০৭. মুত্তালিব সাহেব

মুত্তালিব সাহেবের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। হাঁটতে তাঁর খুব কষ্ট হচ্ছে। তিনি কয়েকবার বলেছেন, শামা ছেড়ে দে। আর সম্ভব না। শামা বলেছে, আধঘণ্টা আপনাকে হাঁটানোর কথা। আমি আধঘণ্টা হাঁটাব। মুত্তালিব সাহেব হতাশ গলায় বললেন, হাঁটু যে রকম ছিল সে রকমই আছে। হেঁটে লাভ কী?

লাভ ক্ষতি দেখবেন আপনি। আমার আপনাকে হাঁটানোর কথা, আমি হাঁটাব।

তোর হাঁটানোর কথা কেন? তোকেতো কেউ বলে দেয় নি।

এই কাজটা আমি ইচ্ছা করে নিয়েছি। আপনাকে আধঘণ্টা হাঁটালে আমি আধঘণ্টা টেলিফোনে কথা বলতে পারব। আমার লাভ আমি দেখছি।

কাজটা তাহলে নিঃস্বার্থ না?

না।

আজকালতে তোকে টেলিফোন করতে দেখি না।

এখন দেখেন না পরে দেখবেন। আমি কাগজে কলমে হিসাব রাখছি মোট কত ঘণ্টা টেলিফোন পাওনা।

কত ঘণ্টা?

আজকের আধঘণ্টা ধরলে হবে বারো ঘণ্টা।

তোর ধৈর্য আছে। আধঘণ্টা পার হতে বাকি কত?

এখনো দশ মিনিট।

শামা আজ ছেড়ে দে। মনে হচ্ছে পাটা হাঁটু থেকে খুলে পড়ে যাচ্ছে।

খুলে পড়ে গেলেতো ভালই। হাঁটু বাঁকানোর যন্ত্রণা থেকে বাঁচবেন।

তোর মনে মায়া দয়া বলে কিছু নেই। তুই আমার কষ্টটা বুঝতেই পারছি

না।

চাচা এইসব বলে লাভ নেই। ডাক্তার আপনাকে বলেছেন প্ৰতিদিন আধঘণ্টা হাঁটতেই হবে। আপনার যত কষ্টই হোক এই কাজটা আমি আপনাকে দিয়ে করব। আপনি হাঁটতে হাঁটতে ইন্টারেস্টিং কোনো কথাবার্তা বলুন। দেখবেন ব্যথা টের পাবেন না।

মুত্তালিব সাহেব দীৰ্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, আমার জীবনে ইন্টারেস্টিং কিছু কখনো ঘটে নি। আল্লাহপাক কী করেন জানিস? মানুষ বানিয়ে তার পিঠে একটা করে সীল দিয়ে দেন। কারো সীলে লেখা থাকে Interesting Life. তার জীবনটা ইন্টারেস্টিং হয়। আবার কারো সীলে লেখা থাকে Happy Life, তার জীবন হয় আনন্দময়।

আপনার সীলে কী লেখা?

কিছুই লেখা নেই। শুধু একটা ক্রস চিহ্ন দেয়া। এই ক্রস চিহ্নের মানে হলো— এই লোকের সব বাতিল।

শামা হেসে ফেলল। মুত্তালিব সাহেবও হাসলেন। শামা বলল, মানুষ হিসেবে আপনি খুব বোরিং। বোরিং মানুষ সামান্য মজার কিছু বললেই মনে হয় অনেক মজার কিছু বলা হয়েছে। আর আমি যেহেতু খুবই ইন্টারেস্টিং একজন মানুষ, আমার খুব মজার কথাও লোকজনদের কাছে বিরক্তিকর মনে হয়।

তুই এক কাজ করে বোরিং পারসন হবার চেষ্টা কর।

চেষ্টা করছি। লোকজনদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা কমিয়ে দিয়েছি। আগে। কেউ কোনো প্রশ্ন করলে মজা করে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করতাম— এখন শুকনো ধরনের উত্তর দেই। কাঠখোট্টা জবাব।

আধঘণ্টা শেষ হয়েছে? হ্যাঁ হয়েছে।

যা টেলিফোন করে আয়। আধঘণ্টা না, আজ টেলিফোন করবি এক ঘণ্টা। তারপর তোর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলব। পরীক্ষা করে দেখি তুই কী পরিমাণ বোরিং পারসন হয়েছিল।

টেলিফোন করব না চাচা।

তাহলে আয় আমরা কথা শুরু করি।

আজ কথা বলব না চাচা। বাসায় আজ খুব ঝামেলা। বাসায় চলে যাব।

তোর সঙ্গে কিছু জরুরি কথা ছিল। তোর বিয়ে ভেঙে গেছে শুনেছি। কেন ভাঙল কিছুই জানি না। আবার শুনছি অন্য এক জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়েছে। কী ঘটছে একটু বল শুনি।

শামা সহজ গলায় বলল, সামারী এন্ড সাবসটেন্স বলে চলে যাই। আতাউর রহমান নামে যার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল খোঁজ নিয়ে জানা গেল মানুষটা অসুস্থ। সারা বছর অসুস্থ থাকেন না। মাঝে মাঝে থাকেন। খুব বেশি যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন তাঁকে ঘরে তালাবন্ধ করে রাখতে হয়। বুঝতে পারছেন। অসুখটা কী?

পারছি।

আমার অন্য জায়গায় বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে বলে যেটা শুনেছেন, সেটা ঠিক না। বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে না। তবে তৃণা নামে আমার এক বান্ধবী আছে, এর হবি হচ্ছে বান্ধবীদের বিয়ে দিয়ে দেয়া। আমাদের তিন বান্ধবীর বিয়ের কলকাঠি সে নেড়েছে। আমার ব্যাপারেও নাড়তে শুরু করেছে। বিয়ের ব্যবস্থা করার তার কৌশলগুলি খুব সুন্দর। মুগ্ধ হবার মতো কৌশল। একেক জনের জন্যে একেক কৌশল। আমার জন্যে একটা কৌশল বের করেছে, এবং অনেকদূর এগিয়ে গেছে। অন্য এক সময় আপনাকে বলব। আজ বলতে ইচ্ছা করছে না। চাচা আপনি কি আমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন?

না।

চাচা যাই?

মুত্তালিব সাহেব কিছু বললেন না। তাঁর মন খুবই খারাপ হয়েছে। এই মেয়েটার জন্যে কিছু করতে ইচ্ছা করছে। কী করবেন, কীভাবে করবেন কিছুই মাথায় আসছে না। তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন পিঠে ক্রস চিহ্ন নিয়ে, এ ধরনের মানুষেরা ইচ্ছা থাকলেও কারো জন্যে কিছু করতে পারে না। যে নিজের জন্যে কিছু করতে পারে না সে অন্যের জন্যে কী করবে?

 

শামা বাসায় ঢুকে দেখে বাসার পরিস্থিতি খুবই স্বাভাবিক। অথচ সে যখন বাসা থেকে বের হয়ে দোতলায় মুত্তালিব সাহেবের কাছে চলে গিয়েছিল তখন পরিস্থিতি ছিল ভয়ঙ্কর। আবদুর রহমান সাহেব যে ব্যাপার কখনো করেন না, তাই করছিলেন। রেগে থালা বাসন ভাঙছিলেন, টেবিলের ওপর রাখা দু’টা কাপ এবং একটা পানির জগ ছুঁড়ে মারলেন সুলতানার দিকে। সুলতানা ক্ষীণ স্বরে বললেন, এরকম করছ কেন? একটু শান্ত হয়ে বারান্দায় বস। আবদুর রহমান সাহেব চেঁচিয়ে বললেন, কেন শান্ত হব? আমাকে একটা কারণ দেখাও যার জন্যে শান্ত হব?

সুলতানা এশার কাছে গিয়ে বললেন, মা যা তোর বাবাকে একটু শান্ত কর। এশা শাড়ি ইস্ত্রী করছিল। সে শাড়ি ইস্ত্রী এক মুহূর্তের জন্যেও বন্ধ না করে বলল, কোনো দরকার নেই। বাবা আপনা আপনি শান্ত হবে।

এ রকম করলেতো স্ট্রোক হয়ে যাবে।

হয়ে গেলেও কিছু করার নেই।

সুলতানা কাঁদে কাদো মুখে বড় মেয়ের কাছে গেলেন। প্রায় মিনতির গলায় বললেন, শামা তোর বাবাকে একটু সামলা। সারা ঘরে ভাঙা কাচের টুকরা। তোর বাবা খালি পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাগের মাথায় কোনো দিকে না তাকিয়ে হাঁটবে। কাচের টুকরায় পা কাটবে।

শামা বলল, বাবার সামনে গেলেই আমি এখন ধমক খাব। আমার ধমক খেতে ইচ্ছা করছে না। আমি এখন ঘরেই থাকব না।

তুই যাবি কোথায়?

বাড়িওয়ালা চাচার বাসায়। উনাকে হাঁটাব।

তোর বাবার এই অবস্থা আর তুই যাচ্ছিস আরেকজনকে হাঁটাতে?

শমা মা’র সামনে থেকে সরে দোতলায় চলে এল। চল্লিশ মিনিট পরে ফিরে এসে দেখে সব শান্ত। পশ্চিম রণাঙ্গন নিশ্চুপ।

আবদুর রহমান সাহেবের রাগের প্রধান কারণ মন্টু। আজ দুপুরে সে অংক পরীক্ষা দিতে গিয়ে শুনে পরীক্ষা সকালে হয়ে গেছে। কাজেই তার আর পরীক্ষা দেয়া হয় নি। আবদুর রহমান সাহেব সন্ধ্যায় চা খেতে খেতে এই ঘটনা শুনলেন। শান্তভাবেই চা খেলেন। তারপর ছেলের হাত ধরে টেনে ঘর থেকে বের করে রাস্তায় নিয়ে গেলেন। চাপা গলায় বললেন, মানুষের সামনে লজ্জা না দিলে তোর হুশ হবে না। রাস্তায় নিয়ে তাকে আমি নেংটা করে ছেড়ে দেব।

তিনি এটা করলেন না, তবে যা করলেন তাও ভয়াবহ। ছেলেকে কানে ধরে একশ বার ওঠবোস করালেন। তাদের চারদিকে লোক জমে গেল। রিকশাওয়ালারা রিকশা থামিয়ে ঘণ্টা দিতে লাগল।

আবদুর রহমান সাহেব পুত্রের শাস্তি পর্ব শেষ করার পর বললেন, খবরদার তুই বাড়িতে ঢুকবি না। তোকে ত্যাজ্য বাড়ি এবং ত্যাজ্য পুত্র করলাম। এখন যা, চরে খা।

মন্টু রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগল, তিনি বাড়িতে ঢুকে থালা বাসন ভাঙা শুরু করলেন।

অল্প সময়ের ভেতরই পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন হয়েছে। ভাঙা কাচের টুকরা সরানো হয়েছে। ভেতরের বারান্দার কাঠের চেয়ারে সুলতানা স্বাভাবিক। ভঙ্গিতেই বসে আছেন। কে বলবে কিছুক্ষণ আগেই বিরাট ঝড় গিয়েছে। শামা বলল, বাবা কোথায় মা?

সুলতানা বললেন, শুয়ে আছে।

রাগ কমেছে?

হুঁ।

মন্টু ফিরেছে?

না।

এশা কী করছে?

রান্না করছে।

তোমার শরীর ঠিক আছে মা?

হ্যাঁ।

শামা রান্নাঘরে চলে গেল। এশা বোনকে দেখে হাসল। যেন এ বাড়িতে কিছুই হয় নি। শামা বলল, কী রান্না করছিস।

মাংস। বাবা আজ বাংলাদেশের সবচে’ প্রবীণ গরুর মাংস নিয়ে এসেছেন। এক ঘণ্টার ওপর জ্বাল হয়ে গেছে। যতই জ্বাল হচ্ছে মাংস ততই শক্ত হচ্ছে।

গন্ধতো খুব সুন্দর বের হয়েছে।

গন্ধে গন্ধেই খেতে হবে।

শামা বোনের পাশে বসতে বসতে বলল, তুইতো ভাল রান্না শিখে যাচ্ছি। ঐ দিন মাছের ঝোল রান্না করলি, আমি বুঝতেই পারি নি তোর রান্না। আমি ভেবেছি মা বেঁধেছে।

রান্না শেখার কাজটা আমি মন দিয়ে শিখছি আপা। কারণ শুনতে চাও? কারণ হচ্ছে বিয়ের পর আমাদের সংসারে খুব গরিবি হালত চলবে। কাজের। বুয়া রাখতে পারব না। রান্নাবান্না আমাকেই করতে হবে। আমি এমন রান্না কখনো রাধব না যে মাহফুজ মুখে দিয়ে বলতে কী বেঁধেছ?

তুই এত কিছু চিন্তা করিস?

এশা হাসতে হাসতে বলল, আমি তোমার মতো না আপা। আমি খুবই চিন্তাশীল তরুণী।

তোর বিয়েটা কবে হচ্ছে?

তোমার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমি বিয়ে করব না। তুমি যদি বিয়ে করতে দশ বছর দেরি কর, আমিও ঠিক দশ বছরই দেরি করব।

কারণ কী?

বললাম না, আমি খুব চিন্তাশীল তরুণী। চিন্তাশীল তরুণী বলেই তোমার বিয়ের জন্যে অপেক্ষা করব।

কেন অপেক্ষা করবি? আমার সঙ্গে তোর কী? সেদিন না বললি আমি আলাদা, তুই আলাদা?

এই সংসারে যতদিন আছি ততদিন আলাদা না। সংসার থেকে বের হলে আলাদা। আপা শোন, আমি কখনো হুট করে কিছু করি না। যাই করি খুব ভেবে চিন্তে করি। আমার সব কিছুর পেছনে একটা পরিকল্পনা থাকে।

শামা আগ্রহ নিয়ে বলল, তোর বিয়ের পরিকল্পনাটা শুনি। থাক এখন না, রাতে ঘুমুতে যাবার সময় শুনব।

এশা হাঁড়িতে পানি দিয়ে নাড়তে নাড়তে বলল, রাতে ঘুমাতে যাবার সময় কিছু শুনতে পারবে না আপা। তখন বাসায় খুব হৈচৈ হতে থাকবে। কান্নাকাটি হতে থাকবে। এর মধ্যে গল্প শুনবে কি?

হৈচৈ কান্নাকাটি হবে কেন?

কারণ মন্টু রাতে বাসায় ফিরবে না। বাবা ছেলের জন্যে অস্থির হয়ে পড়বেন। তাঁর ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাবে। রাত বারটা একটার সময় কাঁদতে কাঁদতে নিজেই ছেলের সন্ধানে বের হবেন। বের হলেও লাভ হবে না। আগামী এক সপ্তাহ তিনি ছেলে খুঁজে পাবেন না।

শামা বলল, তুই তাকে লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেছিস।

হ্যাঁ। আমি তাকে মুত্তালিব চাচার ঘরে রেখে এসেছি। তাঁকে বলে এসেছি মন্টুকে যেন এক সপ্তাহ লুকিয়ে রাখেন। আমি চাই বাবার একটা ভাল শিক্ষা হোক। ছেলের ওপর তিনি যত রাগই করেন, অচেনা অজানা একদল মানুষের সামনে তিনি তাকে লজ্জা দিতে পারেন না।

মা জানে যে, মন্টুকে তুই লুকিয়ে রেখেছিস? জানেন।

আমিতো এই মাত্রই মুত্তালিব চাচার কাছ থেকে এলাম। তুই কখন মন্টুকে নিয়ে গেলি?

আমি খুব দ্রুত কাজ করি আপা।

তাইতো দেখছি। এখন শুনি তোর বিয়ের পরিকল্পনা। তুই কথা শুরু করার আগে আমি তোক একটা কথা বলে নেই। মাথায় আঁচল দিয়ে তুই রান্না করছি। তোকে বউ বউ লাগছে। মনে হচ্ছে তুই একটা বিরাট বড় বাড়ির বড় বউ। এবং বাড়িটার সমস্ত ক্ষমতা তোর হাতের মুঠোয়।

আমাকে সুন্দর লাগছে কি-না সেটা বল?

তোকে পরীর মতো লাগছে। মনে হচ্ছে এক্ষুণি শাড়ির ফাঁক দিয়ে তোর পাখা বের হয়ে আসবে।

এশা ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তোমার সবচে’ বড় গুণ কী জান আপা? তোমার সবচে’ বড় গুণ হললা তুমি চট করে মানুষকে খুশি করে ফেলতে পার। আমি পারি না। তুমি খুব সুন্দর করে মিথ্যা কথা বল। আমি মিথ্যা কথা বলতে পারি না। যে মিথ্যা কথা বলতে পারে না তাকে মানুষ ভয় পায়। ভালবাসে না, পছন্দ করে না।

জ্ঞানের কথা বন্ধ করে তোর বিয়ের পরিকল্পনাটা বল, আমার শুনতে ইচ্ছা করছে।

এশা বোনের দিকে ফিরল। সে বসেছিল পিঁড়িতে। পিঁড়ি আরেকটু টেনে নিল শামার দিকে। গলা সামান্য নামিয়ে বলল, আপা শোন, আমি খুব খারাপ ধরনের, খুবই বাজে টাইপ একটা ছেলেকে বিয়ে করতে যাচ্ছি। কারণ তাকে আমার খুবই পছন্দ।

কেন পছন্দ?

কেন পছন্দ সেটা আরেকদিন বলব। এখন পরিকল্পনাটা শোেন। আমি ঠিক করেছি তাকে বিয়ে করব কাজি অফিসে। তার বিরুদ্ধে পুলিশের বেশ কয়েকটা মামলা আছে। সে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, আমি ব্যবস্থা করে রাখব যেন কাজি অফিসে বিয়ের পর পর পুলিশ তার খোঁজ পায়। কাজি অফিস থেকেই পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। যেন পরের দুই বা তিন বছর সে জেল থেকে বের হতে না পারে।

বলিস কী?

এটা ছাড়া আমার কোনো পথ নেই আপা। বিয়ের পর পর সে যদি জেলে চলে যায়, যদি অনেকদিন সে তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে না পারে, তাহলে সে যে কষ্টটা পাবে তার কোনো তুলনা নেই। এই কষ্টটাই তাকে বদলে ফেলবে। বাকি জীবন সে চেষ্টা করবে যেন এক মুহূর্তের জন্যেও আমাকে ছেড়ে থাকতে না হয়।

তোর কষ্ট হবে না?

আমি ভবিষ্যতের আনন্দটা দেখতে পাচ্ছিতো। আমার কষ্ট হবে না। তোমার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমি কেন বিয়ে করতে পারছি না তা বুঝতে পারছোতো? যে পরিবারের একটা মেয়ে এমন একজনকে বিয়ে করে, যাকে বিয়ের দিনই পুলিশ ধরে নিয়ে হাজতে ঢুকিয়ে দেয়, সেই পরিবারের মেয়েরা কেমন? সেই পরিবারের অন্য মেয়েদের বিয়ে হবার কথা না। বুঝতে পারছো?

পারছি। কিছু বলবে?

এত হিসাব নিকাশ করে কি সংসার চলে? সংসারতো কোনো অংক না।

কে বলল অংক না? অংকতো অবশ্যই। জটিল অংক, তবে খুব জটিল না। আপা, মাংসের লবণটা চেখে দেখতে লবণ ঠিক হয়েছে কি-না। লবণ চাখতে আমার কেন জানি সব সময় ঘেন্না লাগে।

 

রাত দশটার পর থেকে আবদুর রহমান সাহেব খুব অস্থির হয়ে পড়লেন। একবার বাইরের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ান, একবার যান রাস্তায়, আবার ঘরে ফিরে আসেন। সুলতানা বললেন, খেয়ে নাও। রাত হয়ে গেছে।

আবদুর রহমান সাহেব বললেন, ক্ষিধে নেই।

সুলতানা বললেন, ছেলেকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। এসে পড়বে। যাবে। কোথায়।

আবদুর রহমান সাহেব চাপা গলায় বললেন, গাধা ছেলে। কোথায় না কোথায় গিয়েছে। রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে কি-না কে জানে!

রাস্তা হারাবে না, চলে আসবে।

কী করে বললে চলে আসবে? সব কিছু জেনে বসে আছ? দেখি শার্ট প্যান্ট দাও।

শার্ট প্যান্ট দিয়ে কী করবে? ছেলে খুঁজে বের করতে হবে না? এত বড় শহরে তুমি কোথায় খুঁজবে?

আবদুর রহমান সাহেব ক্ষিপ্ত গলায় বললেন, আমাকে কী করতে বল? খাওয়া দাওয়া করে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ব? আমার ছেলে ঘরে ফিরছে না আর আমি বিছানায় শুয়ে থাকব? তুমি আমার সামনে তালগাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকবে না। আমার সামনে থেকে যাও।

সুলতানা শামাদের ঘরে গেলেন। গলা নিচু করে বললেন, তোর বাবা কাঁদছে। মন্টুকে নিয়ে আয়।

এশা বলল, অসম্ভব। এক সপ্তাহ মন্টুকে লুকিয়ে রাখতে হবে।

তোর বাবা কাঁদছে।

কাঁদুক। তোমার ইচ্ছা হলে তুমি রুমাল দিয়ে বাবার চোখ মুছিয়ে দাও। এক সপ্তাহ আমি মন্টুকে লুকিয়ে রাখব।

সুলতানা শান্ত গলায় বললেন, মা এটা তোর সংসার না। এটা আমার সংসার। তোর সংসার তুই তোর মতো করে চালাবি। আমার সংসার আমি দেখব আমার মতো। মানুষটা হাউমাউ করে কাঁদছে। তোরা যত ইচ্ছা তাদের স্বামীকে কাদাস। আমি আমার স্বামীকে কাঁদতে দেব না।

শামা বলল, মা তুমি বাবার কাছে যাও। আমি মন্টুকে নিয়ে আসছি।

 

মন্টু বেশ সহজভাবেই কার্পেটে বসে টিভিতে এক্স ফাইল দেখছিল। আজকের পর্বটা দারুণ। টেনশনে মন্টুর শরীর কাপছে। পর্দা থেকে চোখ সরাতে পারছে না।

শামা যখন বলল, মন্টু যা বাসায় যা। মন্টু বলল, আপা পনেরো মিনিট পরে যাই।

এক্স ফাইল হচ্ছে? হু। আচ্ছা ঠিক আছে, পনেরো মিনিট পরেই যা।

মুত্তালিব সাহেব নিজের ঘরের খাটে আধশোয়া হয়ে বসে আছেন। শামা ঘরে ঢুকে বলল, চাচা আপনি কি রাতের খাবার খেয়ে ফেলেছেন?

মুত্তালিব সাহেব বললেন, না।

আজ একটু দেরি করে খেতে বসবেন। এখা মাংস রান্না করছে। আমি এক বাটি মাংস দিয়ে যাব।

মাংস দিতে হবে না। রাতে আমি কিছু খাই না। এক গ্লাস দুধ খেয়ে শুয়ে পড়ব।

মুখ বাঁকা করে বসে আছেন কেন? হাঁটু ব্যথা করছে?

হুঁ।

পায়ে গরম তেল মালিশ করে দেই।

কিছু মালিশ করতে হবে না।

এরকম করে কথা বলছেন কেন? কী হয়েছে।

কিছুই হয় নি। তোকে দেখে কেন জানি বিরক্ত লাগছে। তুই সামনে থেকে যা। যাবার সময় বাতিটা নিভিয়ে দিয়ে যা।

একটা টেলিফোন করি চাচা?

যা ইচ্ছা কর।

শামা বাতি নিভিয়ে চলে গেল। তৃণার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলবে। তারপর মন্টুকে নিয়ে বাসায় যাবে।

মুত্তালিব সাহেব অন্ধকারে হাসলেন। তাঁর মনটা আজ এই মুহূর্তে খুব ভাল। তিনি উঁকিল ডাকিয়ে উইল করেছেন। উইলে শামা নামের মেয়েটিকে তাঁর ইহজীবনের সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে গিয়েছেন। কাজটা করতে যথেষ্ট ঝামেলা হয়েছে। নিজের কন্যা জীবিত থাকতে অন্য কাউকে বিষয় সম্পত্তি দেয়া যায় না। আইনের জটিলতা আছে। উঁকিল সাহেবকে আইনের জটিলতা থেকে পথ বের করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত পথ বের করা গেছে। মুত্তালিব সাহেব ঠিক করেছেন। যেহেতু আজই কাগজপত্র ফাইনাল হয়েছে আজ থেকেই তিনি শামার সঙ্গে। যতদূর সম্ভব খারাপ ব্যবহার করবেন। যেন তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর দানপত্রের খবর পেয়ে শামা ফঁপিয়ে খুঁপিয়ে তাঁর জন্যে কাঁদে।

তিনি পিঠে ক্রস দেয়া একজন মানুষ। তাঁর মৃত্যুর পর কেউ কাঁদবে না এই বিষয়টি তাঁকে খুব কষ্ট দিত। আজ তিনি জানেন কেউ কাঁদবে না এটা ঠিক না। একটা মেয়ে কাঁদবে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদবে। মুত্তালিব সাহেবের চোখে হঠাৎ পানি এসে গেল।

 

তৃণা খলবল করে বলল, শামা তুই আমাকে চাইনিজ খাওয়াবি কি-না বল।

চাইনিজ খাওয়াবার মতো কিছু ঘটেছে?

হ্যাঁ ঘটেছে। কবে চাইনিজ খাওয়াবি?

কথায় কথায় চাইনিজ খাওয়াবার মতো অবস্থা কি আমার আছে?

টাকা ধার কর। চাচার কাছে থেকে ধার নে। শোন তোর জন্যে কী করেছি। আমার ট্রিকস একশ ভাগ কাজ করেছে। মিঃ হুক্কা এন্ড হিজ ফ্যামিলিকে পুরোপুরি কজা করে ফেলেছি। ঐ দিন যদি তোর ব্যাগে মিঃ হুক্কার চশমা না রাখতাম তাহলে এটা পারতাম না। হুক্কা ফ্যামিলি গোপনে তোদর সব খবরাখবর নিয়েছে। হুক্কার মাতা একদিন কলেজে গিয়ে তোকে দেখেও এসেছে। তোর কি মনে পড়েছে হাবাগোবা টাইপের এক মহিলা একদিন কলেজে এলেন? আমি তাকে দেখে ‘আরে চাচিআম্মা আপনি’ বলে খুব আহ্লাদি করলাম। উনি হচ্ছেন হুক্কা-মাতা। এখন ওরা আগামী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তোদর বাড়িতে ফরম্যাল প্রস্তাব নিয়ে যাবেন। বুঝলি কিছু?

বুঝলাম।

হুকার পিতা খুবই অসুস্থ। এখন মরেন তখন মরেন অবস্থা। কাজেই ব্যবস্থা এমন থাকবে যে প্রস্তাব দেবার পর প্রস্তাব গ্রাহ্য হলে সঙ্গে সঙ্গে কাজি আনতে লোক যাবে। বিয়ে হয়ে যাবে। মিস্টার হুক্কা তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বারডেমের। হাসপাতালে মৃত্যুপথযাত্রী পিতার শয্যার পাশে উপস্থিত হবেন। ঘটনা কেমন ঘটিয়েছি বল দেখি?

ভাল।

বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কে যাচ্ছেন জানিস? বাংলাদেশের দু’জন অতি বিখ্যাত ব্যক্তি। তাঁদের পরিচয় আগে দিলাম না। এই অংশটা সারপ্রাইজ হিসেবে থাকুক। শামা তুই খুশিতো?

বুঝতে পারছি না।

যখন নিজেদের সুইমিংপুলে মনের সুখে সাঁতার কাটবি তখন বুঝবি। শামা আমি এখন রাখি। কাল তোদর বাসায় এসে সব বলব। চাচা চাচির সঙ্গেও কথা বলব।

আচ্ছা।

আসল কথাইতো বলতে ভুলে গেছি রে। এতক্ষণ শুধু নকল কথা বললাম। আসল কথা হলো— আগামীকাল দুপুরে তুই আমার সঙ্গে চাইনিজ খাবি।

ঐ ভদ্রলোক থাকবেন?

হ্যাঁ থাকবেন। যার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে তাকে একটু বাজিয়ে নিবি না? সামান্য লাউ কেনার সময়ও তো মানুষ লাউ-এ চিমটি দিয়ে দেখে, টোকা দিয়ে দেখে। তুই টোকা দিবি না?

আচ্ছা।

এরকম শুকনো গলায় কথা বলছিস কেন? তোর উচিত আনন্দে লাফানো। আমি তোর জন্যে কী করলাম এটা তুই এখন বুঝতে পারবি না— দশ বছর পর বুঝবি। মনে থাকে যেন আগামীকাল দুপুর। তোর কোনো শাদা শাড়ি আছে? শাদা শিফন?

না।

আচ্ছা শাদা শাড়ি আমি নিয়ে আসব। মেয়েদের সবচে’ মানায় ধবধবে শাদা শাড়িতে। আমাদের দেশের মেয়েরা শাদা শাড়ি পরে না কারণ শাদা বিধবাদের রঙ। তুই পরবি ধবধবে শাদা রঙ, গলায় থাকবে মুক্তার মালা। ঠোটে গাঢ় করে লাল লিপস্টিক দিবি। শাদার ভেতর থেকে লাল রঙ লাফ দিয়ে বের হবে। তোর কি মুক্তার মালা আছে?

না।

অসুবিধা নেই আমি জোগাড় করব।

শামা টেলিফোন নামিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। তারপর আতাউরের নাম্বারে ডায়াল ঘুরাল। একজন মহিলা ধরলেন। নরম গলায় বললেন, তুমি কে?

শামা বলল, আমার নাম এশা। আমি আতাউর ভাইয়ের সঙ্গে একটু কথা বলতে চাচ্ছিলাম।

ও অসুস্থ। ওকেতে দেয়া যাবে না।

কী হয়েছে?

ও অসুস্থ।

এই বলেই মহিলা টেলিফোন রেখে দিলেন। শামা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইল। তার কাছে মনে হচ্ছে বাড়িটা কাঁপছে। সে এক্ষুণি পড়ে যাবে।

 

আশফাকুর রহমান নীল ব্লেজার পরেছেন। এই গরমে কেউ ব্লেজার পরে না, তিনি পরেছেন। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে ব্লেজার ছাড়া অন্য কিছু পরলে তাঁকে মানাতো না। শামার কাছে মনে হলো বিয়ে বাড়িতে জ্বলোককে একরকম দেখাচ্ছিল, আজ অন্যরকম দেখাচ্ছে। বিয়ে বাড়িতে তাঁর মধ্যে ছেলেমানুষি ভাব ছিল। আজ নেই।

আশফাকুর রহমান তৃণার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি না বললে তোমরা ছ’জন বান্ধবী এক সঙ্গে থাকবে?

তৃণা বলল, ছ’জন না, সাতজন। মীরার বিয়েতে আমাদের একজন যেতে পারে নি। সেও আজ থাকবে। তবে তারা সবাই আসবে এক ঘণ্টা পর। শুরুতে থাকব আমরা তিনজন।

ও আচ্ছা।

আপনি শামার কাছে ক্ষমা চাইবেন বলেছিলেন। চেয়েছিলেন?

না। উনার সঙ্গে পরে আর দেখা হয় নি।

এইতো দেখা হলো, ক্ষমাটা চেয়ে নিন। ক্ষমা প্রার্থনা দৃশ্য দিয়ে আজকের টোকাটুকি খেলা শুরু হোক।

টোকাটুকি খেলা মানে?

টোকাটুকি খেলা আপনি বুঝবেন না। আমরা বান্ধবীরা অনেক সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করি। কই ক্ষমা প্রার্থনা শুরু করুন।

শামাকে অবাক করে দিয়ে ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন। মঞ্চে বক্তৃতা দেয়ার ভঙ্গিতে কথা বলা শুরু করলেন। ক্ষমা প্রার্থনা নিয়ে তৃণা মজা করছিল,

দ্রলোককে দেখে মনে হচ্ছে তিনি মজা করছেন না।

বিয়ে বাড়ির ঐ রাতের ঘটনার জন্যে আমি খুবই লজ্জিত। আপনাকে অপ্ৰস্তুত করার জন্যে আপনার বান্ধবীরা যে এই কাণ্ডটা করবে তা আমার মাথাতেও আসে নি। আমি যে কী পরিমাণ লজ্জা পেয়েছি তা শুধু আমি জানি।

শামা বলল, লজ্জা পাওয়ার মতো এমন কিছু আপনি করেন নি। আপনি দাঁড়িয়ে থাকবেন না, বসুন।

ভদ্রলোক বসলেন। তুণা বলল, শামা এখন তোকে খুব জরুরি একটা কথা বলছি, মন দিয়ে শোন— আশফাকুর রহমান সাহেবের বাবা খুব অসুস্থ। বেশির ভাগ সময়ই তাঁকে অক্সিজেন দিয়ে রাখতে হচ্ছে। তিনি তাঁর একমাত্র ছেলের একটা গতি হয়েছে এটা দেখে যেতে চান। কাজেই আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে উনার জন্যে চমত্তার একটা মেয়ে খুঁজে বের করা। তোর জানা মতে কেউ আছে?

শামা তাকিয়ে আছে। কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ভদ্রলোেক শামার দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনার বান্ধবীর কথায় সামান্য ভুল আছে। ভুলটা আমি ঠিক করে দেই। আমার বাবা প্রচণ্ড শারীরিক কষ্টে আছেন। এই অবস্থায় একজন মানুষ নিজের কষ্ট ছাড়া অন্য কিছুই ভাবতে পারে না। কাজেই তিনি তাঁর পুত্রবধূর মুখ দেখে মরতে চাচ্ছেন এটা খুবই ভুল কথা। তবে আমার আত্মীয়স্বজনরা এ ধরনের কথা বলছেন এটা ঠিক। আমার ধারণা ঢাকা শহরের সব রূপবতী মেয়েদের প্রাথমিক ইন্টারভ ইতিমধ্যেই নেয়া হয়ে গেছে।

তুণা বলল, একজন শুধু বাকি আছে। শামা বাকি আছে। শামার ইন্টারভ্য আপনি নিয়ে নিন। তবে আপনার ইন্টারভ্যুর আগে শামা আপনার বুদ্ধি পরীক্ষা করবে। বুদ্ধি পরীক্ষায় আপনি যদি ফেল করেন তাহলে তার ইন্টারভ্য নিয়ে কোননা লাভ নেই। শামা আপনার দিকে ফিরেও তাকাবে না।

ভদ্রলোক আগ্রহের সঙ্গে বললেন, বুদ্ধি পরীক্ষাটা কী রকম?

তৃণা বলল, মাকড়সা নিয়ে একটা ধাধা। বেশ কঠিন পরীক্ষা। প্রায় নব্লুই পারসেন্ট লোক এই পরীক্ষায় ফেল করে। কাজেই সাবধান!

শামা বলল, তৃণা আপনার সঙ্গে ঠাট্টা করছে। ধাধা জিজ্ঞেস করে কি আর মানুষের বুদ্ধি পরীক্ষা করা যায়?

ভদ্রলোক বললেন, তবু শুনি। আমার শুনতে ইচ্ছা করছে।

তৃণা বলল, শামা লজ্জা পাচ্ছে। সে বলবে না। তার হয়ে আমি প্রশ্নটা করছি। মনে রাখবেন এর উত্তর না দিতে পারলে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে শামা আপনাকে বাতিল করে দেবে। মুখে অবশ্যি কিছু বলবে না। কাজেই সাবধান।

ভদ্রলোক তীব্র দৃষ্টিতে তৃণার দিকে তাকিয়ে আছেন। মনে হচ্ছে তিনি চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করেছেন। উত্তেজনায় তাঁর ফর্সা মুখে লালচে আভা দেখা যাচ্ছে। নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম।

শামার কাছে মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়িতে ভদ্রলোকের ভেতর যে ছেলেমানুষি দেখা গিয়েছিল, সেই ছেলেমানুষিটা আবার ফিরে এসেছে। তৃণা মাকড়সার ব্যাপারটা বলছে। ভদ্রলোক চোখের পাতা না ফেলে শুনছেন। মনে হচ্ছে সত্যি

সত্যি তিনি ভয়ঙ্কর কোনো পরীক্ষা দিতে বসেছেন।

শামার হঠাৎ করেই মনে হলো এই ভদ্রলোকের সঙ্গে বিয়ে হলেও তার মেয়ের নাম রাখা যাবে আশা। আশফাকুর রহমানের আ, শামার শা। আশা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *