০৭. কমল মেঝেতে বসে আছে

কমল মেঝেতে বসে আছে। তার সামনে কাগজের বড় একটা বাক্স। বাক্সভর্তি খেলনা। সে বাক্স থেকে খেলনা বের করছে। মেঝেতে সাজাচ্ছে। সাজানোর ভঙ্গিও অদ্ভুত। একটির পেছনে একটি খেলনা রেখে সে সাপের মতো বানাচ্ছে।

কমলের কাছ থেকে একটু দূরে সালেহ ইমরান। তিনি চেয়ারে বসে। আছেন। প্রায় আধঘণ্টা হলো তিনি এখানে আছেন। এখন পর্যন্ত কমল তাঁর দিকে তাকায় নি। সে খেলনা দিয়ে লম্বা একটি সাপ তৈরিতে ব্যস্ত। সালেহ ইমরান জানেন Autistic শিশুদের এটা একটা বিশেষ ধরনের খেলা। কোন খেলনার পর কোনটি বসাবে এটা সে ঠিক করে রাখে। এর মধ্যে কোনো হেরফের হবে না। কেউ যদি কোনো একটা খেলনা গোপনে এখান থেকে সরিয়ে। ফেলে সে সঙ্গে সঙ্গে তা ধরে ফেলবে, তখন একটা ভয়ঙ্কর কাণ্ডের সূচনা হবে।

As children, they might spend hours lining up their cars and trains in a certain way, rather than using them for pretent play, if some one accidentally moves one of these toys, the child

may be tremendously upset. কমল তার খেলনা গোছানো শেষ করে বাবার দিকে তাকিয়ে হাসল। সালেহ ইমরান সামান্য চমকালেন। Autistic শিশুরা কখনো হাসে না। কমল হঠাৎ হঠাৎ হাসে। কী সুন্দর সেই হাসি! সালেহ ইমরান যতবার এই হাসি দেখেন ততবারই চমকান। তিনি ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, হ্যালো।

কমল বলল, হ্যালো।

সালেহ ইমরান বললেন, তুমি তোমার খেলনা সবসময় একইভাবে সাজাও?

কমল বলল, হ্যাঁ।

কেন?

এটাই নিয়ম।

কার নিয়ম?

God-এর নিয়ম!

খেলনা কিন্তু তুমি সাজাচ্ছ। উনি সাজাচ্ছেন না।

কমল বলল, সব নিয়ম God ঠিক করেন। আমি একটা বইয়ে পড়েছি।

বইটার নাম কী?

God and New Physics.

বইয়ের সব কথা কিন্তু সত্য না।

কমল বলল, বইয়ের কথা সত্য। মানুষ মিথ্যা বলে, বই মিথ্যা বলতে পারে না। Book don’t have mind.

যে মানুষরা মিথ্যা বলে তারাই বই লেখে। বইয়ে তাদের মিথ্যা চলে আসে।

কমল চোখ-মুখ কঠিন করে বলল, No, বইয়ে সত্য কথা থাকবে। এটাই নিয়ম। God-এর নিয়ম।

তুমি কি God নিয়ে ভাবো?

হ্যাঁ।

God নিয়ে ভাবার সময় তোমার হয় নি। যখন হবে তখন ভাববে।

এখন আমার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প কর। আমার দিকে তাকিয়ে গল্প কর। অন্যদিকে তাকিয়ে না। তুমি যখন কারো সঙ্গে কথা বলবে, তখন তার দিকে তাকিয়ে কথা বলবে। এটা ভদ্রতা, এটাই নিয়ম।

কমল বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, কী নিয়ে গল্প করব?

তোমার যা নিয়ে গল্প করতে ভালো লাগে তা নিয়েই গল্প কর।

ম্যাথ?

যদি ম্যাথমেটিকস নিয়ে গল্প করতে ভালো লাগে তাহলে কর। শুধু একটা জিনিস মাথায় রাখবে, আমি ম্যাথ জানি না। আমার অঙ্কের দৌড় হলো যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ।

কমল বলল, ম্যাথ হলো শুধু যোগ-বিয়োগ। গুণ-ভাগ যোগ-বিয়োগ থেকে এসেছে।

ও আচ্ছা।

কমল উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, তুমি বোর্ভটার দিকে তাকিয়ে থাক। আমি বোর্ডে একটা অঙ্ক করব।

সালেহ ইমরান ঘাড় ঘুরিয়ে বোর্ডের দিকে তাকালেন। তিনদিন আগে তার ঘরে এই বোর্ড লাগানো হয়েছে। কমল ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই বোর্ডে কী সব সংখ্যা লেখে। লেখা শেষ হওয়া মাত্র ডাটার দিয়ে মুছে ফেলে অন্য একটা সংখ্যা লিখে ফেলে।

কমল বোর্ডের কাছে গেল। লিখল–

০ X ৫ = ০

বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা, ঠিক আছে? যে-কোনো সংখ্যাকে শূন্য দিয়ে গুণ করলে শূন্য হয়। অংকের সাধারণ নিয়ম। এই নিয়ম God ঠিক করে দিয়েছেন।

সালেহ ইমরান বললেন, সবকিছুতেই God আনবে না। তবে তোমার অঙ্ক ঠিক আছে। পাঁচকে শূন্য দিয়ে গুণ করলে ফল শূন্য হবে, এইটুকু অঙ্ক আমি জানি।

কমল বলল, এইটুকু অঙ্ক যদি জানো তাহলে এটাও জানো যে–

০ X ১ = ০

সালেহ ইমরান বললেন, হ্যাঁ।

কমল বোর্ডে লিখল–

০ X ৫ = ০ X ১

সে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, ৫-কে শূন্য দিয়ে গুণ করলে হয় শূন্য, আবার ১-কে শূন্য দিয়ে গুণ করলেও হয় শূন্য। কাজেই ০ X ৫ যা, ০ x১ ও তা। ঠিক আছে বাবা?

সালেহ ইমরান বললেন, ঠিক আছে।

কমল বলল, এখন এসো ডানদিক এবং বাকি দুই দিককে শূন্য দিয়ে ভাগ করে দেখি কী হয়। কমল বোর্ডে লিখল।

(০ X ৫)/০ = (০ X ১)/০

(Ø X ৫)/ Ø = (Ø X ১)/ Ø

৫ = ১

সালেহ ইমরান অবাক হয়ে বোর্ডের দিকে তাকিয়ে আছেন। কমল বলল, বাবা, দেখলে আমি প্রমাণ করলাম পাঁচ সমান এক।

সালেহ ইমরান বললেন, তাই তো দেখছি। নিশ্চয়ই কোথাও কোনো ভুল আছে।

ভুল নেই।

তাহলে তো সব সংখ্যাই সমান।

কমল বলল, হ্যাঁ সমান।

তোমার কি মনে হয় না তুমি উদ্ভট কথা বলছ?

মনে হয় না। পৃথিবীতে দুটা মাত্র সংখ্যা। একটা হলো শূন্য, আরেকটা এক। আর কোনো সংখ্যা নেই।

এটা কি তোমার নিজের কথা? না-কি তুমি কোনো বইয়ে পড়েছ?

বইয়ে পড়েছি।

সালেহ ইমরান ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, তোমার একজন ভালো গাইড দরকার, যে ঠিক করে দেবে তুমি কোন বই পড়বে, কোনটা পড়বে না। কোন বই বিশ্বাস করবে, কোনটা করবে না। আমি তোমার গাইড হতে পারলে ভালো হতো। আমার সেই যোগ্যতা নেই।

কমল আগ্রহ নিয়ে বলল, অঙ্কের আরেকটা মজা দেখবে?

সালেহ ইমরান বললেন, না। আমি তোমাকে একটা জরুরি কথা বলতে এসেছি। কথা শেষ করে চলে যাব।

অঙ্ক খুবই জরুরি।

তোমার কাছে নিশ্চয়ই জরুরি, কিন্তু আমার কাছে জরুরি না।

কমল কঠিন গলায় বলল, তোমার কাছেও জরুরি। সবার কাছেই জরুরি। God-এর কাছেও জরুরি। God অঙ্ক করে করে Galaxy তৈরি করেছেন। অঙ্ক যদি God-এর কাছে জরুরি হয় তাহলে তোমার কাছেও জরুরি।

কমলের চোখ-মুখ শক্ত হয়ে গেছে। ভুরুতে ভাঁজ পড়েছে।

সালেহ ইমরান ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে হালকা গলায় বললেন, হ্যাঁ, আমার জন্যেও জরুরি। শুরুতে বুঝতে ভুল করেছিলাম। এখন বুঝতে পারছি।

কমল বলল, Sknaht.

বাবা, সোজা করে বলো। উল্টো কথা আমি বুঝতে পারি না। উল্টো কথা। শুনলে আমার মাথায় যন্ত্রণা হয়।

কমল বলল, আমি বলেছি Thanks.

তোমাকেও থ্যাংকস। এখন কি আমি আমার কম জরুরি কথাটা বলতে পারি?

পার।

আমি অনেকদিন থেকেই চেষ্টা করছিলাম বিদেশে কোনো একটা Special School-এ তোমাকে ভর্তি করতে। কানাডার একটা স্কুল আমার পছন্দ হয়েছিল, কিভু সেখানে অটিজম বিষয়ে আলাদা কার্যক্রম নেই। এখন একটা স্কুল পাওয়া গেছে। স্কুলটা জুরিখে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অটিস্টিক শিশুরা সেখানে পড়াশোনা করে। তোমাকে সেই স্কুলে অ্যানরোল করা হয়েছে।

কমল বলল, Doog.

সালেহ ইমরান বললেন, ঠিক করে কথা বলো। Doog মানে কী?

কমল বলল, Doog মানে Good.

সেখানে তুমি অনেক সুযোগ সুবিধা পাবে। প্রপার গাইড পাবে। তোমার পছন্দের ম্যাথমেটিকসের বই পাবে। তাদের বিশাল লাইব্রেরি। স্কুলটাও একটা পাহাড়ের উপর। চারদিকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলনাবিহীন।

কমল বলল, Doog.

শুরুতে তোমার মা তোমার সঙ্গে থাকবেন। তোমাকে সেটল করে দিয়ে। ফিরে আসবেন।

No.

নো বলছ কেন?

আমি মাকে সঙ্গে নেব না।

কেন নেবে না?

আমি তাকে পছন্দ করি না।

কেন পছন্দ কর না?

আমি মাকে পছন্দ করি না, কারণ মা তোমাকে পছন্দ করে না।

তোমার মা আমাকে পছন্দ করে না এটাই বা তুমি বুঝলে কীভাবে?

আমি বুঝতে পারি। মা অন্য একজনকে পছন্দ করে, তোমাকে না। আমি কি সেই অন্য একজনের নাম বলব?

না। যে বিষয়ে আমরা কথা বলছিলাম এসো সেই বিষয়ে কথা বলি।

কমল বলল, আমি সেই অন্য একজনের নাম বলব।

তোমার কাছ থেকে সেই নাম আমি শুনতে চাচ্ছি না।

আমি বলব। কমল বলবে। কমল বলবে। কমল বলবে।

আচ্ছা ঠিক আছে তুমি বলবে। আমাদের আলোচনা শেষ হোক, তারপর দলবে। ঠিক আছে?

হুঁ।

তোমাদের স্কুলের সেশন শুরু হবে জানুয়ারি থেকে। কাজেই তুমি তোমার মাকে নিয়ে ডিসেম্বরের শেষের দিকে চলে যাবে।

কমল বলল, আমি মাকে সঙ্গে নেব না। আমি নতিমকে নেব। নতিম আমার সঙ্গে যাবে।

নতিমটা কে?

নদ্দিউ নতিম।

ও আচ্ছা মতিন। তাকে নেয়া যাবে না। তার প্রসঙ্গে আলোচনা বন্ধ। ঠিক আছে?

হুঁ।

সালেহ ইমরান উঠে দাঁড়ালেন। দরজার দিকে পা বাড়ালেন। কমল চাপা গলায় বলল, তুমি বলেছিলে আলোচনা শেষ হলে আমি লোকটার নাম বলতে পারব। কিন্তু তুমি তার আগেই চলে যাচ্ছ। Why?

আমি ভুলে গিয়েছিলাম।

তুমি ভুলে যাও নি। তুমি ভাব করেছ যে ভুলে গেছ। কিন্তু তুমি ভুলে যাও নি।

হতে পারে।

সালেহ ইমরান আবার এসে চেয়ারে বসলেন। হতাশ গলায় বললেন, এখন নাম বলো।

কমল বলল, তার নাম করুফা দমেহআ।

উল্টো কথা আমি বুঝতে পারি না। ঠিক করে বলো।

তার নাম আহমেদ ফারুক।

সালেহ ইমরান বললেন, এখন কি আমি যেতে পারি?

কমল হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল। বাবা ঘর থেকে বের হওয়া মাত্র খেলনা নিয়ে বসল। এখন সে খেলনাগুলি দিয়ে দুটা সমান্তরাল রেখা তৈরি করছে। তার যখন বেশি মন খারাপ হয় তখন সে খেলনা দিয়ে সমান্তরাল রেখা তৈরি করে একদৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। সে বইয়ে পড়েছে দুটা সমান্তরাল রেখা ইনফিনিটিতে মিশবে। ইনফিনিটি হলো সেই রহস্যময় জায়গা যেখানে God থাকেন। এবং God সমস্ত নিয়ম দিয়ে দেল। যিনি নিয়ম দেন তিনিই শুধু নিয়ম ভাঙতে পারেন। তিনের সঙ্গে চার যোগ করলে সাত হবে, এই নিয়ম কেউ। ভাঙতে পারবে না। কিন্তু God পারবেন।

 

মুনা অনেকক্ষণ হলো আয়নার সামনে। সে তার গায়ের রঙ নিয়ে একটা অ্যাক্সপেরিমেন্ট করেছে। অ্যাক্সপেরিমেন্টের ফল ঠিক বুঝতে পারছে না। সে ডার্ক শেডের মেকাপ নিয়েছে। তার মুখ এখন হয়ে গেছে শ্যামলা মেয়ের মুখের মতো। শ্যামলা মেয়েদের চোখে কাজল খুব মানায়। সে কাজল দিয়েছে, কিন্তু কাজলটা মানাচ্ছে না। এরকম তো হওয়ার কথা না। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?

সালেহ ইমরান ঘরে ঢুকতেই মুনা তার দিকে তাকিয়ে বলল, আমার দিকে ভালো করে তাকাও তো।

সালেহ ইমরান তাকালেন।

মুনা বলল, কী দেখছ?

সালেহ ইমরান বললেন, তোমাকে দেখছি।

আমাকে কী দেখছ?

তোমার মুখ কালো, কিন্তু হাত ধবধবে ফর্সা।

আমার হাতের রঙ আপাতত ভুলে যাও। শুধু মুখের দিকে তাকাও। কালো রঙটায় কি আমাকে মানাচ্ছে?

হ্যাঁ মানাচ্ছে।

কোনো ত্রুটি ধরা পড়ছে না?

একটা ত্রুটি ধরা পড়ছে। চেহারায় মায়া ভাব চলে এসেছে। এত মায়া তো তোমার নেই।

মায়াবেশি মেয়েরা ছিচকাঁদুনে হয়। আমি সেরকম না।

সালেহ ইমরান খাটে বসতে বসতে বললেন, কোথাও যাচ্ছ?

মুনা বলল, পার্লারে যাব। কালো রঙ পুরো শরীরে বসাব। তার আগে নিজে একটা অ্যাক্সপেরিমেন্ট করলাম।

সালেহ ইমরান বললেন, Doog.

মুনা বিস্মিত হয়ে বলল, Doog মানে?

সালেহ ইমরান বললেন, Doog মানে হলো Good. তোমার ছেলের কাছে শিখেছি।

মুনা বলল, ওর সঙ্গে তার সুইজারল্যান্ডের স্কুলার বিষয়ে কথা বলেছ?

বলেছি। স্কুলের ব্যাপারে তার কোনো আপত্তি নেই, বরং তার মধ্যে আগ্রহই দেখলাম। আগ্রহের মূল কারণ সম্ভবত সে স্কুল লাইব্রেরিতে তার মনের মতো বই পাবে।

মুনা বলল, সে যে নিজ থেকে যেতে রাজি হয়েছে এটাই মূল বিষয়। ভালো কথা, তুমি কিন্তু তোমার জুনিয়র ফারুক সাহেবকে ছেড়ে দেবে। সুইজারল্যান্ডে যাবার সময় আমি তাকে সঙ্গে নেব। তাকে ভিসা করতে বলে দিয়েছি। ফারুক সাহেবকে ছাড়া তোমার কয়েকটা দিন চলবে না?

অবশ্যই চলবে। তাকে নিতে হবে কেন?

তাকে নিতে হবে, কারণ তোমার ছেলে তাকে পছন্দ করে। আমরা দুজন সঙ্গে গেলে কমলের ট্রানজিশনটা সহজ হবে।

সালেহ ইমরান বললেন, ফারুককে আমার ছেলে পছন্দ করে, তুমি কর না?

মুনা বলল, অবশ্যই করি। ভেরি গুড কোম্প্যানি। সেন্স অব হিউমার আছে। তার ক্লোজআপ ম্যাজিক কখনো দেখেছ?

না। সে আবার ম্যাজিকও দেখায়?

তার ক্লোজআপ ম্যাজিক দেখলে তুমি মুগ্ধ হয়ে যাবে। সে কী করে শোন, এক টুকরা কাগজ নেয়। ফুঁ দেয়। মুহূর্তের মধ্যে কাগজটা হয়ে যায় পাঁচশ টাকার একটা নোট। আবার ফুঁ দেয়–নোটটা আবার হয়ে গেল কাগজ।

ওকে একদিন ডাক। আমরা সবাই ম্যাজিক দেখি।

ঠিক আছে আমিই ব্যবস্থা করব। ফ্যামিলি ম্যাজিক শো। বৃহস্পতিবার রাতে ব্যবস্থা করি। ঐদিন কি তোমার কোনো কাজ আছে? ফ্রি আছ না?

হ্যাঁ ফ্রি আছি।

দরজায় টোকা পড়ছে। টোকার ধরন থেকে বোঝা যাচ্ছে রহমত। বড় ধরনের কোনো সমস্যা না হলে রহমত সালেহ ইমরানের শোবার ঘরের দরজায়। টোকা দেবে না। সালেহ ইমরান বললেন, কী ব্যাপার রহমত?

রহমত ভীত গলায় বলল, ছোট বাবু খানা বন্ধ করে দিয়েছে।

কেন?

ছোট বাবু বলেছে, নতিম সাহেবের সঙ্গে দেখা না হওয়া পর্যন্ত সে কিছু খাবে না।

সালেহ ইমরান হতাশ চোখে স্ত্রীর দিকে তাকালেন। মুনা বলল, তুমি চিন্তা। করবে না। ঐ ছাগলটাকে আমার ব্যবস্থা আমি করছি।

সালেহ ইমরান বললেন, ওকে ছাগল বলছ কেন?

মুনা হালকা গলায় বলল, যে ছাগল তাকে আমি ছাগল বলি। যে পাঁঠা তাকে আমি পাঁঠা বলি। পাঁঠাকে কখনো সিংহ বলি না।

সালেহ ইমরান বললেন, তোমার হিসেবে আমি কী? ছাগল না পাঁঠা?

মুনা বলল, তুমি কী সেই বিষয়ে আমি এখনো নিশ্চিত না। তবে তুমি সিংহ। না।

তোমার পরিচিত কেউ কি আছে যে সিংহ?

মুনা জবাব দিল না। স্থির চোখে তাকিয়ে রইল।

সালেহ ইমরান চেয়ারে বসতে বসতে বললেন, মানুষ নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করে, কিন্তু তুলনা দেয়ার সময় পশুদের সঙ্গে তুলনা দেয়।

মুনা বলল, তার মানে?

সালেহ ইমরান বললেন, সিংহের মতো সাহসী, শৃগালের মতো ধূর্ত। ট্যাক সেনাপতি রোমেলকে বলা হতো Desert Fox, মরু শিয়াল।

মুনা বলল, জ্ঞানীর মতো কথা বলার চেষ্টা করছ বলে মনে হচ্ছে।

সালেহ ইমরান বললেন, আমি মূর্খ, এই কারণেই জ্ঞানীর মতো কথা বলার চেষ্টা করি। জ্ঞানীরা কখনো জ্ঞানীর মতো কথা বলে না। মূর্খরা মাঝে মাঝে বলে।

তুমি মূর্খ না।

শুনে খুশি হলাম। স্বামী বিষয়ে স্ত্রীর সার্টিফিকেট হচ্ছে দ্য আলটিমেট থিং। স্ত্রীর সার্টিফিকেটই শেষ কথা।

মুনা বলল, স্ত্রীর বিষয়ে স্বামীর সার্টিফিকেটের কী অবস্থা?

সালেহ ইমরান বললেন, খারাপ অবস্থা। স্বামীরা কখনো স্ত্রীদের বিষয়ে কোনো সার্টিফিকেট দিতে পারেন না।

কেন পারেন না?

কারণ কোনো স্বামীই তার স্ত্রীকে চিনতে পারেন নি।

তাই না-কি?

হ্যাঁ তাই। দ্রৌপদীর পাঁচ স্বামী ছিল। পাঁচ স্বামী মিলেও দ্রৌপদীকে চিনতে পারে নি। কেউ বুঝতেও পারে নি দ্রৌপদী পাঁচ স্বামীর মধ্যে সবচে পছন্দ করত অর্জুনকে। বেচারা অর্জুন নিজেও বুঝতে পারে নি।

মুনা বলল, তুমি কি আমাকে বুঝতে পার?

সালেহ ইমরান বললেন, চেষ্টা করলে হয়তো বুঝতে পারতাম। চেষ্টা করি না।

কেন চেষ্টা কর না? ইচ্ছা করে না। তাছাড়া চেষ্টা করার নিয়মও নেই।

নিয়ম নেই মানে? কার নিয়ম?

God-এর নিয়ম। যাবতীয় নিয়ম তিনি অঙ্ক কষে কষে ঠিক করে দেন।

মুনা তীক্ষ্ণ-গলায় বললেন, তুমি এইসব কী উল্টাপাল্টা কথা বলছ? এইসব কে ঢুকাচ্ছে তোমার মাথায়?

সালেহ ইমরান বললেন, কমল ঢুকাচ্ছে। He is smart. সে যদি কোনোদিন বিয়ে করে তাহলে তার স্ত্রীকে বুঝতে পারবে। I am quite certain about that.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *