হাবিবুর রহমান সাহেবের ব্রেইন যে একেবারেই কাজ করছে না তা তার চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে। চোখের দৃষ্টি এলোমেলো। তিনি স্থির হয়ে তাকাতে পারছেন না। মানুষের মন যেমন ছটফট করে, চোখও করে। মনের ছটফটানি ধরার কোনো উপায় নেই। চোখেরটা ধরা যায়।
আমি বললাম, কেমন আছেন?
হাবিবুর রহমান চমকে উঠলেন। তার ভাব দেখে মনে হবে। আশেপাশে কোথাও ককটেল ফুটেছে। তিনি বললেন, কিছু বলেছেন?
আমি বললাম, চমকে উঠার মতো কিছু বলি নি। জানতে চাচ্ছিলাম কেমন আছেন?
ভালো।
আপনার কি শরীর খারাপ না-কি?
জানি না।
কোনো কারণে কি মন অশান্ত?
জি-না, আমি ভালো আছি।
বলেই তিনি পুরোপুরি ঝিম মেরে গেলেন। এতক্ষণ তিনি চাঃেখের দৃষ্টি স্থির করতে পারছিলেন না। এখন তাঁর দৃষ্টি স্থির হয়ে গেল। তাঁকে এখন দেখাচ্ছে ধ্যানমগ্ন মানুষের মতো। আমি বললাম, রাশিদুল করিম নামের হারামজাদাটার সঙ্গে দেখা হয়েছিল?
হাবিবুর রহমান হতভম্ব গলায় বললেন, কীভাবে বুঝলেন?
আপনি থ মেরে গেছেন। সেখান থেকে অনুমান করছি। দুয়ে দুয়ে চার মেলাচ্ছি।
হাবিবুর রহমান বললেন, কুত্তাটার সাহস দেখে অবাক হয়েছি। বাসায় চলে এসেছে। আমার সঙ্গে দেখা করার জন্যে। সুটি টাই মচমচা জুতা। সেন্ট মেখেছে। গা দিয়ে। ভুরিভুর করে গন্ধ বের হচ্ছিল। পাছায় লাথি দিয়ে বের করে দিতে চেয়েছিলাম।
দিলেন না কেন?
এখন তাই চিন্তা করছি। কেন দিলাম না! মানুষ কুকুরের গায়ে গরম মাড় ঢেলে দেয়। আমার উচিত ছিল কুকুরটার গায়ে গরম মাড় ঢেলে দেয়া। আফসোস হচ্ছে কেন মাড় ঢেলে দিলাম না!
ঘরে বোধহয় মাড় ছিল না।
হাবিবুর রহমান অবাক হয়ে বললেন, ঠাট্টা করছেন? আমার এই অবস্থায় আপনি ঠাট্টা করতে পারছেন। আপনি এতটা হাটলেস?
আমি বললাম, আপনার কাছে এসেছিল কী জন্যে? সে কী চায়?
হাবিবুর রহমান থমথমে গলায় বললেন, মহৎ সাজতে চায়। ফরিদার চিকিৎসার যাবতীয় খরচ দিতে চায়। শুয়োরটার সাহস কতা! বলে কী প্রয়োজনে সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক নিয়ে যাব। আরে কুত্তা, তোর সিঙ্গাপুর-ব্যাংকককে আমি পেসাব করে দেই।
বলেছেন এই কথা?
না। বলা উচিত ছিল। যা যা করা উচিত ছিল তার কিছুই আমি করি নি। এখন রাগে আমার ইচ্ছা করছে নিজের হাত নিজে কামড়াই। গতকাল রাতে আমি এক ফোঁটা ঘুমোতে পারি নাই। দুটা ফ্রিজিয়াম খেয়েছি, তারপরেও ঘুম আসে না। হিমু ভাই, আপনি শুনলে বিশ্বাস করবেন না। আমি উল্টা ঐ কুত্তাটার সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলেছি।
চা বানিয়েও তো খাইয়েছেন।
আপনাকে কে বলল?
আমি অনুমান করছি।
হ্যাঁ, কুত্তাটাকে চা বানিয়ে খাইয়েছি। কুত্তাটা আমার সামনে বসে চুকচুক করে চা
খেয়েছে।
শুধু চা? নাকি চানাচুর-টানাচুর কিছু ছিল?
শুধু চা।
চিকিৎসার ব্যাপারে কী বলেছেন?
বলেছি আমি আমার যা সাধ্য করব। কারোর কোনো দান নেব না।
এইটুকুই বলেছেন? আর কিছু বলেন নি?
না, এইটুকুই বলেছি। তবে শক্তভাবে বলেছি। আমার বলার মধ্যে কোনো ধানাইপানাই ছিল না। ভালো বলছি না?
অবশ্যই ভালো বলেছেন। তবে এই সঙ্গে আরো দুএকটা কথা যুক্ত করে দিলে আরো বালো হতো।
কী কথা?
আপনার বলা উচিত ছিল–এই কুত্তা, তুই খবরদার আমার স্ত্রীকে দেখতে যাবি না। আমার স্ত্রী তোর লাইলী না। আর তুইও মজনু না। তোকে যদি হাসপাতালের ত্ৰিসীমানায় দেখি তোর ঠ্যাং ভেঙে দেব। টান দিয়ে তোর বাঁকা ল্যাজ সোজা করে দেব। বাকি জীবন সোজা লেজ নিয়ে হাটবি। কুকুর সমাজে আর মুখ দেখাতে পারবি না।
হাবিবুর রহমান আহত গলায় বললেন, হিমু ভাই, আপনি তো হৃদয়হীন একজন মানুষ। আমার এমন অবস্থায় আপনি আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করছেন?
ঠাট্টা করছি কেন বলছেন?
অবশ্যই ঠাট্টা করছেন। আপনি বলছেন টেনে লেজ সোজা করে দেবেন। সোজা লেজ নিয়ে সে কুকুর সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না। এগুলো ঠাট্টার কথা না? আপনি আমার মনের অবস্থা বুঝতে পারছেন না। বুঝতে পারলে রসিকতা করতেন না।
মনের অবস্থা কি খুবই খারাপ?
আমি চার পাতা ফ্রিজিয়াম কিনেছি। এক এক পাতায় আটটা করে মোট বত্ৰিশটা ফ্রিজিয়াম। কাল রাতে ভেবেছিলাম। সবগুলো খাব।
খেলেন না কেন?
ইমরুল আমার সঙ্গে থাকে। সে ভোরবেলা জেগে উঠে দেখবে একটা মারা মানুষকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। প্ৰচণ্ড ভয় পাবে এই জন্যে খাই নি।
আমি সহজ ভঙ্গিতে বললাম, আজ রাতে যদি এ ধরনের পরিকল্পনা থাকে তাহলে আমি বরং ইমরুলকে নিয়ে যাই।
হাবিবুর রহমান জবাব দিলেন না। মানসিক রোগীদের মতো অস্থির চোখে তাকিয়ে রইলেন। আমি বললাম, ইমরুলকে নিয়ে যােব কি-না বলুন। বত্ৰিশটা ট্যাবলেটের ভেতরে দুটা মাত্র খেয়েছেন। আরো ত্ৰিশটা আছে। এই ত্ৰিশটায় কাজ হয়ে যাবার কথা।
আপনি আমাকে ঘুমের ওষুধ খেতে বলছেন?
হুঁ।
কেন বলছেন? যাতে আমার মৃত্যুর পর ঐ কুত্তাটা ফরিদাকে বিয়ে করে সুখে ঘর-সংসার করতে পারে।
সেই সম্ভাবনা যে একেবারেই নেই তা-না। আপনার তো আপনার স্ত্রীর জন্যে কোনো প্ৰেম নেই। ঐ ভদ্রলোকের আছে। সবাই চায় প্রেমের জয় হোক।
আমার স্ত্রীর প্রতি আমার কোনো প্ৰেম নেই?
না।
কী করে বুঝলেন? আমার কপালে লেখা আছে?
কপালে লেখা থাকে না। প্ৰেম আছে কি নেই তা লেখা থাকে চোখে। আপনার দুটা চোখেই লেখা–প্ৰেম নেই।
আপনি কি চোখের ডাক্তার?
চোখের ডাক্তার চোখের লেখা পড়তে পারে না।
হাবিবুর রহমান ক্ষিপ্ত গলায় বললেন, আপনি মহা তালেবার। আপনি চোখের লেখা পড়তে শিখে গেছেন?
তা শিখেছি। অবশ্যি চোখের লেখা যে পড়তে পারে না তার পক্ষেও বলা সম্ভব যে আপনার মধ্যে আপনার স্ত্রীর প্রতি কোনো প্ৰেম নেই।
তাই?
জি। প্ৰেম থাকলে আপনার একমাত্ৰ চিন্তা থাকত আপনার স্ত্রীর জীবন রক্ষা করা। তার চিকিৎসার টাকা কে দিল সেটা হতো তুচ্ছ ব্যাপার। রশীদ সাহেবের টাকা নিতে আপনার অহঙ্কারে বাঁধছে। প্রেমিকের কোনো অহঙ্কার থাকে না।
যথেষ্ট বকবক করেছেন। দয়া করে মুখ বন্ধ করুন।
জি আচ্ছা। মুখ বন্ধ করলাম।
আমার সামনে বসে থাকবেন না। এই মুহুর্তে বের হয়ে যান।
যাচ্ছি।
Go to hell.
মৃত্যুর পর চেষ্টা করে দেখব–Hell এ যেতে পারি কি-না। আপাতত গুলিস্তানের দিকে যাই। ভালো কথা ইমরুলকে সঙ্গে করে নিয়ে যাই। আজ রাতে যদি ঘুমের ওষুধ ইস্তেমাল করতে চান তাহলে আপনার সুবিধা হবে। পথ খোলা থাকল।
আর কোনো কথা না। অনেক কথা বলে ফেলেছেন।
আমি বললাম, শেষ কথা বলে যাই, উত্তেজিত অবস্থায় ঘুমের ওষুধ খাবেন না। বমি হয়ে যাবে। খালি পেটেও খাবেন না। খালি পেটে ঘুমের ওষুধ খেলেও বমি হয়। হালকা ম্যাকস জাতীয় কিছু খেয়ে নেবেন। সব ট্যাবলেট খাওয়ার পর গরম কফি খেতে পারেন। এতে Action ভালো হয়।
Get Out
আমি ইমরুলকে নিয়ে গেট আউট হয়ে গেলাম। হাবিবুর রহমান সাহেব ঘুমের ওষুধ খাবেন কি-না বুঝতে পারছি না। সম্ভাবনা যে একেবারে নেই তা না। ফিফটি ফিফটি চান্স। মজার ব্যাপার হলো মানব জীবনের সব সম্ভাবনাই ফিফটি ফিফটি। বিয়ে করে সুখী হবার সম্ভাবনা কতটুকু?
ফিফটি ফিফটি চান্স।
বড় ছেলেটি মানুষ হবে সেই সম্ভাবনা কত পারসেন্ট?
ফিফটি পারসেন্ট।
ইমরুলকে নিয়ে রিকশায় চড়েছি। সে খুবই আনন্দিত। আমি বললাম, কেমন আছিসরে ব্যাটা?
ভালো।
কতটুকু ভালো আছিস হাত মেলে দেখা।
সে হাত মেলছে। মেলেই যাচ্ছে…
বুঝতে পেরেছি। খুব ভালো আছিস। দেখি এখন একটা গান শোনা ভালোবাসার গান। ভালোবাসার গান জনিস?
জানি।
ইমরুল তৎক্ষণাৎ গান ধরল–
তুমি ভালোবাস কিনা
আমি তা জানি না…
ভালোবাসার গান ইমরুল এই দুই লাইনই জানে। শিশুদের নিজস্ব বিচিত্র সুরে সে এই গান করছে। রিকশাওয়ালা গান শুনে খুব খুশি। সে ঘাড় ঘুরিয়ে হাসিমুখে বলল— মাশাল্লাহ, এই বিচ্ছু দেহি বিরাট গাতক।
আমি বললাম, এই বিচ্ছ, বল দেখি আমরা কোথায় যাচ্ছি?
ইমরুল বলল, জানি না।
বিশেষ কোথাও যেতে ইচ্ছা করে?
ইমরুল বলল, না।
মাকে দেখতে যাবি?
না।
আসমা হক নামের একজন মহিলা ছিলেন যিনি তোকে নতুন জুতা কিনে দিয়েছেন, তার কাছে যাবি?
না।
রিকশায় চড়তে আমার সব সময়ই ভালো লাগে। আজ যেন একটু বেশি ভালো লাগছে। শুনছি। ঢাকা শহর রিকশামুক্ত হবে। আমরা পুরোপুরি মেট্রোপলিটন সিটির যুগে প্রবেশ করব। শনশন করে গাড়ি চলবে। আধুনিক গতির যুগ। শনশন ঝনঝন।
উল্টোটা হলে কেমন হতো। কেউ যদি এমন ব্যবস্থা করতেন যেন এ শহরে কোনো গাড়ি না চলে। শুধু রিকশা এবং সাইকেল চলবে। কোনো গাড়ি থাকবে না। পৃথিবীর একমাত্র নগরী যেখানে কোনো গাড়ি নেই। রাস্তায় কুৎসিত হর্ন বাজবে না। জলতরঙ্গের মতো টুনটুন করে রিকশার ঘন্টি বাজবে। নগরীতে কোনো কালো ধোয়া থাকবে না। পর্যটনের বিজ্ঞাপনে লেখা হবে–
DHAKA
CITY OF RICKSHAW
প্রতিটি রিকশার পেছনে বাধ্যতামূলকভাবে চিত্রকর্ম থাকতে হবে। ভ্ৰাম্যমাণ চিত্রশালা। আমরা পেইনটিং দেখতে দেখতে রিকশায় চড়ে ঘুরব। মন্ত্রীদের জন্যে থাকবে। ফ্ল্যাগ বসানো রিকশা। প্ৰধানমন্ত্রীও রিকশায় করেই যাবেন। তার আগে পেছনে থাকবে সাইকেল আরোহী নিরাপত্তা-কমীরা। রিকশার কারণে গতির দিক দিয়ে আমরা পিছিয়ে যাব। সবদিক দিয়েই তো পিছিয়ে পড়ছি। গতির দিকে পিছিয়ে পড়লে ক্ষতি কী?
ইমরুল বলল, পিপি করব।
আমাদের রিকশা রাস্তার মাঝামাঝিতে। জামে জট খেয়ে গেছে। জটি খুলবে। এমন সম্ভাবনা নেই। বাধ্য হয়েই ইমরুলকে রিকশার পাটাতনে দাঁড় করিয়ে প্যান্টের জিাপার খুলে দিলাম। সে মহানন্দে তার কর্মকরছে। আশপাশের সবাই মজা পাচ্ছে। কৌতূহলী হয়ে দেখছে। একজন আবার গাড়ির কাচ নামিয়ে ফাট করে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলল। ছবিটা ভালো হবার কথা। সুন্দর কম্পোজিশন।
ইমরুল বলল, আমি ছান্তা খাব।
ছান্তা হলো ফান্টা। সে বাংলা ভাষার প্রতিটি শব্দ স্পষ্ট করে বলতে পারে, তারপরও কিছু কিছু অদ্ভুত শব্দ সে তার ঝুলিতে রেখে দিয়েছে। ফান্টাকে বলবে ছান্তা। গাড়িকে বলবে রিরি। শিশুদের মধ্যে এই ব্যাপারটা আছে। প্রথম শৈশবের কিছু শব্দ সে অনেকদিন ধরে রাখে। একদিন হঠাৎ সে এই শব্দগুলি ছেড়ে দেয়। আর কোনোদিন ভুলেও উচ্চারণ করে না। যে বিশেষ দিনে এই ঘটনাটি ঘটে। সেই বিশেষ দিনেই তার শৈশবের সমাপ্তি।
ইমরুলকে ছান্তিা খাইয়ে আমি মাজেদা খালাকে টেলিফোন করলাম। তিনি টেলিফোনে আর্তনাদের মতো শব্দ করলেন–তুই কোথায়?
আমি চমকে উঠে বললাম, আবার কী হয়েছে?
তুই ড়ুব মেরে কোথায় ছিলি? আমি কম করে হলেও দশ হাজারবার তোর খোঁজে লোক পাঠিয়েছি।
গুরুতর কিছু কি ঘটেছে খালা? খালু সাহেবের জবান খুলেছে? উনি কথা বলা শুরু করেছেন?
ও যেমন ছিল তেমন আছে। তোকে খুঁজছি। অন্য কারণে। আসমার মাথা খারাপের মতো হয়ে গেছে।
কেন?
তুই একবার ইমরুলকে দেখিয়ে এনেছিস, তারপর আর তোর কোন খোঁজ নেই। বেচারি ছেলেটার জন্যে অস্থির হয়ে আছে।
টাকা-পয়সা ক্লিয়ার করে মাল ডেলিভারি নিয়ে যাক। মাল আমার সঙ্গেই আছে।
হিমু শোন, এ ধরনের ফাজলামি কথা তুই আর কোনদিন বলবি না। কোনোদিন না।
আচ্ছা, বলব না।
ছেলেটাকে তুই এক্ষুণি ওদের কাছে দিয়ে আয়। এই মুহুর্তে।
এই মুহুর্তে ডেলিভারি দিতে পারব না।
কেন? শেষ সময়ে বাবা-মা ঝামেলা করছে? জানি এরকম কিছু হবে। শেষ মুহুর্তে দরদ উথলে উঠবে।
এই মুহুর্তে ডেলিভারি দিতে পারছি না, কারণ মিসেস আসমা হকের স্বামী আমাকে বলেছেন, তাঁর স্ত্রীর ত্ৰিসীমানায় যেন আমি না থাকি। তাঁর সঙ্গে ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত মাল ডেলিভারি হবে না।
বলিস কী! আসিমার স্বামী বিগড়ে গেল কেন? আসমা তো আমাকে কিছু বলে নি।
এখন আমি কী করব বলো।
আসমা ইমরুলকে দেখতে চাচ্ছে। তুই আসমার কাছে ওকে দিয়ে কেটে পড়।
ঠিক আছে তাই করছি। তুমি খালু সাহেবের ব্যাপারে কী করলে?
ভিসা নিয়ে কী যেন ঝামেলা হচ্ছে। ভিসা পেলেই চলে যাবে।
জবান এখনো বন্ধ?
হ্যাঁ।
মহিলা পীরের চিকিৎসাটা করাবে না?
মহিলা পীরের কোন চিকিৎসা?
বলেছিলাম না তোমাকে–প্ৰচণ্ড আধ্যাত্মিক ক্ষমতা সঞ্চয় করা পীরনি। সবাই যাকে মামা ডাকে। উনার পায়ে পড়লেই…।
ভুলে যা। তোর খালু যাবে মামা ডাকতে!
খালু সাহেবের তো জবানই বন্ধ। আমি উনার হয়ে মামা ডাকব। উনার হাসবেন্ডকে ডাকব মামি।
তার হাসবেন্ডকে মামি ডাকতে হয়?
মহিলাকে যখন মামা ডাকতে হয়। পুরুষকে মামি ডাকতে হবে সেটাই তো স্বাভাবিক।
খামাকা বকবক করবি না। সকালবেলা বকবকানি শুনতে ভালো লাগে না।
টেলিফোন রেখে দেব?
না, রেখে দিবি না। কানে বুলিয়ে বসে থাক। গাধা কোথাকার। টেলিফোন রেখে এক্ষুণি ঐ ছেলেকে আসমার কাছে পৌঁছে দিয়ে আমার এইখানে আয়।
আচ্ছা, আসব।
আমার বাড়িতে এখন নতুন নিয়ম— বাসায় ঢুকে কোনো কথা বলতে পারবি না। ফিসফিস করেও না।
কেন?
তোর খালু কথা বলতে পারে না তো, এই জন্যে কাউকে কথা বলতে শুনলে রেগে যায়। ভয়ঙ্কর রাগে। এই জন্যেই বাড়িতে কথা বলা বন্ধ।
ভালো যন্ত্রণা তো!
মহা যন্ত্রণা। এই যে তোর সঙ্গে কথা বলছি, কর্ডলেস নিয়ে বারান্দায় চলে এসেছি। কথাও বলছি ফিসফিস করে। বুঝলি হিমু— মাসখানিক এই অবস্থা চললে দেখবি আমিও কথা বলা ভুলে গেছি। ইশারা-ইঙ্গিতে কাজ করছি। খুবই খারাপ অবস্থায় আছি রে হিমু!
এই বিষয় নিয়ে তুমি চিন্তা করবে না। আমি ভুজুং ভাজুং দিয়ে খালু সাহেবকে চিকিৎসা করিয়ে আনিব। মামা-চিকিৎসা।
তুই কখন আসবি?
দুএকদিনের মধ্যে চলে আসব।
দুএকদিন না, এক্ষুণি আয়।
দেখি।
কোনো দেখাদেখি না। লাফ দিয়ে কোনো বেবিটেক্সিতে উঠে পড়।
আমি খালার কথামতোই কাজ করলাম। ইমরুলকে মিসেস আসমা হকের দরবারে পৌঁছে দিয়ে লাফ দিয়ে একটা বেবিটেক্সিতে উঠে পড়লাম। তবে আমার গন্তব্য খালু সাহেবের বাড়ি না— হাসপাতাল। ফরিদা কী করছে না করছে এই খোঁজ নেয়া। হাসপাতালে কী ড্রামা হচ্ছে কে জানে! থানা এবং হাসপাতালে মানব জীবনের সবচে বড় ড্রামাগুলি হয়। দর্শক হিসেবে অসাধারণ নাটক দেখতে হলে এই দুজায়গায় হঠাৎ হঠাৎ উপস্থিত হতে হয়। চমৎকার কিছু দৃশ্য হলো, মনে মনে হাততালি দিয়ে ফিরে চলে আসা। আবার নাটক দেখতে ইচ্ছা হলে আবার চলে যাওয়া। আমার (মহানা) বাবা তাঁর মহাপুরুষ বানানোর শিক্ষা প্ৰণালিতে পরিষ্কার করে লিখেছেন–
মৃত্যুপোঠযাত্রী কখনো দেখিয়াছ? কখনো কি তাহার শয্যাপার্শ্বে রাত্রি জাপন করিয়াছ? কখনো কি দেখিয়াছ কী রূপে ছটফট করিতে করিতে জীবনের ইতি হয়। জীবনের প্রতি মানুষের কী বিপুল তৃষ্ণা। আর কিছুই চাই না— শুধু বঁচিবার জন্যেই বাঁচিতে চাই।
বাবা হিমালয়, তুমি অবশ্যই তোমার জীবনের কিছু সময় মৃত্যুপথযাত্রীদের জন্যে আলাদা করিয়া রাখিবে। তাহাদের শয্যাপার্শ্বে রাত্রি যাপন করিবে। যে হাহাকার নিয়া তাহারা যাত্ৰা করিতেছে সেই হাহাকার অনুভব করার চেষ্টা করিবে।
বাবা সামান্য ভুল করেছেন। তিনি ভুলে গেছেন সব মানুষই মৃত্যুপথযাত্রী। যে শিশুটি হেসে খেলে ছুটে বেড়াচ্ছে সেও মৃত্যুপথযাত্রী। তার চোখের দিকে তাকালেও জীবনের প্রতি মানুষের বিপুল তৃষ্ণার খবর পাওয়া যায়। এই খবর জানার জন্যে হাসপাতালে বসে থাকার প্রয়োজন নেই।
ফরিদার বিছানার পাশে সোনালি চশমা পরা যে যুবকটি বসে আছে তার নামই বোধহয় রাশেদুল করিম। সাদা ফুলপ্যান্টের সঙ্গে আকাশি নীল রঙের হাওয়াই শার্ট পরেছে বলেই পোশাকটা ইউনিফর্মের মতো লাগছে। মনে হচ্ছে ক্যাডেট কলেজের ছাত্র। শুধু চেহারা দেখে প্রেমে পড়ার বিধান থাকলে সব মেয়েই এই ছেলের প্রেমে পড়ত। তারা দুজন মনে হয় মজার কোনো কথা বলছিল। দুজনের মুখই হাসি হাসি। আমাকে দেখে রাশেদুল করিমের মুখের হাসি বন্ধ হয়ে গেল। ফরিদা কিন্তু হাসতেই থাকল। মেয়েদের এই ব্যাপারটা আছে। কোনো রসিকতা তাদের মনে ধরে গেলে তারা অনেকক্ষণ ধরে হাসে।
রাশেদুল করিম চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। দীর্ঘদিনের পরিচিত মানুষের মতো বললেন, হিমুভাই, কেমন আছেন? বলেই হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়ালেন।
আমি এখন মজার একটা খেলা খেলতে পারি। রাশেদুল করিমের হাত অগ্রাহ্য করে তাকে খুবই বিব্রত অবস্থায় ফেলতে পারি। বিব্রত অবস্থায় সে কী করে এটাই তার আসল চরিত্র।
আমি রাশেদুল করিমের দিকে তাকালাম। তাঁর বাড়িয়ে দেয়া হাতের দিকে তাকলাম। নিজে হাত বাড়ালাম না। ভদ্রলোক হাত নামিয়ে নিলেন এবং হেসে ফেললেন। আবারো বললেন, হিমুভাই, কেমন আছেন?
ভালো।
আপনার কথা এত শুনেছি যে আপনাকে না দেখে যদি আপনার ছায়া দেখতাম তাহলেও বলে ফেলতে পারতাম— এই ছায়া হিমু সাহেবের।
ছায়া দেখে চিনতে পারতেন না। সব মানুষ আলাদা কিন্তু তাদের ছায়া একরকম।
এটা কি কোনো ফিলসফির কথা?
অতি জটিল ফিলসফির কথা। অবসর সময়ে এই ফিলসফি নিয়ে চিন্তা করবেন। কিছু না কিছু পেয়ে যাবেন।
ফরিদার মাথায় এখনো বোধহয় রসিকতাটা ঘুরপাক খাচ্ছে। সে হেসেই যাচ্ছে। আমি তার দিকে তাকাতেই সে মুখে শাড়ির আঁচল চাপা দিয়ে হাসি সামলাবার চেষ্টা করল। রোগ যন্ত্রণায় কাতর রোগীর আনন্দময় হাসির চেয়ে সুন্দর আর কিছুই হতে পারে না। আমি মুগ্ধ হয়ে হাসি দেখছি। রাশেদুল করিম বললেন, হিমুভাই, আপনি কি দয়া করে ফরিদকে একটু বুঝবেন? আমি নিশ্চিত সে আপনার কথা শুনবে।
কোন বিষয়ে বুঝাতে হবে?
চিকিৎসার জন্যে আমি তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে চাই। সে যাবে না। হিমুভাই প্লিজ, আপনি তাকে রাজি করিয়ে দিন। যদি আপনি এটা করে দিতে পারেন তাহলে বাকি জীবন আমি আপনার মতো হলুদ পাঞ্জাবি পরে কাটাব। পায়ে জুতাস্যান্ডেল কিছুই থাকবে না। প্লিজ প্লিজ।
ফরিদা আমাদের কথা শুনছে। কিন্তু তার মুখের হাসি যাচ্ছে না। আমি তার বিছানার কাছে এসে দাঁড়ালাম। ফরিদা বলল, হিমুভাই, গত রাতে আমি আপনাকে স্বপ্নে দেখেছি। মানুষ কখনো হাসির কোনো ঘটনা স্বপ্নে দেখে না। আমি এমন একটা হাসির স্বপ্ন দেখেছি যে হাসতে হাসতে আমার ঘুম ভেঙেছে। যতবারই আমার স্বপ্নের কথাটা মনে হচ্ছে ততবারই আমি হাসছি।
স্বপ্নটা কী?
স্বপ্নটা কী আমি বলব। তার আগে চেয়ারটায় আপনি বসুন। আসল কথাটা মন দিয়ে শুনুন।
তাসল কথাটা কী?
ফরিদা সঙ্গে সঙ্গে গম্ভীর হয়ে গিয়ে বলল, আমি অন্যের টাকায় চিকিৎসা কৱাব না। ইমরুলের বাবা মনে কষ্ট পাবে। এই কষ্ট আমি তাকে দেব না।
তুমি মরে গেলে ইমরুলের বাবা কষ্ট পাবে না?
পাবে। দুটা কষ্ট দুরকম।
রাশেদুল করিম সাহেবের টাকায় তুমি চিকিৎসা করাবে না?
না।
তোমার মৃত্যুর মাস ছয়েকের মধ্যে ইমরুলের বাবা আরেকটা বিয়ে করবে, তারপরেও না?
না।
সৎমা ইমরুলকে নানানভাবে কষ্ট দেবে, তারপরেও না?
না।
তুমি কি প্রমাণ করতে চাইছ— স্বামীর প্রতি তোমার গভীর প্ৰেম?
আমি কোনো কিছু প্ৰমাণ করতে চাইছি না। আমি ইমরুলের বাবার মনে কষ্ট দিতে চাচ্ছি না।
ঠিক আছে, মামলা ডিসমিস।
আমি রাশেদুল করিমের দিকে তাকালাম। বেচারার মুখ শুকনা হয়ে গেছে। সে তাকিয়ে আছে হতাশ চোখে। সে কী করবে বুঝতে পারছে না। হাসপাতালের কেবিন ঘরে একটাই চেয়ার। সেই চেয়ার আমি দখল করে আছি। তাকে বসতে হলে ফরিদার পাশে খাটে বসতে হয়। এই কাজটা সে করতে পারছে না। আবার সে দাঁড়িয়ে থাকতেও পারছে না। সে ফরিদার দিকে তাকিয়ে বলল, ফরিদা আমি চলে যাই। ফরিদা বলল, আচ্ছা। তারপরেও সে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। সম্ভবত আশা করল। ফরিদা তাকে আরো কিছু বলবে। ফরিদা কিছুই বলল না। কঠিন চোখে কেবিন ঘরের ধবধবে সাদা সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে রইল।
ঘরে আমি এবং ফরিদা। রাশেদুল করিম চলে গিয়েছে। ফরিদার মুখে আগের কাঠিন্য নেই। কিছুক্ষণ আগে নার্স এসে একগাদা ওষুধ খাইয়ে গেছে। নার্সের সঙ্গে সে হেসে হেসে কথা বলেছে। সেই হাসির রেশ এখনো ঠোঁটের কোনায় ধরা আছে।
হিমুভাই।
বলো।
আপনি একটু আগে জিজ্ঞেস করেছিলেন স্বামীর প্রতি ভালোবাসা দেখাতে চাই বলেই কি বিদেশে যেতে চাচ্ছি না? আমি এখন প্রশ্নটার জবাব দেব। জবাব শুনে আপনি চমকে যাবেন।
জবাবটা কী?
ফরিদা বলল, ওর প্রতি আমার কোনো ভালোবাসা নেই। কখনো ছিল না।… আপনি আমার কথা শুনে খুবই চমকে গেছেন। তাই না হিমুভাই?
আমি সহজে চমকাই না।
তারপরেও আপনি চমকে গেছেন। আমি আপনার মুখ দেখে বুঝতে পারছি। হিমুভাই শুনুন, যাকে একটু আগে আপনি দেখেছেন, কিশোরী বয়সে তার প্রেমে পড়েছিলাম। মেয়েরা যে কত আবেগ নিয়ে ভালোবাসতে পারে তা আপনারা পুরুষরা কখনো বুঝতে পারবেন না।
পুরুষরা ভালোবাসতে পারে না?
না। আর পারলেও তার মাত্রা অনেক নিচে। পুরুষের হচ্ছে ভালোবাসা ভালোবাসা খেলা। মেয়েদের ব্যাপার অন্যরকম, তাদের কাছে ভালোবাসার সঙ্গে খেলার সম্পর্ক নেই। একটা মেয়ে যখন ভালোবাসে তখন সেই ভালোবাসার সঙ্গে অনেক স্বপ্ন যুক্ত হয়ে যায়। সংসারের স্বপ্ন। সংসারের সঙ্গে শিশুর স্বপ্ন। একটা পুরুষ যখন প্রেমে পড়ে তখন সে শুধু তার প্রেমিকাকেই দেখে। প্রেমিকার সঙ্গে সঙ্গে নতুন একটি শিশুর স্বপ্ন দেখে না।
তুমি নিজে এইসব ভেবে ভেবে বের করেছ?
জি, আমার তো শুধু শুয়ে থাকা। হাসপাতালের বিছানায় দিনের পর দিন, রাতের পর রাত শুয়ে শুয়ে আমি শুধু ভাবি। ভেবে ভেবে অনেক কিছু বের করে ফেলেছি।
ভালো তো। অনেক জ্ঞান পেয়ে গেলে।
জ্ঞান পেয়ে হবে কী? আমি তো মরেই যাচ্ছি।
আইনস্টাইনও অনেক জ্ঞান পেয়েছিলেন। তিনিও কিন্তু তার জ্ঞান নিয়ে মরে গেছেন।
হিমুভাই প্লিজ, আপনার সঙ্গে তর্ক করতে চাচ্ছি না। এক সময় আমি তর্ক করতে খুব ভালোবাসতাম। এখন তর্ক করতে ভালো লাগে না। কেউ তর্ক করতে এলে আগেভাগে হার মেনে নেই। শুরুতেই বলে দেই— তাল গাছ আমার না। তাল গাছ তোমার। এখন তর্ক বন্ধ কর।
তোমার সঙ্গে হাসপাতালে নিশ্চয়ই কেউ তর্ক করতে আসে না।
আসবে না কেন? আসে। আপনিও তো কিছুক্ষণ তর্ক করেছেন। করেন নি?
আমার বেলায় তুমি কিন্তু বলো নি যে তালগাছ আপনার।
প্লিজ হিমুভাই, চুপ করুন তো।
চুপ করলাম। আমি কি চলে যাব?
না, আপনি চলে যাবেন না। আমার ব্যাপারটা আমি আপনাকে বলব। আমি তো মরেই যাচ্ছি। মরার আগে গোপন কথাটা কাউকে না কাউকে বলতে ইচ্ছা! করছে।
লাভ কী?
জানি না লাভ কী, আমার বলতে ইচ্ছা করছে। আমি বলব।
বেশ বলো।
ফরিদা হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, আমার দম ফুরিয়ে গেছে। আমি একটু দম নিয়ে নেই। আমি চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকব। আপনি কিন্তু চলে যাবেন না।
আমি চলে গেলাম না।
ফরিদা চোখ বন্ধ করল। এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমিয়ে পড়ল। আমি বসে আছি তার পাশে। তাকিয়ে আছি। একটি ঘুমন্ত মেয়ের মুখের দিকে। দেখেই মনে হচ্ছে ফরিদা শান্তিতে ঘুমুচ্ছে। জীবনানন্দ দাশের লাশকাটা ঘরের ঘুম—
এই ঘুম চেয়েছিল বুঝি!
রক্তফেনা-মাখা মুখে মড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড় গুঁজি
আঁধার যুঁজির বুকে ঘুমায় এবার;
কোনোদিন জাগিবে না আর।
ফরিদা টানা দুঘণ্টা ঘুমুল। সময়টা আন্দাজ করে বলছি। আমার হাতে ঘড়ি নেই। হাসপাতালের এই কেবিনেও ঘড়ি নেই। দুঘণ্টা আমি চুপচাপ বসে রইলাম। ঘুমের মধ্যে মানুষ নড়াচড়া করে। এপোশ ওপাশ করে। চোখের পাতা কখনো দ্রুত কাঁপে কখনো অল্প কাঁপে। ফরিদার বেলায় সে-রকম কিছুই হলো না। তার নিঃশ্বাসের শব্দ হলো না। চোখের পাতাও কাঁপল না। এক সময় জেগে উঠে বিড়বিড় করে বলল, পানি খাব।
আমি পানি খাওয়ালাম। তার দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বললাম, ঘুম ভালো হয়েছে
ফরিদা বলল, হ্যাঁ।
ঘুমের মধ্যে কোনো স্বপ্ন দেখেছ?
না। আমি কতক্ষণ। ঘুমিয়েছি?
দুঘণ্টার মতো।
ছিঃ ছিঃ— আপনি দুঘণ্টা বসেছিলেন! আমার খুবই লজ্জা লাগছে। চলে গেলেন না কেন?
তুমি বসে থাকতে বলেছ।
থ্যাংক য়্যু। আমি যে এতক্ষণ। ঘুমিয়েছি নিজেই বুঝতে পারি নি। আমার কাছে মনে হচ্ছিল–চোখ বন্ধ করেই জেগে উঠেছি। মৃত্যু কাছাকাছি চলে এলে সময়ের হিসেবে গণ্ডগোল হয়ে যায়। আমার বোধহয়….
ফরিদা কথা শেষ না করে হাসল। আমি বললাম, তুমি আমাকে কিছু গোপন কথা বলার জন্যে বসিয়ে রেখেছিলো। আমার ধারণা কথাগুলি তুমি এখন বলতে চাও না।
আপনার ধারণা ঠিকই আছে।
আমি কি এখন চলে যাব?
হ্যাঁ, চলে যান।
অনেকক্ষণ তোমার সঙ্গে ছিলাম, তুমি কিন্তু একবারও জানতে চাও নি। ইমরুল
কেমন আছে।
ফরিদা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ইমরুল কেমন আছে?
আমি বললাম, ভালো।
ফরিদা বলল, আপনার সঙ্গে আমার আর মনে হয় দেখা হবে না।
আমি বললাম, আমারও মনে হয় দেখা হবে না।
ফরিদা বলল, আপনাকে নিয়ে আমি খুবই হাসির একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম। স্বপ্নের কথা এখন আর আপনাকে বলতে ইচ্ছা করছে না। তবে আমি একটা কাজ করব।— লিখে ফেলব। তারপর লেখাটা আপনাকে পাঠাব। হিমুভাই, আমার কেন জানি মনে হচ্ছে। আমি চেষ্টা করলে গল্প-উপন্যাস লিখতে পারব। বিছানায় শুয়ে মজার মজার সব
গল্প আমার মাথায় আসে।
লিখে ফেললেই পোর।
লজা লাগে বলে লিখতে পারি না।
লজা লাগে কেন?
বুঝতে পারছি না কেন। আচ্ছা ঠিক আছে, লজ্জা লাগুক বাঁ না লাগুক আমি একটা গল্প লিখে ফেলব।