৭
নাদিয়া অবাক হয়ে বললেন, ‘মিসির আলি সাহেব, আপনি কী বলতে চাচ্ছেন আমি বুঝতে পারছি না। আপনি বলতে চাচ্ছেন যে, আপনাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমার বাবার মৃত্যু নিয়ে তদন্ত চালাতে? পুলিশ আপনাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে?’ জ্বি, হোম ডিপার্টমেন্টের চিঠি আছে। আপনি কি পড়তে চান?’
‘না, পড়তে চাই না। চিঠি আপনার কাছে থাকুক। আমি বুঝতে পারছি না, এখানে তদন্তের কী আছে! হার্ট ফেলিওরে যারা মারা যায় তাদের সবার বেলাতেই কি তদন্ত হয়? সাধারণ একটি মৃত্যু
‘মৃত্যু সাধারণ কি না এ-বিষয়ে আপনার নিজেরও কিন্তু সন্দেহ আছে। শুরুতে আপনি আমাকে বলেছিলেন, আপনার ধারণা এটা আত্মহত্যা।’
‘আমি তখন গভীর শোকের মধ্যে ছিলাম। প্রবল শোকে মানুষের চিন্তাভাবনা এলোমেলো হয়ে যায়। সহজ জিনিসকে জটিল মনে হয়। এটাই স্বাভাবিক। আপনার কি তা মনে হয় না?’
‘হ্যাঁ, মনে হয়। আপনি ঠিকই বলেছেন।’
‘তার চেয়েও বড় কথা, বাবা মারা গেছেন বাথরুমে। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। পুলিশের উপস্থিতিতে দরজা ভাঙা হয়।’
‘তাও জানি।’
‘তাহলে ঝামেলা করতে চাইছেন কেন?’
‘আমি কোনো ঝামেলা করতে চাইছি না। ঝামেলা আমি একেবারেই পছন্দ করি না। আমি শুধু এ-বাড়ির মানুষদের কিছু প্রশ্ন করে চলে যাব। এক দিন, বড়জোর দু’ দিন লাগবে।’
‘পুলিশের কী কারণে সন্দেহ হল যে বাবার মৃত্যু তদন্তযোগ্য একটি বিষয়?’
‘পুলিশের সন্দেহ হয় নি। তারা ডাক্তারের সার্টিফিকেট মেনে নিয়েছে। সন্দেহটা হয়েছে আমার।’
‘সন্দেহ হবার কারণ কী?’
‘অনেক কারণ আছে।’
‘একটা কারণ বলুন।’
‘দরজা ভেঙে আপনার বাবাকে বের করতে হল, এটাই সন্দেহের প্রধান কারণ। আমি আপনাদের বাথরুম দেখেছি—’
‘জাস্ট এ মিনিট, বাথরুম কখন দেখলেন?’
‘প্রথম যে-বার এ-বাড়িতে এসেছিলাম। আপনার বাবার ডেডবডি বিছানায় শোয়ানো, তখন ঘরের সঙ্গে লাগোয়া বাথরুমের দিকে তাকালাম—’
‘মিসির আলি সাহেব, আপনার অবগতির জন্যে জানাচ্ছি যে, ঐ বাথরুমে বাবা মারা যান নি।’
‘তাতে অসুবিধা নেই। একটা বাথরুম দেখে অন্য বাথরুমগুলি সম্পর্কে ধারণা করা যায়। আমি বাথরুমের লকিং সিস্টেম আগ্রহ নিয়ে দেখলাম। ভেতর থেকে লক করা যায়। একবার লক করলে বাইরে থেকে খোলা যায় না। তবে বাইরে থেকে চাবি দিয়ে খোলা যায়। যায় না?’
‘হ্যাঁ, যায়।’
‘আপনার বাবার বাথরুম ছিল ভেতর থেকে তালাবন্ধ। খুব সহজেই বাইরে থেকে চাবি দিয়ে দরজাটা খোলা যেত। তা না-করে আপনারা পুলিশ ডেকে আনলেন।’
নাদিয়া হেসে ফেললেন। তাঁর চোখে-মুখে এতক্ষণ যে কঠিন ভাব ছিল তা দূর হয়ে গেল। তিনি হালকা গলায় বললেন, ‘নিন মিসির আলি সাহেব, চা নিন। চা খেতে—খেতে কথা বলি।’
মিসির আলি সিগারেট ধরালেন। নাদিয়া হাসিমুখে বললেন, ‘আপনার কথা সত্যি। চাবি দিয়ে বাথরুমের দরজা খোলা যায়। এ-বাড়ির প্রতিটি দরজাই এ-রকম। এ—বাড়িতে বাথরুম নিয়ে ঘরের সংখ্যা হচ্ছে তেত্রিশ। তেত্রিশটি চাবির একটা বড় গোছা। কোনো চাবিতে নম্বর দেওয়া নেই। কারণ চাবিগুলি ব্যবহার করা হয় না। তেত্রিশটি চাবি থেকে একটা বাথরুমের চাবি অনুমানের ওপর বের করা অসম্ভব ব্যাপার। তা ছাড়া চাবির গোছা থাকে বাবার কাছে। তিনি তা কোথায় রেখেছেন তা আমাদের জানা নেই। এখন একজন বুদ্ধিমান লোক হিসেবে আপনি আমাকে বলুন, এই অবস্থায় আমাদের কী করা উচিত। চাবির গোছা খুঁজে বেড়ানো উচিত, না দরজা ভাঙা উচিত।’
‘দরজা ভাঙা উচিত।’
সেই কাজটিই আমরা করেছিলাম। আরেকটি কথা—পুলিশকে ডেকে এনে দরজা ভাঙা হয় নি। দরজা যখন ভাঙা হচ্ছে তখনই পুলিশ চলে আসে। সম্ভবত আপনার জানা নেই, দু’ জন পুলিশ সেন্ট্রি আমাদের বাড়ি পাহারা দেয়। হৈচৈ শুনে তারা নিচে থেকে ওপরে চলে আসে। আমার কথাগুলি কি আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে?’
‘জ্বি, মনে হচ্ছে।’
‘এর পরেও আপনি তদন্ত চালিয়ে যেতে চান?’
‘যদি আপনি অনুমতি দেন তবেই তদন্ত চালাব।’
‘আমি অনুমতি দিলাম। এ-বাড়িতে যারা আছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করুন। ঘুরেফিরে দেখুন। সবচেয়ে ভালো হয় কী করলে জানেন? সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি অতিথি হিসেবে এ-বাড়িতে উঠে আসেন। যতদিন আপনার দরকার এ—বাড়িতেই থাকবেন। খাওয়াদাওয়া এখানে করবেন। তদন্তের কাজ শেষ হলে চলে যাবেন। এতে আমার নিজেরও সুবিধা হয়।’
‘কি সুবিধা?’
‘আপনার পাশাপাশি থেকে তদন্তের ধারাটা দেখতে পারি। বইপত্রে পড়েছি ডিটেকটিভরা কী করে খুনী পাকড়াও করে। বাস্তবে কখনো দেখি নি। আপনার কারণে সেই সুযোগ পাওয়া যাবে।’
মিসির আলি বললেন, ‘আপনার কী করে ধারণা হল যে আমি খুনী ধরতে এসেছি?’
‘সঙ্গত কারণেই এ-ধারণা হয়েছে। স্বাভাবিক মৃত্যু কিংবা আত্মহত্যা—এই দু’ কারণে তদন্তের জন্যে বিশেষজ্ঞ আনা হয় না। খুনটুন হলে তবেই বিশেষজ্ঞ আসে। আমি কি ভুল বলছি?’
‘না, ভুল বলেন নি।’
‘আপনি তাহলে আসছেন এ-বাড়িতে?’
‘জ্বি, আসছি।’
‘তাহলে দেরি করবেন না। আজই চলে আসুন। দি আরলিয়ার দি বেটার।’
.
এক স্যুটকেস বই এবং এক স্যুটকেস কাপড়চোপড় নিয়ে সন্ধ্যাবেলা মিসির আলি ‘রোজ ভিলায়’ উঠে এলেন। আব্দুল মজিদ নামের মধ্যবয়স্ক এক লোক তাঁকে থাকার ঘর দেখিয়ে দিল। বিরাট ঘর। অ্যাটাচড বাথরুম। সেই বাথরুমও বিশাল। বাথটাব আছে। ঠাণ্ডা পানি, গরম পানির ব্যবস্থা আছে। বাথরুমে যে-ব্যাপারটা তাঁকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করল, তা হল বড় একটা ঘড়ি। এখন পর্যন্ত কোনো বাথরুমে তিনি ঘড়ি দেখেন নি।
ঘরের আসবাবপত্রে রুচির ছাপ স্পষ্ট। খাটের পাশে বেড-সাইড কাপের্ট। এক কোণায় জানালার পাশে লেখার টেবিল। টেবিলে কাগজ, কলম, খাম, পোস্টেজ স্ট্যাম্প থরেথরে সাজানো। অন্য প্রান্তে বিরাট ওয়ার্ডড্রোব। দেয়ালে রেনোয়ার দু’টি ছবির প্রিন্ট। দু’টিই অপূর্ব। প্রিন্ট মনেই হয় না। ঘরে কোনো আয়না নেই—এই একমাত্র ত্রুটি।
‘আব্দুল মজিদ।’
‘জ্বি স্যার।’
‘ঘর খুব পছন্দ হয়েছে। এত সুন্দর করে সব সাজানো, কিন্তু কোনো আয়না নেই, ব্যাপারটা কি বলুন তো?’
‘ড্রেসিং রুম স্যার আলাদা। আয়না ড্রেসিং রুমে।’
মিসির আলির বিস্ময়ের সীমা রইল না, যখন দেখলেন এই ঘরের সঙ্গে লাগোয়া দু’টি ঘর আছে। একটি বসার ঘর, অন্যটি ড্রেসিং রুম। বসার ঘরে টেলিফোন এবং ছোট্ট টিভি সেট আছে।
‘স্যার, আপনার খাবার কি এইখানে দিয়ে যাব, না ডাইনিং টেবিলে গিয়ে খাবেন?’
‘এখানেই দিয়ে যাবেন।’
‘ডিনার কখন দেব স্যার?’
‘আমি একটু রাত করে খাই। দশটার দিকে।’
‘জ্বি আচ্ছা স্যার। এখন কি চা দিয়ে যাব?’
‘এক কাপ চা পেলে মন্দ হয় না। তার আগে আপনি আমার কয়েকটা প্রশ্নের জবাব দিন।’
‘স্যার, আপনি আমাকে তুমি করে বলবেন।’
‘আচ্ছা, তুমি করেই বলব। প্রশ্নের জবাব দিতে কি কোনো অসুবিধা আছে?’
‘জ্বি-না স্যার, অসুবিধা নেই। আপা বলে দিয়েছেন আপনি যা জানতে চান তা যেন বলি।
‘আপা যদি বলত—ওঁর প্রশ্নের জবাব দিও না, তাহলে কি জবাব দিতে না?’ মজিদ চুপ করে রইল। মিসির আলি বললেন, ‘বস মজিদ।’
মজিদ বলল, ‘আমি বসব না স্যার। যা বলার দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়েই বলব।’
‘বেশ, তাহলে প্রশ্ন করি। খুব সহজ প্রশ্ন। তুমি কতদিন এ-বাড়িতে আছ?’
‘এগার বছর।’
‘কাঁটায়—কাঁটায় এগার বছর, না একটু বেশি বা একটু কম?’
‘এগার বছর এক মাস।’
তোমার কাজ কী?’
‘স্যারের একটা লাইব্রেরি আছে। মিউজিক লাইব্রেরি, গানের অ্যালবাম, ক্যাসেট, সিডি ক্যাসেটের লাইব্রেরি। আমি সেই লাইব্রেরি দেখাশোনা করি।’
‘তোমার চাকরিজীবন কি এখানেই শুরু, না এর আগে কোথাও কাজ করেছ?’
‘বিভিন্ন জায়গায় নানান ধরনের কাজ করেছি। রানা কনস্ট্রাকশান কোম্পানিতে ছিলাম প্লামিং মেকানিক। সেখানে তিন বছর কাজ করি। তারপর স্যারের লাইব্রেরির দায়িত্ব নিই।’
‘মিউজিক লাইব্রেরির জন্যে যখন আলাদা একজন লোক আছে, তখন নিশ্চয়ই ধরে নেওয়া যায় যে লাইব্রেরিটা ওসমান গনি সাহেবের অত্যন্ত প্ৰিয়।’
‘জ্বি স্যার, খুবই প্রিয়।’
‘তুমি যখন লাইব্রেরিতে থাক না, তখন কি এটা তালাবন্ধ থাকে?’
‘জ্বি স্যার, তালাবন্ধ থাকে।’
‘এই বাড়ির সব ঘরের জন্যে চাবি আছে—সেই চাবির গোছা কার কাছে থাকে?’
‘স্যারের কাছে। তবে এই ঘরের চাবি আমার কাছে থাকে।
‘এখন ঐ চাবিগুলি কোথায়?’
‘লাইব্রেরি ঘরের ড্রয়ারে। এনে দেব স্যার?’
‘না, আনতে হবে না। ওসমান গনি সাহেব যখন বাথরুমে আটকা পড়লেন, হৈচৈ হতে থাকে, তখন তুমি কোথায় ছিলে?’
‘লাইব্রেরি ঘরে।’
‘হৈচৈ শুনে ছুটে গেলে?’
‘জ্বি না স্যার, আমি যাই নি। আমি কিছু বুঝতে পারি নি। লাইব্রেরি ঘরে আছে এয়ার কুলার। এই জন্যে দরজা-জানালা বন্ধ থাকে। ঐ রাতে এয়ার কুলার চালু ছিল। দরজা-জানালা ছিল বন্ধ। বাইরের কোনো শব্দ কানে আসে নি।’
‘তুমি কখন জানতে পারলে?’
‘ঘটনার দু’ ঘন্টা পর।
‘গভীর রাতে এতক্ষণ লাইব্রেরি ঘরে তুমি কী করছিলে?’
‘গান শুনছিলাম স্যার।’
‘তোমার পড়াশোনা কতদূর?’
‘দু’ বছর আগে প্রাইভেটে বি. এ. পাস করেছি।
মিসির আলি কিছুটা বিব্রত বোধ করলেন। বি. এ. পাস একজন মধ্যবয়স্ক মানুষকে তুমি-তুমি করে বলা যায় না। বলা উচিত নয়। সবাইকে তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে হয়। মিসির আলি আব্দুল মজিদের দিকে ভালো করে তাকালেন। বিশেষত্বহীন চেহারা। দাঁড়িয়ে আছে কুঁজো হয়ে। মুখ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না। চোয়াল নড়ছে। পান চিবুচ্ছে বোধহয়। জর্দার গন্ধ আসছে। মিসির আলি বললেন, ‘ওসমান গনি সাহেবের স্ত্রীও তো বাথরুমে মারা যান, তাই না।’
‘একই বাথরুম?’
‘জ্বি, একই বাথরুম।
‘তখন তুমি কোথায় ছিলে?’
‘মিউজিক লাইব্রেরিতে ছিলাম।’
‘জেগে ছিলে?’
‘জ্বি, জেগে ছিলাম।’
আব্দুল মজিদ কী-একটা বলতে গিয়েও বলল না। চুপ করে রইল। মিসির আলি বললেন, ‘তুমি কী বলতে চাচ্ছ বল।
‘কিছু বলতে চাচ্ছি না স্যার।
‘আচ্ছা, যাও।’
‘যদি কিছু লাগে, কলিং বেল টিপবেন। আমি চলে আসব।’
‘আমার কিছু লাগবে না।’
‘চা কি স্যার দিয়ে যাব?’
‘দিয়ে যাও।’
আব্দুল মজিদ ঘর থেকে বের হয়েই চা নিয়ে এল। মনে হচ্ছে চা তৈরিই ছিল। মজিদ বলল, ‘যদি কফি খেতে চান, কফিও দেওয়া যাবে। খুব ভালো ব্রেজিলিয়ান কফি আছে। পারকুলেটরে কফি তৈরি করা হয়। স্যার খুব পছন্দ করতেন।’
‘আমি কফি পছন্দ করি না।’
আব্দুল মজিদ আবারো কী যেন বলতে গেল। শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিল।
মিসির আলি বললেন, ‘কিছু বলবে?’
‘জ্বি-না স্যার।’
‘বলতে ইচ্ছা করলে বলতে পার।’
‘কিছু বলতে চাই না স্যার।’
রাতে মিসির আলি একা-একা ডিনার শেষ করলেন। খাবার নিয়ে এল আব্দুল মজিদ। মিসির আলির মনে হল, সে তাঁকে দেখছে ভীত চোখে। আড়—চোখে তাকাচ্ছে। চোখে চোখ পড়ামাত্র চোখ সরিয়ে নিচ্ছে।
‘আব্দুল মজিদ।’
‘জ্বি স্যার।’
‘তুমি আমাকে কিছু একটা বলতে চাচ্ছ, বলে ফেল।’
আব্দুল মজিদ মাথা নিচু করে নিচু গলায় বলল, ‘রাত বারটার পর যদি বাথরুমে যান তাহলে বাথরুমের দরজা বন্ধ করবেন না।’
‘কেন?’
‘একটু অসুবিধা আছে স্যার।’
‘কী অসুবিধা?’
‘দরজা খোলা যায় না।’
‘দরজা খোলা যায় না মানে?’
ভৌতিক কিছু ব্যাপার আছে স্যার। আপনি হয়তো বিশ্বাস করবেন না। দরজা আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে যায়। আর খোলে না।’
মিসির আলি সহজ গলায় বললেন, ‘রাত বারটার পর বাথরুমে গেলে এবং দরজা বন্ধ করলে আপনা-আপনি দরজা বন্ধ হয়ে যায়?
‘সব সময় হয় না স্যার, মাঝে-মাঝে হয়।’
‘তোমার ধারণা, ব্যাপারটা ভৌতিক?’
‘জ্বি স্যার।’
‘আচ্ছা, আমি মনে রাখব। সাবধান করে দেবার জন্যে ধন্যবাদ।’
আব্দুল মজিদ মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, ‘আপাকে এটা না বললে খুব ভালো হয় স্যার। আপা শুনলে খুব রাগ করবেন।’
‘আমি কাউকে কিছু বলব না।’
‘আপনার কি পান খাওয়ার অভ্যাস আছে স্যার? পান নিয়ে আসব?’
‘আন, পান আন। তবে জর্দা দিও না। আমি জর্দা খাই না।’
রাত এগারটায় মিসির আলির ঘুমুতে যাবার কথা। তিনি বারটা পর্যন্ত জেগে রইলেন। বাথরুমের দরজার ব্যাপারটা পরীক্ষা করার জন্যে। বারটা দশ মিনিটে বাথরুমে ঢুকলেন। দরজা বন্ধ করলেন। যথা সময়ে বের হয়ে এলেন। দরজা খুলতে কোনো সমস্যা হল না। তবে রাতে তাঁর ভালো ঘুম হল না। অস্বস্তি বোধ করতে লাগলেন। বারবার ঘুম ভেঙে গেল। দুঃস্বপ্নও দেখলেন। সেই দুঃস্বপ্নে লম্বা একটা মানুষ এসে বলল, ‘মিসির আলি সাহেব, আপনি সোনার দাঁত কিনবেন? আমার কাছে সোনার দাঁত আছে। খাঁটি সোনা।’ মিসির আলি বললেন, ‘না, আমি সোনার দাঁত কিনব না।’
‘আপনাকে স্যার কিনতেই হবে। এই কে আছিস, স্যারের কয়েকটা দাঁত টেনে তুলে ফেল। দেখি দাঁত না কিনে স্যার যায় কোথায়।
লোকটির কথা শেষ হতেই বাথরুমের দরজা খুলে সাঁড়াশি হাতে একটা ভয়ংকর—দর্শন মানুষ বের হল। মিসির আলি ছুটছেন। লোকটাও সাঁড়াশি হাতে পিছনে পিছনে ছুটছে।
রাত তিনটার দিকে ঘুমের আশা ছেড়ে দিয়ে বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসলেন। তাঁকে থাকতে দেওয়া হয়েছে একতলায়। দোতলায় পায়ের শব্দ হচ্ছে। চটির ফটফট শব্দ আসছে। কেউ একজন বারান্দায় এক মাথা থেকে অন্য মাথায় যাচ্ছে এবং আসছে। নিশ্চয়ই নাদিয়া।