যিমাদ-এর ইসলাম গ্ৰহণ
ইমাম মুসলিম ও রায়হাকী (র) দাউদ ইবন আবী হিন্দ… ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, এক সময় যেমাদ মক্কায় উপস্থিত হন। তিনি ছিলেন আযাদ শানুআ গোত্রের লোক। তিনি জিনগ্রস্ত লোকদের ঝাড়ফুক করতেন। মক্কার কতক মূখ ব্যক্তিকে তিনি বলতে শুনলেন যে, তারা বলছে, “মুহাম্মদ (সা) নিশ্চয়ই জিনগ্রস্ত লোক” যেমাদ বললেন, ওই লোকটি কোথায়? আল্লাহ তা’আলা হয়ত আমার মাধ্যমে তাকে আরোগ্য করবেন। তিনি বলেন, একদিন আমি মুহাম্মদ (সা)-এর সাথে সাক্ষাত করি এবং তাকে বলি যে, আমি তো জিনগ্রস্তাদেরকে ঝাড়ফুক করে থাকি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন আমার হাতে সুস্থ করেন। সুতরাং আপনিও আমার নিকট আসুন। তখন মুহাম্মদ (সা) বললেন, সকল প্রশংসা আল্লাহর। আমি তার প্রশংসা করছি এবং তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি। তিনি যাকে হিদায়াত দেন অন্য কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারে না। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন। অন্য কেউ
তাকে সৎপথ দেখাতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত মা’বুদ নেই, তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। রাসূলুল্লাহ্ (সা) তিনবার এরূপ ঘোষণা দিলেন।
যেমাদ বলেন, আল্লাহর কসম, আমি তো গণকদের কথা শুনেছি, জাদুকরদের কথা শুনেছি এবং কবিদের কবিতাও শুনেছি। কিন্তু এ ধরনের কথা তো কোন দিন শুনিনি!! হে রাসূল (সা)! আপনি আপনার হাত বাড়িয়ে দিন, আমি ইসলাম গ্রহণের বায়আত করি। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর বায়আত গ্ৰহণ করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তোমার সম্প্রদায়ের পক্ষেও কি তুমি বায়আত করবে? তিনি বললেন, হঁয়া আমার সম্প্রদায়ের পক্ষেও আমি বায়আতি করছি। এদিকে রাসূলুল্লাহ্ (সা) একদল সৈনিক প্রেরণ করেছিলেন। তারা যেমাদের সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেনাধ্যক্ষ তার লোকজনকে বললেন, তোমরা কি এই সম্প্রদায়ের কোন কিছু কেড়ে নিয়েছ? একজন বলল, হ্যা ওদের একটি পানিপাত্ৰ আমি নিয়েছি। সেনাধ্যক্ষ বললেন, ওটা ফেরত দিয়ে দাও! কারণ, এরা যেমাদের সম্প্রদায়।
অপর বর্ণনায় আছে যে, যেমাদ রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলেছিলেন, আপনার ওই বাক্যগুলো আমাকে শুনিয়ে দিন। ওগুলোর প্রভাব তো গভীর সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
আবু নুআয়ম তাঁর দালাইলুন নবুওয়াত গ্রন্থে মহান ব্যক্তিদের ইসলাম গ্ৰহণ শিরোনামে একটি বিরাট অধ্যায় রচনা করেছেন। এ বিষয়ে সেখানে তিনি ব্যাপক ও বিস্তারিত ভাবে তথ্যগুলো সন্নিবেশিত করেছেন। আল্লাহ তাকে দয়া করুন এবং তার পুরস্কার দিন। যে সকল সাহাবী প্রথম ধাপে ঈমান আনয়ন করেছেন, তাদের নাম” শিরোনামে ইসহাক (র) একটি অধ্যায় রচনা করেছেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, তারপর ইসলাম গ্ৰহণ করেছেন আবু
বিনত আবু বকর, তিনি তখন ছােট ছিলেন বটে, কুদামা ইবন মাযউন, আবদুল্লাহ ইবন
মাখরমা তায়মী, খুনায়স ইবন হুযাফা, আমির ইবন রাবীআ, আবদুল্লাহ ইবন জাহশ, আবু
হারিছ, তাঁর স্ত্রী ফুকায়হা বিনত ইয়াসার, মা’মার ইবন হারিছ ইবন মামার জুমাহী, সাইব ইবন
আওফ ইবন সুয়ায়রাহ ইবন সাঈদ ইবন সাহম নুহাম, তার নাম নুআয়ম ইবন আবদুল্লাহ ইবন উসায়দ, আমির ইবন ফুহায়রা—হযরত আবু বকর (রা)-এর আযাদকৃত দাস, খালিদ ইবন
ইবন আরীন ইবন ছ’লাবা তামীমী, ইনি বনী আব্দী গোত্রের মিত্র, খালিদ ইবন বুকােয়র আমির
ইবন গায়রা-ইনি বনী সাআদ ইবন লায়ছ, আকিল-এর নাম ছিল গাফিল রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর নাম রাখেন আকিল তাঁরা বনী আব্দী ইবন কাআব গোত্রের মিত্র, আম্মার ইবন ইয়াসির এবং সুহায়ব ইবন সিনান (রা)-এর পর দলে দলে নারী ও পুরুষ ইসলামে দীক্ষিত হন। অবশেষে মক্কায় ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটে এবং এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হতে থাকে।
ইবন ইসহাক বলেন নবুওয়াতপ্ৰাপ্তির তিন বছর পর আল্লাহ তা’আলা তার নবী (সা)-কে নির্দেশ দিলেন যাতে তাঁর প্রতি আদিষ্ট বিষয়গুলো তিনি প্রচার করেন এবং মুশরিকদের জুলুম নির্যাতনের মুখে ধৈর্যধারণ করেন। ইবন ইসহাক বলেন, তখন সাহাবায়ে কিরাম নামায আদায়ের জন্যে পাহাড়ী এলাকায় চলে যেতেন এবং নিজেদের সম্প্রদায়ের লোকজন থেকে লুকিয়ে নামায আদায় করতেন।
এক দিনের ঘটনা। হযরত সাআদ ইবন আবু ওয়াককাস (রা) কয়েকজন লোক নিয়ে মক্কার পার্বত্য এলাকায় নামায আদায় করছিলেন। হঠাৎ কতক মুশরিক লোক তাদের নিকট গিয়ে পৌঁছে। তারা নামায আদায় করা নিয়ে দোষারোপ করে। শেষ পর্যন্ত তারা মুসলমানদের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হয়। হযরত সাআদ ইবন আবু ওয়াককাস (রা) তখন মুশরিকদের এক লোককে উটের চোয়ালের হাড় দিয়ে প্রহার করেন। এতে তার শরীরের চামড়া কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ে। ইসলামের পথে এ হল প্রথম রক্তপাত। উমাবী (র) তার মাগাষী গ্রন্থে আলওয়াক কাসী আমির ইবন সাআদ সূত্রে তার পিতা থেকে এ ঘটনা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন। ওই বর্ণনায় আছে যে, যে মুশরিক লোকের রক্ত ঝরেছিল তার নাম আবদুল্লাহ ইবন খাতল। তার প্রতি আল্লাহর লা’নত।