও যেন আজ বড় ভারি মনে হচ্ছে। একদিকে একটু ঝুঁকে পড়েছেন।
আলি দরোজা ঠেলে ঢুকতেই নাহার উঠে দাঁড়াল। নাহারের চোখে মুখে ফিরে এলো উদ্বেগ, সকালবেলার সমান মাত্রায়।
টেবিলের ওপর ব্রিফকেসটা নামিয়ে রেখে আলি বলেন, থানায় গিয়েছিলাম। বলে চুপ করে বসে থাকেন। অনেকক্ষণ আর কিছু বলেন না।
কেন, থানায় কেন? কী হয়েছে ইয়াসমিনের?
নিজেকে ক্ষমা করতে পারে না নাহার। এই সম্ভাবনাটা তার মাথায় আসে নি কেন? মেয়েটি বাড়ি না পালিয়ে আসলে কোনো বিপদেও পড়তে পারে তো? অপহরণ? ধর্ষণ? খুন?
চুপ করে থেকো না, আমাকে বল কী হয়েছে।
না, কিছু হয় নি।
তাহলে থানায় গেলে কেন?
জানিয়ে রাখলাম ওদের। যেখানেই আছে, বেঁচে আছে নিশ্চয়ই। নইলে কোনো দুর্ঘটনার কথা দুজনের কারোরই মনে এলো না কেন? ট্রেনে খবরের কাগজে, কারা ষোল বছরের একটা ইংরেজ মেয়েকে রেপ করে মেরে গেছে, সেই খবর দেখে, মনটা কেমন করে উঠল। গেলাম থানায়। মেয়ের বয়স আইনের চোখে সাবালিকা। স্বেচ্ছায় গেলে তো আর পুলিশ ফিরিয়ে আনতে পারে না। কিন্তু ওদের ব্যবহারটা দেখে অবাক হলাম। আমার গায়ের রঙ দেখে কিনা জানি না, প্রথমে অনেকক্ষণ পাত্তাই দিল না, দাঁড়িয়ে থাকতে হলো, অথচ লন্ডনের পুলিশের কত নাম কত গল্প শুনেছি, নিজেও দেখেছি, আগে এ রকম ছিল না, এখন যেন অন্য রকম, আমার কাছে সব শুনে, তেমন কোনো মেয়ের কিছু হয়েছে বলে তাদের জানা নেই এই কথাটা এমনভাবে বলল, যেন আমি মেয়ের বাবা নই, অন্য কেউ, বাইরের কেউ খামোখা বিরক্ত করতে গেছি। তারপর নাহার, পুলিশ একগাদা আমাকে উপদেশও দিল।
আলি আবার অনেকক্ষণ চুপ করে থাকেন যেন মনে মনে আবার থানায় ফিরে যান।
কী বলল তারা?
সে আর তুমি শুনে কী করবে? স্ত্রীর দিকে করুণ চোখ তুলে আলি তাকান। আজকাল লন্ডনে বহু ভারতীয় মেয়ে বেশ্যাবৃত্তি করছে। ঐ যে প্লে-বয় বলে একটা খারাপ কাগজ আছে, ওতে নাকি ভারতীয় কোনো এক মেয়ে, কোথায় কোন ব্যাংকে কাজ করে, তার সব বিবস্ত্র ছবি বেরিয়েছে। সেই থেকে ভারতীয় মেয়েদের নাকি খুব চাহিদা। মানে বুঝতেই পারছ, পুলিশ বলতে চাইল, সে রকম কোনো হাবভাব মেয়ের মধ্যে লক্ষ করেছি কি না। কী আর বলব কাকে? নিজের মেয়েকে নিয়ে এ সব কথা শোনাও, কী বলে, মরণতুল্য। নাহ, আমাদের জন্য পুলিশেরও আর কোনো সহানুভূতি নেই দেখলেই তো, দু দুবার আমার এই আপিসের কাচ দুধের বোতল মেরে শাদা ছোকরাগুলো ভাঙল, করল কিছু পুলিশ? এসে শুধু জিগ্যেস, কে মেরেছে, দেখতে কেমন, আবার দেখলে চিনতে পারব কিনা, সাত সতের। আরে, চিনতেই যদি পারব, দেখেই যদি থাকব, তো ছেড়ে দিয়েছি তাকে? দু দুবার ঘটনা, তোমরা একটা পাহারার বন্দোবস্ত করতে পার না? নজর রাখতে পার না? কিছু না পার, দুটো আশা ভরসা তো দিতে পার? নাহ, নাহার, আমার মন উঠে গেছে আজ থানায় গিয়ে। বয়স যদি থাকত, দেশে গিয়ে আবার সব শুরু করবার মতো উপায় যদি থাকত, লাথি মেরে চলে যেতাম। ইয়াসমিন যদি ফিরে আসে, আসবে, কি বল?— এলে ওকে আমি ঢাকায় পাঠিয়ে দেব। মিয়া ভাইয়ের কাছে থাকবে। তারও মেয়ে আছে, ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে। মাহজাবীনকে পাঠিয়ে দেব। দু বছর পরে নাসরিনকেও। ও আমি কাউকে আর এখানে রাখব না!
ইতস্তত করে নাহার বলে, আর আমরা?
হঠাৎ শূন্য চোখে স্ত্রীর দিকে তায় আলি। তারপর দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নেয়। ব্রিফকেস খুলে টিকিট কাগজপত্র বের করে চশমা চোখে দিয়ে পড়বার চেষ্টা করেন। অল্পক্ষণ পরেই ধরা পড়ে, চশমার কাচ যেন অস্বচ্ছ হয়ে গেছে, ধোঁয়াটে লাগছে।