করিম সাহেব জহিরকে ডেকে পাঠিয়েছেন। বেয়ারা দিয়ে স্লিপ পাঠিয়েছেন, তুমি দেখা কর। জরুরি।
জহির স্লিপ পেয়েই সঙ্গে-সঙ্গে আসতে পারল না। তাঁকে যেতে হল সেজো সাহেবের কাছে। এই অফিসের তিন সাহেব বড়, মেঝো এবং সেজো। সবচে মেজাজী সাহেব হচ্ছেন সেজো জন। অদ্ভুত কোনো কারণে তাঁর ক্ষমতাও মনে হয় খুব বেশি। যদিও মানুষটা মিষ্টভাষী। কখনো রাগেন না। অফিসের যে কোনো কর্মচারী তাঁর ঘরে ঢকামাত্র হাসিমুখে বলেন, আগে বলুন তো দেখি কেমন আছেন?
কর্মচারী হাত কচলে বলে, জ্বি স্যার আপনার দেয়া।
আপনাকে আজ এমন রোগা-রোগা লাগছে কেন? বাড়িতে অসুখ-বিসুখ?
কর্মচারী আরো বিগলিত হয়ে বলে, জ্বি না স্যার। জ্বি না। সব ঠিক আছে স্যার।
সব যদি ঠিক থাকে তাহলে আমার সামনে হাসিমুখে বসুন। দুএকটা হাসিতামশার কথা বলুন। চা চলবে?
সকলেই জানে এইসব আলগা খাতিরের কথার আসলে কোনো মানে নেই। পুরাটাই এক ধরনের ভড়ং, এক ধরনের ভান। তবুও কেন জানি ভড়ংটাই ভালো লাগে। ভানটাকেই সত্যি ভাবতে ইচ্ছা করে।
জহির ভয়ে-ভয়ে বলল, স্যার আসব?
আসুন, জহির সাহেব, বসুন, খবরাখবর কি বলুন। আপনাকে রোগা-বোগা লাগছে কেন? কানের কাছে কয়েক গাছি পাকা চুল দেখতে পাচ্ছি। ব্যাপারটা কি বলুন তো? আপনাদের মতো ইয়াংম্যানরা যদি চুল পাকিয়ে ফেলেন তাহলে সংসার চলবে কীভাবে? চা চলবে?
জহির এই দীর্ঘ প্রস্তাবনার কিছুই বুঝতে পারল না।
সেজো সাহেব বিনা কারণে গল্প করে সময় নষ্ট করার মানুষ নন। কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্যটাও জহির ধরতে পারছে না। কাজকর্ম কেমন চলছে সেটা জিজ্ঞেস করলেন, এই চাকরি কীভাবে পাওয়া গেল তা জানতে চাইলেন। আমাদের দেশের অবস্থা দশ। বছর পর কী হবে তাও বললেন। জহির হা-হু ছাড়া কিছুই বলল না। সে কি বলবে? চা শেষ হবার পর সেজো সাহেব বললেন, আচ্ছা যান।
জহির ক্ষীণ স্বরে বলল, কী জন্যে ডেকেছিলেন স্যার?
এম্নি ডাকলাম। গল্প করার জন্যে ডাকা। আমরা এক অফিসে কাজ করিকেউ। বড় কাজ করি, কেউ ছোট। তাতে তো কিছু যায় আসে না। সম্পর্ক তো রাখতেই হবে। আমেরিকায় আমি দেখেছি অফিসের বস এক টেবিলে বসে জেনিটারের সঙ্গে চা খাচ্ছে। Can you imagine? একজন জেনিটার। যার কাজ হচ্ছে বাথরুম পরিষ্কার করা। আচ্ছা জহির সাহেব যান। পরে দেখা হবে।
জহির পুরোপুরি হতচকিত অবস্থায় বের হয়ে এল। তৎক্ষণাৎ করিম সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গেল। করিম সাহেব কি একটা ফাইলের পাতা উল্টাচ্ছিলেন। তিনি ফাইল বন্ধ করে বললেন, চল আমার সঙ্গে। প্রথম গেলেন ক্যান্টিনে। ঢুকতে গিয়েও ঢুকলেন না। বললেন, এখানে ভিড় বড় বেশি, চল বাইরে কোথাও যাই।
ব্যাপার কি স্যার?
করিম সাহেব বিরক্ত মুখে বললেন, ব্যাপার কি তুমি কিছুই জান না?
জ্বি না।
গতকাল অফিসে আস নাই?
জ্বি না। আমার এক মামাতো বোন, স্যার তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। অরু তার নাম। আপনি বোধ হয় দেখেছেন, কয়েকবার অফিসে এসেছে।
এখন কি তুমি সেজো সাহেবের কাছে গিয়েছিলে?
জ্বি।
সেজো সাহেব তোমাকে কিছু বলেছেন?
জ্বি না।
করিম সাহেব জহিরকে নিয়ে কোনো চায়ের দোকানে ঢুকলেন না। অফিস থেকে রাস্তায় বের হয়ে শুকনো গলায় বললেন, তোমার যে চাকরি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে তুমি কিছু শুনেছ?
জহির তাকিয়ে আছে। সে কিছুই বুঝতে পারছে না। চাকরি নিয়ে সমস্যা হবে কেন? সমস্যা হবার কি আছে?
করিম সাহেব বললেন, আমি ব্যাপারটা জানলাম কাল বিকাল তিনটায়। বড় সাহেব ছিলেন না। সেজোর সঙ্গে দেখা করলাম, তিনি বললেন–চাকরির কন্ডিশনই ছিল—টেম্পোরারি এ্যাপয়েন্টমেন্ট। ছাঁটাই হলে অসুবিধা নেই।
জহির হতভম্ব হয়ে বলল, গত বছর তো স্যার পার্মানেন্ট হয়েছে।
আমিও সেই কথাই বললাম। তিনি ফাইল বের করে দেখালেন যে চাকরি এখনো টেম্পোরারি।
ছাঁটাই কি হয়ে গেছে স্যার?
না এখনো হয় নি।
জহির তাকিয়ে আছে।
করিম সাহেব ছোট-ছোট নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। তাঁর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে তিনি খুব কষ্ট পাচ্ছেন।
জহির?
জ্বি স্যার।
আমি কাল রাতে তোমার বাসায় গিয়েছিলাম, অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। তুমি ছিলে না।
বাসায় ফিরতে একটু দেরি হয়েছিল।
জহির?
জ্বি স্যার।
তোমাকে আমি কী রকম পছন্দ করি তা কি তুমি জান?
জানি স্যার।
না জান না কারণ আমি নিজেও জানতাম না। কাল সারারাত আমি ঘুমাই নি, বারান্দায় বসে ছিলাম।
বলতে-বলতে করিম সাহেবের গলা ধরে এল। আসলেই এই ছেলেটির প্রতি তার মমতার পরিমাণ তিনি এর আগে কখনো বুঝতে পারেন নি। যে ছেলের দুদিন পর বিয়ে আজ তার চাকরির সমস্যা। এই ব্যাপারটা তাঁকে খুবই কষ্ট দিচ্ছে। কেন এমন হবে?
জহির?
জ্বি স্যার।
তোমার বিয়ের ব্যাপারটা ঠিক আছে তো?
জ্বি স্যার, এখনো আছে।
ঠিক রাখবে। মেয়ে পক্ষীয়দের কিছুই জানানোর দরকার নেই। তুমি ভয় পেও না। মানুষের ভাগ্য মানুষের কাছে না, আল্লাহর কাছে। একটা কিছু হবেই।
জহির চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
করিম সাহেব বললেন, হঠাৎ করে তোমার চাকরি নিয়ে সমস্যাটা কেন হল তা। বুঝতে পারছিনা। ইউনিয়নের লিডার মকবুলকে বললাম, মকবুল বলল দেখবে। কিন্তু তার কথার মধ্যে কোনো জোর নেই। দেখলে তো এখনই দেখতে হবে। চাকরি চলে গেলে দেখার কি থাকবে? মকবুলটা একটা হারামজাদা।
অর্ডার কি স্যার হয়ে গেছে?
না, তবে হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সেজো সাহেবের কোনো রিলেটিভ ঢুকবে। একটা ছেলের নামে এ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারও ইস্যু হয়েছে।
আমি এখন কী করি স্যার?
করিম সাহেব কিছু বললেন না। মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন। তাঁর বড় কষ্ট হচ্ছে।
স্যার, আমি কি বাসায় চলে যাব, না অফিসে কাজ করব?
বাসায় যাবে কেন? বাসায় যাবার কি আছে? অফিসেই থাক। আল্লাহর উপর ভরসা রাখ।
আশ্চর্যের ব্যাপার। এতো ভয়াবহ একটা খবর, অথচ জহির কাউকেই তা দিতে পারল না।
বরকত সাহেবের বাসায় গেল। শাহানা তার সঙ্গে একটি কথা বললেন না। তরু এবং মীরু দুজনের কেউই বাসায় নেই। ওরা কোথায় জিজ্ঞেস করায় শাহানা তীক্ষ্ণ গলায় বলল, আমি কি রেলের টাইম-টেবিল? কে কোথায় গেছে হিসাব রাখব? বরকত সাহেবও কোনো কথা বললেন না। শুধু দুবার বললেন তাঁর শরীরটা ভালো না, মাথাব্যথা। এটা আসলে প্রকারান্তরে বলে দেয়া তুমি এখন যাও।
জহির বলল, অরুর কি কোনো খবর পাওয়া গেছে মামা?
না। খবর নিয়ে ভাবছিও না। No News is good News. আচ্ছা জহির, আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল তোমার বিয়ে উপলক্ষে ভালো কিছু দেয়া—এক জোড়া কানের দুল কেনা হয়েছে। তুমি মেয়েকে যে গয়না পাঠাবে তার সাথে দিয়ে দিও। দুল জোড়া তরুকাছে আছে। ঐ নিয়ে আরেকদিন আলাপ করব। আজ যাও। শরীরটা ভালো না, মাথা ধরেছে।
জহির উঠে পড়ল। তার ভাগ্যটা অদ্ভুত। খুব কষ্টের সময় সে আশেপাশে কাউকে পায় না, যাকে কষ্টের কথা বলা যায়। সে এখন যদি আসমানীর কাছে চলে যায় তাহলে কেমন হয়? সে কি আসমানীকে বলতে পারে না আসমানী, আজ আমার খুব কষ্টের দিন। আজ আমার চাকরি চলে গেছে।
না কি সে সেজো সাহেবের বাড়িতে যাবে? সেজো সাহেবের স্ত্রীকে বলবে,ম্যাডাম সাত দিন পর আমার বিয়ে অথচ…..।
কোনো পীর সাহেবের কাছে গিয়ে দোয়া চাওয়া যায় না? তাঁদের কত রকম ক্ষমতার কথা শোনা যায় সত্যি-সত্যি হয়ত তাঁদের ক্ষমতা আছে। সবাই সেইসব ক্ষমতার খবর রাখে না।
জহির কোথাও গেল না। কলাবাগানের বাচ্চাদের পার্কের একটা বেঞ্চিতে অনেক রাত পর্যন্ত বসে রইল। ঘরে ফিরতে ইচ্ছা করছে না। আজ অসম্ভব গরম পড়েছে। তার বুক কাঁপছে। সে খুব একটা ভরসা পাচ্ছে না। এ রকম হচ্ছে কেন? কেন এ রকম হচ্ছে? বার বার সুশীতল একটা নদীর ছবি শুধু মনে আসছে। যেনদীতে গা ডুবিয়ে শুয়ে থাকা যায়। সেই নদীর জলের টান খুব প্রবল, প্রবল টানে শুধু দক্ষিণের দিকে ভেসে ভেসে যাওয়া। দক্ষিণের সমুদ্র। তারও দক্ষিণে কি?
আকাশ মেঘলা।
ফোঁটায়-ফোঁটায় বৃষ্টি পড়ছে।
জহির এক সময় উঠল।
জহিরের ঘরের দরজা খোলা।
বাতি জ্বলছে। জহির বারান্দায় থমকে দাঁড়াল। ভেতর থেকে গুনগুন করে গান। শোনা যাচ্ছে–
জনম জনম তব তরে কাঁদিব।
যতই ভাঙিবে খেলা
ততই সাধিব।
তোমারই নাম গাহি
তোমারই প্রেম চাহি
ফিরে ফিরে নিতি তব চরণে আসিব।
খুব কষ্টের একটা গান। কিন্তু গাওয়া হচ্ছে হাসি-তামাসা করে, যেন এটা মূল গানের একটা প্যারোডি, যেন কোনো একটা হাসির গান।
জহির ঘরে ঢুকতে-ঢুকতে বলল, কখন এসেছ অরু?
অরুবলল, অনেকক্ষণ। আপনার চাবি খুজে পাই নি বলে তালা ভেঙেছি। সরি ফর দ্যাট। তবে আপনার অনেক কাজ করে রেখেছি। রান্না করেছি। আসুন দুজনে খেতে বসে যাই। নাকি গোসল করবেন? যদি গোসল করতে চান গরম পানি করে দিতে পারি। বলতে-বলতে অরু মিষ্টি করে হাসল।
জহির কিছুই বলতে পারছে না। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। অরু বলল, আপনি এতে অবাক হচ্ছেন কেন? আপনি নিশ্চয়ই জানতেন, আমি একদিন আসব। জানতেন না?
জানতাম।
অরুকে কেমন রোগা-রোগা লাগছে। তার চোখের নিচে কালি। গাল ঈষৎ লালচে। সম্ভবত গায়ে হাত দিলে উত্তাপ টের পাওয়া যাবে।
জহির ভাই?
বল।
আপনার মনে যদি কোনো কঠিন প্রশ্ন থাকে তার উত্তর খেতে খেতে দেয়া যাবে। আরেকটা কথা, আপনাকে এমন লাগছে কেন? ভয়ঙ্কর কিছু কি ঘটেছে?
না।
তাহলে মুখ এমন গোমড়া করে রাখবেন না। আজহারের প্রেমে পড়েছিলাম কেন জানেন? ঐ লোকটা মুখ গোমড়া করতে পারত না। ভয়ঙ্কর কঠিন সময়েও হেসে ফেলত। আর এমন সুন্দর করে হাসতো যে তার সব অপরাধ ক্ষমা করে দিতাম। তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে করত—ফিরি ফিরি নিতি তব চরণে আসিব।
জহির অবাক হয়ে লক্ষ করল, অরুর চোখে পানি এসে গেছে, সে চোখ মুছছে।
অরু বলল, এতো অল্প সময়ে বেশি কিছু রাঁধতে পারি না। একটা পচা বেগুন ছিল ভর্তা করে ফেলেছি। পচা বেগুনের ভর্তা খুবই ভালো জিনিস। ডাল রান্না হয়েছে। আমার ধারণা ডালের মধ্যে তেলাপোকা ডিম পেড়েছিল। কেমন তেলাপোকা-তেলাপোকা গন্ধ। আপনার স্ত্রী আসমানী এসে সব ঠিক করবে।
জহির বলল, এতোদিন কোথায় ছিলে?
মাই গড, একেবারে জীবনানন্দ দাশ-এতোদিন কোথায় ছিলেন? হাসপাতালে ছিলাম। এম, আর, করিয়েছি। এম. আর. কি জানেন?
না।
পেটে যদি আনওয়ান্টেড কোনো শিশু চলে আসে, তাহলে বর্তমান আধুনিক ডাক্তারী শাস্ত্ৰ মাকে কোনো রকম কষ্ট না দিয়ে শিশুটিকে মেরে ফেলতে পারে। শিশুটি হয়ত কষ্ট পায়, কিন্তু সে তার কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারে না বলে আমরা তা জানি না। জহির ভাই, আপনি এমন ঘৃণা-ঘৃণা চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছেন কেন? আপনার কি মনে হচ্ছে আমি একজন খুনী?
না।
আমি জানি হচ্ছে। আপনার চোখ দেখে বুঝতে পারছি। আপনার কোনো দোষ নেই। আমারও নিজেকে খুনী মনে হয়। সারাক্ষণ মনে হয় ঐ শিশুটা দূরে থেকে আমাকে দেখছে। আমার কি ধারণা জানেন? আমার ধারণা ঐ শিশুটা একটা মেয়ে। আমি ওর নাম দিয়েছি রাত্রি, যদিও তার এখন আর নামের কোন দরকার নেই। রাত্রি নামটা কি সুন্দর না জহির ভাই?
হ্যাঁ সুন্দর। খুব সুন্দর।
আপনার যদি কোনোদিন মেয়ে হয়, আপনি এর নাম রাখবেন রাত্রি।
আচ্ছা রাখব।
প্রমিজ করুন।
করছি।
না, এভাবে করলে হবে না, আমার হাত ধরে করুন।
জহির অরুর হাত ধরল, নরম গলায় বলল, যে কাজটা করে তুমি এত কষ্ট পেলে সে কাজটা কেন করলে?
রাগ করে করলাম জহির ভাই। প্ৰচণ্ড রাগ হল। সবার ওপর রাগ। ঐ বুদ্ধিমান অথচ হৃদয়হীন মানুষটির ওপর রাগ। কেন জানি আপনার ওপরও রাগ হয়েছিল।
আমি তো তোমার রাগের যোগ্য নই, অরু। আমি অতি নগণ্য একজন, অতি তুচ্ছ।
হ্যাঁ, তুচ্ছ, তুচ্ছ তো বটেই।
অরু ভাতের থালা সরিয়ে উঠে পড়ল।
জহির বলল, কি হয়েছে?
অরু বলল, বুঝতে পারছি না, সম্ভবত বমি আসছে।
সে ছুটে গেল বাথরুমে। চোখে-মুখে পানি দিয়ে ফিরে এল। হালকা গলায় বলল, জহির ভাই আমাকে বাসায় পৌঁছে দিন।
কোন বাসায়?
আমার স্বামীর বাসায়, আবার কোথায়! অবশ্য আপনি যদি এখানে থেকে যেতে বলেন, তাহলে ভিন্ন কথা। বলবেন? সাহস আছে?
রিকশায় যেতে-যেতে অরুবলল, আমার বায়োলজি খাতাটা আপনার বাসায় দেখলাম। খাতায় লেখা কথাগুলি কি আপনি বিশ্বাস করেছেন?
হ্যাঁ।
আপনি আসলেই বোকা। সব মিথ্যা। আজহারকে কষ্ট দেয়ার জন্যে লিখেছিলাম।
জহির নিচু গলায় বলল, সব মিথ্যা?
হ্যাঁ, সব। বাচ্চা নষ্ট করার যে গল্পটি করলাম, তাও মিথ্যা। জহির ভাই, আমি চমৎকার একজন অভিনেত্রী। এতো চমৎকার যে, আমার কোনটা অভিনয় আর কোনটা অভিনয় নয়—তা আমি নিজেও জানি না।
তোমার বাচ্চা তাহলে নষ্ট হয় নি?
না। জহির ভাই আপনি দয়া করে আরেকটু সরে আসুন। আমি অচ্ছুৎ কেউ না। আমার গায়ে গা লাগলে পাপ যদি হয় আমার হবে, আপনার হবে না।
জহির বলল, তোমাকে দেখে আজহার সাহেব খুব খুশি হবেন।
হা হবেন। আচ্ছা জহির ভাই, একটা মজার কথা বলি?
বল।
মাঝে-মাঝে আপনার বোকামিতে আমার গা জ্বলে যায়, আবার আপনার এই বোকামিটাকেই আমি ভালবাসি। সেই সঙ্গে আপনাকেও।
অরু চুপ কর তো।
অরু হাসতে-হাসতে বলল, আরে বাবা, অভিনয় করছি। আপনি কি ভাবছেন এগুলো সত্যি কথা? কোনো সুস্থ মাথার মেয়ে কি রিকশায় বসে প্রেমের সংলাপ বলতে পারে? আপনি নিজেকে যতটা বোকা ভাবেন আসলে আপনি তার চেয়েও বোকা।
জহির চুপ করে রইল।
অরু গুনগুন করছে…..জনম জনম কাঁদিব…..। এটা বোধহয় তার খুব প্রিয় গান।