ভূত বিশেষজ্ঞ বিখ্যাত থিয়সফিস্ট এবং মিডিয়ামের চেহারা খানিকটা ভূতের মতো। চোয়াল ভাঙা। দুই জুলফিতে সামান্য পাকা চুল ছাড়া মাথায় একটা চুলও নাই। মানুষের মাথা সচরাচর গোলকার হয় না। ইনারটা পারফেক্ট sphere। চোখ ইঁদুরের মতো পুঁতি পুঁতি। চোখের মণি স্থির না। মনে হয় সারাক্ষণ কিছু খুঁজছে। হয়তোবা ভূতই খুঁজছে। অতিরিক্ত রোগা একজন মানুষ। রোমান সিনেটারদের মতো গেরুয়া চাদর পরেছেন। ভদ্রলোকের নাম প্রফেসর টি আলি নরুন্দ।
তিনি কোনো কলেজের অধ্যাপক না। ম্যাজিশিয়াম এবং জোতিষীরা যেমন নামের আগে প্রফেসর লাগান ইনিও লাগিয়েছেন। নামের শেষের নরুন্দ কবি রবীন্দ্রনাথের দেয়। রবীন্দ্রনাথ একবার প্ল্যানচেটে এসে বললেন, আলি শোন, তুই নামের শেষে নরুন্দ লিখবি।
প্রফেসর টি আলি বিনয়ের সঙ্গে বললেন, নরুন্দ শব্দটার অর্থ কী গুরুদেব?
গুরুদেব বললেন, পরকালে আমার প্রধান কাজ হচ্ছে নতুন নতুন শব্দ তৈরি করা। নরুন্দ শব্দটা কিছুদিন হলো তৈরি করেছি। এই শব্দ দিয়ে একটা গানও লিখেছি। দীর্ঘ তিন অন্তরার গান। প্রথম লাইন— গগনে গগনে নরুন্দের খেলা। নরুন্দ শব্দটার মানে দিয়েছি মেঘ। পরকালের শব্দ তো। ইহকালে তুমি ইচ্ছা করলে অন্য মানেও করতে পার।
প্রফেসর টি আলি নরুন্দ তার নামকরণের ইতিহাস বর্ণনা করে বললেন, এখন বলুন আপনাদের জন্যে কী করতে পারি? মৃত আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলতে চান? কথা বলিয়ে দেব। তবে টাটকা মরা হলে দ্রুত আত্মা নিয়ে আসব। দশ-বারো বছর হয়ে গেলে সমস্যা।
কাদের খান ভয়ে ভয়ে বললেন, কী সমস্যা?
আত্মা ঊর্ধ্বলোকে চলে যায়। ডেকে আনতে কষ্ট হয়। রবীন্দ্রনাথের আত্মাকে অনেকবার এনেছি তো, এখন ডাকলেই চলে আসেন। আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। স্নেহ করেন বলেই নাম দিয়েছেন নরুন্দ। কবিগুরুর স্নেহ পাব কখনো ভাবি নি।
সানাউল্লাহ বললেন, আমরা আসলে কোনো আত্মার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছি না। ভূত-প্রেত বিষয়ে জানতে এসেছি। ভূত নিয়ে একটা বই লিখছি বলেই জানতে চাচ্ছি। শুনেছি এই বিষয়ে আপনার অগাধ জ্ঞান।
নরুন্দ বললেন, অল্পকিছু জানি। অহঙ্কার করার মতো কিছু না। আইনস্টাইনের মতো বলতে হয়–আমি জ্ঞানসমুদ্রে নুড়ি কুড়াচ্ছি।
সানাউল্লাহ বললেন, স্যার, কিছু মনে করবেন না। কথাটা বিজ্ঞানী নিউটনের।
নরুন্দ কঠিন চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, কথাটা আমি সরাসরি আইনস্টাইনের কাছে শুনেছি। প্রায়ই চক্রে উনাকে আহ্বান করা হয়। উনার কাছ থেকে পদার্থবিদ্যার নানান কথা শুনি। পরকালেও গবেষণার মধ্যে আছেন। তবে বেচারা অত্যন্ত লজ্জিত।
কাদের খান বললেন, লজ্জিত কেন?
স্পেশাল থিওরি অব রিলেটিভিটিতে তিনি কিছু ভুল করেছেন। এই ভুলটা পৃথিবীর পদার্থবিদরা ধরতে পারছেন না বলেই লজ্জিত। ভুলটার কারণেই ডার্ক ম্যাটার নিয়ে বিভ্রান্তি থেকেই যাচ্ছে। আইনস্টাইন স্যারের কাছ থেকে অদ্ভুত অদ্ভুত জ্ঞানের কথা শুনি। এত ভালো লাগে।
কাদের খান বললেন, একটা জ্ঞানের কথা আমাদের বলুন। প্লিজ।
নরুদ সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন, ইহকালে আলোর গতি ধ্রুব। সেকেন্ডে এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল। কিন্তু পরকালে আলোর গতি ধ্রুব না। যে যার ইচ্ছামতো আলোর গতি ঠিক করতে পারে। এই কারণে পরকাল হচ্ছে আলোরই খেলা। আপনারা চা খাবেন?
সানাউল্লাহ বললেন, চা খাব না। ভূত বিষয়ে যদি কিছু বলেন। অনেক দূর থেকে এসেছি।
নরুন্দ বললেন, চার-পাঁচ মিনিটে তো কিছুই বলতে পারব না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতে হবে। এত সময় আমার নেই। আপনাদেরও নিশ্চয়ই নেই।
সানাউল্লাহ বললেন, আমাদের সময়ের সমস্যা নেই। আপনার সমস্যাটাই প্রধান।
বেসিক জিনিসগুলি আজ বলে দিচ্ছি। আরেকদিন অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে চলে আসবেন, আপনাদের চক্রে ঢুকিয়ে দেব। সরাসরি আত্মার সঙ্গে যোগাযোগ হবে।
কাদের খান বলল, স্যার, আপনি যেদিন অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেবেন সেদিনই চলে আসব।
নরুন্দ বললেন, চক্রে বসার ফি বাবদ আমি পার পারসন দুই হাজার করে টাকা নেই। আগেভাগেই বলে দিলাম।
কাদের খান বললেন, বলে ভালো করেছেন স্যার। আমি একটু টানাটানির মধ্যে আছি। সানাউল্লাহ স্যার বসবেন। এইসব বিষয় উনারই বেশি জানা দরকার।
নরুন্দ ভূত-পরকাল বিষয়ে যা বললেন তা হচ্ছে— আত্মা বা soul অবিনশ্বর। আত্মারাই ঘুরাফেরা করেন। তাদেরকে আমরা ভূত বলে ভুল করি। ভূত হচ্ছে পরকালের জীবজন্তু। এদের জন্ম-মৃত্যু আছে।
সানাউল্লাহ বললেন, আমরা যেমন মৃত্যুর পর পরকালে যাচ্ছি। ভূতরা কোথায় যায়?
নরুন্দ বললেন, ওদের জন্যে আলাদা পরকাল আছে। সেই পরকাল হচ্ছে শুদ্ধতা শিক্ষার আবাস। সেখানে তারা শুদ্ধ হয়। শুদ্ধ হবার পর তারা মানুষ টাইটেল পায়। পুরোপুরি মানুষ হওয়া অবশ্যি তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তারা হয় ভূ-মানুষ। অর্থাৎ ভূত মানুষ। তাদের একজনকে আমি চক্রে আহ্বান করেছিলাম। অত্যন্ত ফ্রাস্টেটেড তার কথাবার্তা।
কাদের খান বললেন, স্যার, একটু পরিষ্কার করে যদি বলেন। কিছুই বুঝতে পারছি না।
নন্দ বললেন, পাঁচ মিনিট কথা বলেই সব বুঝে ফেলতে চান? তা-কি হয়? আমি বৎসরের পর বৎসর এই বিষয় নিয়ে কাজ করে সামান্য একটা নুড়ি কুড়িয়ে পেয়েছি।
সানাউল্লাহ বললেন, স্যার, বিদায় দেন। যাই। আপনার সঙ্গে কথা বলে অত্যন্ত আনন্দ পেয়েছি।
নরুন্দ বললেন, আমার আধাঘণ্টা সময় নিয়েছেন। তার ফি বাবদ দুজনের পাঁচশ টাকা হয়। আপনারা চারশ টাকা দিন। আপনাদের জন্যে স্পেশাল ডিসকাউন্ট দিলাম। ভূত নিয়ে বই লিখছেন বলেই এই ডিসকাউন্ট।
সানাউল্লাহ পাঁচশ টাকার একটা নোট বের করে বললেন, স্যার, পুরোটাই রেখে দিন।
নরুন্দ টাকা পাঞ্জাবির পকেটে রাখতে রাখতে বললেন, আপনি আগামী বুধবার চলে আসুন। চক্রে বসিয়ে দেব। ঐদিন কবিগুরুকে ডাকব। প্রয়োজনে তাঁর কাছ থেকে একটা নামও নিতে পারেন।
কাদের খান রাস্তায় নেমেই বলল, বিরাট ফ্ৰড়। কী বলেন স্যার?
সানাউল্লাহ বললেন, চট করে কাউকে ফ্রড বলা ঠিক না। ভেতরে জিনিস আছে, আমরা বুঝতে পারছি না। আলোর গতি নিয়ে উনি যে কথাটা বললেন, তা শুদ্ধ জ্ঞানের কথা। চক্রে এসে দেখি কী হয়।
দুই হাজার টাকা খামাখা নষ্ট করবেন?
সানাউল্লাহ বললেন, নষ্ট নাও তো হতে পারে। সবকিছু নিগেটিভ ভাবে চিন্তা করা ঠিক না।
রাত বেশি হয় নি। আটটা বাজে। সানাউল্লাহ কাদের খানকে নিয়ে Hope ক্লিনিকে গেলেন। বন্ধুর সঙ্গে দেখা হচ্ছে না। সানাউল্লাহর অস্থির লাগছে। এর আগেও তিনি দুবার Hope ক্লিনিকে এসেছেন। দেখা হয় নি। আজ আরেকবার চেষ্টা নেবেন। রোগীর সঙ্গে কেউ দেখা করতে পারবে না— এটা কেমন কথা! বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা হলে বরং রোগীর মন প্রফুল্ল হবে।
আজও দেখা হলো না। রিসিপশনে বসে অবিকল চামচিকার মতো মেয়েটি বলল, পেশেন্ট ঘুমাচ্ছে।
সানাউল্লাহ বললেন, মাত্র আটটা বাজে, এর মধ্যে পেশেন্ট ঘুমাচ্ছে?
রিসিপশনিস্ট বলল, আমাদের এখানকার নিয়ম হচ্ছে সন্ধ্যা সাতটায় ডিনার দেয়া হয়। সাড়ে সাতটার মধ্যে পেশেন্টকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হয়। মেন্টাল পেশেন্টের জন্যে ঘুমটাই একমাত্র চিকিৎসা।
কাদের খান বলল, একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন না ম্যাডাম। হয়তো জেগে আছেন।
রিসিপশনেস্ট বলল, প্রথম কথা পেশেন্ট ঘুমুচ্ছে। দ্বিতীয় কথা জেগে থাকলেও দেখা করতে দেয়া হবে না। আমরা পেশেন্টকে solation-এ রাখি। উনাকে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গেই দেখা করতে দেয়া হয় না। আপনারা তো অনেক দূরের।
সানাউল্লাহ বললেন, আমি দূরের কেউ না। আমি তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
পাগলের আবার বন্ধু কী? পাগলের কাছে সবাই বন্ধু আবার সবাই শত্রু, বুঝেছেন? এখন বিদায় হোন।
আবু করিম জেগে আছেন। এখন তিনি বাঁধা অবস্থায় নেই। বিছানায় পা ঝুলিয়ে হতাশ ভঙ্গিতে বসে আছেন। ঘুমের ইনজেকশন নিয়ে নিয়ে তার মধ্যে জবুথবু ভাব চলে এসেছে। তিনি হতাশ চোখে নার্সের দিকে তাকিয়ে আছেন। নার্স সিরিঞ্জে ওষুধ ভরছে।
আবু করিম বললেন, ইনজেকশনটা দুটা মিনিট পরে দাও। দুটা মিনিট তোমার সঙ্গে কথা বলি।
নার্স বলল, দুই মিনিট প্রেম করতে চান?
আবু করিম বললেন, প্রথম দিনেই তোমাকে মা বলে ডেকেছিলাম। তুমি মনে হয় ভুলে গেছ।
মার্স বলল, দুই মিনিট সময় দেয়া যাবে না। এক মিনিট দিলাম। বলুন কী বলবেন?
আবু করিম বললেন, আমি আমার বন্ধু সানাউল্লাহকে একটা চিঠি লিখেছি। চিঠিতে পুনশ্চ দিয়ে লিখেছি— যে তোমাকে এই চিঠিটা দেবে তুমি সঙ্গে সঙ্গে নগদ দশ হাজার টাকা দেবে। আমার বন্ধু টাকাটা অবশ্যই দেবে। এখন মা বলো, তুমি কি চিঠিটা তাকে পৌঁছে দিয়ে দশ হাজার টাকা রোজগার করতে চাও? আমার বালিশের নিচে চিঠিটা আছে।
নার্স বলল, আপনার এক মিনিট শেষ। হাত বাড়ান, ইনজেকশন দেব।
হতাশ আবু করিম দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে হাত বাড়ালেন।
আইনুদ্দিনকে Hope ক্লিনিকে ভর্তি করার ব্যবস্থা গোপনে গোপনে করা হয়েছে। আইনুদ্দিনের শাশুড়ি মেয়ে রুবাকে নিয়ে কাজটা করেছেন। ডা. জোহরা খানম ফিজিক্সের ছাত্রী সেজে গোপনে দেখেও গেছেন। তিনি বলেছেন, পেশেন্টের কথাবার্তা আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক মনে হলেও পেশেন্ট সিঙ্গেল ট্রেক হয়ে গেছে। যে-কোনো মুহূর্তে ট্রেকচ্যুত হবে। তখনি ভায়োলেন্ট হয়ে যাবে। ট্রেকচ্যুত হবার আগেই তাকে ক্লিনিকে ভর্তি করা দরকার। আপনারা ভুলিয়ে-ভালিয়ে কোনো রকমে তাঁকে ক্লিনিকের গেট পর্যন্ত আনুন। বাকিটা আমার লোকজন করবে।
আইনুদ্দিনের স্ত্রী এবং শাশুড়ি আজ এই উদ্দেশ্যেই সন্ধ্যা থেকে বসে আছেন। বেড়াতে যাবার কথা বলে আইনুদ্দিনকে গাড়িতে তোলা হবে। আইনুদ্দিন রাজি হয়েছেন। তিনি বলেছেন একটা জটিল অঙ্ক করছেন। অঙ্ক শেষ হলেই গাড়িতে
সালেহা বেগম বললেন, বাবা, এটা কী অঙ্ক এত সময় লাগছে।
আইনুদ্দিন বললেন, ভূত বিষয়ক একটা অঙ্ক।
ভূতের অঙ্ক?
জি। বিষয়টা হচ্ছে–আমি ভূতের একটা কাল্পনিক সমীকরণ দাঁড় করিয়েছি।
ভূত কণার কৌণিক ভরবেগ হিসাবে Fermion কণা নিয়েছি। তবে তার সঙ্গে একটি ইমাজিনারি নাম্বার বসিয়ে দিয়েছিঅর্থাৎ স্কয়ার রুট অব মাইনাস ওয়ান। যেহেতু ভূত একটি ইমাজিনারি বিষয়, ইমাজিনারি নাম্বারটা আসা উচিত।
সালেহা বেগম মেয়ের সঙ্গে চোখ চাওয়া-চাওয়ি করলেন। রুবা বলল, তোমার এই ভূতের অঙ্ক শেষ হতে কতক্ষণ লাগবে?
আইনুদ্দিন বললেন, বুঝতে পারছি না।
রুবা বলল, এক ঘণ্টার জন্যে অংকটা বন্ধ রাখ। আমরা এর মধ্যে ঘুরে চলে আসব।
আইনুদ্দিন বললেন, কোথায় যাব?
সালেহা বেগম বললেন, একটু আগে কী বললাম? আমার এক পরিচিত রোগী হোপ ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছে। তাকে দেখে আসব।
আইনুদ্দিন বললেন, আমি তাকে জবেকীকরব। আমি তো ডাক্তার না।
রুবা বলল, কেউঅসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া হলো সামাজিক। তুমি রাজি হয়েছিলে যাবে, এখন গাঁই গুই করছ কেন?
অঙ্ক করছি তো।
তোমার অঙ্ক পালিয়ে যাচ্ছে না। একঘণ্টার মধ্যে আবার শুরু করতে পারবে।
আইনুদ্দিন বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে।
সালেহা বেগম বললেন, বরং একটা কাজ কর, তোমার খাতা কলম সাথে নিয়ে দাওন। গাড়িতে যেতে যেতে ভূতের অঙ্ক করবে। এই বলেই তিনি মেয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিলেন।
অইনুদ্দিন খাতা এবং কলম নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। তখন তাঁর হঠাৎ করে মনে হলো—প্রকৃতি জটিলতা পছন্দ করে না। তিনি অকারণেই সমীকরণ জটিল করেছেন। ভূতের কণা হওয়া উচিত Boson কণা। নতুন এই বিষয় মাথায় নিয়ে হাসপাতালে যাবার প্রশ্নই ওঠে। তিনি বলেন, একটা মিনিট সময় চাই বাথরুমে যাব।
সালেহা বেগম দরাজ গলায় বললেন, এক মিনিট কেন? যতক্ষণ লাগে সময় নাও। ভালোমতো হাতমুখ ধুয়ে নিও। ভূতের ভঙ্ক করতে করতে তোমাকে দেখাচ্ছেও ভূতের মতো।
আইনুদ্দিন বাথরুমে না ঢুকে পেছন দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলেন। তাঁর গন্তব্য সানাউল্লাহর বাড়ি। তিনি ঠিক করেছেন অঙ্ক শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানেই থাকবেন।
সালেহা বেগম হেপি ক্লিনিকে জোহরা খানমকে টেলিফোন করে জানালেন, রোগী নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই রওনা হচ্ছি। রোগী এখন বাথরুমে। বাথরুম থেকে বের হলেই রওনা হবো। গাড়ি রেডি আছে। রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ। এখন সে ভূতের অঙ্ক করছে।
জোহরা খানম বললেন, কোনোরকমে ক্লিনিকে নিয়ে আসুন। ভূতের অঙ্ক চিরজীবনের মতো ভুলিয়ে দেব।
রাত এগারোটায় আইনুদ্দিন অনেক ঝামেলা করে সানাউল্লাহর বাড়ি খুঁজে পেলেন। আইনুদ্দিনের চেহারা উদ্ভ্রান্ত। তিনি মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন সানাউল্লাহর বাড়ি খুঁজে পাবেন না। বাকি জীবন তাঁকে রিকশায় বসে কাটাতে হবে। এটা কোনো সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে রিকশা ভাড়া। তিনি শূন্য পকেটে বের হয়েছেন।