1 of 3

০৭।০১ সপ্তম কাণ্ড : প্রথম অনুবাক

অথর্ববেদসংহিতাসপ্তম কাণ্ড
প্রথম অনুবাক
প্রথম
সূক্ত : আত্মা

[ঋষি : অথর্বা (ব্রহ্মবর্চসকামঃ) দেবতা : আত্মা ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, জগতী]

ধীতী বা যে অনয়ন বাচো অগ্রং মনসা বা যেংবদন্তানি। তৃতীয়েন ব্ৰহ্মণা বাবৃধাস্তুরীয়োমশ্বত নাম ধেনোঃ ॥১॥ .. স বেদ পুত্রঃ পিতরং স মাতরং স সূনুর্ভুবৎ স ভুবৎ পুনর্মঘঃ। স দ্যামৌর্ণোদন্তরিক্ষং স্বঃ ইদং বিশ্বমভবৎ স আভবৎ ॥ ২॥

বঙ্গানুবাদ –যাঁরা প্রজাপতি, ইন্দ্র ও অগ্নি দেবতার স্বরূপ বর্ণন পরা ইত্যাদি বাণী বা বচনের দ্বারা করে গিয়েছেন, যাঁরা দ্বিতীয় শব্দ ব্রহ্মের মাধ্যমে দেবতাবাচক শব্দবিচার-বিষয়ক বচন উচ্চারণ করেছেন, যাঁরা তৃতীয় ব্রহ্মের অর্থবিশেষ অধ্যবসায় ও বুদ্ধিযুক্ত মধ্যমাখ্যের মাধ্যমে বর্ধিত করেছেন, যাঁরা শব্দের দ্বারা অব্যক্ত হলেও ব্রহ্মের মাধ্যমে মন্ত্রপ্রতিপাদ্য ধেনুর ন্যায় অভিমত ফলপ্রদ প্রজাপতি নামকে ব্যক্ত করেছেন, তাঁরা আমাদের কামনা পূর্ণ করুন। (বক্তব্য–পরমাত্মনো নানাদেবতানামব্যবহার্যত্বদর্শনাদ অত্র প্রজাপতিশব্দব্যপদেশ্যং ইন্দ্রাগ্নিশব্দব্যদেশ্যং বা তদেব তত্ত্বং সম্যগ অধিগতং সৎ অস্মাকং অভিমতং সাধয়ত্বিতি প্রার্থতে)। ১।

 প্রজাপতি ব্রহ্মা, যাঁকে পরম ব্রহ্ম পরমাত্মা সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেন, তিনি আপন মাতা-পিতা, দ্যুলোক পরমাত্মা এবং পৃথ্বীলোকে ব্যাপ্ত প্রকৃতিকে জ্ঞাত আছেন। সেই ব্রহ্মা সকলকে, সমগ্র জগতকে কর্মর্সাধনের নিমিত্ত প্রেরিত করেছেন এবং পৃথিবী, আকাশ ও অন্তরিক্ষে ব্যাপ্ত হয়ে বিরাজমান আছেন। (মন্ত্রের প্রার্থনা–সোহস্মাকং অভিমতসর্বফলানি সাধয়ত্বিতি প্রার্থতে) ২৷৷

.

দ্বিতীয় সূক্ত : আত্মা

 [ঋষি : অথর্বা (ব্রহ্মবৰ্চসকামঃ) দেবতা : আত্মা ছন্দ : ত্রিষ্টুপ ]

 অথবাণং পিতরং দেববন্ধুং মাতুৰ্গৰ্ভং পিতুরসুং যুবান। য ইমং যজ্ঞং মনসা চিকেত প্র পো বোচস্তমিহেহ ব্ৰবঃ ॥ ১।

বঙ্গানুবাদ –প্রজাপতি, মাতার গর্ভ স্বরূপ, পিতার প্রাণময় বীর্যের স্বরূপ এবং নিত্য তরুণ দেববৃন্দের বন্ধু স্বরূপে পিতার ন্যায় রক্ষক। এই হেন ব্রহ্মাকে যিনি মনের দ্বারা জ্ঞাত হয়ে থাকেন, এমন মহান ব্যক্তি (অর্থবাণ বা অথর্বাত্মক ঋত্বিক-রূপ ব্রহ্মা) আমাদের নিকট অভিলষিত বিষয় বর্ণন করুন। (এখানে মন্ত্রদ্রষ্টা মহর্ষি নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করছেন–য উক্তবিধা প্রজাপতিঃ তং নঃ অস্মদর্থং প্র বোচঃ প্রকর্ষেণ ফ্র হ যষ্টব্যদেবতাস্বরূপং সমগ জ্ঞাত্বা ক্ৰ হ) ॥ ১।

.

তৃতীয় সূক্ত : আত্মা

 [ঋষি : অথর্বা (ব্রহ্মবৰ্চসকামঃ) দেবতা : বায়ু ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

অয়া বিষ্ঠা জনয় কর্বরাণি স হি ঘৃণিরুরুরায় গাতুঃ। স প্রত্যুদৈদ ধরুণং মধ্বে অগ্রং স্বয়া তন্বা তন্বমৈরয়ত ॥ ১।

 বঙ্গানুবাদ –এই প্রজাপতি সকল যজ্ঞ ইত্যাদির অনুষ্ঠানজনিত কর্মফল প্রদান করণশালী, বরণ করার যোগ্য। তিনিই বিরাট বা বিশ্বাত্মা-স্বরূপে সকলের ভিতরে ব্যাপ্ত থেকে যজ্ঞ ইত্যাদি কর্মসাধনের প্রেরণা দিচ্ছেন। (অস্য মন্ত্রস্য অভিনবে রথে জয়কামস্য নৃপতেরাস্থাপনে বিনিয়োগাৎ তৎপরতয়া ব্যাখ্যায়তে। অয়া অয়ং জয়কামো রাজা কর্বরাণি শত্ৰুত্ৰাসনাদীনি কর্মাণি জনয়ন।…)। ১।

.

চতুর্থ সূক্ত : বিশ্বপ্রাণঃ

[ঋষি : অথর্বা (ব্রহ্মবৰ্চসকামঃ) দেবতা : বায়ু ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

একয়া চ দশভিশ্চা সুহুতে দ্বাভ্যামিষ্টয়ে বিংশত্যা চ। তিসৃভিশ্চ বহসে ত্রিংশতা চ বিয়ুগভিবায় ইহ তা বি মুঞ্চ ॥১॥

বঙ্গানুবাদ –হে সকলের প্রেরণাদায়ক, শোভনরীতি অনুসারে আবাহন করার যোগ্য, প্রসিদ্ধ প্রজাপতি বা বায়ুদেব! তুমি কখনও একাদশ বা কখনও তার দ্বিগুণ (দ্বাবিংশ) বা কখনও তার ত্রিগুণ (ত্রয়স্ত্রিংশ) সংখ্যক অশ্ববাহিত রথে আরোহিত হয়ে শীঘ্র আমাদের যজ্ঞস্থলে সসম্মানে উপনীত হও এবং আমাদের মনস্কামনা পূর্ণ করো। যজ্ঞে আগত হয়ে তুমি তোমার রথ হতে অশ্বগুলিকে মুক্ত করে দাও, (অর্থাৎ এই স্থান হতে অন্য কোথাও গমন করো না) ॥১॥

.

পঞ্চম সূক্ত: আত্মা

[ঋষি : অথর্বা (ব্রহ্মবচসকামঃ) দেবতা : আত্মা ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, পংক্তি, অনুষ্টুপ]

যজ্ঞেন যজ্ঞমযজন্ত দেবাস্তানি ধর্মাণি প্রথমান্যাসন। তে হ নাকং মহিমানঃ সচন্ত যত্র পূর্বে সাধ্যাঃ সন্তি দেবাঃ ॥ ১৷৷ যজ্ঞো বভুব স আ বভূব স প্রজজ্ঞে স উ বাবৃধে পুনঃ। স,দেবানামধিপতিবর্ভূব সো অম্মাসু দ্রবিণমা দধাতু ॥ ২॥ যদ দেবা দেবান্ হবিষাযজন্তামান মনসামনে। মদেম তত্র পরমে ব্যোম পশ্যেম তদুদিতৌ সূর্যস্য ॥ ৩৷৷ যৎ পুরুষেণ হবি যজ্ঞং দেবা অতন্বত। অস্তি নু তস্মদোজীয়ো যদ বিহব্যনেজিরে ॥ ৪৷৷ মুগ্ধা দেবা উত শুনাযজন্তোত গোরঙ্গৈঃ পুরুধাযজন্ত। য ইমং যজ্ঞং মনসা চিকেত প্র বোচস্তমিহেহ ব্ৰবঃ ॥ ৫

বঙ্গানুবাদ –যজমানগণ প্রকৃষ্ট কর্মের দ্বারা যে দেবত্বকে লাভ করেছিলেন, তারা প্রথমে জ্ঞানযজ্ঞের দ্বারা যজ্ঞরূপ ভগবান বিষ্ণুর পূজা করেছিলেন। এই মহত্বপূর্ণ কার্য সম্পন্ন করায় তারা সুখপূর্ণ স্বর্গলোককে লাভ করেন, যেস্থানে প্রথম হতেই সাধন-সম্পন্ন দেবতাগণ অবস্থান করে থাকেন ॥১॥

 যজ্ঞ জাত হয়েছে, বিস্তার লাভ করেছে। তা বিশেষ জ্ঞানের সাধন সৃষ্টি করেছে এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে দেবতাগণের স্বামী (বা পালক) হয়ে গিয়েছে। সেই যজ্ঞ আমাদের ধন প্রাপ্ত করাক (বা অভিমত ফল প্রদান করুক) ২

কর্মের দ্বারা দেবত্বপ্রাপ্ত যজমানগণ ইন্দ্র ইত্যাদি অমর দেবগণকে আপন হবিরূপ মনের দ্বারা নিত্য যজন করে থাকেন। এই রকমে আপন আত্মায় পরমাত্মারূপী সূর্যের উদয় হওয়ার পর তা নিত্য প্রকাশপ্রাপ্ত হতে থাকে, (অর্থাৎ চিরকাল পুণ্যফল অনুভব করতে থাকেন) ॥ ৩৷

 সেটি কোন্ বিশেষ সাধন যা দেবতাগণকে আপন হবিষ্য রূপ মনের যজনের দ্বারাও মহান্ হতে পারে? অর্থাৎ সেই-ই জ্ঞানযজ্ঞ, যা সর্বশ্রেষ্ঠ। (মর্মার্থ–পুরুষমেধাখ্য মহাক্ৰতোরপি সর্বাত্মকব্রহ্মস্বরূপাবাপ্তিফলপ্রাপকো জ্ঞানযজ্ঞঃ শ্রেয়াণ ইত্যনয়া অভিধীয়তে। আরও প্রাঞ্জল করে বলতে গেলে বলা যায়–সর্ব যজ্ঞের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রূপে পরিগণিত পুরুষমেধ কিংবা অশ্বমেধ, বাজপেয়, রাজসূয় ইত্যাদি বাহ্যিক আড়ম্বর ও উপকরণ সমন্বিত প্রসিদ্ধ সকল যজ্ঞ অপেক্ষাও এই স্থলে জ্ঞানযজ্ঞের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্ন করা হয়েছে। আপন আত্মায় ঈশ্বরের পূর্ণ অধিষ্ঠানের উপলব্ধিই জ্ঞানযজ্ঞ। ৪৷৷

অবিবেকশীল, মূর্খ যজমান কুকুর ও গো ইত্যাদি পশুসমূহের অঙ্গের দ্বারাও যজন করে থাকে–এটি নিশ্চিতভাবেই মূর্খতাপূর্ণ ও নিন্দনীয় ব্যাপার। কিন্তু যিনি নিজের দ্বারা আত্মযজ্ঞ করণশালী মহাপুরুষ, তাঁর সম্পর্কে আমাদের নিকট বর্ণন করুন। তিনিই পরমাত্মার স্বরূপ সম্পর্কে উপদেশ করার যোগ্য হতে সমর্থ ॥ ৫৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অত্র ধীতি বা যে ইতি প্রথমে সূক্তে আদ্যাভ্যাং দ্বাভ্যাং ঋভ্যাং। অর্থোত্থাপনবিঘুশমনকর্মণি আজ্যসমিৎপুরোশাদিশম্বুল্যন্তানাং ত্রয়োদশানাং দ্রব্যাণাং অন্যতমং জুহুয়াৎ জপে বা তদ উক্তং সংহিতাবিধৌ।…অথবাণং পিতরং ইত্যষ্টৰ্চেন সর্বফলকামো অথবাণং যজত উপতিষ্ঠতে বা…অয়া বিষ্ঠা ইতি ঘঁচেন নবং রথং অভিমন্ত্র জয়কামং রাজানং আরোহয়েৎ। সূত্রিতং হি।..একয়া চ ইত্যনয়া অশ্বশান্তৌ সবৌষধিচূর্ণং অশ্বস্য মূর্ধি প্রকিরেৎ।…যজ্ঞেন ইত্যনয়া সোমযাগে আতিথ্যেষ্টৌ হবিব্রহ্মাভিমৃশেৎ।…ইত্যাদি। (৭কা, ১অ. ১-৫সূ)।

টীকা— উপযুক্ত প্রথম সূক্তের দ্বারা অর্থেত্থাপন বিঘ্নবিনাশকর্মে সূত্রানুসারে আজ্য-মমিৎ ইত্যাদি ও ত্রয়োদশটি দ্রব্যের যে কোনটির দ্বারা যজ্ঞ বা জপ করণীয়। দ্বিতীয় সূক্তের দ্বারা সফলকামনায় সূত্রানুসারে যজন করণীয়। তৃতীয় সূক্তের মন্ত্রগুলির দ্বারা সূত্রোক্তপ্রকারে নবরথ অভিমন্ত্রিত করে জয়কামী রাজাকে সেই রথে আরোহণ করাতে হবে। চতুর্থ সূক্তের মন্ত্রগুলি অশ্বশান্তির নিমিত্ত সূত্রের উল্লেখ মতো সবৌষধির চূর্ণ অশ্বের মস্তকে প্ৰকীর্ণ করণীয়। পঞ্চম সূক্তটির মন্ত্রগুলি সোমযাগে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। এই প্রসঙ্গে বলা হয়েছে–আতিথ্যায়াং হবিরভিশতি যজ্ঞেন যজ্ঞং ইতি হি বৈতানং সূত্রং। (বৈ. ৩/৩)। (৭কা. ১অ. ১-৫সূ.)।

.

ষষ্ঠ সূক্ত : অদিতিঃ

[ঋষি; অথর্বা (ব্রহ্মবৰ্চসকামঃ) দেবতা : অদিতি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, জগতী ]

অদিতিদৌরদিতিরন্তরিক্ষমদিতির্মাতা স পিতা স পুত্রঃ। বিশ্বে দেবা অদিতিঃ পঞ্চ জনা অদিতিৰ্জামদিতির্জনিম্ ॥১॥ মহীমু ষু মাতরং সুব্রতানামৃতস্য পত্নীমবসে হবামহে। তুবিক্ষত্ৰামজরন্তীমুরুচীং সুশর্মাণমদিতিং সুপ্রণীতিম্ ॥২॥ সুত্ৰামাণং পৃথিবীং দ্যামনেহসং সুশর্মাণমদিতিং সুপ্রণীতি। দৈবীং নাবং স্বরিত্রামনাগসো অস্রবন্তীমা রুহেমা স্বস্তয়ে ॥৩॥ বাজস্য নু প্রসবে মাতরং মহীমদিতিং নাম বচসা করামহে। যস্যা উপস্থ উর্বন্তরিক্ষং সা নঃ শৰ্ম ত্রিবরূথং নি যচ্ছাৎ ॥৪॥

বঙ্গানুবাদ –এই দেবমাতা অদিতি বা অখণ্ডনীয়া পৃথিবীই স্বর্গ, ইনিই অন্তরিক্ষ; ইনিই সর্ব জগতের প্রসবিত্রী, ইনিই উৎপাদক পিতা এবং ইনিই উৎপন্ন পুত্র। ইনিই সকল দেব এবং ইনিই নিষাদ ইত্যাদি বা গন্ধর্ব ইত্যাদি সহ মনুষ্য। যা কিছু উৎপন্ন হয়েছে, উৎপন্ন হচ্ছে এবং উৎপন্ন হবে, সে সবই এই অদিতি পৃথিবীই ॥১॥

শুভ কার্যকরণশীলগণের পক্ষে হিতকারিণী, বহু রকমের ক্ষাত্র তেজঃযুক্তা, সত্যের পালনকারিণী, অবিনাশিনী, বিশালা, সুখদাত্রী, অন্নপ্রদান-করণশালিনী দেবমাতা (পৃথিবী)-কে আমরা রক্ষাপ্রাপ্তির নিমিত্ত আবাহন করছি। ২।

 সুষ্ঠুভাবে রক্ষাকরণশালিনী, পৃথিবীর উপর সুখদানশালিনী, কুশল-রক্ষণশালিনী, ছেদ-রহিতা সুদৃঢ় নৌকায় আরোহিতের ন্যায় সেই অদিতিরূপা মাতার শরণে আমরা নিরপরাধ জনগণ গমন করছি। ৩

অন্নের উৎপত্তির নিমিত্ত, সেই পৃথিবী মাতার অথবা মাতৃভূমির আমরা গুণগান করছি, যাঁর সমীপেই বিস্তীর্ণ রয়েছে। আকাশ। সেই পৃথিবী মাতা আমাদের ত্রিভূমিক বা ত্রিকক্ষ বিশিষ্ট গৃহ প্রদান করুন (অথবা, আমাদের তিনগুণ বেশী বা ত্রিগুণা সুখ প্রদান করুন) ৪

.

সপ্তম সূক্ত : অদিত্যাঃ

[ঋষি : অথর্বা (ব্রহ্মবৰ্চসকামঃ) দেবতা : অদিতি ছন্দ : জগতী ]

 দিতেঃ পুত্ৰাণামদিতেরকারিশমব দেবানাং বৃহতামনৰ্মণাম। তেষাং হি ধাম গভিষ সমুদ্রিয়ং নৈনা নমসা পরো অস্তি কশ্চন ॥১॥

বঙ্গানুবাদ –দিতি-পুত্ৰ দৈত্যগণ গম্ভীর সমুদ্রে অবস্থান করে, তাদের সেই স্থান হতে বিতাড়িত করে অদিতি-পুত্র গুণশীল দেবতাগণকে তার অধিকার প্রদান করছি, কারণ এঁদের আবশ্যকতা অধিক এবং এঁরাই অধিক যোগ্য। (অর্থাৎ যজ্ঞের যোগ্য দেবতাগণের আরাধনার মাধ্যমে আমরা আমাদের অভিলাষ সিদ্ধির আকাঙ্ক্ষা করছি) ॥ ১।

.

অষ্টম সূক্ত : শত্রুনাশনম্

 [ঋষি : উপরিবভ্রব দেবতা : বৃহস্পতি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ ]

ভদ্ৰাদধি শ্রেয়ঃ প্রেহি বৃহস্পতিঃ পুরএ তে অস্তু। অথেমমস্যা বর আ পৃথিব্যা আরেহশত্ৰুং কৃণুহি সর্ববীরম্ ॥১॥

 বঙ্গানুবাদ— বস্ত্র, ধন ইত্যাদি ভৌতিক সুখকামনাশীল হে পুরুষ! তুমি দেশান্তরে গমন পূর্বক কল্যাণ প্রাপ্তির নিমিত্ত প্রযত্নশীল হও। এই পথে চলার কালে দেবগুরু মহান জ্ঞানী বৃহস্পতি তোমাকে পথ-প্রদর্শন করাবেন। হে বৃহস্পতি! তুমি অগ্রগামী হয়ে এই সুখলাভকামী পুরুষকে লাভজনক উৎকৃষ্ট স্থান প্রাপ্ত করাও। এই পৃথিবীতে স্থিত এর সকল শত্রুদের দুর করো ॥ ১৷৷

.

নবম সূক্ত : স্বস্তিদা পূষা

[ঋষি : উপরিবভ্ৰব দেবতা : পূষা ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, গায়ত্রী, অনুষ্টুপ ]

প্রপথে পথামজনিষ্ট পূষা প্রপথে দিবঃ প্রপথে পৃথিব্যাঃ। উভে অভি প্রিয়তমে সধস্থে আ চ পরা চ চরতি প্রজান ॥১৷৷ পূষেমা আশা অনু বেদ সর্বাঃ সো অশ্ম অভয়তমেন নেষৎ। স্বস্তিদা আঘৃণিঃ সর্ববীয়োহপ্রযুচ্ছ পুর এতু প্রজান ॥২॥ পূষ তব ব্রতে বয়ং ন রিষ্যেম কদাচন। স্তোতারস্ত ইহ স্মসি ॥৩॥ পরি পূষা পরস্তাদ্ধস্তং দধাতু দক্ষিণম্। পুননো নষ্টমাজতু সং নষ্টেন গমেমহি ॥৪॥

 বঙ্গানুবাদ –পোষক পূষা দেবতা, স্বর্গ, অন্তরিক্ষ ও পৃথিবীর সকল মার্গে প্রকট হয়ে থাকেন। এই পূষা দেবতা পৃথিবী ও স্বর্গ, দুই প্রিয় স্থানে প্রাণীগণের নিমিত্ত কর্মের সাক্ষী হয়ে গমনাগমন করে থাকেন। ১।

এই পোষণকর্তা পূষা দেবতা, এই সকল দিমূহকে যথাযথ জ্ঞাত আছেন। তিনি আমাদের পরম নির্ভয় পথ (বা স্থান) প্রদর্শন করুন। কল্যাণকারী, তেজস্বী, বলবান, সর্বদা অপ্রমাদী সূর্য (বা পূষা) দেবতা আমাদের মার্গ দর্শন করিয়ে উন্নতি পথ প্রশস্ত করুন। ২।

হে পোষক পূষা দেবতা! আমরা তোমার ব্রতের (বা যাগানুষ্ঠান কর্মের) নিষ্ঠা থেকে কখনও যেন বিনষ্ট না হই। সদা ধন, পুত্র, মিত্র ইত্যাদির দ্বারা সমৃদ্ধ হয়ে থাকি। আমরা তোমার ব্রত গ্রহণ পূর্বক সদা তোমার স্তুতি করতে থাকবো ৷ ৩৷৷

 হে পোষক পূষা দেবতা! এই জগৎসংসারে যে স্থানেই আমাদের যোগ্য ধন আছে, সেগুলি আনয়ন পূর্বক আমাদের প্রদান করো এবং আমাদের সহায়তা করো। আমাদের নষ্ট হওয়া সামগ্রী (বা ধন) পুনরায় যেন আমরা প্রাপ্ত হই এবং আমরা সেগুলিকে উপভোগ করি–তুমি এমনই কৃপা করো। ৪

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অদিতিৰ্দেীরদিতি ইতি ষষ্ঠং সূক্তং। তত্র আদ্যাভিশ্চসৃভিঃ সফলকামঃ অদিতিং যজতে উপতিষ্ঠতে বা।…সফলকামমা দিতেঃ পুত্ৰাণাং ইতি দেবু যজতে উপতিষ্ঠতে বা।…তথা গ্ৰহযজ্ঞে ভদ্রাদধি ইত্যনয়া হবিরাজ্যসমিদাধানোপস্থানানি বৃহস্পতয়ে কুর্যাৎ। তৎ উক্তং শান্তিকল্পে।…প্রপথে পথাং ইতি চতুঋচেন নষ্টদ্রব্যলাভার্থং নষ্টদ্রব্যাকাঙ্ক্ষিণাং দক্ষিণং পাণিং উজ্য সম্পাত্য বিমৃজ্য বা উত্থাপয়েৎ। তথা তত্রৈব কর্মণি অনেন চতুঋচেন একবিংশতিশর্করা অভিমন্ত্র চতুষ্পথে নিধায় বিকিরেৎ। সূত্রিতং হি।…ইত্যাদি। (৭কা, ১অ. ৬-৯সূ)।

টীকা –অদিতিদ্যোরদিতি ইত্যাদি সূত্রের মন্ত্র চারটির দ্বারা সকল প্রকারের সাফল্য লাভের কামনায় অদিতির উদ্দেশে যাগ বা উপাসনা কর্তব্য। দূরদেশে নৌ-যোগে গমনকালে স্বস্ত্যয়ন-কামনায় এই মন্ত্রের দ্বারা নৌকা ইত্যাদি অভিমন্ত্ৰণীয়। ঐ একই রকমে সপ্তম সূক্তটিরও বিনিয়োগ হয়ে থাকে। এই সূক্তের মন্ত্রটি দেবযাগে বিনিয়োগ হওয়ার কারণে দেবপ্রশংসা বিধৃত হয়েছে। কশ্যপের ঔরসে অদিতির গর্ভে দেবতাদের জন্ম। দেবতাগণ সম্যক ধার্মিক বা সত্যানুসারী। কিন্তু ঐ কশ্যপেরই ঔরসে দিতির গর্ভজাত দৈত্যগণ ঠিক তার বিপরীত। ভদ্ৰাদধি ইত্যাদি সূক্তটি গ্রহজ্ঞে বৃহস্পতির উদ্দেশে হবিঃ বা আজ্য, সমিৎ ইত্যাদির দ্বারা হোম বা জপ করণীয়। প্রপথে পথাং ইত্যাদি সূক্তটি নষ্টদ্রব্যলাভার্থে বিনিযুক্ত হয়। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখনীয় উপযুক্ত ষষ্ঠ সূক্তের তৃতীয় মন্ত্রে নৌ শব্দের কৃষ্ণাজিন অর্থে ব্যাখ্যা আছে; কারণ অস্য মন্ত্রস্য দীক্ষায়াং কৃষ্ণাজিনাদিরূঢ়েন যজমানেন জপ্যতাৎ নৌশব্দেন কৃষ্ণাজিনং বিবক্ষ্যতে। আবার এর পরবর্তী বাজস্য নু। প্রসবে মন্ত্রটিতে অন্নের নির্মাত্রী হিসাবে অদিতির উল্লেখ থাকায় সেখানে অদিতির স্তুতির পরোক্ষে নৌকার স্তুতির ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। কারণ অদিতিং নাবং বা অন্নপ্রসবার্থং স্তুম ইত্যর্থঃ ॥ (৭কা, ১অ. ৬-৯সূ)।

.

দশম সূক্ত : সরস্বতী

[ঋষি : শৌনক দেবতা : সরস্বতী ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

 যস্তে স্তনঃ শশয়ুর্যো ময়োভূর্যঃ সুময়ুঃ সুহবো যঃ সুদত্রঃ। যেন বিশ্বা পুষ্যসি বার্যাণি সরস্বতি তমিহ ধাতবে কঃ ॥১॥

 বঙ্গানুবাদ— হে সরস্বতী দেবি! তোমার যে স্তন শিশুর পোষক (অর্থাৎ অনুপাসক বা দোষাবহ মনঃসম্পন্নদের নিকট অপ্রকাশিতব্য), শান্তিদায়ক, সুখদাতা, পবিত্র মনঃসম্পন্নদের দানশীল, পুষ্টিকারক ও প্রার্থনীয়, তা এই জম্ভগৃহীত (অর্থাৎ তন্দ্রালু বা কলুষমুক্ত) বালকের (বা আমাদের) প্রাপ্তিযোগ্য করে দাও। ১।

.

একাদশ সূক্ত : সরস্বতী

[ঋষি : শৌনক দেবতা : পর্জন্য ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

 যস্তে পৃথু শুনয়িতুর্য ঋঘো দৈবঃ কেতুর্বিশ্বমাভূষতীদ। মা নো বধীর্বিদ্যুতা দেব সস্যং মোত বধী রশ্মিভিঃ সূর্যস্য ॥১॥

বঙ্গানুবাদ –হে দ্যোতনশীল দেব পর্জন্য! তোমার বিস্তৃত, গর্জন-করণশালী, সমগ্র বিশ্বে পরিব্যাপ্ত, পতাকার ন্যায় চলমান (বা উড্ডীয়মান), জগৎসংসারকে বিভূষিত করণশালী বিদ্যুতের দ্বারা আমাদের ধান্য ইত্যাদি শস্য যেন বিনষ্ট না হয়; এর জন্য আমাদের অর্থাৎ প্ৰজাজনগণের যেন কোন কষ্ট না হয়। সূর্যদেবের প্রচণ্ড কিরণের দ্বারাও শস্যক্ষেত্রের ধান্যসমূহের যেন কোন হানি না হয়, এমনই কৃপা করো। আমরা এই প্রার্থনাই করছি ॥১॥

.

দ্বাদশ সূক্ত : রাষ্ট্রসভা

 [ঋষি : শৌনক দেবতা : সভা, পিতৃপুরুষ, ইন্দ্র, মন ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ]

সভা চ মা সমিতিশাবতাং প্রজাপতেÉহিতরে সংবিদানে। যেনা সংগচ্ছা উপ মা স শিক্ষাচ্চারু বদানি পিতরঃ সংগতেষু ॥১ বিদ্ম তে সভে নাম নরিষ্টা নম বা অসি। যে তে কে চ সভাসদস্তে মে সন্তু সবাচসঃ ॥২॥ এষামহং সমাসীনানাং বর্চো বিজ্ঞানমা দে। অস্যাঃ সর্বস্যাঃ সংসদো মামিন্দ্র ভগিনং কৃণু ॥৩॥ যদ বো মনঃ পরাগতং যদ বদ্ধমিহ বেই বা। তদ ব আ বর্তয়ামসি ময়ি বো রমং মনঃ ॥৪॥

বঙ্গানুবাদ –সভা ও সমিতিসমূহ প্রজাপতি রাজার নিমিত্ত পুত্রীর ন্যায় পোষণ করার যোগ্য হয়ে থাকে। এই উভয়ে মিলিত হয়ে (আমা হেন) রাজাকে রক্ষা করুক। রাজা যার সাথে মিলিত হন, তিনি তাকে উচিত পরামর্শ দিয়ে থাকেন। হে পিতৃগণ! আমাকে এমনই সৎ-বুদ্ধি প্রদান করুন যে, আমি যেন সভায় বিবেকসম্পন্ন হয়ে এবং নম্রতাপূর্বক আচরণ করি। (অর্থাৎ আমি যেন। ন্যায়ানুগত যথাযথ উত্তর দিতে সমর্থ হই) ॥১॥

হে সভা! আমি তোমার নাম জ্ঞাত আছি। তোমার নরিষ্টা নাম ঠিকই প্রসিদ্ধ আছে। (বহুজন কর্তৃক যদি একটি বাক্য বা বিষয় স্বীকৃত বা কথিত হয়, তাহলে তা অপরে লঙ্ঘন করতে না পারার নিমিত্তই সভা নরিষ্টা নামে প্রসিদ্ধ)। হে সভা! তোমার যে কেউই সদস্য হোক না কেন, তারা সকলেই আমার সাথে সমতাপূর্ণ (অনুকূল) ভাষণ করণশীল হোক ॥ ২।

 এই সকল উপবেশকারী সভাসদবৃন্দের নিকট হতে রাজ্যশাসন-সম্বন্ধী বিশেষ জ্ঞানের তেজকে আমি গ্রহণ করছি। (অথবা এই সভায় উপবিষ্ট প্রতিবাদীগণের তেজঃ ও বেদার্থবিষয়ক জ্ঞান আমি অপহরণ করে নিচ্ছি)। ইন্দ্রদেব আমাদের এই সকল সভায় জয়ভাগী করুন। ৩।

হে সভাসদবৃন্দ! তোমাদের যে মন আমাদের দিক হতে অপসারিত হয়ে অন্যত্র অন্যান্য বিষয়ে সংযুক্ত হয়ে গিয়েছে, সেই মনকে আমরা আমাদের দিকে আকর্ষিত করছি। এইক্ষণে তোমরা সকলে আমাদের বক্তব্য শ্রবণ করো এবং তার উপর বিচার করো। ৪

.

ত্রয়োদশ সূক্ত : শত্রুনাশনম

[ঋষি : অথর্বা (দ্বিষো বর্চোহর্তুকাম) দেবতা : সূর্য ছন্দ : অনুষ্টুপ]

যথা সূর্যো নক্ষত্রাণামুদ্যংস্তেজাংস্যাদদে। এবা স্ত্রীণাং চ পুংসাং চ দ্বিষং বর্চ আ ঈদে ॥১॥ যাবন্তো মা সপত্ননামায়ন্তং প্রতিপশ্যথ। উদ্যন্তসূর্য ইব সুপ্তানাং দ্বিষতাং বৰ্চ আদদে ॥২৷৷

বঙ্গানুবাদ –যে প্রকারে সূর্য উদিত হয়ে তারকাসমূহের দীপ্তিকে ক্ষীণ করে দেয় এবং আপন আলোকের মধ্যে লীন করে নেয়, তেমনই আমি আমার প্রতি বিদ্বেষপরায়ণ স্ত্রী-পুরুষবর্গের তেজঃসমূহ হরণ করে নিচ্ছি ॥১॥

 শত্রুদের মধ্যে যে পরিমাণ শত্রু যুদ্ধে আগমন করে আমাদের প্রতিকূলরূপে নিরীক্ষণ করে, তাদের পরাক্রমরূপ তেজঃ আমি অপহরণ করে নিচ্ছি; যেমনভাবে সূর্য উদয়কালে সুসুপ্ত অসাবধান জনগণের পরাক্রম অপহরণ করে থাকে। (সূর্যস্যোদয়ে অস্তময়ে বা স্বপতাং পুরুষাণাং বৰ্চসঃ সূর্যেণ অপহৃতত্বাং তৎসমাধানায় আপস্তম্বেন প্রায়শ্চিত্তরূপাণি কর্মাণি রে বিহিতানি। উদয় মুহূর্তে বা অস্তগমনকালে সূর্য কর্তৃক সুপ্ত পুরুষের তেজঃ অপহৃত হয় বলেই তার সামাধানকল্পে আপস্তম্বের দ্বারা প্রায়শ্চিত্তরূপ বিধান আছে)। ২।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ — জম্ভগৃহীতবালকভৈষজ্যার্থং যস্তে স্তনঃ ইত্যনয়া স্তনং অভিমন্যু বালং পায়য়েৎ। তথা তত্রৈব কর্মণি প্রিয়ঙ্গুতণ্ডুলানাং উপরি ক্ষীরং দুগ্ধা অনয়া ঋচা অভিমন্ত্র ব্যাধিতং পায়য়েৎ। সূত্রিতং হ…তাশনিনিবারণকর্মণি যস্তে পৃথু স্তনয়িতুঃ ইতি ঋচা অশনিং উপতিষ্ঠেত।… সভা চ মা ইতি চতুঋচেন সভাজয়কর্মণি ক্ষীরৌদনং পুরোশং রসা বা সম্পত্য অভিমন্যু অশ্নীয়াৎ। …অভিচার কর্মণি যথা সূর্যো নক্ষত্রাণাং ইতি ঘৃচং শত্ৰুং দৃষ্ট্র জপেৎ। তত্রৈব কর্মণি যাবন্তো মা, সপত্নানাং ইতি জপিত্বা শন্ নিরীক্ষতে।..ইত্যাদি। (৭কা, ১অ. ১০-১৩)।

টীকা –উপযুক্ত দশম সূক্তের মন্ত্রের দ্বারা জম্ভগৃহীত বালকের ভৈষজ্যার্থে মাতার স্তন্য অভিমন্ত্রিত পূর্বক সূত্রোক্তপ্রকারে পান করানো কর্তব্য।..ইত্যাদি। একাদশ সূক্তটি অশনিনিবারণকর্মে বিনিয়োগ করণীয়। দ্বাদশ সূক্তটি সভাজয়কর্মে সূত্রোক্তপ্রকারে অভিমন্ত্রণপূর্বক বিনিয়োগ করণীয়। ত্রয়োদশ সূক্তের দুটি মন্ত্রই অভিচার কর্মে সূত্রোক্তপ্রকারে বিনিয়োগকালে শত্রু দর্শন মাত্রই জপনীয়। বিশেষতঃ দ্বিতীয় মন্ত্রটি জপতে জপতে শত্রুকে নিরীক্ষণ করণীয়। (৭কা, ১অ. ১০-১৩সূ.)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *