1 of 3

০৭।০৪ সপ্তম কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক

চতুর্থ অনুবাক
প্রথম সূক্ত : আপঃ
[ঋষি : প্রস্কণ্ব দেবতা : আপ, সুপর্ণ, বৃষভ ছন্দ : ত্রিষ্টুপ ]

 দিব্যং সুপর্ণং পয়সং বৃহন্তমপাং গর্ভং বৃষভমোষধীনাম। অভীপততা বৃষ্ট্যা তৰ্পয়ন্তমা নো গোষ্ঠে রয়িষ্ঠাং স্থাপয়াতি ॥১॥

 বঙ্গানুবাদ— দিব্য, সুন্দর গমনশালী, ঔষধিসমূহকে প্রবুদ্ধ করণশালী, জলসমূহে মধ্যস্থ রূপ, বিশ্বকে তৃপ্ত করণশালী, বর্ষার কামনাকারী প্রাণীবর্গকে তৃপ্ত করণশালী সরস্বান্ দেবতাকে ইন্দ্র আমাদের গোষ্ঠে প্রতিষ্ঠিত করুন। ১।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : সরস্বান্

[ঋষি : প্রস্কণ্ব দেবতা : সরস্বান ছন্দ : ত্রিষ্টুপ ]

যস্য ব্রতং পশবো যন্তি সর্বে যস্য ব্ৰত উপতিষ্ঠন্ত আপঃ। যস্য ব্রতে পুষ্টপতির্নিবিষ্টস্তং সরস্বমবসে হবামহে ॥১॥ আ প্রত্যঞ্চং দাশুষে দাশংসং সরস্বন্তং পুষ্টপতিং রয়িষ্ঠা। রায়ম্পোষং এবং বসানা ইহ হুবেম সদনং রয়ীণাম ॥ ২॥

বঙ্গানুবাদ –যাঁর কর্মে সকল জল মিলিত হয়, সকল পশু যাঁর অনুগমন করে, বৃষ্টি ও পুষ্টির যিনি আশ্রয় স্বরূপ, সেই সরস্বান্ দেবতার নিকট আমাদের রক্ষণের নিমিত্ত আহূত করছি ৷৷ ১

হবিদাতা যজমানের সন্তোষের নিমিত্ত, তার সম্মুখে গমনশীল, তাকে ঈপ্সিত ফল দানশালী, ধনস্থানে প্রতিষ্ঠিত, ধনকে পুষ্ট করণশালী, যজমানসমূহকে অন্ন-প্রদানের ইচ্ছাশীল সরস্বান্ দেবকে আমরা আহূত করছি। ২৷৷

.

তৃতীয় সূক্ত: সুপর্ণঃ

[ঋষি : প্রস্কণ্য দেবতা : শ্যেন ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ ]

অতি ধন্বন্যত্যপস্ততর্দ শ্যেনো নৃচক্ষা অবসানদর্শঃ। তর বিশ্বান্যবরা রজাংসীন্দ্রেণ সখ্যা শিব আ জগম্যাৎ ॥ ১। শ্যেনো নৃচক্ষা দিব্যঃ সুপর্ণঃ সহস্রপাচ্ছতযোনির্বয়োধাঃ। স নো নি যচ্ছাদ বসু যৎ পরাভূতমম্মাকমস্তু পিতৃ স্বধাবৎ ॥ ২॥

 বঙ্গানুবাদ –সকল প্রাণীর দ্রষ্টব্য, প্রশংসনীয় গতিসম্পন্ন সূর্য মরুদেশেও জল বর্ষণ করুন। তিনি আপন মিত্র ইন্দ্রের সাথে আমাদের মঙ্গলকারী হোন, নবীন গৃহ নির্মাণের স্থানে আগমন করুন। ১।

অনন্ত রশ্মিশালী, সুন্দর গতিশালী, অপরিমিত ফলের সাথে সংযুক্ত করণশালী, অন্নধারক সূর্য আমাদের চিরস্থায়ী করুন। আরও, যে ধন চোর ইত্যাদি অপরের দ্বারা অপহৃত হয়ে গেছে, অথবা যে ধন হোমকালে হস্তচ্যুত হয়ে পুরোডাশ ইত্যাদির খণ্ড হতে পতিত হয়েছে, সেই ধন আমাদের পিতৃপুরুষগণের উদ্দেশে স্বধাকারে হুত (অর্থাৎ মন্ত্রোচ্চারণপূর্বক অগ্নিতে প্রক্ষিপ্ত স্বরূপ) হোক।

.

চতুর্থ সূক্ত : পাপমোচনম

[ঋষি : প্রস্কণ্ব দেবতা : সোম রুদ্র ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

সোমারুদ্ৰা বি বৃহতং বিমূচীমমীবা যা নো গয়মাৰিবেশ। বাধেথাং দূরং নিঋতিং পরাচৈঃ কৃতং চিদেনঃ প্র মুমুক্তমস্মৎ ॥১॥ সোমারুদ্ৰা যুবমেন্যস্মদ বিশ্বা তনুষু ভেষজানি ধৰ্ত্তম। অব স্যতং মুঞ্চতং যন্নো অসৎ তনুষু বদ্ধং কৃতমনো অস্মৎ ॥ ২॥

বঙ্গানুবাদ –হে সোমদেব! হে রুদ্রদেব! আমাদের শরীররূপ গৃহে ব্যাপ্ত অমীবা (অর্থাৎ বৃহৎ বিনাশকারী রোগ বিশেষ)-কে বিনষ্ট করো। রোগের কারণভূতা (নির্ঋতিরূপা) পিশাচীকে আমাদের নিকট হতে দূরে অপসারিত করে দাও, যেন সে আর না প্রত্যাবর্তিত হয়ে আসতে পারে এবং আমাদের কৃত পাপকেও আমাদের নিকট হতে পৃথক করো ॥ ১।

হে সোম! হে রুদ্র! আমাদের শরীরে আবদ্ধ আমাদের অর্জিত পাপকে আমাদের নিকট হতে মুক্ত করো; আমাদের (সেই পাপ-সম্বন্ধী) রোগসমূহকে দূর করার নিমিত্ত ঔষধিসমূহকে আমাদের শরীরে ধারণ করাও ২

পঞ্চম সূক্ত: বাক

[ঋষি : প্রস্কণ্ব দেবতা : বাক্ ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

 শিবান্ত একা অশিবান্ত একাঃ সর্বা বিভর্ষি সুমনস্যমানঃ। তিম্রো বাচো নিহিতা অন্তরস্মিন্ তাসমেকা বি পপাতানু ঘোষ ॥১॥

বঙ্গানুবাদ –হে পুরুষ! তুমি ব্যর্থই (অর্থাৎ অকারণেই) নিন্দিত হয়েছে। তোমার সম্বন্ধে স্তুতি রূপ ও নিন্দা রূপ যে দুই রকমের বাক্য (কথা) বলা হয়ে থাকে, তুমি সেই দুই রকমের কথাই (বাক্যই) প্রসন্ন মনে গ্রহণ করো। সেই অকল্যাণকর কথা বা বাক্যসমূহের তিনটি অবস্থা নিন্দাকারীর অন্তরে বিদ্যমান থাকে, অপর একটি অবস্থা বৈখরীরূপা ধ্বনি (জনসম্মধ্বনি) অনুলক্ষ্য করে নিন্দারূপে বাহিরে প্রকাশ পায়। (অর্থাৎ মূলতঃ অবস্থাচতুষ্টয়াত্মক ঐ দুই প্রকারের বাক্য পরা-পশ্যন্তী ও মধ্যমা ভেদে তিনি অবস্থায় বাক্য-প্রয়োগকারীর মধ্যে থাকে, এবং সম্বন্ধিত ব্যক্তিতে অর্থাৎ নিন্দিত ব্যক্তিতে তার এক অবস্থাই (বৈখরী) হয়ে থাকে) ॥১॥

.

ষষ্ঠ সূক্ত : ইন্দ্রাবিষ্ণু

[ঋষি : প্রস্কণ্ব দেবতা : ইন্দ্র, বিষ্ণু ছন্দ : ত্রিষ্টুপ ]

উভা জিগ্যথুর্ন পরা জয়েথে ন পরা জিগ্যে কতরশ্চনৈনয়োঃ। ইন্দ্ৰশ্চ বিষ্ণো যদপস্পৃধেথাং ত্রেধা সহস্রং বি তদৈরয়েথাম্ ॥১॥

বঙ্গানুবাদ –হে ইন্দ্র! হে বিষ্ণু! তোমাদের কখনও পরাভব ঘটেনি, তোমরা সদাই বিজয় প্রাপ্ত হয়ে থাকো। তোমাদের দুইজনের মধ্যে একে অপরের দ্বারা নির্জিত হওনি। হে ইন্দ্র ও বিষ্ণু! তোমরা যে বস্তুর নিমিত্ত অসুরগণের সাথে স্পর্ধা করে থাকে, সেই বস্তু লোক-বেদ ও বাপে তিন প্রকারে বিভক্ত হয়ে থাকলেও, তা অপরিমিত হয়ে থাকে ॥১॥

.

সপ্তম সূক্ত : ঈর্ষানিবারণম

 [ঋষি : প্রস্কণ্ব দেবতা : ঈর্ষাপনয়নম ছন্দ : অনুষ্টুপ ]

 জনাদ বিশ্বজনীনাৎ সিন্ধুতস্পর্যাতৃত। দূরা ত্বা মন্য উদ্ভূতমীর্ষায় নাম ভেষজম্ ॥ ১৷৷ অগ্নেরিবাস্য দহততা দাবস্য দহতঃ পৃথক। এতামেতস্যের্ষামুন্নাগ্নিমিব শময় ॥ ২॥

 বঙ্গানুবাদ –সকলের হিতসাধক জনপদ, সমুদ্র ও দূর দেশ হতে সংগৃহীত সত্তুমন্থ নামক হে ওষধি! তোমাকে আমি জ্ঞাত আছি। তুমি হেন এই ঔষধি ক্রোধকে দূর করতে সমর্থ ॥১॥

 ঈর্ষাকে নিবারণ করণশালী হে দেব! তুমি আমার সকল কার্যকে ভস্মকারী এই ঈর্ষালুর ঈর্ষাকে তপ্তপরশু-কথিত জলের দ্বারা শান্ত করে দাও, যেমন অগ্নিকে জলের দ্বারা শান্ত করা হয় ॥২॥

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— দিব্যং সুপর্ণং ইতি আদ্যসূক্তে আদ্যয়ৰ্চা পুষ্টিকৰ্মাণ বৃষভপয়া ইন্দ্ৰং যজেতা…অন্যরম্ভণীয়েষ্টৌ সারস্বতং পুরোশং যস্য ব্রতংইতি অনুমন্ত্রয়েত।..মবগৃহকরণার্থং ভূশুদ্ধয়ে যে অতি ধন্বনি ইতি দ্বাভ্যাং ঝং গৃহনির্মাণস্থানে শ্যেনদেবতাকং চরুং জুহুয়াৎ। সূত্রিতং হি।…সর্বব্যাধিভৈষজ্যার্থং ব্যধিতশরীরং মৌঞ্জৈঃ পাশৈঃ পর্বসু রদ্ধা সোমারুদ্রা ইতি দ্বাভ্যাং শরপিঞ্জলীভিঃ সহ উদঘটং সম্পত্য অভিমন্যু ব্যাধিতং আপ্লাবয়েৎ অবসিঞ্চেত বা। তদ উক্তং সংহিতাবিধৌ।…মিথ্যাভিশস্তস্য লোকনিন্দানিবৃত্ত্যর্থং শিবাস্তে ইত্যনয়া ওদনং মন্থং বা অভিমন্যু দদ্যাৎ। সংমস্যকর্মণি উভা জিগ্যথুঃ ইত্যনয়া হস্ত্যাদিয়ানং সম্পত্য অভিমন্ত্র সাংমানস্যকামান্ আরোপ্য সূত্রোক্তপ্রকারেণ স্বগৃহ আগত্য ওদনং. মন্থং বা সম্পত্য অভিমন্ত্র সহ ভোজয়েৎ। সূত্রিতং হি।..ঈর্ষাবিনাশার্থং জনাদ বিশ্বজনীনাৎ ইত্যেনাং ঈৰ্য্যালুং পশ্যন জপেৎ..সূত্রিতং হি। তথা ঈর্ষাবিনাশকর্মণি তপ্তপরশুনা কাথিতং উদকং অগ্নেরিবাস্য দহতঃ ইত্যনয়া অভিমন্ত্র ঈর্ষালুং পায়য়েৎ। …ইতি (কৌ. ৪/১২) সূত্রাৎ (৭কা. ৪অ. ১-৭সূ)।

টীকা— প্রথম সূক্তের মন্ত্রটি পুষ্টিকর্মে ইন্দ্রের উদ্দেশে যাগ করণে বিনিয়োগ করণীয়। দ্বিতীয় সূক্তের মন্ত্র দুটি সারস্বত পুরোডাশে বিনিযুক্ত হয়। নবগৃহ নির্মাণকর্মে ভূশুদ্ধির নিমিত্ত তৃতীয় সূক্তের মন্ত্রদ্বয় শ্যেনদেবতার উদ্দেশে চরু সমর্পণে সূত্রোক্তপ্রকারে বিনিয়োগ করণীয়। সকল প্রকার ব্যাধির ভৈষজ্যার্থে চতুর্থ সূক্তের মন্ত্রের দ্বারা শরপিঞ্জলীর সহযোগে জল অভিমন্ত্রিত পূর্বক সূত্রানুসারে ব্যাধিতকে স্নান করানো বা তার শরীরে অবসিঞ্চন করণীয়। মিথ্যাভিশস্ত ব্যক্তির লোকনিন্দা নিবৃত্তির নিমিত্ত শিবাস্তে ইত্যাদি সূক্তের মন্ত্রটি সূত্রোক্তপ্রকারে বিনিয়োজ্য। ষষ্ঠ সূক্তের মন্ত্রটি সাংমনস্যকামী জনের পক্ষে সূত্রোক্তপ্রকারে বিনিয়োগ করণীয়। ঈর্ষাবিনাশার্থে জনাদ বিশ্বজনীনাৎ সূক্তের প্রথম মন্ত্রটি ঈর্ষালু জনকে দর্শনমাত্রই জপনীয়। দ্বিতীয় মন্ত্রটি (অগেরিবাস্য) ঈর্ষানিবারণকর্মে সূত্রোক্তপ্রকারে বিনিয়োগ করণীয়। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, এই শেষোক্ত মন্ত্রটি স্বর্গীয় দুর্গাদাস স্বতন্ত্র সূক্তরূপে গ্রথিত করেছেন। এতে ঋষি, দেবতা, ছন্দ ইত্যাদির উল্লেখে ত্রুটি থেকে যায়, অবশ্য তিনি এগুলির উল্লেখে অধিকাংশ স্থলেই নিরস্ত থেকেছেন। (৭কা. ৪অ. ১-৭সূ)।

.

অষ্টম সূক্ত : সিনীবালী

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : সিনীবালী ছন্দ : অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ ]

সিনীবালি পৃথুঠুকে যা দেবানামসি স্বসা। জুষ হব্যমাহুতং প্রজাং দেবি দিদিড়টি নঃ ॥১॥ যা সুবাহুঃ স্বরিঃ সুষুমা বহুসূবরী। তস্যৈ বিল্পরৈ হবিঃ সিনীবাল্যৈ জুহোতন ॥ ২॥ যা বিপত্নীন্দ্রমসি প্রতীচী সহস্রস্তুকাভিয়ন্তী দেবী। বিষ্ণোঃ পত্নি তুভ্যং রাতা হবীংষি পতিং দেবি রাধসে চোদ্দয়স্ক ॥ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –হে পৃথুজঘনা সিনীবালি! (চতুর্দশীযুক্তা বা প্রতিপদযুক্তা অমাবস্যায় স্ত্রীত্ব আরোপিত হয়েছে)। তুমি দেবতাগণের সমান কার্যশালিনী হওয়ার কারণে তাদের ভগিনীস্বরূপা। তুমি আমাদের পুত্র ইত্যাদি প্রদান করো। তুমি আমাদের প্রদত্ত হবিঃ গ্রহণ করো। ১।

 হে ঋত্বিক! হে যজমান! এই সিনীবালী সুন্দর হস্তশালিনী, সুযোনি সম্পন্না, এবং সুশোভিত অঙ্গুলিসমূহের সাথে যুক্তা। এই প্রজা-পালনকারিণী সিনীবালী দেবীর উদ্দেশে হবিঃ প্রদান করো। ২।

এই সিনীবালী ইন্দ্রের সম্মুখে গমন পূর্বক তার পূজা করে থাকেন। ইনি প্রজাগণকে পালন করে থাকেন। হে দেবপত্নী সিনীবালি! তুমি আপন স্বামী ইন্দ্রকে আমাদের ধন দানের নিমিত্ত প্রেরণা প্রদান করো। আমরা তোমার উদ্দেশে হবিঃ প্রদান করছি ৷ ৩৷৷

.

নবম সূক্ত : কুহুঃ

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : কুহু ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ]

 কুহূং দেবীং সুকৃতং বিদ্মনাপসমস্মিন্ যজ্ঞে সুহবা জোহবীমি। সা নো রয়িং বিশ্ববারং নি যচ্ছাদ দদাতু বীরং শতদায়মুকথ্যম্ ॥১॥ কুহুর্দোনামমৃতস্য পত্নী হব্যা নো অস্য হবিষো জুষেত। শৃণোতু যজ্ঞমুশতী নো অদ্য রায়ম্পোষং চিকিতুষী দধাতু ॥ ২॥

 বঙ্গানুবাদ –চন্দ্রমা-হীন অমাবস্যা (অর্থাৎ কুহু নামে খ্যাত নষ্টচন্দ্রা অমাবস্যায় স্ত্রীত্ব আরোপিত) সুন্দর কর্ম ও শ্রেষ্ঠ আহ্বানশালিনী। আমি তাকে এই দর্শর্যাগে সর্বাভিলষিতসাধনে আহ্বান করছি। তিনি আমাকে বরণীয় ধন ও পরাক্রমী পুত্র প্রদান করুন ॥১॥

সেই কুহূদেবী সকল ভূতসমুদায় ও অমৃতের পোষণকত্রী; তিনি অমৃতরূপ জলকে পুষ্ট করছেন। তিনি আমাদের যজ্ঞকে জ্ঞাত হয়ে আমাদের আহ্বান শ্রবণ করুন, আমাদের হবিঃ গ্রহণ করুন এবং আমাদের ধনের পোষণ করুন। ২।

.

দশম সূক্ত : রাকা

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : রাকা ছন্দ : জগতী]

 রাকামহং সুহবা সুষ্ঠুতী হুবে শৃণোতু নঃ সুভগা বোধতু অনা। সীব্যত্বপঃ সূচ্যাচ্ছিদ্যমানয়া দদাতু বীরং শতদায়মুথ্যম্ ॥ ১৷৷ যাস্তে রাকে সুমতয়ঃ সুপেশনো যাভিদদাসি দাশুষে বসূনি। তাভির্নো অদ্য সুমনা উপাগহি সহস্রাপোষং সুভগে ররাণা ॥ ২॥

বঙ্গানুবাদ –আমি রাকাদেবীকে সুন্দর মন্ত্রের দ্বারা আহ্বান করছি। (পূর্ণ চন্দ্রশালিনী পূর্ণিমা। তিথি রাকা নামে খ্যাতা)। সেই সুভগা (সুজ্ঞানাদিকা) দেবী আমাদের স্তুতি শ্রবণ করুন এবং আমাদের অভিপ্রায়কে জ্ঞাত হোন; যেমন বস্ত্র ইত্যাদি সীবন (অর্থাৎ সেলাইয়ের কার্য) যোগ্যতার দ্বারা হয়ে থাকে, তেমনই অচ্ছিদ্যমান সূচীস্থানীয় নাড়ীর সীবনে এই প্রজননরূপ কর্ম করে আমাদের যশস্বী পুত্র প্রদান করুন। (যথা বস্ত্রাদিকং সূচ্যা সূতং চিরং কার্যক্ষমং ভবতি এবং ইদং করোতু)। ১

হে সুরূপা রাকাদেবী! তুমি আপন কল্যাণময়ী সুবুদ্ধির দ্বারা হবিদাতা যজমানকে ধন প্রদান করে থাকো। তুমি সেই শোভন বুদ্ধিসমূহ সহকারে আমাদের নিকট আগমন পূর্বক ধনের পুষ্টি সাধিত করো ॥২॥

.

একাদশ সূক্ত : দেবপত্ন্য

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : দেবপত্নীগণ ছন্দ : জগতী, পংক্তি]

দেবানাং পত্নীরুশতীরবন্তু নঃ প্রাবন্তু নস্তুজয়ে বাজসাতয়ে। যাঃ পার্থিবাসো য অপামপি ব্রতে তা নো দেবীঃ সুহবাঃ শৰ্ম যচ্ছত্ত ॥১॥ উত গ্লা ব্যন্তু দেবপত্নীবিন্দ্রাণ্য-গ্নায্যশ্বিনী রাষ্ট্র। আ লোদসী বরুণানী শৃণোতু ব্যন্তু দেবীর্য ঋতুর্জনীনাম ॥ ২॥

বঙ্গানুবাদ –দেবপত্নীবৃন্দ আমাদের অন্ন ইত্যাদি প্রাপ্ত করানোর নিমিত্ত, পুত্র ও ধন রক্ষণের নিমিত্ত স্বেচ্ছায় আগমন করুন। পৃথিবীর উপর যে দেবপত্নী নিবাস করছেন এবং যে দেবপত্নী অন্তরিক্ষে অবস্থান করছেন, তাঁরা আমাদের শোভন আহ্বান শ্রবণ পূর্বক সুখ বা গৃহ (শর্ম) প্রদান করুন ॥১॥

 দেবপত্নীগণ আমাদের রক্ষা করুন। ইন্দ্রাণী, বরুণানী, রোদসী (রুদ্রের পত্নী), অগ্নায়ী, অশ্বিযুগলের পত্নী আমাদের আহ্বান শ্রবণ করুন। তাঁদের স্বামী দেবগণ আপন আপন জায়াগণের ঋতুকালে তাদের উদ্দেশে নিবেদিত হবিঃ নিজেরা গ্রহণ করুন। ২।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –সর্বব্যাধিভৈষজ্যার্থং ব্যাধিতশরীরং মৌঞ্জৈঃ পাশৌঃ পর্বসু বদ্ধা সিনীবালি ইতি নবর্চেন শরপিঞ্জলীভিঃ সহ উদঘটং সম্পাত্য অভিমন্ত্র ব্যাধিতং আপ্লাবয়েৎ অবসিঞ্চেৎ বা। তৎ উক্তং সংহিতাবিধৌ।…তথা সর্বসম্পকামঃ অনেন নবর্চেন যথালিঙ্গং সিনীবালী কুহু রাকা দেবপত্ন ইতি চতস্রো দেবতা যজেত উপতিষ্ঠেত বা।…ইত্যাদি। (৭কা, ৪অ. ৮-১১সূ)।

টীকা –উপযুক্ত চারটি সূক্তের মোট নয়টি মন্ত্র সকল ব্যাধির ভৈষজ্যার্থে এবং সকল সম্পৎ কামনা পূর্বক সূত্রোক্তপ্রকারে, যথালিঙ্গ সিনীবালী, কুহূ ইত্যাদির যাগ বা উপাসনা করণীয় ॥ (৭কা. ৪অ. ৮-১১সূ)।

.

দ্বাদশ সূক্ত : বিজয়ঃ

[ঋষি : অঙ্গিরা (কিতববধকামঃ) দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ, জগতী]

যথা বৃক্ষমশনির্বিশ্বাহা হত্যপ্রতি। এবাহমদ্য কিতবানক্ষৈধ্যাসমপ্রতি ॥১॥ তুরাণামতুরাণাং বিশামবৰ্জুষীণাম। সমৈতু বিশ্বততা ভগো অন্তহস্তং কৃতং মম ॥ ২॥ ঈড়ে অগ্নিং স্বাবসুং নমোভিরিহ প্ৰসক্তো বি চয়ৎ কৃতং নঃ। রথৈরিব প্র ভরে বাজয়দ্ভিঃ প্রদক্ষিণং মরুতাং স্তোমমৃধ্যাম্ ॥ ৩॥ বয়ং জয়েম ত্বয়া যুজা বৃতমম্মাকমংশমুদ ভরেভরে। অস্মভ্যমিন্দ্র বরীয়ঃ সুগং কৃধি প্ৰ শত্রণাং মঘবন বৃষ্ণ্যা রুজ ॥ ৪ অজৈষং ত্বা সংলিখিতমজৈষমুত সংরুধ। অবিং বৃকো যথা মথদেবা মামি তে কৃতম্ ॥ ৫৷ উত প্রহামতিদীবা জয়তি কৃতমিব শ্বগ্নী বি চিনোতি কালে। যো দেবকামো ন ধনং রুণদ্ধি সমিৎ তং রায়ঃ সৃজতি স্বধাভিঃ ॥ ৬৷ গোভিষ্টরেমামতিং দুরেবাং যবেন বা ক্ষুধং পুরুহুত বিশ্বে। বয়ং রাজসু প্রথমা ধনান্যরিষ্টাসো বৃজনীভিজয়েম ॥ ৭ কৃতং মে দক্ষিণে হস্তে জয়ো মে সব্য আহিতঃ। গোজিদ ভূয়াসমজিদ ধনংজয়ো হিরণ্যজিৎ ৮অক্ষাঃ ফলবতীং দুবং দত্ত গাং ক্ষীরিণীমিব। সং মা কৃতস্য ধারয়া ধনুঃ স্নারেৰ নহ্যত ॥ ৯৷৷

বঙ্গানুবাদ –যেমন বৈদ্যুতাগ্নি নিত্য অপ্রতিম হয়ে বৃক্ষসমূহকে ভস্ম করে থাকে, তেমনই আমি সকল জুয়ারীকে (কিতবকে) পাশার (অক্ষের) দ্বারা পরাজিত (বা হনন) করছি, যাতে দূতক্রিয়ায় (জুয়াখেলায়) আমার প্রতি স্পর্ধান্বিত কেউ না থাকে ॥১॥

 জুয়াতে ত্বরমাণ (তাড়াতাড়ি পাশার দান প্রদানকারী) এবং বিলম্বমান (অর্থাৎ ধীরেসুস্থে পাশার দান প্রদানকারী) ব্যক্তিগণের মধ্যে আমি শ্রেষ্ঠ। বারম্বার পরাজিত হয়েও দূতক্রীড়াতে আসক্তি রক্ষকারী দূতব্যসনীদের ভাগ্য আমি হেন জুয়ারীতে সর্ব দিক হতে লভ্য হোক। আমার হস্তধৃত পাশায় সর্বদা চতুর্থ সংখ্যাবিশিষ্ট কৃত নামক অয় অবস্থান করুক। (এক হতে পঞ্চসংখ্যান্তা অক্ষবিষয় হলো অয়। তার মধ্যে চতুর্থ সংখ্যাবিশিষ্ট অয়টি কৃত নামে অভিহিত। এই কৃতই জুয়াখেলায় জুয়ারীকে জয় দান করে-তত্র কৃতস্য লাভাদ দূতজয়ো ভবতি) ॥২॥

স্তোতৃগণকে আপন ধন প্রদানশালী (স্বাবসু) অগ্নিকে আমি স্তুতি করছি। দূতকর্মের অধিপতি অগ্নি দূতকর্মে প্রকৃষ্টরূপে আসক্ত আমাদের লাভের হেতুভূত কৃত নামক অয়বিশিষ্ট পাশা দান করুন। যেমন অক্ষের (রথচক্রের) দ্বারা চালিত রথে অন্ন আনীত হয়, তেমনই অক্ষের (পাশার) দ্বারা শত্রুদের (অর্থাৎ বিপক্ষীয় কিতবগণের) সম্পত্তি লাভ করবো ॥৩॥

 হে ইন্দ্র! আমি যে কিতবদের পরাজয় বরণ করাবো, তাদের তোমার সহায়তাতেই করাবো। যারা আমাদের জুয়ায় জয় করতে চায়, তাদের তুমি উলিত করো এবং আমাদের নিকট প্রভূত ধন আনয়ন করো। তুমি প্রতিপক্ষ কিতবগণের জয়লক্ষণসমূহকে নিবারণ করো ॥৪৷৷

 (জয়লাভের নিমিত্ত অক্ষশলাকা ইত্যাদির দ্বারা সংরোধ-চিহ্নকারী) হে প্রতিপক্ষীয় কিব! যতই চিহ্নিত করো, যতই সংরোধ করো, তোমার উপর আমিই বিজয় লাভ করব। আরণ্যশ্বাপদ বৃক যেমন অবিকে (মেষ বা ছাগকে) বিনাশ করে, তেমনই আমি জয়ের উদ্দেশে তোমার দ্বারা কৃত-শালী পাশকে আমি বিনাশ করে দিচ্ছি।৫।

 প্রকৃত জুয়ারী আপন কৃতিত্বে প্রতিদ্বন্দ্বীর উপর বিজয় প্রাপ্ত হয়। পরস্ব-হা কিতব জয়লাভের নিমিত্ত দূতক্রিয়ার সময়ে আপন পাশায় কৃত-নামক অয়কেই অন্বেষণ করে (অর্থাৎ হস্তস্থিত পাশায় প্রথমেই কৃত-নামক অয়কে রক্ষণ পূর্বক কৌশলে চাল প্রদান করে জয়লাভ করে)। দেবতাগণকে কামনাশীল যে পুরুষ দূতক্রিয়ায় অর্জিত ধন দেবকার্যে ব্যয় করে, ইন্দ্র তাকে অন্ন বলের দ্বারা সমৃদ্ধ করে থাকেন ৷ ৬ ৷

হে ইন্দ্র! দরিদ্রতা হতে আগত দুর্বুদ্ধি আমরা পশুর দ্বারা অতিক্রম করবো। (অর্থাৎ দারিদ্র মানুষকে অনেক সময়ে দুষ্কর্মে প্ররোচিত বা নিয়োজিত করে। পশুগণ কিন্তু স্বাভাবিক জীবননির্বাহ থেকে কোন অবস্থাতেই অপসৃত হয়। পশুর দৃষ্টান্তই মানুষকে অসৎ-প্রবৃত্তি হতে রক্ষা করতে পারে)। হে পুরুহূত (বহুভাবে আহূত)! আমরা সকলে যবের (বা ধান ইত্যাদির) দ্বারা ক্ষুধাকে শান্ত (নিবারণ) করবো। আমরা প্রতিপক্ষীয় কিতবদের দ্বারা পরাজিত হবে না এবং বলকারিণী অক্ষশলার দ্বারা তাদের প্রকৃষ্টমান ধনসমূহ জয় করে নেব ॥৭॥

আমার দক্ষিণ হস্তে লাভহেতু কৃতশব্দবাচ্য অয় আছে, বাম হস্তে কৃত-সাধ্য জয় নিহিত আছে। অতএব আমি এই দুইয়ের দ্বারা পরকীয় গো, অশ্ব, ধন, ভূমি এবং সুবর্ণ ইত্যাদির বিজেতা হবো। ৮।

(দেবসাধনভূতা অক্ষ সমূহের নিকট জয়ের নিমিত্ত প্রার্থনা করা হচ্ছে)–হে অক্ষসমুদায়! দুগ্ধবতী ধেনুর মতো আমার ফলবতী দ্যুতক্রিয়াকে কৃতের ধারায় প্লাবিত করো (অর্থাৎ বারম্বার কৃত-পাতনে দূতে জয়লাভ করিয়ে দাও)। উপর্যুপরি লাভহেতুক কৃতের ধারায় আমাকে বিজয়ী করে দাও, যেমন স্নায়ুনির্মিত মৌবীর বন্ধনযুক্ত ধনু জয়প্রদ হয়ে থাকে। ৯।

.

ত্রয়োদশ সূক্ত : পরিপাণম

[ঋষি : অঙ্গিরা দেবতা : ইন্দ্র, বৃহস্পতি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

বৃহস্পতিঃ পরি পাতু পশ্চাদুতোত্তরম্মাদধরাদঘায়োঃ। ইন্দ্রঃ পুরস্তাদূত মধ্যতো নঃ সখা সখিভ্যো বরীয়ঃ কৃণোত্ ॥ ১৷৷

বঙ্গানুবাদ –বৃহস্পতি (দৈবগণের বৃহৎ পালয়িতা) দেবতা নিম্ন, ঊর্ধ্ব, পশ্চিম ইত্যাদি দিক হতে আক্রমণোদ্যত হিংসক পুরুষগণের নিকট হতে আমাদের সর্বতো রক্ষা করুন। ইন্দ্রদেব পূর্ব ও মধ্য দিক হতে আমাদের রক্ষা করুন। সকল দিক হতে যে হিংসকগণ আগমন করছে, ইন্দ্র ও বৃহস্পতি তাদের হতে আমাদের পালন (বা রক্ষা) করুন। ইন্দ্র তার সখাভূত স্তোতৃগণরূপ আমাদের মহত্তর (উরুতর) ধন (অর্থাৎ অত্যন্ত ঐশ্বর্য) প্রদান করুন ॥১।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –দূতজয়কর্মণি স্থলশুদ্ধিং অক্ষাধিবাসনং চ কৃত্বা যথা বৃক্ষং অশনি ইতি নবর্চেন অক্ষান্ অভিমন্ত্র দূতং কুর্যাৎ। সূত্রিতং হি।…সফলকামঃ বৃহস্পতিঃ ইতি ঋচা বৃহস্পতিং যজেত উপতিষ্ঠেত বা।…তথা গ্রহজ্ঞে অনয়া হবিরাজ্যহোমর্সমিদাধানোপস্থানানি বৃহস্পতয়ে কুর্যাৎ। তদ উক্তং শান্তিকল্পে।…ইত্যাদি। (৭কা. ৪অ. ১২-১৩সূ)। টীকা— দূতজয়কর্মে স্থলশুদ্ধি ও অক্ষাধিবাস করে উপযুক্ত দ্বাদশ. সূক্তের নয়টি মন্ত্রের দ্বারা ই সূত্রোক্তপ্রকারে অক্ষ অভিমন্ত্রিত পূর্বক দূতক্রিয়া করণীয়।..সর্বফলকামনায় বৃহস্পতির্ন ইত্যাদি সূক্তের মন্ত্রটি বৃহস্পতির উদ্দেশে যাগ বা উপাসনায় বিনিয়োগ হয়। গ্রহজ্ঞেও এই মন্ত্রটি শান্তিকল্পানুসারে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে৷ (৭কা. ৪অ. ১২-১৩সূ)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *