দশম অনুবাক
প্রথম সূক্ত : ক্ষত্রিয়ঃ
[ঋষি : ব্রহ্মা। দেবতা : আত্মা। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]
কো অস্যা নো হোহবদ্যবত্যা উন্নেষ্যতি ক্ষত্রিয়ো বস্য ইচ্ছন। কো যজ্ঞকামঃ ক উ পূর্তিকামঃ কো দেবেষু বনুতে দীর্ঘমায়ুঃ ॥ ১।
বঙ্গানুবাদ –ক্ষত্রিয়জাত্যাভিমানী কোন রাজা এই দুর্গতিরূপ অহিতকারিণী পিশাচী হতে আমাদের রক্ষা করবেন? (উত্তর : প্রজাপতি)। আমাদের অনুষ্ঠিত যজ্ঞের কামনা কে করবেন? (উত্তর : প্রজাপতি)। কে আমাদের ধনের পূর্তি অভিবাঞ্ছা করবেন? (উত্তর : প্রজাপতি)। দেবগণের মধ্যে কোন্ দেবতা আমাদের দীর্ঘ আয়ু প্ৰদানশালী হবেন? (উত্তর : প্রজাপতি)। ১। (…প্রশ্নবাচিনা কিং শব্দেন প্রজাপতিরুচ্যতে–এই সূক্তে ও এর পরবর্তী সূক্তে কোন্ রাজা বা কোন দেবতা অর্থাৎ কিং শব্দের উত্তর স্বরূপ প্রজাপতিকেই বোঝানো হয়েছে)।
.
দ্বিতীয় সূক্ত : গৌঃ
[ঋষি : ব্রহ্মা। দেবতা : আত্মা। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ ]
কঃ পৃশ্নিং ধেনুং বরুণেন দত্তামথর্বণে সুদুঘাং নিত্যবৎসা। বৃহস্পতিনা সখ্যং জুষাণো যথাবশং তন্বঃ কল্পয়াতি ॥১॥
বঙ্গানুবাদ –লোহিত ইত্যাদি বিভিন্ন বর্ণোপেতা, সর্বদা বৎসযুক্তা, সুদুঘা (সুষ্ঠু দোহনযোগ্যা), অথবা দ্বারা বরুণকে প্রদত্তা এতাদৃশ ধেনু এবং দেবগণের পালক বৃহস্পতির সৌহার্দ লাভ করে কোন্ দেবতা তাঁকে তনু (বা শক্তি) কল্পনায় সমর্থ করেছিলেন? (উত্তর : বৃহস্পতির সখা প্রজাপতিই শরীরের শক্তি দান করেন)। ১।
.
তৃতীয় সূক্ত: দৈবং বচঃ
[ঋষি : অথর্বা। দেবতা : মন্ত্রে উক্ত দেবতাগণ। ছন্দ : অনুষ্টুপ]
অপক্রাম পৌরুষেয়াদ বৃণাননা দৈব্যং বচঃ। প্রণীতীরভ্যাবর্ত বিশ্বেভিঃ সখিভিঃ সহ ॥১॥
বঙ্গানুবাদ— হে মাণবক! তুমি মনুষ্যগণের লৌকিক কর্ম হতে অপক্রমণ পূর্বক দেবাত্মক বেদরূপ বাক্যের সেবা (অর্থাৎ চর্চা) করে স্বাধ্যায়ের নিমিত্ত আপন সহপাঠী ব্রহ্মচারীগণের সাথে বেদ-শিক্ষাশালিনী প্রণীতির (প্রকৃষ্ট বেদ-ব্রহ্মচর্যের নিয়মাবলীর) আশ্রয় গ্রহণ করো। ১।
.
চতুর্থ সূক্ত : অমৃতত্বম
[ঋষি : অথর্বা। দেবতা : জাতবেদা ও বরুণ। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ ]
যদস্মৃতি চকৃম কিং চিদগ্ন উপারিম চরণে জাতবেদঃ। ততঃ পাহি ত্বং নঃ প্রচেতঃ শুভে সখিভ্যো অমৃতত্বমস্তু নঃ ॥ ১।
বঙ্গানুবাদ –হে জাতবেদা অগ্নি! আমরা স্মরণরহিত হয়ে যা কিছু কর্ম করেছি এবং যে কর্ম আমাদের দ্বারা লুপ্ত হয়ে গিয়েছে, হে প্রকৃষ্টজ্ঞানরূপী (প্রচেত) অগ্নি! তুমি সেই বিস্মরণজনিত কর্মানুষ্ঠানের বা কর্মের বিলুপ্তি সাধনের পাপ হতে আমাদের রক্ষা করো। তোমার কৃপায় তোমার প্রিয়ভূত আমাদের কর্মসমূহ শোভনরূপে সম্পন্ন (অর্থাৎ পূর্ণ) ও অবিনাশী (অর্থাৎ অমরত্ব প্রাপ্ত) হোক ॥১॥
.
পঞ্চম সূক্ত: সন্তরণম
[ঋষি : ভৃগু। দেবতা : সূর্য ও আপ। ছন্দ : অনুষ্টুপ]
অব দিবস্তারয়ন্তি সপ্ত সূর্যস্য রশ্ময়ঃ। আপঃ সমুদ্রিয়া ধারাস্তাস্তে শল্যমসিস৷ ১।
বঙ্গানুবাদ –কশ্যপ নামক সূর্যের সাথে সম্বন্ধিত (অর্থাৎ তার অংশভূত) আরোগ ইত্যাদি নামে অভিহিত সপ্তরশ্মি-সমূহ সমুদ্রবৎ অন্তরিক্ষে উৎপন্ন জলরূপ ধারাসমূহকে নিম্নে বর্ষণ করছে। হে ব্যাধিগ্রস্ত পুরুষ! সেই সূর্যরশ্মির দ্বারা অবতারিতা জলরাশি তোমার শল্যবৎ পীড়াদায়ক কাস-শ্লেষ্ম ইত্যাদি রোগসমূহকে বিনষ্ট করে দিক ॥ ১।
.
ষষ্ঠ সূক্ত : শত্রুনাশনম্
[ঋষি : ভৃগু। দেবতা : অগ্নি। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]
যো নস্তায় দিতি যো ন আবিঃ যো বিদ্বানরগণা বা নো অগ্নে। প্রতীচ্যেত্বরণী দত্বতী তান্ মৈমগ্নে বাস্তু ভুল অপত্যম্ ॥১॥. যো নঃ সুপ্তা জাগ্রতো বাভিদাসাৎ তিষ্ঠতো বা চরতো জাতবেদঃ। বৈশ্বানরেণ সযুজা সজোষাস্তা প্রতীচো নিৰ্দহ জাতবেদঃ ॥ ২॥
বঙ্গানুবাদ –হে অগ্নি! যে শত্রু আমাদের হত্যা করতে ইচ্ছা করে, যে শত্রু অন্তর্হিত হয়ে বা প্রকাশ্যভাবে আমাদের বিনাশ করতে ইচ্ছা করে অথবা যে পরবাধনের উপায় বিদিত হয়ে আমাদেরই বান্ধবের ভণিতায় আমাদের নষ্ট করতে ইচ্ছা করে, তাদের সম্মুখে পীড়া প্রদানশালিনী দন্তশালিনী আর্তিকারিণী রাক্ষসী আগমন করুক। হে অগ্নি! এই পূর্বোক্ত অপ্রকাশ্য ঘাতক শত্রুগণ যেন গৃহ, অপত্য ইত্যাদি বিহীন হয়ে যায়। (অর্থাৎ তারা নিঃশেষে হত হয়ে যাক) ॥ ১।
হে জাতবেদা অগ্নি! যে শত্রু আমাদের শয়নে, জাগরণে, উপবেশনে ও চলনে হনন করতে অভিলাষ করে, তাদের জঠরাগ্নিরূপ বৈশ্বানর অগ্নির সহযোগে তুমি নিঃশেষে ভস্মসাৎ করে দাও। (অর্থাৎ–জাঠরাগ্নি তাদের অন্তদর্থন করুন এবং তুমি তাদের বহিদহন করো) ॥ ২॥
.
সপ্তম সূক্ত : রাষ্ট্রভৃতঃ
[ঋষি : বাদরায়ণি। দেবতা : অগ্নি ইত্যাদি। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ]
ইদমুগ্ৰায় বভ্রবে নমো যো অক্ষে তন্বশী। ঘৃতেন কলিং শিক্ষামি স নো মৃতীদৃশে॥১॥ ঘৃতমন্সরাভ্যো বহ ত্বময়ে পাংশূনক্ষেভ্যঃ সিকতা অপশ্চ। যথাভাগং হব্যদাতিং জুষাণা মদন্তি দেবা উভয়ানি হব্যা॥ ২॥ অপ্সরসঃ সধমাদং মদন্তি হবির্ধানমন্তরা সূর্যং চা। তা মে হস্তৌ সং সৃজন্তু ঘৃতেন সপত্নং মে কিতর্বং রন্ধয় ৷৷ ৩৷ আদিনবং প্রতিদীরে ধৃতেনাশ্ম অভি ক্ষর। বৃক্ষমিশন্যা জহি যো অম্মান প্রতিদীব্যতি। ৪ যো নো দ্যুবে ধনমিদং চকার যো অক্ষাণাং গ্লহনং শেষণং চ। স নো দেবো হবিরিদং জুষাণো গন্ধর্বেভিঃ সধমাদং মদেম ॥ ৫সংবসব ইতি বো নামধেয়মুগ্ৰংপশ্যা রাষ্ট্রভৃতো হ্যক্ষাঃ। তেভ্যো ব ইন্দবো হবিষা বিধেম বয়ং স্যাম পতয়ো রয়ীণাম৷৬৷ দেবান যন্নাথিত হুবে ব্রহ্মচর্যং যদৃষিম। অক্ষান্ যৎ বজ্রনালভে তে না মৃড়ত্ত্বীদৃশে৷ ৭৷
বঙ্গানুবাদ –উগ্র শক্তিশালী ববর্ণ নামক দেবতাকে নমস্কার করি। এই দূতক্রীড়ায় বিজয়প্রাপ্ত করণশালী (অর্থাৎ বর কৃপায় দূতে বিজয়লাভ করা যায়)। আমি মন্ত্রের দ্বারা, অভিমন্ত্রিত ঘৃতে অক্ষকে ব্যাপ্ত করছি (যাতে দূতে পরাজয়ের হেতুকরী কলি নামাত্মক পঞ্চসংখ্যাযুক্ত অক্ষবিষয়ক অয়ের তাড়না হয়, অর্থাৎ কলিশব্দবাচ্য অয়ের আগমনে বা পতনে পরাজয় না হয়)। সেই ব দেবতা এই কলিজয়রূপ দূত-বিজয়াত্মক কর্মে আমাদের সুখী করুন। ॥ ১।
হে অগ্নি! আমাদের জয়ের উদ্দেশে অন্তরিক্ষ স্থিতা অপ্সরাগণের নিকট এই ঘৃত অর্থাৎ অক্ষাভ্যঞ্জনসাধন আজ্য বহন করো (প্রাপয়)। আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কিতবদের চক্ষে সূক্ষ্ম ধূলিকণা, বালুকা, কঙ্কর ও জল প্রক্ষেপণ করো। (অর্থাৎ–যাতে তারা পরাজিত হয় সেই নিমিত্ত তন্মুখে পাংস্বাদী প্রক্ষিপেত্যর্থঃ)। ইন্দ্র ইত্যাদি দেবতাগণ আপন আপন ভাগ অনুসারে সোমাজ্য ভেদের দ্বারা বা শ্ৰেীত ও স্মার্ত কর্মভেদের দ্বারা দুপ্রকার হব্য আস্বাদন করে তৃপ্তি লাভ করুন। হে দেবগণ! তোমরাও আমাদের দূতজয় করিয়ে দাও ॥ ২॥
দূতক্রিয়ার দেবতা অপ্সরাগণ এই হবিধান ভূলোক ও সূর্যাধিষ্ঠিত দ্যুলোকে একত্রে মিলিত হয়ে আমার দেবনসাধন হস্ত দুটি ঘৃতবৎ সারভূত ও জয়লক্ষণ সমন্বিত ফলের দ্বারা সম্পন্ন করুন এবং আমার প্রতিদ্বন্দ্বী কিতবকে আমার অধীন করুন। ৩।
হে দেব! আমি আপন প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাভূত করার নিমিত্ত অক্ষক্রীড়া করছি। আমাকে জয়রূপ ফলের দ্বারা সম্পন্ন করো। যে কিতব আমাদের জয় করার অভিলাষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, তাকে বিদ্যুতাহত শুষ্ক বৃক্ষের পরিণতি প্রাপ্ত করাও (বা তিরস্কৃত করো) ॥৪॥
যে দেব আমাদের পক্ষীয় কিতবগণের নিমিত্ত বিপক্ষীয় কিতবদের ধন জয় করিয়ে দেন, যিনি শত্রুগণের অক্ষগুলি (আপন অক্ষের দ্বারা) জয়পূর্বক গ্রহণ করে থাকেন, সেই দূতাভিমানী দেব আমাদের এই হবিঃ সেবন করুন এবং অক্ষাধিষ্ঠাতা গন্ধর্বগণ সহ একত্রে প্রসন্ন হোন ॥ ৫৷৷
হে গন্ধর্ববর্গ! তোমরা সংপ্রাপ্তধন বা সম্প্রপিতধন (অর্থাৎ ধন সম্প্রপ্ত করিয়ে দিয়ে থাকো), এই কারণে তোমরা সংবসব নামে অভিহিত হয়েছে। তোমরা উগ্ৰংপশ্যা ও রাষ্ট্রভৃৎ নামধারিণী দুই অপ্সরাবিশেষের সাথে সম্বন্ধিত। আমরা সেই অপ্সরাগণের সাথে তোমাদের (অর্থাৎ গন্ধর্বদের) সোমযুক্ত হবির দ্বারা পূজা করছি। অতঃপর আমরা ধনের অধিপতি হবো ৷ ৬ ৷৷
আমি ধন প্রাপ্তির নিমিত্ত অগ্নি ইত্যাদি দেবতাগণকে আহূত করছি। আমরা বেদগ্রহণের নিমিত্ত ব্রহ্মচারীর নিয়মে নিবিষ্ট হচ্ছি। আমরা অক্ষাভিমানী ববর্ণ দেবতার দ্বারা অধিষ্ঠিত দেবসাধনভূত অক্ষকে স্পর্শ (বা গ্রহণ) করছি। অতএব ম সেই দেবগণ জয়লক্ষণরূপ ফল দানের দ্বারা আমাদের সুখ প্রদান করুন ॥ ৭ ৷৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অত্র কৌ অস্যা নঃ ইতি আদ্যে সূক্তে আদ্যাভ্যাং ঋগভ্যাং সফলকামঃ প্রজাপতিং যজ্ঞে উপতিষ্ঠেত বা…কঃ পৃশ্নিং ইত্যেষা উর্বরাখ্যে স্বযজ্ঞে বিনিযুক্তা।…উপনয়নে অপক্রামন ইত্যনয়া মাণবকং প্রাঙ্খং উপবেশয়েৎ। সূত্রিতং হি।…তথা দর্শপূর্ণমাসয়োঃ য অস্মৃতি ইত্যনয়া কর্মবিস্মরণপ্রায়শ্চিত্তার্থং জুহুয়াৎ..অগ্নিষ্টোমে দীক্ষানিয়মলোপপ্রায়শ্চিত্তার্থং অনয়া অগ্নিং উপতিষ্ঠেত।…কাসশ্লেষ্মভৈষজ্যার্থং অব দিবস্তারয়ন্তি ইতি ঋচা অনুং সমন্থং বা অভিমন্যু ভক্ষয়েদ উদকং বা অভিমন্ত্র আচাময়েৎ সূর্যোপস্থানং বা কুর্যাৎ।…অভিচারকর্মণি যো নস্তায় ইতি ঘৃচেন অশনিহত বৃক্ষসমিধ আদধ্যাৎ। দূতজয়কর্মণি ইদং উগ্ৰায় ইতি সপ্তৰ্চেন দধিমধুনোস্ত্রিরাত্রং বাসিতা অক্ষান্ অভিমন্ত্র ন্যূতক্রীড়াং কুর্যাৎ…অগ্ন্যাধানে ইদং উগ্ৰায় ইতি ঘৃতেন অভ্যস্তান অক্ষান্ অধ্বর্যবে দদ্যাৎ। তদ উক্তং বৈতানে।..ইত্যাদি। (৭কা, ১০অ. ১-৭সূ)৷৷
টীকা –উপযুক্ত প্রথম সূক্তের মন্ত্রটি সফলকামনায় প্রজাপতির উদ্দেশে যাগ বা উপাসনায় বিনিযুক্ত হয়। দ্বিতীয় সূক্তটি উর্বরাখ্যে সবযজ্ঞে বিনিযুক্ত হয়। উপনয়নে মাণবককে প্রাজুখে উপবেশন করণে অপক্রাম ইত্যাদি মন্ত্রটি বিনিযুক্ত হয়। দর্শপূর্ণমাসে কর্মবিস্মরণজনিত দোষের প্রায়শ্চিত্তের নিমিত্ত যদ অস্মৃতি ইত্যাদি মন্ত্রের বিনিয়োগ নির্ধারিত আছে। অগ্নিষ্টোমে দীক্ষানিয়মের লোপজনিত দোষের প্রায়শ্চিত্তের নিমিত্ত এই মন্ত্রটির দ্বারা অগ্নির উপাসনা করা হয়। কাসশ্লেষ্ম ব্যাধির চিকিৎসায় পঞ্চম সূক্তের মন্ত্রটি সূত্রোক্তপ্রকারে অন্ন বা সমন্থ অভিমন্ত্রিত করে ব্যাধিগ্রস্তকে ভক্ষণ করাবার বা জল অভিমন্ত্রিত করে পান করানো ইত্যাদির বিধি আছে। অভিচারকর্মে ষষ্ঠ সূক্তের দুটি মন্ত্রের দ্বারা অশনিহত বৃক্ষের সমিধ সূত্রোক্তপ্রকারে ধারণীয়। দূতজয়কর্মে সপ্তম সূক্তের সাতটি মন্ত্রের দ্বারা দধি ও মধু ত্রিরাত্র বাসিত করে সূত্র অনুসারে অক্ষ অভিমন্ত্রিত পূর্বক দূতক্রীড়া করণীয়। অগ্ন্যাধানেও দূতক্রীড়া সম্পর্কেই এই সূক্তের বিনিয়োগ হয়ে থাকে। দ্বিতীয় সূক্তে অথর্বার দ্বারা বরুণকে গো প্রদান সম্পর্কিত বিষয় পঞ্চম কাণ্ডের তৃতীয় অনুবাকের একাদশ সূক্তে স্পষ্ট কথিত আছে। পঞ্চম সূক্তের সপ্ত সূর্যস্য রশ্ময়-এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে সায়ণের উক্তি–একস্য হি সূর্যস্য অংশভূতা সপ্ত সূর্যা বিদ্যন্তে ইত্যাদি৷ সেই তথ্য তৈত্তিরীয় আরণ্যকে (১/৭/১) বিধৃত আছে৷৷ (৭কা, ১০অ.১-৭সূ)।
.
অষ্টম সূক্ত : শত্রুনাশনম
[ঋষি : ভৃগু। দেবতা : ইন্দ্রাগ্নী। ছন্দ : গায়ত্রী, ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ]
অগ্ন ইন্দ্ৰশ্চ দাশুষে হতো বৃত্ৰাণ্যপ্রতি। উভা হি বৃহত্তমা৷৷ ১. যাভ্যামজয়ন্তস্বরগ্র এব যাবাতস্থতুর্ভুনানি বিশ্বা। প্রচৰ্ষণী বৃষণা বজ্রবাহু অগ্নিমিং বৃত্ৰহণা হুবেহহম৷ ২৷৷ উপ জ্বা দেবো অগ্রভীচ্চমসেন বৃহস্পতিঃ। ইন্দ্র গীর্ভিন আ বিশ যজমানায় সুন্বতে৷৷ ৩৷৷ ১
বঙ্গানুবাদ –হে ইন্দ্র! হে অগ্নি! তোমরা বৃত্রকে হননশালী, সুতরাং তোমরা হবিদাতা যজমানের আবরক শত্রুরূপী পাপসমূহকে নিঃশেষে বিনাশ করো ॥১॥
যে ইন্দ্র ও অগ্নির সহায়তায় দেবতাগণ স্বর্গ লাভ করেছিলেন, যে ইন্দ্র ও অগ্নি আপনাপন মহিমার দ্বারা সকল ভূতে (প্রাণীতে) ব্যাপ্ত রয়েছেন, যাঁরা আপন উপাসক মনুষ্যগণের কর্মফলের দ্রষ্টা, যাঁরা সেই উপাসকগণের প্রতি ঈপ্সিত ফল বর্ষণ করে থাকেন, সেই হেন বজ্ৰাস্ত্রধারী ও বৃহন্তা অগ্নি ও ইন্দ্রকে আমি বিজয়প্রাপ্তির কামনায় আহূত করছি ॥ ২॥
হে ইন্দ্র! দেবগণকে হিতাচরণের দ্বারা পালয়িতা বৃহস্পতি দেব তোমাকে সোমপাত্র (চমস) প্রদানের দ্বারা আপন বশীভূত করে নিয়েছেন। অতএব বৃহস্পতির দ্বারা পরিগৃহীত হে ইন্দ্র! সোম অভিযুতকারী যজমানকে ধন ইত্যাদির দ্বারা পোষণের উদ্দেশে আমাদের (ঋত্বিৰ্গণের) স্তুতিবাক্য অনুসরণ করে (অর্থাৎ স্কৃয়মান হয়ে) এই স্থানে আগমন করো ॥ ৩৷৷
.
নবম সূক্ত : আত্মা
[ঋষি : ব্রহ্মা। দেবতা : বৃষভ। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]
ইন্দ্রস্য কুক্ষিরসি সোমধান আত্মা দেবানামুত মানুষাণা। ইহ প্রজা জনয় যাস্ত আসু যা অন্যত্রেহ তাস্তে রমন্তাম্ ॥১॥
বঙ্গানুবাদ — (এখানে অতিসৃজ্যমান বৃষভ বা পূতভৃৎপাত্রকে সম্বোধন করা হচ্ছে)–হে বৃষভ বা পূতভৃৎ-কলশ! তুমি সোমের ধারক, ইন্দ্রের কুক্ষি বা জঠরও বটে। তুমি দেবতাগণের ও মনুষ্যবর্গের শরীরস্বরূপ (বা মনুষ্যগণের দেবতা স্বরূপ)। তুমি এই লোকে প্রজাসমূহের (অর্থাৎ পুত্র ইত্যাদির) উৎপাদন করে। এই দেশের পুরোবর্তিনী গো-সমূহে বা যজমান ইত্যাদিতে এবং অন্যত্র যে গো-সমুদায় বা যজমানবৃন্দ আছেন, তাদের মধ্যে স্থিত পুত্র-পৌত্র ইত্যাদি প্রজাসকল সুখ পূর্বক বিহারশীল হোক ॥১॥
.
দশম সূক্ত : পাপনাশনম্
[ঋষি : ব্রহ্মা। দেবতা : আপ। ছন্দ : অনুষ্টুপ]
শুম্ভনী দ্যাবাপৃথিবী অন্তিসুম্নে মহিব্রতে। আপঃ সপ্ত সুষুবুদেবীস্তা নো মুঞ্চংহসঃ ॥ ১। মুঞ্চন্তু মা শপথ্যাহদখো বরুণ্যাদৃত। অথো যমস্য পড়ীশাদ বিশ্বম্মাদ দেবকিন্বিষাৎ ॥ ২॥
বঙ্গানুবাদ –এই আকাশ ও পৃথিবী (দ্যাবাপৃথিবী) অত্যন্ত শোভাময়ী। এঁদের মধ্যে চেতন ও অচেতন জীব (বা পদার্থ) বর্তমান রয়েছে। এই মহব্রতা দ্যাবাপৃথিবীতে সপ্ত সর্পণস্বভাবা (গমনশীলা) বা সপ্তসখ্যকা দ্যোতমানা জলদেবীও ক্ষরিত হয়ে চলেছেন। এই বিশাল কর্মশালিনী দ্যাবাপৃথিবী ও জলরাশি আমাদের পাপ হতে মুক্ত করুন ১
ব্রাহ্মণের আক্রোশ হতে এই জলসমূহ আমাকে দূরে রক্ষা করুন। বরুণের নিকট মিথ্যা-ভাষণ রূপ পাপ হতে এবং পাপের বন্ধন হতেও রক্ষা করুন। যমাধিকার, পাদবন্ধন এবং সকল দেব সম্বন্ধী পাপ হতে আমাকে রক্ষা করুন। (ষষ্ঠ কাণ্ডের দশম অনুবাকের চতুর্থ সূক্তের দ্বিতীয় মন্ত্রেও এইটি ব্যাখ্যাত হয়েছে)। ২৷৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –পরসেনাজয়ার্থং অগ্ন ইন্দ্ৰশ্চ ইতি দ্বাভ্যাং নবরথং সম্পত্য অভিমন্ত্র সসারথিং রাজানং আরোহয়েৎ।..তথা সর্বফলকামঃ অগ্ন ইন্দ্ৰশ্চ ইতি তিসৃভিঃ অগ্নীন্দ্রৌ যজেত উপতিষ্ঠেত বা…বৃষোৎসর্গে..ইন্দ্রস্য কুক্ষিঃ ইত্যনয়া বৃষভং সম্পত্য অভিমন্যু বিসৃজেৎ!… সর্বব্যাধিভৈষজ্যার্থং শুম্ভনী ইতি ঘঁচেন উদঘটং সম্পত্য অভিমন্যু মৌঞ্জৈঃ পাশৈঃ সন্ধিযু বদ্ধং ব্যাধিতং দর্ভপিঞ্জলীভিঃ আপ্লাবয়েৎ অবসিঞ্চেদু বা। সূত্রিতং হি।…ইত্যাদি ৷ (৭কা, ১০অ. ৮-১০)।
টীকা –উপযুক্ত অষ্টম সূক্তের প্রথম দুটি মন্ত্র নবরথে সারথি সহ রাজাকে আরোহণ করানোর নিমিত্ত বিনিযুক্ত হয়। তথা এই সূক্তের তিনটি মন্ত্র সকল রকম বিষয়ে সুফল লাভের নিমিত্ত অগ্নি ও ইন্দ্রের যাগে বা উপাসনায় সূত্রোক্তপ্রকারে বিনিয়োগ করণীয়। নবম সূক্তটির দ্বারা বৃষোৎসর্গে বৃষকে, অভিমন্ত্রিত পূর্বক ত্যাগ (বিসর্জন) করণীয়। সর্বব্যাধির ভৈষজ্যার্থে দশম সূক্তের মন্ত্র দুটির দ্বারা জলপূর্ণ ঘট অভিমন্ত্রিত করে সূত্রোক্তপ্রকারে সেই জলে ব্যাধিতকে স্নান করানো কর্তব্য বা তার গাত্রে সিঞ্চন করণীয়। (৭কা.১০অ.৮-১০সূ)।
.
একাদশ সূক্ত শত্রুনাশনম্
[ঋষি : ভার্গব। দেবতা : তৃষ্টিকা। ছন্দ : অনুষ্টুপ, উষ্ণিক্]
তুষ্টিকে তৃষ্টবন্দন উদমূং ছিন্ধি সৃষ্টিকে। যথা কৃতদ্বিষ্টা সোহমুষ্মৈ শেপ্যাবতে৷৷ ১৷ তৃষ্টাসি তৃষ্টিকা বিষা বিষাতক্যসি। পরিবৃক্তা যথাসস্যষভস্য বশেব। ২।
বঙ্গানুবাদ –হে বাণাপর্ণ নামক কুৎসিতা (দাহজনিকা) ঔষধি! তুমি বন্দনা নামক বৃক্ষের শাখাকে আবেষ্টন করে ঐ দ্বেষকারিণী স্ত্রীকে পুংপ্রজননশালী (পুরুষ) হতে পৃথক করে দাও, যাতে ঐ স্ত্রী ঐ পুরুষের কোপের বিষয়ীভূতা হয়, তেমন করো। (অথবা, হে কাম তৃষ্ণা! হে ধন তৃষ্ণা! তোমরা স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে কলহ করণশালিনী। এরই প্রভাবে স্ত্রী আপন বীর্যবান পুরুষেতেও দ্বেষ করতে থাকে) ॥ ১
হে কুৎসিতা (দাহজনিকা) ঔষধি! তুমি বিষস্বরূপা, বিষের সংযোজয়িত্রী এবং সকলের দ্বারা পরিবর্জিতা। বন্ধ্যা গাভী যেমন ঋষভ পুঙ্গবের পরিবর্জনীয়া হয়ে থাকে, এই স্ত্রীও যেন আপন পুরুষের ক্রোধরূপ দাহজনিকা হয়ে সম্ভোগের অযোগ্যা হয়ে যায়। (অথবা, হে তৃষ্ণা! তুমি দাহক এবং বিষ স্বরূপ। যেমন বন্ধ্যা গাভী বীর্যবান বৃষভের পরিত্যক্ত হয়ে থাকে, তেমনই তুমিও পরিত্যক্ত হও) ॥ ২॥
.
দ্বাদশ সূক্ত : শত্রুনাশনম
[ঋষি : ভার্গব। দেবতা : অগ্নি ও সোম। ছন্দ : অনুষ্টুপ ]
আ তে দদে বক্ষণাভ্য আ তেহহং হৃদয়াদ দদে। আ তে মুখস্য সঙ্কাশাৎ সর্ব তে বর্চ আ দদে৷৷ ১। প্রেতো যন্তু ব্যাধ্যঃ প্রানুধ্যাঃ পো অশস্তয়ঃ। অগ্নী রক্ষস্বিনীৰ্হ সোমো হন্তু দুরস্যতীঃ ৷৷ ২।
বঙ্গানুবাদ –হে দ্বেষকারিণী অধমা স্ত্রী! তোমার উরুসন্ধি (অর্থাৎ যোনি), কটি (শ্রোণিদেশ), হৃদয়দেশ (স্তনস্থান), পদ ও অন্যান্য সকল অবয়ব হতে আমি তোমার সৌভাগ্য রূপ তেজকে গ্রহণ করছি; এবং সকলকে প্রসন্ন করণশালী তোমার মুখ-সৌন্দর্যকে অপহরণ পূর্বক, নারীবিষয়ে দৌর্ভাগ্যকামী আমি (নারীবিষয়দৌর্ভাগ্যকামোহং) তোমার অঙ্গে বর্তমান আভাকে (অর্থাৎ বিশ্বসন্মোহনরূপ তেজকে) দূরীভূত করে দিচ্ছি ॥ ১।
এই রক্ষোগ্রহ ইত্যাদি কর্তৃক গৃহীত পুরুষ হতে বিভিন্ন পীড়া দূর হোক। নিরন্তর রাক্ষস ইত্যাদির স্মরণ বিস্মৃত হোক এবং অপর কর্তৃক নিন্দা বা হিংসা লোপ হয়ে যাক। অগ্নিদেব রাক্ষস ও পিশাচীগণের সংহার সাধিত করুন; সোমদেবও পর কর্তৃক এই পুরুষের প্রতি অনিষ্ট বা দুষ্ট ইচ্ছা দূর করে দিন (বা পরের অনিষ্ট চিন্তন করণশালিনী পিশাচীগণকে বিনাশ করুন)। ২।
.
ত্রয়োদশ সূক্ত : পাপলক্ষণনাশনম্
[ঋষি : অথর্বাঙ্গিরা। দেবতা : সবিতা, জাতবেদা। ছন্দ : অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ]
প্র পতেতঃ পাপি লক্ষ্মি নশ্যেতঃ মুতঃ পত। অয়স্ময়েনাঙ্কেন দ্বিষতে ত্বা সজামসি৷৷ ১৷ যা মা লক্ষ্মীঃ পতয়ারজুষ্টাভিচস্কন্দ বন্দনেব বৃক্ষ। অন্যত্ৰাস্মৎ সবিতস্তামিতো ধা হিরণ্যহস্তো বসু নো ররাণঃ ॥ ২॥ একশতং লক্ষ্মো মর্ত্যস্য সাকং তন্থ জনুযোহধি জাতাঃ। তাসাং পাপিষ্ঠা নিরিতঃ প্র হিন্মঃ শিবা অস্মভ্যং জাতবেদো নি যচ্ছ৷৷ ৩৷৷ এতা এনা ব্যাকরং খিলে গা বিষ্ঠিতা ইব। রমন্তাং পুণ্যা লক্ষ্মীর্যাঃ পাপীস্তা অনীনশ৷৷ ৪৷
বঙ্গানুবাদ –হে পাপরূপিণী দেবী অলক্ষ্মী (পাপের দেবী লক্ষ্মী অর্থে অলক্ষ্মী)! তুমি এই প্রদেশ হতে প্রস্থান করো। এই স্থানে অদৃশ্য হয়ে সুদূর দেশ হতেও প্রস্থান করো। আমরা সুদূর দেশে গমনকারিণী তোমাকে লৌহ-শূলের বা লৌহময় কন্টকের সাথে সম্বন্ধিত শত্রুগণের সাথে মিলিত করিয়ে দিচ্ছি। ১
বন্দনা লতার বৃক্ষ আবেষ্টনের মতো যে অলক্ষ্মী আমাকে আবেষ্টন করে রেখেছে, কিংবা যে পাপদেবী অলক্ষ্মী আমাতে সর্বদিক হতে (অভিতো) ব্যাপ্ত হয়ে থেকে শোষণ করে নিচ্ছে, সেই অলক্ষ্মীকে, হে সর্বপ্রেরক সবিতা! এই স্থান হতে অন্যত্র স্থাপন করে নিজে হিরণ্যহস্ত হয়ে আমাদের ধন প্রদান করো। ২।
মনুষ্যের শরীরোৎত্তির সমকালে একাধিক শত সংখ্যাকা লক্ষ্মী উৎপন্ন হয়ে থাকে; তাদের মধ্যে যারা পাপপূর্ণা বা পাপিষ্ঠা অলক্ষ্মী, তাদেরই আমরা এই স্থান হতে বিদূরিত করছি। হে জাতবেদা অগ্নি! কল্যাণময়ী লক্ষ্মীগণকে আমাদের মধ্যে স্থাপিত করো। ৩।
যেমন গো-গণের পালক গোষ্ঠস্থিত গাভীবর্গকে বিভক্ত করে, তেমনই আমি সেই একাধিক শতসংখ্যাকা লক্ষ্মীসমূহকে দুই ভাগে বিভক্ত করছি। এদের মধ্যে কল্যাণ করণশালিনী লক্ষ্মীগণ আমার নিকটে সুখে অবস্থান করুক এবং পাপযুক্তা অলক্ষ্মীগণ অর্থাৎ দুর্লক্ষ্মীবৃন্দ) নষ্ট হয়ে যাক। ৪
.
চতুর্দশ সূক্ত : জ্বরনাশনম্
[ঋষি : অথর্বাঙ্গিরা। দেবতা : চন্দ্রমা, জ্বর। ছন্দ : উষ্ণি, অনুষ্টুপ]
নমো রুরায় চ্যবনায় নোদনায় ধৃষ্ণবে। মমঃ শীতায় পূর্বকামকৃত্বনে৷৷ ১। যে অন্যেরুভয়দুরভ্যেতীমং মভূকমভ্যেত্বব্ৰতঃ ২
বঙ্গানুবাদ –শরীরে স্বেদপাতনকারী (শরীরস্বেদপাতয়িত্রে), বিক্ষেপ প্রেরক, প্রসহণকারী উষ্ণ জ্বরের অভিমানী দেবতা রূরকে নমস্কার। পূর্বাভিলাষের ছেদনকারী (বা শরীরকে ভঙ্গকারী) শীত জ্বরের অভিমানী দেবতাকে নমস্কার৷৷ ১। তৃতীয়ক জ্বর (অর্থাৎ যে জ্বর দুদিন অন্তর আসে) এবং চাতুর্থিক জ্বর (অর্থাৎ যে জ্বর অনিয়তকালে আসে), সেই জ্বরগুলি মঞ্জুকের উপর পতিত হোক। ২।
.
পঞ্চদশ সূক্ত : শত্রুনিবারণম
[ঋষি : অথর্বাঙ্গিরা। দেবতা : ইন্দ্র। ছন্দ : বৃহতী ]
আ মন্দ্রৈরিন্দ্র হরিভির্যাহি ময়ুররোমভিঃ। মা বা কে চিৎ বি যম বিং ন পাশিনোহতি ধন্বেব তা ইহি৷ ১।
বঙ্গানুবাদ –হে ইন্দ্রদেব! তুমি মদযুক্ত বা স্তোতা কর্তৃক স্তুত্য ময়ূরের রোমের ন্যায় রোমযুক্ত শ্যামবর্ণ অশ্বদ্বয়ে বাহিত হয়ে আগমন করো। যেমন ব্যাধ পক্ষীদের পাশে (বা জালে) আবদ্ধ করে, তেমন যেন কোন স্তোতা তোমাকে স্তুতির দ্বারা প্রতিবন্ধিত করতে (বাধা দিতে) না পারে। তৃষ্ণার্ত পথিক যেমন শীঘ্রই মরুভূমি অতিক্রমণ করে, তেমনই তুমি অন্য স্তোতৃবর্গকে লঙ্ঘন পূর্বক শীঘ্র এই স্থানে (আমাদের নিকট) আগমন করো। ১।
.
ষোড়শ সূক্ত : বর্মধারণম্
[ঋষি : অথর্বাঙ্গিরা। দেবতা : সোম, বরুণ ও দেব। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]
মর্মাণিঃ তে বর্মণ ছাদয়ামি সোমা রাজামৃতেনানু বস্তাম্। উবোবরীয়ো বরুণস্তে কৃপোতু জয়ন্তং ত্বানু দেবা মদন্তু ॥১॥
বঙ্গানুবাদ— হে জয়াভিলাষী রাজন! আমি যোক্তা (মন্ত্রের প্রয়োগকারী), তোমার মর্মস্থানগুলি কবচের দ্বারা আচ্ছাদিত করে দিচ্ছি (সংবৃণোমি)। রাজা সোম তোমাকে অমৃতের দ্বারা বা অবিনাশী তেজের দ্বারা আচ্ছাদিত করুন। শনিবারক বরুণ দেবতা তোমাকে মহৎ হতে মহত্তর সুখ প্রদান করুন। ইন্দ্র প্রমুখ সর্ব দেবতা তোমাকে শত্রুসেনার ত্ৰাসজনক বিধিবাক্যে প্রোৎসাহিত করুন। (তথা দেবঃ ইন্দ্রাদ্যাঃ সর্বে জয়ন্তং পরসেনাং ত্রাসয়ন্তং ত্বাং অনু মদন্তু অনুহৃষ্যন্ত) ॥১॥
সূক্তস্য বিনিয়োগ— স্ত্রীপুরুষয়ে পরস্পরবিদ্বেষণার্থং বাণাপর্ণাখ্যৌষধিচূর্ণ লোহিতজায়াঃ ক্ষীরদ্রন্সেন সন্মি তৃষ্টিকে ইতি ঘৃচেন অভিমন্যু শয্যায়াং পরিকিরেৎ। তথা দৌভাগ্যকরণার্থং আ তে দদে ইত্যনয়া মন্ত্রোক্তন অবয়বানু স্পশ অভিমন্ত্ৰয়েত বিদ্বেষিণং দৃষ্টা জপেৎ বা। সূত্রিতং হি।… রক্ষোগ্রহাদিভৈষজ্যার্থং প্রেতো যন্তু ইত্যনয়া আজ্যসমিৎপুরোশাদিশম্বুল্যন্তদ্রব্যাণাং ত্রয়োদশানাং অন্যতমং জুহুয়াৎ।…নৈঋতকর্মসু চতুর্থে কর্মণি কাকস্য জঙ্য়াং সপুরোশং লোহকন্টকং বদ্ধা প্র পতেতঃ ইত্যনয়া তং কাকং বিসৃজেৎ…সর্বজ্বরভৈষজ্যার্থং সূত্রোক্তপ্রকারেণ মণ্ডুকং বৃদ্ধা খট্রায়া অধঃ সংস্থাপ্য তস্যা উপরি স্থিতং ব্যাধিতং নমো রূরায় ইতি দ্বচাভিমন্ত্রিতোদকেন অবসিঞ্চেৎ। সুত্রিতং হি।… শবসংস্কারানন্তরং কর্তা প্রতিদিনং স্বস্ত্যয়নার্থং আ মন্দ্রৈঃ ইতি জপেৎ।…পরসেনাত্ৰাসনার্থং মর্মাণি তে ইত্যনয়া কবচং অভিমন্ত্র ধারণার্থং রাজ্ঞে দদ্যাৎ!…. ইত্যাদি। (৭কা, ১০অ. ১১-১৬সূ)।
টীকা –স্ত্রী ও পুরুষের মধ্যে পরস্পর বিদ্বেষণার্থে তৃষ্টিকে এই সূক্তের দুটি মন্ত্র সূত্রোক্তপ্রকারে বিনিয়োগ করা হয়। দৌভাগ্যকরণার্থে দ্বাদশ সূক্তটির সূত্রোক্তপ্রকারে বিনিয়োগ করণীয়। এই সূক্তেরই দ্বিতীয় মন্ত্রটি রক্ষোগ্রহ ইত্যাদির ভৈষজ্যার্থে সূত্রানুসারে বিনিযুক্ত হয়। ত্রয়োদশ সূক্তের মন্ত্রগুলি নৈঋতকর্মে সূত্রানুসারে বিভিন্ন প্রকারে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। সর্বরের ভৈষজ্যার্থে সূত্রোক্তপ্রকারে চতুর্দশ সূক্তের মন্ত্র দুটি বিনিয়োগ করণীয়। শবসংস্কারের পর প্রতিদিনের স্বস্ত্যয়নে পঞ্চদশ সূক্তের মন্ত্রটি জপে বিনিয়োগ হয়। শত্রুসেনাকে ত্রাসিত করণের নিমিত্ত মর্মাণি তে ইত্যাদি ষোড়শ সূক্তের মন্ত্রটির দ্বারা সূত্রোক্তপ্রকারে কবচ অভিমন্ত্রিত পূর্ব রাজাকে দান করা হয়। (৭ কা. ১০অ. ১১-১৬ সূ)।
[ইতি সপ্তমং কাণ্ডং সমাপ্তম]