স্যাটানিক ভার্সেস ও শয়তানের ওপরে ঈমান আনার গল্প
রোববার আমাদের কাছে আড্ডাবার বলে খ্যাত। রোববারে আমরা শাহবাগে বসে আড্ডা দিই। আমাদের আড্ডার বিষয়বস্তু থাকে সমসাময়িক বিভিন্ন ঘটনা, বিভিন্ন আবিষ্কার ও বিভিন্ন বই নিয়ে।
গত রোববারের আড্ডায় আমাদের সাথে পিকলু দা-ও ছিলেন। পিকলু দা হলেন আমাদের সবার কাছে প্রিয় ও পরিচিত মুখ। ক্যাম্পাসে পিকলু দাকে চেনে না— এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। কেনই-বা চিনবে না? যে-লোক জাপান, হংকং এবং কানাডা থেকে চার চারবার ফটোগ্রাফিতে গোল্ড মেডেল পায়, তাকে আবার চিনবে না—এমন কেউ থাকতে পারে নাকি?
আমরা পিকলু দাকে একজন উঁচু মাপের ফটোগ্রাফার হিশেবে জানলেও, সাজিদের কাছে পিকলু দার কদর অন্য জায়গায়। সাজিদ পিকলু দাকে একজন উঁচু মানের বইপড়ুয়া হিশেবে চেনে। সাজিদের ভাষ্যমতে—পুরো পৃথিবী থেকে যদি তন্ন তন্ন করে খুঁজে সেরা দশজন বইপড়ুয়া লোক খুঁজে বের করা হয়, তাহলে পিকলু দার Rank সেখানে সেরা তিনে থাকবে, শিওর…।
পিকলু দার সাথে আমাদের চেয়ে সাজিদের সখ্যই বেশি। এর কারণ, ঢাবিতে ভর্তির পরে পুরো এক বছর সাজিদ আর পিকলু দা হলের একই রুমে ছিল। সাজিদের কাছে শুনেছি, একবার ঘোর বর্ষার সময়, পিকলু দা ঠিক করলেন যে, তিনি বান্দরবান যাবেন। চারদিকে করুণ অবস্থা। পানিতে টইটম্বুর সবকিছু। ভারী বজ্রপাতের সাথে বিরতিহীন বৃষ্টির ফোয়ারা, এর মধ্যেই পিকলু দা চাচ্ছে ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে পড়তে। সাজিদ খুবই অবাক হলো। বলল, এরকম পরিস্থিতিতে কেউ কি বাইরে যায় নাকি?
পিকলুদা কয়েক সেকেন্ডও সময় না নিয়ে বললেন, Without such environment, you cant enjoy adventure, my dear…
সাজিদ দেখল, সেই যাত্রায় পিকলুদা ব্যাগের মধ্যে ক্যামেরার সাথে শেক্সপিয়ারের A Mid Summer Nights Dream এবং রবীন্দ্রনাথের গোরা উপন্যাসের বই দুটোও পুরে নিচ্ছে। সাজিদ আবারও অবাক হলো। বলল, বৃষ্টি-বাদলের মধ্যে ভিজবে নাকি বই পড়বে?
পিকলু দা সেবার কিছু না বলে মুচকি হেসে বেরিয়ে পড়ল। ফিরল ঠিক দশদিন পরে। জ্বরে কাঁপাকাঁপি অবস্থা। অন্য কেউ হলে এই মুহূর্তে বেহাল দশা হয়ে যেত। অথচ, পিকলুদার মুখে অসুখের কোনো চিহ্নই নেই। মনে হচ্ছে মনের মধ্যে রাজ্য জয়ের সুখ বিরাজ করছে।
সাজিদ জিজ্ঞাসা করল, কী অবস্থা করে এসেছ নিজের?
পিকলু দা সাজিদের কথা কানে নিল বলে মনে হলো না। গোল্ডলিফ সিগারেটে টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললেন, জানিস তো, অনেকগুলো অসাধারণ ছবি তুলে এনেছি এবার। একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে গিয়েছিলাম। চারপাশে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ ক্রস করে কোনো এক পাহাড়ের দেশে ঢুকে পড়েছি।
পরের দিন ক্যাম্পাসে পিকলু দা আমাদের অত্যন্ত আগ্রহের সাথে বান্দরবানের দুর্গম এলাকা থেকে তুলে আনা ছবিগুলো দেখাচ্ছিলেন। আমরাও খুব আগ্রহভরে দেখছিলাম ছবিগুলো। আসলেই সব কয়টি ছবিই ছিল দারুণ। আমার সাধ্য থাকলে প্রতিটি ছবির জন্য পিকলু দাকে একটি করে গোল্ড মেডেল দিয়ে দিতাম।
আমরা সবাই ছবি দেখাদেখি নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও, সাজিদের সেদিকে মোটেও আগ্রহ আছে বলে মনে হলো না। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে সে পিকলু দার কাছে জানতে চাইল সাথে নিয়ে যাওয়া বইগুলোর ব্যাপারে। পিকলু দা ফিক করে হেসে দিলেন। এরপর, সাতখণ্ড রামায়ণ পাঠের মতো করে তিনি শেক্সপিয়ারের A Mid Summer Nights Dream এবং রবি ঠাকুরের গোরা উপন্যাসের আদ্যোপান্ত বর্ণনা করা শুরু করলেন। আমরাও আগ্রহভরে শুনছিলাম আর আবিষ্কার করছিলাম সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পিকলু দাকে। যিনি কেবল ছবির মাঝেই ডুব দেন না, বইয়ের মাঝেও অসাধারণভাবে ডুব দিতে পারেন…।
বলছিলাম গত রোববারের আড়ার কথা। সে আড্ডায় আমাদের সাথে পিকলু দা-ও ছিলেন। ছিল রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সোহেল রানা এবং সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সৌরভ ধর। আরও ছিলেন ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের আহমেদ ইমতিয়াজ এবং রসায়নের সুমন্ত বর্মণ দা। সুমন্ত দা খুব ভালো গিটার বাজাতে পারেন। তিনি যখন গিটারে তাল ধরেন, তখন সবাই সমস্বরে মান্না দার সেই বিখ্যাত গানটি গেয়ে ওঠে :
কাকে যেন ভালোবেসে, আঘাত পেয়েছে শেষে, পাগলা গারদে আছে রমা রায়
অমলটা ধুকছে দুরন্ত ক্যান্সারে, জীবন করেনি তাকে ক্ষমা হায়
কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই…
আমাদের আড্ডা শুরুর প্রাক্কালে, সৌরভ পিকলু দার কাছে জিজ্ঞেস করল, দাদা, তুমি কি সালমান রুশদির The Satanic Verses পড়েছ?
পিকলু দা হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে জানালেন, তিনি পড়েছেন। এরপর সৌরভ সাজিদের কাছে জানতে চাইল, সে পড়েছে কি না। সাজিদও হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। পিকলু দা সাজিদের কাছে জানতে চাইল, তোর কেমন লাগলরে বইটি?
সাজিদ বাদাম ছুলে মুখে দিতে দিতে বলল, ফিকশনাল বই হিশেবে বলব নাকি ঐতিহাসিক উপন্যাস হিশেবে বলব?
পিকলু দা খানিকটা অবাক হলেন বলে মনে হলো। বললেন, মানে কী?
কিছুই না। ফিকশনাল বই হিশেবে বললে এটি মোটামুটি ভালো; কিন্তু ঐতিহাসিক তথ্যের ওপর নির্ভর করে লেখা কোনো বই হিশেবে যদি বিচার করতে বলল। তাহলে এটি পাস মার্ক পাবে বলে মনে হয় না।
পিকলুদা আরও খানিকটা অবাক হলেন। বললেন, বইটাতে রুশদি যে ইনফরমেশান ব্যবহার করেছে, সে ব্যাপারে তোর কোনো আপত্তি আছে?
সাজিদ বলল, আলবত আছে।
কিন্তু তুই কি জানিস, ওই বইতে রুশদি যে ইনফরমেশান ব্যবহার করেছে তার সবটাই ইসলামিক সোর্স থেকে নেওয়া? পিকলুদা বললেন।
হ্যাঁ, জানি।
তুই বলতে চাচ্ছিস এসব ইসলামিক সোর্সে ভুল ইনফরমেশান দেওয়া আছে?
থাকতেও পারে। দুনিয়ায় কুরআন ছাড়া সকল গ্রন্থ মানুষের লেখা। আর মানুষের লেখায় ভুল থাকাটাই স্বাভাবিক। সাজিদের সরল উত্তর।
এবার কথা বলে উঠল ইমতিয়াজ ভাই। তিনি বললেন, দাঁড়াও দাঁড়াও। সালমান রুশদিকে তো চিনি এবং The SatanicVerses নামক তার বইটার নামও শুনেছি আমি; কিন্তু যেটি বুঝতে পারছি না সেটি হলো তোমাদের বিতর্কের বিষয়। তোমরা দুজনে The Satanic Verses নিয়ে বেশ ঝড়ো আলাপ করছ। মূল কাহিনিটা আসলে কী?
পিকলুদা সাজিদকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তুই একটু ব্রিফ করে দে এ ব্যাপারে।
পিকলু দার কথায় সাজিদ বলতে শুরু করল, ইন্ডিয়ান লেখক সালমান রুশদি একটি বই লিখে খুবই বিতর্কিত হয়ে পড়েন। বইটার নাম : The Satanic Verses। রুশদি সেই বইতে কিছু ইসলামিক সোর্স থেকে দলিল টেনে ইসলামকে আক্রমণ করে এবং প্রমাণের চেষ্টা করে যে-কুরআন আল্লাহর কাছ থেকে নাযিল হওয়া নয়; বরং শয়তান থেকে প্রাপ্ত কিতাব। রুশদি সোর্স হিশেবে উল্লেখ করে আত-তাবারী এবং ইবনু সাদ-এর মত সীরাতগ্রন্থ।
আত-তাবারী এবং ইবনু সাদ-এ একটি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। ঘটনাটি হলো এরকম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় যখন দাওয়াত দেওয়া শুরু করলেন, তখন একদিন তিনি কাবা শরীফের প্রাঙ্গণে বসে সদ্য ইসলামে দাখিল হওয়া মুসলিমদের মাঝে বক্তৃতা করছিলেন। সেখানে মক্কার অন্যান্য পৌত্তলিক কুরাইশরাও ছিল।
ঠিক এমন সময়ে, জিবরাঈল আলাইহিস সালাম ওহী নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আগমন করেন। সেদিন জিবরাঈল আলাইহিস সালাম সূরা নাজম নিয়ে অবতীর্ণ হন। তাবারী এবং ইবনু সাদ বলছেন, সেদিন সূরা নাজমের ১৯ এবং ২০ নম্বর আয়াতের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বাড়তি দুটি আয়াত তিলাওয়াত করেন, যা আদতে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম ওহী হিশেবে নিয়ে আসেননি। এই দুই আয়াত মূলত শয়তান রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ধোঁকা দিয়ে কুরআনের আয়াতের সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল। পরে জিবরাঈল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ ব্যাপারে সতর্ক করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা ওহী ছিল না বলে বাদ দেন।
সূরা নাজমের ১৯ এবং ২০ নম্বর আয়াত হলো মুশরিকদের পূজিত সবচেয়ে বড় তিন দেবী : লাত, উযযা এবং মানাতকে নিয়ে। ওই সূরার ১৯ এবং ২০ নম্বর আয়াত হলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও উযযা সম্পর্কে? এবং আরেক (দেবী) মানাত সম্পর্কে?
তাবারী এবং ইবনু সাদ বলছেন, এই দুই আয়াতের পরে আরও দুটি বাড়তি আয়াত ছিল, যা পরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভুল বুঝতে পেরে বাদ দিয়েছিলেন। সেই আয়াত দুটি এরকম
These are the high-flying ones, whose intercession is to be hoped for! [তারা হলেন খুবই উঁচু পর্যায়ের ক্ষমতাবান দেবী। তাদের কাছে সাহায্যও চাওয়া যায়…]
তাহলে, তাবারী এবং ইবনু সাদের বর্ণনামতে, সূরা নাজমের ১৯ এবং ২০ নম্বর আয়াতের সাথে বাদ পড়া আয়াত দুটো জুড়ে দিলে কীরকম শোনায় দেখা যাক—
তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও উযযা সম্পর্কে?
এবং আরেক (দেবী) মানাত সম্পর্কে?
তারা হলেন খুবই উঁচু পর্যায়ের (ক্ষমতাবান দেবী)
এবং তাদের কাছে সাহায্যও চাওয়া যায়…
ইবনু সাদ এবং তাবারীর দাবি, পরের দুই আয়াত শুনে মক্কার মুশরিকরা খুব উৎফুল্ল হয়ে উঠল। তারা ভাবল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবার তাদের দেবীদের প্রশংসা করলেন। তার মানে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের দেবীদের প্রভু হিশেবে মেনে নিয়েছেন। তাই সেদিন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং অন্যান্য মুসলিমদের সাথে মক্কার মুশরিকরাও সিজদা করেছিল মক্কা প্রাঙ্গণে।
তাবারী এবং ইবনু সাদের এই রেফারেন্সগুলো পরে ইসলামবিদ্বেষী এবং খ্রিষ্টান মিশনারিরা লুফে নেয়। তারা এই ঘটনাকে সত্য প্রমাণ করার জন্য সূরা ইসরার ৭৩-৭৫ নম্বর আয়াত এবং সূরা হজের ৫২ নম্বর আয়াতকে রেফারেন্স হিশেবে দাখিল করে থাকে।
সাজিদের সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং শেষ হলে ইমতিয়াজ ভাই বললেন, মারাত্মক ব্যাপার তো! রুশদি এই ইনফরমেশানগুলো কোথায় পেয়েছে? আত-তাবারী এবং ইবনু সাদের সীরাতে?
হুম বলল সাজিদ।
পিকলু দা বললেন, তো সাজিদ, তোর মতে রুশদি এখানে ভুল ইনফরমেশান দিয়ে। মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে, এই তো?
হ্যাঁ সাজিদের উত্তর।
হাসল পিকলু দা। বলল, আচ্ছা, ধরেই নিলাম যে, সালমান রুশদি ইসলামের কিছুই জানে না বা কিছুই বোঝে না; কিন্তু তুই কি বলতে চাইছিস ইবনু সাদ আর আল তাবারীর বর্ণনাও ভুল?
সাজিদ হালকা দম নিয়ে বলল, দাদা, আমি আগেও বলেছি, ইবনু সাদ হোক বা আত-তাবারী হোক বা অন্য যে-কেউ, তাদের কাছে তো আর ওহী আসত না। যেহেতু তাদের গ্রন্থগুলো আসমানী কিতাব নয়, তাই সেগুলোর মধ্যে ভুল-ভ্রান্তি থাকতেই পারে। অস্বাভাবিক কিছু নয়।
এতক্ষণ পরে সোহেল রানা ভাই মুখ খুললেন। বললেন, আচ্ছা সাজিদ, ধরেই নিলাম তুমি ঠিক বলছ। ইবনু সাদ বা আত-তাবারীর বর্ণনা ভুল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন তাদের বর্ণনা ভুল বা তোমার কাছে কেন তাদের বর্ণনাকে ভুল মনে হচ্ছে?
এবার আমরা সবাই নড়েচড়ে বসলাম। এরই মধ্যে আড্ডায় চলে এসেছে পঙ্কজ দা, ইসলামিক স্টাডিজের ইবরাহিম খলীল এবং ফিন্যান্সের শরীফ ভাই। সোহেল ভাইয়ের সাথে সুর মিলিয়ে সৌরভ বলল, Yes, explain, why you think renowned author both At Tabari & Ibn Saad are wrong according to u…
ইতোমধ্যে আড্ডায় অনেকে এসে জমা হওয়াতে আড্ডা বেশ জমে উঠেছে। আমরা সবাই অপেক্ষায় আছি সাজিদের উত্তরের জন্য। দেখার অপেক্ষা সাজিদ কীভাবে এই ক্রিটিক্যাল প্রশ্নের উত্তর দেয়। একটু ঝেড়ে কেশে নিয়ে সে বলতে শুরু করল, প্রথমে, আমাদের বুঝতে হবে, ইবনু সাদ এবং আত-তাবারীর গ্রন্থে যা আছে, তা মানুষের রচনা। এর মধ্যে যেমন শুদ্ধ জিনিস, শুদ্ধ বর্ণনা আছে, ঠিক তেমনই ভুল জিনিস, ভুল বর্ণনা থাকাটাও স্বাভাবিক। কারণ, ইবনু সাদ বা আত-তাবারী, কেউ-ই রাসূলের যুগের প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন না। তারা রাসূলের জীবনী লিপিবদ্ধ করতে গিয়ে যেখানে, যার কাছে যা পেয়েছেন, তা-ই লিপিবদ্ধ করেছেন। ভুল-শুদ্ধ কতটুকু, তা নির্ণয়ের চেয়ে আপাতত সংরক্ষণ করাকেই তারা প্রাধান্য দিয়েছিলেন।
তাদের রচনায়ও যে ভুল থাকতে পারে, তা তারা নিজেরাও স্বীকার করে গেছেন। আত-তাবারী তার কিতাবের শুরুতেই বলেছেন, Hence, if I mention in this book a report about some men of the past, which the reader of listener finds objectionable or worthy of censure because he can see no aspect of truth nor any factual substance therein, let him know that this is not to be attributed to us but to those who transmitted it to us and we have merely passed this on as it has been passed on to us.
অর্থাৎ তিনি শুধু তা-ই কিতাবে স্থান দিয়েছেন, যা তার পর্যন্ত পৌঁছেছে। এখন কেউ যদি তার কিতাবে কোনো আপত্তিকর বিষয়াদি খুঁজে পায় যা ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর সাথে সাংঘর্ষিক এবং অন্যান্য সহীহ সূত্রে তা বাতিলযোগ্য দেখা যায়, তাহলে সে-দায় আত তাবারীর নয়, তিনি যার কাছ থেকে পেয়েছেন, কেবলই তার। তিনি এখানে কেবল একজন লিখিয়ে-এর ভূমিকায়। সুতরাং, আত-তাবারীর বর্ণনা যে ভুল হতেও পারে, তা আত-তাবারীই বলে গেছেন। একই কথা, একই ব্যাপার ইবনু সাদ এর ক্ষেত্রেও।
এতটুকু বলে সাজিদ থামল। পিকলু দা বললেন, ভুল হতেও পারে মানে এটি প্রমাণিত হয় না যে, তিনি ভুল। ভুল হতেও পারে এর পরের শর্ত কিন্তু সঠিকও হতে পারে। আমরা তাহলে কোনটি ধরে নেব? তিনি ভুল না শুদ্ধ?
সাজিদ হাসল। এরপরে বলল, দেখা যাক কী হয়…। এরপর আবার বলতে শুরু করল, সকল ইতিহাসবিদদের মতে, সূরা নাজম নাযিল হয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত প্রাপ্তির পঞ্চম বছরে, রজব মাসে, যে-বছর প্রথম একটি মুসলিম দল আবিসিনিয়ায় হিজরত করে। অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মদীনায় হিজরতের আরও ৮ বছর আগে। এখন সালমান রুশদি এবং খ্রিষ্টান মিশনারিদের দাবি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শয়তান থেকে ওহীপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং পরে আল্লাহ কুরআনের আরও কিছু আয়াতের মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই ব্যাপারে সংশোধন করে দেন। তাদের দাবি হলো, সূরা হজের ৫২ নম্বর আয়াত নাকি সেদিনের ওই ঘটনা, অর্থাৎ স্যাটানিক ভার্সেস ঘটনার দিনের প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছে যেখানে বলা হচ্ছে—আমি তোমার পূর্বে যে-সব রাসূল কিংবা নবী পাঠিয়েছি, তাদের কেউ যখনই কোনো আকাঙ্ক্ষা করেছে তখনই শয়তান তার আকাঙ্ক্ষায় (প্রতিবন্ধকতা, সন্দেহ-সংশয়) নিক্ষেপ করেছে; কিন্তু শয়তান যা নিক্ষেপ করে আল্লাহ তা মুছে দেন। অতঃপর আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। কারণ, আল্লাহ সর্বজ্ঞ, শ্রেষ্ঠ হিকমতওয়ালা।
সালমান রুশদি এবং খ্রিষ্টান মিশনারিদের দাবি, এই আয়াত দিয়েই আল্লাহ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তৎক্ষণাৎ সংশোধন করে দেন এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরা নাজমের সাথে মিশিয়ে ফেলা ওই আয়াত দুটো বাতিল করে দেন।
এতটুকু বলার পরে সাজিদ একটু থামল। এরপর আবার বলতে শুরু করল, শত্রুপক্ষ এই গল্প খুব চাতুরির সাথে বানিয়েছে বলা যায়; কিন্তু ঘাপলা রেখে গেছে অন্য জায়গায়। সেটি হলো, সূরা নাজম নাযিলের সাথে সূরা হজ নাযিলের মধ্যকার সময়ের ব্যবধান। সূরা নাজম নাযিল হয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুওয়াত প্রাপ্তির ৫ম বছরে, মক্কায়। সূরাটি মাক্কী সূরার অন্তর্গত। আর সূরা হজ নাযিল হয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুওয়াত প্রাপ্তির প্রায় ১২-১৩ বছর পরে, হিজরতের প্রথম বছরে। সূরাটি মাদানী সূরা।
অর্থাৎ তাদের কথানুযায়ী, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভুল করেন নবুওয়াত প্রাপ্তির ৫ম বছরে, আর সূরা হজ নাযিল হয় নবুওয়াত প্রাপ্তির ১৩ তম বছরে। দুই সূরার মধ্যে সময় ব্যবধান ৮ বছর।
অর্থাৎ তাদের দাবি অনুযায়ী, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভুল করেছেন আজ, আর আল্লাহ তা সংশোধন করেছেন ৮ বছর পরে…!
সাজিদ জোরে বলতে লাগল, আচ্ছা বলুন তো, নেহাত পাগল ছাড়া এই গল্প কোনো মানুষ বিশ্বাস করবে? ভুল করেছে আজ আর তা সংশোধন হলো আরও ৮ বছর পরে। তাদের দাবি মানতে গেলে বলতে হয়, এই আট বছরের মধ্যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরা নাজমে লাত, উযযা, মানাতের মতো দেবীর প্রশংসা করেছেন আবার একইসাথে কালেমায় বলেছেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই।
একদিকে দেবীদের কাছে সাহায্য চাওয়ার বৈধতা, আবার অন্যদিকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে তাদের বাতিল করে দেওয়া—এতসব কাহিনি করার পরেও কীভাবে তিনি সেখানে আল আমীন হিশেবে থাকতে পারেন? হাউ পসিবল?
আমরা কেউ-ই কোনো কথা বললাম না। চুপ করে মনোযোগ দিয়ে সাজিদের কথাগুলো শুনে যাচ্ছি। সে আবারও বলতে আরম্ভ করল, ঠিক আছে। তর্কের খাতিরে ধরেই নিলাম যে, সূরা হজের সেই সংশোধনী আয়াত আল্লাহ তাআলা আট বছর পরে নয়, ওই রাতেই নাযিল করেছিলেন এবং ওই রাতেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ভুল শুধরে নিয়েছিলেন। ভুল শোধরানোর পরে ওই রাতেই ঘোষণা করলেন যে—লাত, উযযা, মানাতের কাছে সাহায্য চাওয়া যাবে না।
খেয়াল করুন, তিনি দিনে বলেছেন এরকম :
তারা হলেন খুবই উঁচু পর্যায়ের (ক্ষমতাবান দেবী)
এবং তাদের কাছে সাহায্যও চাওয়া যায়…।
আবার রাতে নিজের ওই কথাকে পাল্টে নিয়ে বলছেন, লাত, উযযা, মানাতরা বাতিল। তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া যাবে না।
অবস্থা যদি সত্যিই এরকম হতো, তাহলে মক্কার কাফির, পৌত্তলিকদের কাছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি একজন ঠগ, প্রতারক ও বেঈমান বলে গণ্য হবার কথা ছিল না? অথচ, ইতিহাসের কোথাও কি তার বিন্দু-পরিমাণ প্রমাণ পাওয়া যায়? যায় না। যাদের সাথে তিনি মুহূর্তেই এতবড় বেঈমানি করলেন, তাদের কারও কাছেই তিনি ঠগ প্রতারক মিথুক সাব্যস্ত হলেন না। ব্যাপারটি খুব আশ্চর্যের নয় কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অপমান-অপদস্ত করার এতবড় সুযোগটি কীভাবে তার শত্রুপক্ষ মিস করে বসল? তা ছাড়া, ইতিহাস থেকে জানা যায়, মদীনায় হিজরতের আগের রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুকে তার ঘরে রেখে যান, যাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গচ্ছিত আমানত যথাযথভাবে ফিরিয়ে দেওয়া যায়। ভাবুন তো, যিনি একদিনে দু-রকম কথা বলতে পারেন, তাকে কিন্তু তখনো মক্কার কুরাইশরা বিশ্বাস করছে, ভরসা করে আমানত গচ্ছিত রাখছে। কীভাবে? তিনি যদি সত্যিই এমন কাজ করে থাকেন, এরপরও মক্কার লোকজনের তার ওপরে এত অগাধ বিশ্বাস স্থাপনের কারণ কী ছিল? আদৌ কি সেদিন Satanic Verses জাতীয় কিছু নাযিল হয়েছিল রাসূলের ওপর? উত্তর হলো–না।
সাজিদ ঘামতে শুরু করেছে; কিন্তু সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। এতজনের সামনে এভাবে সে আগে কোনোদিন কথা বলেনি। এজন্যেই হয়তো একটু অসুবিধে হচ্ছে তার। সে আবার শুরু করল-দ্বিতীয় প্রমাণ হলো, তর্কের খাতিরে যদিও ধরে নিই যে, Satanic Verses সত্য, তাহলে চলুন, সূরা নাজমের আয়াতের সাথে ওই তথাকথিত শয়তানের আয়াতগুলো মিলিয়ে আমরা আরেকবার দেখে নিই :
[১৯] তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও উযযা সম্পর্কে?
[২০] এবং আরেক (দেবী) মানাত সম্পর্কে?
[২১] তারা হলেন খুবই উঁচু পর্যায়ের (ক্ষমতাবান দেবী)
[২২] এবং তাদের কাছে সাহায্যও চাওয়া যায়…
[২৩] এগুলো তো কেবল (এই যে লাত, উযযা, মানাত এসব) কতকগুলো নাম, যে নাম তোমরা আর তোমাদের পিতৃপুরুষেরা রেখেছ, এর পক্ষে আল্লাহ কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। তারা তো শুধু অনুমান আর প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে, যদিও তাদের কাছে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে পথ নির্দেশ এসেছে।
খেয়াল করুন, ২১ এবং ২২ নম্বর আয়াতের পরে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছ থেকে কোনোরকম সংশোধনী আসার আগেই ঠিক ২৩ নম্বর আয়াতে এসে বলা হচ্ছে, এগুলো (লাত, উয্যা, মানাত ইত্যাদি) তো কেবল কতগুলো নামমাত্র, যা তোমরা (মুশরিকরা) এবং তোমাদের পূর্বপুরুষেরা রেখেছ। এদের (ক্ষমতার) পক্ষে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কোনো প্রমাণ নাযিল করেননি।
বড়ই আশ্চর্যের, তাই না? একটু আগে বলা হলো, তারা হলেন খুবই উঁচু পর্যায়ের দেবী। তাদের কাছে সাহায্যও চাওয়া যায়। আবার, তার ঠিক পরেই বলা হচ্ছে, এগুলো তো কেবল কিছু নাম মাত্র, যা তোমাদের মস্তিষ্কপ্রসূত। What a double stand! এরকম ডিগবাজি দেওয়ার পরেও যারা একত্ববাদে বিশ্বাস রেখে নতুন ইসলামে এসেছে, তারা কি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ছেড়ে তৎক্ষণাৎ চলে যেত না?
আর কুরাইশরা এত পাণ্ডিত্যের অধিকারী হয়েও এটি বুঝতে পারল না যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সাথে মাইন্ড গেইম খেলছে?
সাজিদ থামল। পঙ্কজ দা জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে, বলা হয় যে, আবিসিনিয়ায় হিজরত করা একটি দল এই ঘটনার কথা শুনে অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক মুশরিকদের দেব-দেবীদের স্বীকৃতি দেওয়ার ঘটনা শুনে ফেরত চলে এলো, তাদের ব্যাপারে কী বলবে?
সাজিদ বলল, হ্যাঁ, তারা ফেরত এসেছিল ঠিকই; কিন্তু তারা ফেরত এসেছে এই ঘটনা শুনে নয়, অন্য ঘটনা শুনে। নবুওয়াতের ৫ম বছরে তৎকালীন আরবের অন্যতম বীর উমার ইবনুল খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহু এবং হামজা রাযিয়াল্লাহু আনহুর মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ইসলাম গ্রহণের খবর শুনে, মক্কার পরিস্থিতিকে কিছুটা নিরাপদ ভেবে, তারা ফেরত এসেছিল। তথাকথিত Satanic Verses নাযিলের কথা শুনে নয়। প্রত্যেক সহীহ রেওয়ায়েতেই এটার বর্ণনা পাওয়া যায়।
আমাদের কারও মুখে কোনো কথা নেই। সাজিদ পিকলু দার দিকে তাকিয়ে বলল, পিকলু দা?
হু।
আচ্ছা, তুমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করো?
না।
ঠিক তো?
হ্যাঁ।
বিশ্বাস করো যে, ঈশ্বর বলে কেউ নেই?
হুম, বিশ্বাস করি যে—ঈশ্বর বলে আদৌ কেউ নেই।
আচ্ছা, তুমি কি বিশ্বাস করো শয়তান বলে কেউ আছে, যাকে দেখা যায় না, ধরা যায় না, বোঝা যায় না?
আরে না! আমি অমন ফাও জিনিসে বিশ্বাস-টিশ্বাস করি না।
ঠিক বলছ তো?
হ্যাঁ।
এবার সাজিদ হো-হো করে কিছুক্ষণ হাসল। এরপরে বলল, তাহলে কী করে তুমি সালমান রুশদির Satanic Verses বিশ্বাস করছ যেখানে তুমি শয়তান বলে কিছুতে বিশ্বাসই করো না? সালমান রুশদীকে বিশ্বাস করতে হলে তোমাকে আগে শয়তানের ওপরে ঈমান আনতে হবে। তারপরেই না Satanic Verses (শয়তানের আয়াত) বিশ্বাস করা যাবে। হা-হা-হা-।
এতক্ষণের নীরবতা ভেঙে সবাই এবার হাসিতে ফেটে পড়ল। অট্টহাসিতে ভরে উঠল আমাদের আড্ডাস্থল। মাগরিবের আযান হচ্ছে। পিকলু দা, পঙ্কজ দা আর সৌরভ উঠে চলে যাবার পথ ধরল। আমরা মসজিদের পথ ধরলাম।
দূরে পাখিরা আপনালয়ে ফিরে যাচ্ছে। আমি আর সাজিদ পাশাপাশি হাঁটছি। ভাবছি, ইশ! আজকের আড্ডাটি আরেকটু দীর্ঘ হলেও পারত…।
বালের যুক্তি।এজন্য মোল্লারা ধর্ষণ করে বলে শয়তান ভর করেছে।আসলে শয়তান বলে কিছু নেই এটা মূর্খদের কে বোঝাবে?শয়তান সেটা যেটা নেগেটিভ।এনার্জিই সব।হয় পজেটিভ নয় নেগেটিভ।আমার মনে হয় মোহাম্মদের তখন যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার মত অবস্থা ছিলো না তাই মোহাম্মাদ পৌত্তলিকদের নিবৃত্ত রাখার জন্য দেবদেবীর প্রশংসা করেন পরে সুযোগ বুঝে বেঈমানি করেন।আশ্চর্য হলে ও সত্য যে মোহাম্মদের জীবনে মোহাম্মদের ক্ষোভ ছিলো পৌত্তলিকদের উপর কিন্তু পৌত্তলিকরা যথেষ্ট সহিষ্ণু ছিলো।মোহাম্মদ পৌত্তলিকদের গালি দিতো লেখা আছে সেটা তবুও পৌত্তলিকরা চেয়েছিলো যাতে সহবস্থানে যাওয়া যায়।তাইলে আসল শয়তান কে?
Joss, bhai. Joss.
Ei abal emon shob kotha gulo bollo ja reality’r puropuri biporit.
আসল শয়তান হলো “fahim” রূপ ধারণ কারী।
খাটি কথা বলেছেন।
আসলে যিনি কমেন্ট করেছেন ওর নাম শয়তান ফাইিম
চমৎকার যুক্তিনির্ভর আলোচনা। আলোচনার পরতে পরতে রোমান্স!! যুক্তিনির্ভ
র আলোচনাই জ্ঞান আহরণ ও সিদ্ধান্তগ্রহণে বড় সহায়ক।
মূ-র্খের মত যুক্তি! শয়তান তো অবশ্যই আছে। শয়তান না থাকলে আল্লাহও থাকবেন না! মাদ্রাসার এত হুজুররা তো শয়তানের কবলে পরেই বাচ্চাদের সাথে **** করেন। এ থেকে আরো একটা জিনিস বোঝা যায় শয়তান আল্লাহ থেকে শক্তিশালী!
উপরে সাজিদ এবং তার সঙ্গীয় লোকজনের মধ্যকার কথোপকথন পড়ে জানতে পারলাম যে, শয়তানের আয়াত বলতে কোন আয়াত নাযিল হয়নি। ভুলবশতঃ এবিষয়ক বর্ণনা বিভিন্ন কিতাবে স্থান পেয়েছে। বিষয়টা নিয়ে অধিকতর স্টাডির উদ্দেশ্যে আরো কিছু আর্টিকেল ঘাটলাম। এরমধ্যে সংশয়.কম ও রয়েছে। সেখানে দেখলাম বেশকিছু হাদিসের রেফারেন্স দেয়া আছে যে নবিজী হযরত মুহম্মদ সাঃ এর বক্তব্য শুনে কাফের ও মুসলিমরা একত্রে সিজদাহ করেন। বেশ কয়েকটা হাদিসের রেফারেন্স দেয়া। হাদিস গ্রন্থগুলোও কি ভুল? আশা করি এর ব্যাখ্যা দেবেন।
https://www.shongshoy.com/%E0%A6%B6%E0%A7%9F%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%A4-%E0%A6%AC%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF/?amp
শংশয় ওয়েব সাইটে বিভিন্ন তাফসির গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছে। ছবি তুলে স্কিনশট আকারে দিয়েছে। এবং ‘স্যাটানিক ভার্সেস’এর সপক্ষে অনেক যায়গায় হাইলাইটস করে দিয়েছে। কিন্তু একটা বিষয় বুঝতে হলে পুরোটাই পড়া জররি, শুধু হাইলাইট করা নিজের সুবিধামত বুঝে নিলেই সমস্যা। আমি হাইলাইটস করা স্থানগুলোর পাশাপাশি পুরো স্কিনশটগুলোতে চোখ বোলাতে চেষ্টা করলাম। এখানে শংশয় এর কর্ণধার আসিফ মহিউদ্দীন হিপোক্রেটির আশ্রয় নিয়েছে। নিজের সুবিধামত দলিল বানিয়ে নিয়েছে।
তার দেওয়া স্কিনশটে একটা তাফসির গ্রন্থের পৃষ্ঠা থেকে পুরো বিষয়টি তুলে ধরছি,– স্যাটানিক ভার্সেস সম্পর্কিত বর্ণনা যে সহিহ রেওয়াত দ্বারা প্রমাণিত নয়, সেটা এই পৃষ্ঠাতেই আছে।
স্কিনশট দেওয়া পৃষ্ঠাতে দেওয়া আছে,–
…….[শয়তান হকের সহিত যাহা কিছু বাতিল মিশ্রিত করিয়াছিল আল্লাহ্ উহা দূরীভূত করিয়াছিলেন এবং স্বীয় আয়াতকে অধিকতর মযবুত করিয়াছিলেন।]– এখানে নিজের সপক্ষে দলিল হিসেবে হাইলাইট করে রেখেছে। কিন্তু পুরো বিষয়টি আসলে কি, সেটা দেখার প্রয়োজন মনে করেনি।
ইরশাদ হইল : وما أرسلنا من قبلك من رسول ولا نبي إلا إذا تمنى ألقى الشيطن في أمنيته فينسخ الله ما يلقي الشيطن ثم يحكم الله أبته والله عليم حكيم ، ليجعل ما يلقى الشيطن فتنة للذين في قلوبهم مرض والقاسية قلوبهم وأن تظلمين لفي شقاق بعيد .
[উল্লেখিত আয়াত অবতীর্ণ হইবার পর যখন ইহা স্পষ্ট হইয়া গেল যেই ছন্দযুক্ত কালাম আসলে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কালাম নহে বরং রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর কুরআন পাঠের মাঝে শয়তান উহা ঢুকাইয়া দিয়াছিল। তখন মুশরিকরা আরো অধিক শক্তি লইয়া মুসলমানদের বিরোধিতা করিতে লাগিল। তাহারা মুসলমানদের সহিত আরো কঠোর আচরণ করিতে লাগিল।]-এটা হাইলাইট করে দিয়েছে। কিন্তু এই কথার পরে যে, এটা বলা হয়েছে– “এই রিওয়ায়েতটি মুরসাল।” (এটা সে দেখেনি। অথচ ‘মুরসাল’ বা দুর্বল বর্ণনা যে গ্রহণযোগ্য হারিয়ে ফেলে, সেটা সে জানেই না।) এরপর বলা হয়েছে, ইবন জরীর যুহরী (র) আবূ বকর ইবন আবদুর রহমান হারিস ইবন হিশাম (র) হইতেও অনুরূপ বর্ণিত হইয়াছে। হাফিয আবূ বকর বায়হাকী (র) ‘দালাইলুন নবুওয়াত’ গ্রন্থে রিওয়ায়েতটি বর্ণনা করিয়াছেন । ঘটনাটি আবু ইসহাক (র) হইতে বর্ণিত। আমি (ইবন কাসীর) বলি মুহাম্মদ ইবন ইসহাকও অনুরূপ রিওয়ায়েত তাঁহার সীরাত গ্রন্থে বর্ণনা করিয়াছেন। এখানে আবার বলা হয়েছে, “কিন্তু সকল রিওয়ায়েতে মুরসাল ও মুনকারী”। মানে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। আল্লামা বাগাভী (র) তাঁহার তাফসীরে সব কয়টি রিওয়ায়েতকেই হযরত ইবন আব্বাস (রা) ও মুহাম্মদ ইবন কা’ব কুরাজীর কালাম হিসাবে বর্ণনা করিয়াছেন। অতঃপর আল্লামা বাগাভী (র) নিজেই এই প্রশ্ন উত্থাপন করিয়াছেন যে, আল্লাহ্ নিজেই যখন রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর মুহাফিয ও সংরক্ষণকারী সে ক্ষেত্রে এই রূপ ঘটনা ঘটিল কিভাবে? অতঃপর তিনি একাধিক উত্তর উদ্ধৃত্ত করিয়াছেন। কিন্তু সর্বাপেক্ষা উত্তম উত্তর হইল, প্রকৃতপক্ষে এই কথা শয়তান উচ্চারণ করিয়া মুশরিকদের কর্ণকুহরে ঢুকাইয়া ছিল। ফলে তাহারা ধারণা করিয়াছিল যে, ইহা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর মুখে উচ্চারিত হইয়াছে। অথচ ইহা বাস্তবের বিপরীত ছিল। বস্তুত শয়তানের পক্ষ হইতে শয়তানের মুখ থেকে উচ্চারিত ছিল, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর পক্ষ হইতে নহে।
এছাড়াও ওখানে অনেক মুমিন ছিলো। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে মক্কার মুশরিকদের এরকম সিজদা দেওয়া দেখে আশ্চর্যিত হয়ে যায়। কারণ, তারা ওই ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ ওই সময় শুনেইনি। শুনেছে কেবল মক্কার মুশরিকরা। কারণ, তারাই তখন শয়তান দ্বারা প্রভাবিত ছিল। কেউ যদি মানসিক রোগী বা কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলে বা মাতাল হয়ে বলে যে, আপনি আমাকে হেনতেন বলেছেন, গালি দিয়েছেন– সেটার জন্য তো প্রকৃত দোষ আমার হবে না। প্রকৃত ঘঠনা এরকমই ঘটেছিল।
সালমান রুশদি যেমন এটাকে ভুলভাল ভাবে আপনাদেরকে গিলাইছে, শংশয় ডট কমের আসিফ মহিউদ্দীনও ঠিক একই কাজ করেছে।
Alhamdulillah
আল্লাহ কোরানে বলেছেন প্রয়োজনে তিনি কোন আয়াত বাতিল করে অধিকতর ভালো আয়াত প্রদান করেন। এ ধরনের ভুল তো মানুষের হওয়ার কথা, আল্লাহর না।