৭
জোয়ার্দার শায়লার সামনে সংকুচিত ভঙ্গিতে বসে আছেন। শায়লা বললেন, রসমালাই এনেছেন?
জোয়ার্দার বললেন, না।
আনেন নি কেন? যতবার আমার এখানে আসবেন ততবার রসমালাই আনতে হবে।
আচ্ছা আনব।
আমি রাত একটায় টেলিফোন করেছিলাম এই নিয়ে কি বাসায় কোনো সমস্যা হয়েছে?
না।
আপনার এক শ্যালকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তার কথাবার্তা কীরকম যেন লাগল। বাদ দিন ঐ প্রসঙ্গ। আপনার শরীর কেমন?
ভালো।
চা খাবেন?
না।
না বললে হবে না। আপনি যতবার আসবেন আমার সঙ্গে চা খেতে হবে।
জোয়ার্দার বললেন, আপনার ছেলেমেয়ে কী?
শায়লা চা বানাতে বানাতে বললেন, আমি বিয়ে করি নি। কাজেই ছেলেমেয়ের প্রশ্ন আসছে না। একটা মেয়েকে দত্তক নিয়েছি। তার নাম সুপ্তি। তিন মাস বয়সে দত্তক নিয়েছিলাম। দিনরাত ঘুমিয়ে থাকত বলে নাম দিয়েছিলাম সুপ্তি। এখন তার বয়স আট। দিনরাত জেগে থাকে। আপনি কি চায়ে চিনি খান?
খাই।
শায়লা বলল, ঝিম ধরে চা খাবেন না। চা খেতে খেতে গল্প করুন।
জোয়ার্দার বললেন, কারো পক্ষে কি মৃত মানুষকে দেখা, তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব?
আপনি মৃত কাউকে দেখছেন? তার সঙ্গে কথা বলছেন?
হুঁ। বরকতউল্লাহ সাহেব। আমাদের অফিসে কাজ করতেন। আমার সিনিয়র ছিলেন। হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।
মৃত মানুষটার সঙ্গে কোথায় দেখা হয়?
আমার বাসায়। উনি বেশিরভাগ সময় সোফায় বসে টিভি দেখেন।
শায়লা বললেন, আপনার মোবাইলে কি ছবি তোলার অপশন আছে?
জানি না আছে কি না। মোবাইল আমার সঙ্গে নেই। রঞ্জু নিয়ে নিয়েছে।
আরেকটা সেট কিনতে পারবেন না যেখানে ছবি তোলার ব্যবস্থা আছে।
খালেককে বললেই কিনে দেবে। সে এইসব ব্যাপারে খুবই দক্ষ।
শায়লা বললেন, ছবি তোলা যায় এমন একটা মোবাইল সেট আপনি কিনবেন। বরকতউল্লাহ সাহেবের কয়েকটা ছবি তুলবেন। পারবেন না?
পারব।
বিড়ালটা কি এখনো আসে?
আসে।
সেই বিড়ালটার ছবি তুলবেন। আপনার মেয়ের কোলে যে বিড়াল থাকে তার ছবি তুলবেন।
আচ্ছা তুলব। এখন উঠি?
শায়লা বললেন, এখন উঠবেন না। আরো কিছুক্ষণ বসবেন। আমি ছোট্ট একটা বক্তৃতা দিব। বক্তৃতাটা মন দিয়ে শুনবেন। ঠিক আছে?
ঠিক আছে।
শায়লা সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন, আমরা কঠিন নিয়মের এক জগতে বাস করি। নিয়মের সামান্য নড়চড় হলেই জগৎ ভেঙে পড়বে। জগৎকে পদার্থবিদ্যার সূত্রে মেনে চলতে হয়। কোনো মৃত মানুষ যদি আপনার সঙ্গে বসে হিন্দি ছবি দেখে তা হলে পদার্থবিদ্যার সূত্র কাজ করবে না।
জোয়ার্দার ক্ষীণ গলায় বললেন, তা হলে কি আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে?
শায়লা বলল, সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। তবে আমি নিজে মনে করি আপনি অসম্ভব কল্পনাবিলাসী একজন মানুষ। যে কোনো বিষয় নিয়ে প্রচুর কল্পনা করেন বলে একসময় কল্পনাটা নিজের কাছে সত্যি মনে হতে থাকে। বুঝতে পারছেন?
হুঁ।
ভাবির সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কী রকম?
ভালো না।
সমস্যাটা কার? ভাবির না আপনার?
আমার। সে আমার সমস্যাটা ঠিক বুঝতে পারছে না।
আপনি বুঝাবার চেষ্টা করছেন না বলেই বুঝতে পারছেন না। একবার ভাবিকে সঙ্গে করে নিয়ে আসুন না। দুজনের সঙ্গে কথা বলি। আমার কাজটা তখন হবে ম্যারেজ কাউন্সিলারের।
আচ্ছা আমি নিয়ে আসব। অনিকাকেও নিয়ে আসব।
শায়লা বললেন, চেম্বারে আনার দরকার নেই। কোনো একটা রেস্টুরেন্টে দুপুরের লাঞ্চ করলাম।
জি আচ্ছা। এখন কি আমি উঠব?
উঠুন। বাসায় যাবেন?
জি।
বাসায় গিয়ে যদি দেখেন বরকত সাহেব সোফায় শুয়ে আছেন, ছবি তুলতে ভুলবেন না।
ছবি কীভাবে তুলব? মোবাইল ফোন তো কেনা হয় নি।
সরি ভুলে গিয়েছিলাম। আমার কাছে একটা ডিজিটাল ক্যামেরা আছে। অপারেশন খুব সহজ। টিপলেই ছবি। ক্যামেরাটা নিয়ে যান।
জি আচ্ছা।
.
রাত একটা দশ। জোয়ার্দারের ঘুমাতে যাবার কথা। তিনি ঘুমাতে যান নি। বরকতউল্লাহর পাশে বসে আছেন। দু’জনের দৃষ্টিই টিভির দিকে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফির অনুষ্ঠান হচ্ছে। পেঙ্গুইন পাখি দেখাচ্ছে। পাখির একটা দল বরফের ওপর দাঁড়িয়ে। অন্য দল পানিতে। পানির দলটা বরফে উঠতেই বরফের দল নেমে যাচ্ছে। ওঠা-নামা চলছেই।
জোয়ার্দার একটু আগে খিচুড়ি খেয়েছেন। খিচুড়ি খেতে ভালো হয়েছে। ভদ্রতা করে তিনি বরকতউল্লাহকে খিচুড়ি খেতে বলেছিলেন। বরকতউল্লাহ জবাব দেন নি। একজন মৃত মানুষ তাঁর পাশে বসে আছে এটা একটা বিস্ময়কর ব্যাপার। বরকতউল্লাহকে বললেন, চা খাবেন?
বরকতউল্লাহ না—সূচক মাথা নাড়লেন
রাতে ঘুমাবেন? গেস্টরুম খালি আছে। গেস্টরুমে ঘুমাতে পারেন।
বরকতউল্লাহ মূর্তির মতো বসে রইলেন। তিনি রাতে ঘুমাতে যাবেন এ রকম মনে হচ্ছে না। জোয়ার্দারের বাসা খালি। খালি বাসায় জামাল এবং বিড়ালটা চলে আসে। আজ তারা আসে নি। জোয়ার্দার টিভির অনুষ্ঠানের দিকে নজর দিলেন। পেঙ্গুইনরা এখন গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের ওপর প্রবল তুষারপাত হচ্ছে। জোয়ার্দার নিজের মনেই বললেন, ঘটনা কী?
বরকতউল্লাহ বললেন, এরা ডিম পাহারা দিচ্ছে।
জোয়ার্দার বললেন, ও আচ্ছা।
বরকতউল্লাহ বললেন, এসব প্রোগ্রাম মন দিয়ে দেখতে হয়।
জি জি।
ডিম পাহারা দিচ্ছে পুরুষ পেঙ্গুইনরা।
ও আচ্ছা।
ওদের সোসাইটিতে এটাই নিয়ম।
জোয়ার্দার বললেন, ইন্টারেস্টিং!
বরকতউল্লাহ বিরক্ত গলায় বললেন, ইন্টারেস্টিং কিছু না। প্রাণীদের ভিন্ন ভিন্ন নিয়মে চলতে হয়। আপনার টেলিফোন বাজছে। টেলিফোন ধরুন। ফোন হাতের কাছে রাখতে হয়। ফোন ধরতে যাবেন, অনেকটা প্রোগ্রাম মিস করবেন।
তা হলে কি টেলিফোন ধরব না?
আপনার ইচ্ছা।
জোয়ার্দার ইতস্তত করে বললেন, আমি কি আপনার একটা ছবি তুলতে পারি?
বরকতউল্লাহ বিরক্ত মুখে বললেন, ছবি তোলার প্রয়োজনটা কী? একটা ছবি দেখছি তার মধ্যে বদারেশন। মোবাইলে ক্যামেরা আসায় এমন বদারেশন হয়েছে সবাই ছবি তোলে।
জোয়ার্দার বললেন, স্যার আপনি বিরক্ত হলে ছবি তুলব না।
বরকতউল্লাহ বললেন, শখ করেছেন যখন তুলে ফেলেন। মাথার ডান দিক থেকে তুলবেন বাঁদিকে চুল কম।
জোয়ার্দার ছবি তুললেন। আবার টেলিফোন বাজছে।
জোয়ার্দার টেলিফোন ধরার জন্য শোবার ঘরে গেলেন। টেলিফোন করেছেন সুলতানা। তাঁর গলার স্বরে আতঙ্ক এবং হতাশা।
তুমি কি একটু আসতে পারবে?
কোথায় আসব?
রঞ্জুর বাসায় আসবে। আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি। রঞ্জুর ড্রাইভার তোমাকে নিয়ে আসবে। একটা সমস্যা হয়েছে।
জোয়ার্দার বললেন, ও আচ্ছা।
সুলতানা বললেন, ও আচ্ছা আবার কী? সমস্যাটা কী হয়েছে জানতে চাইবে না?
কী সমস্যা?
রঞ্জু তার বাসার বেডরুমে আটকা পড়েছে। বের হতে পারছে না।
দরজা লক হয়ে গেছে?
কী হয়েছে আমি জানি না, তোমাকে আসতে বলছি তুমি আস।
আমি এসে কী করব? আমি তো চাবি বানানোর মিস্ত্রি না। এত রাতে চাবি বানানোর মিস্ত্রি পাওয়াও যাবে না।
তোমাকে আসতে বলছি তুমি আস। আরো ঘটনা আছে।
আর কী ঘটনা?
রঞ্জুর সঙ্গে তুহিন-তুষারও আটকা পড়েছে। কেলেঙ্কারি ব্যাপার।
কেলেঙ্কারি ব্যাপার হবে কেন?
এত রাতে দুটা কাজের মেয়ে রঞ্জুর শোবার ঘরে। কেলেঙ্কারি না?
চা-কফি কিছু নিশ্চয়ই দিতে গিয়েছিল।
তোমাকে যুক্তি দিতে হবে না। তোমাকে আসতে বলছি আস। গাড়ি এর মধ্যে পৌঁছে যাবার কথা। রাস্তা ফাঁকা।
জোয়ার্দার বললেন, আমার আসতে সামান্য দেরি হবে। টিভিতে পেঙ্গুইনদের ওপর একটা প্রোগ্রাম দেখছি। প্রোগ্রাম শেষ হলেই রওনা দেব। প্রোগ্রামের মাঝখানে উঠে গেলে উনি হয়তো রাগ করবেন।
উনিটা কে?
ইয়ে আমার এক সহকর্মী। হঠাৎ চলে এসেছেন।
তোমার কথাবার্তার আগা-মাথা কিছুই বুঝতে পারছি না। এত রাতে বাসায় সহকর্মী?
জোয়ার্দার চুপ করে রইলেন।
শায়লা নামের ঐ মাগি চলে এসেছে?
না না, বরকতউল্লাহ সাহেব এসেছেন। আমার কলিগ।
গাড়ি পৌঁছামাত্র তুমি গাড়িতে উঠবে। এ বিষয়ে আমি দ্বিতীয় কোনো কথা শুনতে চাই না।
আচ্ছা।
জোয়ার্দার বসার ঘরে ফিরে গেলেন। বরকতউল্লাহ তাঁর দিকে তাকিয়ে বিরক্ত গলায় বললেন, আপনি ইন্টারেস্টিং পার্টটাই মিস করেছেন। যেসব পেঙ্গুইন মায়েদের ডিম নষ্ট হয়ে যায় তারা অন্যের ডিম চুরি করে।
বলেন কী!
চুপ করে বসে দেখুন। কথা বলে সময় নষ্ট করবেন না।
জোয়ার্দার লজ্জিত গলায় বললেন, আমাকে রঞ্জুর বাসায় যেতে হবে। রঞ্জু হচ্ছে আমার শ্যালক। ও তার শোবার ঘরে আটকা পড়েছে। বের হতে পারছে না। মনে হয় তাকে দরজা ভেঙে বের করতে হবে। তার সঙ্গে দুটা কাজের মেয়েও আটকা পড়েছে।
বরকতউল্লাহ বিরক্ত গলায় বললেন, এত কথা বলছেন কেন? মন দিয়ে একটা প্রোগ্রাম দেখছি।
সরি।
বরকতউল্লাহ জবাব দিলেন না। অপলক চোখে টিভি পর্দার দিকে তাকিয়ে রইলেন। এখন পেঙ্গুইনরা দল বেঁধে কোথায় যেন যাচ্ছে।
.
জোয়ার্দার রঞ্জুর শোবার ঘরের দরজার সামনে দাঁড়ানো। সুলতানা তাঁর পাশে। সুলতানার চোখে পানি। তিনি একটু পরপর শাড়ির আঁচলে চোখ মুছছেন। তাঁর পাশেই অনিকা পুফিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে সে থরথর করে কাঁপছে।
ঘরের ভেতর থেকে বিড়ালের তীক্ষ্ণ মিঁয়াও মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে। জোয়ার্দার নিশ্চিত হলেন তাঁর কাছে যে বিড়াল আসে সেটাই রঞ্জুর ঘরে। বিড়াল যতবার মিঁয়াও করছে ততবারই তুহিন-তুষার চেঁচাচ্ছে, ও আল্লাগো! ও আল্লাগো!
সুলতানা জোয়ার্দারের দিকে তাকিয়ে বললেন, ভ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছ কেন? কিছু একটা কর।
কী করব?
দরজা ভাঙার ব্যবস্থা কর।
আমি কীভাবে দরজা ভাঙব?
শাবল দিয়ে বাড়ি দিয়ে ভাঙ।
শাবল কোথায় পাব?
রঞ্জু ঘরের ভেতর থেকে বলল, দুলাভাই ভাঙাভাঙিতে যাবেন না। ফ্ল্যাটের সব মানুষ ছুটে আসবে। কেলেঙ্কারি ব্যাপার হবে।
জোয়ার্দার বললেন, কেলেঙ্কারির কী আছে? তুমি আটকা পড়েছ এটা একটা সমস্যা এর মধ্যে কেলেঙ্কারি কেন আসবে?
রঞ্জু হতাশ গলায় বলল, কেলেঙ্কারির কী আছে তা আপনি বুঝবেন না। এত বুদ্ধি আপনার মাথায় নাই।
জোয়ার্দার বললেন, তোমার ঘরে কি কোনো বিড়াল আছে?
হ্যাঁ আছে। পুফি হারামিটা কীভাবে যেন ঢুকেছে। আঁচড়াচ্ছে-কামড়াচ্ছে। ভয়ংকর অবস্থা।
জোয়ার্দার বললেন, পুফি না। এটা অন্য বিড়াল। এ বিড়ালটাকে মনে হয় আমি চিনি। পুফি অনিকার কোলে।
জোয়ার্দার দরজায় হাত রাখলেন। সঙ্গে সঙ্গেই দরজা খুলে গেল। তুহিন তুষার দৌড়ে ঘর থেকে বের হল। তুহিনের গায়ে শুধু পেটিকোট। তুষার সম্পূর্ণই নগ্ন।
সুলতানা জোয়ার্দারকে বললেন, তুমি অনিকাকে নিয়ে অন্য ঘরে যাও। রঞ্জুর সঙ্গে আমি একা কথা বলব। জোয়ার্দার মেয়ের হাত ধরে পাশের ঘরে ঢুকলেন।
রঞ্জু বিছানায় আধশোয়া হয়ে আছে। বিড়াল তাকেও কামড়েছে। শরীর রক্তাক্ত।
সুলতানা বললেন, মেয়ে দুটা তোর ঘরে কেন?
রঞ্জু বলল, বুবু শোনো। প্রায়োরিটি বলে একটা বিষয় আছে। তুমি প্রায়োরিটি বোঝো না। আমি ঘরে আটকা পড়েছি। দরজা খুলছে না। ঘরে ঢুকেছে একটা বুনো বিড়াল। আমাদের কামড়াচ্ছে, আঁচড়াচ্ছে। এ ঘটনা কেন ঘটল সেটাই প্রায়োরিটি বিবেচনা করা উচিত। মেয়ে দুটা আমার ঘরে কেন সেটা অনেক পরের আলোচ্য বিষয়।
সুলতানা বললেন, আমি এটাই আগে জানতে চাই।
আগে জানতে চাইলে বলি। মন দিয়ে শোনো। উত্তেজনা একটু কমাও। উত্তেজিত অবস্থায় মানুষ লজিক ধরতে পারে না। আমার লজিক তুমি ধরতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। রাত একটার দিকে পানির পিপাসা পেল। বিছানার কাছে জগে পানি। পানি গ্লাসে ঢালতে গিয়ে দেখি পিঁপড়া ভাসছে। আমি তুহিনকে বললাম এক বোতল ঠাণ্ডা পানি দিতে। তুমি জানো, ওরা দু’জন সব সময় একসঙ্গে চলে। দুই বোন পানির বোতল নিয়ে ঢুকেছে। বোতল রেখে চলে যাবে হঠাৎ দেখে দরজা লক হয়ে গেছে। এর মধ্যে জানালা দিয়ে ঢুকল বিড়াল। তোমার কাছে ঘটনা কি পরিষ্কার?
সুলতানা কিছু বললেন না। রঞ্জু বলল, জগটা হাতে নিয়ে দেখো, জগের পানিতে পিঁপড়া ভাসছে। আর এই দেখো পানির বোতল। তুমি নিশ্চয়ই ভাবছ না কাজের মেয়ে দুটিকে আমি অন্য উদ্দেশ্যে ডেকেছি। আমার রুচি এখনো এত নিচে নামে নি। এখন তুমি ঘর থেকে যাও। আমি ঠাণ্ডা মাথায় বিষয়টা চিন্তা করি।
সুলতানা তুহিন-তুষারের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। দুই মেয়ে চৌকিতে জড়সড় হয়ে বসে ছিল। তারা সুলতানাকে দেখে মিইয়ে গেল। দু’জনই তাকিয়ে আছে বিছানার চাদরের দিকে। কেউ চোখ তুলছে না।
সুলতানা বললেন, তোদের কী ঘটনা সবই রঞ্জু আমার কাছে স্বীকার করে পা ধরে ক্ষমা চেয়েছে বলে আমি ক্ষমা করেছি। তোরাও নিজের মুখে যা ঘটেছে বলবি। তারপর পা ধরে ক্ষমা চাইবি। আমি ক্ষমা করে দেব। প্রথমে তুহিন বল
তুহিন বিড়বিড় করে বলল, উনি যদি আমাদের বলে রাত একটার দিকে সবাই ঘুমায়ে পড়লে চলে আসবি। আমরা কি তখন বলতে পারি ‘না’। উনার একটা ইজ্জত আছে না? আপনারেই বা কীভাবে বলি। লজ্জার ব্যাপার। আপনার আপন ভাই।
প্রায়ই তার ঘরে যাস?
উনার এইখানে যখন থাকি তখন যাই।
তুষার এবার মুখ খুলল। সে নিচু গলায় বলল, আজ রাতে কোনো ঘটনা ঘটে নাই। আল্লাহর কিরা। আজ অন্য কারণে গেছি।
কারণটা কী?
তুষার বলল, আমাদের দু’জনের পেটে সন্তান এসেছে। উনি বলেছেন, সন্তান খালাসের ব্যবস্থা করে দিবেন। কোনো সমস্যা হবে না। আজ রাতে ওই বিষয়ে আলাপ করতে উনি ডেকেছিলেন।
সুলতানা হতভম্ব হয়ে দুই মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারা যে খুব লজ্জিত বা ভীত তাও মনে হল না। তুহিনের ঠোঁটের কোনায় হাসির আভাসও চকিতের জন্য দেখা গেল।
.
জোয়ার্দারকে গাড়িতে করে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অনিকা ঘুমিয়ে পড়েছে। সুলতানা জেগে আছেন। তিনি বসে আছেন খাবার ঘরের চেয়ারে। তাঁর হাতে চায়ের কাপ। তিনি কাপে চুমুক দিচ্ছেন না।
রঞ্জু এসে তাঁর সামনের চেয়ারে বসতে বসতে বলল, বুবু চিন্তা করে কিছু পেয়েছ?
সুলতানা জবাব দিলেন না। রঞ্জু বলল, বুনো বিড়ালের বিষয়টা আমি বের করেছি। সে এসেছে পুফির খোঁজে। টম ক্যাট তো, এদের সঙ্গিনী দরকার। এ সময় এদের মাথাও থাকে গরম।
সুলতানা কঠিন চোখে তাকালেন। রঞ্জু বলল, বাকি থাকল অটো সিস্টেমে দরজা লক হয়ে যাওয়া। এরও ব্যাখ্যা আছে। মেকানিক্যাল ফল্ট। ভোরবেলা একজন তালাওয়ালা আনব সে পরীক্ষা করে দেখবে। চায়নিজ তালা কেনাটাই ভুল হয়েছে। নেক্সট টাইম সিঙ্গাপুর গেলে তালা নিয়ে আসব। বুবু কথা বলছ না কেন? এত চিন্তিত হবার কিছু নেই। সবকিছুরই ব্যাখ্যা আছে।
সুলতানা বললেন, তুহিন-তুষার যে পেট বাঁধিয়ে বসে আছে তার ব্যাখ্যা কী?
এইসব আবার কী বলছ?
তুই ভালো করে জানিস কী বলছি?
রঞ্জু বলল, বুবু শোন। কাজের মেয়েরা প্রেগনেন্ট হয় ড্রাইভার, দারোয়ানদের কারণে। দোষ দেয় বাড়ির কর্তাদের। উদ্দেশ্য হল বিপদে ফেলে টাকাপয়সা হাতানো। ড্রাইভার দারোয়ান শ্রেণী তো টাকাপয়সা দিতে পারবে না। হা হা হা।
সুলতানা বললেন, হা হা করবি না। চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেব বদ কোথাকার।