০৭. তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার অন্ত কী আমাদের দৃষ্টিপথে?

০৭. তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার অন্ত কী আমাদের দৃষ্টিপথে?*

[*১৯৮০ সালের ২৯ এপ্রিল আমাকে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লুকেসিয়ান অধ্যাপক পদে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিষিক্ত করা হয়। আমার অভিষেকের এই প্রবন্ধ আমার তরফ থেকে আমার একজন ছাত্র পড়েছিলেন।]

এই প্রবন্ধে আমি অদূর ভবিষ্যতে, ধরুন, শতাব্দীর শেষাশেষি তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার লক্ষ্য পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করব। এর অর্থ : সম্ভাব্য সবরকম পর্যবেক্ষণ ব্যাখ্যা করার মতো ভৌত ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার একটা সম্পূর্ণ সুসঙ্গত এবং ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব হয়ত আমরা পেতে পারি। এরকম ভবিষ্যদ্বাণী করতে হলে অবশ্য খুবই সাধারণ হওয়া উচিত। এর আগে অন্তত দুবার আমরা ভেবেছি : অন্তিম সংশ্লেষণের (final synthesis) কিনারায় আমরা পৌঁছে গিয়েছি। এ শতাব্দীর শুরুতে বিশ্বাস করা হত বলবিদ্যা সাংতত্যকের continuum mechanics) বাগ্বিধিতে সবই বোঝা সম্ভব। প্রয়োজন। শুধু বিশেষ কয়েকটি গুণাঙ্কের স্থাপিতঙ্ক মাপন (coefficients of elasticity)। যেমন : সান্দ্রতা গুণাঙ্ক (coefficients of viscosity), পরিবাহিতা গুণাঙ্ক (coeffi cients of conductivity) ইত্যাদি। পারমাণবিক গঠন এবং কণাবাদী বলবিদ্যা আবিষ্কারের ফলে সে আশা ভেঙে গুঁড়িয়ে গেল। ঊনিশশ’ কুড়ির দশকের শেষ দিকে কয়েকজন বৈজ্ঞানিক গটিংগেন (Gottingen) এ এসেছিলেন। তাঁদের ম্যাক্স বর্ণ বলেছিলেন যাকে আমরা পদার্থবিদ্যা বলি, ছয় মাসেই সেটি শেষ হয়ে যাবে। এ ঘটনা ঘটেছিল লুকেসিয়ান চেয়ারের একজন পূর্বতন অধিকারী পল ডিরাকের (Paul Dirac) ডিরাক সমীকরণ আবিষ্কারের সামান্য কিছুদিন পর। এই সমীকরণ ইলেকট্রনের আচরণ শাসন করে। আশা করা গিয়েছিল প্রোটনের আচরণ শাসন করে এরকম আর একটা সমীকরণ আবিষ্কৃত হবে। সে সমীকরণ হবে ডিরাক সমীকরণের মতোই একটা কিছু। তখন ইলেকট্রন ছাড়া আর একটামাত্র অনুমিত মৌলকণা জানা ছিল। সেটা প্রোটন। কিন্তু নিউট্রন (Neutron) এবং কেন্দ্রীয় বল আবিষ্কারের ফলে সে আশাও ভেস্তে গেল। এখন আমরা জানি প্রোটন কিংবা নিউট্রন কোনটাই মৌলকণা নয়। বরং তারা ক্ষুদ্রতর কণা দিয়ে গঠিত। সে যাই হোক, ইদানীং আমরা অনেকটা অগ্রসর হয়েছি এবং সাবধানে বলব, এখন আশা করা যায় এই প্রবন্ধের পাঠকদের অনেকেই তাদের জীবদ্দশায় এই তত্ত্ব দেখতে পাবেন।

আমরা যদি পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব অর্জনও করি তাহলেও একমাত্র সরলতম অবস্থান সম্পর্ক ছাড়া বিস্তারিত কোন ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারব না। উদাহরণ : দৈনন্দিন জীবনে যার সংস্পর্শে আমরা আসি তার সবগুলোরই ভৌত শাসন বিধি এখন জানি। ডিরাক বলেছেন তাঁর সমীকরণ ‘পদার্থবিদ্যার অধিকাংশের এবং রসায়ন শাস্ত্রের সবটারই ভিত্তি। কিন্তু আমরা শুধুমাত্র সরলতম তন্ত্র (system) সম্পর্কেই সমীকরণটির সমাধান করতে পেরেছি। সেটা হল হাইড্রোজেন পরমাণু। তাতে রয়েছে একটা প্রোটন আর একটা ইলেকট্রন। একাধিক কেন্দ্র রয়েছে এরকম জটিল অণুর কথা ছেড়ে দিলেও একাধিক ইলেকট্রন রয়েছে এরকম পরমাণুর ক্ষেত্রেও আমাদের ভরসা করতে হয় আসন্নতা এবং স্বজ্ঞাভিত্তিক (approximations and intuitive guesses) অনুমানের উপর। সেগুলোরও সত্যতা সন্দেহজনক। ১০২৩ কিংবা তার কাছাকাছি সংখ্যক কণিকাবিশিষ্ট স্কুলসত্বক তন্ত্রগুলোর (macroscopic) জন্য আমাদের পরিসাংখ্যিত পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয় এবং সমীকরণগুলোর নির্ভুল সমাধানের ভান ত্যাগ করতে হয়। যদিও নীতিগতভাবে সমগ্র জীববিদ্যাকে শাসন করে (govern) এরকম সমীকরণ আমরা জানি। তবুও আমরা মানবিক আচরণকে ফলিত গণিতের একটা শাখায় পরিণত করতে পারি না।

পদার্থবিদ্যার পূর্ণ এবং ঐক্যবদ্ধ একটা তত্ত্বের অর্থ আমাদের কাছে কী হবে? আমাদের ভৌত বাস্তবতার প্রতিরূপ গঠনের চেষ্টার সাধারণত দুটি অংশ থাকে :

(১) এক তেকা স্থানীয় বিধি। নানা ভৌতরাশি সেগুলো মেনে চলে। এগুলোর অবয়ব সাধারণত বৈষম্যমূলক সমীকরণের (differential equation) বাগ্বিধিতে গঠিত হয়।

(২) সীমান্ত অবস্থার একাধিক কেতা। তারা একটা বিশেষ কালে মহাবিশ্বের কয়েকটি অঞ্চলের অবস্থা সম্পর্কে আমাদের বলে এবং বলে পরবর্তীকালে মহাবিশ্বের অবশিষ্ট অঞ্চল থেকে কি অভিক্রিয়া (effects) তার ভিতরে বিস্তারিত হয়।

অনেকের দাবি বিজ্ঞানের ভূমিকা এগুলোর প্রথমটিতেই সীমাবদ্ধ এবং আমরা সম্পূর্ণ একটা স্থানীয় ভৌতবিধির কেতা (set) প্রাপ্ত হওয়ার পরে তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা তার লক্ষ্যে পৌঁছাবে। তাদের বিচারে মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থার ব্যাপারটা অধিবিদ্যা কিংবা ধর্মের অংশভুক্ত। একদিক থেকে এ দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অনেকটা তাদের দৃষ্টিভঙ্গির মিল আছে, যারা অতীত শতাব্দীগুলোতে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানকে নিরুৎসাহ করতেন। তাদের যুক্তি ছিল, প্রাকৃতিক সমস্ত পরিঘটনাই ঐশ্বরিক কর্ম এবং তা নিয়ে অনুসন্ধান করা উচিত নয়। আমার ধারণা মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং তত্ত্বের জন্য স্থানীয় ভৌত বিধিগুলোর মতোই উপযুক্ত। যতদিন পর্যন্ত না আমরা ‘পদার্থগুলো যেরকম আছে তারা সেইরকম, তার কারণ তারা পূর্বেও সেইরকম ছিল–এই যুক্তি অতিক্রম করতে পারব ততদিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ একটা তত্ত্ব আমরা পাব না।

প্রাথমিক অবস্থাগুলোর অনন্যতার সঙ্গে স্থানীয় ভৌতবিধিগুলোর যাচ্ছিকতা ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। যদি অনেকগুলো বিন্যাসযোগ্য স্বেচ্ছস্থিরাঙ্কে (parameters)-র মতো ভর কিংবা যুগানযোগ্য অচর (coupling constant) থাকে, যার খুশিমতো মূল্যাঙ্ক দেওয়া চলে, তাহলে তাকে পূর্ণতত্ত্ব বলা যাবে না। আসলে মনে হয় প্রাথমিক অবস্থা কিংবা তত্ত্বের স্বেচ্ছস্থিরাঙ্ক কোনটাই যাচ্ছিক নয়। বরং সেগুলো কোনভাবে খুব সযত্নে নির্বাচিত করা হয় কিংবা খুঁজে বার করা হয়। উদাহরণ, যদি প্রোটন, নিউট্রনের ভর ইলেকট্রনের প্রায় দ্বিগুণ না হত তাহলে যারা মৌল পদার্থ গঠন করে এবং রসায়নশাস্ত্র ও জীববিদ্যার ভিত্তি গঠন করে সেই প্রায় দুইশত সুস্থিত নিউক্লিয়াইড (nucleide নির্দিষ্ট গঠনের কেন্দ্রবিশিষ্ট পরমাণুবর্গ) আমরা পেতাম না। একইভাবে, বলা যায় প্রোটনের মহাকর্ষীয় ভর যদি উল্লেখযোগ্যভাবে পৃথক হত তাহলে আমরা এমন কোন তারকা পেতাম না যেখানে এই নিউক্লিয়াইডগুলো গঠিত হতে পারত এবং যদি মহাবিশ্বের প্রাথমিক প্রসারণ সামান্য কম কি বেশি হত তাহলে ঐ ধরনের তারকাগুলো বিবর্তিত হওয়ার আগেই মহাবিশ্ব চুপসে যেত কিংবা এত দ্রুত প্রসারিত হত যে, মহাকর্ষীয় ঘনীভবনের দ্বারা তারকাগুলো কখনোই গঠিত হত না।

সত্যই কিছু লোক এতদূর অগ্রসর হয়েছেন যে প্রাথমিক অবস্থা এবং স্বেচ্ছ স্থিরাঙ্কগুলোকে (parameters) একটা নীতির স্তরে উন্নীত করেছেন। সেটি নরত্নীয় নীতি। এর অর্থ হতে পারে পদার্থগুলো যেমন আছে তেমন থাকার কারণ আমাদের অস্তিত্ব। এই নীতির একটা রূপ হল–বহুসংখ্যক বিভিন্ন মহাবিশ্বের অস্তিত্ব রয়েছে। তাদের ভৌত স্বেচ্ছস্থিরাঙ্কগুলোর (প্যারামিটারগুলোর) এবং প্রাথমিক অবস্থার বিভিন্ন মূল্যাঙ্ক রয়েছে। এই সমস্ত মহাবিশ্বগুলোর অধিকাংশেরই জটিল গঠনবিশিষ্ট বুদ্ধিমান জীব বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ নেই। শুধুমাত্র খুব ক্ষুদ্রসংখ্যক মহাবিশ্বে আমাদের মহাবিশ্বের মতো অবস্থা এবং স্বেচ্ছস্থিরাঙ্ক সম্ভব। বুদ্ধিমান জীবের বিকাশ সেইসমস্ত মহাবিশ্বের সম্ভব। আর সম্ভব তাদের প্রশ্ন করা, আমরা যে রকম পর্যবেক্ষণ করছি মহাবিশ্বটি কেন সেরকম হল? উত্তরটি অবশ্য এই : অন্যরকম হলে এ প্রশ্ন করার মতো কেউ থাকত না।

বিভিন্ন ভৌত স্বেচ্ছস্থিরাঙ্কগুলোর (parameters) মূল্যাঙ্কের ভিতরে যে উল্লেখযোগ্য সাংখ্যিক সম্পর্ক দেখা যায় তার একটা ব্যাখ্যা নরত্বীয় নীতি থেকে পাওয়া যায়। এটাও কিন্তু সম্পূর্ণ সন্তোষজনক নয়। এর অন্য কোন গভীরতর ব্যাখ্যা আছে, এরকম মনে হতে পারে। তাছাড়া মহাবিশ্বের সব অঞ্চলের কারণ এটা হতে পারে না। উদাহরণ : আমাদের অস্তিত্বের জন্য সৌরজগৎ নিশ্চয়ই পূর্বাহ্নেই প্রয়োজন। যেমন প্রয়োজন নিকটস্থ পূর্ব প্রজন্মের তারকাগুলো। সেই তারকাগুলোতে কেন্দ্রীয় সংশ্লেষণের সাহায্যে ভারী মৌল পদার্থগুলো গঠিত হতে পারে। হতে পারে, প্রয়োজন ছিল আমাদের পুরো ছায়াপথেরই । যে মিলিয়ন মিলিয়ন ১০০০০০০০০০০০ কিংবা ঐ রকম সংখ্যক নীহারিকা (ছায়াপথ) পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে আমরা মোটামুটি সমভাবে বণ্টিত দেখতে পাই, তাদের কথা ছেড়ে দিলেও অন্য কোন নীহারিকারও (galaxy) অস্তিত্বের প্রয়োজন ছিল না। বৃহৎ মানে এই সমসত্বতার ফলে এ কথা বিশ্বাস করা খুবই কঠিন যে, মহাবিশ্বের গঠন নির্ধারণ করে যথেষ্ট সাধারণ জাতিরূপের (fairly typical) সর্পিল নীহারিকার বাইরের দিকে প্রান্তিক অঞ্চলের একটা অতি সাধারণ তারকার কক্ষে ঘূর্ণায়মান একটা অপ্রধান গ্রহে অবস্থিত কতগুলো জটিল আণবিক গঠনের মতো প্রান্তিক (peripneral) একটা কিছু।

আমরা যদি নরত্বীয় নীতির দ্বারস্থ না হই তাহলে মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থা এবং ভৌত স্বেচ্ছস্থিরাঙ্কগুলোর (physical paramenters) ব্যাখ্যার জন্য এমন একটা তত্ত্ব চাই যা এগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। কিন্তু সব ব্যাপার সম্পর্কে একটা ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব একেবারেই পাওয়া মুশকিল। অনেকে কিন্তু এ কারণেও চুপ করে থাকে না। প্রতি সপ্তাহে ডাকযোগে আমি দুই তিনটি ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব পাই। তার বদলে আমরা একাধিক আংশিক তত্ত্ব অনুসন্ধান করি। সে তত্ত্বগুলো এমন কয়েকটি পরিস্থিতির বিবরণ দান করে যে পরিস্থিতিতে কিছু ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া অগ্রাহ্য করা যায় কিংবা সহজ পদ্ধতিতে আসন্নতায় (approximation) আনা যায়। প্রথমে আমরা মহাবিশ্বের বাস্তব আধেয়কে (material content) দুভাগে ভাগ করি : ‘পদার্থকণিকা’, যেমন–কার্ক, quark), ইলেক্ট্রন, মুয়ন (muons) ইত্যাদি এবং অন্যোন্যক্রিয়া’ (interactions), যেমন– মহাকর্ষ এবং বিদ্যুৎচুম্বকত্ব। পদার্থ কণিকাগুলোর বিবরণ দান করা হয় অর্ধেক পূর্ণ সংখ্যার চক্রণের (half-interger spin) ক্ষেত্রের দ্বারা। এরা পাউলির অপবর্জন তত্ত্ব (Pauli exclusion principle) মেনে চলে। এই নীতি যে কোন একই অবস্থায় একাধিক কণিকার অবস্থানে বাধা দেয়। এজন্য আমরা এমন ঘন বস্তু (solid bodies) পেতে পারি যেগুলো চুপসে বিন্দুতে পরিণত হয় না কিংবা বিকিরিত হয়ে অসীম অভিমুখে যায় না। পদার্থ তত্ত্ব (matter principles মূল উপাদান) দুই গোষ্ঠীতে ভাগ করা হয় : হ্যাঁড্রন (hadron) এগুলো কার্ক দিয়ে গঠিত, অবশিষ্ট গঠিত লেপটন (lepton) দিয়ে।

অন্যোন্যক্রিয়াকে পরিঘটনাতত্ত্বের (phenomenologically) ভিত্তিতে চার ভাগে ভাগ করা হয়। শক্তি অনুসারে তারা : শক্তিশালী নিউক্লীয় বলসমূহ–তাদের পারস্পরিক ক্রিয়া হয় শুধুমাত্র হ্যাঁড্রনের (hadron) সঙ্গে। বিদ্যুৎচুম্বকত্ব–তাদের পারস্পরিক ক্রিয়া হয় আধানযুক্ত হ্যাঁড্রনের সঙ্গে। দুর্বল নিউক্লীয় বলসমূহ–তাদের পারস্পরিক ক্রিয়া হয় সমস্ত হ্যাঁড্রন আর লেপটনের সঙ্গে। মহাকর্ষের প্রতিক্রিয়া হয় সবারই সঙ্গে। অন্যোন্যক্রিয়ার প্রতিরূপ পূর্ণসংখ্যা চক্রণ ক্ষেত্রে (interger-spin field) দিয়ে। এরা পাউলির অপবর্জন তত্ত্ব মেনে চলে না। এর অর্থ একই অবস্থায় তাদের অনেক কণিকা থাকতে পারে। বিদ্যুৎচুম্বকত্ব এবং মহাকর্ষের ক্ষেত্রে তাদের পারস্পরিক ক্রিয়া দীর্ঘপাল্লা (long-range) বিশিষ্টও বটে। তার অর্থ বহু পদার্থকণিকা দিয়ে গঠিত ক্ষেত্রগুলো পরস্পরযুক্ত হয়ে এমন একটা ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে যেটা স্থূলসতৃক মানে (macro scopic) শনাক্ত করা সম্ভব। এই সমস্ত কারণে তাদের জন্য প্রথম তত্ত্ব গঠিত হয় : সপ্তদশ শতাব্দীতে নিউটনের মহাকর্ষীয় তত্ত্ব, ঊনবিংশ শতাব্দীতে গঠিত ম্যাক্সওয়েলের বিদ্যুৎচুম্বকীয় তত্ত্ব। এই তত্ত্বগুলো কিন্তু মূলত সুসঙ্গত ছিল না কারণ সম্পূর্ণ তত্ত্বটির গতিবেগ যদি সমরূপ হয় তাহলে নিউটনীয় তত্ত্ব ছিল নিশ্চয়। আবার ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্ব একটা বিশেষ পছন্দসই গতিবেগের সংজ্ঞা দিয়েছে–আলোকের গতিবেগ। শেষে দেখা গেল এটি নিউটনীয় মহাকর্ষতত্ত্বই বটে, তবে সেটিকে ম্যাক্সওয়েল তত্ত্বের নিশ্চয় ধর্মের সঙ্গে সুসঙ্গত করার জন্য পরিবর্তিত করতে হয়েছে। আইনস্টাইনের ব্যাপক অপেক্ষবাদ এই কৃতিত্ব অর্জন করে। এ তত্ত্ব গঠিত হয়, ১৯১৫ সালে।

মহাকর্ষ সম্পর্কে ব্যাপক অপেক্ষবাদ এবং ম্যাক্সওয়েলের বিদ্যুগতীয় তত্ত্ব এগুলোকে বলা হয় চিরায়ত তত্ত্ব অর্থাৎ তারা এমন রাশি নিয়ে জড়িত যারা অবিচ্ছিন্ন চর (continuously variable) এবং অন্তত নীতিগতভাবে তাদের যাদৃচ্ছিক নির্ভুলভাবে মাপা সম্ভব। এই তত্ত্বগুলো যখন পরমাণুর প্রতিরূপ গঠনের ব্যবহার করার চেষ্টা হল তখন কিন্তু একটা সমস্যার সৃষ্টি হল। ক্ষুদ্র একটা পরা আধানযুক্ত কেন্দ্ৰক আর তার চারপাশে অপরা আধানযুক্ত একটা ইলেকট্রনের মেঘ–এই নিয়ে পরমাণুগুলো গঠিত, এ তথ্য আগেই আবিষ্কৃত হয়েছিল। স্বাভাবিক অনুমান ছিল, পৃথিবী যেমন কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ইলেকট্রনগুলোও তেমনি কেন্দ্রককে কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে। কিন্তু চিরায়ত তত্ত্বের পূর্বাভাস ছিল ইলেকট্রনগুলো বিদ্যুৎচুম্বকীয় তরঙ্গ বিকিরণ করবে। এই তরঙ্গগুলো দূরে শক্তি বহন করে নিয়ে যাবে। ফলে ইলেকট্রনগুলো সর্পিলচক্র (spiral) গতিতে কেন্দ্রকে পতিত হবে এবং পরমাণুটি চুপসে যাবে।

এই সমস্যার সমাধান হয় কোয়ান্টাম তত্ত্ব আবিষ্কারের ফলে। এ আবিষ্কার নিঃসন্দেহে এ শতাব্দীতে তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার বৃহত্তম কৃতিত্ব। হাইসেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি এই তত্ত্বের মূলগত স্বীকার্য। এই নীতির বক্তব্য : একটা কণিকার অবস্থান এবং ভরবেগের (momentum) মতো কতগুলো সংখ্যার জোড় যুগপৎ যাদৃচ্ছিক নির্ভুলভাবে মাপা যায় না। পরমাণুর ক্ষেত্রে এর অর্থ ছিল শক্তির নিম্নতর স্তরে ইলেকট্রন কেন্দ্রকের ভিতরে স্থিতিলাভ করতে পারে না। কারণ তাহলে এর অবস্থান নিষ্ঠুভাবে সংজ্ঞিত হবে (কেন্দ্রকের ভিতরে) এবং এর বেগও নির্ভুলভাবে সংজ্ঞিত হবে (সেটি হবে শূন্য)। তার বদলে অবস্থান এবং বেগ দুটিকেই কিঞ্চিৎ সম্ভাবনা বণ্টনের (probability distribution) সাহায্যে কেন্দ্রকের চারপাশে প্রলিপ্ত (smeared) হতে হবে। এই অবস্থায় ইলেকট্রনটি বিদ্যুৎচুম্বকীয় তরঙ্গরূপে শক্তি বিকিরণ করতে পারবে না। তার কারণ ইলেকট্রনটির নিম্নতর শক্তিস্তরে যাওয়ার মতো কোন শক্তিস্তর থাকবে না।

১৯২০ এবং ১৯৩০ সালে কণাবাদী বলবিদ্যা অণু ও পরমাণুর মতো তন্ত্রে খুব সাফল্যের সঙ্গে প্রয়োগ করা হয়েছিল। এগুলোর শুধুমাত্র সীমিত সংখ্যক মাত্রায় (degree) স্বাধীনতা রয়েছে। অসুবিধার সৃষ্টি হল যখন লোকে এই তত্ত্ব বিদ্যুৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রে প্রয়োগের চেষ্টা করল । এই ক্ষেত্রগুলোর স্বাধীনতার মাত্রার (degree) সংখ্যা অসীম, মোটামুটি প্রতি মাত্রা (degree) স্থান-কালে দুটি করে। স্বাধীনতার এই মাত্রাগুলোকে স্পন্দক (oscillators) বলে ভাবা যেতে পারে। এদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব অবস্থান এবং ভরবেগ (momentum) রয়েছে। স্পন্দকগুলোর স্থিতি হতে পারে না, কারণ তাহলে তাদের নির্ভুলভাবে সংজ্ঞিত অবস্থান এবং ভরবেগ থাকবে। তার বদলে প্রতিটি স্পন্দকের থাকে কিছু সর্বনিম্ন পরিমাণ তথাকথিত অনপেক্ষ শূন্যাঙ্কীয় হ্রাস বৃদ্ধি (zero-point fluctuation) এবং একটা অশূন্যাঙ্ক শক্তি (a non-zero energy)। সমস্ত অসীম সংখ্যক মাত্রার স্বাধীনতার শক্তি ইলেকট্রনটির আপাতদৃষ্ট ভর এবং আধানকে অসীমে নিয়ে যাওয়ার কারণ হবে।

এই অসুবিধা দূর করার জন্য ১৯৪০ সালে পুনঃপরিমিতি (renomalization) নামে একটা পদ্ধতি তৈরি হয়। এ পদ্ধতিটি ছিল–কিছু অসীম রাশিকে যাদৃচ্ছিকভাবে বিয়োগ করে অসীম বিয়োগ করে সসীম অবশিষ্ট রাখা। তড়িৎগতিবিদ্যার ক্ষেত্রে প্রয়াজন। ছিল এই রকম দুটি অসীম বিয়োগ–একটা ইলেকট্রনের আধানের জন্য। এই পুনঃপরিমিতি পদ্ধতি কখনোই কল্পন কিংবা গণিতের খুব দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়নি কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এ পদ্ধতিতে কাজ ভালই হয়েছে। এর বৃহত্তম সাফল্য ছিল পারমাণবিক হাইড্রোজেনের বর্ণালির কয়েকটি রেখার সামান্য অপসরণ ল্যাম্ব শিট (Lamb shift) সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী। তবে একটা সম্পূর্ণ তত্ত্ব-গঠনের চেষ্টার দিক থেকে এ পদ্ধতি খুব সন্তোষজনক হয়নি, তার কারণ অসীম বিয়োগ করার পর অবশিষ্টের সসীমের মূল্যাঙ্ক সম্পর্কে কোন ভবিষ্যদ্বাণী এ পদ্ধতি করতে পারেনি। সুতরাং ইলেকট্রনের ভর এবং আধান ব্যাখ্যা করার জন্য আমাদের আবার ঐ নরত্বীয় নীতির উপর নির্ভর করতে হবে।

1950 এবং 1960 এর দশকে সাধারণত বিশ্বাস করা হত দুর্বল কেন্দ্রীয় বল 472 yra artit coucou 160159 (weak and strong nuclear forces) পুনঃপরিমিতিকরণ (renomalization) সম্ভব নয়, কারণ তাদের সসীম করার জন্য প্রয়োজন হবে অসীম সংখ্যক অসীম বিয়োগ করা। অসীম সংখ্যক সসীম অবশিষ্ট থাকবে, যা তত্ত্বের দ্বারা নির্ধারিত হয়নি। সেরকম তত্ত্বের কোন ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা থাকবে না, তার কারণ, অসীম সংখ্যক স্বেচ্ছস্থিরাঙ্ক (parameter) মাপা সম্ভব নয়। তবে 1971 সালে গেরার্ডটি হুট (Gerard’t Hooft) দেখালেন আব্দুস সালাম (Abdus Salam) এবং স্টিভেন ইউনবার্গ (Steven Weinberg) এর পূর্ব প্রস্তাবিত তড়িৎচুম্বকীয় এবং দুর্বল পারস্পরিক ক্রিয়ার সংযুক্ত প্রতিরূপের পুনঃপরিমিতিকরণ (renormalization) শুধুমাত্র সীমিত সংখ্যক অসীম বিয়োগের দ্বারা সম্ভব। সালাম উইনবার্গ তত্ত্বে ফোটন অর্থাৎ যে চক্ৰণ-১ কণিকা তড়িৎচুম্বকীয় পারস্পরিক ক্রিয়া বহন করে; তার সঙ্গে w+, w« এবং Z0 নামক আর তিনটি চক্ৰণ-১ অংশগ্রহণ করে। ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে অত্যন্ত উচ্চশক্তিতে এই চারটি কণিকার আচরণ একই হবে। ফোটন বিরামভর শূন্য অথচ W+, W- এবং Z0 এর ভর অত্যন্ত বেশি এই তথ্য ব্যাখ্যা করার জন্য স্বতঃবৃত্ত প্রতিসমত্ব ভঙ্গ হওয়া (spontaneous symmetry break ing) নামক নিম্নশক্তিস্তরের একটা পরিঘটনা ব্যবহার করা হয়। এই তত্ত্বের নিম্নশক্তিস্তরের ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে পর্যবেক্ষণ ফলের বিলক্ষণ মিল রয়েছে। এর ফলে ১৯৭৯ সালে সালাম-উহনবার্গ এবং শেলডন গ্ল্যাশোকে (Sheldon Glashow) সুইডিশ একাডেমি পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার দান করেন। শেলডন গ্ল্যাশো একাধিক একইরকম ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব গঠন করেছিলেন। তবে গ্ল্যাশো নিজেই মন্তব্য করেছেন, নোবেল কমিটি নিজেরাই একটা জুয়া খেলেছিলেন। তার কারণ যে ভুক্তিতে (regime) ফোটনবাহিত তড়িৎচুম্বকীয় বলগুচ্ছ এবং w+, W- এবং Z0 বাহিত দুর্বল বলগুচ্ছ সত্যিই ঐক্যবদ্ধ হয় সেই ভুক্তিতে তত্ত্বটি পরীক্ষা করার মতো যতেষ্ট উচ্চশক্তিসম্পন্ন কণিকাত্বরণ যন্ত্র আমাদের নেই। যথেষ্ট শক্তিশালী ত্বরণযন্ত্র কয়েক বছরেই প্রস্তুত হবে। অধিকাংশ পদার্থবিদের দৃঢ় বিশ্বাস এই যন্ত্রে সালাম-উইনবার্গ তত্ত্বের সত্যতা প্রমাণিত হবে।*
[*আসলে ১৯৮৩ সালে জেনেভার CERN ল্যাবরেটরিতে W এবং Z কণিকা দেখা গেছে। যে দল এই আবিষ্কার করেছিলেন তাদের নেতা ছিলেন কার্লো রুবিয়া (Curlo Rubbia) এবং সাইমন ভ্যান ডার মীর (Siomon Van dar Meere)। ১৯৮৪ সালে তাদের নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। একজন নোবেল পুরস্কার পেলেন না–তার নাম গেরার্ড টি. হুট।]

সালাম-উইনবার্গ তত্ত্বের সাফল্যের ফলে শুরু হয় সবল পারস্পরিক ক্রিয়াগুলো সম্পর্কে একইরকম একটা পুনঃপরিমিতিযোগ্য (renomalizable) তত্ত্ব অনুসন্ধান। যথেষ্ট আগেই বোঝা গিয়েছিল প্রোটন এবং পি-মেসনের (Pi-meson) মতো অন্য হ্যাঁড্রনগুলো (hardon) সত্যিকারের মৌলকণা হতে পারে না। এরা নিশ্চয়ই কার্ক quark) নামক অন্য কণিকাগুলোর বদ্ধ অবস্থা। এদের একটা অদ্ভুত ধর্ম আছে। যদিও এরা হ্যাঁড্রনের ভিতরে যথেষ্ট স্বাধীনভাবে চলাচল করে তবু মনে হয় স্বকীয়ভাবে একটা মাত্র কার্ক পাওয়া প্রায় অসম্ভব। সবসময়ই তারা গোষ্ঠীবদ্ধভাবে তিনটি থাকে। (প্রোটন কিংবা নিউট্রনের মতো) কিংবা তারা থাকে কার্ক এবং এ্যান্ট কার্কের (বিপরীত কার্ক) জোড়ে (Pi-meson-পি-মেসন)। এটা ব্যাখ্যা করার জন্য কার্কদের উপর একটা ধর্ম আরোপ করা হয়েছে, তার নাম রঙ (colour)। দৃঢ়ভাবে বলা উচিত এর সঙ্গে আমাদের স্বাভাবিক রঙের অনুভূতির কোন সম্পর্ক নেই। কার্করা আকারে এত ছোট যে, দৃশ্যমান আলোকে সেগুলো দেখা সম্ভব নয়। এটা সুবিধাজনক একটা নাম মাত্র। চিন্তনটি এরকম: কার্কের তিনটি রঙ হয় লাল, সবুজ আর নীল। কিন্তু হ্যাঁড্রনের মতো যে কোন বিচ্ছিন্ন বদ্ধ অবস্থায় তাদের কোন রঙ থাকে না। হয় প্রোটনের মতো লাল, সবুজ এবং নীলের সংযুক্তি নয়ত পি-মেসনের মতো লাল আর বিপরীত লাল, সবুজ আর বিপরীত সবুজ এবং নীল আর বিপরীত নীলের মিশ্রণ।

অনুমান করা হয় কার্কগুলোর ভিতর শক্তিশালী পারস্পরিক ক্রিয়া বহন করে গ্লয়ন (gluon) নামক চক্রণ 1 কণিকা। অনেকটা যারা দুর্বল পারস্পরিক ক্রিয়া বহন করে তাদের মতো গুয়নেরাও রঙ বহন করে। তারা এবং কার্কেরা পুনঃপরিমিতিযোগ্য (renormalizable) তত্ত্ব মেনে চলে। এ তত্ত্বের নাম কোয়ান্টাম ক্রোমোডোইনামি (quantum chromodynamics) কিংবা সংক্ষেপে QCD. পুনঃপরিমিতি পদ্ধতির একটা ফল, তত্ত্বের কার্যকর যুগান ধ্রুবক (effective coupling constant) নির্ভর করে–যে শক্তিতে মাপা হচ্ছে তার উপর এবং অতীত উচ্চ শক্তিতে এটি হ্রাস পেয়ে শূন্যে পরিণত হয়। এই পরিঘটনার নাম অনন্তস্পর্শী স্বাধীনতা (asymptotic freedom)। এর অর্থ হল হ্যাঁড্রনের ভিতরকার কার্কগুলোর আচরণ প্রায় উচ্চ শক্তির সংঘর্ষে স্বাধীন কণিকাগুলোর মতো। ফলে তাদের বিক্ষোভগুলো (perturbations) বিক্ষোভ তত্ত্বের সাহায্যে বিচার করা যায় (treated) বিক্ষোভ তত্ত্বের ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর সঙ্গে পর্যবেক্ষণফলের গুণগত ঐক্য রয়েছে কিন্তু এখনো কেউ দাবি করতে পারেন না যে তত্ত্বটির সত্যতা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণিত হয়েছে। স্বল্প শক্তিতে কার্যকর যুগান ধ্রুবক অতি বৃহৎ হয় এবং বিক্ষোভ তত্ত্ব ভেঙে পড়ে। আশা করা যায় এই ‘অবলোহিত দাসত্ব (infrared slavery) ব্যাখ্যা করবে কেন কার্করা সব সময় রঙহীন বন্ধ অবস্থায় বদ্ধ থাকে। কিন্তু এ ব্যাপারটা কেউই এমনভাবে দেখাতে পারেননি যা সত্যিই বিশ্বাসযোগ্য।

শক্তিশালী পারস্পরিক ক্রিয়া সম্পর্কে একটা পুনঃপরিমিতিযোগ্য তত্ত্ব এবং দুর্বল পারস্পরিক ক্রিয়া এবং বিদুৎচৌম্বক পারস্পরিক ক্রিয়া সম্পর্কে আর একটা তত্ত্ব পাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই দুটি তত্ত্বকে সংযুক্ত করে এরকম একটা তত্ত্ব অন্বেষণ করা হয়েছে। একটু অত্যুক্তি করে এই জাতীয় তত্ত্বগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে ‘মহান ঐক্যবদ্ধ তত্ত্বগুচ্ছ (Grand Unified Theories সংক্ষেপে GUTs)’। এই নামে একটু বোঝার ভুল হতে পারে কারণ তত্ত্বগুলো এমন কিছু মহান নয়, সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধও নয় এবং তারা পূর্ণ তত্ত্বও নয়। কারণ তাদের কতকগুলো অনির্ধারিত পুনঃপরিমিতি প্যারামিটার (স্বেচ্ছস্থিরাঙ্ক) রয়েছে, যেমন একাধিক যুগ্ম ধ্রুবক এবং ভর। তবুও সেগুলোকে একটা পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ তত্ত্বের অভিমুখে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলা চলে। মূলত কল্পন (basic idea) হল শক্তিশালী পারস্পরিক ক্রিয়াগুলোর কার্যকর যুগুন ধ্রুবকগুলো স্বল্প শক্তিতে বৃহৎ থাকে এবং শক্তি বৃদ্ধি পেলে ক্রমশ হ্রাস পায়। তার কারণ অনন্তস্পর্শী স্বাধীনতা (asymptotic freedom)। অন্যদিকে সালাম-উইনবার্গ তত্ত্বের কার্যকর যুগান ধ্রুবক (effective ocupling constant) স্বল্প শক্তিতে ক্ষুদ্র এবং উচ্চ শক্তিতে ক্রমশ বৃদ্ধি পায়, কারণ এই তত্ত্বের অনন্তস্পর্শী স্বাধীনতা নেই (not asymptotically free)। কেউ যদি যুগ্মন ধ্রুবকগুলোর স্বল্প শক্তিতে বৃদ্ধির হার এবং হ্রাসের হার এক্সটাপোলেট (extrapolates)* [*Extrapolate–জ্ঞাত তথ্যাদির বিচার দ্বারা জ্ঞাত তথ্য নিরূপণ করা] করেন তাহলে দেখা যায় প্রায় ১০^১৫ GeV শক্তিতে দুটি যুগুন ধ্রুবক সমান হয়। GeV এর অর্থ বিলিয়ন ইলেকট্রন ভোল্ট। একটা হাইড্রোজেন পরমাণুকে যদি সম্পূর্ণভাবে শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায় তাহলে যে শক্তি মুক্ত হবে এই শক্তি তার সমান। এর সঙ্গে যদি জ্বালানোর মতো রাসায়নিক প্রক্রিয়ার তুলনা করা যায় তাহলে পরমাণু প্রতি সেটা হয় এক ইলেকট্রন ভোল্টের মতো। তত্ত্বগুলোর প্রস্তাব : শক্তি এর বেশি হলে শক্তিশালী পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া, দুর্বল এবং তড়িৎচুম্বক প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয় কিন্তু নিম্নতর, শক্তিতে স্বতঃস্ফুর্ত প্রতিসাম্য ভঙ্গ হয়।

১০^১৫ GeV যে কোন ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতির ক্ষমতার চাইতে অনেক বেশি। এই প্রজন্মের কণিকা ত্বরণ যন্ত্রগুলো প্রায় ১০ GeV ভরকেন্দ্রিক (center-of-mass) শক্তি উৎপন্ন করতে পারে এবং পরের প্রজন্মগুলো উৎপন্ন করবে ১০০ Gev এর কাছাকাছি শক্তি। সালাম-উইনবার্গ তত্ত্ব অনুসারে এই শক্তি, শক্তির যে পাল্লায় তড়িৎচুম্বকীয় বলগুলোর দুর্বল বলের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত সে সম্পর্কে গবেষণা করার পক্ষে যথেষ্ট। কিন্তু যে বিরাট উচ্চ শক্তিতে দুর্বল এবং তড়িৎচুম্বকীয় পারস্পরিক ক্রিয়া ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে শক্তিশালী পারস্পরিক ক্রিয়ার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হবে, ততটা শক্তি নয়। সে যাইহোক, গবেষণা করে পরীক্ষাযোগ্য মহান ঐক্যবদ্ধ শক্তিগুলোর স্বল্প শক্তি নয়। সে যাইহোক, গবেষণা করে পরীক্ষাযোগ্য মহান ঐক্যবদ্ধ শক্তিগুলোর স্বল্প শক্তি ভবিষ্যদ্বাণীও থাকতে পারে। উদাহরণ : তত্ত্বগুলোর ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে প্রোটনগুলোর সম্পূর্ণ সুস্থিত completely stable) হওয়ার কথা নয়। তাদের জীবনকাল ১০^৩১ বছর, তারপর তাদের অবক্ষয় হওয়ার কথা। জীবনকালের আধুনিক পরীক্ষামূলক নিম্নতর সীমা ১০^৩০ বছর এবং এ ভবিষ্যদ্বাণীর উন্নতি করা সম্ভব।

আর একটা পরীক্ষাযযাগ্য ভবিষ্যদ্বাণী হল, মহাবিশ্বের ব্যারিয়ন (baryon) এবং ফোটনের (photon) অনুপাত বিষয়ে। বস্তুকণা এবং বিপরীত বস্তুকণা সাপেক্ষ পদার্থবিদ্যার বিধিগুলো অভিন্ন বলে মনে হয় । আরও নির্ভুলভাবে বলা যায়, যদি কণিকার স্থলে বিপরীত কণিকা প্রতিস্থাপন করা যায়, দক্ষিণাবতীর (right handed) স্থলে বামাবর্তী (left-handed) প্রতিস্থাপন করা যায় এবং যদি সমস্ত কণিকার বেগ বিপরীতমুখী করা যায় তাহলেও পদার্থবিদ্যার বিধি অভিন্ন থাকে। একে বলা হয় C P T উপপাদ্য এবং যে মূলগত অনুমান যে কোন যুক্তিসঙ্গত তত্ত্বের ক্ষেত্রে সত্য এ উপপাদ্য তারই ফল। সমগ্র বিশ্ব, এমনকি সমগ্র সৌরজগৎ প্রোটন এবং নিউট্রন দিয়ে গঠিত অথচ কোন বিপরীত প্রোটন কিংবা বিপরীত নিউট্রন নেই। আসলে কণিকা এবং বিপরীত কণিকার ভিতরে এরকম সমতার অভাব পূর্বাহ্নে গৃহীত অস্তিত্বের আরও একটা শর্ত। কারণ সৌরজগৎ যদি সমসংখ্যক কণিকা এবং বিপরীত কণিকার মিশ্রণ দিয়ে তৈরি হত তাহলে তারা পরস্পরকে বিনষ্ট করত এবং অবশিষ্ট থাকত শুধুমাত্র বিকিরণ। বিনাশ পরবর্তী বিকিরণের অভাব পর্যবেক্ষণ করে আমরা সিদ্ধান্ত করতে পারি আমাদের ছায়াপথ বিপরীত কণিকা দিয়ে গঠিত নয়, গঠিত কণিকা দিয়ে। অন্য ছায়াপথগুলো সম্পর্কে প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য আমাদের নেই, কিন্তু মনে হয় তাদের কণিকা দিয়ে গঠিত হওয়ারই সম্ভাবনা এবং সমগ্র মহাবিশ্বে বিপরীত কণিকার চাইতে কণিকার আধিক্য রয়েছে, প্রতি বিপরীত কণিকার পিছু রয়েছে ১০৮ কণিকা। এর কারণ আবিষ্কারের জন্য নরত্বীয় নীতির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু মহান ঐক্যবদ্ধ তত্ত্বগুলো এই সমতার অভাবের একটা সত্যকারের সম্ভাব্য কারণ দেখাতে পারে। যদিও মনে হয় সমস্ত পারস্পরিক ক্রিয়াই C (কণিকার স্থলে বিপরীতমুখী গতি) P (দক্ষিণাবতাঁকে বামাবর্তীতে পরিণত করা) এবং T (সময়ের অভিমুখকে বিপরীতমুখী করা) এর সমন্বয়ে নিশ্চয় মনে হয় তবুও এমন কিছু পারস্পরিক ক্রিয়া আছে যেগুলো শুধুমাত্র T এর প্রভাব নিশ্চয় নয়। আদিম মহাবিশ্বে যখন প্রসারণের দরুন লক্ষণীয় কালের তীর ছিল তখন এই পারস্পরিক প্রতিক্রিয়াগুলো বিপরীত কণিকার চাইতে অনেক বেশি কণিকা উৎপন্ন করতে পারত। তবে যে সংখ্যা তারা বলেন সেগুলো খুবই বেশি প্রতিরূপ। নির্ভর (model dependent) সেজন্য পর্যবেক্ষণের সঙ্গে মতৈক্য মহান ঐক্যবদ্ধ তত্ত্বগুলোর প্রমাণ হওয়া মুশকিল।

এতদিন পর্যন্ত অধিকাংশ সময়ই ব্যয় করা হয়েছে প্রথম তিন শ্রেণীর ভৌত পারস্পরিক ক্রিয়াকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য : দুর্বল এবং সবল কেন্দ্রীয় বল এবং বিদ্যুৎচৌম্বকত্ব। চতুর্থ অর্থাৎ শেষটির নাম মহাকর্ষ। সেটাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে, এর একটা যুক্তি হল মহাকর্ষ এত দুর্বল যে কণাবাদী মহাকর্ষীয় অভিক্রিয়া বৃহৎ হবে শুধুমাত্র সেই কণিকাশক্তিতে যে শক্তি কণিকা ত্বরণ যন্ত্রগুলোর ক্ষমতার চাইতে অনেক অনেক বেশি। আর একটা যুক্তি : মহাকর্ষকে পুনঃপরিমিতিযোগ্য মনে হয় না। মনে হয় একটা সসীম উত্তর পাওয়ার জন্য অসীম সংখ্যক অসীম বিয়োগ করতে হতে পারে, তার সঙ্গে থাকবে অনুরূপ অসীম সংখ্যক অনির্ধারিত সসীম অবশিষ্ট। তবুও পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব পেতে হলে মহাকর্ষকে অন্তর্ভুক্ত করতেই হবে। তাছাড়া চিরায়ত তত্ত্বে ব্যাপক অপেক্ষবাদের পূর্বাভাস অনুসারে একাধিক স্থান-কাল অনন্যতা থাকবে এবং সে ক্ষেত্রে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র হবে অসীম শক্তিশালী, এই অনন্যতাগুলো থাকবে অতীতে। অতীতে মহাবিশ্বের বর্তমান সম্প্রসারণের শুরুতে (বৃহৎ বিস্ফোরণ) এবং ভবিষ্যতে তারকাগুলোর এবং হয়ত সমগ্র মহাবিশ্বেরই মহাকর্ষীয় সঙ্কোচনে চুপসে যাওয়ার সময় এই অনন্যতাগুলোর আবির্ভাব হয়। এই অনন্যতাগুলো সম্পর্কে এই ভবিষ্যদ্বাণী বোধ হয় নির্দেশ করে চিরায়ত তত্ত্বই ভেঙে পড়বে। তবে যতদিন পর্যন্ত না মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র এমন শক্তিশালী হয় যে কোয়ান্টাম মহাকর্ষীয় অভিক্রিয়া শক্তিশালী হয়ে ওঠে ততদিন পর্যন্ত চিরায়ত তত্ত্বের ভেঙ্গে পড়ার কোন কারণ নেই। সুতরাং আমরা যদি আদিম মহাবিশ্বের বিবরণ দিতে চাই এবং শুধুমাত্র নরত্বীয় নীতির দ্বারাস্থ হওয়া ছাড়া আমরা আদিম অবস্থার অন্য কোন ব্যাখ্যা দিতে চাই তাহলে মহাকর্ষের কোয়ান্টাম তত্ত্ব অবশ্য প্রয়োজনীয়।

চিরায়ত ব্যাপক অপেক্ষবাদের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে কালের একটা আরম্ভ এবং সম্ভাব্য একটা শেষ কি সত্যই আছে? কিংবা বৃহৎ বিস্ফোরণ এবং বৃহৎ সঙ্কোচনের অনন্যতাগুলো কি কোয়ান্টাম অভিক্রিয়া দ্বারা কোনভাবে প্রলিপ্ত হয় (smeared out? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার জন্য উপরে উল্লিখিত তত্ত্বটি প্রয়োজন। এ প্রশ্নের সুসংজ্ঞিত অর্থ পাওয়া কঠিন, কারণ স্থান ও কালের গঠনও অনিশ্চয়তা নীতির আওতায় পড়ে। আমার ব্যক্তিগত ধারণা অনন্যতাগুলোর অস্তিত্ব এখনও বোধহয় রয়েছে তবে বিশেষ একটা গাণিতিক অর্থে সেগুলোকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া যায়। চেতনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাল সম্পর্কিত যে কোন ব্যক্তিনিষ্ঠ কল্পন কিংবা মাপন ক্ষমতা লুপ্ত হয়ে যাবে।

মহাকর্ষের কোয়ান্টাম তত্ত্ব আবিষ্কার এবং তার সঙ্গে অন্য তিনটি শ্রেণীর পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কতটা? মনে হয় সবচাইতে বেশি আশা করা যায় ব্যাপক অপেক্ষবাদের একটা সম্প্রসারণের উপর, তার নাম অতি মহাকর্ষ (super gravity)। এই তত্ত্বে গ্র্যাভিটন (graviton) নামে যে চক্ৰণ ২ কণিকা মহাকর্ষীয় পারস্পরিক ক্রিয়া বহন করে তাদের তথাকথিত অতি প্রতিসম রূপান্তরের (super symmerty transformation) মাধ্যমে সম্পর্ক রয়েছে অন্য কয়েকটি ক্ষুদ্রতর চক্ৰণবিশিষ্ট কণিকার। এরকম তত্ত্বের একটা বিরাট গুণ হল যে, ‘পদার্থের প্রতিনিধি এক অর্ধ পূর্ণসংখ্যা চক্রণ (one half-integerspin) কণিকা এবং যে পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার প্রতিনিধি পূর্ণসংখ্যা চক্ৰণ (integerspin particles) কণিকা এবং দুই এর ভিতরকার দ্বি-বিভাজন (dichotomy) দূর করে এরকম তত্ত্ব। এ তত্ত্বের আরও একটা বিরাট সুবিধা হল কোয়ান্টাম তত্ত্বের বহু বাতিল অসীমের অনেকগুলোই পরস্পরকে বাতিল করে দেবে। সবগুলো বাতিল হয়ে এমন একটা তত্ত্ব সৃষ্টি হবে কিনা যাতে কোন অসীম বিয়োগ নেই, সেটা এখনো জানা নেই। আশা করা যায় সেরকম হবে। কারণ দেখানো যেতে পারে মহাকর্ষ যে সমস্ত তত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত সেগুলো হয় সীমিত (finite) নয়ত তারা পুনঃপরিমিতিযোগ্য (renormalizable) নয়, কারণ কেউ যদি কোন অসীম বিয়োগ করতে যান তাহলে তাদের করতে হবে অসীম সংখ্যক অসীম বিয়োগ (infinite number of them) এবং তাতে থাকবে অনুরূপ অসীম সংখ্যক অনির্ধারিত অবশিষ্ট। অর্থাৎ অতি মহাকর্ষের সমস্ত অসীম যদি পরস্পরকে বাতিল করে তাহলে আমরা এমন একটা তত্ত্ব পেতে পারি সেটা শুধুমাত্র পদার্থ কণিকা এবং পারস্পরিক ক্রিয়াকে ঐক্যবদ্ধ করবে তাই নয়, তারা এই অর্থে পূর্ণ যে তাদের কোন অনির্ধারিত, পুনঃপরিমিত প্যারামিটার (স্থিতিমান স্বেচ্ছস্থিরাঙ্ক) থাকবে না।

যদিও উপযুক্ত কোয়ান্টাম মহাকর্ষীয় তত্ত্ব এখনো আমাদের নেই, এর সঙ্গে অন্যান্য ভৌত পারস্পরিক ক্রিয়াকে ঐক্যবদ্ধ করে, এমন তত্ত্ব তো নেইই তবে এ জাতীয় তত্ত্বের অবয়ব কি রকম হবে তা খানিকটা সম্পর্কে আমাদের ধারণা আছে। তাদের একটার সঙ্গে সমপর্ক আছে : মহাকর্ষ স্থান-কালের নৈমিত্তিক গঠন প্রভাবিত করে (causal struc ture) এই তথ্যের। অর্থাৎ কোন ঘটনাগুলো নৈমিত্তিকভাবে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত সেটা নির্ধারণ করে মহাকর্ষ। চিরায়ত ব্যাপক অপেক্ষবাদে এর একটা উদাহরণ কৃষ্ণগহ্বর। এটা স্থান-কালের এমন একটা অঞ্চল যেখানে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে এত শক্তিশালী যে আলোক কিংবা অন্য কোন সঙ্কেতকে পিছু টেনে ঐ অঞ্চলের ভিতরেই রাখা হয়, তারা বহির্জগতে নির্গত হতে পারে না। কৃষ্ণগহ্বরের নিকটের তীব্র মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের ফলে কণিকা এবং বিপরীত কণিকার জোড় সৃষ্টি হয়। তাদের একটা পতিত হয় কৃষ্ণগহ্বরে আর অন্যটি নির্গত হয় অসীমে। যে কণিকাটি নির্গত হয়, মনে হয় সেটি কৃষ্ণগহ্বর থেকে নির্গত হয়েছে। কৃষ্ণগহ্বর থেকে দূরে একজন পর্যবেক্ষণকারী শুধুমাত্র বাইরে নির্গত হওয়া কণিকাগুলোই মাপতে পারে। যে কণিকাগুলো কৃষ্ণগহ্বরে পতিত হয় সেগুলোর সঙ্গে সে বাইরে নির্গত হওয়া কণিকাগুলোর সম্পর্ক স্থির করতে পারে না। কারণ সেগুলোকে সে পর্যবেক্ষণ করতে পারে না। এর অর্থ হল বাইরে নির্গত হওয়া কণিকাগুলোর একটু বেশি পরিমাণ অনিয়ম (randomness) রয়েছে অর্থাৎ অনিশ্চয়তা নীতির সঙ্গে যে পরিমাণ ভবিষ্যদ্বাণী করার অসুবিধা জড়িত থাকে এক্ষেত্রে তার চাইতে বেশি অসুবিধা জড়িত রয়েছে। সাধারণ পরিস্থিতি অনিশ্চিয়তা নীতির নিহিতার্থ হল– একটা কণিকার হয় অবস্থান নয়ত গতিবেগ (velocity) সম্পর্কে নিশ্চিত ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব কিংবা সম্ভব অবস্থান এবং গতিবেগের একটা সমন্বয় (combination) সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা। অর্থাৎ মোটামুটি বলা যায়, নির্দিষ্ট নিশ্চিত ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা অর্ধেকে নেমে যায়, তবে কৃষ্ণগহ্বর থেকে নির্গত কণিকাগুলোর ক্ষেত্রে যেহেতু কৃষ্ণগহ্বরের ভিতরে কি হচ্ছে সেটা পর্যবেক্ষণ করা যায় না সেজন্য নির্গত কণিকাগুলোর অবস্থান কিংবা গতিবেগ কোনটা সম্পর্কেই নির্দিষ্ট নিশ্চিত ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র সম্ভব সম্ভাব্যতা প্রকাশ করা কণিকাগুলোর নির্গত হওয়ার বিশেষ প্রকৃতি সম্পর্কে।

সেজন্য মনে হয় আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব আবিষ্কার করলেও হয়ত শুধুমাত্র পরিসাংখিক ভবিষ্যদ্বাণীই করতে পারব। আমরা যা পর্যবেক্ষণ করি সেই রকম অদ্বিতীয় একটা মহাবিশ্বই রয়েছে এই মতও আমাদের ত্যাগ করতে হবে। তার বদলে আমার এমন একটা চিত্র গ্রহণ করতে হবে যে চিত্রে সম্ভাব্য সর্বপ্রকার মহাবিশ্বের একটা সমগ্রতা (ensemble) রয়েছে আর তার সঙ্গে রয়েছে কিছু সম্ভাব্যতা বন্টন (probability distribution)। এ থেকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে মহাবিশ্ব বৃহৎ বিস্ফোরণে প্রায় নিখুঁত তাপীয় সাম্য (thermal equilibrium) তার কারণ তাপীয় সাম্য হবে বৃহত্তম সংখ্যক আণুবীক্ষণিক গঠনবিন্যাসের এবং বৃহত্তম সম্ভাব্যতা অনুরূপ। ভোলতেয়ারের দার্শনিক পেনগ্নসের (Pengloss) কথা সহজতর বাগ্বিধিতে প্রকাশ করলে বলা যায় ‘সম্ভাব্য সর্বপ্রকার বিশ্বের সবচাইতে সম্ভাব্য জগতে আমরা বাস করি।

অদূর ভবিষ্যতে আমাদের একটা পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব আবিষ্কারের সম্ভাবনা কতটা? যতবারই আমরা পর্যবেক্ষণকে ক্ষুদ্রতর দৈর্ঘ্যের মান এবং উচ্চতর শক্তিতে প্রসারিত করেছি ততবারই আমরা গঠনের নতুন স্তর আবিষ্কার করেছি। এই শতাব্দীর প্রথম ব্রাউনীয় গতির সঙ্গে শক্তি কণিকার ৩ X ১০^-২ eV ইলেকট্রন ভোল্ট এর জাতিরূপ আবিষ্কারের ফলে দেখা যায়–পদার্থ পরমাণু দিয়ে গঠিত–পদার্থ অবিচ্ছিন্ন নয়। এর কিছুদিন পরই আবিষ্কৃত হল : এই পরমাণুগুলোকে অবিভাজনযোগ্য অনুমান করা হলেও এরা কেন্দ্রকের চারপাশে ঘূর্ণায়মান কিছু ইলেকট্রন দিয়ে গঠিত। এদের শক্তির পরিমাণ কয়েক ইলেকট্রন ভোল্ট। এবার কেন্দ্রকের পালা। দেখা গেল কেন্দ্ৰকগুলো তথাকথিত মৌলকণা দিয়ে গঠিত। এগুলো প্রোটন আর নিউট্রন। এগুলো নিউক্লীয় বন্ধন দিয়ে যুক্ত। তাদের শক্তির পরিমাণ ১০^৬ eV। এই কাহিনীর নবতম অংশ হল। আমরা আবিষ্কার করেছি প্রোটন আর ইলেকট্রন-কার্ক দিয়ে তৈরি। তারা পরস্পরের সঙ্গে যে বন্ধনে যুক্ত তার শক্তির পরিমাণ ১০^৯ eV এর মতো। আমরা তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যায় কতদুর এগিয়েছি সে সম্পর্কে এ উক্তি সপ্রশংস : এখন আমাদের একটা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার জন্য বিশাল যন্ত্র এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় কিন্তু তার ফলাফল সম্পর্কে কোন ভবিষ্যদ্বাণী আমরা করতে পারি না। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় হয়ত উচ্চতর এবং অধিক উচ্চতর শক্তিতে অসীম সংখ্যক গঠনস্তরের ক্রম রয়েছে। তথাকথিত গ্যাং অফ ফোরের (Gang of four) অধীন চীনে বাক্সের ভিতরে বাক্সের মতো অসীম পঞ্চান্মুখীতার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সরকারি মতবাদ। তবে মনে হয় মহাকর্ষ একটা সীমানা যোগাতে পারে, কিন্তু সেটা শুধুমাত্র ১০^৩৩ এর মতো অত্যন্ত স্বল্প দৈর্ঘ্যের মানে কিংবা ১০^২৮ eV এর মতো অত্যন্ত উচ্চ শক্তির মানে। দৈর্ঘ্য এর চাইতে অল্প হলে আশা করা যায় স্থান-কাল একটা মসৃণ সাংতত্যকের (continum) মতো আচরণ করা থেকে বিরত হবে এবং একটা সফেন (foam like) গঠনের মতো আকার ধারণ করবে। তার কারণ মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের কোয়ান্টাম হ্রাস-বৃদ্ধি।

আমাদের আধুনিক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার সীমা প্রায় ১০^১০ eV এবং মহাকর্ষীয় সীমা ১০^২৮ eV। এর মধ্যবর্তী বিরাট অঞ্চল অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। মহান ঐক্যবদ্ধ তত্ত্বগুলো যা করে সেরকম যদি মনে করা হয় যে এই বিরাট অন্তর্বর্তী স্থান-কালে গঠনের মোটে একটি কি দুটি স্তর আছে তাহলে সেটি অর্বাচীনোচিত (naive) মনে হতে পারে। তবে আমাদেরও যুক্তি আছে। এই মুহূর্তে অন্তত মনে হয় মহাকর্ষকে অন্য ভৌত ক্রিয়াগুলোর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ করা যায়, শুধুমাত্র কোন অতিমহাকর্ষীয় তত্ত্বে। এই ধরনের তত্ত্বের সংখ্যা সীমিত। বিশেষ করে এরকম একটা বৃহত্তম তত্ত্ব আছে, সেটি তথাকথিত N = ৮ প্রসারিত অতি মহাকর্ষ (N = ৪ extended supergravity)। এতে রয়েছে একটি গ্যাবিটন, আটটি চক্ৰণ ৩/২ কণিকা–এগুলোর নাম গ্র্যাভিটোনোস gravitonos). আঠাশটি চক্রণ ১ কণিকা ছাপ্পান্নটি চক্রণ ১/২ কণিকা এবং সত্তরটি চক্রণ ০ কণিকা। এই সংখ্যাগুলো বৃহৎ কিন্তু সবল এবং দুর্বল পারস্পরিক ক্রিয়ায় আমরা যে সমস্ত কণিকা । পর্যবেক্ষণ করছি বলে মনে হয় সেগুলোকে ব্যাখ্যা করার মতো বৃহৎ নয়। উদাহরণ, N = ৮ তত্ত্বে রয়েছে আঠাশটি চক্রণ ১ কণিকা। এরা সবল পারস্পরিক ক্রিয়া বহনকারী গ্লুয়ন (Gluon) ব্যাখ্যা করার পক্ষে যথেষ্ট এবং দুর্বল পারস্পরিক ক্রিয়া যারা বহন করে সেই চারটি কণিকার দুটিকে তারা ব্যাখ্যা করতে পারে কিন্তু বাকি দুটিকে তারা ব্যাখ্যা করতে পারে না। সুতরাং বিশ্বাস করতে হয় গ্লুয়ন কিংবা কার্কের মতো পর্যবেক্ষণ করা অনেক কণিকা। হয়ত বা অধিকাংশ কণিকাই আসলে মৌল নয়–যদিও এই মুহূর্তে তাদের মৌলকণাই মনে হয়, এগুলো হয়ত N = ৮ মৌলকণাগুলোর বদ্ধ অবস্থা (bound state)। নিকট ভবিষ্যতে এই যুগ গঠন (composite structure) গবেষণা করার মতো শক্তিশালী তৃরণ যন্ত্র পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। যদি বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবণতার ভিত্তিতে অভিক্ষেপ (projection) করা যায়, তাহলে বলা যায় সে যন্ত্র আমরা কোন দিনই পাব না। তবুও এই বদ্ধ অবস্থাগুলো যে N = ৮ তত্ত্বের মতো একটা সুসংজ্ঞিত তত্ত্ব থেকে উদ্ভূত, সেই তথ্য আমাদের এমন কতগুলো ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা দেবে যেগুলো এমন শক্তিতে পরীক্ষা করা যায় যে শক্তি এখন কিংবা নিকট ভবিষ্যতে পাওয়া সম্ভব। পরিস্থিতি অনেকটা সালাম-উইনবার্গ তত্ত্বের ক্ষেত্রের মতো হতে পারে। এ তত্ত্ব তড়িচ্চুম্বকত্ব এবং দুর্বল পারস্পরিক ক্রিয়াকে ঐক্যবদ্ধ করে। এই তত্ত্বের ক্ষুদ্র শক্তি ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে পর্যবেক্ষণের এত ভাল ঐক্য রয়েছে যে যদিও আমরা শক্তির যে স্তরে ঐক্যবদ্ধ হব সে স্তরে এখনো পৌঁছাইনি তবুও এ তত্ত্ব এখন সাধারণতভাবে মেনে নেওয়া হয়েছে।

মহাবিশ্বের বিবরণ দেয় এরকম তত্ত্বের একটা বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত। অন্য তত্ত্বগুলো যখন শুধুমাত্র তাদের আবিষ্কারদেরই মনে থাকে তখন এই তত্ত্ব কেন জীবন্ত হয়ে ওঠে? N = ৮ অতি মহাকর্ষ তত্ত্ব কিছু বিশেষত্ব দাবি করতে পারে। মনে হয় এটি একমাত্র তত্ত্ব–

১. যেটি চারমাত্রিক।

২. মহাকর্ষকে যে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

৩. যেটি সসীম এবং যার অসীম বিয়োগ নেই।

আমি আগেই বলেছি স্থিতিমাপ (parameter) ছাড়া যদি একটা পূর্ণ তত্ত্ব গঠন করতে হয় তাহলে তৃতীয় ধর্মটি প্রয়োজন। তবে নরত্বীয় নীতির দ্বারস্থ না হয়ে প্রথম এবং দ্বিতীয় ধর্মের প্রয়োজনের কারণ বলা সম্ভব নয়। মনে হয় প্রথম এবং তৃতীয় ধর্মকে পরিতুষ্ট (satisfy) করে এরকম একটা সুসঙ্গত তত্ত্ব আছে কিন্তু মহাকর্ষ সে তত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে সেরকম একটা মহাবিশ্বে হয়ত এমন যথেষ্ট পরিমাণ আকর্ষণী বল থাকবে না যে বল যথেষ্ট পরিমাণ পদার্থ সংগ্রহ করে বৃহৎ পুঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। এই বৃহৎ পুঞ্জগুলোই হয়ত জটিল অবয়ব (complicated structure) বিকাশের জন্য । প্রয়োজন। স্থান-কাল কেন চারমাত্রিক হবে? সাধারণত মনে করা হয় এ প্রশ্নটির অবস্থান পদার্থবিদ্যার এলাকার বাইরে। তাতে এক্ষেত্রেও একটা উত্তম নরত্বীয় নীতির যুক্তি রয়েছে। তিনটি স্থান-কাল মাত্রা, অর্থাৎ দুটি স্থান এবং একটা কাল–যে কোন জটিল জীবের পক্ষে স্পষ্টতই যথেষ্ট নয়। আবার অন্যদিকে তিনটির বেশি স্থানিক মাত্রা থাকলে, সূর্যকে পরিবেষ্টন করে গ্রহগুলোর কক্ষপথ কিংবা কেন্দ্রককে বেষ্টন করে ইলেকট্রনের কক্ষপথ অস্থির হত এবং তাদের সর্পিল পথে ভিতরে ঢুকে যাওয়ার প্রবণতা থাকত। তাছাড়া অবশিষ্ট থাকে একাধিক কালিক মাত্রার সম্ভাবনা কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে এরকম মহাবিশ্ব কল্পনা করা আমার পক্ষে খুবই কঠিন।

এতক্ষণ পর্যন্ত একটা চরম তত্ত্বের অস্তিত্বের আভাস আমার অনুমানে নিহিত আছে। কিন্তু সত্যিই কি সেরকম কিছু আছে?

অন্তত তিনটি সম্ভাবনা থাকতে পারে :

(১) একটা পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব আছে,

(২) কোন চূড়ান্ত তত্ত্ব নেই তবে অসীম সংখ্যক তত্ত্বের একটা ক্রম রয়েছে। সেগুলো এমন যে শৃঙ্খলর যথেষ্ট নিম্নস্থিত তত্ত্বের সাহায্যে যে কোন বিশেষ শ্রেণীর পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়।

(৩) কোন তত্ত্ব নেই। একটা বিশেষ বিন্দু অতিক্রম করে কোন পর্যবেক্ষণের বিবরণ কিংবা সে সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। সেগুলো হবে একেবারেই যাচ্ছিক।

তৃতীয় দৃষ্টিভঙ্গিটি ব্যবহার করা হয়েছিল সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ শতাব্দীর বৈজ্ঞানিকদের বিরুদ্ধে যুক্তি হিসেবে : কি করে তারা এমন বিধি গঠন করতে পারেন– যে বিধি নিজের মন পরিবর্তন করার ঐশ্বরিক স্বাধীন ইচ্ছাকে খর্ব করতে পারে? তবুও তাঁরা এ কর্ম করেছিলেন এবং এরকম করে পার পেয়েছিলেন। আধুনিক যুগে আমরা কার্যকরভাবে তৃতীয় সম্ভাবনাকে বাদ দিয়েছি এবং সে কাজ করছি ওটাকে আমাদের পরিকল্পনার অঙ্গীভূত করে। কণাবাদী বলবিদ্যা, যা আমরা জানি না এবং যে সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি না, মূলত সেই সম্পর্কীয় তত্ত্ব।

দ্বিতীয় সম্ভাবনা হবে উচ্চ থেকে উচ্চতর শক্তিতে অসীম সংখ্যক অবয়বের ক্রমের একটা চিত্র। এর আগে আমি বলেছিলাম এ সম্ভাবনা কম তার কারণ প্ল্যাঙ্ক শক্তি (Plunck enegry) ১০^২৮ eV তে ব্যাপারটি কেটে যাবে। ফলে অবশিষ্ট থাকে সম্ভাবনা ১। এই মুহূর্তে N = ৮ অতি মহাকর্ষ তত্ত্বকেই একমাত্র প্রার্থী হিসেবে দেখা যাচ্ছে।* আগামী কয়েক বছরে কয়েকটি বিনিশ্চায়ক গণনা হতে পারে এবং একটা সম্ভাবনা আছে সে গণনায় প্রমাণিত হবে তত্ত্বটি কোন কাজের নয়। এই সমস্ত পরীক্ষার পরও যদি তত্ত্বটির অস্তিত্ব থাকে তাহলে হয়ত ভবিষ্যদ্বাণীর ক্ষমতা পাওয়ার মতো গণনা পদ্ধতি আবিষ্কার করতে আর মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থার এবং স্থানীয় ভৌতবিধির কারণ বুঝতে আরও কয়েক বছর লাগবে। এগুলোই হবে আগামী কুড়ি বছর পর্যন্ত তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার অবশিষ্ট সমস্যা। তবে শেষ করতে হচ্ছে সামান্য আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ভাষায়। এ কাজ করার মতো সময় হয়ত তারা না পেতে পারে। বর্তমান গবেষণায় কম্পিউটার থেকে অনেক প্রয়োজনীয় সাহায্য পাওয়া যায়। কিন্তু কম্পিউটার পরিচালনা করতে হবে মানুষের মনকেই। যদি কেউ ইদানীংকালে কম্পিউটারের দ্রুত বিকাশের হারের ভিত্তি থেকে ভবিষ্যৎ গণনা করেন তাহলে এ সম্ভাবনা বেশ দেখা যায় যে হয়ত তারা তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার সম্পূর্ণ অধিগ্রহণ করবে। তাহলে হয়ত তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার অন্তিম দশা না দেখা গেলেও তাত্ত্বিক পদার্থবিদুদের অন্তিম দশা দেখা যেতে পারে।

——-

*মনে হয় অতি মহাকর্ষতত্ত্বই একমাত্র তত্ত্ব যার ১, ২ এবং ৩ সবকটি ধর্মই আছে। কিন্তু তার পর থেকে অতিতন্ত তত্ত্বের (superstring theory) সপক্ষে একটি বিরাট আকর্ষণের ঢেউ এসেছে। এই তত্ত্বগুলোতে মূলগত বস্তুগুলো বিন্দুকণিকা নয়। সেগুলো তন্তফাসের (loops) মতো প্রসারিত বস্তু। কল্পনটি হল : যেটা আমাদের কাছে বিন্দু বলে মনে হয় সেটা আসলে ফাসের উপরকার একটা কম্পন। মনে হয় স্বল্প শক্তি সীমায় এই অতিতন্ত তত্ত্বগুলো পরিণত হয় অতি মহাকাশ তত্ত্বে। কিন্তু এ পর্যন্ত অতিতন্ত তত্ত্ব থেকে পরীক্ষার দ্বারা তত্ত্বের ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যাসত্য নির্ণয়ে কোন সাফল্যই হয়নি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *