০৭. পীর সাহেবের সঙ্গে দেখা

জালালুদ্দিন হীরুর সঙ্গে তার পীর সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। পীর-ফকিরের প্রতি তার কোনো রকম বিশ্বাস নেই। তবু এসেছেন। কারণ ঘর থেকে বের হতে ইচ্ছে করছে। তার মনে ক্ষীণ আশা ছিল যেহেতু চোখে দেখতে পান না হীরু হয়ত একটা রিকশা ভাড়া করবে। অন্ধ বাপকে তো আর হাঁটিয়ে নেবে না।

হীরু রিকশার ধার দিয়েও গেল না। ঠেলেঠলে এক বাসে তুলে ফেলল। সেই বাসে গাদাগাদি ভিড় এর মধ্যেও বসার জায়গা করে ফেলল। জানালার পাশে বসেছে এমন একজন মানুষকে খুঁজে বের করল যাকে দেখে মনে হয় এর হৃদয়ে দয়ামায়া আছে, অনুরোধ করলে ফেলবে না। হীরু তার কাছে গিয়ে বিনয়ে প্রায় গলে গিয়ে বলল, ব্লাইণ্ড পারশন নিয়ে এসেছি ভাই জায়গা দিন। ব্লাইন্ড এবং সিক দুটাই একসঙ্গে। যায় যায় অবস্থা বলতে পারেন।

সঙ্গে সঙ্গে জায়গা হল! হীরু বলল, থ্যাংকস ভাই। মেনি থ্যাংকস। হীরুর কাছে মনে হল আজকের দিনটা খারাপ না। শুভ। পীর সাহেবের সঙ্গে দেখা হবে। সব দিন দেখা হয় না! লোকজনের ভিড় থাকে। কোনো কোনো দিন পীর সাহেব চিল্লায় বসেন। চিল্লা ব্যাপারটা কী সে জানে না। তবে তার ধারণা ব্যাপারটা খুবই জটিল কিছু; কারণ পীর সাহেব যেদিন চিল্লায় বসেন সেদিন তার খাদেমরা ইশারায় কথা বলেন। তখন কোনো রকম শব্দ করা নিষিদ্ধ।

যা ভাবা গিয়েছিল তাই। যাওয়ামাত্র পীর সাহেবের সঙ্গে দেখা হল। যে কোনো কারণেই হোক আজ লোকজন একেবারেই নেই। পীর সাহেব বারান্দায় বিমর্ষমুখে একা একা বসে আছেন। অনেকটা দূরে দু’জন বোরকা পরা মেয়ে। মেয়ে দু’টি কাঁদছে। পীর সাহেব বললেন, খবর কি রে তোর?

হীরু বলল, আপনার দোয়া স্যার। আমি আমার ফাদারকে নিয়ে এসেছি। আপনার খুব ভক্ত।

পীর সাহেব নিস্পৃহ গলায় বললেন, ভাল করেছিস। খুব ভাল করেছিস।

ছোট ভাইয়ের ব্যাপারটাও স্যার একটু মনে করিয়ে দিতে আসলাম। খুবই চিন্তাযুক্ত আছি। বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ।

পীর সাহেব বড় করে হাই তুললেন।

হীরু বাবার কানে কানে বলল, হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছ কেন? পা ছুঁয়ে সালাম কর।

জালালুদ্দিন বিরক্ত গলায় বললেন–পা দেখতেই পাচ্ছি না, সালাম করব কী?

হীরু পীর সাহেবের দিকে তাকিয়ে হাত কচলাতে কচলাতে বলল বাবার চোখে একটা সমস্যা আছে স্যার। বলতে গেলে ব্লাইন্ড। একটু দয়া করে যদি দেখেন।

পীর সাহেব হীকর দিকে না তাকিয়েই বললেন, চোখ ঠিক হয়ে যাবে!

হীরু তার বাবার কানে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল, এক কথায় ঝামেলা মিটিয়ে দিলাম। এখন বাড়িতে গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাও।

জালালুদ্দিন বিশেষ ভরসা পেলেন বলে মনে হল না; ফিসফিস করে বললেন, কাঁদছে কে রে?

হীরু বলল, মেয়েছেলে কাঁদছে। ওরা কাঁদবেই। মেয়েছেলে মানেই কান্দন পার্টি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *