০৬. শুক্লযজুর্বেদ – ষষ্ঠ অধ্যায়

ষষ্ঠ অধ্যায়

মন্ত্রঃ– দেবস্য ত্বা সবিতুঃ প্রসবেংশ্বিনোর্বাহুভ্যাং পূষ্ণো হস্তাভ্যাম্। আদদে নার্যসীদমহং রক্ষসাং গ্রীবা অপি কৃন্তামি। যবোহসি যবয়াম্মদ দ্বেষো যবয়ারাতীর্দিবে ত্বাহন্তরিক্ষায় ত্ব পৃথিব্যৈ ত্বা শুন্ধস্তাঁল্লোকাঃ পিতৃষনাঃ পিতৃষদনমসি।১৷ অগ্ৰেণীরসি স্বাবেশ উম্নেতৃণামেতস্য বিত্তাধি ত্বা স্থাস্যাতি। দেবত্ত্বা সবিতা মধ্বানজু। সৃপিপ্পলাভ্যস্তেষধীভ্যঃ। দ্যামগ্রাম্পৃক্ষ আন্তরিক্ষং মধ্যেপ্রাঃ পৃথিবীমুপরেণা দৃংহীঃ।।২৷৷ যা তে ধামানুস্মসি গমধ্যে যত্র গাবো ভূরিশৃঙ্গা অয়াসঃ। অত্রাহ তদুরূগায়স্য বিষ্ণোঃ পরমং পদমব ভারি ভূরি। ব্রহ্মবনি ত্বা ক্ষত্রবণি রায়ম্পোষবনি পর্যহামি। ব্রহ্ম দৃংহ ক্ষত্রং দৃংহায়ুদৃংহ প্রজাং দৃংহ৷৷৩৷ বিষ্ণোঃ কর্মাণি পশ্যত যতো। ব্ৰতানি পম্পশে। ইন্দ্রস্য যুজ্যঃ সখা৷৷৷৷ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ। দিবীব চক্ষুরাতত৷৷৷৷ পরিবীরসি পরি ত্বা দৈবীর্বিশো ব্যয়স্তাং যজমানং রায়ো মনুষ্যাণা। দিবঃ সূনুরস্যেষ তে পৃথিব্যাল্লোক আরণ্যস্তে পশুঃ৷৷৬৷ উপাবীরস্যুপ দেবান্দৈকীর্বিশপাগুরূশিজো বহ্নিতমা। দেব ত্বষ্টবসু রম হব্যা তে স্বদন্তা৷৷৷৷ রেবতী রমং বৃহম্পতে ধারয়া বসূনি। ঋতস্য ত্বা দেবহবিঃ পাশেন প্রতি মুঞ্চামি ধর্ষা মানুষঃ ৮৷৷ দেবস্য তা সবিতুঃ প্রসবেংশ্বিনোর্বাহুভ্যাং পূষ্ণো হস্তাভ্যাম্। অগ্নীষোমাভ্যাং জুষ্টং নি যুনত্মি। অদ্ভষেধীডভ্যানু ত্বা মাতা মন্যতামনু পিতাইনু ভ্রাতা সগর্ভোহনু সখা সমূথ্যঃ। অগ্নীষোমাভ্যাং ত্বা জুষ্টং পোক্ষামি৷৯৷৷ অপাং পেরূরস্যাপো দেবীঃ স্বদন্তু স্বাত্তং চিৎসবেহবিঃ। সং তে প্রাণে বাতেন গচ্ছতাং সমঙ্গানি যজত্রৈঃ সং যজ্ঞপতিরাশি৷১০৷৷ ঘৃতেনাক্তৌ পশুস্রায়েথাং। রেবতি যজমানে প্রিয়ং ধা আ বিশ। উয়োরন্তরিক্ষাৎ সজুদেবেন বাতেনাস্য হবিষত্মনা যজ সমস্য তম্ব ভব। বর্ষো বর্ষীয়সি যজ্ঞে যজ্ঞপতিং ধাঃ। স্বাহা দেবেভ্যো দেবেভ্যঃ স্বাহা।।১১। মাহির্ভূৰ্মা পৃদাকুনমস্তে আতানানা প্রেহি। ঘৃতস্য কুল্যা উপ ঋতস্য পথ্যা অনু৷৷১২৷৷ দেবীরাপঃ শুদ্ধা বোঢ়ংসুপরিবিষ্টা দেবে সুপরিবিষ্টা বয়ং পরিবেষ্টাররা ভূয়াস্ম৷৷১৩৷৷ বাচং তে শুঙ্খামি প্রাণং তে শুল্কামি শ্রোত্রং তে শুল্কামি নাভিং তে শুল্কামি মে তে শুল্কামি পায়ুং তে শুন্ধামি চরিত্রান্তে শুন্ধামি৷৷১৪৷৷ মনস্ত আ প্যায়তাং বাক্ত আ প্যায়তাং প্রাণস্ত আ প্যায়তাং চক্ষুস্ত আ প্যায়তাং শ্রোত্ৰং ত আ প্যায়। যত্তে ক্রুতং যদাস্থিতং তত্ত আ প্যায়তাং নিষ্ঠ্যায়তাং তত্তে শুধ্যত্ শমহোভ্যঃ। ওষধে ত্ৰায়স্ব স্বধিতে মৈনং হিংসীঃ১৫৷৷ রক্ষসাং ভাগগাহসি নিরস্তং রক্ষঃ। ইদমহং রক্ষোহভি তিষ্ঠামীদমহং রক্ষোহব বাধ ইদমহং রক্ষোহধমং তমো নয়ামি। ঘৃতেন দ্যাবাপৃথিবী প্রোণুবাথাং। বায়ো বে স্তোকানামগ্নিরাজ্যস্য বেতু স্বাহা। । স্বাহাকৃতে ঊর্বনভসং মারুতং গচ্ছত৷৷১৬৷৷ ইদমাপঃ প্র বহতাবদ্যং চ মলং চ যৎ যচ্ছাভিদুদ্ৰোহামৃতং যচ্চ শেপে অভীরূণম্। আলো মা তম্মদেনসঃ পবমানশ্চ মুঞ্চতু৷১৭৷ সং তে মনো মনসা সং প্রাণঃ প্রাণেন গচ্ছতা। রেড়স্যগ্নিষ্ট শ্ৰীণাত্বাপস্থা সমরিণন্নাতস্য ত্বা ব্রাজ্যৈ পূষ্ণো রংহ্যাঁ উম্মণো ব্যথিষত্ প্ৰযুতং দ্বেষঃ৷৷১৮৷৷ ঘৃতং ঘৃতপাৰানঃ পিবত বসাং বসাপানঃ পিৰতান্তরিক্ষস্য হৰিরসি স্বাহা। দিশঃ প্রদিশ আদিশো বিদিশ উদ্দিশো দিভ্যঃ স্বাহা।১৯৷৷ ঐন্দ্রঃ প্রাণে অঙ্গে অঙ্গে নি দীধ্যদৈন্দ্র উদানো অঙ্গে অঙ্গে নিধীতঃ। দেব ত্বষ্টরি তে সং সমেতু সলক্ষ্মা যদ্বিষুরূপংভবতি। দেৰত্ৰা যন্তমবসে সখায়োহনু ত্বা মাতা পিতরো মদন্তু৷৷২০াসমুদ্রং গচ্ছ স্বাহা হন্তরিক্ষং গচ্ছ স্বাহা দেবং সবিতারং গচ্ছ স্বাহা মিত্রাবরুণী গচ্ছ। স্বাহাহহোরাত্রে গচ্ছ স্বাহা ছদাংসি গচ্ছ স্বাহা দ্যবাপৃথিবী গচ্ছ স্বাহা যজ্ঞং গচ্ছ স্বাহা সোমং গচ্ছ স্বাহা দিব্যং নভো গচ্ছ স্বাহা হগ্নিং বৈশ্বানরং গচ্ছ স্বাহা মনো মে হার্দি যচ্ছ দিবং তে ধূমমা গচ্ছতু স্বজ্যোতিঃ পৃথিবীং ভস্মনাহ২পৃণ স্বাহা।।২১। মাহপো মৌষধীহিংসী ধামে রাজস্ততো বরুণ নো মুঞ্চ। যদাহুরয়্যা ইতি বরুণেতি শপামহে ততো বরুণ নো মুঞ্চ। সুমিত্রিয়া ন আপ ওষধয়ঃ সন্তু দুর্মিত্রিয়াস্তস্মৈ সন্তু যোহম্মান্দ্বেষ্টি যং চ বয়ং দ্বিম্মঃ।।২২৷ হবিষ্মতীরিমা আপো হৰিৰ্ম আ বিবসতি।  হবিষ্মন্ দেব অধরো হবিষ্ম অন্তু সূর্যঃ২৩৷ অগ্নের্বোপন্নগৃহস্য সদসি সাদয়ামীাগ্ন্যোর্ভাগধেয়ী স্থ। মিত্রবরুণয়োর্ভাগধেয়ী স্থ। বিশ্বেষাং দেবানাং ভাগধেয়ী স্থ। অমূর‍্যা উপ সূর্যে যাভিৰা সূর্যঃ সহ। তা নো হিন্বধ্বর৷৷২৪৷ হৃদ ত্বা মনসে ত্ব দিবে ত্বা সুর্যায় ত্বা। উধৰমিমমরং দিবি দৈবেষু হোত্রা যচ্ছ৷৷২৫ সোম রাজন বিশ্বাং প্রজা উপাৰরোহ। বিশ্বাত্ত্বাঃ প্রজা উপাবনোহন্তু। শৃণোত্বগ্নিঃ সমিধা হবং মে শূল্কাপো ধিষণাশ্চ দেবীঃ। শ্রোতা গ্রাবাণে বিদুষো ন যজ্ঞং শৃণোতু দেবঃ সবিতা হৰং মে স্বাহা।।২৬৷৷ দেবীরাপো অপাং নপাদ্যো ব ঊর্মিবিষ্য ইন্দ্রিয়াবান্ মদিন্তমঃ। তং দেবেভ্যো দেবত্ৰা দত্ত শুক্রপেভ্যো যেষাং ভাগ স্বাহা।।২৭৷৷কার্যিরসি সমুদ্রস্য ত্বা ক্ষিতা উন্নয়ামি। সমাপো অদ্ভিগ্মত সমোষধীভিলোষধীঃ ৷৷২৮৷ যমগ্নে পৃৎসু মর্ত্যম বাজেসু যং জুনাঃ। স যন্তা শাশ্বতীরিষঃ স্বাহা৷৷২৯৷৷ দেবস্য ত্বা সবিতুঃ প্রসবেংশ্বিনোর্বাহূভ্যাং পুষ্ণো হস্তাভ্যাম্। আদদে রাবাহসি গভীরমিমমধ্বরং কৃধীন্দ্রায় সুমূতম। উত্তমেন পবিনোর্জন্তং মধুমন্তং পয়স্বন্তং নিগ্রাভ্যা স্থ দেবশ্রুত ঔপয়ত মা৷৷৩০৷৷ মনো মে তপয়ত বাচং মে তৰ্পয়ত প্রাণং মে তৰ্পয়ত চক্ষু মে ও তপয়ত শ্রোত্রং মে তপয়তাত্মানং মে তপয়ত প্রজাং মে তপয়ত পশূন্মে তৰ্পয়ত গণান্মে তৰ্পয়ত গণা মে মা বি তৃষ৷৷৩১৷ ইন্দ্রায় ত্বা বসুমতে রুদ্রবত ইন্দ্রায় ত্বা ইইদিতাবত ইন্দ্রায় ত্বা হভিমাতিয়ে। শ্যেনায় ত্বা সোমভৃতেইগয়ে ত্বা রায়ম্পোষদে।৩২৷ যত্তে সোম দিবি জ্যোতি যৎ পৃথিব্যাং যদূরাবন্তরিক্ষে। তেনাস্মৈ যজমানায়োরূ রায়ে কৃধ্যধি দাত্রে বোচঃ।।৩৩ শ্বাত্ৰা বৃত্ৰতুরো রাধোগৃর্তাআমৃতস্য পত্নীঃ। তা দেবীর্দেৰ্বত্ৰেমং যজ্ঞং নয়তোপতাঃ সোমস্য পিবত৷৩৪৷ মা ভের্মা সং বিথা ঊর্জং ধৎস্য বিষণে বীড়ৰী সতী ৰীড়য়েথামূর্জং দধাথা। পাশ্ম হতো ন সোমঃ।।৩৫৷৷ প্রাগপাণ্ডদগধরার্বতত্ত্বা দিশ আ ধাবন্তু। অন্থ নিষ্পর সমরীর্বিদা৷৷৩৬। ত্বমঙ্গ প্রসংসিমো দেবঃ শৰিষ্ঠ মর্ত। ন হৃদন্যো মঘবস্তি মর্জিতেন্দ্র ব্রবীমি তে বচঃ ৩৭৷৷

.

মন্ত্ৰার্থঃ– ১। (যজ্ঞের স্তম্ভ প্রোথিত করার জন্যে গহ্বর খননের জন্যে অভ্ৰীটিতে উত্তোলিত করে) হে অভ্রে! সবিতাদেবের অনুজ্ঞায় বিদ্যমান (আমি) তোমায় অশ্বিনীর বাহু এবং পূষার হস্ত থেকে গ্রহণ করি। তুমি স্ত্রীরূপা। গহুর খননের নিমিত্ত তোমায় ভূমিতে পুনঃ পুনঃ আঘাত করে আমি রাক্ষসগণের মুণ্ড অবধি ছেদন করি। (যবগুলিকে জলে নিক্ষেপ করে) হে যবঃ! তুমি যববিশেষ (পৃথক করার শীলযুক্ত)। তুমি আমাদের থেকে দ্বেষ দূরীভূত করো এবং আমাদের থেকে অদাতাগণকে পৃথক্ করো।(যুপটিকে প্রোক্ষণ করে) হে যুপের অগ্রভাগ! দ্যুলোকের নিমিত্তরূপী হয়ে আমি তোমায় শুদ্ধ করি। হে যুপের মধ্যভাগ! অন্তরিক্ষের নিমিত্ত আমি তোমায় প্রেক্ষিত করি। হে যুপের মূলভাগ! পৃথিবীর নিমিত্ত আমি তোমায় পবিত্র করি। (প্রেক্ষিত জলটিকে গহ্বরে নিক্ষেপ করে) পিতৃগণের প্রতিষ্ঠাস্থল ও সমাধি প্রভৃতি শুদ্ধ হোক। (গহ্বরের অভ্যন্তরে পূর্ব-উত্তরদিকে অগ্রভাগগুলিকে সাজিয়ে দৰ্ভগুলি পেতে দিয়ে) হে দর্ভযুক্ত গহ্বর! তুমি পিতৃজনের স্থিত হওয়ার স্থান।

২। স্তম্ভ (স্তম্ভটিকে গহ্বরে প্রবিষ্ট করিয়ে) হে যুপ! তুমি উর্দ্ধে বা স্বর্গে) উখিতকারী শক্তিগুলির মধ্যে সর্বাগ্রে অবস্থিত (যজ্ঞকর্মে তুমিই স্বর্গপ্রদানকারী)। হে যুপ! তুমি সুখে এই গহ্বরে প্রবেশকারী। আমাদের দ্বারা যূপকে গহ্বরে স্থাপনের পর গহ্বর এটি জ্ঞাত হবে যে ঘূপটি গহ্বরের ওপর স্থিত হবে। হে নূপ! তোমায় সবিতাদেব মধুর ঘৃতে (বর্ষাজলে) উপলিপ্ত করুন। সুফল যুক্ত ঔষধিগণের নিমিত্ত, হে নূপ! আমি তোমায় গহ্বরে ধারণ করি। হে ঘূপ! তুমি আপন অগ্রভাগের দ্বারা দ্যুলোককে স্পর্শ করো। আপন মধ্যভাগের দ্বারা তুমি অন্তরিক্ষ পূর্ণ করে দিয়েছ। হে যুপ! তুমি তোমার শেষ মূলভাগটির দ্বারা পৃথিবীকে দৃঢ় করেছো।

৩। হে যুপ! তোমার দ্বারা প্রাপ্য সেই উত্তম লোকে গমনের কামনা আমরা করে থাকি। যেথায় অগণিত শৃঙ্গসম্পন্ন ও সঙ্গতিপন্ন গাভীগণ বিদ্যমান (গাভী = রশ্মিবাজি)। এখানেই সেই মহাগতি বিষ্ণুর পরমপদ পূর্ণরূপে প্রকাশিত। (যুপটিকে গহ্বরে প্রোথিত করে) হে ব্রাহ্মণদের সপ্রাপ্ত, ক্ষত্রিয়দের সপ্রাপ্ত, ধন অন্নাদির প্রদাতা, আমি তোমায় গহুরে ধারণ করি। হে যজ্ঞ্যুপ! তুমি ব্রাহ্মণকে দৃঢ় করো, ক্ষত্রিয়েকে দৃঢ় করো, আয়ুকে দৃঢ় করো এবং আমার প্রজাগণকে (= সন্তানগণকে) দৃঢ় করো।

৪। হে ঋত্বিজগণ (বিদ্বানগণ)। বিষ্ণু (= যজ্ঞের) বীর কর্মরাশিকে অবলোকন করো, যে বিষ্ণুর থেকেই এই সমস্ত ব্রত উদ্যাপিত হয়েছে। এই বিষ্ণুই ইন্দ্রের পরম অনুকূল মিত্র।

৫। সেই বিষ্ণুর পরম পদ বিদ্বানগণ সর্বদাই দর্শন করে থাকেন, ঠিক সেই প্রকারে যেরূপে দ্যুলোকে পরিব্যাপ্ত নক্ষত্রমণ্ডলীকে নেত্রের দ্বারা দর্শন করি।

৬। (কুশের রঞ্জু বা দড়িকে নাভিমূলের উচ্চতায় যজ্ঞস্তম্ভে তিনবার আবেষ্টন করে) হে ঘূপ! তুমি রঞ্জু দ্বারা পরিবেষ্টিত। দেবগণের প্রজা মরুৎগণ বা পশু তোমায় পরিবেষ্ঠিত করুক। মনুষ্যগণের গো-অশ্বদিগণ এই যজমানকে পরিবেষ্টিত করুক। হে স্বরগণ! তোমরা দুলোকের পুত্র। হে যুপ! পৃথিবীতে এটি তোমার আশ্রয় স্থান। অরণ্যে উৎপন্ন পশুরাজি তোমার ভাগ।

৭। হে তৃণবিশেষ! তুমি সমীবর্তী হয়ে রক্ষাকারী মিত্রস্বরূপ। (একটি তৃণের দ্বারা পশুকে স্পর্শ করাব)। দেবগণের প্রজা পশু, স্বর্গ প্রাপক অগ্নি সোম প্রভৃতি হবির্ভাগ যেন দেবগণের সপ্রাপ্ত হয়। হে ধৃষ্টাদেব! তুমি যজমানের ধনস্বরূপ। হে পশো! তোমার হবির্ভূত মাংসাদি দেবগণ আস্বাদন করুন।

৮। হে দুগ্ধরূপী ধনসম্পন্না গাভীগণ! তোমরা যজমানের ঘরে সুখে অবস্থান। করো। হে বৃহস্পতি! তুমি যজমানের ঘরে গবাদি ধনকে ধারণ করো। হে দেবগণ পশুহবিঃ পশো! আমি তোমায় যজ্ঞের বন্ধনে আবদ্ধ করছি। (মন্ত্র পাঠ করে পশুর শৃঙ্গের মাঝামাঝি কুশের রঞ্জুটি বাঁধবে)। এবার শমিতা তোমায় স্ববশে করুন।

৯। হে পশো! সবিতাদেবের অনুজ্ঞায় বর্তমান আমি, অশ্বিনীগণকে বাহুর দ্বারা এবং পূষার হস্তদ্বারা অগ্নি এবং সোমের প্রীতিকর যে তুমি, সেই তোমাকে যুগে সংযোজিত করছি। (মন্ত্র পাঠ করে পশুটিকে স্তম্ভের সঙ্গে বাঁধতে হবে)। হে পশো! আমি তোমায় জল এবং দর্ভ প্রভৃতি ঔষধির দ্বারা প্রোক্ষণ করি। (দর্ভের দ্বার পশুদের ওপর জল ছিটিয়ে দেবে)। হে পশো! দেবগণের হবিঃ হবার নিমিত্ত তোমার মাতা তোমায় অনুমোদিত করুন; তোমার পিতাও তোমায় অনুমোদিত করুন। তোমার ভ্রাতার তোমায় অনুমোদিত করুন। একই যুথে উৎপন্ন তোমার মিত্রও তোমার অনুমোদন করুন। হে পশো! তোমায় আমি অগ্নি ও সোমের প্রীতিকারক জেনে প্রেক্ষিত করছি।

১০। হে পশো, তুমি জলপান করে থাকো। (পশুর নিম্ন উদরাদি ভাগকে প্রেক্ষণ করবে) হে পশো তোমায় আপো দেবী আস্বাদ্য (= পবিত্র) করে তুলুন–কারণ পবিত্ৰীকৃত হয়ে সুস্বাদু পশু-মাংশ দেবতার হবিঃ রূপে পরিণত হয়। (মন্ত্রপাঠ করে পশুর সর্বাঙ্গে জল ছেটাবে) হে পশো! তোমার প্রাণ যেন বাহ্য প্রাণের সাথে সংযুক্ত হয়, সঙ্গত হয়ে অবস্থান করে। তোমার বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেন যথাবিধানে সেই সেই যজনীয় দেবতার সাথে সঙ্গত হয় এবং এই যজমান যজ্ঞস্বামী যেন অভীষ্ট স্বর্গাদির আশীষে আরো সঙ্গতিসম্পন্ন হয়ে ওঠেন।

১১। (পশুবধের জন্যে নিযুক্ত শমিতা, ব্যক্তির হাত থেকে অসি এবং স্বরু হাতে নিয়ে এবং সে দুটিকে ঘিয়ে আলিপ্ত করে) হে অসে–স্বরুগণ! ঘৃত দ্বারা আপ্লুত তোমরা দুজন এই বধ্য পশুটিকে রক্ষা করো। হে ধনকামনাযুক্ত স্তুতিপূর্ণ বাণী! তুমি যজমানের প্রিয় ধনাদিকে ধারণ করো। তুমি এই যজমানে প্রবেশ করো। হে স্তুতি! বায়ুদেবের সাথে সম্প্রীতি প্রাপ্ত হয়ে তুমি এই আসন্ন বধ্য পশুটিকে বিস্তীর্ণ অন্তরীক্ষে বিদ্যমান রাক্ষসাদির থেকে রক্ষা করো। তুমি স্বয়ং এই পশুহবির দ্বারা দেবতাদের যাজন করো এবং এই বধ্য পশুটির সাথে একাত্ম হও। হে বর্ষা হতে উৎপন্ন তৃণ! তুমি এই যজ্ঞের স্বামী যজমানকে ফলযুক্ত যজ্ঞে নিহিত করো। (মন্ত্রপাঠ করে পশুর নীচে, ভূমিতে তৃণদল রাখবে।) দেবতার জন্যে এই পশুহবি–দেবতার জন্যে এই পশুহবি।

১২। (পশুর মেদ চর্বি পৃথক করার জন্যে ব্যবহৃত দুটি কাঠের দ্বারা পশুটিকে বাঁধবার রঞ্জুটিকে মাটিতে ফেলে দিয়ে) হে রঞ্জু! তুমি সর্পের আকার বা অজগরের আকার কোনটাই ধারণ কোর না। হাত-মুখ প্রক্ষালনের নিমিত্ত জলের ঘড়াটিকে হাতে নিয়ে চলা যজমান-পত্নীকে পশুর নিকট নিয়ে গিয়ে প্রতিস্থাতা এই মন্ত্রটি পাঠ করাবেন। যজমান-পত্নী বললেন- হে বিস্তার প্রাপ্ত যজ্ঞ! তোমায় নমস্কার করি। তুমি শত্রুরহিত হয়ে সমাপ্ত হও। যজ্ঞমার্গে প্রাপ্ত আহুত ঘৃতের ধারাকে উদ্দেশ্য করে তুমি প্রবর্তমান হও।

১৩। হে হস্ত-পদ প্রক্ষালনের ঘটে সুষ্ঠুভাবে অবস্থিত জলসমূহ! শুদ্ধরূপী তোমরা, এই পশুটির শুদ্ধিকরণের দ্বারা দেবতাদের প্রাপ্ত করাতে সহায়ক ও সমর্থ হও। দেবতাদের মধ্যে অবস্থিত থেকে আমরাও যেন দেবগণের দ্বারা সর্বত্র পরিবেষ্টিত থাকি।

১৪। (মৃত পশুর কাছে উপবিষ্ট হয়ে যজমান-পত্নী) হে পশো! আমি তোমার জিহ্বাকে শুদ্ধ করি (জল দ্বারা মুখাঁটিকে স্পর্শ করাবে)। হে পশো! আমি তোমার চক্ষু শুদ্ধ করি (চক্ষুদ্বয় স্পর্শ করবে)। হে পশো! আমি তোমার কর্ণদ্বয় পবিত্র করে দিচ্ছি (কর্ণদ্বয় স্পর্শ করবে)। হে পশো! আমি তোমার নাভি শুদ্ধ করি (নাভিতে স্পর্শ করবে)। হে পশো! আমি তোমার শিশ্নকে সুদ্ধ করি (লিঙ্গকে স্পর্শ করবে)। হে পশো! পায়ুকে শুদ্ধ করি (পায়ুতে স্পর্শ করবে)। হে পশো! আমি তোমার চরণদ্বয়কে শুদ্ধ করি (মন্ত্রপাঠ করে জলদ্বারা পশুর চারটি চরণই স্পর্শ করবে)।

১৫। (যজমান-পত্নীর পরে, হস্ত-পদ প্রক্ষালনের জল দ্বারা যজমান এবং অধ্বর্যু পশুটিকে শুদ্ধ করবেন। ঘটস্থিত অবশিষ্ট জলটি পশুর সর্বাঙ্গে যজমান ছিটিয়ে দিয়ে বললেন) হে পশো! তোমার মন আপ্যায়িত হোক। তোমার জিহ্বা প্রসন্ন হোক। তোমার প্রাণ প্রসন্ন হোক, প্রফুল্ল হোক। তোমার চক্ষুরিন্দ্রিয় আপ্যায়িত হোক। তোমার শ্রবণশক্তি পরিবর্ধিত হোক। হে পশো! তোমার প্রতি বন্ধনাদির দ্বারা বা বধকার্য্যের দ্বারা যে ক্রুরতা আচরিত হয়েছে এবং যে কৃত্য বিহিত হয়েছে, সে সব তোমায় বিগতখেদ করে তুলুক। তোমার বিশৃঙ্খলিত অঙ্গপ্রত্যঙ্গাদি সংহত হোক। তোমার এই হোমীয় সর্বাঙ্গ হে পশো। শুদ্ধ হোক। দিন হোক বা রাত, সর্বকালের জন্যে হে পশো! তোমার নিমিত্ত কল্যাণ হোক। (বাকী জলটা পশুর ওপর ছড়িয়ে দেবেন)। (তিনটি দর্ডকে পশুটির বুকের ওপর রাখবেন। বলবেন–) হে ঔষধে! এই পশুটির রক্ষা করুন। (হাতে বারি নিয়ে) অহো! তুমি এই পশুর আত্মাকে দুঃখিত কোর না,। (মন্ত্রপাঠান্তে পশুটির বক্ষের ত্বক উপড়ে ফেলবে)।

১৬। (হোমীয় পশুর ত্বক উপড়ে ফেলার পূর্বে দৰ্ভতৃণ পশুর বক্ষে রাখা হয়েছিল এবং তরবারির দ্বারা পশুটির ত্ব কর্তনের সময় সেটি দুভাগ হয়ে গিয়েছিল। সেই দুটি ভাগকে নিয়ে অগ্রভাগটিকে বাঁ হাতে নিয়ে এবং মূলভাগটিকে হাতে নিয়ে অধ্বর্যু সেই দুটি (দর্ভ) তৃণকে পশুর রক্তে সিক্ত করবেন। (অধ্বর্যু বললেন) হে রক্তরজ্ঞিত তৃষ্ণ! তুমি রাক্ষসগণের ভাগস্বরূপ (মন্ত্রপাঠ করে দুটি তৃণকেই মাটির ঢিবিতে নিক্ষেপ করবে)। এই রাক্ষসবর্গকে যজ্ঞস্থান থেকে নিঃসৃত করা হোল। (যজমান) আমি এ রাক্ষস্বর্গকে পদাক্রান্ত করছি (তৃণের ওপর পা রাখবে) এই আমি রাক্ষসবর্গকে অবোন্ধিত করছি (অর্থাৎ পীড়িত করছি)। (তৃণদলকে পদদলিত করে) এই আমি রাক্ষসবর্গকে অত্যন্ত অন্ধকারপূর্ণ রসাতলে নিয়ে যাচ্ছি)। (পশুর উদর থেকে বের করা মেদ এবং সেই মেদকে বের করার জন্যে যে দুটি কাঠের টুকরো বিদ্যমান তাতে সেটি আলিপ্ত করতে হবে। এরপর অধ্বর্যু বললেন) হে দ্যাবা পৃথিবী! তোমরা দুজনে আপনাকে জল দ্বারা আচ্ছাদিত কর। হে বায়ো! তুমি বসার বিন্দুগুলি সম্পর্কে জ্ঞাত হও। আহবনীয়াগ্নি ঘৃতাহুতিকে জ্ঞাত হোক। এই আহুতি অগ্নির নিমিত্ত। (তৃণগুলিকে উঠিয়ে আহবনীয়াগ্নিতে হোম করবে) (চর্বি বা মেদ বের করার কাষ্ঠখণ্ড দুটিকেও অধ্বর্যু আহবনীয়াগ্নিতে হোমের অর্পণ করে বলবেন) হে বপাশপণী! (= কাষ্ঠখণ্ডদ্বয়!) অগ্নিতে আহুত তোমরা দুটিতে ঊর্ধ্ব অন্তরিক্ষে বিদ্যমান পবনে সপ্রাপ্ত হও।

১৭। (ঋত্বিক-যজমান সবাই চাতালের নিকট নিজেদেরকে পবিত্র করবে)। এই, জল যেখানে নিয়ে যাক, দূরীভূত করুক যা কিছু পাপ ও মল আমাদের শরীরে বিদ্যমান রয়েছে। যা কিছু আমার দ্বারা অকারণে দ্রোহিত হয়েছে আর যা কিছুর দ্বারা আমি অভীত (= নিষ্পপ; কেননা পাপী হলেই সে ভয় ভীত হবে, অন্যথা নয়) অবস্থাকে কলুষিত করেছি–সেইসব দূরীভূত হোক। জল এবং সোম আমাকে এই পাপ থেকে রক্ষা করুন।

১৮। (জহুতে পূর্ণ ঘৃতের দ্বারা সর্বপ্রথম পশুর হৃদয়টি ভর্জিত করুন, তেলেতে আঁকুন। এরপর পশুটির সর্বাঙ্গের মাংসই তেলেতে আঁকুন। বলুন–) হে পশু হৃদয়! তোমার মন দেবতাগণের মনের সাথে সঙ্গতি পূর্ণ হোক; তোমার প্রাণ দেবগণের প্রাণের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হোক। হে বসে, তুমি ক্ষুদ্রকায়, অতি অল্প। তোমায় অগ্নি সুপক্ক করে বিস্তৃতি দিক। জল তোমায় মাংস থেকে পৃথক করুক। এটি সম্পন্ন হোক বায়ুর গতি এবং পূষার (= সূর্য) গতির জন্যে। বাসা-টি পান করে অন্তরিক্ষবাসী রাক্ষসগণ ব্যথিত হোক। বসা-র হোমের দ্বারা, এইভাবে দুর্ভাগ্য দূর হল। (ঘৃত এবং বসাকে তরবারির দ্বারা মিশ্রিত করবে)।

১৯। ঘৃত পানরত হে দেবতাগণ! তোমরা ঘৃত দান করো। বসা পানরত হে পিতৃগণ! তোমরা বসা-পান করো। হে বসাজ্য! তুমি অন্তরিক্ষস্থ দেবতা ও পিতৃপুরুষগণের হবিস্বরূপ। এই অগ্নিতে আহুতি প্রদান করা হল। দিশা, প্রদিশা, আদিশা, বিদিশার উদ্দিশা-দিশার জন্যে এই বসাজ্য আহুত।

২০। (পশুহবিকে স্পর্শ করে) আত্মা সম্পর্কিত প্রাণ এই পশুটির অঙ্গে অঙ্গে নিহিত রয়েছে এবং আত্মা সম্পর্কিত উদান বায়ুও এর অঙ্গে অঙ্গে আবদ্ধ। হে ত্বষ্টাদেব! তোমার দ্বারা অভিনির্মিত এই পশুটির অঙ্গ-অঙ্গ যথাপূর্বক সন্ধিত হয়ে উঠুক। সেই পশুটির সন্তুলিত অবয়ব, যা কর্তনের জন্যে বিশৃঙ্খলিত হয়ে উঠেছে, পুনরায় সন্ধিত হয়ে উঠুক। হে পশো! এই প্রকার মন্ত্রের দ্বারা পুনরায় সন্ধিত অঙ্গ যুক্ত তোমাকে, আমাদের রক্ষার্থে দেবগণের মধ্যে সম্প্রাপ্ত হও এবং মিত্রবর্গ ও পিতামাতার অনুমোদন প্রাপ্ত করুক।

২১। (বধ্য পশুটির সুপক্ক-রন্ধিত পায়ুদেশের এক-তৃতীয়াংশ ভাগ তেরছা ভাবে কেটে এগারোটি খণ্ড করে এক একটি মন্ত্রের সাথে এক একটি টুকরোকে আহুতি দিন।) বলুন–হে গুদহবিঃ! তুমি অন্তরিক্ষে প্রাপ্ত হও। এটি আহুতি স্বরূপ। হে গুদহবিঃ! তুমি সবিতাদেবকে প্রাপ্ত হও। এটি আহুতিস্বরূপ। হে গ্ৰদহবিঃ! তুমি মিত্র বরুণকে প্রাপ্ত হও। এটি আহুতিস্বরূপ। হে গুদহবিঃ! তুমি দিন রাত্রিরূপী কাল-কে প্রাপ্ত হও। এটি আহুতিস্বরূপ। হে গুদহবিঃ! তুমি গায়ত্রী প্রভৃতি সাতটি ছন্দকে প্রাপ্ত হও। এটি আহুতিস্বরূপ। হে গুদহবিঃ! তুমি দাবা পৃথিবীকে প্রাপ্ত হও। এটি আহুতিস্বরূপ। হে গুদহবিঃ! তুমি যজ্ঞের অধিদেবতা বিষ্ণুকে প্রাপ্ত হও। এটি আহুতিস্বরূপ। হে গুদহবিঃ। তুমি দিব্য আকাশকে প্রাপ্ত হও। এটি আহুতিস্বরূপ। হে গুদহবিঃ! তুমি বৈশ্বানর অগ্নিকে সপ্রাপ্ত হও। এটি আহুতিস্বরূপ। সমুদ্ৰাদি দেবসঙঘ! আপনারা সবাই আমার মনকে আমার হৃদয়েই নিয়ন্ত্রিত করুন। (স্বরূহোম করবে)। হে স্বরগণ! তোমাদের ধূম যেন দ্যুলোককে স্পর্শ করে। সেটি যেন দ্যুলোক প্রাপ্ত হয়। তোমার জ্যোতি যেন স্বর্গকে প্রাপ্ত হয়। তুমি আপন ভষ্মের দ্বারা এই পৃথিবীকে ভরিয়ে দাও। এটি আহুতিস্বরূপ।

২২। (যে লোহার ছড়াটির উপর ধরে পশুটির হৃদয় (হৃৎপিণ্ডটি) রন্ধন করা হয়েছে, সেই শূলটিকে আর্দ্র ভূমি এবং শুষ্ক ভূমির সন্ধিস্থলে প্রোথিত করবে। শূলটিকে প্রোথিত করে অধ্বর্যু বলবে–) হে হৃদয়শূল। তুমি জলকে হিংসিত (হিংসাগ্রস্ত) কোর না। হে শূল! তুমি ঔষধিসমূহকে হিংসিত কোর না (ঋত্বিগ-যজমানাদি জলস্পর্শ করে বলবেন) হে রাজন্ করুণ্য পাপের যে যে স্থানে আমরা ভয়ভীত হয়ে পড়ি–তুমি আমাদের সেই-সেই স্থান থেকে মুক্ত কর। হে বরুণৎ জনসাধারণ গবাদি পশুকে অহন্তব্য বলে অভিহিত করে, হে বরুণ! আমরা তো সেগুলিকে এই প্রক্রিয়ার দ্বারা হিংসিতই করছি। অতএব হে বরুণ! তুমি আমাদের এই হিংসাকৃত পাপ থেকে মুক্ত কর। হে বরুণ! তোমার কৃপায় যেন আমার মিত্রলাভ করি। ঔষধিগণও যেন আমাদের কাছে সুমিত্র হয়ে ওঠে। হে বরুণ! জল এবং ঔষধিগণ সেই মনুষ্যের জন্যে দুঃখদায়ী মিত্রের ন্যায় প্রতিভাত হয়–যারা আমাদের প্রতি দ্বেষ পোষণ করে বা আমরা যাঁদের দ্বেষ করি।

২৩। (সায়ংকালে সূর্যাস্তের পূর্বে নদী প্রভৃতি প্রবাহ প্রাপ্ত জলের থেকে সোমীয় বসতীবারী জল নিয়ে আসবে। সূর্য ডোবার পর কূপ থেকে নিয়ে আসবে। হবিঃ দ্বারা যুক্ত যজমান বসতীবারী জলের দ্বারা অভিপূজিত করে থাকে। দ্যুতিমান যজ্ঞ এই বসতীবারী জলের দ্বারা হবিযুক্ত হবেন। সূর্য এদের দ্বারা হবিযুক্ত হোক।

২৪। হে বসতীবারী জলসমূহ! আমি তোমাদের অনষ্ট গ্রহ দক্ষিণাগ্নির মণ্ডপে স্থাপন করি। (মন্ত্রপাঠ করে নবনির্মিত গার্হপত্যাগ্নি স্থলের পশ্চিমদিকে বসতীবারীজলসমূহকে রাখবে।) (পুনরায় সেখান থেকে উঠিয়ে উত্তরদিকের বেদীর দক্ষিণ কিনারায় সেগুলিকে রাখবে।) হে বসতিবারীজলসমূহ! তুমি ইন্দ্র-অগ্নির ভাগস্বরূপ। (পুনরায় বসতিবারী জলসমূহকে উত্তরদিকের বেদীর উত্তর কিনারায় ধারণ করুন।) হে বসতিবারীজলসমূহ! তুমি মিত্র বরুণের ভাগ স্বরূপ। (পুনরায় সেটি উঠিয়ে বসতিবারীজলসমূহকে অগ্নরীয়ধিব্যের পিছনে স্থাপন করবে)। হে বসতিবারীজলসমূহৎ তুমি বিশ্বদেবের অংশভাগ! এই যে জলদেবতার গায়ত্রী ঋচা এবং এই যে বসতিবারীজল বর্তমান, যে জলের সাথে সূর্য গমন করে থাকে, সেই জল এনে আমাদের এই যজ্ঞকে দেবতার প্রতিযোগ্য করে তোলেন।

২৫। বেদির উপর ঘৃত পর্যন্ত সামগ্রী সাজিয়ে, হবিধান শকটের কাছে গিয়ে এবং সোম রঞ্জুমুক্ত করে দক্ষিণ শকটের কাছে ঈষার নীচে (অভিষব প্রস্তরের উপরে রেখে) হে সোম! তোমায় হৃদয়ের জন্যে উপহৃত করি। তোমায় বুদ্ধি, মন, দ্যুলোকের জন্য এবং সূর্যের জন্য উপহৃত করি। তুমি আমাদের এই হিংসা রহিত যজ্ঞকে দ্যুলোকে বিদ্যমান দেবতাদের কাছে প্রীতিকর করে তোলো। হে সোম! তুমি সাতজন বষট্‌কর্তাদের যজ্ঞকর্মে নিয়ন্ত্রিত করো।

২৬। (মুখ খুলে দিয়ে সোমগুলিকে পাথরের উপরে ধরুন)। হে রাজন সোম! তুমি সমস্ত প্রজ্ঞাগণকে সম্মানিত করো এবং সমস্ত প্রজাগণ তোমায় অভিনন্দন করুক। সমিধার প্রজ্জ্বল্যমান অগ্নি আমার আহ্বান (যাচনা) শুনুক। (মন্ত্র পড়ে অধ্বর্যু প্রচরণী সংজ্ঞক বার দ্বারা অতিপ্রণীতায় আহুতি দেবেন)। আপো দেবী (জল) এবং ধন প্রাপক স্তুতি সকল আমার আহ্বান শুনুন। হে সোম নিষ্পেষিত করার প্রস্ততসমূহ! তুমি আমার আহ্বান শোন যেমন বিদ্বান যজ্ঞকে জানেন ও শোনেন সেইরূপ সবিতা দেবও আমার আহ্বান শ্রবণ করুন। এটি আহুতি স্বরূপ।

২৭। (হে জলদেবতা গণ! তোমাদের অপত্যভূতা এই যে ঊর্মি এটি হবিম্মান, শক্তিশালিনী এবং অত্যন্ত হকারিণী। সেটিকে তুমি দেবতাদের মধ্যে প্রাপ্ত হবার জন্যে বীর্যবান সোমরস পানকারী দেবতাদের প্রদান কর– যে দেবতাদের তুমি ভাগস্বরূপ। এটি আহুতিস্বরূপ।

২৮। (প্রচরণী নামক সুবার মধ্যে অবশিষ্ট ঘৃতটিকে অগ্নিষ্টোমে হোম করুন–) হে অগ্নেৎ! যুদ্ধে তুমি যে ব্যক্তিকে রক্ষা করো এবং যে মানুষ্যকে তুমি অন্ন প্রাপ্তির নিমিত্ত প্রেরিত কর, সেই মনুষ্যই শাশ্বত অন্ন প্রাপ্ত হয়ে থাকে। এটি আহুতিস্বরূপ।

২৯। (উপাংশু নামক সোমরস পান করার জন্যে যে পাত্র, সেটি পূর্ণ করার জন্যে যে পাথরের দ্বারা সোমরস অভিযুত করা হয়ে থাকে–এই উপাংশুসেবন পাথরটিকে উঠিয়ে হিউচ্চারণের পূর্ব পর্যন্ত মৌন থেকে তারপর পাথরটিকে সম্বোধন করে বলবেন–সবিতাদেবের অনুজ্ঞায় বর্তমান আমি অশ্বিনীকুমারগণের বহু ও পূজা কাৰ্য্যে ব্যবহৃত হস্তের দ্বারা হে উপাংশুসবন পাথর! গ্রহণ করছি। তুমি ধনপ্রদানকারী।

৩০। হে পাথর! তুমি আমাদের এই যজ্ঞকে গহন, সুগভীর করে তোল। আমাদের যে যজ্ঞে উত্তম পাথরের দ্বারা ইন্দ্রের জন্যে বলপ্রদ মধুর এবং দুগ্ধাদিযুক্ত সোমরস অভিযুত করা হয়েছে। হে বসতীবরী জলসমূহ, তুমি আমাদের দ্বারা বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্য। তুমি দেবতাদের দ্বারা শ্রবণাহ। হে জলসমূহ! অভিযুত সোমরসে মিশ্রিত হয়ে তুমি আমাদের তৃপ্ত করো।

৩১। হে জলসমূহ! তোমরা আমারক মনকে তর্পিত করো; এই আমার বাণীকে তর্পিত করো; আমার প্রাণকে তর্পিত করো; আমার চক্ষুদ্বয় তর্পিত করো; আমার শ্রোতৃদ্বয় তপিত করো; আমার আত্মা তর্পিত করো; আমার সন্তানকে তর্পিত করো; আমার পশুদের তর্পিত করো; এবং আমার সহযোগিদের তর্পিত করো। হে জলসমূহে! তোমার কৃপায় যেন আমার সহযোগিরা আমাতে বিগত তৃষা না হয়।

৩২। (উপাংশুসবন নামক পাথরগুলিকে কৃষ্ণাজিনের ওপর ধরে তার ওপর এই পাঁচটি যজুমন্ত্র পাঠ করে, পাঁচ বার সোম অর্পণ করুন)। হে সোম! প্রাতঃসবনে সোমরসের অংশভাগী বস্তুগণের দ্বারা যুক্ত ইন্দ্রের জন্যে তোমায় ধারণ করি। মাধ্যন্দিন সবনে সোমভাক্‌ রূদ্রগণের সঙ্গে যুক্ত ইন্দ্রের জন্যে তোমায় ধারণ করি; তৃতীয় সবনে সোম আদিত্যগণের দ্বারা যুক্ত ইন্দ্রের জন্যে এবং শত্রুনাশক ইন্দ্রের জন্যে আমি তোমায় এই পাথরের ওপর অভিযবের নিমিত্ত ধারণ করছি। (এই বাক্যগুলি উচ্চারণ করে তিনবার মুঠো-মুঠো সোম পাথরের ওপর ধারণ করবে)। হে সোম! ধন ও অন্নদাতা অগ্নির জন্যে আমি তোমায় গ্রহণ করছি।(এটি পাঠ করে পঞ্চম বার সোমকে পাথরের ওপর ধারণ করবে)।

৩৩। (উপাংশুসবনের উপর পাঁচ বার অর্পিত সোমটিকে স্পর্শ করে)হে সোম! দ্যুলোকে যে তোমার জ্যোতিস্বরূপ রয়েছে; যে বিস্তীর্ণ অন্তরিক্ষে তোমার জ্যোতির্ময় স্বরূপ স্থিত, তার থেকে এই যজমানের নিকটে ধনাদির প্রদাতা ইন্দ্রের সমক্ষে পক্ষপাতিত্বের সাথে কথা বলো।

৩৪। হে গ্রহণীয় জলসমূহ! তোমরা ক্ষিপ্র, বৃত্রসংহারক, ধনদাতা তথা সোমামৃতের পালক। সেই তুমি এই আহুত যজ্ঞে দেবগণকে আমাদের কাছে প্রাপ্য করে তোলো। হে জলসমূহ! অনুজ্ঞাত দেবভাবে ভাবিত হয়ে তুমিও সোমপান করো।

৩৫। (উক্ত মন্ত্র পড়ে হোতৃচমসের দ্বারা নিগ্রাহ্যজলসমূহকে সোমের উপর ছেটাবে)। (উপাংশুসবন নামক পাথরের দ্বারা সোমকে কুটবে এবং বলবে–) হে সোম! তুমি ভয়ভীত হয়ে কম্পিত হয়ো না। তুমি বল ধারণ করো। হে ধারণকী দ্যাবাপৃথিবী তুমি যেমন দৃঢ় তেমনই এই পাথর প্রভৃতিকেও দৃঢ় করে তোলো। তোমরা দুজনে মিলে এটিকে (= বর্ষণ) ধারণ করো। এই পাথরের দ্বারা কোটার ফলে যজমানের শত্রু হত হলো, সোম নয়।

৩৬। পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ এবং সবদিক থেকে হে সোম, তোমায় চতুর্দিক সমতাপ্রাপ্ত হোক–হে মাতা! তুমি আপন অংশগুলির দ্বারা সোমকে আপূরিত করো। সব প্রজাগণ এটি জানুক।

৩৭। হে প্রিয় এবং অত্যন্ত বলশালী ইন্দ্র! তুমি যজমানের ভূরি ভূরি প্রশংসা করে থাকো। তোমার চেয়ে যজমানকে ধনাদি সুখদাতা আর অন্য কেউ নেই। হে ইন্দ্র, এই সত্য কথা আমি তোমায় বলি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *