শ্রীবলরামের রূপ
শ্রীবলরামের রূপ ।। সুহিনী ।।
দেখ বলরাম ভুবন মাঝে।
রূপ দেখি কাম মরমে লাজে।।
চাঁচর চিকুরে চামরী মজে।
নানা ফুল ডাল তাহাতে সাজে।।
রজত মুকুরে মাজিয়ে মুখ।
তা দেখিয়া চাঁদের মরমে দুঃখ।।
তিলক বলিত ললিত ভালে।
মুগ্ধ ভ্রমরা অলক জালে।।
অরুণ দীঘল নয়ন দেখি।
বিকচ কমল কিসে বা লেখি।।
পাত সহিত কদম্ব ফুলে।
শ্রবণে মকর কুণ্ডল দোলে।।
তিল ফুল জিনি সুন্দর নাশা।
নাগরী জনার মনের বাসা।।
অরুণ বরণ দশনবাস।
বাঁধুলি ফুলের গরম নাশ।।
কুন্দ কোরক জিনিয়া দ্বিজ।
কি ছার তাহাতে করক বীজ।।
চণ্ডীদাস কহে হাসির কাছে।
আর কি জগতে অমৃত আছে।।
————–
চামরী – চমরী নামক গাভী। ইহার পুচ্ছে চামর হয়। মুকুরে – আয়নায়। বিকচ – প্রস্ফুটিত। দশনবাস – ওষ্ঠ। দ্বিজ – দন্ত। করক – দাড়িম্ব।
শ্রীবলরামের রূপ ।। গান্ধার ।।
ফটিক অঙ্গের জনু, রজত সুন্দর তনু,
রসে ঢল ঢল বলরাম।
বিগত কলঙ্ক চাঁদ, কোট গুঞ্জা মুখ ছাঁদ,
মৃগমদ তিলক অনুপাম।।
চাঁচর চিকুরে চূড়া, বনফুল মালা বেড়া,
টলমল শিখিদল তায়।
পরিমলে উনমত, মধুকর কত শত,
মধু পিবি মধুরিম গায়।।
পরিসর ভাল স্থল, বিলোল অলকামাল,
মুখচন্দ্র অতি অপরূপ।
হেরিতে চকিত চিত, চমকিত অতি ভীত,
কত শত মনমথ ভূপ।।
উন্নত বঙ্কিম চারু, কন্দর্প কামান উরু,
কলম পলাশ দুটি আঁখি।
বারুণী অসল ঘোরে, মেলিতে না পারে জোরে,
ঘুমে ঢুলু ঢুলু যেন দেখি।।
নাশা পুটে ঝলমল, বিলসে মুকুতাফল,
সুরঙ্গ অধরে সদা হাসি।
হেরিয়া দশন পাঁতি, সিন্দূর মুকুতা জাতি,
অমিয়া উগারে রাশি রাশি।।
বামকর্ণে ঝলমল, মণিময় কুণ্ডল,
দক্ষিণেতে নবীন মঞ্জরী।
কণ্ঠহার পরিপাটি, দেখিয়ে সোণার কাঁঠি,
উরে গুঞ্জা অতি মনোহারী।।
রঙ্গন মালতী কুন্দ, করবীর অরবিন্দ,
থরে থরে লাগয়ে তাহাতে।
কুন্দ মল্লিকা জাতী, কনক চম্পক যুথি,
রমণক তুলসীর পাতে।।
মন্দার অশোক ধুপ, শেফালিকা সাঙলা ফুল,
আর যত বনফুল ডালে।
ভ্রমিছে ভ্রমরা তায়, মধুর মধুর গায়,
উরু পর দোলে বনমালে।।
করভ শাবক শুণ্ড, সুবলিত ভুজদণ্ড,
কনক কেয়ূর তায় সাজে।
অঙ্গদ বলিয়া মণি, নীল পাটের থোপনি,
মণিবন্ধ বাহুতে বিরাজে।।
শ্রীদাম সুদাম সাথে, চলিয়া ভাণ্ডীর পথে,
চণ্ডীদাস দেখে সকৌতুকে।
দেখ দেখ রাম রায়, না ঠেলিও রাঙ্গা পায়,
চরণেতে রেখহ আমাকে।
————–
গুঞ্জা – কুঁচ। মৃগমদ – কস্তূরী। পরিমলে – সুগন্ধে। উনমত – উন্মত্ত। বারুণী – মদ্যবিশেষ। পাঁতি – পংক্তি। মঞ্জরী – মুক্তা। উরে -বক্ষস্থলে। মনোহারী – সুন্দর। অরবিন্দ – পদ্ম। করভ – হস্তীশাবক। অঙ্গদ – বাহুভূষণ। মণিবন্ধ – হাতের কবজা।