সোমজিৎ লক্ষ্মণাবতীর অভিজাত পল্লী থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে রাজপথ অতিক্রম করছিলেন। বার্ধক্যের কারণে স্বভাবতই ঋজুতা হারিয়েছেন–যেমন দেহের, তেমনি মনেরও। তথাপি তাঁকে দীর্ঘপথ অতিক্রম করে রাজধানীতে আসতে হয়েছে। মন্ত্রী হলায়ুধ মিশ্রের সঙ্গে তিনি দেখা করতে চান। রাজধানীতে এসে অবধি নানান জনরব শুনছেন। কেউ বলছে, বৃদ্ধ মহারাজ রাজধানীতে নেই, গঙ্গাতীরে গিয়েছেন। কেউ বলছে, তিনি অত্যধিক রুগ্ন, রাজকার্য এখন দেখেন না। এক স্থানে আবার শুনলেন, মহারাজ নাকি যবনাক্রমণ আসন্ন দেখে প্রাণরক্ষার জন্য পলায়ন করেছেন। প্রকৃত সংবাদটি যে কী, কিছুই জানবার। উপায় নেই। হলায়ুধ মিশ্র তার সতীর্থ ছিলেন গুরুগৃহে। সেই সূত্রে এখনও উভয়ের মধ্যে হৃদ্যতা রয়েছে। বর্ষকাল পূর্বেও তিনি রাজধানীতে এসেছিলেন–তখনও সাক্ষাৎ হয়েছে। এবার তিনি হলায়ুধের মাধ্যমে মহারাজ লক্ষ্মণ সেন দেবের নিকটে যেতে চান। মহারাজের নিকট তিনি একটি আবেদন জানাবেন।
কিন্তু জনরবের পর জনরব শুনছেন। যদি আজ শুনলেন যে, রাজসভার এখন মান্যপুরুষ গোবর্ধন আচার্য, তো কালই আবার জানলেন, গোবর্ধন আচার্য নয়, প্রকৃত পুরুষ হচ্ছেন মহাপণ্ডিত হলায়ুধ মিশ্র। পরদিন আবার জানতে পারলেন–ও সমস্ত কিছুই সত্য নয়। মহারাজ বৃদ্ধ হয়েছেন, পাণ্ডিত্যের পীড়নে ইদানীং বিরক্ত হন। এখন রাজসভার আনন্দদানকারী নট গাঙ্গোকই হচ্ছে মূল ব্যক্তি। যদি কেউ পারে, তো সেই পারবে, রাজার সান্নিধ্যে নিয়ে যেতে। আর একজন আবার বললো, রাজসভার যে সংবাদ শুনছেন কোনোটিই সত্য নয়–এসব সংবাদের আদৌ কোনো ভিত্তি নেই। রাজসভায় কিছুই হয় না, মহারাজের অতো সময় কোথায়? আপনি বরং রানী বল্লভার সাক্ষাপ্রার্থী হন। রানী বল্লভা একে যুবতী, তায় সুন্দরীশ্রেষ্ঠা। রাজা যা-কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তা শয্যাতেই, বিশ্রাম গ্রহণকালে।
জনরবগুলির ভিত্তি যে কী, এবং কেন যে ঐ প্রকার একের-পর-এক জনরবের জন্ম। হচ্ছে, তার কোনো ব্যাখ্যাই কেউ তাকে দিতে পারলো না। না তার কন্যা, না জামাতা।
রাজপথটি প্রশস্ত। অপরাহ্নের রৌদ্র এসে পতিত হয়েছে অট্টালিকাসমূহের প্রাচীর গাত্রে। পথচারীদের সংখ্যা এখনও যথেষ্ট নয়। সম্ভবত গ্রীষ্মের প্রচণ্ডতাই কারণ। আষাঢ় মার্তণ্ডের প্রচণ্ড তেজ সংসারকে ঝলসিত করে দিচ্ছে। অনুমান হয়, দুই চারিদিনের মধ্যেই বৃষ্টি হবে। সোমজিৎ বুঝলেন, শীঘ্রই তাঁকে স্বগ্রামাভিমুখে যাত্রা করতে হবে–নতুবা বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে গেলে পথে কষ্টের সীমা থাকবে না।
দুই পার্শ্বে গৃহাঙ্গনের বৃক্ষছায়ায় বিশ্রামরত নগরবাসীদের দেখতে দেখতে চললেন সোমজিৎ। সম্ভবত গন্তব্যের নিকটে এসে গিয়েছেন। জলসিক্ত বাতাসের স্পর্শ অনুভব করছেন দেহে। গঙ্গাতীরেই তো চতুস্পাঠীটির অবস্থান বলে শুনেছেন। চক্ৰায়ুধ মিশ্র প্রতিষ্ঠিত এই নব চতুষ্পাঠীটি ইতোমধ্যেই যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছে, জামাতা কেশবাচার্য এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন, তিনিই হলায়ুধের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেছেন। হলায়ুধ নাকি প্রতি পক্ষে একটি অপরাহু এ স্থানে অতিবাহিত করেন। আজই সেই দিনটি, এবং অপরাহ্নকালও সমাগত। কষ্ট হচ্ছে তার দ্রুত পদক্ষেপণ করতে।
কন্যা সরস্বতী বলেছিলো, পিতঃ, ঐ দীর্ঘপথ পদব্রজে যাবেন না, আমি একটি দোলার। ব্যবস্থা করে দিই।
সোমজিৎ সম্মত হননি। সহাস্যে বলেছিলেন, মাতঃ ঠাকুরের কাছে এই প্রার্থনা করো যে, আমি যেন একবারই মানুষের স্কন্ধে উঠি, বারংবার ওঠা নামায় এ বৃদ্ধের বড় কষ্ট হবে।
অপরাহ্নকাল বলেই চতুষ্পাঠীটি নীরব। ইতস্তত কয়েকজন স্নাতককে দেখা যাচ্ছে। বালক ও কিশোরের দল যে কোথায়, বোঝা যাচ্ছে না। বৃহৎ চতুঃশালা সম্মেলক–গৃহটির পর বিশাল উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ। মধ্যে একদিকে দুটি বকুল বৃক্ষ, অন্যদিকে দুটি চম্পক। বৃক্ষলতা, পুষ্প ও পত্র–পল্লবে স্থানটি স্নিগ্ধ ও মনোরম। কেশবাচার্য দ্বারেই ছিলেন। জানতে চাইলেন, আপনি কি বৃক্ষতলে উপবেশন করবেন, না অলিন্দে?
বৃক্ষতলেই বসি, কি বলো? সোমজিৎ হাসলেন।
একটি তরুণ ব্রাহ্মণ সম্মুখে এসে প্রণাম করলে সোমজিৎ অবাক হলেন। বললেন, এটিকে যেন পরিচিত মনে হচ্ছে?
সেকি, মনে নেই আপনার? এ তো আমার অনুজ, মাধব–এবার স্নাতক হলো।
দীর্ঘায়ু হও বৎস। তুমি দেখছি দিব্য যুবাপুরুষটি হয়ে উঠেছো। তোমার কী ভালো লাগেন্যায় না স্মৃতি? নাকি ব্যাকরণ?
আজ্ঞে না, আমি কাব্যানুরাগী।
তা বটে, এই বয়সে কাব্যেই তো শিক্ষার্থীর অনুরাগ থাকে–কী পাঠ করছো এখন?
তরুণটির মুখে সলজ্জ হাসি দেখা গেলো। বললো, আমার বানভট্ট, ভবভূতি, দণ্ডী এঁদের ভালো লাগে। তবে এখন জয়দেব পাঠ করছি।
সে কি। সোমজিৎ অবাক হলেন। জয়দেব গোস্বামী কি তাঁর গীতগোবিন্দ সমাপ্ত করেছেন? তার পুঁথিও কি প্রস্তুত হয়ে গেছে? জানতে চাইলেন, তোমরা সম্পূর্ণ পুঁথি পেয়েছো?
আজ্ঞে না, কবি স্বয়ং আমাদের কাছে অংশে অংশে দিচ্ছেন এবং সেই অনুক্রমে আমরা লিপি প্রস্তুত করছি।
ক্ষুদ্র একটি দীর্ঘশ্বাস মোচন করলেন সোমজিৎ। রাঢ়ের সেই যুবকটি–পীত ধটিকা পরিধানে, উত্তলবাসীদের মতো মস্তকোপরি প্রকাণ্ড স্কুল শিখাঁটি, উপবীতখানিও রজ্জুসদৃশ সেই গ্রাম্য যুবকটি একদা সকলের মন জয় করে নিলো। ঐ কবিসভায় সোমজিৎও উপস্থিত ছিলেন। তাঁর শ্লোকও প্রশংসিত হয়েছিলো। কিন্তু জয়দেবের শ্লোকাবলীর মতো নয়। তথাপি অনেকের মত সোমজিতেরও সন্দেহ ছিলো। তারও মনে হয়েছিলো, ঐ পদ চলবে না–একেবারেই প্রাকৃতগন্ধী। কিন্তু চললো–রাজসভা সাদরে গ্রহণ করে নিলো। জয়দেব গোস্বামীকে।
জয়দেব বুঝি তোমাদের অত্যন্ত প্রিয়? সোমজিৎ তরুণটির মুখোপরি দৃষ্টি রাখলেন।
আজ্ঞে, তরুণ মাধবাচার্য পুনরায় সলজ্জ মুখখানি নমিত করে। তারপর বলে, তবে প্রাকৃত পদাবলী বোধ হয় আমার অধিকতর প্রিয়।
কেন? সোমজিতের ভ্রূ তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে। দেখা যায়, কেশবাচার্যের দৃষ্টিও আর সরল নেই।
ঐ প্রকার ভ্রূকুটি কুটিল প্রশ্ন হওয়াতে মাধব প্রথমে অপ্রস্তুত, পরে শঙ্কিত হয়। অনুমান করে, তার কথায় সম্ভবত বয়োজ্যেষ্ঠ দুজনই আহত হয়েছেন। সে অনুমতি প্রার্থনা করে। বলে, আমার কাজ আছে, অনুমতি দিন, আমি যাই।
তরুণটি প্রস্থান করলে সোমজিৎ মন্তব্য করলেন, এই তাহলে তোমাদের বিদ্যাদান। রুচি তো দেখছি ক্রমেই প্রাকৃত হয়ে যাচ্ছে–এ তো ঠিক নয়।
কেন, পিতঃ, গৌড়ীয় রীতিও তো একটি রীতি।
হ্যাঁ, এক প্রকার রীতি–কিন্তু সে রীতি অক্ষমের, আর্যত্বের তোমরা আর কিছু রাখলে না।
ঐ সময় দূরে দ্বারদেশে রাজপ্রহরীদের দেখা গেলো। পরে দেখা গেলো, একখানি দোলা। হলায়ুধ মিশ্র আসছেন।
নিকটে এসেই হলায়ুধ বাল্যবন্ধুকে উদ্বাহু হয়ে আলিঙ্গন করলেন। হলায়ুধ এখনও শক্তিমান–দেহ ঋজু, বর্ণ তপ্ত কাঞ্চনের মতো। কপালে চন্দন–লেখা, শিখাগ্রে পূজার পুষ্প, উপবীতখানি শুভ্র–সমগ্রদেহে পৌরুষের দীপ্তি বিচ্ছুরিত হচ্ছে। সোমজিৎ বললেন, তুমি দেখছি সেইরূপই আছো।
হ্যাঁ, বলতে পারো, হলায়ুধ বলেন,তবে এ কৃতিত্ব আমার নয়, ব্রাহ্মণীর–তিনি যেভাবে রাখেন, সেইভাবেই থাকি।
কিন্তু আমি কিরূপ বৃদ্ধ হয়েছি দেখেছো?
ও কিছু নয়, দেহ দেখে কিছুই বোধগম্য করা যায় না, অন্তরটি বৃদ্ধ না হলেই হলো।
ক্ষণপরে পুনরায় হলায়ুধ বলেন, সর্বাপেক্ষা উত্তম ব্যবস্থা কি জানো?
কি, সোমজিৎ কৌতূহলী হন।
নিজের নিকট কিছুই না রাখা, নিজেকেও না রাখা। নিজেকে অন্যের হাতে তুলে দাও, দেখবে যথার্থ যত্ন হচ্ছে, এবং তোমার দিনও অতিবাহিত হচ্ছে দায়হীন আনন্দের মধ্য দিয়ে।
কৌতুকালাপে কিছুক্ষণ গেলে সোমজিৎ প্রসঙ্গ পরিবর্তন করলেন। বললেন, হলায়ুধ, তুমি রাজপুরুষ, তোমার কাছেই আমি একটি আবেদন নিয়ে এসেছি, যদি আমার আবেদনটি তোমার অনুমোদন লাভ করে, তাহলে আমি সেটি মহারাজ লক্ষ্মণ সেন দেবের পাদপদ্মে নিবেদন করতে চাই।
হলায়ুধ গম্ভীর হলেন। সোমজিৎকে তিনি বাল্যকাল থেকে জানেন। সকল ব্যাপারেই সে গভীর এবং গুরুপ্রশ্ন ব্যতীত অযথা চিন্তা করে সময় ব্যয় করে না। হলায়ুধ বললেন, তোমার আবেদনটি কী, সেইটি আগে বলল।
ঐ কথার পরও সোমজিৎ ইতস্তত করেন। তিনি নিশ্চিত নন হলায়ুধ কতখানি আগ্রহী হবেন শুনতে। তথাপি তিনি আরম্ভ করলেন
তুমি জ্ঞাত কিনা জানি না, পুনর্ভবা তীরে আমাদের অঞ্চলে হরিসেন অত্যন্ত প্রতাপশালী সামন্তপতি। সম্প্রতি ঐ অঞ্চলে সদ্ধর্মী ভিক্ষুদের গমনাগমন লক্ষ্য করা যাচ্ছিলো–বিশেষত অন্ত্যজ শ্রেণীর মধ্যে তাদের হৃদ্যতা হয়ে উঠেছিলো নিবিড়। ডোম রমণীরা কেমন হয় নিশ্চয় শুনেছো। তারা যেমন শিথিল–শাসনা তেমনই উদ্ধৃঙ্খল, তাদের এই স্বভাব প্রায় সর্বত্র। ঐ অঞ্চলে পিপ্পলী হাট নামক একটি হাট আছে। ঐ হাটে একদা হরিসেনের অনুচর বজ্রসেন কয়েকটি কুলটা ডোম রমণীকে শাসন করতে যায়। ফল হয় ভয়াবহ, হাটের ক্ষিপ্ত মানুষ বজ্ৰসেন ও তার দুই অনুচরকে নৃশংসভাবে হত্যা করে–তাদের দেহ এমনই ছিন্নভিন্ন করে দেয় যে তাদের পরিচয় উদ্ধার করাই দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। সামন্ত হরিসেন ঐ ঘটনার প্রতিশোধ নেন–এবং সেই প্রতিশোধটিও ভয়ঙ্কর। ঐ পিপ্পলী হাটেই কয়েকদিন পর বিশাল এক জনসমাবেশে একটি কুলটা ডোম রমণীর মধ্যদেশে অগ্নিতপ্ত লৌহশলাকা প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয় এবং তার দুই শিশুপুত্রকে দ্বিখণ্ডিত করা হয়। একটি সদ্ধর্মী ভিক্ষুকে ঐ স্থানেই অগ্নিতে নিক্ষেপ করে। হত্যা করা হয়।
হলায়ুধ মিশ্র শুনছিলেন। বললেন, এ যে দেখছি একেবারেই পাশবিক কাণ্ড।
হ্যাঁ, পাশবিক কাণ্ডই বলতে পারো। সোমজিৎ পুনরায় বলতে থাকেন, কিন্তু হরিসেন। সেখানেই নিরস্ত হননি। আমাদের নিজগ্রাম উজুবটের উত্তরপাটক পল্লীটি হরিসেনের অনুচরদের হাতে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। বহু শিশু, নারী ও বৃদ্ধ নিহত হয়। এবং আশ্চর্য কাণ্ড কি জানো, ঐ আক্রমণের মুহূর্তেই পল্লীটি পুনরপি আক্রান্ত হয় অন্য আর একদল অশ্বারোহী সেনাদল দ্বারা। শোনা যায়, তারা পশ্চিম দেশাগত এবং জাতিতে যবন। কোনদিক থেকে আগমন এবং কোথায় প্রস্থান, তার কিছুই জানা যায়নি। তবে প্রকৃত কথা এই যে, উজুবট গ্রামের উত্তরপাটক পল্লীটি একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
হলায়ুধ মিশ্র সংবাদটি শুনে ঈষৎ চঞ্চল হয়ে উঠলেন। বললেন, তুমি যবন সেনাদলের কথা কী জানো, তাই বলো।
না হলায়ুধ, আমি ও বিষয়ে কিছুই জানি না, সোমজিৎ জানান। বলেন, এবং এ বিষয়ে আমি কিছু বলতেও আসিনি। যে কারণে আমি রাজধানীতে এসেছি সেটি শুনতে হবে তোমাকে। পিপ্পলী হাট ও উজুবটে ঘটনা দুটি ঘটে যাওয়ার পর থেকে সমগ্র অঞ্চলটি হয়ে রয়েছে সন্ত্রস্ত। গ্রামবাসী কেউ গৃহে রাত্রিযাপন করে না। কোনো রাজ–পুরুষকে দেখামাত্র মানুষ শত হস্তেন দূরাৎ পলায়ন করে। ব্রাহ্মণ ও কায়স্থ গৃহীদের গৃহে দাসদাসী নেই। ভূমি কর্ষিত হয় না, বীজ উপ্ত হয় না, শস্য কর্তনের লোক নেই–এক ভয়ানক অবস্থা সর্বত্র। এমতাবস্থায় মহারাজের কিছু করা উচিত। যদি তিনি তাঁর সামন্তদের শাসন না করেন, তাহলে ঐ অঞ্চলগুলিতে মানুষ থাকবে না। তাই আমার আবেদন, মহারাজ তার সামন্ত হরিসেনকে আদেশ দিন, যেন তিনি প্রজাপীড়ন না করেন–ঐ প্রকার দুষ্কর্ম যেন আর না হয়।
পণ্ডিত, কত ধান্যে কত তণ্ডুল যদি বুঝতে! হলায়ুধ হাসতে হাসতে বললেন। জানালেন, তোমার কথা আমি মহারাজের গোচরে আনতে পারি–এমনকি তোমাকেও আমি রাজসভায় নিয়ে যেতে পারি। কিন্তু মনে হয় না, তাতে তোমার লাভ হবে। প্রথমত, সামন্তদের রাজা শাসন করবেন না–কারণ, বহিঃশত্রু রাষ্ট্রের দ্বারদেশে উপনীত। দ্বিতীয়ত, সদ্ধর্মী ভিক্ষুদের আচরণ সন্দেহের উর্ধ্বে নয়। সুতরাং বিষয়টি শ্রবণ করে মহারাজ যখন মন্ত্রীদের অভিমত চাইবেন তখন মন্ত্রীদের তো যুক্তিসঙ্গত অভিমত দিতে হবে। বলো, কে তখন অযৌক্তিক অভিমতটি দেবে? বিশেষত একজন সামন্তপতির বিরুদ্ধে যেখানে অভিযোগ। উঁহু, অসম্ভব।
সোমজিৎ উপাধ্যায় হলায়ুধ মিশ্রের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করছিলেন। দেখছিলেন, পিপ্পলী হাটের ঘটনাটি বর্ণনার সময় হলায়ুধ ঈষৎ আন্দোলিত হলেও যখন ব্যবস্থা গ্রহণের কথা আসছে, তখন তিনি অন্য মানুষ হয়ে যাচ্ছেন। তখন তিনি যুক্তির প্রশ্ন তুলছেন, সম্ভাব্যতা অনুমান করছেন, এবং ঘৃণ্য ও নিষ্ঠুর ঘটনাবলীর নায়কদের শাস্তি না দিয়ে বরং সমর্থন করতেই আগ্রহী।
তিনি হতাশ হলেন। বললেন, শোনো হলায়ুধ, আমি জানি না, যবন জাতি সম্বন্ধে তোমার কি অভিমত। আপাতত তাদের শত্রু বলেই বিবেচনা করতে হবে। অপরদিকে সদ্ধমী বৌদ্ধদের রাষ্ট্রদ্রোহী বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এখন এই দুই শত্রুর মধ্যে কি একটির সঙ্গে মিত্রতা করা যায় না? বৌদ্ধরা এদেশবাসী, তাদের সঙ্গে আমাদের বহু সাদৃশ্য, দেশাচারে লোকাঁচারে আমরা ভিন্ন নই। কিন্তু যবন জাতি একেবারেই বহিরাগত। তারা এলে ধর্ম যাবে, কুল যাবে, জাতি যাবে। সেই সমূহ পতন থেকে দেশ ধর্ম ও জাতিকে রক্ষা করার জন্য কি সদ্ধর্মীদের সঙ্গে মিত্রতা করা যায় না?
তুমি বৌদ্ধ পাষণ্ডদের সাথে মিত্রতা করতে বলছো? হলায়ুধ সন্দেহান্বিত দৃষ্টিপাত করেন।
হ্যাঁ, চিন্তা করে দেখো, তাহলে তোমার ধর্ম রক্ষা পাচ্ছে, জাতি রক্ষা পাচ্ছে, রাজ্য রক্ষা পাচ্ছে–তুমি নিজে রক্ষা পাচ্ছে। আমার এই আবেদনটি তুমি রাজার কাছে নিবেদন। করো।
তুমি উন্মাদ সোমজিৎ, হলায়ুধ উঠে বসলেন। বললেন, তুমি বিলক্ষণ উন্মাদ! রাষ্ট্র। কি একজন ব্যক্তির ইচ্ছায়, ক্ষণিক সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে চলে? আজ ইচ্ছা করলে আর অমনি সদ্ধর্মী বৌদ্ধরা তোমার বন্ধু হয়ে গেলো? সদ্ধর্মী ভিক্ষুরা আর্য ধর্মের শত্রু, এ আজকের কথা নয়–বহুযুগ পূর্ব থেকেই এই শত্রুতা হয়ে আসছে। তুমি দেখো চিন্তা করে, ঐ ধর্মে স্বর্গ নরক নেই, যাগ যজ্ঞ নেই, বলিউপচার নেই, ব্রাহ্মণাব্রাহ্মণ নেই, একেবারেই তৃণমূলে যে অন্ত্যজ থাকে, যারা যথার্থই তৃণভোজী–এ হলো তাদের ধর্ম। এদের প্রধান দেবতা শূকর পালকের গৃহে খাদ্যগ্রহণ করেছে, তুমি চিন্তা করতে পারো? তুমি আমাদের আর্য ধর্মের কথা ভাবো, এ ধর্ম উচ্চশ্রেণীর। আর্যত্বের অর্থ হলো। শ্রেষ্ঠত্ব–এর কৌলীন্য ভিন্ন প্রকার–এর দানধ্যান আছে, উৎসব আছে, মেধযজ্ঞ আছে, স্বর্গ–নরক আছে, এ ধর্ম কর্মফলে বিশ্বাস করে এবং মনে করে না যে, সকল মানুষ সমান হতে পারে। সুতরাং মূলেই রয়েছে বিরোধ। বহু শতাব্দীর চেষ্টায় বৌদ্ধশক্তি বিনষ্ট করা। গেছে–আজ আর কোথাও বৌদ্ধশক্তি বলে কিছু নেই। কিন্তু আজ যদি তুমি তাদের। প্রশ্রয় দাও, তাদের সঙ্গে মিত্রতা করো, তাহলে কী হবে ভেবে দেখেছো? চণ্ডাল হড়ডি ক্ষেত্রকর ইত্যাদি সকল ব্রাত্যজন হয়ে উঠবে স্বেচ্ছাচারী, তোমার দাসদাসী বলে কেউ থাকবে না, সামন্তপতিদের ধনজন গৃহ সংসার সমস্তই লুণ্ঠিত হয়ে যাবে। কোট্টপাল নেই, মন্ত্রী নেই, সেনাপতি নেই, সামন্ত নেই, প্রহরী নেই, কী ভয়ানক অবস্থা হবে, কল্পনা করতে পারো?
দীর্ঘ বক্তৃতা প্রায়। সোমজিৎ মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন। শেষে বললেন, তোমার সঙ্গে তর্কে নামার ইচ্ছা আমার নেই। বৌদ্ধ সদ্ধর্মীদের সঙ্গে মিত্রতা করলে সমস্তই ধ্বংস হয়ে যাবে–এ আমার বিশ্বাস হয় না হলায়ুধ। এদেশে বৌদ্ধ ও সনাতন উভয় ধর্মের সহাবস্থান ছিলো–সে তো মাত্রই শতাব্দ দুই পূর্বের ঘটনা। পাল রাজারা বৌদ্ধ ছিলেন, কিন্তু কই, তাদের কালে তো ব্রাহ্মণ নিগ্রহের কোনো সংবাদ পাওয়া যায় না। বরং সকল ধর্মের লোক সহাবস্থান করতো। সনাতনধর্মী ব্রাহ্মণ যেমন ছিলো, তেমনি ছিলো সদ্ধর্মী ভিক্ষুও।
শুনতে শুনতে হলায়ুধ মিশ্র বিস্ময় মানেন, এ কী কথা সোমজিতের মুখে? এই বয়সে এসে কি লোকটার চিন্তায় বিকৃতি দেখা দিয়েছে? বিরক্তি বোধ করলেন তিনি। বললেন, সোমজিৎ, এসব বিতর্ক কেন তুলছো? আমি বুঝতে পারছি না, এসব শুধুই তর্ক, না এসব কথা তোমার মনের। আজ যদি তুমি বলো, তখনও ব্রাহ্মণ ছিলো, ধর্ম ছলো, তাহলে তো তোমার সঙ্গে তর্কই বৃথা। যদি তখন এদেশে ব্রাহ্মণই ছিলো, তাহলে সনাতনধর্মীদের দীক্ষাদানের জন্য তোমার আমার পূর্বপুরুষদের এদেশে কেন আনা হয়েছিলো? আজ নিজের অতীতকেই বিস্মৃত হতে চাও, এই তোমার ধর্মরক্ষা! ধিক তোমার পাণ্ডিত্যে!
সোমজিৎ আহত হলেন। বুঝলেন, হলায়ুধ তার কথা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক নন, কোনো সাহায্যই তিনি করবেন না। তবু শেষ চেষ্টা করলেন। বললেন, রুষ্ট হয়ো না হলায়ুধ, আমি তোমার সুহৃদ, তোমার কাছে যদি অন্তরের কথা প্রকাশ না করি, তাহলে কার কাছে করবো? আমার মনে হয়, ধর্ম জাতি উভয়ই এখন সংকটাপন্ন। যদি বিহিত না করা হয়, তাহলে সমস্তই ধ্বংস হবে। এতোকাল যা করা হয়েছে তা ভুল। তাতে বিরোধ বৃদ্ধি পেয়েছে, ঘৃণা, সন্দেহ ও প্রতিহিংসার ভাব লালিত হয়ে এমন আকার ধারণ করেছে যে এখন পরস্পর প্রত্যেকেই শক্র। এ না করে আমরা যদি প্রীতির কথা বলি, সহাবস্থানের কথা বলি, মিলনের কথা বলি–তাহলেই তো ঘৃণা দূর হয়, সন্দেহ যায় ও প্রতিহিংসার অবকাশ থাকে না। চিন্তা করে দেখো তুমি। বস্তুকণা বিচ্ছিন্ন হলে তার একরূপ আর ঐ বস্তুকণাই ঘনসংবদ্ধ হলে তার অন্যরূপ। আজ যদি এমন হয় যে, যবনাক্রমণের বিরুদ্ধে রাজার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত প্রকৃতিপুঞ্জও প্রতিরোধ সৃষ্টি করছে, তাহলে এই যবনদের আক্রমণ আর কয়দিন? তুমি মহামন্ত্রী, আমার কথাটি বিবেচনা করে দেখো। অন্তত রাজসভায় আমার প্রস্তাবটি দিয়ে দেখো।
হলায়ুধ মিশ্র উঠলেন। অহেতুক অনেক বিলম্ব হয়েছে। এই প্রকার প্রলাপ শুনতে হবে, তিনি কল্পনাও করেননি। তবু বললেন, বন্ধু সোমজিৎ, রাষ্ট্রীয় বিষয় নিয়ে চিন্তা করে তুমি অহেতুক মস্তিষ্ক উত্তপ্ত করছো, ওতে কোনো ফল হবে না। আর জেনো, ব্যক্তির ইচ্ছায় কিছুই হয় না–সমস্তই হয় রাষ্ট্রের প্রয়োজনে। আর এও জেনো, কর্মফল থাকবেই–দাসও থাকবে, প্রভুও থাকবে। প্রভু যে শাসন করে, সে যেমন কর্মফল, দাস যে শাসিত হয়, সেও তেমনি কর্মফল। যবনদের আগমনে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়েই বা কী করবে–যা ভবিতব্য তাই হবে। এও কর্মফল বলতে পারো। আমার বিশ্বাস, যবনদের আগমনে ধর্ম বলো, জাতি বলো, সমাজ বলল, কোনো কিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তারা যদি এদেশ জয় করে নেয়, তাহলে নিশ্চয়ই তাদের এদেশ শাসন করতে হবে। সামন্ত বলো, মন্ত্রী বলো, সেনাপতি বলো, এমনকি গ্রামপতি বীথিপতি বলো–এদের সহযোগিতা ব্যতিরেকে কি রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব? সুতরাং অহেতুক তোমার দুশ্চিন্তা। যবনরা যদি আসে, তখনও দেখবে তাদের উচ্চ শ্রেণীর লোকেরা সদ্ভাব করছে আমাদের উচ্চ শ্রেণীর লোকদের সঙ্গে। নীচ যে, সে সর্ব অবস্থায় নীচই থাকবে।
সোমজিৎ উঠলেন। হলায়ুধ মিশ্রের কথা শুনে ক্ষীণ হাসি ফুটলো তার মুখে। বললেন, মনে হচ্ছে যবনদের সংবর্ধনা জ্ঞাপন করার জন্য রাজধানীর লোকেরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেছে?
হলায়ুধ স্থির করেছেন পুরাতন বন্ধুর উপর কুপিত হবেন না। শান্ত কণ্ঠে বললেন, বিদ্রূপ করো না সোমজিৎ। যবনেরা কীরূপ শক্তি ধরে তা কি জানো? দৈহিক, শাস্ত্রিক, আধ্যাত্মিক সকল বলেই তারা অধিকতর পারঙ্গম। একটি যবন সাধুপুরুষকে দেখলাম, একটি মৃত বালককে মন্ত্রবলে জীবিত করে দিলো। তুমি কল্পনা করতে পারো, তিনটি বন্য ব্যাঘ নিমেষে বশীভূত হয়ে গেলো ঐ সাধুপুরুষটির সামান্য একটি ইঙ্গিতে। এদিকে রাজ জ্যোতিষীরা গণনা করে যা দেখেছেন, তাতে মঙ্গল কিছুই দেখা যাচ্ছে না মহারাজের জন্য। এমতাবস্থায় যজ্ঞানুষ্ঠানের বিধান দেওয়া হয়েছে, আমাদের বিশ্বাস, ওতেই কাজ হবে।
সোমজিৎ বিস্ময়বিস্ফারিত নেত্রে হলায়ুধের কথা শুনছিলেন। তাঁর বিশ্বাস হতে চাইছিলো না যে ঐ প্রকার কথা বলতে পারে হলায়ুধ মিশ্রের মতো লোক। তিনি ভেবেছিলেন, জিজ্ঞাসা করবেন, ব্রাহ্মণসর্বস্ব গ্রন্থখানির রচনা সমাপ্ত হয়েছে কি না–আর সেই আখ্যান গ্রন্থখানির কি হলো, যেখানি তিনি গত বৎসর আরম্ভ করেছিলেন। আরও জানার ইচ্ছা ছিলো, বল্লাল রচিত অদ্ভুত সাগর গ্রন্থখানি মহারাজ সমাপ্ত করছেন বলে তিনি শুনেছিলেন, গ্রন্থখানির রচনা কি সমাপ্ত হয়েছে? কিন্তু হলায়ুধের কথা শুনে ঐ সকল প্রসঙ্গ আর তুললেন না। তাঁর প্রবৃত্তি হলো না। তার তখন মনে হচ্ছে, গৌড়াধিপতি লক্ষ্মণ সেন দেবের মহামন্ত্রীর কোনো উদ্বেগ নেই, কোনো দুশ্চিন্তা নেই। কী ঘটবে, তা যেন সমস্তই জানা হয়ে গেছে সবার–এবং সেই সঙ্গে কার কি করণীয় তা–ও যেন স্থির করে রেখেছে প্রত্যেকে।
সোমজিৎ ক্লান্তপদে চতুষ্পঠী থেকে নিষ্ক্রান্ত হলেন। কেশবাচার্য জিজ্ঞাসা করলেন, পিতঃ আপনি পদব্রজে যাবেন?
তিনি কিছুই বললেন না জামাতার প্রশ্নের উত্তরে।
সন্ধ্যা প্রায় সমাগত। রাজপথে এখন বহু লোক। বিপণীগুলিতে তৈলদীপ জ্বালানো হচ্ছে। দূরে কোনো এক মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি শোনা গেলো। সোমজিৎ ক্লান্ত পদক্ষেপে ধীরগতিতে পথক্রমণ করছিলেন। একটি ভবনের সম্মুখ দিয়ে যাবার সময় দেখলেন ভবনটির সম্মুখে ক্ষুদ্র একটি জনসমাবেশ। একটি লোককে পরিচিত মনে হলো। মনে হলো, কোথায় যেন দেখেছেন। লোকটি নিকটে এসে প্রণাম করলে চিনলেন–সামন্ত হরিসেনের অনুচর উল্লাসদত্ত। বললেন, তুমি এখানে?
হ্যাঁ মহাশয়, উল্লাস জানায়, আমাদের প্রভু রাজধানীতে এসেছেন।
সোমজিৎ দক্ষিণে বামে দৃষ্টিপাত করে বলেন, তিনি কোথায়?
লোকটি ইতস্তত করে ক্ষণেক। শেষে বলে, উনি ঐ ভবনে এসেছেন। আপনি কি সাক্ষাৎ করবেন?
কে থাকে ওখানে, কার ভবন ওটি?
লোকটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলে, আপনার যদি প্রয়োজন থাকে, তাহলে বলুন।
সোমজিৎ বুঝলেন, হরিসেন কোথায় এসেছে সেই সংবাদটি তাঁর অনুচর গোপন রাখতে চায়। বললেন, সংবাদ গোপন রেখে কি হবে, আমি মন্ত্রী হলায়ুধ মিশ্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি, তোমার প্রভুকে বলে দিও, তার দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই, তিনি যা। করছেন, তা-ই এখন করণীয় সকলের।
লোকটি প্রায় বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে দেখে সোমজিৎকে। তারপর জানায়, না মহাশয়, আপনি যা ভাবছেন তা নয়–ঐ ভবনে কোনো রাজপুরুষ থাকেন না, ওটি নগর নটিনী বিদ্যুপ্রভার ভবন। আপনি কি অভ্যন্তরে যাবেন?
সোমজিৎ কী বলবেন ভেবে পান না। লোকটির কি হ্রস্ব দীর্ঘ কোনো জ্ঞানই নেই? বললেন, না বৎস, আমি বৃদ্ধ লোক, দেখতেই পাচ্ছো
তাতে কি? লোকটি সলজ্জ হাসি হেসে জানায়, এখানে বহু বৃদ্ধ রাজপুরুষ আসেন। বিদ্যুত্বভার নৃত্য দেখলে জীবনে ভুলতে পারবেন না।
সোমজিৎ আর বাক্য ব্যয় করলেন না। না, আর কিছু জানবার বা বুঝবার নেই। লোকমুখে এবং জনরবে যা শুনেছিলেন, সবই সত্য। সকলেই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, ব্যস্ত আনন্দ আর ব্যসনে। রাজকর্ম কী, প্রজাপালন কী, যুদ্ধবিগ্রহ কী,এ সকল বিষয়ে কারও কোনো চিন্তা নেই। উত্তম লক্ষ্মণাবতী, তিনি মনে মনে বললেন, উত্তম রাজ চক্রবর্তী পরম ভট্টারক ব্ৰহ্মক্ষত্রিয়কুলতিলক মহারাজ শ্রীমৎ লক্ষ্মণ সেন দেব, সমস্তই উত্তম, কারোই কিছু করণীয় নেই–না তোমার, না তোমার অনুচরদের। ভবিতব্য তোমাদের জন্য যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, তা–ই ঘটবে, বৃথাই আমরা চিন্তা করে মরি।