মৌর্যযুগ
রাষ্ট্র
যে রাজবংশ মৌর্য বলে পরিচিত তা ‘মুরা’ নামে কোনও দাসীর ছেলের নাম থেকেই সৃষ্টি এমন কথা চলিত আছে; কিন্তু বৌদ্ধসাহিত্যে ‘মোরিয়’ (=মৌর্য) নামের একটি ক্ষত্রিয় কৌমের (গোষ্ঠীর অংশ) নাম পাওয়া যায়। এরা বিহার-নেপাল সীমান্তে বাস করত। খুব সম্ভব প্রথম মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত এই বংশেরই লোক। নন্দবংশের শেষ দুর্বল রাজাকে উচ্ছেদ করে উনি কূটবুদ্ধিসম্পন্ন মন্ত্রী চাণক্য বা কৌটিল্যের পরামর্শে মৌর্যশক্তি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন আলোকজান্ডারের গ্রিক প্রতিনিধি সেলিউকাস উত্তর পশ্চিম ভারতে শাসন করতেন। বিজয়ী চন্দ্রগুপ্ত তাঁর সঙ্গে সন্ধি করে রাজ্যের কিছু অংশ ও পাঁচশ’ হাতির বদলে পঞ্জাব থেকে বিহার, ওড়িশা, বঙ্গদেশ, অন্ধ্র, কর্ণাটক পর্যন্ত দখল করেন ও এই বিশাল ভূভাগের একচ্ছত্র সম্রাট হন। এর আগে ভারতবর্ষে এত বড় বা এমন কোনও সাম্রাজ্য ছিল না।
মৌর্যযুগ সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞানের প্রধান একটা সূত্র গ্রিক পর্যটক মেগাস্থিনিসের লেখা বিবরণ এবং কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র (যা মৌর্যযুগের কাছাকাছি কোনও সময়ের রচনা)। চন্দ্ৰগুপ্ত মৌর্য (৩২৪-৩০০] খ্রি.পূ.) প্রবল পরাক্রান্ত সম্রাট ছিলেন। বহু বিচক্ষণ মন্ত্রী ও রাজকর্মচারীর সাহায্যে তিনি সুবিস্তৃত রাজ্যটি পরিচালনা করতেন। প্রত্যেক প্রদেশের অধিকর্তা বিবাহসূত্রে যথাসম্ভব রাজপরিবারের সদস্য হতেন। প্রথমে পাটলিপুত্র, পরে কৌশাম্বী, তক্ষশিলা ও উজ্জয়িনীও একে একে মৌর্যযুগের রাজধানী হয়েছিল। রাজ্য পরিচালনার ভার ছিল ছ’টি সমিতির অধীনে; এরা জনস্বাস্থ্য, বিদেশি আগন্তুকদের দায়িত্ব, জন্মমৃত্যু নথিভুক্ত করা, ওজন-বাটখারার সাম্যরক্ষা ও অন্যান্য বিষয় পরিদর্শন করত। রাজ্যে অশ্বারোহী, গজারোহী, রথারূঢ় ও পদাতিক সৈনিক, নৌসেনা ও ভারবাহীদের নিয়ে বৃহৎ একটি সৈন্যবিভাগ ছিল। প্রত্যেকটির দায়িত্বে থাকত পৃথক কর্মচারী।
সম্পদ বৃদ্ধির জন্যে রাজ্যের আয়তন বাড়ছিল। সমস্ত অর্থনৈতিক বিষয়ই রাজ্যের অধীনে থাকত: যেমন চাষের আয় বাড়ছিল, অতএব ফসল থেকে বাড়তি খাজনা জমছিল রাজকোষে, বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য গ্রাম থেকে শহরে আসার পথে পথকর ছিল এবং ফসল, শিল্প, বাণিজ্য, অপরাধীর দেওয়া জরিমানা এ সব নিয়ে রাজকোষ স্ফীত হয়ে উঠছিল। চন্দ্রগুপ্তের শাসনব্যবস্থা সুষ্ঠু ও কার্যকরী ছিল। শাসনের যে কাঠামো তখন তৈরি হয় তা বহুকাল পর্যন্ত চালু ছিল।
অশোক
চন্দ্রগুপ্তের পরে রাজা হন বিন্দুসার (৩০০-২৭৩] খ্রি.পূ.)। এঁর সঙ্গে গ্রিক রাজাদের যোগাযোগ ছিল। বিন্দুসারের পুত্র অশোকই (২৭৩-২৩৬] খ্রি.পূ.) মৌর্যসাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ রাজা, হয়তো সারা পৃথিবীরই একজন শ্রেষ্ঠ সম্রাট। বৌদ্ধ সাহিত্য বলে, যৌবনে ইনি চণ্ডস্বভাবের ছিলেন- এটা অবশ্য কিংবদন্তীও হতে পারে। কলিঙ্গ জয় করতে গিয়ে, হতাহতের বিপুল সংখ্যা ও যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা দেখে ইনি খুব ক্লিষ্ট ও অনুতপ্ত হন এবং আর কখনও যুদ্ধ করেননি। এরপর অশোক বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেন এবং প্রজার সুখ ও ধর্মাচরণের জন্য নানা ব্যবস্থা নেন। বিস্তর শিলালিপিতে অশোক প্রজাদের ধর্ম-উপদেশ দিয়েছেন। প্রত্যেক জনগোষ্ঠীকেও তিনি সদুপদেশ দিয়েছেন: প্রজাদের বলেছেন, রাজাকে পিতার মতো দেখতে, কারণ তিনি তাদের সন্তানজ্ঞান করেন। ‘ধৰ্ম্ম’ (ধর্ম) হল নৈতিক জীবনযাপনের মানদণ্ড। এ সম্বন্ধে নানা নীতি তিনি দিকে দিকে শিলালিপিতে প্রচার করেছেন। অশোক রাষ্ট্রনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন দূরদূরান্তের নানা দেশের সঙ্গে। পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার গ্রিক রাজ্যগুলি থেকে ভারতবর্ষের উত্তরে, দক্ষিণে ও শ্রীলঙ্কায় ধর্মপ্রচারের জন্যে প্রচারক ও রাষ্ট্রদূত পাঠান। বৌদ্ধ সাহিত্য থেকে জানা যায়, অশোক তৃতীয় বৌদ্ধ মহাসভা আহ্বান করেন, এবং এখান থেকে দূতরা শ্রীলঙ্কা ও ব্রহ্ম দেশে ধর্মপ্রচার করতে যান। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয়-প্রথম শতকের ব্রাহ্মীলিপিতে লেখা শিলালেখ শ্রীলঙ্কায় পাওয়া গেছে। অশোকের সময়ে সম্ভবত একবারই নীতি ও রাষ্ট্রনীতি পরস্পরকে প্রভাবিত করে এবং এ দুয়ের মধ্যে একটা সমঝোতাও হয়। রাজ্যশাসন যথেচ্ছচারী ছিল না বা কেবলমাত্র রাজা বা রাজ্যের ক্ষমতাবৃদ্ধির জন্যে শাসনব্যবস্থা প্রয়োগ করা হত না। প্রজাদের চরিত্রের উন্নতির জন্যে রাষ্ট্রশক্তি সচেষ্ট ও তৎপর ছিল; সম্রাট হিসেবে এটা অশোকের একটা বড় বৈশিষ্ট্য ছিল।
রাজ্যশাসনে যথাসম্ভব কম নিষ্ঠুরতা ছিল এবং রাজা নিজে যা পালন করতেন সেই ধর্মোপদেশ প্রজাদের জন্যে শিলালিপিতে উৎকীর্ণ করতেন। অশোকের ‘ধম্ম’ কোনও সংকীর্ণ অর্থের ধর্ম নয়, এ ধর্মের মানে অহিংসা, মৈত্রী, সর্বজীবে করুণা, অন্যায়ের প্রতিরোধে সহিষ্ণুতা। এ ধর্ম নৈতিক, যা মানুষের চরিত্র গঠনে সাহায্য করে দেশে হিংসাদ্বেষের প্রভাব কমায়।
এত অহিংসার বাণী সত্ত্বেও অশোকের রাজত্ব কিন্তু দুর্বল ছিল না। বিরাট পরিসরে পরিব্যাপ্ত রাজ্যটি শাসনের দিক থেকেই সংহতই ছিল। পালিভাষায় ধর্মপ্রচার, ধর্মসাহিত্য রচনা, ব্রাহ্মীলিপির ব্যাপক ব্যবহারেও আর এক ধরনের সংহতি এসেছিল। ব্রাহ্মণ ও বৌদ্ধ শ্রমণ (সন্ন্যাসী) রাজার কাছে সমান ন্যায় ব্যবহার পেতেন, তাঁর বাণীতে তিনি উভয়কেই সম্মান করতে শিক্ষা দিতেন।
মৌর্যযুগে শাসনব্যবস্থার উন্নত ধরণ ছিল। রাজকর্মচারীর সংখ্যা ছিল অনেক, যার মধ্যে ছিল প্রধানমন্ত্রী, পুরোহিত ও যুবরাজ, প্রভৃতি পদ। এদের অধীনে বিস্তর কর্মচারী নিযুক্ত থাকত। এত বেশি সংখ্যায় প্রশাসনিক কর্মচারী ভারতবর্ষে কম রাজত্বেই থেকেছে। এই কর্মচারীদের উপরতলার সঙ্গে নিচের তলার মাইনের পার্থক্য ছিল অনেক। এত কর্মচারীকে মাইনে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল, কারণ মগধসাম্রাজ্য তখন অঙ্গ, বৈশালী, কাশী, কোসল, অবন্তী, কলিঙ্গ জনপদ জয় করে সাম্রাজ্যের প্রচুর বিস্তার ঘটিয়েছিল। এই বিস্তৃত রাজ্য থেকে রাজস্ব, পণ্য, ফসল, জরিমানা ও উপঢৌকন বাবদ বিস্তর টাকা রাজকোষে নিয়মিত ভাবে আসত। কৌটিল্য বলেন, চাষি, কুটিরশিল্পী, ব্যবসায়ী এরা সকলেই খাজনা দিত, টাকায়, ফসলে ও উৎপন্ন দ্রব্যে। কেবলমাত্র সুশৃঙ্খল রাষ্ট্রব্যবস্থা ছিল বলে সে সব সংগ্রহ করে রাজকোষ ও ভাণ্ডার ভাল ভাবে রাখার ব্যবস্থা সম্ভব হয়েছিল। সারা রাজ্যে বাটখারাগুলো যেন ঠিক ওজনের থাকে তা দেখারও কর্মচারী ছিল, তেমনই তাঁত, পশমবোনা, ইত্যাদি পেশার তদারকি করবার পৃথক কর্মচারী ছিল। জমি জরিপের, পয়ঃপ্রণালী ও সেচ ব্যবস্থার তদারকির ভার থাকত ভিন্ন ভিন্ন কর্মচারীর ওপরে। এই সময়কার ছাপ দেওয়া মুদ্রায় পাহাড়, ষাঁড় ও অর্ধচন্দ্রের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
মৌর্যযুগে সমাজ
ভারতবর্ষে গ্রিস বা রোমের মতো রাষ্ট্রের কাজে নিযুক্ত ক্রীতদাস ছিল না; পরিবারের মধ্যে গৃহদাস হিসেবে তারা কাজ করত, মনিবের জমিতেও খাটত। মৌর্য সাম্রাজ্যেই প্রথমবার রাষ্ট্র পরিচালিত ক্ষেতে যুদ্ধের বন্দি দেড় লাখ ক্রীতদাসের কাজ করার খবর পাই। কেন্দ্রীয় শাসন বেশ সক্রিয় ছিল; একটা কারণ হল, পাটলিপুত্রের অবস্থান। চারিদিকে নদী থাকায় নৌ-বাণিজ্যের সুবিধে ছিল। একটি প্রশস্ত রাজপথ পাটলিপুত্র থেকে নেপাল হয়ে বৈশালী, চম্পারণে পৌঁছেছিল; আর একটি হিমালয়ের পাদদেশ থেকে বৈশালী চম্পারণ কপিলাবস্তু হয়ে দেরাদুনের কালসি পর্যন্ত গিয়েছিল। কলিঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্র, কর্ণাটক পর্যন্তও রাস্তা ছিল। অশোকের শিলালিপি থেকে বোঝা যায় কত বিস্তৃত ভূভাগের ওপরে রাজপথগুলি প্রসারিত ছিল। জনসংখ্যা খুব বেশি ছিল না; মনে হয়, অশোকের সময়ে রাজ্যে পঁয়ষট্টি লাখের মতো লোক ছিল। স্বভাবতই কেন্দ্র থেকে বেশি দূরে শাসনব্যবস্থা কিছু শিথিল ছিল।
সমৃদ্ধ সাম্রাজ্যের সঙ্গে বহু দেশের বাণিজ্য সম্পর্কে স্থাপিত হওয়ার ফলে শিল্প সাহিত্যে একটা অভূতপূর্ব স্ফুরণ লক্ষ করা যায়। এর কিছু আগে থেকেই বিহার, ছোটনাগপুর অঞ্চলের খনি থেকে লোহার ব্যবহার শুরু হয়, কিন্তু লোহা গলিয়ে তার থেকে ইস্পাত তৈরি করা, এই যুগেরই কৃতিত্ব। মুদ্রা, অস্ত্রশস্ত্র, বাসনপত্র চাষের যন্ত্রপাতি ইত্যাদি, ধাতুর তৈরি জিনিসে, ধাতু ঢালাই ও পালিশের কাজে খুব উন্নতি চোখে পড়ে। পোড়া মাটির কাজ, যাকে বলে ‘উত্তর অঞ্চলের কৃষ্ণমসৃণ মৃৎশিল্প’, তা-ও প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেছে। মৌর্যসাম্রাজ্যের অনেক দূর দূর অঞ্চলে অত্যন্ত উঁচু মানের পালিশ করা পাথরের থাম পাওয়া গেছে। থামগুলির মাথায় সিংহ বা ষাঁড়ের ভাস্কর্যও খুব নিপুণ শিল্পকৃতি। বিখ্যাত অশোকস্তম্ভটি এই উৎকর্ষের একটি নিদর্শন। ‘বরাবর’ পাহাড়ে ‘লোমশ ঋষির গুহা’ বলে বিখ্যাত গুহাটির দ্বারে পাথরে খোদাই একটি উৎকৃষ্ট শিল্পকর্ম মৌর্য সাম্রাজ্যের এক প্রসিদ্ধ শিল্প নিদর্শন। উত্তর ভারতের ‘চিক্কণ কৃষ্ণ কৌলাল’ (মৃৎশিল্প)-এর যুগ এটা।
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র-তে নানা রকম খাজনার উল্লেখ পাই। স্পষ্টই বোঝা যায় যে, এত রকম খাজনা দেওয়ার পর সাধারণ লোকের হাতে সামান্যই টাকা থাকত। কাজেই সমাজের স্পষ্ট বিভাজন ছিল, স্বল্পসংখ্যক ধনী আর অগণ্য দরিদ্র। এই সময়কার বৌদ্ধ সাহিত্যে বহু কাহিনিতে ধনী দরিদ্রের পার্থক্য দেখি। উপনিষদ, বৌদ্ধ, জৈন সাহিত্য একবাক্যে এই সাক্ষ্যই দেয়। সমাজে জন্মান্তরবাদ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরের এই সাহিত্যে বারেবারেই দেখি এক জন্মে সৎ জীবনযাপন করলে, উঁচু তিনটি বর্ণের সেবা করলে শূদ্র ও নারীও পরজন্মে সদ্বংশে ধনী, সুস্থ, প্রতিষ্ঠাবান পুরুষ হয়ে জন্মাতে পারে। প্রধান পুণ্য হল দয়া, ক্ষমা অহিংসা, মৈত্রী ও দান। সদাচারিণী নারী পরজন্মে পুরুষ হয়ে জন্মাতে পারে এমন কথা অনেক কাহিনিতে আছে। সদগুণ, যেমন সত্যবাদিতা, আশ্রিতবাৎসল্য, তিতিক্ষা (সহিষ্ণুতা), দয়া, অহিংসা এ সব আচরণ করলে ভাল বংশে সুস্থ ধনী পুরুষ হয়ে জন্মানো যায়। ছোটখাট দেবতা হয়েও জন্মানো যায়, কিন্তু তারা যে সৎ নৈতিক ভাবে উজ্জ্বল জীবন পরজন্মে পায়, এমন কথা কাহিনিতে কদাচিৎ মেলে। তবু মহাযানে বোধিসত্ত্বরা অন্য দুর্বল সাধকদের নির্বাণের পথে এগিয়ে দেওয়ার জন্যে স্বেচ্ছায় নিজেদের নির্বাণ বিলম্বিত করেন— এতে একটি যথার্থ নীতিবোধের পরিচয় আছে। অর্হৎ বোধিসত্ত্বরা ক্রমে ক্রমে নির্বাণের দিকে এগোতে থাকেন। বৌদ্ধমতে নির্বাণই হল প্রায় উপনিষদের মোক্ষের মতো। মোক্ষ বা নির্বাণ দুই-ই নিজের স্বার্থের চিন্তা, প্রায় সব ধর্মেই এইটিই লক্ষ্য। এ কথা উচ্চারিত হচ্ছে সেই সমাজে যেখানে সাধারণ মানুষের জীবন ক্রমেই রাজশাসনের চাপে ও দারিদ্র্যে কঠোর ভাবে পিষ্ট হচ্ছে। এই অবস্থাই অবশ্য সাধারণ মানুষকে একাগ্র করে তুলবে যাতে এ দুঃখময় জীবনের আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই চেষ্টা করতে। এতে সমাজের উচ্চপদস্থ ধনী ও রাজন্যের সমূহ সুবিধা, কারণ পরজন্মে ভাল বংশে সুস্থ ধনী সুখী পুরুষ হয়ে জন্মানোর লোভ দেখিয়ে ওই দুঃখী মানুষগুলোর একান্ত সেবা ও আনুগত্য তারা এ জন্মে আদায় করে নিতে পেরেছিল। আর বাড়তি লোভও দেখানো হত অন্তিমে মোক্ষের।
একটু ভেবে দেখলে অবশ্য মোক্ষ বা নির্বাণ খুব লোভনীয় অবস্থা নয়। পরবর্তী সাহিত্যে ব্রহ্মের সংজ্ঞা দিয়েছে ‘সৎ, চিৎ ও আনন্দ’ বলে। সৎ অর্থাৎ যার অস্তিত্ব আছে, চিৎ অর্থাৎ যে চেতনা স্বরূপ আর ‘আনন্দ’ অর্থাৎ আনন্দস্বরূপ। এই ব্রহ্মে বিলীন হয়ে যাওয়াই মোক্ষ। কিন্তু ব্ৰহ্ম যেহেতু নিৰ্গুণ তাই এ আনন্দ মানুষের চিত্তবৃত্তি দিয়ে অনুভব করা যাবে না, কারণ সগুণ সত্তাই শুধু অনুভব করতে পারে। ফলে ব্রহ্মে ‘বিলীন হয়ে’ যাওয়াটা বোধের বাইরেই থাকবে। বৌদ্ধমতে ‘নির্বাণ’ মানে নিভে যাওয়া। আত্মা যদি দীপশিখার মতো হয় তো নির্বাণে সে এমনই নিভে যায় যে, তার থেকে আর প্রদীপ জ্বালানো যাবে না, অর্থাৎ পুনর্জন্ম আর হবে না। দুই অবস্থাতেই জন্ম বা জীবনবাসনা ফুরিয়ে যায় বলে পুনর্জন্ম আর হয় না। ঋগ্বেদ-এর কয়েকশো বছর পরে সাধারণ লোকের কাছে জীবনের মানে এমন পালটে গেছে যে সেই ‘একশো শরৎ দেখা’র বাসনা মিলিয়ে গিয়ে এখনকার কামনা হয়েছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জীবন থেকে ছুটি পাওয়া। কর্মফলের জন্যে যতক্ষণ তা না হচ্ছে ততক্ষণ যেন পরজন্মটা এই দুঃখী জীবনের পুনরাবৃত্তি না হয়, তাই নারী বা শূদ্র বা দুঃখীদরিদ্র মানুষের কাজ হবে মুখ বুজে এ জন্মে শক্তিমানদের সেবা করে লাথিঝাঁটা খেয়ে চলা।
অশোকের পরে বেশ তাড়াতাড়ি মৌর্য সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়। প্রথমত, কলিঙ্গ বিজয়ের পরে নতুন কোনও রাজ্য মৌর্যরা আর জয় করেনি। উত্তর আফগানিস্তানে গ্রিকরা ব্যাকট্রিয়া রাজ্য স্থাপন করেছিল; কিন্তু শকরা যখন পারস্য থেকে চিন ও ভারতবর্ষের দিকে ঠেলে আসছিল তখন চিন সম্রাট চিনের সুরক্ষার জন্যে প্রকাণ্ড এক প্রাচীর তৈরি করান। মৌর্যরা তেমন কোনও সুরক্ষার ব্যবস্থা করেনি, ফলে পার্থীয়রা ও শকরা ভারতবর্ষের দিকে এগিয়ে এল। অহিংসার প্রভাবে যুদ্ধ আর হচ্ছিল না, বৌদ্ধ প্রভাবে নির্যাতন প্রায় বন্ধ ছিল; কিন্তু এ শুধু মৌর্য সাম্রাজ্যের কেন্দ্রের কাছাকাছি, প্রত্যন্ত অঞ্চলে নানা ধরনের অত্যাচার বাড়ছিল। মৌর্যদের নানা ধরনের খাজনার চাপে প্রজারা পিষ্ট হচ্ছিল। বহু রকমের প্রশাসনিক পদ তৈরি হওয়ায় মাইনের খাতে খরচ বাড়ছিল, এর চাপটা প্রকারান্তরে প্রজাদের ওপরেই এসে পড়ছিল, কাজেই সাধারণ মানুষের দৈন্যদশা বাড়ছিলই। অশোক ও তাঁর পারিষদরা বৌদ্ধ হলেও সাধারণ লোক তখনও ব্রাহ্মণ্য ধর্মেই ছিল এবং এরা চেষ্টা করছিল যাতে ব্রাহ্মণ্যধর্ম আবার প্রধান হয়ে ওঠে। ফলে শেষ মৌর্য সম্রাট বৃহদ্রথকে প্রকাশ্যে খুন করে তাঁর শুঙ্গবংশীয় ব্রাহ্মণ মন্ত্রী পুষ্যমিত্র। সেটা ১৮০] খ্রিস্টাপূর্বাব্দ, মগধের সিংহাসনে শুঙ্গবংশের প্রতিষ্ঠা তখন
মৌর্যযুগের সমাজ সম্বন্ধে বৌদ্ধ ও জৈনগ্রন্থাবলী এবং রামায়ণ ও মহাভারত থেকে খানিকটা জানা যায়। রামায়ণ, মহাভারত থেকে জানতে পারি সামাজিক মূল্যবোধের খবর এবং বৌদ্ধ গ্রন্থ থেকে পাই সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার একটি ছবি। বৈদিক যুগের শেষ পর্বে যে সব মূল্যবোধের ও বিধিনিষেধের সূত্রপাত হয় এ যুগে তাই আরও দৃঢ়মূল হচ্ছিল। রাজা এখন সমাজের শীর্ষে এবং রাজা ক্রমশ দেবতায় পরিণত হচ্ছিল। তার পাশাপাশি শক্তিমান ছিল পুরোহিত, শাস্ত্রকার ও মন্ত্রীরা; এরা ব্রাহ্মণ। যেমন রাজার বিরুদ্ধে গেলেই ভয়াবহ রকমের শাস্তির বিধান ছিল, তেমনই পুরোহিত বা ব্রাহ্মণের বিরুদ্ধে গেলেও রাজদণ্ড, শাপশাপান্ত, একঘরে হওয়া, ইত্যাদির সঙ্গে পরজন্মে আরও দুর্দশার হুমকি। তাছাড়া বহু পূর্ব ও উত্তর পুরুষের দুর্গতির সম্ভাবনা। ফলে সাধারণ মানুষকে রাজা ও পুরোহিতদের ভয় করেই চলতে হত।
পরিবারের মধ্যে সকলের চেয়ে শক্তিমান ছিল গৃহস্বামী অর্থাৎ বয়স্কতম পুরুষটি, যার হুকুম বাকি সকলকে বেদবাক্যের মতো মেনে চলতে হত; তার সপক্ষে সমস্ত শাস্ত্র, ফলে পরিবারে সে একচ্ছত্র সম্রাট। তার নিচে অন্যান্য পুরুষ সদস্যরা বয়স ও সম্পর্কের মান অনুসারে। তারপর শাশুড়ি-ননদরা, পুত্রবধূরা যারা বাড়ির বাকি সকলের সেবিকা। সাধারণ ভাবে বৈদিক যুগের প্রথম পর্যায় থেকে সমাজে ক্রমান্বয়ে নারীর স্থান যে নেমেই যাচ্ছিল তার অনেক নিদর্শন আছে। ধনসম্পত্তিতে তার অধিকার ছিল না, এমনকী নিজের দেহের ওপরেও তার কর্তৃত্ব বা অধিকার ছিল না। বৈদিক যুগের উত্তরপর্বে যখন প্রাগার্যরা যুদ্ধে বন্দি হয়ে, দাস রূপে আর্যদের খেতে খামারে বা কারখানায়, ভারী কাজগুলো করছে তখন থেকেই প্রত্যক্ষ উৎপাদনের সঙ্গে নারীর যোগ চলে যায়। তখন সমাজে তার নির্দিষ্ট জায়গা হল পরিবারের সেবা এবং সন্তান— মুখ্যত পুত্র উৎপাদনে। তার উপনয়ন ছিল না, ফলে কোনও বিদ্যা অর্জন করে, জীবিকা অর্জন করার উপায় ছিল না। শূদ্র ও নারী ছিল ভৃত্য ও ভার্যা, অর্থাৎ যাকে ভরণ করতে হয়। এই ভরণের বিনিময়ে সব রকমের স্বাধীনতা গচ্ছিত রেখে নারীকে বাঁচতে হত। নিশ্চয়ই কিছু কিছু সদাশয় পুরুষ নারীর সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ ব্যবহার করত, কিন্তু যে করত না শাস্ত্র তারই পক্ষে। ফলে ভাল ব্যবহারটা প্রধানত ব্যতিক্রমীই ছিল মনে করলে ভুল হবে না। সমাজে কুমারী, বিধবা, স্বামীপরিত্যক্তা ও সন্তানহীনের সম্মানের জায়গা ছিল না। শাস্ত্রের লক্ষ্য অনিবার্য ভাবেই নারীর অবনমনের দিকে। নিয়ম বেড়ে চলেছে এবং নারীর বঞ্চনা সে নিয়মে শাস্ত্রীয় সমর্থনই পেয়েছে।
পরিবারে ও সমাজে ব্রাহ্মণ দেবতার মতো পূজা পেত, রাজন্যক্ষত্রিয় পেত ভয়মিশ্রিত সম্ভ্রম। বৈশ্য বিত্তকৌলীন্যের জোরে, গরিব ব্রাহ্মণও সাধারণ ক্ষত্রিয়ের ওপরে স্থান পেত। সমাজের সবচেয়ে নিচে যে শূদ্র, তার কাজ মুখ বুজে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যের সেবা করা ক্ষেতে মজুরি করা ও বিভিন্ন শিল্পে— যেমন ধাতু, মাটি, চামড়া, কাঠের কাজ ও অন্যান্য কারিগরি কাজে ভারী পরিশ্রমের কাজগুলো করা। বেশির ভাগই পেটভাতায়। এদেরও নিচে, বলতে গেলে ব্রাহ্মণ্য সমাজের বাইরেই ছিল চণ্ডাল, পুল্কস, শ্বপাক ও ম্লেচ্ছ। অথচ চণ্ডাল ও শ্বপাক উচ্চ ত্রিবর্ণের বিবাহে সাহায্য করত। কাজেই সমাজে তাদের সহযোগিতা অপরিহার্য ছিল। শ্বপাক বা শ্বপচ মানে যে কুকুরের মাংস খায়, এটাই তাদের প্রতি আর্যদের ঘৃণার কারণ। শখ করে কেউ কুকুরের মাংস খাবে কেন? ঋগ্বেদে পড়ি, ‘অর্বত্যা শুন আস্ত্রাণি পেচে’, অর্থাৎ অভাবে পড়ে কুকুরের নাড়িভুড়ি রান্না করেছিল এক ব্রাহ্মণ। অভাবে পড়ে যারা কুকুর মেরে রেঁধে খেত তারা শ্বপাক, এই অভাব যে-সমাজ সৃষ্টি করেছিল তার মধ্যে শ্বপাকের ঠাঁই হয়নি।
আর্যসমাজের গণ্ডির বাইরে ছিল নিষাদ। পেশায় এরা শিকারি এবং জঙ্গলে থাকত বলে আর্য ব্রাহ্মণ্য শাসনের আওতার বাইরে ছিল। তবে ব্রাহ্মণ্য সমাজকে কিছু পরিমাণে এদের ওপরে নির্ভর করতে হত বলে এদের বৃত্তিগত স্বাধীনতার জোরে এরা এক সময়ে ব্রাহ্মণ্য সমাজের এক কোণে ঠাঁই পায়। পাণিনি ব্যাকরণে পড়ি, ‘নিষাদপঞ্চমাঃ পঞ্চ জনাঃ’, অর্থাৎ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র ও নিষাদকে ধরে সমাজের পাঁচজন; এই পাঁচজনই তখন সমাজের প্রতিনিধি। এখন আমরা যে পঞ্চায়েৎ (পঞ্চায়ত থেকে) বলি তার ‘পঞ্চ’ এরাই, এর থেকেই গ্রামের পাঁচজনের কথাই সমাজের বিধান। চারটি আর্যবর্ণ নিষাদকে চণ্ডাল সাহিত্যে দেখতে পাই। যারা মধু, কাঠ জোগাড় করতে জঙ্গলে যায়, পাখিশিকারি, জেলে, মালো, যারা নৌকা বায় এমনই বহু পেশার নাম সাহিত্যে দেখি। এদের মধ্যে অন্তর্বিবাহ হয়ে এবং পেশাগুলো নানা ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত হয়ে সমাজে জাতির সংখ্যা বেড়েই চলে। শাস্ত্রকাররা জাতিগুলোকে দু ভাগে ভাগ করেন, ‘জল-চল’ ও ‘জল-অচল’। চারটি আর্যবর্ণের মধ্যে বিয়েতে বর কনের চেয়ে উঁচু জাতের হলে ‘অনুলোম’ অর্থাৎ সমাজে সম্মত হয়, উল্টোটা ‘প্রতিলোম’ যা সমাজে অস্বীকৃত। বিভিন্ন পেশা ও আর্য-প্রাগার্য বিভিন্ন বর্গের বিয়ের ফলে জাত সংখ্যায় ক্রমশ বাড়তে থাকে।
মৌর্য যুগে দেশে শিল্প বাণিজ্য ও প্রশাসন ভাল থাকলেও সাধারণ মানুষের দুঃখদুর্দশা কমেনি, বরং বাড়ছিলই। সুনিয়ন্ত্রিত শাসনে খাজনা, ঋণভার, জরিমানা, ইত্যাদির চাপ গরিব চাষি মজুরের ওপরে এসে পড়ছিল। বৌদ্ধ ও জৈনধর্ম জাতিভেদ স্বীকার না করলেও সমাজে তখনও ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রাধান্য, অতএব জাতিভেদ বিশেষ ভাবেই বর্তমান। এই সময়ে মহাভারত রচনা চলছে, তাতেই প্রথমবার দেখি, জন্মান্তরবাদের সঙ্গে জুড়েছে কর্মবাদ। এই দুটি মিলে শাসনযন্ত্র ও ধর্মশক্তি মানুষের ওপরে অত্যাচার, দুঃখ ও দারিদ্র্য চাপিয়ে দিয়ে তাকে বুঝিয়ে দিল যে, আগের জন্মের পাপের ফলে এ জন্মে তার এই দুর্দশা। এ জন্মটা দুটো জন্মের মধ্যেকার অবস্থা। আগেরটাও অদৃশ্য অবস্থা, পরেরটাও তাই। শাস্ত্রকাররা ফতোয়া দিয়ে দুটোকেই বাস্তব সত্য করে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। দুঃখী, হতাশ, বিভ্রান্ত মানুষের সামনে যেহেতু এ জন্মে দুঃখমোচনের কোনও বাস্তব আশা নেই তাই সে বেচারা আগামী জন্মে কাল্পনিক দুঃখের অবসানের আশাটাকে প্রাণপণে আঁকড়ে থাকছে ব্যাপক একটা হতাশা সাধারণ মানুষকে চেপে ধরেছিল, এবং এ জন্মে তার থেকে মুক্তির কোনও পথ কেউই দেখায়নি। শাস্ত্র ও পুরোহিত পূর্বজন্মের পাপের দোহাই দিয়ে তাকে অপরাধী সাব্যস্ত করেছে এবং সমাজে যারা প্রতিষ্ঠিত, মুখ বুজে তাদের সেবা করেই পরজন্মে সুখের উপায় এই রকম প্রমাণহীন, যুক্তিহীন, অবৈজ্ঞানিক একটা ফতোয়া দিয়ে এ জন্মে তার কাছ থেকে অক্লান্ত সেবাটা আদায় করে নিয়েছে। পৃথিবীতে প্রায় সব ধর্মেই ধর্মশাস্ত্র ও পুরোহিতের বিধান এই ভাবে বিশেষ একটি শ্রেণির সুবিধের ব্যবস্থা করেছে।
সম্রাট অশোকের পিতামহ চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য জৈনধর্ম গ্রহণ করেন; তাঁর মা ছিলেন আজীবিক মতের, অশোক নিজে বৌদ্ধ ছিলেন। কিন্তু রাজ্যে বৌদ্ধ জৈন আজীবিক ব্রাহ্মণ্য সব মতেরই সম্মানের জায়গা ছিল; ধর্মবিদ্বেষের কোনও খবর পাওয়া যায় না। ধর্ম ও মতের যে সুস্থ শান্তিপূর্ণ আবহাওয়াটা আমরা এখন কামনা করি সেইটেই যেন কতকটা ছিল অশোকের সময়ে। শিল্পেও তাই বৌদ্ধ জাতকের কাহিনি যেমন চিত্রিত হত, তেমনই হত ব্রাহ্মণ্য দেবতা ইন্দ্ৰ, শ্রী, সূর্য, নাগ যক্ষযক্ষীও; মূল ধর্মধারার সঙ্গে লৌকিক ধর্মের দেবতারও মূর্তি তৈরি হত। তান্ত্রিক বুদ্ধের ‘মহামায়ূরীর’ সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের মানিকীয় ধর্মে কেন্দ্রদেবতা ‘মণি’র নাম জুড়ে তৈরি হচ্ছে মন্ত্র। ‘ওম মণিপদ্মে হুম’: এর ‘ওম’ বৈদিক, ‘মণি’ মানিকীয়, ‘পদ্ম’ বুদ্ধের চরণপদ্মের প্রতীক, ‘হুম’ তন্ত্রের। কতকগুলি মতের সহাবস্থান এ মন্ত্রে। ধর্মে এই সময়ে শৈব ও বৈষ্ণব দুটি সম্প্রদায়ের কালিক ও আঞ্চলিক রূপ দেখা দিয়েছিল। পাশুপত, লকুলীশ, শৈবসিদ্ধান্ত, সাত্বত, পাঞ্চরাত্র, নারায়নীয় ও ভাগবত— এই সব সাম্প্রদায়িক উপাসনার শুরু হয় এই সময়েই। আবার এই সময়ে যজ্ঞের কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি জ্ঞানমার্গের চর্চা, সন্ন্যাস আচরণ এবং পূজা চলতে থাকে। পূজা হয়তো প্রাগার্যকালের চলতি উপাসনা ছিল। একই পরিবারে নানা মতের ধর্মাচরণ স্থান পেত। সাধারণ মানুষের কাছে তার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দুই-ই অন্ধকারময় ছিল বলে সর্বকালের মতো মানুষ অন্ধকারে হাতড়ে বেরিয়েছে, বহু বিকল্পের মধ্যে পথ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করেছে।