০৭. পাঁচ মিশেলি
নারীর জন্ম হয়
নারীর জন্মই হয় পরীক্ষা দিতে। কঠিন কঠিন সব পরীক্ষা। পরীক্ষা বলতে, ধৈর্য, সংযম, ধর্ম, সতীত্ব, জরায়ু, মাতৃত্ব। বৈধব্যে নারীর পরীক্ষা, বাকি জীবন তার যোনিকে বিশুদ্ধ রাখা। মজার ব্যাপার পুরুষের বেলায় কিন্তু বেঁধে দেয়া বলতে তেমন জোরালোভাবে কিছুই নেই। এমনকি প্রযোজ্যও নয়। অত্যন্ত স্পষ্ট এমন কিছু বৈষম্য নারীর বেলায় রয়েছে, যা তার মধ্য বয়সের ক্রাইসিসকে আরও ত্বরান্বিত করে। কিছু বাতিল সামাজিক নিয়মকানুন ও প্রথা যা নারীর জীবনকে করে তোলে স্রেফ, ‘নারী ও নরক’।
বংশ রক্ষা করতে বন্ধ্যা নারীর স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে অবধারিত। কিন্তু বন্ধ্যা পুরুষের স্ত্রী! বৈজ্ঞানিক সমাজভিত্তিক আধুনিক পাশ্চাত্য নারীদের কথা ভিন্ন। তারা যা করে আমাদের কূপমণ্ডুক সমাজে সম্ভব নয়। তাদের সামাজিক নিয়মকানুনের মধ্যে ধর্ম ও শ্লীলতার ভণ্ডামো নেই বিধায়, সেই সমাজের নারীরা এত উন্নত, স্বাবলম্বী এবং স্বাধীন। বাধ্য এবং অর্পিত বলে তাদের জীবনে কিছু নেই।
আমাদের নারীদের জীবনে সবচেয়ে বড় সঙ্কট সামাজিক সংস্কার। সব রকমের অনুশাসনের মধ্যে থেকে তাদের প্রমাণ করতে হয় যে তারা যে-কোনও অবস্থাতেই ঘুণে ধরা দাম্পত্য, বৈধব্য, সমাজের সকল বাতিল নিয়মের গণ্ডিতে থেকেও নিজের সতীত্ব বজায় রেখেছে। সুতরাং তার কন্যার ভালো বিয়ে হবে। কারণ সে অকাল বিধবা হয়েও দ্বিতীয়বার বিয়ে করেনি, পরকীয়া করেনি। পেট ফোলেনি তার। কেউ তাকে ন’মাসের জন্যে চোখের আড়াল হতে দেখেনি। আমাদের অকাল বিধবাদের রক্ষা করতে হয় স্বামীর বংশের সুনাম। পুরুষের বেলায় অনেক কিছুই ভিন্ন। মাস না যেতেই বিপত্নীক পুরুষের বিয়ে হবে। হ-বে-ই। তার ছেলেমেয়েদের বিয়ে, সমাজের প্রশ্ন নয়। দ্বিতীয় স্ত্রী কোনও সমস্যা নয়। পুরুষের দ্বিতীয় নারী গ্রহণ বংশ মর্যাদার জন্যে, হুমকির নয়। সুতরাং সেসব বৈষম্য ও সঙ্কট বিবেচনা করে একজন বিধবা মধ্য বয়স্ক নারীকে করতে হয় বিকল্প জীবনের সন্ধান। গোপন জীবন এবং পরিরণ ইত্যাদি।
একথা অজানা নয় যে, এই মেয়েদের সবরকম অনুভূতিই আছে। তাদের বুদ্ধি আছে। সুতরাং বিধবাদের অধিকাংশই মেয়ের বিয়ে হবে না বলে দ্বিতীয় বিয়ে না করলেও, লুকিয়ে লুকিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য যৌনজীবন কোনও না কোনওভাবে উপভোগ করে। সোজা কথা যোনি থাকলে তার ক্রাইসিসও আছে। থাকাই স্বাভাবিক এবং তা নিঃসন্দেহে সুস্থ এবং স্বাস্থ্যসম্মত।
অনেক বিধবাই আমার আশপাশে রয়েছেন যারা আমার আন্তরিকতা দেখে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাদের গোপন জীবনের গল্প নির্দ্বিধায় বলে গেছে। বাইরে ওরা যতই নিষ্পাপ থাকুক, ভেতরে ভেতরে ওদের গোপন জীবন কি, ওরাই ভালো জানে ও বোঝে। এবং লোকচক্ষুর আড়ালে ওরা তা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পালন করে যায়।
নারী ও পুরুষের, দোহের যৌনজীবনেই–জীবনের বিভিন্ন সময়ে কিছু না কিছু স্বাভাবিক সঙ্কট থাকে। তবে মিডলাইফের সঙ্কটটা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। এই বয়সে, নারী ও পুরুষের যদি অপরপক্ষ চলে যায় বা মারা যায়, তখন যে ক্রাইসিস হয়–সেই ভুক্তভোগীদের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা আমাদের ভাবার সময় কই? আমরা ভীষণ ব্যস্ত, নিজেকে নিয়ে। কার জন্যে কার সময় আছে? পৃথিবীতে কে কার!
বিপত্নীক ষাটোর্ধ্ব পুরুষের বেলায় তা আরো মজার। তারাও বিয়ে করে। শিথিল লিঙ্গ বা স্বল্প বীর্য ওদের সমস্যা নয়। ওদের জন্য ওরাল সেক্স একটা সুন্দর বিকল্প ব্যবস্থা। ৩৫-৪০-৪৫-এ বিধবা নারী যা ভাবতে পারে না, ৬৫তেও বিপত্নীক পুরুষ তা পারে। আর মধ্য বয়সের যে-কোন বিপত্নীক পুরুষও! বিয়ে করবেই। সমাজই দেবে। মেয়ের বাবা এসে ঘুরঘুর করবে। কিন্তু একথা ক’টা বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা নারীর বেলায় সত্য!
মধ্য বা বৃদ্ধ বয়সে দ্বিতীয় বিয়ের মানে কি শুধুই কাম? স্বামী বা স্ত্রী মারা গেলে নিঃসঙ্গতা ঘোচানোর জন্যে একজন সঙ্গীর বিকল্প কি আছে? বনে-জঙ্গলের পশুপাখিরাও দল বেঁধে থাকে। আর আমরা তো রক্তমাংসের। একজন মানুষ পাশে না হলে, মানুষ সুস্থভাবে বাঁচে কি করে! বাঁচতে পারে না। একটা মানসিক আদানপ্রদান, সর্বাগ্রে। নিঃসঙ্গতা তৈরি করে, হতাশা। হতাশা থেকে মানসিক ভারসাম্যহীনতা। সেখান থেকে আত্মহত্যা। মধ্য এবং বৃদ্ধ বয়স, যে-কোনও বয়সের নারী ও পুরুষেরই উচিত, পুনর্বিবাহ করে নিজেকে অবিচার থেকে মুক্ত করা। কিন্তু আমাদের এই ঘুণে ধরা সমাজ ও রঙ্গভঙ্গ ধর্মীয় কালচার এখনও এই মানসিকতায় পৌঁছুতে পারলো না। বিশেষ করে নারীর বেলায় তো নয়ই। নারীর বেলায় ১৪৪ ধারা মুখে চুনকালি।
আরবের মেয়ে বিয়ন্ড দ্য ভেইল
আরবের মেয়েদের জীবনে ধর্ম ও পুরুষের নিষ্ঠুরতা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে তার একটি চিত্র পাওয়া যায় ‘বিয়ন্ড দ্য ভেইল’ বইটিতে। বইটির লেখক ড. স্যামুয়েল গ্রে। যেহেতু ওদের জন্যে পরপুরুষের কোনও রকম ছায়া ও ছোঁয়া নিষিদ্ধ, সেহেতু ওরা গোপনে যা করে তা আরো বীভৎস। নিষিদ্ধ বলেই ওরা যায় আরো গভীরে। অধিক নরকে। ড. গ্রের বইটিতে চার দেয়ালের ভেতরে ওদের যৌনজীবন আপন চাচা, মামা, খালা, মাসি, ভাগ্নী, ভাইপো, সবার সঙ্গে সবার, কিশোর থেকে বৃদ্ধ সবার অবাধ যৌনাচার। যা ঘরে ঘরে বেশ্যালয়ের তুল্য।
বাংলাদেশি কাজের মেয়ে এবং পুরুষ ড্রাইভার সমাচার
বিশেষ করে আমাদের দেশের নারী পাচারকারীরা চাকরির কথা বলে বাংলাদেশের বোকা অশিক্ষিত মেয়েদের পাঠায় বর্বর আরবদের রান্নাঘরে। রান্নার লোকের কথা বলে আরবের পুরুষেরা ভিসার জন্যে প্রয়োজনীয় কাগজ দিয়ে, নিয়ে আসে ওদের সম্ভোগের নারী। পরবর্তীকালে, আরব প্রভুদের গণধর্ষণ অস্বীকারের ক্ষমতা নারীর থাকে না। তাহলে সমূহ বিপদ। যেমন জানাজানি হলে তার মুণ্ডপাত। না দিলে, ভিসা বানচাল। পালিয়ে যাওয়ার কোনও জায়গা নেই।
সুতরাং সৌদি মালিকদের দেয়া কাগজপত্র ভিসা নিয়ে যে মেয়েই সেদেশের রান্নাঘরে যাবে তারই একই পরিণতি। দেশের নারী পাচারকারীদের জন্য এটা ১০০ কোটি টাকার কল-কারখানা। আরবের ঘরে ঘরে চলে পর্দার আড়ালে তাই এই বেশ্যাবৃত্তি। বেশ্যাবৃত্তি, কি নারী, কি পুরুষ! আর যে বিরোধিতা করে, তাকে মূল্য দিতে হয়, জীবন দিয়ে।
কি বীভৎস! পুরুষ বঞ্চিত, অবরুদ্ধ, হতাশাগ্রস্ত সৌদির মেয়েগুলো পুরুষের একটু স্পর্শ পেতে গোপনে শরণাপন্ন হয় পুরুষ ডাক্তারের। আশা, ডাক্তাররা ওদের বুকে, পেটে, হাতে পুরুষের আঙুল বোলাবে। তাই ওরা মিথ্যে অসুখের ভান করে ছোটে ডাক্তারের চেম্বারে। টাকা দিয়ে একটু স্পর্শ নিতে যায় পুরুষের কাছে আর যা মেলে না কিছুতেই।
সৌদি মেয়েদের যৌনজীবন দরিদ্র এবং সংরক্ষিত। একেক পুরুষের কয়েকজন নারী। তারা স্বামীর সঙ্গ, সঙ্গম যথেষ্ট পায় না। এই অবস্থায় পবিত্র দেশে বাংলাদেশি ড্রাইভারদের দুরবস্থার একটি কারণ হলো, স্বামীর পর তারা ড্রাইভারকেই বেশি দেখে। দেখার সুযোগও পায়। সেক্ষেত্রে গোপনে একটি পুরুষ ড্রাইভারকে প্রতিদিন ৪/৫ জন নারীকে তৃপ্ত করতে হয়।
দল বেঁধে ক্ষুধার্ত মেয়েরা আসে। মালিকের বৌ, মেয়ে, বান্ধবী। না হলে চাকরি থাকবে না। জানালে, মুণ্ড ঘ্যাচাং। আর পালালে যাবে কোথায়। ভগ্ন স্বাস্থ্য, দুর্বল ধাতু, আগা মোটা-গোড়া চিকন হয়ে ওরা ফিরে আসে দেশে। কান মলে দিয়ে বলে আর যাবে না পবিত্র দেশে। অমন জন্তুর মতো ক্ষুধার্ত মেয়ে, আর নয়! প্রতিদিন ৪/৫ জনের ক্ষুধা মেটানো অসম্ভব! তার চেয়ে বরং না খেয়ে দেশে থাকবো। এরকম দুস্থ ড্রাইভারের সংখ্যা নেহাত কম নয়। কথায় আছে, প্রায় প্রতিটি সৌদি গৃহই একেকটি ছোটখাট পর্নো হাউজ।
ধর্ম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যৌন সঙ্কট
ধর্ম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছায়ার তলে রয় বিকারগ্রস্ত পুরুষ। ধর্মান্ধ মানুষ। চার্চ, মন্দির, মাদ্রাসায়, বাবা-মায়ের চোখের বাইরে কিশোর-কিশোরীদের যৌন শিক্ষার প্রথম হাতেখড়ি এসব প্রতিষ্ঠানে। সমকামী উভকামিতার শিক্ষাও, এখানেই! শিক্ষক বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের গণ্যমান্য পুরোহিত, যাজক এবং মাদ্রাসার মৌলবী এখানেই ধর্ম শিক্ষার সাথে ওদেরকে হাতেকলমে যৌন শিক্ষা দিতে একটুও ভুল করে না।
বাড়িতে প্রাইভেট পড়াতে আসা ধর্ম, নাচ, গান বা পড়ার শিক্ষক, পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে মেয়েদের প্যান্টের ফুটোয় আঙুল পেন্সিল ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে এবং সুযোগ পেলেই ঢুকিয়ে দেয় ওদের পুরুষাঙ্গ। বাবা-মা জানেন, সন্তানেরা পড়ছে। সন্তানেরা ভয়ে, ওসব কথা কাউকে বলে না। কারণ ওরা মাস্টার। ওদের কথাই চূড়ান্ত। তাছাড়া বাবার বয়সী, ভাইয়ের বয়সী, কাকার বয়সী শিক্ষকদের কথা অবিশ্বাস করবে! এমন সাধ্য কার?
বুদ্ধিজীবী লেখক, শিল্পীদের কথা
এরা অধিকাংশই কেন সেক্যুয়াল পারভার্ট হয়? অধিকাংশই হয় স্বেচ্ছাচারী। তার কারণ বিবিধ। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যা তা হলো, জানি না আমার মতো সবাই অনুধাবন করেন কিনা যে, আমাদের অসাধারণ লোকদের দাম্পত্য জীবন হয়, অত্যন্ত বা মাঝারি, সাধারণ লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে। যেমন একজন নামিদামি লেখকের স্ত্রী, কখনো কখনো একেবারেই–গো-মূর্খ। দেখা গেছে লেখকের স্ত্রী, স্বামীর সাথে লেখা নিয়ে একটি কথাও বলতে পারে না। এক কলম আলোচনাও করতে পারে না। তার জন্যে একটি বই খুঁজে একটি রেফারেন্স বের করে দিতে জানে না। কারণ সে নিজেই লেখাপড়া জানে না। ইংরেজিতো নয়ই। এমতাবস্থায়, শরীরের আকর্ষণ ক’দিনের? মন না বসলে, প্রেম হবে কি করে? প্রেম ছাড়া কি শরীর জাগে? লান্টু মার্কা চকচকে চেহারা, আর গোলাপি চামড়ার আকর্ষণ ক’দিন? সারল্য ক’দিন? নিষ্পাপ ক’দিন? সারল্যের তলে নির্বুদ্ধিতা এবং পাপহীনতা কি একদিন–বোঝা হয়ে উঠবে না যখন তাকে আর শরীরের জন্যেও ইচ্ছে করবে না! ঘরে না থাকলে বাইরে তো যাবেই। একজন নয়, রাস্তায় এক পা পড়লে, দেখা হবে বহুজনের সঙ্গে। আকর্ষণ হবে যৌন অত্যাচার, বিকার।
সমমনা স্ত্রী ডিঙিয়ে বেশ্যালয়ে যাবে এমন সাহসী পুরুষ কম। বা প্রয়োজনও হয়। সমমনা দু’জনের বেলাতেই তা সত্যি। শরীরের আকর্ষণ শেষ হতে পারে। কিন্তু সুন্দর মনের সঙ্গে জ্ঞানের সমুদ্র যখন এক হয়, তখন তার বিকল্প কিছুই থাকে না। কেন যে বুদ্ধিমানদের দাম্পত্য হয়, বুদ্ধিহীনদের সঙ্গে, যারা দৌড়ে কুলোতে না পেরে হোঁচট খেয়ে পড়ে পড়ে যায়, আমার বোধগম্য নয়। আমার দুঃখ হয়, ঘরে ঘরে অসুখী লেখক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী নারী-পুরুষের পাহাড় দেখে। এবং তাদের দাম্পত্য জীবন যা, অত্যন্ত নিম্নমানের, রুচি এবং বোধের। শুধু শরীর নয়, দাম্পত্য চায় আরো অনেক কিছু। চায় মনের গভীরে, সমানে সমানে যেতে। দেখা গ্যাছে এদের অসুখী দাম্পত্য জীবনের সমাপ্তি ঘটে বিচ্ছেদ-পরকীয়া-বেশ্যালয় থেকে বিকারে। যেখানে গেলে তারা উজ্জীবিত হয়। প্রাণ পায়। সুন্দর হয়।
লেখকের স্ত্রী বই বোঝে না। শিল্পীর স্বামী, তৈলচিত্রের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বলে, তেল কই? দার্শনিকের ধর্মভীরু স্ত্রী, দর্শনের বইগুলোকে ফেলে দিয়ে সেখানে বোখারী শরীফ তুলে রাখে। একথা প্রমাণিত যে গুণীজনদের জীবনে ক্রাইসিস বড় বেশি, বিশেষ করে তাদের মিডলাইফ ক্রাইসিস। অধিকাংশেরই পা–ঘরের বাইরে। ওদের ঠেকাবে কে?