রাহেলা দরজা খুলে দেখতে পেলেন ছ ফুট লম্বা টম দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে। তার সারা মুখে দাঁড়িগোঁফের জঙ্গল। খালি গা। পরনে জিনিসের একটি হাফপ্যান্ট!
পায়ে জুতোটুতো কিছুই নেই।
আমি রুনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।
কার সঙ্গে?
রুন, রুনকি।
রাহেলা এক বার ভাবলেন বলেন রুনকি বাড়ি নেই। কোথায় গেছে জানি না। কিন্তু বলতে পারলেন না। টম ভারি গলায় বলল, তুমি বোধ হয় আমাকে চিনতে পারছ না। আমার নাম টমাস গ্রে। আমি রুনের বন্ধু।
ভেতরে এসে বস, আমি ডেকে দিচ্ছি।
না, আমি ভেতরে এসে তোমার কার্পেট নোংরা করব না। পায়ে আমার প্রচুর ময়লা।
রাহেলা রুনকির ঘরে উঁকি দিলেন। রুনকি চুল ছেড়ে চুপচাপ বসে আছে। হালকা সুরে পোলকা মিউজিক বাজছে। রুনকির সামনে গাদাখানিক বইপত্র ছড়ান। রাহেলা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে মৃদুস্বরে ডাকলেন, রুনকি?
ভেতরে এস, মা।
রুনকি, তোমার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই।
রুনকি হাসিমুখে বলল, কথা বলতে চাইলে বল। এত গম্ভীর হয়ে আছ কেন?
রাহেলা থেমে থেমে বললেন, আমরা তোমাকে ভালোবাসি এবং তোমার মঙ্গল চাই–এই সম্পর্কে তোমার কোনো সন্দেহ আছে?
আছে।
রাহেলা মুখ কালো করে বললেন, আমি তা জানতাম না।
ঠাট্টা করছিলাম মা। তুমি ঠাট্টা বুঝতে পার না, এ তো বড়ো মুশকিল।
রাহেলা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন, আমি চাই না, তুমি টমের সঙ্গে মেলামেশা কর।
রুনকি খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলল, টম কি এসেছে?
রাহেলা উত্তর দিলেন না। রুনকি ঝড়ের বেগে নিচে নেমে গেল। রাহেলারও ইচ্ছা হল নিচে নামেন। কিন্তু নামলেন না। নামলেই হয়তো দেখবেন দু জন জড়াজাড় করে দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘদিন আমেরিকায় বাস করার পরও এই দৃশ্য তাঁর ভালো লাগে না। রাহেলা মন্থর পায়ে নিজ ঘরের দিকে এগোলেন। তার কিছুক্ষণ পর রুনকি আবার উপরে উঠে এল। নিজের ঘরে বসেই রাহেলা বুঝতে পারলেন রুনকি সাজগোজ করছে। হালকা সুরে শিস দিচ্ছে। মেয়েদের শিস দেয়া একটা কুৎসিত ব্যাপার।
সেই রাত্রে রুনকি আর বাড়ি ফিরল না।