2 of 3

০৭।০৫ সপ্তম কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক

পঞ্চম অনুবাক
প্রথম সূক্ত: সাংমনস্যম
[ঋষি : অথর্বা দেবতা : সাংমনস্যম, অশ্বিদ্বয় ছন্দ : জগতী ]

 সংজ্ঞানং নঃ স্বেভিঃ সংজ্ঞানমরণেভিঃ। সংজ্ঞনিমশ্বিনা যুবমিহাম্মাসু নি যচ্ছতম ॥১॥ সং জানামহৈ মনসা সং চিকিত্বা মা যুম্মহি মনসা দৈব্যেন। মা ঘোষা উৎ সুহুলে বিনিৰ্হতে মেষুঃ পণ্ঠদিন্দ্রস্যাহন্যাগতে ॥ ২॥

বঙ্গানুবাদ –আমরা সকলে একমত-সম্পন্ন হই, আমাদের প্রতিকূলে বাক্যধারীগণও আমাদের অনুকূল মতাবলম্বী হোক। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা উভয়ে আপন ও পর, এই দুই প্রকারের মনুষ্যকে সমান মতিশালী করে দাও। ১।

আমরা আপন মন ও পরের মনকে জ্ঞাত হয়ে, দুইরকম মনকেই যুক্ত করে দেবো, আমরা মিলিত ভাবে কার্য করবো; দেবতায় প্রীতিসম্পন্ন মনের সাথে আমরা যেন পৃথক না হই। মনকে উচ্চাটন (উমূলন বা বিক্ষিপ্ত) করণশীল শব্দ যেন না উখিত (বা কণ্ঠ হতে না নির্গত) হয়; এবং ইন্দ্রের বজ্রসদৃশ মর্মভেদিনী পরকীয়া বা যেন আমাদের উপর পতিত না হয়। ২

.

দ্বিতীয় সূক্ত : দীর্ঘায়ুঃ

[ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : আয়ু, বৃহস্পতি, অশ্বিদ্বয় ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, পংক্তি, অনুষ্টুপ ]

অমুত্রভূয়াদধি যদ যমস্য বৃহম্পতেরভিশস্তেরমুঞ্চঃ। প্রতৌহমশ্বিনা মৃত্যুমম্মদ দেবানামগ্নে ভিষজা শচীভিঃ ॥১॥.. সংক্রামতং মা জহীতং শরীরং প্রাণাপানৌ তে সযুজাবিহ স্তা। শতং জীব শরদো বর্ধমানোহগ্নিষ্টে গোপা অধিপা বসিষ্ঠঃ ॥ ২॥ আয়ুৰ্যৎ তে অতিহিতং পরাচৈরপানঃ প্রাণঃ পুনরা তাবিতাম। অগ্নিষ্টদাহানিঋতেরুপস্থাৎ তদাত্মনি পুনরা বেশয়ামি তে ৷ ৩৷৷ মেমং প্রাণো হাবীন্মো অপানোহবহায় পরা গাৎ। সপ্তর্ষিভ্য এনং পরি দদামি ত এনং স্বস্তি জরসে বহন্ত। ৪প্র বিশতং প্রাণাপানাবনহাবিব ব্রজ। অয়ং জরিণঃ শেবধিররিষ্ট ইহ বর্ধতম ॥ ৫৷৷ আ তে প্রাণং সুবামসি পরা যক্ষ্মং সুবামি তে। আয়ুর্নো বিশ্বততা দধদয়মগ্নিবরেণ্যঃ ॥ ৬. উদ বয়ং তমসম্পরি রোহন্তো নাকমুত্তমম্। দেবং দেবত্ৰা সূর্যমগন্ম জ্যোতিরুত্তমম্ ॥ ৭৷৷

বঙ্গানুবাদ –হে অগ্নি! তুমি হবিঃ বহনের দ্বারা দেবতাগণকে পালন করছে। তুমি যমের পরলোক রূপ ভয় হতে এই উপনীতব্য মাণবককে রক্ষা (বা মুক্ত) করতে সমর্থ। তোমার প্রভাবে দেববৈদ্য অশ্বিদ্বয় এর মৃত্যুর কারণসমূহকে দূরীভূত করুন ॥ ১।

হে প্রাণ ও অপান বায়ু! তোমরা– আয়ুষ্কামনাশালী এই পুরুষের শরীরে পরস্পর সংযুক্ত হয়ে বিরাজমান থাকো। হে পুরুষ! এই প্রাণ ও অপান তোমার শরীরে সংক্রামিত হয়ে থাকুক। তুমি শত বৎসর (শরৎ) পর্যন্ত পুনরায় জীবন ধারণ করো। এবং হবিঃ ইত্যাদির দ্বারা সমৃদ্ধিপ্রাপ্ত অগ্নি তোমার রক্ষক (গোপা), পালয়িতা (অধিপা) এবং বসু বা ধনদাতা (বসিষ্ঠ) হোন। (প্রাণীর নাসিকাবিবর হতে বহির্নির্গত প্রাণ নামক বায়ু এবং হৃদয়ের অধোভাগে সঞ্চরমাণ অপান নামক বায়ু যাবৎকাল পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত হয়ে দেহে বিরাজমান থাকে, তাবৎকাল প্রাণী আয়ুস্মান হয়ে থাকে–তাবন্তং আয়ুৰ্ভবতীতি তয়োঃ সাহিত্যং প্রার্থিতং)। ২।

হে আয়ুষ্কাম (আয়ুষ্কালের বৃদ্ধি অভিলাষী)! তোমার জীবন সমাপ্ত হওয়ার ছিল বলে মৃত্যু তোমার আয়ুকে অন্যত্র অপসারিত করে রক্ষা করেছিল। দেহধারক প্রাণ ও অপানের পুনরাগমন ঘটিয়ে, অগ্নিদেব সেই আয়ুকে নির্ঋতি অর্থাৎ নিকৃষ্টগমনা মৃত্যুর সামীপ্য হতে আনয়ন করুন। হে আয়ুষ্কামী পুরুষ! অগ্নিদেব কর্তৃক আনীত তোমার সেই আয়ুকে আমি পুনরায় তোমার শরীরে মন্ত্ৰসামর্থ্যে আস্থাপিত (বা প্রবিষ্ট) করাচ্ছি ৷ ৩৷

আয়ুর কামনাকারী এই পুরুষকে প্রাণ ও অপান বায়ু যেন ত্যাগ না করে। আমি একে রক্ষার নিমিত্ত সপ্ত-ঋষির নিকট সমর্পিত করছি। তারা একে বৃদ্ধাবস্থা পর্যন্ত সুখের সাথে রক্ষা করুন। (এখানে ঋষি শব্দে প্রাণকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ এই আয়ুষ্কাম : ব্যক্তিকে সপ্ত প্রাণের হস্তে সমর্পণ করা হচ্ছে।সপ্তসংখ্যাকেভ্যঃ প্রাণেভ্য)। ৪।

 হে প্রাণ ও অপান বায়ুদ্বয়! শকটবহনক্ষম দুইটি বলীবর্দ যেমন গোষ্ঠে প্রবেশ করে, তেমনই তোমরা দুয়ে এই আয়ুষ্কামের শরীরে প্রবিষ্ট হও। এই পুরুষ বৃদ্ধাবস্থা পর্যন্ত জীবিত থাকুক ॥ ৫।

হে আয়ুষ্কাম! তোমার প্রাণকে শরীরে প্রেরিত করছি। তোমার আয়ুর প্রতিবন্ধক যক্ষ্মারোগ বা মৃত্যুকে দূর করে আয়ুকে আনয়ন করছি। বরেণ্য এই হুয়মান অগ্নি এই আয়ুষ্কামকে শতায়ুষ্য করুন ৷৷ ৬ ৷

আমরা পাপ হতে উত্তীর্ণ হয়ে দুখসংস্পর্শরহিত হয়ে স্বর্গে আরোহণ করছি। সকল দেবতার মধ্যে শ্রেষ্ঠ দ্যোতমান সূর্যদেবের সমীপস্থ হবো। ৭।

.

তৃতীয় সূক্ত : অধ্যাপকবিঘ্নশমনম

 [ঋষি : ব্রহ্মা, ভৃগু দেবতা : ঋকসামনী, ইন্দ্র ছন্দ : অনুষ্টুপ]

 ঋচং সাম যজামহে যাভ্যাং কর্মাণি কুৰ্বতে। এতে সদসি রাজতো যজ্ঞং দেবেষু যচ্ছতঃ ॥১॥ ঋচং সাম যদপ্রাক্ষং হবিবরাজো যজুর্বল। এষ মা তম্মাম্মা হিংসী বেদঃ পৃষ্টঃ শচীপতে ॥ ২॥

বঙ্গানুবাদ –আমরা পঠিত ঋগ্বেদ ও সামবেদকে পূজা করি। আমরা ঋত্বিক ও যজমানগণ ঋগ্বেদ ও সামবেদের দ্বারা যজ্ঞ কর্ম করে থাকি। এই ঋক ও সাম সদঃ-নামক মণ্ডপে শোভাপ্রাপ্ত হয়ে দেবতাগণের সমীপে যজ্ঞকে উপস্থাপিত করিয়ে দেয়। ১ ॥

 আমরা ঋগ্বেদের নিকট হবিঃ সম্পর্কে, সামের নিকট ওজঃ (অর্থাৎ শরীরধারক অষ্টম ধাতু) সম্পর্কে এবং যজুর্বেদের নিকট বল (অর্থাৎ বাহ্য বীর্য) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছি। (ঋচা যাজ্যরূপয়া হবিয়ত ইতি ঋগ্বেদং প্রতি হবিঃ প্রশ্ন। মাধ্যন্দিনসবনে গীয়মানানাং পৃষ্ঠস্তোত্ৰাণাং যজ্ঞপ্রাণত্বেন তাকব্রাহ্মণে সংস্তবাৎ সামবেদৗ প্রতি আন্তরবলরূপৌজঃ প্রশ্নঃ। যজুষা যজ্ঞশরীরনিৰ্বত্তেৰ্য্যজুর্বেদং প্রতি বলপ্রশ্নঃ)। হে ইন্দ্র! এই প্রকারে আমাদের সম্যক পঠিত ঋামযজুর্বোত্মক অধ্যপননিবন্ধন প্রত্যবায় (বা ত্রুটি) ঘটলেও তুমি অভিমত ফল প্রদান করো। ২।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— সংজ্ঞানং নঃ ইতি আদ্যঃ সূক্তং বৃহদগণে পঠিতং। তস্য শান্তুদকাভিমন্ত্রণাদৌ বিনিয়োগঃ।…সূত্রিতং হি। উপনয়নে আচার্যো মাণবকস্য নাভিং সংস্পৃশ্য অমূত্রভূয়াৎ ইতি ষড়ঋচং জপেৎ…অন্নপ্রাশনকর্মণি ভূমৌ উপবেশিতং বালং উদ্বয়ং ইত্যনয়া আদিত্যং প্রদর্শয়েৎ। তথা সোম্যগে অবভৃথস্নানানন্তরং (উদ্বয়ং) ইত্যনয়া জলা উক্রামে। অধ্যাপকানাং অর্থাৰ্জনবিঘুশমনার্থং ঋচং সাম ইতি দ্বাভ্যাং আজ্য জুহুয়াৎ। সূত্রিতং হি। (৭কা, ৫অ. ১-৩সূ)।

টীকা –উপযুক্ত প্রথম সূক্তটির মন্ত্রদ্বয় শান্তি-কর্মে ও সাংমনস্য কর্মে সূত্রানুসারে বিনিয়োগ করণীয়। দ্বিতীয় সূক্তের প্রথম ছয়টি মন্ত্র উপনয়নকালে উপনীত মাণবকের নাভিদেশ স্পর্শপূর্বক আচার্য কর্তৃক পঠনীয়। শেষোক্ত মন্ত্রটি অন্নপ্রাশন কর্মে শিশুকে ভূমিতে উপবেশন করিয়ে সূর্য প্রদর্শন করাবার কালে পঠনীয়। শেষোক্ত সূত্রের মন্ত্র দুটি অধ্যাপকগণ কর্তৃক তাদের অধ্যাপনা ও অধ্যয়নের বিঘ্ন দূরীকরণে আজাহুতি প্রদানে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে ॥ (৭কা, ৫অ. ১-৩সূ)।

.

চতুর্থ সূক্ত : মার্গস্বস্ত্যয়নম

[ঋষি : ভৃগু দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : উষ্ণিক]

যে তে পন্থনোহব দিবো যেভিধিশ্বমৈরয়ঃ। তেভিঃ সুময়া ধেহি নো বসো॥॥

বঙ্গানুবাদ –হে ধনবান বা ধনপ্রদায়ক ইন্দ্রদেব! তোমার স্বর্গলোকের নিম্নে যে পথ রয়েছে, সেই যে সমস্ত পথসমূহের দ্বারা তুমি প্রাণীগণকে কর্মে নিয়োজিত করে থাকো, সেই পথের দ্বারা  আমাদের সুখী রাখো ॥১॥

.

পঞ্চম সূক্ত : বিষভৈষজ্যম

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : বৃশ্চিক ইত্যাদি, বনস্পতি, ব্ৰহ্মণস্পতি ছন্দ : অনুষ্টুপ, পংক্তি]

 তিরশ্চিরাজেরসিতাৎ পৃদাকোঃ পরি সস্তৃত। তৎ কঙ্কপর্বণণা বিষমিয়ং বীরুদনীনশৎ ॥১॥ ইয়ং বীরুন্মধুজাতা মধুশূন্মধুলা মধূঃ। সা বিহুতস্য ভেগজ্যথো মশকজনী ॥ ২॥ যতো দষ্টং যত ধীতং ততস্তে নিয়ামসি। অৰ্ভস্য তৃপ্রদংশিনো মশকস্যারসং বিষম্ ॥ ৩ ৷৷ অয়ং যো বক্রো বিপরুঙ্গো মুখানি বা বৃজিনা কৃপণাধি। তানি ত্বং ব্ৰহ্মণম্পত ইষীকামিব সং নমঃ ॥ ৪৷৷ অরসস্য শর্কোটস্য নীচীনস্যোপসৰ্পতঃ। বিষং হ্যস্যাদিথো এনমজীজভম্ ॥ ৫৷৷ ন তে বাহোর্বলমস্তি ন শীর্ষে নোত মধ্যতঃ। অথ কিং পাপয়ামুয়া পুচ্ছে বিভর্ভকম ॥ ৬৷ অদন্তি ত্বা পিপীলিকা বি বৃশ্চন্তি ময়ূর্যঃ। সর্বে ভল ব্ৰবাথ শার্কোটমরসং বিষম্ ॥ ৭৷৷ য উভাভ্যাং প্রহরসি পুচ্ছেন চাস্যেন চ। আস্যে ন তে বিষং কিমু তে পুচ্ছধাবসৎ ॥৮॥

বঙ্গানুবাদ –তির্যকভূত রেখাশালী তিরশ্চিরাজ নামক সর্পের বিষকে, কৃষ্ণবর্ণবিশিষ্ট কালসর্পের বিষকে, এবং নাগ ও কঙ্কপর্ণা নামক সর্পের বিষকে এই মধুক নাম্নী ঔষধি দূর করে। দিক ॥ ১৷

এই প্রযুক্ত ঔষধি মধু হতে উৎপন্ন হওয়ার কারণেই মধুময়ী হয়ে থাকে। এটি ক্রুর বিষকে দূর করতে এবং দংশনশীল জীবসমূহকে হনন-করণে সমর্থ। ২।

 হে সপর্দষ্ট পুরুষ! তোমার যে অঙ্গে সর্প দংশিত করেছে, আমরা সেই স্থান হতে বিষকে নির্গত করে দিচ্ছি এবং অল্প-বীর্য মশকদের (অর্থাৎ মুখ, পুচ্ছ ও পদের দ্বারা দংশনকারী ত্রিপ্রদংশীগণকে)-ও প্রভাবহীন করে দিচ্ছি ৷ ৩৷

হে বিষনিৰ্হরণ মন্ত্রে সামর্থ্যপ্রদ ব্ৰহ্মণস্পতি! এই বিষদষ্ট পুরুষের দেহে বিষের জ্বালায় খিচুনি ধরে গিয়েছে; এ বিশ্লিষ্টপর্বা (অর্থাৎ বিগতসন্ধি) ও ব্যঙ্গ (অর্থাৎ বিবশাবয়ব) হয়ে মুখ ইত্যাদিতে বক্রত্ব অবস্থাপন্ন হয়েছে; তুমি এর অঙ্গসমূহের বক্রতা জ্যা-মুক্ত ধনুর মতো ঋজু (অর্থাৎ সরল বা সোজা) করে দাও এবং বিষকে দূর করে দাও। ৪৷

এই শর্কোটক নামক বীর্যহীন ও নিম্নমুখে সমীপাগত সর্পবিশেষের বিষকে আমি খণ্ডন করে দিয়েছি। এর পর মন্ত্ৰসামর্থে এই বিষ সহ সর্পকেই আমি বিনাশ করে দিচ্ছি। ৫।

হে বৃশ্চিক! তোর বাহুগুলিতে, মস্তকে ও শরীরে মধ্যভাগেও সন্তাপ-দানক্ষম কোনো রকম শক্তি নেই, তথাপি তুই দুবুদ্ধির বশে আপন পুচ্ছে স্বল্প বিষ বহন করে কেন ঘোরা-ফেরা করছিস? ॥ ৬৷৷

হে সর্প! তোকে পিপীলিকাগণ ভক্ষণ করে এবং ময়ূরীগণও বিশেষভাবে খণ্ড খণ্ড করে ছেদন করে। হে সর্পবিষনিৰ্হরণক্ষমগণ! তোমরা ঘোষণা করো যে, ঔষধিসমূহের দ্বারা এই শর্কোটক সর্পের বিষকে প্রভাবহীন করে দেওয়া হয়েছে। ৭

হে বৃশ্চিক! তোর পুচ্ছেই সামান্য পরিমাণে বিষ আছে। তবুও তুই পুচ্ছ ও মুখ উভয়ের দ্বারাই প্রহার (অর্থাৎ দংশন) করে থাকিস ॥ ৮।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— মার্গস্বস্তয়নকর্মণি যে তে পন্থানঃ ইত্যেনাং ঋচং প্রথমং দক্ষিণপাদপ্রক্ষেপপুরঃসরং গচ্ছেৎ। তথা সর্বস্বস্ত্যয়নকর্মণি অসংখ্যাতা শর্করাণানি বা অনয়া অভিমন্ত্র গৃহক্ষেত্রাদিষু প্রক্ষিপেৎ ইন্দ্ৰং উপতিষ্ঠেত বা। সূত্রিতং হি..বৃশ্চিকমশকপিপীলিকাশকোটকাদিবিষ ভৈষজ্যার্থং তিরশ্চিরাজেঃ ইত্যষ্টৰ্চেন মধুকং অভিমন্যু বৃশ্চিকাদিদষ্টং পায়য়েৎ। তথা তত্রৈব কর্মণি ক্ষেত্ৰমৃত্তিকাং বল্মীকমৃত্তিকাং বা সজীবপশুচমাবেষ্টিতাং অনেন অষ্টৰ্চেন সম্পত্য অভিমন্ত্র বধীয়াৎ। কেবলাং মৃত্তিকাং অভিমন্ত্র উদকেন পায়য়েৎ। তথা তস্মিন্নেব কর্মণি অনেনৈব উদপাত্ৰং হরিদ্রামিং আজ্য বা সম্পত্য অভিমন্ত্র পায়য়েৎ। সূত্রিতং হি।…ইত্যাদি। (৭কা ৫অ. ৪-৫সূ)।

টীকা –মার্গ বা পথের স্বস্ত্যয়নকর্মে চতুর্থ সূক্তটির মন্ত্র জপ করে প্রথমে দক্ষিণ পদ বিক্ষেপ করে সম্মুখে অগ্রসর হওয়া কর্তব্য। এ ছাড়া সকল স্বস্ত্যয়নকর্মে সূত্রোক্তপ্রকারে এই মন্ত্রটি বিনিযুক্ত হয়। তিরশ্চিরাজেঃ ইত্যাদি সূক্তের আটটি মন্ত্র বৃশ্চিক, মশক, পিপীলিকা, শর্কোট ইত্যাদির বিষ চিকিৎসায় সূত্রোক্তপ্রকারে মধুক (ঔষধি) অভিমন্ত্রিত করে দংষ্ট ব্যক্তিকে পান করাতে হয়। এই কর্মে সূত্রানুসারে ক্ষেত্ৰমৃত্তিকা বা বল্মীক-মৃত্তিকার অভিমন্ত্রণ, জলপাত্রে হরিদ্রামিশ্র বা আজ্য সম্পাতিত পূর্বক অভিমন্ত্রণ ইত্যাদি হয়ে থাকে। (৭কা. ৫অ, ৪-৫)। 

.

ষষ্ঠ সূক্ত : সরস্বতী

 [ঋষি : বামদেব দেবতা : সরস্বতী ছন্দ : জগতী ]

 যদাশসা বদতো মে বিচুক্ষুভে যদ যাচমানস্য চরতো জন অনু। যদাত্মনি তম্বো মে বিরিষ্টং সরস্বতী তদা পৃণদ ঘৃতেন ॥১॥ সপ্ত ক্ষরন্তি শিশবে মরুত্বতে পিত্রে পুত্ৰাসো অপ্যবীবৃনৃতানি। উভে ইদস্যোভে অস্য রাজত উভে যতেতে উভে অস্য পুষ্যতঃ ॥ ২॥

 বঙ্গানুবাদ –আমার যে অঙ্গ অভীপ্সিত বস্তুর অভাবে ক্লিষ্ট হয়ে গিয়েছে, ব্যর্থ যাচনার কারণ যে অঙ্গ ব্যাকুল হয়ে রয়েছে এবং জনে জনে পরিভ্রমণের নিমিত্ত বিক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছে, আমার সেই অঙ্গকে বান্দেবী সরস্বতী ঘৃতবৎ সারভূত ফলের দ্বারা আপূরিত করুন (অর্থাৎ স্বাভাবিক দিশা প্রাপ্ত করান)। ১।

মরুৎ-যুক্ত জলের পুত্রভূত বরুণের উদ্দেশে সপ্ত নদী প্রবাহিত হচ্ছে। আকাশরূপ পিতার নিমিত্ত এবং প্রমুখ দেবতাগণের পুত্র রূপ মনুষ্যগণ হবিঃ প্রদান ইত্যাদি কর্মের অনুষ্ঠান করছে। আকাশ ও পৃথিবী উভয় লোকে দেবতা ও মনুষ্য উভয়ে বিরাজমান রয়েছে। উভয় লোক উভয়ের মঙ্গলের নিমিত্ত সদা যত্নশীল হয়ে আছে এবং অন্ন ও জলের দ্বারা উভয় লোক উভয়কে পোষণ (বা সম্পন্ন) করছে ॥ ২

.

সপ্তম সূক্ত : অন্নম

[ঋষি : কৌরুপথি দেবতা : ইন্দ্র বরুণ ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ ]

ইন্দ্রাবরুণা সুতপাবিমং সুতং সোমং পিবতং মদ্যং ধৃতব্রতৌ। যুবো রথো অধ্বররা, দেববীতয়ে প্রতি স্বরমুপ যাতু পীতয়ে। ১। ইন্দ্ৰবরুণা মধুমত্তমস্য বৃষ্ণঃ সোমস্য বৃষণা বৃষেথা। ইদং বামন্ধঃ পরিষিক্তমাসদ্যস্মিন্ বহির্ষি মাদয়েথাম ॥ ২॥

 বঙ্গানুবাদ –হে ধৃতব্রতো ইন্দ্র ও বরুণ! তোমরা এই প্রসন্নতাপ্রদ আমাদের অভিযুত সোম পান করো। তোমাদের রথ দেবতাগণকে কামনাশালী সোমযুক্ত এই যজমানের ঘরের নিকট উপনীত হোক ॥ ১

হে বরুণ! হে ইন্দ্র! তোমরা অভিলষিত ফল বর্ষণ করে থাকে। তোমাদের নিমিত্ত এই সোমরস গ্রহ চমস ইত্যাদি পাত্রে সর্বতোভাবে অর্পিত (বা সিঞ্চিত) করে দেওয়া হয়ে গিয়েছে; তোমরা এই বিতায়িত (বিছিয়ে দেওয়া) কুশা রূপ আসনের উপর উপবেশন পূর্বক অভিলষিত ফলবর্ষণশালী সোমকে পান করো। ২

.

অষ্টম সূক্ত : শাপমোচনম

[ঋষি : বাদরায়ণি দেবতা : অরিনাশনম্ ছন্দ : অনুষ্টুপ ]

যো নঃ শপাদশপতঃ শপতো যশ্চ নঃ শপাৎ। বৃক্ষ ইব বিদ্যুতা হত আ মূলাদ শুষ্যত্ ॥ ১।

 বঙ্গানুবাদ— আমরা নিন্দা না করলেও যে শত্রু নিন্দাবাক্যে আমাদের ভর্ৎসনা করে, যারা আমাদের দ্বারা নিন্দিত হয়ে পরুষবাক্য প্রয়োগ করে, তারা বিদ্যুতের দ্বারা হত বৃক্ষের ন্যায় সমূলে বিশুষ্ক হয়ে যাক। তাদের পিতা পুত্র ইত্যাদি সকলেই শুষ্ক হয়ে (বিনষ্ট হয়ে) যাক ॥ ১।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –যাচকানাং অভিলষিতার্থপ্রাপ্তয়ে যদ আশসা ইতি দ্বাভ্যাং স্বরূপবৎসায়া গোর্দুগ্ধেন শৃতং পায়সং সম্পত্য অভিমন্যু অশ্নীয়াৎ!….উথ্যক্রতৌ মৈত্রাবরুণ্যজ্যাতোনুমন্ত্রণং ইন্দ্রাবরুণা সুতপৌ ইত্যনয়া কুর্যাৎ। উক্তং বৈতানে।…অভিচারকর্মণি যো নঃ শপাৎ ইত্যনয়া অশনিহতবৃক্ষসমিধ আদধ্যাৎ। (৭কা, ৫অ, ৬-৮সূ)।টীকা— যাচকগণের অভিলষিত সামগগ্রী প্রাপ্তির নিমিত্ত উপযুক্ত ষষ্ঠ সূক্তের মন্ত্র দুটির দ্বারা স্বরূপবৎসযুক্ত গাভীর দুগ্ধে পক-কৃত পায়স অভিমন্ত্রণ পূর্বক ভক্ষণ করণীয়। উথ্য-ক্রতুতে মৈত্রাবরুণ যাগে সপ্তম সূক্তের মন্ত্র দুটির দ্বারা অনুমন্ত্রণে বিনিয়োগ করণীয়। যো নঃ শপাৎ ইত্যাদি মন্ত্রের দ্বারা নিন্দাকারী শত্রুর বিরুদ্ধে অভিচারকর্ম-সাধনে বজ্রাহত বৃক্ষের কাষ্ঠ আহরণ করে আনতে হয়। (৭কা, ৫অ. ৬-৮)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *